Search

Tuesday, February 19, 2019

ভাল নেই সংবাদপত্র


চরম দুঃসময় পার করছে দেশের সংবাদপত্র। প্রতিনিয়ত এই সমস্যা বাড়ছে। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল পত্রিকার নিউজের প্রতি মানুষের আস্থা তলানিতে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চাইলেও সবকিছু লেখা যায় না। পুরো মিডিয়াতে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। আর প্রকৃত ঘটনা প্রকাশিত না হওয়ায় মানুষ পত্রিকা পড়তে চায় না। যা পত্রিকার সার্কুলেশন ও আয়ে প্রভাব ফেলছে। আশির দশকে সংবাদপত্র এভাবে চাপের মুখে থাকায় বিবিসি রেডিও বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে সংবাদপত্রের বিকল্প হিসাবে ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এর সুযোগ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল।  

আরেকটি সমস্যা হল বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (জনসংখ্যার বোনাসকাল) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। প্রায় ৩ কোটি মানুষের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। বিশাল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠির বেশিরভাগই কাগজে ছাপা সংবাদপত্র পড়ে না। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনের উপর নির্ভরশীল। ফলে কাগজের পত্রিকার সার্কুলেশনে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।   


সংবাদপত্রে সংকটের আরেকটি কারণ হল গত ৫ বছরে এখাতে টেকসই কোনো বিনিয়োগ আসেনি। এর অন্যতম কারণ হল অদক্ষ ও অপেশাদার লোকজন বাজারে সংবাদপত্র নিয়ে এসেছে। শুরুতে এরা উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করার জন্য অবাস্তব কিছু স্বপ্ন দেখায়। ধারনা দেয়, সার্কুলেশনে অমুক পত্রিকাকে টপকে যাবে। ৬ মাস কিম্বা এক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠান লাভজনক করে দেয়া নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা দেয়। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে বেশি টাকা বেতন দিয়ে ভাল ও পেশাদার কিছু সাংবাদিকও নিয়ে আসে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পরে কথা আর কাজের মিল না পাওয়ায় মালিক পক্ষ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। এতে আগে থেকে পত্রিকার সম্পাদকসহ কর্তা ব্যক্তিরা মালিক পক্ষের কাছ থেকে নানা ধরনের সুবিধা হাতিয়ে নিলেও পেশাদার সাংবাদিকদের জীবনে দীর্ঘ বেকারত্ব ও দুর্বিসহ কষ্ট নেমে আসে। এভাবে কয়েকটি প্রজেক্ট ব্যর্থ হওয়ায় ভাল কোনো উদ্যোক্তা এখানে বিনিয়োগে আসছে না। সামগ্রিকভাবে যা শিল্পে আভ্যান্তরীণ প্রতিযোগিতা কমেছে। যা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, প্রমোশন ও বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।  অন্যদিকে গত দশ বছরে সবচেয়ে বেশি তেল মেরেছে ও অথচ সবচেয়ে কম সুবিধা পেয়েছে সাংবাদিকরা। সব পেশার লোকজন নিজস্বভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, আবাসনসহ সরকারের কাছ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা লুফে নিয়েছে। খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা ব্যাংক ঋণের জন্য গেলে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাইরে পেশার পরিচয়ে ঋণ পাওয়া কঠিন। 

সংবাদপত্রের দুর্দিনের অন্যতম আরেক কারণ  হল পত্রিকার প্রচার সংখ্যা নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার ও নজিরবিহীন দুর্নীতি। গত ১১ ফেব্র“য়ারি সংসদে তথ্যমন্ত্রীর দেয়া হিসাব অনুসারে সারাদেশে ১ হাজার ২৪৮টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫০২ এবং সারা দেশে ৭৪৬টি। এছাড়া সারাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকা রয়েছে ১ হাজার ১৯২টি, মাসিক ৪১৪টি ও অন্যান্য ৪১টি। এর বাইরে দুই হাজার ২১৭টি অনলাইন মিডিয়া রয়েছে। যার মধ্যে অনলাইন পত্রিকা ১ হাজার ৮৭৪টি ও ইন্টারনেট টেলিভিশন ২৫৭টি, অনলাইন রেডিও ৪৫টি এবং ই- পেপার ৪১টি। কিন্তু দৈনিক পত্রিকার প্রচার সংখ্যার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা ডিএফপি সীমাহীন মিথ্যাচার করছে। ডিএফপির তথ্যে দেয়াল পত্রিকাগুলোরও লাখ লাখ সার্কুলেশন দেখানো হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, রাজধানীর ফকিরাপুলও বিভিন্ন জায়গা থেকে শুধু মাস্টহেড পরিবর্তন করে অন্যান্য সব সংবাদ ঠিক রেখে একেকটি প্রেস থেকে একাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় এই সব ভুইঁফোর পত্রিকার মালিক পক্ষ একদিকে সরকারি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অপরদিকে সংবাদপত্রের নামে কম শুল্কে নিউজ প্রিন্ট আমদানি করে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। এছাড়াও গাড়িতে সংবাদপত্র, প্রেস, সাংবাদিক জাতীয় স্টিকার ব্যবহার এবং মানুষকে ব্লাকমেইল করে টাকায় আদায়ের ঘটনাতো সবার জানা।  সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ভোট ব্যাংক তৈরির জন্য এসব পত্রিকার লোকজনকে সংগঠনের মেম্বাররশিপ দিচ্ছে। 

সংবাদপত্রের আরেকটি সমস্যা হল বেসরকারি বিজ্ঞাপন আয় কমে যাওয়া। দেশে ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির থাকায় বিজ্ঞাপন কমেছে। এছাড়া যত বেশি গণমাধ্যমের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, ওই হারে বিজ্ঞাপনের বাজার বাড়েনি। ফলে বিদ্যমান বিজ্ঞাপন নিয়ে এখানে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ফলে খুব কম রেটেই গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছে। স্বাভাবিক কথা হল, কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্রান্ডিং ও প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞাপন পেতে হলে তদ্বিরতো লাগেই। এরপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে হচ্ছে। এসব কারণে আগামীতে সংবাদপত্রের জন্য হয়তো অন্ধকার সময় অপেক্ষা করছে।  


  •  লেখক সিনিয়র রিপোর্টার, যুগান্তর। 


মতপ্রকাশে বাধা আইন, ভয় ও চাপ

টিপু সুলতান

  • দেশে গণমাধ্যমের যাত্রা কখনোই নির্বিঘ্ন ছিল না
  • এখন বড় হুমকি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন 
  • মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারেনি সরকার
  • সরকার অবশ্য তেমনটা মোটেই মনে করে না
  • সব মিলিয়ে বিষয়টি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

দমনমূলক এক আইন দেশে মতপ্রকাশ ও সংবাদ–মাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। চাপা ভয়ের কারণে সংবাদমাধ্যম আর সাংবাদিকদের মধ্যে ‘স্ব-আরোপিত’ নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। এর পাশাপাশি কিছু গোষ্ঠীর চাপ, হামলা এবং হুমকিও রয়েছে।

এ পর্যবেক্ষণ দেশের সাংবাদিক আর সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষকদের। মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এমন অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও একই কথা বলছে। সরকার অবশ্য এমনটা মোটেই মনে করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মান সংবাদমাধ্যম ডচে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে (১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত) বলেছেন, তিনি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মুক্তচিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন।

তবে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গণমাধ্যমসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে গত বছর পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আরও যে বিষয়গুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে, তার মধ্যে আছে: সবল বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি বা ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা; এবং সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারি।

আছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, উগ্রবাদী সংগঠন আর অর্থ-প্রতিপত্তিতে ক্ষমতাশালী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর হুমকি-ধমকি থেকে শুরু করে দমন-পীড়ন-নির্যাতন এমনকি হত্যার ঝুঁকি। অসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমতের ব্যক্তিদের ওপর আক্রমণ সামাজিক পরিসরে বড় সমস্যা।


অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে বলেছে, বাংলাদেশে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারেনি সরকার। সব মিলিয়ে এটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘মানবাধিকার ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়ও মতপ্রকাশ এবং নাগরিক স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য এ স্বাধীনতা জরুরি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় জাতিসংঘের দপ্তর আয়োজিত এ সেমিনারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে যাঁরা ভিন্নমত প্রকাশ করতে আগ্রহী, তাঁদের সুরক্ষা দিতে হবে।

অবশ্য বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করে থাকে। বর্তমান সরকারও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।

স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে গণমাধ্যমের যাত্রা কখনোই নির্বিঘ্ন ছিল না। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর চারটি পত্রিকা ছাড়া বাকি পত্রিকা বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসনামলে ছিল নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। আক্রমণ এসেছে কথিত বাম চরমপন্থী ও ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে।

নব্বইয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারও বিজ্ঞাপন বন্ধ করাসহ নানা চাপ জারি রেখেছিল। সংবাদমাধ্যম বা সংবাদকর্মীরা ধারাবাহিকভাবে বাধা বা আক্রমণ মোকাবিলা করেই এগিয়েছেন। গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

গত নির্বাচনের আগে ১৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা ভয়ের পরিবেশের মধ্যে আছেন। এ জন্য অনেকে ‘স্ব-আরোপিত’ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কাজ করছেন।

আইনি খড়্গ ও উদ্বেগ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। এ আইনে সরকারি সংস্থার গোপনীয় তথ্য কেউ কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করলে তা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি বলে সাব্যস্ত হবে। শাস্তির বিধানটি কঠোর। অর্থাৎ, যে বিষয়টি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জনগণকে জানাচ্ছে না, তা নিয়ে খবর প্রকাশ করলে শাস্তি পেতে হতে পারে। পুলিশের সন্দেহ হলেই যেকোনো গণমাধ্যমের কম্পিউটার-ব্যবস্থা জব্দ করতে পারবে। মতপ্রকাশের অন্তরায় হিসেবে এমন নয়টি ধারাকে চিহ্নিত করে আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে সম্পাদক পরিষদ।

আইনটি পাস হওয়ার পর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানায়। এর মধ্যে ছিল সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ), নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)। এই আইনের ‘নিবর্তনমূলক’ সব ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল টিআইবি।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলের ভুল তথ্য প্রকাশের অভিযোগে এই আইনে খুলনার একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ভুলটা রিটার্নিং কর্মকর্তাই করেছিলেন।

অবশ্য নতুন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎ​কারে বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এখানে কিছু ধারার ব্যাপারে সাংবাদিকদের উদ্বেগ আছে। সেই উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য কাজ করছি, যাতে কোনো ধারার অপপ্রয়োগ না হয়।’ তিনি বলেন, সম্প্রচার আইন দ্রুত পাস করার জন্য কাজ করছেন।

গত বছর ১৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভা সম্প্রচার আইন এবং গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। সম্প্রচার আইনে সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। এই আইনের মতো প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনেরও একাধিক ধারা অপব্যবহারের সুযোগ থাকছে।

সাংবাদিকতায় ঝুঁকিপূর্ণ

বিশ্বে সাংবাদিকতায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে পাঁচ বছর আগেই অন্তর্ভুক্ত করেছে সিপিজে। বাংলাদেশ এ তালিকায় উঠেছে সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন, গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ এবং বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

আরএসএফের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। গত বছর সংস্থাটির প্রকাশিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম। এর আগের বছর বাংলাদেশ একই অবস্থানে থাকলেও নেতিবাচক সূচকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ। চলতি বছরের সূচক এখনো প্রকাশিত হয়নি।

দেশীয় বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে ১২২ জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতন, হামলা, মামলা বা হুমকি-হয়রানির শিকার হয়েছেন। নিপীড়কের তালিকায় আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সমকালের প্রতিনিধি আবদুল হাকিম।

আর ২০১৮ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০৭টি। এর মধ্যে খুন হয়েছেন ৩ জন। ২০১৬ সালে নির্যাতনের ঘটনা ছিল ১১৭টি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও

স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ফেসবুক এখন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গত আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশে-বিদেশে সুপরিচিত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম গ্রেপ্তার হন আল-জাজিরায় তাঁর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে (আইসিটি) মামলা হয়। এরপর ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা কমে গেছে।

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য, কটাক্ষ বা ছবি বিকৃত করার অভিযোগে এ পর্যন্ত অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যদিকে ফেসবুকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ভুয়া বা বিদ্বেষপূর্ণ খবর ছড়ানোর ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ দিয়ে, গত ডিসেম্বরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভুয়া খবর প্রচারের জন্য বাংলাদেশের নয়টি পেজ ও ছয়টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, এগুলোতে ‘বাংলাদেশের সরকারের সমর্থনে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছিল’ এবং ‘এর সঙ্গে সরকার-সংশ্লিষ্ট কিছু লোকের সম্পর্ক আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র আমার মনে হয়, এখন সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারবিরোধী কিছু লেখা যায় না। এটা কেবল আইনের কারণে নয়; সব দিক থেকেই চাপগুলো আসছে। সরকারপন্থী কিছু ‘যোদ্ধা’ আছেন, যাঁরা সরকারবিরোধী মতপ্রকাশকারীদের চরিত্র হনন করেন, তাঁদের জামায়াত-শিবিরের দোসর বলেন। কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা মিলিয়ে একধরনের কলঙ্ক আরোপের চেষ্টা চলে।

ফোন আলাপেও ভয়

টেলিফোনেও মানুষ এখন মন খুলে কথা বলতে ভয় পান। বিভিন্ন সময়ে অনেক বিরোধী রাজনীতিকের টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে। অনেককে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ফোন আলাপের কারণে জেল খেটেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। কিন্তু কারা এসব টেলিফোন আলাপে আড়ি পাতছেন, তা ফাঁস করছেন, সেটা জানা যায়নি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, ভয়ের সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক আলী রিয়াজের মতে, ভয়ের সংস্কৃতি আতঙ্ক, সন্ত্রাস ও বল প্রয়োগকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে। এটা শাসন পরিচালনার একটি ধরনও বটে। বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি প্রবলভাবে বিরাজমান। (ভয়ের সংস্কৃতি, প্রকাশ; ২০১৪)

কমছে ভিন্নমতের প্রকাশনা

ভিন্নমতের বই প্রকাশে এখন নানা বাধা বা চাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী অন্যতম। জঙ্গিরা ২০১৩ সাল থেকে তারা একের পর এক ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যা ঘটিয়ে চলেছে। গত বছরও মুন্সিগঞ্জে গুলি করে মারা হয়েছে প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে। জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু ঝুঁকি কাটেনি।

বরং যে ধরনের লেখালেখির জন্য লেখক, প্রকাশকেরা খুনের শিকার হয়েছেন, কয়েক বছর ধরে তেমন লেখা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকারও। লেখক, প্রকাশক আটকের ঘটনাও ঘটেছে। এবারের একুশের বইমেলা শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত করতে পারে—মেলায় প্রকাশকেরা এমন বই আনতে পারবেন না। আনলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি নতুন বই যাচাই-বাছাই করে মেলায় ঢোকাবে। পুলিশও নজরদারি করবে।

এ ছাড়া ঐতিহাসিক বা সমসাময়িক অনেক রাজনৈতিক ঘটনা ও ব্যক্তিত্বসহ স্পর্শকাতর আরও কিছু বিষয়ে লেখালেখি বা বই প্রকাশে লেখক ও প্রকাশকদের অনেক ভাবতে হচ্ছে। অনেকে ভয় পান বলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ভয়-চাপের এই নানামাত্রিক বাস্তবতার কথা স্বীকার করা এবং দীর্ঘমেয়াদি এই কুফলের কথা অনুধাবন করাটা হচ্ছে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা এই সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। গত নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে, ইতিমধ্যে দেশে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে তথ্যের অবাধ চলাচল অব্যাহত আছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব বা সংকুচিত করার মতো পরিস্থিতি প্রকট। সার্বিকভাবে এটা দূর করাটা বড় চ্যালেঞ্জ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নানাভাবেই খর্ব হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা তুলে তিনি বলেন, এমন আইনের অপপ্রয়োগ যদি নাও হয়, খড়্গ ঝোলানোর একটা ব্যাপার থাকে। মানুষ নিজেই মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলে। ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিচায়ক না।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সব আলাপ পরে হবে ভোটকেন্দ্র বাইরে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির প্রধান সূতিকাগার। গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের ( বৃটিশ ও পাকিস্তান আমল সহ)  রাজনীতির নানা ঘটনা প্রবাহের সূত্রপাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে থেকেই। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ শুধু দেশের মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনীতি নিয়ে যারা  আগ্রহী তাদের মাঝেও  ছড়িয়ে পড়বে তা ধারণা করা যায়।  দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায়  নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সকল ছাত্রসংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব স্বাভাবিকভাবেই  বিশেষ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে ডাকসু নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে।  এর মধ্যে প্রধান আলাপ হচ্ছে ১। ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে না ভিতরে  ২।  নির্বাচনে ভোটার হওয়ার বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ এবং ৩। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাস ও হলে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি। 

এর বাইরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আলাদা আলাদা দাবীতো রয়েছেই।  তাই ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে  আশাংকা, আতংক ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার পারদও  সমান তালে বেড়ে চলছে।  

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আলোচিত বিভিন্ন দাবীর মধ্যে সবাই মোটামুটি একটি দাবির  বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন, সেটা হচ্ছে ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে হতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে , ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত সকল  ডাকসু নির্বাচনেইতো হল গুলোতে ভোটকেন্দ্র ছিলো।  তাহলে হঠাৎ করে এবারে  হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি কেন?  এ বিষয়ে বেশিরভাগের অভিমত  হচ্ছে, হলে  ভোট দেয়ার ন্যূনতম পরিবেশ নাই। পুরো হল ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হয় সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নির্দেশ বা পরামর্শে। যা গত প্রায় ১২ বছর যাবৎ বিদ্যমান। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোটকেন্দ্র  যতই নির্বাচনের দিন সুষ্ঠু পরিবেশের নিশ্চয়তা দিন না কেন, এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আর একটি পরিসংখ্যান হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনকারী সংগঠন বা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। তা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনের যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে মোট ভোটার প্রায় ৪৩ হাজার। যার প্রায় ৬৫ শতাংশ হলের বাইরে থাকে। অর্থ্যাৎ প্রায় ২৮ হাজার ভোটার হলের বাইরে থাকেন। তাই এই বিপুল সংখ্যক ভোটার যারা হলেই থাকেন না, তাদের নিরাপত্তা ও অস্বস্তির বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।  তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সত্যিকার অর্থেই দীর্ঘ ২৮ বছর পরে একটি ক্রিয়াশীল ‘ডাকসু’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিতে চান, তাহলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবীর প্রতি সচেতন হবেন।
  
অন্যথ্যায় ধরে নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনকেও গত  ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সীমাহীন ভোট জালিয়াতি হয়েছে , যার পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা, যেখানে ১০ কোটি নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে,  যার মাঝে দেড় কোটি ছিলো নতুন ভোটার, যারা জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন,হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের  ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার সেরকমই একটি নিয়ন্ত্রিত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন চলছে। 

পূণশ্চঃ ডাকসু নির্বাচনে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি  যে এই প্রথম উত্থাপিত হয়েছে তা নয়।  ১৯৯৪ সালে তফসিল ঘোষণার পরও ডাকুস নির্বাচন করতে পারেনি তৎকালীন প্রশাসন  তার কারণ ছিলো  এই ভোটকেন্দ্র। সে সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা ছাত্রলীগ  ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছিল ।  সে সময় ভোটকেন্দ্র সমস্যা  সুরাহা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত হয়নি ডাকসু নির্বাচন।

অথচ  আজ ছাত্রসংগঠন হিসেবে একমাত্র ছাত্রলীগই  ভোটকেন্দ্র হলে রাখার বিষয়ে অনড়, জেদী এবং সরব।


পুনরায় ‘অর্থবহ’ নির্বাচনের দাবি বিশিষ্টজনদের


একাদশ জাতীয় সংসদ গ্রহণযোগ্য হয়নি দাবি করে পুনরায় ‘অর্থবহ’ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিশিষ্টজনেরা। সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত একাদশ জাতীয় সংসদ ‘নির্বাচন’: পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান।

আলোচনা সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাহদিন মালিক বলেন, ‘এক ব্যক্তি ১৫ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন, এ রকম দেশের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। এই ৫০টি দেশের মধ্যে দু-একটা ধ্বংসের পথে চলে গেছে। এ ধরনের নির্বাচনে দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাবে, দেশে বিনিয়োগ হবে না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছি। এখন এখান থেকে বের হওয়ার প্রধান উপায় একটা অর্থপূর্ণ নির্বাচন দেওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের ওপর কারও আস্থা নেই এবং তা প্রহসনের কমিশনে পরিণত হয়েছে। এই কমিশনের অধীনে কোনও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না; তারা তা বিগত দুই বছরের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশে কখনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। কোনও উদাহরণ বাংলাদেশে নেই। কিন্তু সরকারি দলের অধীনে নির্বাচনের একটা ধরণ আমরা দেখি, আবার এর বাইরে বের হয়ে নির্বাচনটাকে গ্রহণযোগ্য করার একটা চেষ্টাও দেখি। ১৯৮৮ সালে ও ১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল, ২০১৪ সালেও একটি নির্বাচন দেখেছি, কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।’

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি জামিনে আছি, এটা কিন্তু মুক্তি না। কিন্তু তার বাইরে একটা জিনিস রয়েছে। আমি যে দেশে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি না, তাহলে আমি মুক্ত না। আমি না হয় হাজত থেকে বেরিয়েছি কিন্তু এই ঘরে কেউই মুক্ত না। আরেকটি বিষয় হলো, যারা সরকার কিংবা সরকারের পক্ষে কথা বলে, তারা পরিষ্কারভাবে সবকিছু অস্বীকার করে যায়। যার লজ্জা নেই, স্বীকার করার প্রয়োজন মনে করে না, তাকে তো দেখানোর কিছু নেই। আমার মনে হয় আমাদের স্ট্রাটেজিগুলো দাঁড় করাতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘নির্বাচনে এতো বড় একটা অনিয়ম ঘটে গেছে, এটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। আপনারা ভাবতে পারেন যে আপনারা নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু জনগণ জানে কী ঘটেছিল সেই রাতে। কাজেই সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে জনগণের প্রতিনিধিরা এবং সামাজিক চুক্তি বলে যে চুক্তি আছে তার নবায়ন ঘটাতে হবে। সেই সামাজিক চুক্তি চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি, এটা জাতিকে বড় ধরনের বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক আসিফ নজরুল কমিটির নিবন্ধ পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের অপ্রতুল সুযোগের মধ্যেও এতো কারচুপির যে গুরুতর আলামত রয়েছে এবং নির্বাচনের প্রচারণাকালে নজিরবিহীন যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে অসম্ভব করে তুলেছে। এমতাবস্থায় সংবিধান, গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য দেশে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনও বিকল্প নেই। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— কমিটির সদস্য শিরীন হক, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাকির হোসেন প্রমুখ।
  • বাংলা ট্রিবিউন/  ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯ 

Monday, February 18, 2019

ঢাকার বাতাসে বিষ

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ



অপরিকল্পিত নগরায়ন, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে রাজধানীর বাতাসে যুক্ত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার ও ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টস। জ্বালানির দহন, বনভূমি উজাড় প্রভৃতি কারণে বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। কলকারখানা, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের অনিয়ন্ত্রিত কালো ধোঁয়া বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন-মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসের বিস্তার ঘটায়। 

এসব উৎস থেকে সৃষ্ট মিথেন, ইথেলিন বাতাসে মিশ্রিত হয়ে প্রাণিদেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এসবেস্টস আঁশ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণ থেকে ধুলাবালি, সিগারেটের ধোঁয়া ও কীটনাশক স্প্রের কণা বাতাসকে দূষিত করে মানবদেহে ক্যান্সারসহ অ্যালার্জিজনিত নানা জটিল রোগের সংক্রমণ ঘটায়। শুধু ধুলার মতো কঠিন পদার্থ ছাড়াও দূষিত তরল বর্জ্য থেকে বাতাস অধিকতর দূষিত হয়ে থাকে। চামড়া শিল্প, রঙ কারখানা, রাসায়নিক গবেষণাগার, পয়ঃশোধনাগার থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন সালফাইড জীবজগতের অস্তিত্বের ওপর হুমকিস্বরূপ।

শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, প্লাস্টিক ও বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত কারখানা থেকে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে এবং পানিতে মিশ্রিত হয়ে বিষাক্ত নাইট্রিক এসিডে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী এলাকার বাতাসকে দূষিত করে। এছাড়া ধাতু গলানো কারখানা, কয়লা-পেট্রোল-কেরোসিনের মতো জ্বালানির সালফার বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে সালফার ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি করে, যা প্রাণঘাতী এসিড বৃষ্টির কারণ। 

সুপার-ফসফেট কারখানা থেকে নির্গত হাইড্রোজেন-ক্লোরাইড বাতাসে মিশে প্রাণিদেহের হাড়ের ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টগুলো বাতাসে মিশ্রিত হয়ে বৃষ্টিপাতে বিঘ্ন ঘটায় এবং বাতাসের তাপমাত্রা কমিয়ে উদ্ভিদ জগতের বিকাশে বাধা দেয়, যা মানবদেহে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। 






ঢাকার বাতাসে সিসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে হাজার গুণ হওয়ায় ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যার শিকার হয় এই বায়ুদূষণে। 

ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে, যার মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী ৬ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটে। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে বাধা, স্নায়বিক ক্ষতি এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। 

ঢাকার অবস্থা পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের কারণে বছরে মারা যায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ এবং আবাসিক দূষণের কারণে বছরে সাড়ে চার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ঢাকার বাতাসে সিসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে হাজার গুণ বেশি। রাজধানী শহর আজ যেন একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে।

বাতাসকে দূষণমুক্ত রেখে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য জরুরি নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ করা। শিল্প কারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। 

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ সিসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটভাটা স্থাপন ও ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তা বিধান অত্যাবশ্যক। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন বন্ধ করতে হবে। 

নদীর পানি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওয়াসার স্যুয়ারেজ নিগর্মনসহ নদ-নদীর পানিতে সব রকমের কঠিন, গৃহস্থালি, শিল্প ও স্যানিটারি বর্জ্যের মিশ্রণ রোধ করতে হবে। মাটিকে রাখতে হবে দূষণমুক্ত। নদীর পাড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প, লঞ্চ, স্টিমার নির্মাণ ও মেরামতকালে নদীর পানিতে তেলাক্ত বর্জ্যের মিশ্রণ প্রতিহত করতে পারলে নদী থেকে বায়ুদূষণ অনেকাংশে হ্রাস পাবে। 

কৃষিক্ষেতে ব্যবহূত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মিশ্রিত পানি যাতে খাল-বিল-নদীতে এসে মিশতে না পারে, তার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কেমিক্যাল ও ট্যানারির মতো যে কোনো শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের আগে পরিশোধন বাধ্যতামূলক করা ছাড়া পানি দূষণজনিত বায়ুদূষণ রোধ অসম্ভব। 
  • কার্টসিঃ সমকাল /ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯।  

Controversial leaders given road safety job


Hours after two college students were killed by a speeding bus in the capital in July last year, Shajahan Khan smirked when reporters sought his reaction as a transport leader.

On many occasions in the past, his other comments and actions regarding road safety issue sparked widespread criticism. 

Now he will lead a 15-member committee to give recommendations for preventing road accidents and bringing discipline in the road transport sector.

The government formed the committee yesterday.

Five other members of the committee are also involved with transport organisations that are often blamed for the very indiscipline they will seek to put an end to.

“Those who have created the problems in the sector have been given the responsibility to solve those. This is hilarious,” Prof Moazzem Hossain, former director of the Accident Research Institute at Buet, told The Daily Star. He also questioned the justification of forming such a committee.

“There is no precedent anywhere in the world that such problems have been solved by forming such committees. Similar committees were formed in the past, but they could not produce the expected results,” he pointed out.

He stressed instead on taking up solution-oriented projects and empowering the relevant government bodies. 

Earlier in 2011, the government formed a sub-committee headed by Prof Anwar Hossain of Dhaka University to give recommendations on road safety.

“We worked extensively, held several meetings and gave a report with short, mid and long-term recommendations … I don't know how many of them have been implemented … There would be no need for a new committee if our recommendations had been implemented,” Prof Anwar said last night.

Road Transport and Bridges Minister Obaidul Quader announced the formation of the new committee after the 26th meeting of the National Road Safety Council (NRSC) at the head office of Bangladesh Road Transport Authority in the capital's Banani.

The meeting of the NRSC, the apex body comprising representatives of the government, transport sector and civil society as well as experts, was scheduled to be held more than a year ago, on January 14 last year.

Shajahan Khan, also former shipping minister, is the executive president of Bangladesh Road Transport Workers Federation, an umbrella for at least 235 transport workers' unions across the country. The federation represents more than 60 lakh workers. 

Osman Ali, general secretary of the federation; Mashiur Rahman Ranga and Khondaker Enayet Ullah who are president and secretary general of Bangladesh Road Transport Owners Association; and two representatives from the associations of truck and covered van owners and workers, have been made members of the committee.

Ranga is also a Jatiya Party MP while Enayet is an Awami League leader, and their Association represents about 3 lakh owners.

Shajahan, Ranga, Enayet and Osman were present at the meeting.

The committee also includes prominent road safety campaigner Ilias Kanchan and writer and researcher Syed Abdul Maksud. 

Road safety campaigners, representatives from BRTA, Roads and Highways Department, Accident Research Institute (ARI) at Buet, BRAC, Highway Police and Dhaka Metropolitan Police are also on the committee.

The committee will place its report in 14 working days.

After the meeting, Quader said their plan to bring discipline in the sector was “highly ambitious” but its implementation was “relatively limited and slow.”

About any potential conflict of interest of committee members, the minister said, “Let them work. Let the report come out, and let the work begin based on their recommendations. I will then comment on the matter.”

A BIG QUESTION MARK

Road safety campaigners have questioned the inclusion of Shajahan, whose past role on road safety matters clearly show his conflict of interest.

His comments last year over the death of two college students sparked fury.

Amid a week-long student protests, Shajahan offered an apology, saying he was “saddened and ashamed”.

The agitation forced the government to pass the Road Transport Act-2018 in September last year with relatively stringent punishment for drivers for road accidents.

But the Shajahan-led federation observed a two-day strike on October 28-29 to press home their eight-point demand.

Their demands included revoking the Tk 5 lakh fine for causing road accidents, making all accident-related cases bailable, and reducing the mandatory educational qualifications from class-VIII to class-V for getting a driving licence.

Five months after its passage, the law is yet to take effect allegedly due to pressure from transport workers.


Obaidul Quader chairs the 26th meeting of National Road Safety Council at Bangladesh Road Transport Authority head office in Dhaka's Banani on Sunday, February 17, 2019. Photo: STAR/Tuhin Shubhra Adhikary

OTHER DECISIONS

A separate three-member committee was formed to look into how the Road Transport Act-2018 can be implemented, said Obaidul.

The law minister, home minister and railways minister are members of this committee, which will submit its report in 14 working days.

After the passage of the law, some stakeholders made some comments and observations, said Obaidul.

The three ministers will look into how the law can be implemented in line with the reality, the minister added.

Sources at the BRTA said a committee is currently working to formulate rules for the act.

At the meeting, Dhaka Metropolitan Police Commissioner Asaduzzaman Mia said they would observe a traffic week every month from now on to bring discipline and create awareness.

  • Source — The Daily Star/ Feb 18, 2019 

43 godfathers still at large

All named in home ministry list; yaba shipments from Myanmar keep coming










Despite the surrender of 102 top narcos in Teknaf, yaba smuggling continues under the supervision of some listed godfathers and hundi traders who recently launched credit sales of the pink pills.  

“A dozen yaba dealers in Myanmar send yaba shipments to Bangladesh on receiving orders from these godfathers,” said a high official of the district police.

“The payment is made to the Myanmar dealers by hundi traders in Teknaf after top dealers staying in Dubai and India order the transaction,” he told The Daily Star yesterday, requesting anonymity.

Of 73 godfathers named on a list of the home ministry, 24 surrendered to police on Saturday. Some six others were killed in “gunfights” with law enforcers while 43 are still at large.

The rest of the 102 include 16 family members of former lawmaker Abdur Rahman Bodi and 10 local elected representatives.

ABM Masud Hossain, police superintendent in Cox's Bazar, said they got some detailed information and would conduct operations soon to arrest the dealers and their patrons soon.

Besides, they will write to the authorities concerned for action against those staying abroad. “We are verifying all the information and will go for action to destroy the syndicate,” he added.

According to an intelligence report finalised after quizzing the 102, three types of pink tablets -- R7, WY and unnamed -- cross the Myanmar border through 12 points and enter Bangladesh from 36 points of Teknaf and Ukhia upazilas in Cox's Bazar.

In Teknaf, the price of R7 is Tk 60 per piece, WY Tk 40 and the unnamed Tk 30.

The report, seen by The Daily Star, also says Rohingyas working as carriers bring five to 20 thousand pills each apart from the smugglers.

The 102 godfathers and dealers were kept in police “safe house” in district police line since January 10 before their surrender, but the yaba shipments continued.

The database of Department of Narcotics Control shows the agency recovered some 8,200 yaba pills in Teknaf alone over the first 16 days of this month. The Rapid Action Battalion seized 40,000 pieces of yaba and arrested a drug trader on Saturday.

A high official of BGB, requesting anonymity, told The Daily Star that they have a list of 1,500 yaba dealers and carriers. About 700 of them got arrested, he added.

43 STILL OUTSIDE

Locals and law enforcement sources say some 15 top listed godfathers are often found roaming different areas of Teknaf.

Four of them were even seen in the audience during the surrender programme. They are Zafar Ahmed, 65, chairman of Teknaf upazila; his son Md Shahjahan, 39, chairman of Teknaf Sadar union; Rafiq Uddin, 60, Teknaf upazila vice-chairman, and Aziz Uddin, 53, Baharchhara Union Parishad chairman.

Once a day labourer, Zafar was an associate of former Awami League lawmaker Abdur Rahman Bodi's father Ezahar Company. With Bodi's blessings, he became upazila chairman in 2014.

Sources said Zafar got involved in yaba business in early 2010. His elder son Mostaq Ahmed, another top yaba dealer, went missing four years back and still remains traceless.

His another son, Didar Mia, 35, surrendered to police on Saturday but Zafar and Shahjahan are yet to give themselves up. They have two buildings and a dozen plots in Teknaf, locals said.

The father and son could not be reached over the phone for comments.

Rafiq Uddin used to work in different mosques and madrasas but now he is the owner of a duplex and several plots in the upazila, locals said.

His brother Aziz Uddin was also a madrasa teacher. Like his brother, he also got engaged in yaba trade and made a fortune, sources say.

None of them were available for comments. 

Although Bodi's four brothers and 12 relatives surrendered to police, one of his younger brothers Mujibur Rahman, whose name is on the third position of the home ministry list, is still free.

Mujibur, the panel mayor of Teknaf municipality, is said to be one of the major patrons of yaba smuggling. He owns a number of plots in Teknaf, locals say.

Talking to The Daily Star, Mujibur, however, claimed his name mistakenly appeared on the list and he applied to the ministry, police and Rab to remove it.

According to law enforcement sources, top yaba smuggler Haji Saiful Karim, 46, has been playing a key role from Dubai in running the syndicate as the payment system is controlled mostly by him.

He has flats, buildings, residential hotels in Cox's Bazar and Chattogram though he started his career as a peon of a private company.

Anisur Rahman Yahya, 58, hails from Shah Porir Island of Teknaf but he mostly lives in Khulshi area of Chattagram. All of his family members are involved in smuggling since their home is located near the Myanmar border, sources claim.

Nurul Hoque Bhutto, 45, has a luxurious building in Nazirpara area of Teknaf. As he is on the run, a close aide now looks after yaba smuggling in his place. 

A group of journalists came under attack in 2017 for reporting on him, sources said.

Neither Yahya nor Bhutto could be contacted.

Listed godfather Kashem Ansari, 35, is the younger brother of yaba dealer Shahjahan Ansari, 45, who surrendered to police on Saturday.

Sources say Kashem started as a carrier for his brother and now he owns several luxurious buildings. He could not be found in the locality.

Md Younus Bhutto, 50, a pickpocket, shop worker Azizul Islam Sohel, 35, small trader Mostaq Ahmed, 38, small product supplier Nurul Amin, 55, caretaker Nurul Afsar, 40, and Salahuddin, 35, have emerged as godfathers, according to the list.

None of them was found for comments.

Police say apart from the listed godfathers, some 500 new dealers are active in Teknaf now.

  • Source — The Daily Star/ Feb 18, 2019 

Sunday, February 17, 2019

জগন্নাথের টিএসসিতে ছাত্রলীগের লাখ টাকার চাঁদাবাজি


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন (টিএসসি)-এর জায়গা দখল করে চাঁদাবাজি করছে ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির নেতারা। তাদের একান্ত কর্মীরা এ চাঁদার টাকা তোলার কাজটি করে থাকেন বলে জানা গেছে। 

টিএসসি’র এক দোকানদার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম এর একান্ত আস্থাভাজন কর্মী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল এর আস্থাভাজন কর্মী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭ম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন চাঁদা তোলার কাজটি করে থাকেন।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টিএসসিতে বসানো হয়েছে কমপক্ষে ৭টি চা দোকান, খিচুড়ি দোকান ৩টি, ১টি সমুচা-সিংগাড়ার দোকান, ১টি শুকনো খাবারের দোকান। তবে ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশে সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ির দোকানসহ হালিমের দোকান। এ ছাড়া মূল ফটকের পাশেই বসানো হয়েছে মিরাজের একটি বার্গারের দোকান। জানা যায়, দোকানটি সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত কর্মী মিরাজের।

নাম জানাতে অনিচ্ছুক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা হিসেবে মাসে ৩১ হাজার ৫ শত, সমুচা দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ হিসেবে মাসে ১৫ হাজার, খিচুড়ি দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ হিসেবে ৩৬ হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকে। এ ছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেওয়া হয়প্রায় ২০ হাজার টাকা।  সে হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে জবি ছাত্রলীগের নেতারা। 

এদিকে এসব হোটেলে খাবার দাম আশপাশের অন্যান্য হোটেলের চেয়ে বেশি। টিএসসির খাবার দাম নিয়ে বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাহেদ বলেন, অন্যান্য জায়গায় চা ৫ টাকা হলেও এখানে ৬ টাকা, কেক ৮ টাকা হলেও এখানে ১০ টাকা করে খেতে হয়।

দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, এখানে প্রতিদিন একটি চাঁদা দিতে হয়। তার ওপর ছাত্রলীগ নেতাদের আছে ফাঁও খাওয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চা-বিস্কুট বিক্রেতা বলেন, আমরা যদি চাঁদা না দিতাম আর ফাঁও না খাওয়াতাম তবে অন্যান্য হোটেলের চেয়ে অনেক কম দামে খাওয়াতে পারতাম। 

জবি টিএসসি নিয়ে রসায়ন বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী শামীম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে এটা অবসর কাটানোর জায়গা ছিল। যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ টিএসসি হিসেবে জায়গাটি রূপ পায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তমঞ্চ, বসার বেঞ্চ ও গাছ লাগিয়েছে। তবে বিভিন্ন মহলের দখলদারের কারণে আমরা এখান থেকে তেমন সুবিধা নিতে পারছি না।’ 

জানা যায়, ২০১৪ সালের হল আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে জনসন রোডে প্রায় ৬ কাঠা জমি সমবায় ব্যাংকের দখলে থাকা জমি দখল নিয়ে টিএসসি ঘোষণা দেন তারা। এরপরেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের টিএসসিতে ২০১৪ সালের ১৬ জুন রাতে প্রথমবারের মতো ব্যবসার পথ খুলে বসেন তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে আট দিনের মাথায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ব্যবসা থেমে থাকেনি। তারপর থেকে বিভিন্নভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

টিএসসি নিয়ে জানতে চাইলে জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের স্বপ্নের টিএসসির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। এখানে আমরা গাছ লাগিয়েছি। তবে বিভিন্ন গোষ্ঠীর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তবে আমি রাসেল ভাইয়ের কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি অবগত না। আমি বা আমার নেতা কর্মীরা কেউ এমন কাজে লিপ্ত নই। যাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় তাদের কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসে নি। এখন কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে থাকে তাহলে এর সঠিক তদন্ত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
  • কার্টসিঃ দৈনিক রূপান্তর / ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

Thursday, February 14, 2019

উন্নয়ন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমান


আনু মুহাম্মদ

মানুষ ছাড়া বন বাঁচে/বন ছাড়া মানুষ বাঁচে না/মানুষ ছাড়া নদী বাঁচে/পানি ছাড়া মানুষ বাঁচে না। তাই একটি দেশের বস্তুগত উন্নয়ন কতটা মানুষের জন্য তা বুঝতে শুধু অর্থকড়ির পরিমাণ বৃদ্ধি দেখলে হবে না। তাকাতে হবে বন, নদী, পানি, মানুষসহ সর্বপ্রাণের দিকে। সন্দেহ নেই, গত চার দশকে বাংলাদেশে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেছে সব ক্ষেত্রে। গত দুই দশকে এর বিকাশমাত্রা দ্রুততর হয়েছে। ধনিক শ্রেণির আয়তন বেড়েছে। কয়েক হাজার কোটিপতি সৃষ্টি হয়েছে, সচ্ছল মধ্যবিত্তের একটি স্তর তৈরি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে। এই বিকাশ প্রক্রিয়ায় দেশের সমাজ অর্থনীতির সব ক্ষেত্র এখন পুঁজির আওতায়, একই সঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বেশি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে অঙ্গীভূত।

পুঁজিবাদের এই বিকাশ নিয়ে সরকারি উচ্ছ্বাস সীমাহীন। উন্নয়নে সরকার সার্থক বলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অর্থনীতিবিদদের মধ্যে স্তুতিগানের কমতি নেই। এই স্তুতি বন্দনায় বিশেষভাবে সত্তরের দশকের শুরুতে প্রকাশিত একটি বইয়ের কথা টানা হয়। বইটির নাম- 'বাংলাদেশ : এ টেস্ট কেস অব ডেভেলপমেন্ট'। এর লেখক ১৯৭২-৭৪ সালে ঢাকার বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি জাস্ট ফাল্যান্ড এবং একই সময়ে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ জে. আর. পারকিনসন। এই গ্রন্থে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ নিয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের দর্শন অনুযায়ী তারা পুঁজিবাদ বিকাশের সম্ভাবনাই বিচার করেছিলেন। তাদের বক্তব্যে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের এমনই অবস্থা যে, যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়, তাহলে বিশ্বের কোথাও উন্নয়ন কোনো সমস্যা হবে না। এই হতাশাব্যঞ্জক কথার সূত্র টেনে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক তুলনা করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু স্বাধীনতার পর বিপুল প্রত্যাশা আর তার বিপরীতে রাষ্ট্রের যাত্রা নিয়ে সে সময়ের অন্য আরও কিছু বই আছে, যেগুলোর প্রসঙ্গ টানলে বিশ্নেষণ ভিন্ন হবে। উল্লেখযোগ্য, তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান নূরুল ইসলাম এবং সদস্য রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমানের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বই। যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্নেষণ করি, যদি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী জনগণের প্রত্যাশা বিবেচনা করি, যদি স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রে যে তিনটি লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল সেই সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা-বর্তমান উন্নয়ন ধারায় কতটা অর্জিত হয়েছে তার বিচার করি, তাহলে উচ্ছ্বাসের বদলে উন্নয়নের গতিধারা নিয়েই প্রশ্ন আসবে। যদি ধনিক শ্রেণির আয়তন ও জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি কত নদী বিনাশ হলো, কত বন উজাড় হলো, বাতাস কত দূষিত হলো, মানুষের জীবন কত বিপন্ন হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বঞ্চনা ও বৈষম্য কতটা বাড়ল, শ্রেণি লিঙ্গীয়-ধর্মীয়-জাতিগত বৈষম্য নিপীড়ন কী দাঁড়াল তার হিসাব করি, তাহলে উন্নয়নের সংজ্ঞা পাল্টাতে হবে।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বার্ষিক ৭ শতাংশের বেশি এবং মাথাপিছু আয় এখন বার্ষিক ১৬শ' মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ১০ বছরের গড় হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চহারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে নাওরু, ইথিওপিয়া, তুর্কমেনিস্তান, কাতার, চীন ও উজবেকিস্তানে। এক দশকের গড় হিসাবে দ্রুত প্রবৃদ্ধির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২০। তবে ২০১৭ সালের প্রবৃদ্ধি হার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, সমান ও কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হার অর্জনকারী অন্য দেশগুলো হলো : ইথিওপিয়া, মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, তানজানিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, আইভরি কোস্ট ও সেনেগাল। ভারতে মাথাপিছু আয় ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার গত এক দশক ধরে বেশ ভালো দেখালেও তার পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে সেখানকার অর্থনীতিবিদরা অনেক প্রশ্ন তুলেছেন, বিতর্ক হচ্ছে। ডাটার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের তথ্য-উপাত্ত পরিসংখ্যান হিসাবনিকাশ প্রবৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ অনেক বেশি থাকলেও বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই, কোনো বিতর্ক নেই। সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে মিলে না এ রকম যুক্তি, তথ্য, প্রশ্ন আর বিতর্ক সরকার পছন্দ করে না বলে প্রায় সব অর্থনীতিবিদ, থিঙ্কট্যাঙ্ক, মিডিয়াও বিনা প্রশ্নে সব গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। যা হোক, কতটা ও কীভাবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্নের অবকাশ থাকলেও জাতীয় আয় নিশ্চিতভাবেই বেড়েছে।

কোনো দেশের অর্থনীতিকে জিডিপি-জিএনপি এবং মাথাপিছু আয় দিয়ে পরিমাপ করায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রধান পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে। এই পদ্ধতি সারা দুনিয়ার করপোরেট শাসকদের প্রিয়। কেননা এতে অনেক সত্য আড়াল করা যায়। বিশ্বব্যাংকই সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে থাকে। এগুলো হলো : ১. নিম্ন আয়ভুক্ত দেশ (মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত); ২. নিম্নমধ্য আয়ভুক্ত দেশ (এক হাজার ২৬ মার্কিন ডলার থেকে চার হাজার ৩৫ ডলার); ৩. উচ্চ মধ্যম আয় (চার হাজার ৩৬ মার্কিন ডলার থেকে ১২ হাজার ৪৭৫ ডলার); ৪. উচ্চ আয়ভুক্ত দেশ (১২ হাজার ৪৭৬ মার্কিন ডলার থেকে বেশি)। 

মাথাপিছু আয়সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে জাতিসংঘেরও বিভাজন আছে। তাদের মাপকাঠি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রুপের পরের ধাপ উন্নয়নশীল দেশ; এই পর্বের দেশগুলোকে কম উন্নত বা অনুন্নত দেশও বলা হয়। তাদের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে ৪৭টি দেশ ও দ্বীপপুঞ্জ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে ৩৩টি আফ্রিকায়। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে আছে ১৩টি, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানের মধ্যে একমাত্র হাইতি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। এশিয়ার মধ্যে তালিকাভুক্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ছিল আফগানিস্তান, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার ও নেপাল। জাতিসংঘের বিবেচনায় সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্বল দেশগুলো নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ গঠন করা হয় ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশ এই তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৪-৭৫ সালে।

৪৭ বছর আগে এই গ্রুপ গঠন করার পরে এর মধ্যে মাত্র পাঁচটি দেশ স্বল্পোন্নত তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে পেরেছে। এগুলো হলো- বতসোয়ানা, কেপ ভার্দে, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, মালদ্বীপ ও সামোয়া। জাতিসংঘের কমিটি বলেছে, আগামী তিন বছরে আরও দুটি দেশ ভানুয়াতু ও অ্যাঙ্গোলা এই উত্তরণের তালিকায় আছে। নেপাল ও তিমুরও শর্ত পূরণ করেছে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের বিষয়টি ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী সভায় বিবেচনার জন্য রাখা হয়েছে। গত বছরের ১৫ মার্চ জাতিসংঘের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ, লাওস ও মিয়ানমার প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য শর্ত পূরণ হয়েছে। আরও ক'বছর দ্বিতীয় দফায় শর্ত পূরণ করতে পারলে চূড়ান্তভাবে এলডিসি তালিকা থেকে এ দেশগুলো বের হতে পারবে।

একটি দেশে জিডিপি অনেক বেশি হলেও যে টেকসই উন্নয়ন দুর্বল হতে পারে, মাথাপিছু আয় বেশি হলেও যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন হতে পারে- এ বিষয় স্পষ্ট করে অনেক গবেষণামূলক কাজ হয়েছে নানা দেশে। অমর্ত্য সেন এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নতুন প্রস্তাবনা হাজির করেছেন। মাহবুবুল হকের সঙ্গে 'মানব উন্নয়ন সূচক' ধারণা প্রবর্তন করেছেন, যার ভিত্তিতে জাতিসংঘ এখন নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। জোসেফ স্টিগলিজসহ মূলধারার বহু অর্থনীতিবিদ অর্থনীতি পরিমাপের পদ্ধতি হিসেবে জিডিপি ব্যবহারের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ভারতের ভেতরেই রাজ্য থেকে রাজ্যে তাৎপর্যপূর্ণ তফাত পাওয়া যায়। আফ্রিকার বহু দেশে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, মধ্যম আয়ের বিবরণে তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক আগে থেকেই এগিয়ে; কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন। মিয়ানমারে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের প্রায় সমান, মানে তারাও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। মিয়ানমারও একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। নাইজেরিয়ার মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি। কী তাদের জীবনযাত্রার মান বাংলাদেশের চাইতে দ্বিগুণ হলো, এটা বলা যাবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং আরও খারাপ। সে জন্য মানব উন্নয়ন সূচকে নাইজেরিয়া বাংলাদেশেরও পেছনে।

প্রকৃতপক্ষে জিডিপি দিয়ে একটি দেশের আর্থিক লেনদেন বা বাণিজ্যিক উৎপাদন, বিতরণ, পরিসেবার বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কারণ যে কোনো লেনদেন ও বাণিজ্যিক তৎপরতা বৃদ্ধিতেই জিডিপি বাড়ে। কিন্তু এর জন্য সামাজিক ও পরিবেশগত কোনো ক্ষতি হলে তা হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। সে কারণে এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বোঝা যায় না, অর্থনীতির গুণগত অগ্রগতিও বোঝা যায় না। যেমন চোরাই অর্থনীতির তৎপরতাতেও জিডিপি বাড়ে; কিন্তু সমাজের বড় একটা অংশের জীবন-জীবিকা তাতে বিপদগ্রস্ত হয়। নদী-নালা, খাল-বিল, বন দখল ও ধ্বংসের মাধ্যমেও জিডিপি বাড়তে পারে; কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে না, বরং অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। এসব তৎপরতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পায় না বরং জীবনমান বিপর্যস্ত হয়। দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও তার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও বড় দেখায়, জিডিপির অঙ্কও বাড়ে। একই সময়ে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ কমে এসেছে তার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। কিন্তু এই ব্যয় বৃদ্ধি আবার জিডিপি বাড়ায়। অনিয়ন্ত্রিতভাবে গৃহীত বৃহৎ প্রকল্পে ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি, আর্থিক খাত থেকে অভাবনীয় মাত্রায় লুণ্ঠন ও পাচারও জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

দ্বিতীয়ত, যে সমাজে বৈষম্য বেশি সেখানে মাথাপিছু আয়ের হিসাব বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। একটি পরিবার যদি দশ লাখ টাকা আয় করে, পাশাপাশি অন্য একটি পরিবার যদি দশ হাজার টাকা আয় করে, তাহলে উভয় পরিবারের গড় আয় হবে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এতে কি দুই পরিবারের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়? বর্তমান মাথাপিছু আয় হিসেবে আমাদের দেশে চার সদস্যের পরিবারের বার্ষিক গড় আয় হয় প্রায় ৭ হাজার মার্কিন ডলার অর্থাৎ মাসে প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। তার মানে বাংলাদেশের সব নাগরিক শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবারই মাথাপিছু আয় মাসে এখন প্রায় ১৪ হাজার টাকা। অথচ সরকারি পরিসংখ্যান বলে, বাংলাদেশের শতকরা ৮০ জন মানুষের মাসিক আয় এর থেকে অনেক নিচে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় যত, শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ পায় এর মাত্র ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে শুধু আর্থিক খাতই নয়, সর্বজনের (পাবলিক) সব সম্পদই অসীম ক্ষুধায় কাতর ধনিক শ্রেণির লক্ষ্যবস্তু।

  • অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 
  • কার্টসিঃ সমকাল/ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯। 

বেগম জিয়া ও কারাবাসের এক বছর



শামসুজ্জামান দুদু
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হলো। যিনি বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপসহীন নেত্রী হিসেবে জাতির কাছে পরিচিতি, সেই তিনি গত এক বছর ধরে একটি মিথ্যা মামলায় তথাকথিত বিচারে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৭৩ বছর। নানা জটিল রোগে দীর্ঘদিন থেকে তিনি অসুস্থ। যেসব ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন, তা-ও এখন তিনি পাচ্ছেন না। তাঁকে চিকিৎসা নিতে হলেও বারবার কোর্টের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। কদাচিৎ অনুমতি পাচ্ছেন অথবা পাচ্ছেন না। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। 

যাকে নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যে নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সে নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে বিতর্কিত নির্বাচন। এই নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে এর ভালো দিক উল্লেখ করা বড় কঠিন।


দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা অত্যন্ত কঠিন একটি সময়। তাঁর স্বামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক অন্যতম সেক্টর কমান্ডার রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম শহীদ জিয়াউর রহমান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক শুধু গ্রেফতারই হননি, দুটি মাসুম বাচ্চা নিয়ে পাকিস্তানের কারাগারে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। দেশনেত্রী বাংলাদেশের জনগণের পরীক্ষিত এক আপসহীন নেত্রী। যার জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে স্বাধীনতাযুদ্ধ, গণতন্ত্রের জন্য বিরামহীন লড়াই, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সংগ্রামে। আবার নানামুখি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বহুবার। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে সংগ্রামী নায়কদের রূপকথাতুল্য যে কাহিনি থাকে তার অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশের দেশনেত্রী ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যার শাসনকালে নারী-পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক ছাত্রজনতা মুক্তিযোদ্ধা আপামর মেহনতি মানুষ ঠিকানা পেয়েছিল সুখ আর শান্তিময় জীবনের। সেই নেত্রীকে এখন কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কষ্টকর এবং পীড়াদায়ক ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই কাহিনি এখন বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে, অন্তরে।

স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বাংলাদেশের মানুষের মত তিনিও ভেবেছিলেন স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিনযাপন করবেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে তিনি বুঝেছিলেন সেটি বোধ হয় সম্ভব হবে না। স্বাধীনতার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশের আইনশৃঙ্খলা কাঠামো ভেঙে পড়ে। যে গণতন্ত্রের অর্জনের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ জীবনপণ লড়াই করেছিলেন, ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন, ২ লক্ষ মা-বোন তাদের আব্রু হারিয়েছিলেন সেই গণতন্ত্র ধরা দিতে দিতে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করতে লাগলো। এক মুঠো ভাতের জন্য দ্বারে দ্বারে হাত পাততে  থাকলো। 

এক সময় দেশে ভয়ঙ্কর খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। ভয়ংকর এক সময়। এরমধ্যেই শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এলো। সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা। একদলীয় ব্যবস্থার ছয় সাত মাস যেতে না যেতেই বাংলাদেশের সেই ভয়ংকরতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। আগস্টের পরে এলো ৩ নভেম্বর। তারপর এলো সিপাই জনতার ৭ নভেম্বর। এর প্রতিটি ঘটনার মধ্যে মৃত্যুর হাতছানি ছিল। এই অস্থির সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কোনও না কোনোভাবে হতাহত হয়েছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান এবং তাঁর পরিবার এই দিনগুলোতে জীবন-মৃত্যুর কাছাকাছি থেকেছেন প্রতিমুহূর্তে। সেসব ঘটনার অনেক বর্ণনা ইতিহাসে পাওয়া যায়। সেসব বিষয় এখানে আলোচ্য নয়। কিন্তু গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া এক সময় তাঁর প্রিয়তম স্বামী এবং এ দেশের আপামর জনতা তাদের প্রিয়তম জননায়ক শহীদ জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছিলেন।

যে মানুষটি, যে নেত্রী সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার জন্য এত কষ্ট এবং নির্যাতন ভোগ করলো তাঁকেই কিনা এখন একটা পরিত্যক্ত জেলে অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে হচ্ছে একা একা। যাঁর চিকিৎসার ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই, কবে বেরোবেন জেল থেকে, তাও কেউ বলতে পারে না। এমন একটি দেশের জন্যই কি তিনি জীবনবাজি ধরেছিলেন! তিনি কি কখনও কল্পনা করেছিলেন, এই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা, গণতন্ত্রের স্বাধীনতার এই পরিণতি হবে! হয়তো ভাবেননি। তারপরও আমরা দেশবাসী এইসময়ে এতটুকু তো অন্তত আশা করতে পারি- যিনি স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছেন দ্বিধাহীন আপসহীনভাবে, তাঁকে কি সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিতে পারি না? রাষ্ট্র হিসেবে কি রাষ্ট্রের কোনও দায়িত্ব নেই!

  • লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি 
  • কার্টসি — ব্রেকিংনিউজবিডি / ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯।