Search

Sunday, February 3, 2019

বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রশূন্য — রুহুল কবির রিজভী


রোববার, ফেব্রুয়ারি ০৩, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একদলীয় শাসন নিরাপদ করতেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়া হাজার হাজার ‘মিথ্যা’ মামলায় বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে জড়ানো হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রশূন্য। গণতন্ত্রহীনতায় বাংলাদেশের জনগণ এখন রাষ্ট্র-দাসত্ব করছে।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল -

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

মানুষ অজানাকে জানার জন্য প্রয়োজন হয়েছে চিন্তার স্বাধীনতার। ‘দুর্গম পর্বত চুড়া, অন্ধকার অরণ্যানী, দূরবিস্তৃত মরুভূমি, বরফে মোড়া মেরুপ্রদেশ, গভীর সাগরতল, সীমাহীন আকাশ’-কোন কিছু সম্পর্কেই সে অজানা থাকতে চায় না। পৃথিবীতে দর্শন, রাষ্ট্রদর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সমাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে বিশ^মনিষীদের চিন্তা, নিজের মত এবং অন্যের মতের সাথে বিতর্ক সবকিছু মিলিয়ে চিন্তার স্বাধীনতা মানবসমাজকে অগ্রগতির পথে নিয়ে গেছে। চিন্তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয় নাগরিক স্বাধীনতা। আর নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় প্রকৃত গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর।

বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রশুণ্য। গণতন্ত্রহীনতায় বাংলাদেশের জনগণ এখন রাষ্ট্রদাসত্ব করছে। রাষ্ট্র এখন এক ব্যক্তি ও এক দলের কব্জায়। একদলীয় শাসনে রাষ্ট্র জনগণকে দাসে পরিণত করে। গণতন্ত্রক মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুকতে ধুকতে শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করে। বর্তমানেও সেই দশা বিরাজমান। এক ব্যক্তির একদলীয় শাসন নিরাপদ করতেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকানো হয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় বিএনপি’র লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে জড়ানো হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

গায়েবী মামলায় এমন মানুষদের জড়ানো হয়েছে যা শুধু অদ্ভুতই নয়, এটি নিষ্ঠুর তামাশা। কবরে শায়িত লাশ, পক্ষঘাতগ্রস্ত রোগী, হজ¦ব্রত পালনরত ব্যক্তি, বহুদিন ধরে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে নজীরবিহীনভাবে মামলার আসামী করা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা মিয়া, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শামসুল হক যিনি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে অচল এবং তিনি কানেও শোনেন না; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্গাচাষী মিলন মিয়া, ঢাকার আতর বিক্রেতা হাতকাটা ইউসুফসহ এধরণের অসংখ্য হতদরিদ্র ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে। এরা নাকি রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী। যে রাষ্ট্র এতো বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন ও নিষ্ঠুর রক্তপিপাসু কেবলমাত্র সেই রাষ্ট্রেই উল্লিখিত ব্যক্তিদের অপরাধী বানানো হয়। সুতরাং সেই রাষ্ট্র পরিচালকদের অর্থাৎ অবৈধ সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা ন্যায়সঙ্গত। 

সাংবাদিকবৃন্দ, 
জনগণকে ফাঁকি দিয়ে ভুয়া ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্যই গায়েবী মামলায় বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মীদের জড়িয়ে উল্লিখিত হতদরিদ্র দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষদেরকেও মামলা দিতে দ্বিধা করেনি। এদের কারো কারো নামে দশ থেকে বারোটি মামলা। ক্ষমতাসীনরা ভোগ লালসায় অস্থির হয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে গিয়ে তালবেতাল হয়ে অমানবিকতার পথ অবলম্বন করেছে। এরা মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করছে। সেইজন্য ক্ষমতা-আধিপত্যের রঙিন সম্প্রসারণে মেতে উঠেছে। 

গতকাল গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী ‘২৯শে ডিসেম্বর রাতের ভোটের’ প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে শেখ হাসিনার সদাহাস্য চেহারা ও সরকারের আনুকুল্য পাওয়া উৎফুল্ল উচ্ছিষ্ট রাজনীতিবিদ চেহারা দেখে মনে হয়েছিল তারা আনন্দে মাতোয়ারা। মহাভোট ডাকাতির পর অনুশোচনাহীন সরকারের চা-চক্রের এই আনন্দায়োজন দেখে একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়লো, সেটি হলো- Pleasure without conscience' মানে বিবেকহীন আনন্দ। এই আনন্দ একটি সামাজিক পাপ। গোটা জাতির সাথে নির্লজ্জ মহাতামাশার নির্বাচনের পর উল্লসিত সরকারের চা-চক্রের আয়োজন বিবেকহীন আনন্দেরই সমতুল্য। জনগণের সাথে প্রতারণাকারী সরকারের জয়ল্লোসের চা-চক্রে দেশের গণতন্ত্রমণা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণরত কোন রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করেনি। যারা জনগণের ভোট লুট করেছে তাদের সাথে গণতন্ত্রপ্রেমী কোন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী কেউই সেই লুটের আনন্দের পাপে অংশগ্রহণ করেনি। এটাই জনগণের বিজয়। 

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর ভুয়া ভোটের সরকারের অনুগত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছে। দুর্দশাগ্রস্ত গণতন্ত্রে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কতটুকু সুষ্ঠূ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে এ নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। যেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের ‘ষ্ট্যান্ডার্ড’ বিচার করা হচ্ছে, জ্ঞানান্বেষণ বা সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে নয়, বরং চা-সমুচা ও আলুর চপ এর মুল্যে। পৃথিবীর দেশে-দেশে বিশ^বিদ্যালয়ের সার্বজনীন সজ্ঞায় ‘Freedom of learning’ এবং ‘Freedom of research' এর প্রত্যয় বিধৃত। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে To communicate the truth' অর্থাৎ সত্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। এটিই হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের মূল ‘Academic tone'। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষাব্রতীদেরকে এই শিক্ষা স্বর থেকে দুরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। শেখার স্বাধীনতা, গবেষণার স্বাধীনতার মাধ্যমে সত্যের সন্ধান কখনোই নিশ্চিত হবে না, যদি সেখানে সহাবস্থান ও পরমতসহিষ্ণুতার স্থান না থাকে। মুক্তকন্ঠে বিতর্কের স্বাধীনতা না থাকে। ক্যাম্পাসগুলো একদলীয় দু:শাসনের প্রবল প্রতাপের অংশীদার বলেই এখন শিক্ষার উৎকর্ষতার চেয়ে চা-সিঙ্গারা-চপ-এর উৎকর্ষতার বাণী শুনতে পাওয়া যায়। সুতরাং ডাকসু নির্বাচনে সব ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত না হলে ডাকসু নির্বাচন হবে মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের ধারাবাহিকতার আরেকটি সংযোজন। 
    
বন্ধুরা,
বিএনপি’র অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামল এর মাতা শামসুন্নাহার বেগম গত ৩০ জানুয়ারী রাত ১২-৩০টায় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ ইমপালস্ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শামসুন্নাহার বেগম এর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, গুণগ্রাহী ও শুভান্যুধ্যায়ীদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। এই বয়স্কা নারীও জুলুমের শিকার হয়েছেন। তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় এবং তার বৃদ্ধা মাতার সাথেও দুর্ব্যবহার করা হয়। এই আক্রমণে শ্যামলের মা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শোকে-বেদনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ জানুয়ারী ইন্তেকাল করেন। তার এই মৃত্যু হয়েছে আওয়ামী দুস্কৃতিকারীদের জন্যই। এই অমানবিক নির্মমতার প্রতিবাদ করার ভাষা আমার জানা নেই। সৃষ্টিকর্তাই এদের বিচার করবেন। 
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

No comments:

Post a Comment