Search

Monday, September 4, 2023

মুক্তির এই দিনে আরেক মুক্তির অপেক্ষা — ড. মোর্শেদ হাসান খান



এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় এক এগারোর ভুক্তভোগী সামকগ্রিকভাবে বাংলাদেশ। ৯০ দশকের পুরোটা জুড়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও জীবন দানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে জনকাঙ্ক্ষিত  গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তা ২০০৭-এর এক এগারোর সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। এই পথপরিক্রমায় ২০১৪ ও ২০১৮-এর ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন ও ভোটচুরির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের চূড়ান্ত মৃত্যু ঘটানো হয় । তাই বলা যায় আজকের গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশের দুঃখজনক পরিণতির সদর দরজা হচ্ছে এক এগারো। আর এই পরিণতিতে উপনীত হতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভ্যানগার্ড বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও এর নেতৃত্বের উপর শুরুতেই আনা হয় চরম আঘাত। বিএনপির ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কাণ্ডারি তারেক রহমানকে করা হয় চূড়ান্ত নিশানা । মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ এনে তাঁকে সেপ্টেম্বর ৩, ২০০৭,  কারাবন্দি করা হয়। এরপর অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। কারাগারের নির্মম সেই অত্যাচারের ঘটনার সামান্যই আমরা জানি। ক্ষমতার অংশীজন না হয়েও কেবল মাত্র শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র হওয়া এবং বিএনপির আগামী দিনের অনিবার্য প্রধান নেতা হওয়ার কারণেই,  তাঁর উপর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ নিষ্ঠুর নির্যাতন নেমে আসে।

২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোর রাতে সে সময়কার অবৈধ সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী যৌথবাহিনী দেশের কোথাও কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও বাসা থেকে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন রিমান্ডে নির্যাতন ও টানা ৫৫৪ দিন কারাবাসের পর সরকারের সাজানো সবকটি মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের এইদিনে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের হিংসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনে জননেতা তারেক রহমান মুক্তির পরও হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না। এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় এ তরুণ নেতার জীবন এখনও যন্ত্রণাকাতর। এখনও বিদেশে সেই নির্মম নির্যাতনের ক্ষত সারাতে চিকিৎসা নিতে হয় তাঁকে। গ্রেফতারের ১৬ বছর পর সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী আদালত এক রায় দিয়েছে। সেই রায় এবং বিচার প্রক্রিয়া যে সম্পূর্ণ সাজানো ও প্রহসনের সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

কথিত ১/১১’র মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোর রাতে কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা, জিডি এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিতর্কিত সরকারের নির্দেশে জরুরি বিধিমালায় গ্রেফতার করা হয় সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক তারেক রহমানকে। গ্রেফতারের পরদিন কাফরুল থানায় পুলিশ একটি জিডি ও গুলশান থানায় করা হয় চাঁদা দাবির মামলা।  সেই সরকার ও পরবর্তীতে বর্তমান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করে শতাধিক সৃজনকৃত মামলা। গ্রেফতারেরর আগে, পরে ও এখনো  গোয়েবলসীয় কায়দায় তাঁর বিরুদ্ধে চলছে মিথ্যাচার। 

মুদ্রা পাচারের মিথ্যা অভিযোগে দুদকে দায়ের করা একটি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেলেও হাইকোর্ট তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড  দেয়। নিম্ন আদালতের যে বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন সরকারের রোষানলে পড়ে তিনিও আজ নির্বাসিত। মূলত নিম্ন আদালত থেকে তারেক রহমান খালাস পেলেও  সরকারের ইচ্ছায় তাঁকে রাজনীতি থেকে সরাতে এই সাজা দেয়া হয়। 

এক এগারোর সরকারের দুই বছরসহ বর্তমান সরকারের আমলেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি দিয়ে টাস্কফোর্স, দুদকসহ সকল সংস্থাই দেশে-বিদেশে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করেও তাঁর বিরুদ্ধে অভযোগ দায়ের করার মতো কোনো অপরাধের প্রমাণ পায়নি। সে সময় পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতন ও তাঁকে চাপে রাখতে গ্রেফতার করা হয় তাঁর মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও একমাত্র ছোট ভাই আরাফাত রহমানকে। তাঁকে দেশ ছাড়তে প্রচণ্ড চাপ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি মায়ের মতোই রাজি হননি দেশ ছাড়তে। ফলে বিপথগামী  সেনা কর্মকর্তারা তারেক রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করে। তার শরীর অসংখ্য জখমে ভরে দেয়া হয় রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে। তাঁকে অনেক উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। মেরুদণ্ডে আঘাত করে মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। কিন্তু দেশবাসীর দোয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। রিমান্ডে সীমাহীন বর্বরোচিত নির্যাতন, হাসপাতালে ভর্তি, প্রিয় নানীকে হারানো, মা ও একমাত্র ভাইয়ের কারাবরণ ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে কারাগার ও হাসপাতালের প্রিজন সেলে এক বছর ৫ মাস ২৯ দিন কাটান তিনি।

গ্রেফতারের পর থেকে তারেক রহমানের প্রতি সরকারের আচরণ ও মামলাগুলো পর্যালোচনা করলেই দেখা যায়, কত নিষ্ঠুরভাবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একজন নেতাকে মিথ্যা কালিমা লেপন করে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে চেয়েছিল। গ্রেফতারের পরদিন ৮ মার্চ কাফরুল থানার ওসি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এক জিডিতে উল্লেখ করেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিজে ও দলীয়  নেতাকর্মী, বন্ধুবান্ধব ব্যবসায়িক পার্টনারদের দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদেশি টেন্ডার ক্রয়, বিমান মন্ত্রণালয়ের কমিশন,  যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। তাঁর নিজ ও আত্মীয়স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমার প্রাথমিক প্রমাণাদি আছে। জরুরি অবস্থাকালীন সরকারের সকল সংস্থার সহায়তায় তদন্ত শেষে দুদক ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে ব্যাংক স্থিতি হিসেবে ঢাকা ব্যাংকের একাউন্টে ২৮ হাজার ১৬২ টাকা ও এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬ হাজার ২৯০ টাকার সন্ধান পায়। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকার থেকে পাওয়া ঢাকা ও বগুড়ায় কিছু জমি পায়। এর বাইরে আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল কাফরুল থানায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা জিডির বিষয়ে ওসির ক্ষমা প্রার্থনা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের প্রেক্ষিতে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে জিডিটি নথিভুক্ত করা হয়। অব্যাহতি দেয়া হয় দৈনিক দিনকাল সংক্রান্ত মামলা থেকেও। গ্রেফতারের  ১৬ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন চৌধুরী মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর তারেক রহমানকে পুলিশের হেফাজতে না দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অজ্ঞাত লোকদের হেফাজতে নিয়ে চোখ বেঁধে বর্বরোচিত কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে পরে তিনি আদালতকে অবহিত করেন। জরুরি অবস্থাকালীনই মামলার বাদী আমিন উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এবং স্ট্যাম্পে হলফনামায় দাবি করেন এক বিভীষিকাময় মুহূর্তে যৌথবাহিনী তাকে আটকিয়ে রেখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তারেক রহমান তার নিকট কোনো সময়ে চাঁদা দাবি করেননি বা তিনি কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেননি। ষড়যন্ত্রকারীদের হিংসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে তারেক রহমানের ওপর যে ধরনের নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছিল তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। তারেক রহমানের উপর এক লে: কর্নেল নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল বলে অবশেষে স্বীকার করেছে ষড়যন্ত্রকারীদের মূলকুশীলব জেনারেল মঈন। গ্রেফতারের পর পুলিশ রিমান্ড ও কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে একটানা ৫৫৪ দিন বা ১৮ মাস কারাবাসের পর ১২টি মামলায় জামিন  পেয়ে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি পিজি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান। মুক্তির পরও হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। আদালতের নির্দেশে সেখান থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি যান লন্ডনে। তিনি এখনো সেই লন্ডনেই রয়েছেন।

তারেক রহমানকে বলা হয় ক্যারিশমেটি লিডার। তিনি শত জুলুম-নির্যাতনের পরও হাল ছাড়েননি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্য রূপকার তারেক রহমান দেশের প্রতিটি গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বীজ বুনে দিয়েছিলেন তা আজকে মহীরূহ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারেক রহমানের একটি ডাকে এখন মুহূর্তের মধ্যে সারা দেশে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সবখানেই আজ বিএনপি নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি। সভা-সমাবেশ মুক্তিকামী জনতার ঢেউ। 

তাইতো অতীতের মতো আজও ভোট ডাকাত, ব্যাংক লুটেরাদের আতঙ্কের নাম দেশনায়ক তারেক রহমান। যার হাতে আগামী সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ, যারা কাঁধে দেশের ১৮ কোটি মানুষের সুষম উন্নয়ন, আর্থিক নিরাপত্তা ও সুখ-সমৃদ্ধির ভার। দেশের মানুষ আজ তার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায়। দেশের মানুষ আরেকটা বিপ্লবের অপেক্ষায়। আরেক মুক্তির অপেক্ষায়। আরেক নেতার আবির্ভাবের প্রতীক্ষায়।  সেই নেতাটি আর কেউ নন, তিনিই জিয়া দৌহিত্র তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমান। যার হাতে নিরাপদ থাকবে দেশ, মাটি ও মানুষ। 

লেখক — সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি ও সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল এবং   মহাসচিব, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব।  


দূরদর্শী নেতা তারেক রহমান ——— আমিরুল ইসলাম কাগজী ও অধ্যাপক ড মোর্শেদ হাসান খান

রবার্ট কে. গ্রিনলিফ তাঁর বই The Servant as Leader-এ লিখেছেন, ‘দূরদর্শীতা — একজন নেতাকে নেতৃত্ব দেয়, তাঁকে পথ দেখায়। যখন তিনি তার এই দূরদর্শিতা হারিয়ে ফেলেন এবং অন্য বিষয় দ্বারা পরিচালিত হন তখন তিনি  কেবল নামমাত্র নেতা।  সকল মহান নেতাই দুটি জিনিসের অধিকারী ছিলেন —  তারা জানেন তারা কোথায় যাচ্ছেন ও তারা অন্যদেরকে নিজেদের অনুসারী করতে সক্ষম। 


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দূরদর্শী নেতা। ফ্যাসিবাদী সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। মিথ্যা বানোয়াট মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তাকে দেওয়া হয়েছে কারাদণ্ড। সেই দণ্ড তাকে দমিয়ে রাখতে পারে নাই। কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে  তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন। তিনি যে শুধু আজ সংগ্রাম করছেন তাই নয়,  একেবারে শিশু কাল থেকে সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছে তার লড়াই। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। এখন তিনি আন্দোলন করছেন মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি চান মানুষের ভোট দান প্রক্রিয়া  যাতে একটি স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। তিনি মনে করেন জনগণ সুষ্ঠুভাবে নিরাপদে নির্বিঘ্নে যাদের ভোট দেবে তারাই সরকার পরিচালনা করবে। 


তারেক রহমান সমকালীন রাজনীতি নিয়ে রোড টু ডেমোক্রেসির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। প্রথমেই তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মত ঝেঁকে বসেছে ভোটারবিহীন ও নিশি রাতের ভোটের অবৈধ সরকার। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে বিরোধী মতকে তারা দমন করে রাখে নানা কালাকানুন জারি করে। যার ফলে কথা বলার স্বাধীনতা থাকে না, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না এমন কি সভা সমাবেশ করার অধিকারও রোহিত করা হয় পুলিশ দিয়ে। সর্বশেষ সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট-সিএসএ, যাকে বলা হয় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিকল্প। শুধুমাত্র সঠিক কথা লেখার জন্য শত শত  সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে। বিরোধীদের দমন করতে আইন আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে দলীয় স্বার্থে। আদালতকে ব্যবহার করে ২০১৮ সালে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে বিএনপি'র তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। এই কাজটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ হিংসা থেকে। কারণ শেখ হাসিনা যতবার নির্বাচন করেছেন একটির বেশি কোন আসন থেকে তিনি জয়ী হতে পারেননি। বাকীগুলোতে পরাজিত হয়েছেন।  বিপরীতে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রত্যেকবার পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে নিয়ম করা হয় একজন প্রার্থী তিন আসনের বেশি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সে সময়ও তিনি তিনটি আসন থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই জনপ্রিয়তা যখন কোন অবস্থাতেই ম্লান করা যাচ্ছে না তখন শেখ হাসিনা আদালতের মাধ্যমেই এই মহীয়সী নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বললেন আদালত স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছে। একই নাইকো মামলায় আসামি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দুজনই। শেখ হাসিনা নিজে ক্ষমতায় গিয়েই তার সব মামলা  প্রত্যাহার করে নিলেন। আর বেগম জিয়ার মামলা ঝুলিয়ে রেখে বিচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা ছিল সব দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি করে শাস্তি দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে। মানি লন্ডারিং এর এক মামলায় যখন তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো তখন সেই বিচারককে হুমকি দেওয়া হয়,  ভয়ে সেই বিচারক দেশছাড়া হয়ে গেছেন। জীবন নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে এদেশের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে। অতি সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডাক্তার জুবাইদা রহমানকে পর্যন্ত তিন বছরের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যাতে তিনিও কোনদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। শেখ হাসিনার টার্গেট বাংলাদেশের যত জ্ঞানীগুণী, শিক্ষিত, ভদ্র, পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে যারা বসবাস করেন - নানা কায়দায় তাদের হেনস্তা করা। নোবেল বিজয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস বলতে গেলে শেখ হাসিনার চক্ষুশুল। বিশ্বের শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন  বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে ইউনূসের পক্ষে দাঁড়ান তখন সেটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে ছাড়েন না তিনি। বলেন ইউনূস বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।  অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে,শেখ হাসিনা বনাম গণতন্ত্রকামী জনগণ, শেখ হাসিনা বনাম বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা বনাম গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার আদালত বনাম বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী।


নেতৃত্ব নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, তিনি মনে করেন তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে তাহলে সেই নেতা হবেন দায়িত্ববান প্রজ্ঞাবান, তাদের উপর ভরসা রাখা যাবে। তারাই তো হবেন উপজেলা নেতা, জেলার নেতা, জাতীয় নেতা। একদিন তারাই বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের হাল ধরবেন। সেখানে একক নেতৃত্বের কোন স্থান নেই সবাই মিলে দলকে এগিয়ে নেবেন। বিএনপি যে একটি গণমুখী দল জনগণের অকুণ্ঠ ভালবাসা এই দলটিকে ঘিরে সেটা তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে বিশেষ করে ১০ টি বিভাগীয় শহরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে তিনি মাইলফলক বলে উল্লেখ  করেছেন। পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ এবং আওয়ামী লীগ দলীয় পেটোয়া বাহিনীর জুলুম নির্যাতন উপেক্ষা করে বিএনপির নেতা কর্মীরা এসব সমাবেশ সফল করেছে। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারেক রহমান নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গরিব মানুষদের  সাথে নিয়ে সংগ্রাম করছেন। এর ফলে,গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শহরের শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ  এখন বিএনপিকে তাদের নিজের দল মনে করতে আস্থা পায়। এটা তারেক রহমানের জন্য বিরাট সাফল্য।

 

আওয়ামী লীগ বিশেষ করে দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা বিগত দিনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামের গায়ে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদের তকমা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। তার দলের সন্ত্রাসীরা বাসে আগুন দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, জেল জুলুম করে নির্যাতন চালিয়েছে। এ ব্যপারে অনেক খবর বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।  বিএনপি নয় আওয়ামী লীগই যে এ দেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী দল-সেটা তাদের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড এবং কথাবার্তায় প্রমাণ মেলে। দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা এক সময় বলেছিলেন,   ‘একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকবে না। যে হাত দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লেখা হবে সেহাত পুড়িয়ে দেয়া হবে।’ তাদের নেতা মন্ত্রীরা টিভি টকশোতে পর্যন্ত  বিরোধী পক্ষের আলোচকের চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে না, তারা প্রতিপক্ষকে দাবিয়ে রাখতে চায়। বিএনপি কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি করে না। শেখ হাসিনা কথায় কথায় এই দলটির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে। অথচ এই দলটি দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে  এরশাদের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে এবং মানুষের ভোটের অধিকার  প্রতিষ্ঠা করেছে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ একবার ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। সব দল বন্ধ করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। আবার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। মানুষ এখন ভোট বিমুখ।  বিএনপি'র কাঁধে তাই আজ বড় দায়িত্ব, ১৯৭৫ সালের ৭ ই নভেম্বর সিপাহী জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথমবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। এরশাদ ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন জারি করে সেই গণতন্ত্র আবার হরণ করে। আর শহিদ জিয়ার সহধর্মিণী   বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এখন তারেক রহমানের হাত ধরে আসবে এদেশের তৃতীয় দফায় গণতন্ত্র। তারেক রহমানের নির্দেশে  বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে সেই গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে আনবে। 


বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র নেই মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত জনগণের ভোটাধিকার আজ সোনার হরিণ ঠিক সেই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দিতে শুরু করেছে। বিএনপি যে একটি গণতান্ত্রিক দল। এই দলটি যে সন্ত্রাস মৌলবাদ প্রশ্রয় দেয় না সেই কথাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন তারেক রহমান । বিএনপি'র ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতের যে সংশয় সন্দেহ ছিলো  সেটাও কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সে কারণে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকর বলেছেন বাংলাদেশে যে সরকারি আসুক না কেন তাদের সঙ্গে কাজ করতে কোন সমস্যা হবে না। বিএনপির চলমান ভোটাধিকারের আন্দোলনে  যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ প্রভাবশালী দেশগুলোকে পাশে পাওয়া এক বিশাল সাফল্য বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে যেমন এক ঘরে হয়ে পড়েছেন তেমনি দেশের ভেতরেও হয়ে পড়েছেন বন্ধুহীন। এর জন্য বিএনপি এবং দলটির বর্তমান কর্ণধার তারেক রহমানকে দীর্ঘ ১৬টি বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে।


তারেক রহমান একদিকে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে কিভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করা হবে তার একটা রূপকল্প প্রণয়ন করেছেন। তিনি রূপকল্পে প্রাধন্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন ক্ষমতায় আনার বিষয়টিতে। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি থাকা যাবে না, সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রচলনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ করা, শিক্ষিত বেকার যুবসমাজকে কর্মমুখী করে তোলা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কে জোরদার করাসহ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়; হেলেন কেলারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘অন্ধ হয়ে জন্ম নেওয়ার চেয়ে খারাপ কী হতে পারে?’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘দৃষ্টি আছে কিন্তু রূপকল্প (vision) নেই।’ তারেক রহমান সেই রূপকল্প প্রণয়ন  করেছেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে।

দেশনায়কের কারামুক্তির দিনে গণতন্ত্রমুক্তির প্রত্যাশা

— অধ্যাপক ড. আবুল হাসনতা মোহাঃ শামীম



বাংলাদেশের বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষমাত্রই স্বীকার করবেন ইতিহাসের অন্যতম এক কালো অধ্যায়ের নাম এক এগারো। দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের অগ্রদূত আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশনায়ক তারেক রহমানকে তখন কারাগারে যেতে হয়েছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির পরিচালনার দায়িত্ব এই মহান নেত্রীর কাছ থেকে হাত বদলের পর পুরো বদলে যায় পরিস্থিতি। গত কয়েক  বছরে সমৃদ্ধ একটি দেশের সব সেক্টরে ব্যর্থ হওয়ার যে নষ্ট নজির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মূলেও এই এক এগারো।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জানেন বর্তমান যতো রাজনৈতিক সমস্যা, যত মানুষ  এখন অবধি গুম-খুন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তার মূলে রয়েছে এই অভিশপ্ত এক এগারো। আপসহীন দেশনেত্রী আমাদের গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া পুরো ৯০ দশক ধরে সীমাহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক অর্থে তার কবর খোঁড়া হয়েছিল ২০০৭ সালের সামরিক পৃষ্ঠপোষকতায় দাঁড়ানো সরকারের মাধ্যমে। এরপর ২০১৪ সালে করা হয় গণতন্ত্রের জানাজা। এরপর  ২০১৮ সালের ভোটার ও প্রার্থীবিহীন  মধ্যরাতের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরাসরি দাফন করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে।

ইতিহাসের দীর্ঘদিনের অর্জনকে হুট করে কয়েকশত বছর পেছনে ফিরিয়ে দেওয়া এই গণতন্ত্রহীন এবং মানবাধিকারবিহীন বাংলাদেশের অসহনীয় পরিণতির শেকড়টা অনেকাংশে গ্রোথিত ঘৃণ্য এক এগারোতে। তখনকার দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করতে গেলে, তাদের স্বপ্নের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে গেলে সবার আগে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী শহিদ জিয়ার আদর্শে এবং আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বলীয়ান গণতান্ত্রিক শক্তিকে আটকাতে হবে। তারা শুরু থেকেই সেই অপচেষ্টা করেছে।

এক এগারোর অপশক্তি বাংলাদেশের যে কয়েক রাজনৈতিক অবকাঠামো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করেছিল তার প্রাথমিক ধাপ ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র উপর মরণকামড় বসানো। তারা শুরুতেই আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের টার্গেট করে। তারা বিএনপির ত্যাগী  নেতৃত্বের উপরেও চরম আঘাত হেনেছিল।  কিন্ত এই অপশক্তি জানতো শহিদ জিয়ার রক্ত কখনও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করলে তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। এজন্য তারা সবথেকে বড় টার্গেট মনে করেছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি জনাব তারেক রহমানকে। তারা বুঝতে পেরেছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া কিংবা বেনাপোল থেকে তামাবিল বিস্তৃত ছোট্ট এই দেশটার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বাস করেন শহিদ জিয়া। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমান ধীরে ধীরে ঠিক সেই জায়গাটাই নিতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে অপশক্তির মনে কাঁপন ধরেছিল তারেক রহমানের তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রিয়তা এবং কর্মসূচির ধারাবাহিক সাফল্য দেখার পর।

শহিদ জিয়ার সন্তান হিসেবে সততা ও নৈতিকতার প্রশ্নে তারেক রহমানকে ঘায়েল করা অপশক্তি জন্য অতটা সহজ ছিল না। তারপরেও তারা চূড়ান্ত নিশানা ঠিক করে ফাঁদ পাতে নানা  মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ সামনে রাখে। তারপর নজিরবিহীন ধৃষ্টতা দেখিয়ে আটক করা হয় তাঁকে। পাকিস্তানি হানাদার কিংবা জার্মান গেস্টাপো বাহিনীর মতো বর্বরতা নিয়ে কারাবন্দি  অবস্থায় জনগণের প্রিয় এই নেতার উপর করা হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। ভয়াবহ নির্যাতনের ফলে শারীরিকভাবে প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ খুব ভাল করেই জানেন কারাগারের নির্মম সেই  নির্যাতন আর অত্যাচারের জঘন্য ঘটনার ঘনঘটা। তিনি তখনও রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেননি। সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্বও পালন করতেন না। তার সবথেকে বড় অপরাধ ছিল তিনি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান। তাঁর আরও বড় অপরাধ ছিল বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে, তার বাবা ও মাকে অনেক ভালোবাসে; দেশের জনগণ সব ধরণের রাষ্ট্রীয় সংকট থেকে উত্তরণে তাঁদের পরিবারের উপরেই আস্থা রাখতে চায়।

জনগণের ভালবাসার বিপরীতে অজনপ্রিয় ষড়যন্ত্রীদের বীভৎস জিঘাংসা ছিল চরমে। তারা অনুমান করে নিয়েছিলো যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতায় সবার থেকে এগিয়ে থাকা তারেক রহমানই হতে যাচ্ছেন বিএনপির  আগামী দিনের কাণ্ডারি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে আস্থা রাখা প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশির হৃদয়ে কাঁপন ধরাতে তারা তাই  তাঁর উপর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম নির্যাতন করেছিল। তারা চেয়েছিল যেভাবেই হোক থামিয়ে দিতে হবে তারেক রহমানকে। তাহলে তারা বাংলাদেশের মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে পারবে। 

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মতো কায়দায় ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই ২০০৭ সালের ৭ মার্চ  সে সময়কার অবৈধ সরকার বাসা থেকে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। তাঁকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর রিমান্ডের নামে ধারাবাহিক  নির্যাতন চলতে থাকে তাঁর উপর।  ধারাবাহিক ৫৫৪ দিন কারাবাসে থাকতে হয় তাঁকে। তৎকালীন অবৈধ সরকারের সাজানো নানা মামলা থেকে আজ্ঞাবহ আদালত তাঁকে সহজে মুক্তি দেয়নি। অবশেষে আজকের দিনে চরম অসুস্থ অবস্থায় জামিন পেয়েছিলেন তিনি।

২০০৮ সালের এইদিনে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান বাংলাদেশের সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ষড়যন্ত্রকারীদের জিঘাংসা ছিল চরমে। তারা  ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোর রাতে কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা, জিডি এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বাদেই গ্রেফতারের পর যে নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছিল তারেক রহমানের উপর তার দৃষ্টান্ত বর্তমান বিশ্বে বিরল। ওদিকে তাঁকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছিল প্রোপাগান্ডা মেশিন। তারা চারদিকে ছড়িয়েছে মিথ্যার বিষবাষ্প। তারপরেও তারা তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি, বিপরীতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা।

ষড়যন্ত্রকারীদের সাফল্য একটাই তারা হত্যার ষড়যন্ত্র করে, দিনের পর দিন নির্যাতন করে যা পারেনি পরে চিকিৎসার প্রয়োজনে সেটাই করতে হয়েছে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন জনগণের প্রিয় নেতা তারেক রহমান। সীমাহীন শারিরীক নির্যাতনের চিহ্ন হিসেবে পুরো শরীরে তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকগুলো ভয়াবহ ক্ষত। তাঁকে  অনেক উপর থেকে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি আঘাতের পর আঘাত করে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল মেরুদণ্ড।

সাজানো মামলা এক থেকে একশত কিংবা এক লক্ষাধিক হতে পারে। কিন্ত তাতে মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায়, কখনও সত্য হয় না। এজন্য দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মিথ্যা মামলার বিষয়টি উল্লেখেরই প্রয়োজন বোধ করছি না। তবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে যারা তারেক রহমানকে থামাতে চেয়েছিল তারা বার্তা পেয়ে গেছে দিনবদলের। সম্প্রতি বিএনপির মহাসমাবেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন ঘোষণা দিলেন দেশনায়কের বক্তব্য রাখার ব্যাপারে তখন স্বৈরতান্ত্রিক অপশক্তি জনতার উচ্ছ্বাস দেখে বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কাটা খায়।

তারপর প্রিয় নেতা জনগণের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন ‘প্রিয় বাংলাদেশ, প্রিয় বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা। আসসালামু আলাইকুম…’ সমগ্র বাংলাদেশ আবার জেগে উঠেছে‘। উল্লসিত জনতার উচ্ছাসে তখনই ভেসে গেছে স্বৈরতান্ত্রিক অপশক্তির ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার দিবাস্বপ্ন। তারা বুঝতে পেরেছে ‘দখলদারির দিন শেষ, তারেক রহমানের বাংলাদেশ’। তারা জানে রিমান্ডের সেই বর্বরোচিত নির্যাতন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা সময়ের যন্ত্রণা, প্রিয় ছোট ভাই ও নানীকে হারানো, মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে মাকে কারাগারে আটকে রাখার ফলেও যাঁকে দমানো যায়নি। কারাগার ও হাসপাতালের প্রিজন সেলে এক বছর ৫ মাস ২৯ দিন কাটিয়েও যিনি তাঁর মাথা নিচু করেননি। তিনি আজ অনেক পরিণত এক জনগণের নেতায় পরিণত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে তিনিই আগামীর রাষ্ট্রনায়ক।

বিনা কারণে গ্রেফতারের পর থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নানা মিথ্যা মামলা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। কারণ মিথ্যা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে হেয় করার জন্যই হয়েছিল। এখানে নতুন করে আলোচনা কিংবা তুলনামূলক বর্ণনার কিছু নাই। সংখ্যার দিক থেকে যাই হোক মিথ্যা মিথ্যাই থাকে, সত্য হয়ে যায় না। একদিকে ক্ষমতাসীন অপশক্তি মামলা মোকদ্দমায় ভর করে দমন করতে চেয়েছিল তারেক রহমানকে। বিপরীতে এখন লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করে তাঁর শুধু একটি আহ্বানের।

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও আজ বিএনপি সমাবেশ ডাকলে হয়ে যায় মহাসমাবেশ, তারা মহাসমাবেশ ডাকলে সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। দেশনায়ক তারেক রহমানের আহ্বানে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি যেভাবে সভা-সমাবেশগুলোতে মুক্তিকামী জনতার ঢেউ দেখেছে বাংলাদেশ, তা দেশটির ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে একাধারে মুক্তি এবং সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছিলেন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁরই দেখানো পথে  মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের স্বপ্নে গণতন্ত্রের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাই দেশের জনগণ এখন বিশ্বাস করে তারেক রহমান যে ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ এর আহ্বান জানিয়েছেন তা সফল হবেই ইনশাআল্লাহ এবং এর মধ্য দিয়েই পুনরুদ্ধার করা যাবে বাংলাদেশের মানুষের হারিয়ে ফেলা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। দেশনায়কের কারামুক্তির দিনে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মনে করে তাদের গণতন্ত্রমুক্তির প্রত্যাশা পূরণ হবে এই নেতার হাত ধরেই।

লেখক   — অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। 


Saturday, August 12, 2023

যিনি বদলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে — প্রফেসর মোর্শেদ হাসান ও খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম

এক।  

শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান আরাফাত রহমান কোকো একজন  ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে সরাসরি রাজনীতির মাঠকে কর্মক্ষেত্র না করে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে তিনি প্রায় প্রকাশ্যে না এসে অনেকটা নিভৃতে নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন।

দুই। 

আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম আগস্ট ১২,  ১৯৬৯ ,  কুমিল্লায় বাবা জিয়াউর রহমানের কর্মক্ষেত্রে। যখন এই শিশুটির বয়স এক বছর সাত মাস তখন বাবা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। আবার দোসরা জুলাই ১৯৭১-এ এই শিশুটির বয়স যখন মাত্র এক বছর দশ মাস বিশ দিন তখন মা বেগম খালেদা জিয়া এবং বড় ভাই তারেক রহমান পিনোর সঙ্গে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে যখন মুক্তি পান তখন এই শিশুটির বয়স মাত্র দুই বছর চার মাস চার দিন! ১৯৭৫ সালের নভেম্বর বিপ্লবের সময় বাবা জিয়াউর রহমান বন্দি হন আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তখনো শিশুটি মাত্র ছয় বছরের! বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৮১-তে যখন শহিদ হন তখন আরাফাত রহমান কোকো মাত্র এগারো বছরের কিশোর! জীবনের প্রথম দশটি বছরেই শিশুটি কিছু বুঝে উঠবার আগেই স্বাধীনতার যুদ্ধে বন্দি হয়েছিলেন আবার পিতৃহারাও হয়েছেন! এরকম বিস্ময়কর শৈশব কৈশোর পেরিয়ে কোকো পরিণত হয়েছিলেন। অবুঝ শৈশবেই ১৯৭১-এ পাক-হানাদার বন্দিশালায় আটক হওয়ার পর দ্বিতীয় বার ২০০৭ সালে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বন্দি হন। ২০০৮ সালের ১৭ই জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। ২০১৫ সালের ২৪শে জানুয়ারি মালয়েশিয়াতে মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই তাঁর জীবনাবসান হয়। 

তিন।  

আরাফাত রহমান কোকো ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সাধারণ ও অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন। একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ঐতিহাসিক অবদান রাখলেও প্রচারের আলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেন। কোকো ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে থাকাকালীন সময়ে ক্রিকেট রাজনীতিমুক্তকরণ যেমন করেছেন, তেমনি বিরোধীদলীয় নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে কাজ করে বাংলাদেশে অনন্য নজির স্থাপন করেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের অধিকাংশই ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন না কিন্তু ডিওএইচএস ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে দ্বিতীয় বিভাগে খেলাটা পারিবারিক শক্তি না দেখানোর মত বিনয়! এ ধরনের বিনয় তার পুরো ক্রীড়া সংগঠক জীবনে লক্ষ্য করা যায়।

যেমন ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী সরকার যাকে ইচ্ছা তাকেই বোর্ড সভাপতি করতে পারতো। কাজেই ক্ষমতার চূড়ান্ত ব্যবহার করলে বোর্ড সভাপতি হতে পারতেন, তা না হয়ে বোর্ডের অধীনে ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আমুলে বদলে ফেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটকে। এমন কথা কেউ বলতে পারবে না তার বলয়ের বাইরে বাড়তি কোনো হস্তক্ষেপ কখনো করেছেন। ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে High-performance ইউনিটের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার তৈরি পাইপলাইনের সূচনা তার হাত দিয়ে। একথা সর্বজন বিদিত যে সাকিব, তামিম, মুশফিক, শুভ, এনামুল জুনিয়র প্রমুখ ক্রিকেটার হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের মাধ্যমেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। মোদ্দাকথা, খেলোয়াড় তৈরীর ধারাবাহিক পাইপ লাইন তৈরি হয়েছিল ডেভেলপমেন্ট কমিটির মাধ্যমে। তার মূল কারিগর ছিলেন কোকো।

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে ক্রিকেট খেলা হতো না। ক্রিকেট খেলোয়াড়রা এইসময় বসে থাকতেন । কোকো এই সমস্যা দূর করতে ২০০৪ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে ক্রিকেটের জন্য নিয়ে নেন। এটিকে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে রূপান্তর করতে ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে মিরপুর স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করেন কোকো। মিরপুর স্টেডিয়ামকে হোম অফ ক্রিকেট দেখিয়েই ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বাগতিক দেশের মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ।

দেশের ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখেন কোকো। দেশের ক্রিকেটকে মিরপুর ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত না করে সিলেট, খুলনা, বগুড়া ও রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তিনি। দলীয় ক্ষমতা হাতে থাকার পরও বগুড়ার একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে না করে মুক্তিযোদ্ধা শহিদ চান্দুর নামে নামকরণ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোচ, ট্রেনার, ফিজিও আনার ট্রেন্ড চালু করেন কোকো। বোর্ডের প্রফেশনাল কাজেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্ট পাওয়া যেত। ক্রিকেট বোর্ডকে করেছিলেন রাজনীতিমুক্ত। কাজটি করতে গিয়ে জনপ্রিয়তা বা বাহবা কুড়াতে যাননি কোকো। প্রেসকে ডেকে কাভারেজের আয়োজন করেননি। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হওয়া সত্ত্বেও সব মতের সংগঠকেরাই ছিলেন তৎকালীন ক্রিকেট বোর্ডে।

২০০৪ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের আয়োজনের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ কোকোর ক্যারিশম্যাতেই। সে সময় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এত বড় আয়োজনের উৎসবে পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য সারাদেশে হরতাল ডেকেছিল। সেই প্রতিকূল অবস্থাতেও একদিনে পনেরটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আয়োজন করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সফল এই আয়োজনের নেপথ্য কারিগর ছিলেন কোকো।

 চার।  

এইরকম একজন নির্লোভ, নির্মোহ, অরাজনৈতিক ক্রীড়া সংগঠককে আওয়ামী মিডিয়া দুর্নীতিবাজ,মাদকসেবী-কত কী বানিয়েছে! এই কোকো র নামে গাড়ি পোড়ানোর মিথ্যা মামলা দিয়ে আবার তার মৃত্যুর পর বেগম জিয়াকে সমবেদনা জানানোর নাটক দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছিল যে বেগম জিয়াকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে উনি উঠলে আপনাকে জানানো হবে। তারপরও তিনি তড়িঘড়ি করে বেগম জিয়ার বাসায় এসে গেট থেকে ফিরে যাওয়ার জঘন্য নাটক করেছিল। আওয়ামী মিডিয়াও এই ন্যাক্কারজনক প্রচারণায় অংশ নিল। তাতে কি খুব ক্ষতি হয়েছে?

২৪শে জানুয়ারি ২০১৫ তে মালয়েশিয়াতে কোকোর মৃত্যু হয়। অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলাগুলো মাথায় নিয়ে বিদেশের মাটিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মাত্র এক বছর দশ মাস বয়সে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দি হওয়া এই শিশুটি পরিণত বয়সে দেশে মৃত্যুর গৌরব অর্জন করতে পারেনি কায়েমী স্বার্থবাদী মহল এর কারণে।

মহৎ মানুষদের মৃত্যুও মহিমান্বিত! শহিদ জিয়ার মৃত্যুতে গোটা দেশ ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলো!  শহিদ জিয়ার জানাজায় শোকার্ত মানুষের অভূতপূর্ব উপস্থিতি ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেছিল। এমন জানাজা অতীতে হয়নি ভবিষ্যতেও হবে কীনা সন্দেহ! তবে ২৭শে জানুয়ারি সরকারবিরোধী কর্মসূচির সময় দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রায়-কারফিউ অবস্থার মধ্যেও যে জানাজা হয়েছিল সেটি অবিশ্বাস্য! একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে জনগণের উপস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছিল – “কোকোর জানাজায় অংশ নিতে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, মহানগর নাট্যমঞ্চ, গোলাপ শাহর মাজার থেকে জিপিও মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয় মানুষ। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এলাকায় লাখো মানুষ সমবেত হয়। ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর থেকে অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন।” 

কোকোর জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা কত ছিল বিভিন্ন দৈনিক বিভিন্ন তথ্য দেয়, কেউ বলে দশ লাখ, কেউ বলে পনের লাখ, আবার কেউবা বলে বিশ লাখেরও বেশি! অতি বিস্ময়কর! অবিশ্বাস্য! আমরা উত্তরা থেকে জানাজায় অংশ নিয়েছিলাম। রাস্তায় এয়ারপোর্ট ও রামপুরা ব্রিজে আমাদের সিএনজি চেক করা হয়েছিল। আমাদের পরিচিত অনেকেরই এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তারপরও প্রায় কারফিউ অবস্থার মধ্যে কোকোর জানাজায় জনগণের বিপুল উপস্থিতি এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে তিনি মহৎদের কাতারে, তাঁর মৃত্যুও মহিমান্বিত। এমন মহিমান্বিত মৃত্যু অনেক বড় নেতারও ভাগ্যে জোটেনি!



Monday, July 17, 2023

ডেঙ্গুতে পঙ্গু স্বাস্থ্যখাতের মুখোশ উন্মোচিত

——— অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান



লেখাটি যখন লিখছি তখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেবল রাজধানী ঢাকা নয় সারাদেশেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ইতোমধ্যে, ২০২৩ সালেই সরকারি তথ্য মতেই ১১৪ জন মানুষ মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে বাইশ হাজার। বাস্তব সংখ্যা অনেক বেশি। আজই খবর ছড়িয়ে পড়েছে শেখ ফজলে নূর তাপস সপরিবার রয়েছেন ১৭  দিনের বিদেশ ভ্রমণে। অন্যদিকে অবৈধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক রয়েছেন বিদেশ সফরে। ২০১৯ সালেও ডেঙ্গু সঙ্কটের সময় তিনি বিদেশ চলে গিয়েছিলেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দিন যতো যাচ্ছে ততোই এর বাহক এডিস মশা তার চরিত্র বদলাচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি কামড়ানোর সময়ও বাড়িয়েছে। এখন এ মশা রাতের বেলাতেও কামড়াচ্ছে। এর ফলে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু স্বস্তিতে বসবাসের কথা ভাবছে তখন নাগরিক নানা বঞ্চনার পাশপাশি যোগ হয়েছে ডেঙ্গু আক্রমণ। এতে নাগরিকদের স্বস্তির সেই স্বপ্ন এখন দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। সেইসঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীর মেয়রদের অবহেলা ও দায় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতায়  ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ বিস্তার। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, মেয়ররা সারা বছর মশা নিমূলে কোনো কাজ করেন না। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন রাজধানী ঢাকার দুই মেয়র। এর মধ্যে আবার উত্তরের চেয়ে দক্ষিণের মেয়রের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ বেশি। তিনি চেয়ারে বসার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই ধরণের রুটিন কাজগুলোয় অনেকটা ভাটা পড়ে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম মশা নিধন। এ খাতে বিপুল বাজেট থাকলেও সে তুলনায় যৎসামান কাজই চোখে পড়ে সারা বছর।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, সারা বছর চুপচাপ থাকা মেয়ররা এখন দৌড়ঝাপ করছেন। অথচ তাদের রুটিন কাজ চালিয়ে গেলে এখন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ প্রকোপ দেখতে হতো না।

পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে বড় আঘাত হানে ২০১৯ সালে। ওই বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং সারা বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫০০।

এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও কয়েক গুণ খারাপ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ বছর এখন পর্যন্ত ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্য জুলাই থেকে শুরু করে পুরো আগস্ট মাসটিতে এই ভয়াবহতা আরো উর্ধমুখী থাকবে।

এখন পর্যন্ত ল্যাবরোটোরিতে গবেষণার যে ফলাফল দেখা গেছে তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের এই শঙ্কার যায়গাটি যদি সত্যি হয় তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে তা ভাবতেও গা শিউরে উঠছে।

এবার বর্ষা শুরুর আগে থেকেই এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চলতি বছর গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৭১ জন। গত মঙ্গলবার দেশে ৬৭৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা এ বছরের সর্বোচ্চ।

মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলমান দূর্নীতি ও নগর ব্যবস্থাপনায় থাকা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতায় গত ছয় মাসে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছে পঞ্চাশ জনের বেশি সাধারন মানুষ, যাদের মধ্যে নিস্পাপ শিশুও রয়েছে। শুধুমাত্র জুন মাসেই মারা গেছে ৩৪ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী।

এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। সম্প্রতি এক জরিপে ঢাকার ১১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৭টিতে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নামে দূর্নীতির পরিধি বাড়াতে ‘ড্রোন ব্যবহার করে’ মশা নিয়ন্ত্রনের প্রচলন করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন যা চট্টগ্রামেও অনুসরন করা হয়েছে। সাধারন মানুষের অর্থ ব্যয় করে উচ্চাভিলাসী প্রকল্প গ্রহন করে দুর্নীতির নতুন ক্ষেত্র বের করছে সরকারের সুবিধাভোগীরা।

তার বিপরীতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করছে প্রতিনিয়ত। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ১ শতাংশেরও কম। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও এ খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মশা নিয়ন্ত্রণে গত ৬ অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যয় করেছে প্রায় ৩৮৭ কোটি টাকা। ঢাকা উত্তরের মেয়র সম্প্রতি স্বীকার করেছেন রাজধানীর মশা নিধনে এতদিন যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, সেটি ভুল ছিল। জনগণের টাকা লুট করার পরে ‘পদ্ধতিকে দোষারোপ’ করে আওয়ামী সুবিধাপুষ্ট মেয়ররা কোনভাবেই মানুষের প্রাণহানির দায় এড়াতে পারেনা। ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানো এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগী দ্রুত শনাক্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বললেও নেয়া হচ্ছে না তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ। নাগরিকের করের টাকায় চলা স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়, সিটি কর্পোরেশনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে অভিগম্যতা অনেকটাই কম।

ডেঙ্গুর এই মহামারী পরিস্থিতিতে যেখানে র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত সনাক্ত করা প্রয়োজন, তার বিপরীতে হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষার নামে কয়েক ধাপে অর্থ দিতে হচ্ছে সাধারন নাগরিকদের। যেটা অতি অমানবিক। আওয়ামীপপন্থি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লুটপাটের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে সারা দেশের সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য বলছে, রবিবার ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৩ জন। এ নিয়ে এ মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণকারীর সংখ্যা ৭৬ জন। এছাড়া রবিবার একদিনে আরও ৮৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭৪ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩১৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৩২৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঢাকার ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ২০৮০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১১৭৩ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮৪৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৯ হাজার ৬৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ১৭৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ হাজার ৫১৪ জন। ঢাকায় ৭ হাজার ৫২৫ এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৯৮৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু।

ঈদুল আযহার লম্বা ছুটির পর ৯ জুলাই রবিবার থেকে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ অবস্থায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে গেলো। বিশেষ করে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে খ্যাত এলাকাগুলোর বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ চরম উদ্বেগ আর নিরাপত্তাহীনতায় সময় পার করছেন অভিবাবকরা।

লুটপাট আর অর্থ পাচারের মহোৎসবের দেশে স্বাস্থ্য খাতের এমন পঙ্গু দশার বিষয়টি এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। স্বয়ং মন্ত্রী যেখানে লুটপাটের প্রধান সেখানে সরকারের আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতারাতো বেপরোয়া হবেই। তাইতো জনগণের টাকার সিংহভাগ এ খাতে বরাদ্দ রেখেও দিন দিন তলানীতে গিয়ে ঠেকছে স্বাস্থ্য সেবা। আর জবাবদিহিহীন ঢাকার সিটি মেয়রদের ক্ষেত্রেতো বিষয়টি আরো খোলামেলা।

জনগণের ভোটকে পাশ কাটিয়ে চেয়ারে বসা মেয়ররা যে জনগণের ভালোমন্দের বিষয়টি ভাবে না এর চেয়ে বড় প্রমান আর কি হতে পারে। তাইতো সময় এসেছে এইসব তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর। জনগণের করের টাকায় চলা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বজ্ঞানহীন শীর্ষ পদধারীরা কখনো নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করবে না। কেননা তাদের অনুপ্রেরণার যিনি বাতিঘর তার ডিকশনারীতে ‘লজ্জা’ কিংবা ‘দায় স্বীকার’ নামক কোনো শব্দ নেই।

————————————

Thursday, June 8, 2023

বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির মানেটা কী?

আলী রীয়াজ


বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০২৩ সালের ২৪শে মে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যদিও নীতিটি নিজ লক্ষ্যে দ্ব্যর্থহীন, তারপরও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে এর বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


কিছু দিক দিয়ে এই ভিসা নীতি দেশটির এলিট ফোর্স (র‍্যাব) এবং এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো আগের পদক্ষেপগুলোর ‘ফলোআপ’ হিসেবে এসেছে। এই ধারণা থেকে অনেকেই ভাবছেন যে, সামনে আরও কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা আসবে কিনা।


নতুন নীতিতে কী বলা হয়েছে?

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন তাদের সমর্থন করাটা নতুন ভিসা নীতির উদ্দেশ্য। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন নীতির মাধ্যমে যারা বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে তাদের ভিসা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।


নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ‘বাধা দেয়া’ হিসেবে কি কি বিষয় বিবেচিত হবে এবং কারা এর আওতায় আসবেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে নিজেদের সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থার ব্যবহারকে বাধা দেয়ার কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন নীতির আওতায় যারা আসবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।



পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু এটা স্পষ্ট করেছেন যে, এই নীতি শুধু সরকার এবং তার সমর্থকদের জন্যই প্রযোজ্য নয়, বিরোধীদের জন্যও প্রযোজ্য। যারা আদেশ দেবে তাদের ক্ষেত্রেও যে বিধিনিষেধগুলো প্রযোজ্য হবে সেটিও লু উল্লেখ করেছেন।


ওই নীতি দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে?

এই নীতির ঘোষণা প্রকাশ্যে সরকারকে লক্ষ্য করে দেয়া না হলেও দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দাবি করছেন, এটি তার স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান। এই অগ্রিম পদক্ষেপটি শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না হলেও এর বিস্তৃত পরিধি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের জন্যই একটি সতর্কবার্তা।

নীতির বিস্তৃত পরিধি এটাই দেখাচ্ছে যে, ওয়াশিংটন সরকার ও বিরোধী উভয়ের সঙ্গে সৎ এবং নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে।


তবে, এটি বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভেরও প্রতিফলন।


সতর্ক করা হলেও উপেক্ষা করা হয়েছিল:

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি এবং সামগ্রিক গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০২৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত দুটি গণতন্ত্র সম্মেলনেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় নি। এইসব পদক্ষেপের পর বারবার আহ্বান জানিয়ে এবং সতর্ক করে বলা হয়েছিল যে, রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের রাডারে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনকে ২০২৩ সালের এপ্রিলে বলেছিলেন যে, বিশ্ববাসী বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সহ যেকোনো দেশে গণতন্ত্রের অবক্ষয় সেই দেশের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ক্ষমতাকে সীমিত করে। ২০২২ সালের মার্চে রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড নিজের ঢাকা সফরকালে, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের ইস্যুকে একটি মূল বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলেছিল যে, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চাইলে এর সংস্কার একটি পূর্বশর্ত।



দুর্ভাগ্যবশত, এই সব আহ্বান এবং সতর্কতাকে গ্রাহ্য করা হয় নি। বাংলাদেশ সরকার মার্কিন চাপকে উপেক্ষা করে চলেছে, অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে। এই আহ্বানগুলোকে আমেরিকাবিরোধী পপুলিস্ট (জনতুষ্টিবাদী) বক্তৃতা দিয়ে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে ‘ভণ্ডদের আখড়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।


ভিসা নীতি দেয়ার নেপথ্যে:

অভ্যন্তরীণ নীতি এবং বিদেশ নীতি উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করতে উৎসাহিত করেছে বলে মনে হচ্ছে। ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য তিনটি অভ্যন্তরীণ কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে:



১. শেখ হাসিনা সরকারের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা। নির্বাচনের আগে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়া এবং বিরোধী নেতাদের নিপীড়নের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। সরকার এবং তার সমর্থকরা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ‘ড্রাকোনিয়ান’ আইনের বেপরোয়া ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। দেশে এবং বিদেশে সমালোচনা সত্ত্বেও তারা এ বিষয়ে অনমনীয় অবস্থান নিয়েছে। উপরন্তু, তারা উপাত্ত সুরক্ষা আইন (ডিপিএ)- এর মতো আরও নিয়ন্ত্রক আইন প্রবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই আইনের প্রবর্তন বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ ও ব্যবসার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে, সরকারকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান করবে।


২. ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত অবাধ এবং সুষ্ঠু নয় এমন নির্বাচনের সম্ভাব্য পুনরাবৃত্তি। ওই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘স্বচ্ছভাবে জালিয়াতির’ বলে অভিহিত করেছিল। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিরোধী দল এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের উদ্বেগের প্রতি সরকার এখনো উদাসীন।


৩. স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বেসামরিক প্রশাসনের ভূমিকা, যে নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্জন করেছে। নির্বাচনে মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও,  বেসামরিক প্রশাসনের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন বলে মনে হচ্ছে।


ভূ-রাজনীতির খেল

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গোঁ-ধরে থাকাটা ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে নয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসারিত এবং বহুমুখী হলেও বাংলাদেশে চীনের দৃঢ় অবস্থান নিয়ে ওয়াশিংটনে উদ্বেগ রয়েছে।


তাছাড়া, ২০১৬ সালে চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কেনার পাশাপাশি একই বছর বাংলাদেশ বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ যোগ দেয়। বিআরআই কেবল বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সহযোগিতার কাঠামোই নয়, এটি চীনের প্রভাবের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার একটি হাতিয়ারও বটে। তাই, বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন  ‘কোয়াড্রিলেটারাল সিকিওরিটি ডায়ালগ’-এ যোগ দিলে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এই বলে ২০২১ সালে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তার মধ্যদিয়ে চীনের প্রত্যাশাই ফুটে উঠেছে।


গত ছয় মাসে চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক তিন জন শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। জানুয়ারি মাসে (মার্কিন) সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের ঠিক আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং আশ্চর্যজনকভাবে মধ্যরাতে ঢাকায় যাত্রাবিরতি করেন। এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের ওয়াশিংটন সফরের একদিন আগে ঢাকা আসেন মিয়ানমারে চীনের বিশেষ দূত দেং শিজুন।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান উত্তেজনার মধ্যেই চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং ২৬শে মে তিন দিনের সফরে ঢাকায় পা রাখেন। চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-এ যোগ দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের বিবেচনায় রয়েছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবর্তিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির প্রতি ঢাকার প্রতিক্রিয়া উৎসাহজনক বলে মনে হয় না এবং বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক পশ্চিমাদের প্রত্যাশাকে সেভাবে পূরণ করতে পারে নি।


গণতন্ত্র ও মানবাধিকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর. বাইডেন এবং তার প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির কথিত কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশকে (এক্ষেত্রে) একটি উদাহরণ বানাতে চায় তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।


এতে কাজ হবে?

যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করেছে তাদের শাস্তি দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়াদের তালিকায় বাংলাদেশই প্রথম দেশ নয়। এর আগে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, নিকারাগুয়া এবং বেলারুশের অনেকের ওপর বিভিন্ন আইনের আওতায় গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনের পরে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। তা যাই হোক, আজ পর্যন্ত এই পদক্ষেপের সাফল্য সীমিত বলে বাংলাদেশের ওপর এটি ভিন্ন প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


বাংলাদেশে নির্বাচনের অন্তত সাত মাস আগে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ একটি ইতিবাচক লক্ষণ। কারণ, এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন আগের মতো ‘নির্বাচন পরবর্তী পদক্ষেপ’-এর পরিবর্তে প্রতিরোধের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারবে।  ‘কাদের বিষয়ে ফলোআপ ও তদন্ত করা হবে’ এই বিষয়টি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস কীভাবে সাজাবে এবং এ ব্যাপারে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে তাও স্পষ্ট নয়। মার্কিন দূতাবাসে কাজ করার ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাবেক মার্কিন কূটনীতিক এটিকে ‘মুষ্টিমেয় কর্মীদের জন্য কঠিন এক কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।


এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও, ভিসা নীতির ঘোষণাটি সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব ফেলছে যারা হয় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান বা ইতিমধ্যেই দেশটিতে যাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অভিজাত শ্রেণির মধ্যে নিঃসন্দেহে এই চাপ অনুভূত হবে।


সামনে কী?

কেবল মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নিশ্চয়তা দেবে না।  তাও, নতুন নীতিটি বাংলাদেশের রাজনীতির সম্ভাব্য গতিপথকে ওয়াশিংটন কীভাবে দেখছে সে সম্পর্কে মার্কিন মিত্রদের মতোই ঢাকাকে একটি উচ্চ ও স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। সংক্ষেপে, এর মাধ্যমে কিছু করার জন্য প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। একটি অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন এবং গণতান্ত্রিক পথে প্রত্যাবর্তনের জন্য একদিকে যেমন আরও বেশি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন, তেমনি নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও প্রয়োজন।


[যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট আলী রীয়াজের লেখাটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ৬ই জুন ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন তারিক চয়ন]





Tuesday, May 2, 2023

আ.লীগের দুর্নীতির ফিরিস্তি

বাংলাদেশ সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত: গত ১৪ বছরে আওয়ামী দুর্নীতির খন্ডচিত্র —




শেখ হাসিনার মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি—

বাংলাদেশে গত প্রায় দেড় দশক ধরে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। আশ্চর্য সব কাণ্ড ঘটে চলেছে। বালিশ, পর্দা, ঢেউটিন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাসিনো কাণ্ড, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার বাজার লুট, অর্থ পাচার, মেগা প্রজেক্টে মেগা কেলেংকারি- একটার পর একটা ঘটে চলছেই। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ভাষায় বাংলাদেশে “সাগর চুরি” চলেছে।

শনিবার, মার্চ ১৮, ২০২৩, নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুন:রুদ্ধারে ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপি’র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গত ১৪ বছরে আওয়ামী দুর্নীতির নিম্নোক্ত খন্ডচিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চুরি নয়, সবকিছু চুরি করে খেয়ে ফেলছে। এখন বাংলাদেশের মানচিত্রও খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে। 


তিনি বলেন, ‘এই সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি যদি আমরা দিতে চাই, তাহলে এক দিনে এক মিটিংয়ে হবে না, এক মাস লাগবে।’


শনিবার, মার্চ ১৮, ২০২৩, বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘সরকারের সর্বগ্রাসী দুনীতির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে’ এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।


মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের মূলনীতি হচ্ছে টাকা পাচার আর দুর্নীতি। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে। নাইলে দেশ টিকবে না।


এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারতে একটা সরকার নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল মাত্র একটি স্লোগানে। সেটি হচ্ছে, অলিগলিমে শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হায়। আমি তাঁর নাম বললাম না। আজকে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে আওয়ামী লীগের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুনীতি। গলি গলি মে শোর হ্যায়, আওয়ামী লীগ চোর হ্যায়।’


সরকারের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশকে একটা ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। আজকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, চাল, ডাল, তেল, লবণের মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি—সবকিছুর মূলে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের বিখ্যাত পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বলেছিল, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়নের একটা মডেল। সেই পত্রিকা এখন বলছে, উন্নয়নের যে বেলুন উড়ছিল, তা দুর্নীতির কারণে চুপসে পড়েছে।


‘প্রতি ক্ষেত্রে দুর্নীতি, যেখানে যাবেন সেখানেই দুর্নীতি’—এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ’২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে ঘুষ দেওয়ার টাকার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এই সময়কালে প্রতিটি পরিবারকে গড়ে ঘুষ দিতে হয়েছে ৬ হাজার ৬৪০ টাকা। দেশের চার ভাগের তিন ভাগ মানুষ মনে করে, ঘুষ না দিলে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। তারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে। এরপর পাসপোর্ট, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ও ভূমিসেবা খাত রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও দুর্নীতি থেকে বাদ যায়নি।


‘এই দেশে আর কিছু অবশিষ্ট নেই’—

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই দেশ আর নেই, এই দেশে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে এই আওয়ামী লীগ। গত দুই দিন আগে আমরা দেখেছি, এই হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে তারা যে ঘটনা ঘটিয়েছে, সরকারি দল পুলিশ ঢুকিয়ে আইনজীবীদের অন্যায়ভাবে অত্যাচার করেছে, নির্বাচন ভন্ডুল করে দিয়েছে।’


এ প্রসঙ্গে দুজন প্রখ্যাত আইনজীবীর বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাঁরা তাঁদের আইনজীবী ছিলেন, আইনমন্ত্রী ছিলেন—ব্যারিস্টার শফিক সাহেব (শফিক আহমেদ), তিনি বলেছেন এটা এত বেশি একটা বাজে-জঘন্য কাজ হয়েছে, সেটা আমরা চিন্তা করিনি। আর আইনজীবী পান্না (জেড আই খান পান্না) সাহেব বলেছেন, আমরা যে অর্জন করেছিলাম, সে অর্জনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।’


আক্ষেপ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সবচেয়ে কষ্ট হয়েছে, আইনজীবীরা যখন প্রধান বিচারপতির কাছে গেলেন যে এর একটা সুরাহা করেন। তিনি বললেন, আমার কী করার আছে আমি জানি না। যদি কিছু করার থাকে আমি দেখব। তিনি সংবিধানের অভিভাবক, রাষ্ট্রের অভিভাবক। তাঁর কাছে যখন আইনজীবীরা ছুটে যান যে সুরাহা করেন, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তখনো তিনি সেভাবে নিতে পারেননি। কেমনভাবে নেবেন, তিনি দেখেছেন আগের প্রধান বিচারপতিকে গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’


বিএনপির মহাসচিব বলেন, বক্তব্য একটাই, এই সরকার যারা জোর করে বসে আছে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে, তাদের জনগণের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রকে যদি অবিলম্বে সংস্কার করা না যায়, এই রাষ্ট্রের সংবিধান যদি সংশোধন না করা যায়; এই রাষ্ট্র যারা ধ্বংস করছে, তাদের সরিয়ে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিকদের এই দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আনা না যায়; তাহলে বাংলাদেশে নামক যে রাষ্ট্রটা অমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে অর্জন করেছিলাম, সে রাষ্ট্র আর থাকবে না।’


দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র বিদ্যুৎ—

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকার বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। এক যুগে কেবল রেন্টাল ও আইপিপি খাতে সরকার শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করেছে ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। যার মধ্যে সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ ১২টি কোম্পানিই নিয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে প্রিয় কোম্পানি সামিট গ্রুপ। তারা ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানি তেল আমদানি ও তরল গ্যাস আমদানিতেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।


মির্জা ফখরুল বলেন, একটি হচ্ছে এলএনজি, আরেকটা এলপিজি—দু-তিনটি প্রতিষ্ঠান এই গ্যাস আমদানি করে। তারা সরকারের বড় বড় জায়গায় বসে আছে। কেউ উপদেষ্টা, কেউ আত্মীয়, কেউ তাদের বন্ধু। তিনি এ সরকারের সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ করেন।


মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার পাচার হয়। ২০২২ সালে পুলিশের সিআইডি বলেছে, হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বণিক বার্তায় (একটি পত্রিকা) এসেছে, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের গোপনে কেনা প্রোপার্টির অর্থমূল্য কম করে হলেও এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই দেশটাতে আর কিছু থাকে?  


মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি—

মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতির অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটা বালিশ কিনেছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা দিয়ে। পদ্মা সেতুতে ১০ হাজার কোটি থেকে ২০ হাজার কোটি টাকায় গেছে। এভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আমাদের পকেট কেটে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’


মির্জা ফখরুল পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগে ২১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বেশি বিদেশি ঋণ গ্রহণ, পায়রা থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০ হাজার কোটি টাকা, রামপালে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, মহেশখালী মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এখন নতুন একটা শুরু করেছে ৫২ হাজার কোটি টাকার পাতাল রেল। উদ্দেশ্য লুট।


ব্যাংক খাতকে ধ্বংস করার অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। বেসিক ব্যাংকের পতন দেখেছেন। জনতা ব্যাংক, ডেসটিনি, হল–মার্ক, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি দেখেছেন। ফারমার্স ব্যাংকের এই ভদ্রলোক (মহীউদ্দীন খান আলমগীর) আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে তাঁর সাজা হয়েছে। কিন্তু বহাল তবিয়তে এখন পর্যন্ত এমপি আছেন—এটাই হচ্ছে আমাদের দেশ।’


এই অবস্থায় দেশের তরুণ-যুবকদের দায়িত্ব পড়েছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, ভোটচোর, বাংলাদেশের অর্থনীতি চোরদের সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।


বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ ব্যয় ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি’


বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণ ব্যয় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সড়কের বেহাল দশা। দেখার কেউ নেই।


বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের সেতুমন্ত্রী সাহেব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অত্যন্ত সুবেশী মানুষ, খুব চমৎকার পোশাকপরিচ্ছদ পরেন। ভালো এবং নাটকীয় ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলেন। আমি খুব পছন্দ করি। কিন্তু একবারের জন্যও কি তিনি তাঁর রাস্তাগুলো দেখেছেন? কালকে (গতকাল শুক্রবার) আমি সাভারে গিয়েছিলাম। ফিরছিলাম রিং রোড দিয়ে দিয়াবাড়ির ওদিক দিয়ে। রাস্তাগুলো সব ভেঙে পড়ছে, সেদিকে কোনো খেয়াল নাই।’