Search

Monday, March 29, 2021

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত স্মরণিকা





















































































বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যার দায় নেবে কে?

— তাবিথ আউয়াল


দু'হাজার এগার সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় রক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানি খাতুন।


ভারতের পক্ষে অনেকবার বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সীমান্তে মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। ১০ বছর আগে ২০১১ সালে 'ট্রিগার হ্যাপি' শীর্ষক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন প্রকাশের পরে ভারত সরকার প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়। পাচারকারী ও অবৈধ পথে সীমান্ত পার হওয়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি করে বিজিবি-বিএসএফ। সে দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে আমরা অঙ্গীকার শুনতে পেয়েছি। এরও আগে ২০০৮ সালে ভারত সরকার ও বিএসএফ বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেছিল। এতসবের পরও বাস্তবতা ভিন্ন।

বস্তুত ২০ বছর ধরে শত-সহস্র অঙ্গীকার-আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির পরও আমরা ফেলানীকে কাঁটাতারে ঝুলতে দেখেছি। দেখেছি এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে প্রহসন। ফেলানীসহ আলোচিত সীমান্ত হত্যার একটিরও বিচার হয়নি। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেলানী খাতুনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেটাও মানেনি। আর আমাদের কর্তাদের দেখেছি ফেলানীকে নিয়ে নিশ্চুপ থাকার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে।

কোনো দেশের সরকারের প্রতিশ্রুতি এলে এমনটা প্রত্যাশা করাই যায় যে, কার্যক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন হবে। অথচ এই ইস্যুতে দেওয়া ভারতের প্রতিশ্রুতি কোনোভাবেই বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না। বারবার দেখা গেছে, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার পরপরই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। প্রাণহানির পর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএসএফ আত্মরক্ষার যুক্তি তুলে 'সবকিছ' ভুলে যেতে চাচ্ছে। বিজিবি কিংবা সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিবাদ, উদ্বেগ বা অনুরোধ তখন খুব যে কাজে আসছে না, তা অনেকটাই স্পষ্ট। অবশ্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সীমান্ত হত্যার ঘটনায় বিএসএফের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। বাহিনীটি বলছে, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন এবং প্রতিটি হত্যার ক্ষেত্রেই জোরালো প্রতিবাদ করা হচ্ছে।

আমরা জানি, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা নেই। বরং দু'দেশই বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি করে আসছে- এখনকার সম্প্রীতি আর সুসম্পর্ক গৌরব করার মতো। বর্তমান সময়ের সম্পর্ককে দু'দেশের জন্য যুগান্তকারী হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। তাহলে মৃত্যুর হিসাবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখা কেন বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী- এই প্রশ্নের উত্তর জানা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার এ ধরনের উদাহরণ খুব কম বলে দাবি করে আসছেন প্রতিবেশী দু'দেশের মানবাধিকার কর্মী এবং কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রকাশ্যে না এলেও সীমান্ত ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ায় বাংলাদেশের রয়েছে দুর্বলতা। ভারতের সঙ্গে নেপাল, চীন, ভুটান, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এমনকি ওইসব দেশের সঙ্গে ভারতের উত্তপ্ত সম্পর্কও লোকচক্ষুর আড়ালে নয়। অথচ সেখানে এ ধরনের হত্যার ঘটনার খবর মেলা ভার। এমন প্রেক্ষাপটে এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনা হওয়া উচিত।

জানুয়ারি ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সীমান্তে মারা গেছেন ৪২ জন। এর মধ্যে বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের আর শারীরিক নির্যাতনে মারা গেছেন ছয়জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবের বরাতে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সীমান্তে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ জনে। আরেক পরিসংখ্যানে সংস্থাটি বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এ হিসাবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গড়ে প্রতি ১২ দিনে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়। আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ২৬, ২০১৪ সালে ৩৩, ২০১৫ সালে ৪৬, ২০১৬ সালে ৩১, ২০১৭ সালে ২৪, ২০১৮ সালে ১৪ এবং ২০১৯ সালে ৪৩টি সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধে আমরা ভারত বা বিএসএফকে কতটা চাপের মধ্যে রাখতে পারি। বিএসএফের ওপর তেমন কোনো চাপ নেই বলে সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে খোদ সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের বয়ান থেকে অনেক সময় জানতে পারি। এমনকি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে পতাকা বৈঠক করা এবং নিহতদের মরদেহ গ্রহণ করা ছাড়া বিজিবির কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। সীমান্তে নাগরিকদের মৃত্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে আগে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর রেওয়াজ ছিল, এখন ততটা নেই।

এমন বাস্তবতায় কিছু বিষয় আমাদের আরও হতাশ করে তোলে। যেমন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একবার বললেন, সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে। এর আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে কেউ গরু আনতে গিয়ে ভারতের গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না। এসব মন্তব্য সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ করে দেয়- আমাদের সরকারি মহল বাংলাদেশিদের সুরক্ষার জন্য আন্তরিক কিনা?

আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারও কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বশেষ বিজিবি দিবসে বাহিনীর মহাপরিচালকও সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য বিজিবি সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সময় তিনি একটি ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেন। তার মতে, সীমান্তবর্তী জনগণকে শিক্ষা-দীক্ষায় এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারলে সেখানে হত্যা কমে যাবে। সর্বশেষ দু'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বেশিরভাগ সীমান্ত হত্যা হয় ভারতের সীমানার অনেক ভেতরে। আমার জানামতে, ভারতের প্রচলিত আইন কাউকে হত্যার অনুমোদন দেয় না।

আমরা বলতে চাই, কারও অনুগ্রহ নয়; আমরা আমাদের অধিকারের প্রশ্নে আপসহীন থাকব। জোরালো ভাষায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেবো 'সীমান্ত হত্যা মানি না'।

 

— লেখক বিএনপি নেতা; সাবেক মেয়র প্রার্থী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন 


Monday, March 15, 2021

ফিরে দেখা: খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন




বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক, জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার খিরাই পাচুরিয়া গ্রামে ১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খোন্দকার আবদুল হামিদ ছিলেন একজন মশহুর আলেম এবং তাঁর মাতা আকতারা খাতুন। 

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৪৭ সালে মানিকগঞ্জ হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৯ সালে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স), ১৯৫৩ সালে এমএ এবং ১৯৫৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে খোন্দকার দেলোয়ার বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীর সপক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। 

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি মানিকগঞ্জ মহকুমা আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। 

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং তখন থেকেই তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধীদলের (কপ) প্রাথী ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে মানিকগঞ্জ মহকুমায় গঠিত ইলেকশন মনিটরিং কমিটির প্রধান ছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির মানিকগঞ্জ মহকুমা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আইনজীবী সমিতিগুলোর কোর্ডিনেশন কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৬৬ সালে ছয়দফা কর্মসূচি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৭০ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। 

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরপরই মানিকগঞ্জে গঠিত বিপ্লবী কম্যান্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার।



খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে গঠিত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন এবং দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক নিযুক্ত হন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে পুনরায় তিনি বিএনপির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য।

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মানিকগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকা থেকে পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬), সপ্তম (১৯৯৬) ও অষ্টম (২০০১) সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন সংসদীয় দলের চীফ হুইপ এবং সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী সংসদীয় দলের চীফ হুইপ ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সভাপতি এবং বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্য ছিলেন। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বেশসংখ্যক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি ১৯৭৬-১৯৭৮ এবং ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং ১৯৭৯-১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সিনেটের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কোঅপারেটিভ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জ খোন্দকার নূরুল হোসেন ল’ একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। তিনি তাঁর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন কলেজ এবং পাচুড়িয়া মাদ্রাসা। ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে তাঁর ব্যাপক অবদান রয়েছে।

আশির দশকের শেষদিকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন বিরোধী আন্দোলনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় মোর্চার লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তত্বাবধায়ক সরকার কৃর্তক ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারীর পর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হওয়ার প্রাক্কালে তিনি দলের মহাসচিব আব্দল মান্নান ভূইয়াকে বহিস্কার করে তদস্থলে স্ট্যার্ন্ডি কমিটির সদস্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে দলের মহাসচিব পদে নিয়োগ দান করেন। এক-এগারোর পর যখন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতৃবর্গ আটক ছিলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন তখন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সঙ্কটের মোকাবেলা করে দলের ঐক্য ও অখন্ডতা অক্ষুন্ন রাখেন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর পুনরায় তিনি বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হন।

খোন্দকার দেলোয়ার স্মরণীয় হয়ে থাকবেন জাতীয় স্বার্থে পালিত তাঁর সংগ্রামী ভূমিকার জন্য। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতা দখলকারী সেনাসমর্থিত সরকারের দিনগুলোতে তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করলে দেখা যাবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্বারের সংগ্রামে তিনি ছিলেন আপসহীন এক দুর্দান্ত সাহসী নেতা। সেটা এমন এক সময় ছিল ওই সরকার যখন দুই নেত্রীকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার এবং রাজনীতিকদের উতখ্যাত করার ভয়ঙ্কর চেষ্টা চালাচ্ছিল। সরকার একদিকে দলীয় নেতাদের গ্রেফতার করেছিল, অন্যদিকে দলের ভেতর থেকে কোনো কোনো নেতা গোপনে সরকারকে সহযোগিতা দেয়ায় সে সময় বিশেষ করে বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। তেমন এক কঠিন সময়ে নিজে গ্রেফতার বরণ করার ঠিক আগমুহুর্তে খোন্দকার দেলোয়ারকে বিএনপির মহাসচিব পদে নিযুক্তি দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের জন্য তো বটেই, এই সিদ্বান্ত দেশ ও জাতির জন্যও অত্যন্ত সঠিক এবং সুফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। মামলা ও গ্রেফতারের হুমকি এবং দমন-পীড়নের ভয়-ভীতি দেখানোসহ সব পন্থাতেই তাকে বাগে আনার চেষ্টা পালিয়ে দেখেছে সরকার। কিন্তু মাথা নোয়ানো দূরে থাক, খোন্দকার দেলোয়ার এমনকি সামান্য নমনীয়তাও দেখাননি। দলীয় সভা-সমাবেশের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন ও টিভির টকশোতে তিনি দুর্দান্ত সাহস বক্তব্য রেখেছেন, সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবিতে সোচ্চার থেকেছেন। প্রবীণ সাংবাদিক আতাউস সামাদ যথার্থই বলেছেন, খোন্দকার দেলোয়ার ছিলেন রাজনীতির দুঃসময়ের কাণ্ডারি। 

বলা বাহুল্য, গভীর দেশপ্রেম এবং গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন মনোভাব ছিল বলেই খোন্দকার দেলোয়ারের পক্ষে অমন অনমনীয় অবস্থান নেয়া এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়েছিল। একই কারণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিপক্ষরা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। 

আমরাও মনে করি, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মনে-প্রাণে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। নিজে বিএনপি করলেও অন্য দলগুলোর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ ছিল। ছিল পরমতসহিষ্ণুতা। প্রতিপক্ষের কঠোর সমালোচনা করতেন তিনি, কিন্তু বিদ্বেষ বা শত্রুতা নয়, সবকিছুর পেছনে থাকত কেবলই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে কখনও একচুল পরিমাণ ছাড় দেননি তিনি। নিখাদ ছিল তাঁর দেশপ্রেম।

ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন একুশে পদকে ভূষিত হন। সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২০১১ সালের ১৬ই মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।


মার্চ ১৬ — স্বৈরাচার পতন সংগ্রামের অগ্রনায়ক, ক্রান্তিকালের কান্ডারী ও বিএনপি'র প্রয়াত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। 


খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি ফাউন্ডেশন

আওয়ামী লীগের ‘মশারির ভেতরে মশারি’ টানানো জনিত সঙ্কট

— ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

 

বিগত কয়েক দিন ধরে সকল গণমাধ্যম জুড়ে ছিলেন কিশোর। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শুধুমাত্র কার্টুন আঁকার অপরাধে ৬৯ ঘণ্টা তার নিখোঁজ থাকা, সেই সময়ে তার ওপর হওয়া নির্যাতন, মুশতাকের মৃত্যু, দফায় দফায় জামিন বাতিল, এ সবকিছুই কিশোরকে খবরের শিরোনাম করে রেখেছিল। তাকে নিয়ে লিখেছি আমিও। বলেছি বিভিন্ন টক শো, সেমিনার, মিটিং এ। কিশোর ‘ভাগ্যবান’ কারণ সে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছে। গণমাধ্যম তার পাশে দাঁড়িয়েছে।বর্তমান বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যে বীভৎস নির্যাতন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করেছে, কিশোরের ওপরে চলা ৬৯ ঘণ্টার নির্যাতন তার আশপাশেও না। এখানে উল্লেখ করে রাখি, হেফাজতে শারীরিক নির্যাতন দূরেই থাকুক, ন্যুনতম মানসিক নির্যাতনও আইন বিরোধী।

একজন স্বনামধন্য সাংবাদিকের নেয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারি ‘অজ্ঞাতস্থানে’ নেবার পর কিশোরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল,

‘তোর পরিবারে কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে?’।

‘করে’ দৃঢ়তার সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল কিশোর।

‘কে?’

‘পিতা…এবং বোন…’

এরপর কিশোরের ওপর নেমে আসে ভয়ঙ্কর নির্যাতন। দুই হাত দিয়ে একসঙ্গে কানে তীব্রভাবে আঘাত করে, মূলত কানের পর্দা ফাটানোর জন্য এটা করা হয়। খুব লক্ষণীয় বিষয় হল, কিশোরের দৃঢ় উচ্চারণ তার পিতা এবং বোনের আওয়ামী লীগ করা দেখাই যাচ্ছে তাকে বাঁচাতে পারেনি।

কিশোরের বিরুদ্ধে আনা বেশ কিছু অভিযোগের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযোগ ছিল সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ বেসরকারি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নিয়ে কার্টুন আঁকা।তিনি ওই ব্যবসায়ীকে কীভাবে চেনেন, কেন ওই ব্যক্তির কার্টুন এঁকেছেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। কিশোর যে কার্টুনটি এঁকেছিলেন সেটি পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস শরাফত এর, যা মুশতাকের মৃত্যুর পর ফেইসবুকে ভেসে বেড়িয়েছে।কিশোরের পরিবার যতই আওয়ামী লীগ করুক, তার চেয়ে প্রভাবশালি আওয়ামী লীগ এই দেশে আছে, যাদের সাথে ঠোকাঠুকি করলে বরদাশত করবে না সরকার, লেলিয়ে দেয়া হবে সরকারি বাহিনী।

মজার বিষয় হল, কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা, ‘জনতার মঞ্চ’ এর উদ্যক্তা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এই শরাফতের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। বসে নেই শরাফতও – একই দিনে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে চিঠি পাঠান মইউদ্দিন খান আলমগীরের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে। এখানে দুর্নীতির অভিযোগ আর শত কোটি টাকায় আটকে নেই, গড়িয়েছে হাজার কোটি টাকার ঘরে। শুধু তাইই নয়, দু’জনেই মিডিয়ায় একে অপরকে মিথ্যেবাদি বলে বক্তব্য দিচ্ছেন, যদিও তাদের অতি প্রিয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কেউ কারো বিরুদ্ধে সন্মানহানির মামলা করছেন না। দু’জনেই জানেন তারা কেউ কাউকে সহজে হজম করে ফেলতে পারবেন না, যতটা সহজে হজম করা যায় কিশোর কিংবা কাজলকে।

জনাব মহিউদ্দিন খান আলমগীর প্রসঙ্গে মনে পড়ল তার গুণধর ভাগ্নের কথা। বেশ কয়েক বছর ধরে ভিসিদের কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে মোটামুটি শীর্ষে অবস্থান করছেন বেগম রকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ। দুই দিন আগেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জনাব কলিমুল্লাহ এর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছেন। ৭৯০ পৃষ্ঠার সেই শ্বেতপত্রে অভিযোগের সংখ্যা ১১১ টি। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, জনাব কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।

নিজে চরম বিপদে পড়ার অল্প কিছুদিন আগেই জনাব কলিমুল্লাহ মাঠে নেমেছিলেন আরেক জনের বিপদে সাহস যোগাতে।গবেষণা জালিয়াতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সাফাই গাওয়ার সংবাদ সন্মেলনটি করেছিলেন জনাব কলিমুল্লাহ এবং ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে পাশে বসিয়ে। আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক এই আইনজীবীকে কিছু দিন আগেই দুর্নীতির অভিযোগে মানবতা বিরোধী অপরাধ বিচারের ট্রাইবুনাল থেকে অপসারণ করেছিল প্রসেকিউশন টিমের সরকার সমর্থক অন্য আইনজীবীরা।

সংবাদ সন্মেলনে সামিয়া রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বিকার করেন এবং বলেন সবকিছুই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তার বয়ানমতে এই ষড়যন্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন এবং একজন প্রতিশোধপরায়ন অতি ক্ষমতাধর উচ্চপদস্থ নারী শিক্ষক জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সব পদে আসীন শিক্ষকরা সবাই যে কেবল ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক তাই নয়, অধিকাংশের ক্ষেত্রে এটাই তাদের একমাত্র যোগ্যতা। সুতরাং সমস্যাটা যে ঘরের মধ্যে ঘরে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

পৌর নির্বাচনের শুরু থেকেই পত্রিকা আলো করে আছেন, জনাব কাদের মির্জা। তিনি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের আপন ভাই। পুরো সময়টাই দেখা গেছে বিভিন্ন উপলক্ষে তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত সবার বিরুদ্ধে ‘সত্যবচন’ চালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগে তিনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে নাই, এবং সুষ্ঠু নির্বচন হলে আওয়ামী লীগের এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। যাদের বিরুদ্ধে মির্জা সাহেবের এত রাগ, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফেনীর সাংসদ নিজাম হাজারি, নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল হক, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সন, চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র এবং সর্বোপরি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।দুই ভাইয়ের রেষারেষি এমন পর্যায়ের যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুকে বুকের কষ্ট চেপে লিখেছেন, নোবডি নোজ দ্য রিজন বিহাইন্ড মাই সাইলেন্স। আর দুই ভাইয়ের সংকটের জন্য প্রকাশ্যে ভাবীকে দায়ী করা কাদের মির্জা ফেইসবুকে তাদের পারিবারিক ছবির পাশে লিখেছেন - ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন, যদিও পৃথক হয় নারীর কারণ।

দীর্ঘ সময় জনগণের কাছে জবাবদিহিতাহীনভাবে ক্ষমতায় থাকলে, বিরোধী সকল দল মতকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালালে একটা দলের কী পরিণতি হয়, আওয়ামী লীগ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। দীর্ঘ ১২ বছরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং সুবিধাভোগীদের ভেতর অনেকগুলো ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে যেটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাষায় ঘরের ভেতরে ঘর, মশারির ভেতরে মশারি। এখানে প্রত্যেকেই প্রতি মুহূর্তে নিজের স্বার্থরক্ষা করতে এবং সুবিধার নিত্য নতুন পথ খুলতে এতটাই মরিয়া যে ন্যুনতম বিচার-বুদ্ধি, বিবেচনা, বিবেক কারো মধ্যে নেই।

এই কলামে বেশ কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম, কারণ সেগুলো খুব সাম্প্রতিক এবং আলোচিত। কিন্তু এমন ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটেছে অসংখ্য। এক বড় মশারির ভেতরে কতগুলো মশারি আরও টানানো হবে, টানালে কারা টানাবেন, পাশাপাশি থাকা মশারিগুলোর মধ্যে কোনটি গুরুত্ব বেশী পাবে, একই মশারির মধ্যে থাকা মানুষদের মধ্যে কে বা কারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেসব নিয়েই চলছে এখন আওয়ামী লীগের সংকট। এর ফল সুদূর প্রসারী।এই ধরণের সংকট দলকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে নিশ্চিহ্নতার পথে নিয়ে যায়।

  •  লেখক জাতীয় সংসদ সদস্য ও আইনজীবী।