শামসুজ্জামান দুদু |
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হলো। যিনি বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপসহীন নেত্রী হিসেবে জাতির কাছে পরিচিতি, সেই তিনি গত এক বছর ধরে একটি মিথ্যা মামলায় তথাকথিত বিচারে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৭৩ বছর। নানা জটিল রোগে দীর্ঘদিন থেকে তিনি অসুস্থ। যেসব ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন, তা-ও এখন তিনি পাচ্ছেন না। তাঁকে চিকিৎসা নিতে হলেও বারবার কোর্টের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। কদাচিৎ অনুমতি পাচ্ছেন অথবা পাচ্ছেন না। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
যাকে নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যে নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সে নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে বিতর্কিত নির্বাচন। এই নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে এর ভালো দিক উল্লেখ করা বড় কঠিন।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা অত্যন্ত কঠিন একটি সময়। তাঁর স্বামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক অন্যতম সেক্টর কমান্ডার রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম শহীদ জিয়াউর রহমান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক শুধু গ্রেফতারই হননি, দুটি মাসুম বাচ্চা নিয়ে পাকিস্তানের কারাগারে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। দেশনেত্রী বাংলাদেশের জনগণের পরীক্ষিত এক আপসহীন নেত্রী। যার জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে স্বাধীনতাযুদ্ধ, গণতন্ত্রের জন্য বিরামহীন লড়াই, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সংগ্রামে। আবার নানামুখি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বহুবার। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে সংগ্রামী নায়কদের রূপকথাতুল্য যে কাহিনি থাকে তার অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশের দেশনেত্রী ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যার শাসনকালে নারী-পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক ছাত্রজনতা মুক্তিযোদ্ধা আপামর মেহনতি মানুষ ঠিকানা পেয়েছিল সুখ আর শান্তিময় জীবনের। সেই নেত্রীকে এখন কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কষ্টকর এবং পীড়াদায়ক ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই কাহিনি এখন বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে, অন্তরে।
স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বাংলাদেশের মানুষের মত তিনিও ভেবেছিলেন স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিনযাপন করবেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে তিনি বুঝেছিলেন সেটি বোধ হয় সম্ভব হবে না। স্বাধীনতার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশের আইনশৃঙ্খলা কাঠামো ভেঙে পড়ে। যে গণতন্ত্রের অর্জনের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ জীবনপণ লড়াই করেছিলেন, ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন, ২ লক্ষ মা-বোন তাদের আব্রু হারিয়েছিলেন সেই গণতন্ত্র ধরা দিতে দিতে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করতে লাগলো। এক মুঠো ভাতের জন্য দ্বারে দ্বারে হাত পাততে থাকলো।
এক সময় দেশে ভয়ঙ্কর খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। ভয়ংকর এক সময়। এরমধ্যেই শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এলো। সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা। একদলীয় ব্যবস্থার ছয় সাত মাস যেতে না যেতেই বাংলাদেশের সেই ভয়ংকরতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। আগস্টের পরে এলো ৩ নভেম্বর। তারপর এলো সিপাই জনতার ৭ নভেম্বর। এর প্রতিটি ঘটনার মধ্যে মৃত্যুর হাতছানি ছিল। এই অস্থির সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কোনও না কোনোভাবে হতাহত হয়েছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান এবং তাঁর পরিবার এই দিনগুলোতে জীবন-মৃত্যুর কাছাকাছি থেকেছেন প্রতিমুহূর্তে। সেসব ঘটনার অনেক বর্ণনা ইতিহাসে পাওয়া যায়। সেসব বিষয় এখানে আলোচ্য নয়। কিন্তু গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া এক সময় তাঁর প্রিয়তম স্বামী এবং এ দেশের আপামর জনতা তাদের প্রিয়তম জননায়ক শহীদ জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছিলেন।
যে মানুষটি, যে নেত্রী সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার জন্য এত কষ্ট এবং নির্যাতন ভোগ করলো তাঁকেই কিনা এখন একটা পরিত্যক্ত জেলে অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে হচ্ছে একা একা। যাঁর চিকিৎসার ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই, কবে বেরোবেন জেল থেকে, তাও কেউ বলতে পারে না। এমন একটি দেশের জন্যই কি তিনি জীবনবাজি ধরেছিলেন! তিনি কি কখনও কল্পনা করেছিলেন, এই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা, গণতন্ত্রের স্বাধীনতার এই পরিণতি হবে! হয়তো ভাবেননি। তারপরও আমরা দেশবাসী এইসময়ে এতটুকু তো অন্তত আশা করতে পারি- যিনি স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছেন দ্বিধাহীন আপসহীনভাবে, তাঁকে কি সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিতে পারি না? রাষ্ট্র হিসেবে কি রাষ্ট্রের কোনও দায়িত্ব নেই!
- লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি
- কার্টসি — ব্রেকিংনিউজবিডি / ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯।
No comments:
Post a Comment