Search

Monday, September 4, 2023

দূরদর্শী নেতা তারেক রহমান ——— আমিরুল ইসলাম কাগজী ও অধ্যাপক ড মোর্শেদ হাসান খান

রবার্ট কে. গ্রিনলিফ তাঁর বই The Servant as Leader-এ লিখেছেন, ‘দূরদর্শীতা — একজন নেতাকে নেতৃত্ব দেয়, তাঁকে পথ দেখায়। যখন তিনি তার এই দূরদর্শিতা হারিয়ে ফেলেন এবং অন্য বিষয় দ্বারা পরিচালিত হন তখন তিনি  কেবল নামমাত্র নেতা।  সকল মহান নেতাই দুটি জিনিসের অধিকারী ছিলেন —  তারা জানেন তারা কোথায় যাচ্ছেন ও তারা অন্যদেরকে নিজেদের অনুসারী করতে সক্ষম। 


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দূরদর্শী নেতা। ফ্যাসিবাদী সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। মিথ্যা বানোয়াট মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তাকে দেওয়া হয়েছে কারাদণ্ড। সেই দণ্ড তাকে দমিয়ে রাখতে পারে নাই। কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে  তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন। তিনি যে শুধু আজ সংগ্রাম করছেন তাই নয়,  একেবারে শিশু কাল থেকে সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছে তার লড়াই। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। এখন তিনি আন্দোলন করছেন মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি চান মানুষের ভোট দান প্রক্রিয়া  যাতে একটি স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। তিনি মনে করেন জনগণ সুষ্ঠুভাবে নিরাপদে নির্বিঘ্নে যাদের ভোট দেবে তারাই সরকার পরিচালনা করবে। 


তারেক রহমান সমকালীন রাজনীতি নিয়ে রোড টু ডেমোক্রেসির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। প্রথমেই তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মত ঝেঁকে বসেছে ভোটারবিহীন ও নিশি রাতের ভোটের অবৈধ সরকার। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে বিরোধী মতকে তারা দমন করে রাখে নানা কালাকানুন জারি করে। যার ফলে কথা বলার স্বাধীনতা থাকে না, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না এমন কি সভা সমাবেশ করার অধিকারও রোহিত করা হয় পুলিশ দিয়ে। সর্বশেষ সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট-সিএসএ, যাকে বলা হয় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিকল্প। শুধুমাত্র সঠিক কথা লেখার জন্য শত শত  সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে। বিরোধীদের দমন করতে আইন আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে দলীয় স্বার্থে। আদালতকে ব্যবহার করে ২০১৮ সালে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে বিএনপি'র তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। এই কাজটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ হিংসা থেকে। কারণ শেখ হাসিনা যতবার নির্বাচন করেছেন একটির বেশি কোন আসন থেকে তিনি জয়ী হতে পারেননি। বাকীগুলোতে পরাজিত হয়েছেন।  বিপরীতে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রত্যেকবার পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে নিয়ম করা হয় একজন প্রার্থী তিন আসনের বেশি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সে সময়ও তিনি তিনটি আসন থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই জনপ্রিয়তা যখন কোন অবস্থাতেই ম্লান করা যাচ্ছে না তখন শেখ হাসিনা আদালতের মাধ্যমেই এই মহীয়সী নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বললেন আদালত স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছে। একই নাইকো মামলায় আসামি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দুজনই। শেখ হাসিনা নিজে ক্ষমতায় গিয়েই তার সব মামলা  প্রত্যাহার করে নিলেন। আর বেগম জিয়ার মামলা ঝুলিয়ে রেখে বিচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা ছিল সব দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি করে শাস্তি দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে। মানি লন্ডারিং এর এক মামলায় যখন তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো তখন সেই বিচারককে হুমকি দেওয়া হয়,  ভয়ে সেই বিচারক দেশছাড়া হয়ে গেছেন। জীবন নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে এদেশের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে। অতি সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডাক্তার জুবাইদা রহমানকে পর্যন্ত তিন বছরের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যাতে তিনিও কোনদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। শেখ হাসিনার টার্গেট বাংলাদেশের যত জ্ঞানীগুণী, শিক্ষিত, ভদ্র, পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে যারা বসবাস করেন - নানা কায়দায় তাদের হেনস্তা করা। নোবেল বিজয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস বলতে গেলে শেখ হাসিনার চক্ষুশুল। বিশ্বের শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন  বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে ইউনূসের পক্ষে দাঁড়ান তখন সেটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে ছাড়েন না তিনি। বলেন ইউনূস বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।  অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে,শেখ হাসিনা বনাম গণতন্ত্রকামী জনগণ, শেখ হাসিনা বনাম বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা বনাম গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার আদালত বনাম বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী।


নেতৃত্ব নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, তিনি মনে করেন তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে তাহলে সেই নেতা হবেন দায়িত্ববান প্রজ্ঞাবান, তাদের উপর ভরসা রাখা যাবে। তারাই তো হবেন উপজেলা নেতা, জেলার নেতা, জাতীয় নেতা। একদিন তারাই বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের হাল ধরবেন। সেখানে একক নেতৃত্বের কোন স্থান নেই সবাই মিলে দলকে এগিয়ে নেবেন। বিএনপি যে একটি গণমুখী দল জনগণের অকুণ্ঠ ভালবাসা এই দলটিকে ঘিরে সেটা তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে বিশেষ করে ১০ টি বিভাগীয় শহরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে তিনি মাইলফলক বলে উল্লেখ  করেছেন। পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ এবং আওয়ামী লীগ দলীয় পেটোয়া বাহিনীর জুলুম নির্যাতন উপেক্ষা করে বিএনপির নেতা কর্মীরা এসব সমাবেশ সফল করেছে। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারেক রহমান নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গরিব মানুষদের  সাথে নিয়ে সংগ্রাম করছেন। এর ফলে,গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শহরের শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ  এখন বিএনপিকে তাদের নিজের দল মনে করতে আস্থা পায়। এটা তারেক রহমানের জন্য বিরাট সাফল্য।

 

আওয়ামী লীগ বিশেষ করে দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা বিগত দিনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামের গায়ে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদের তকমা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। তার দলের সন্ত্রাসীরা বাসে আগুন দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, জেল জুলুম করে নির্যাতন চালিয়েছে। এ ব্যপারে অনেক খবর বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।  বিএনপি নয় আওয়ামী লীগই যে এ দেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী দল-সেটা তাদের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড এবং কথাবার্তায় প্রমাণ মেলে। দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা এক সময় বলেছিলেন,   ‘একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকবে না। যে হাত দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লেখা হবে সেহাত পুড়িয়ে দেয়া হবে।’ তাদের নেতা মন্ত্রীরা টিভি টকশোতে পর্যন্ত  বিরোধী পক্ষের আলোচকের চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে না, তারা প্রতিপক্ষকে দাবিয়ে রাখতে চায়। বিএনপি কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি করে না। শেখ হাসিনা কথায় কথায় এই দলটির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে। অথচ এই দলটি দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে  এরশাদের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে এবং মানুষের ভোটের অধিকার  প্রতিষ্ঠা করেছে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ একবার ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। সব দল বন্ধ করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। আবার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। মানুষ এখন ভোট বিমুখ।  বিএনপি'র কাঁধে তাই আজ বড় দায়িত্ব, ১৯৭৫ সালের ৭ ই নভেম্বর সিপাহী জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথমবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। এরশাদ ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন জারি করে সেই গণতন্ত্র আবার হরণ করে। আর শহিদ জিয়ার সহধর্মিণী   বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এখন তারেক রহমানের হাত ধরে আসবে এদেশের তৃতীয় দফায় গণতন্ত্র। তারেক রহমানের নির্দেশে  বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে সেই গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে আনবে। 


বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র নেই মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত জনগণের ভোটাধিকার আজ সোনার হরিণ ঠিক সেই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দিতে শুরু করেছে। বিএনপি যে একটি গণতান্ত্রিক দল। এই দলটি যে সন্ত্রাস মৌলবাদ প্রশ্রয় দেয় না সেই কথাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন তারেক রহমান । বিএনপি'র ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতের যে সংশয় সন্দেহ ছিলো  সেটাও কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সে কারণে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকর বলেছেন বাংলাদেশে যে সরকারি আসুক না কেন তাদের সঙ্গে কাজ করতে কোন সমস্যা হবে না। বিএনপির চলমান ভোটাধিকারের আন্দোলনে  যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ প্রভাবশালী দেশগুলোকে পাশে পাওয়া এক বিশাল সাফল্য বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে যেমন এক ঘরে হয়ে পড়েছেন তেমনি দেশের ভেতরেও হয়ে পড়েছেন বন্ধুহীন। এর জন্য বিএনপি এবং দলটির বর্তমান কর্ণধার তারেক রহমানকে দীর্ঘ ১৬টি বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে।


তারেক রহমান একদিকে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে কিভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করা হবে তার একটা রূপকল্প প্রণয়ন করেছেন। তিনি রূপকল্পে প্রাধন্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন ক্ষমতায় আনার বিষয়টিতে। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি থাকা যাবে না, সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রচলনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ করা, শিক্ষিত বেকার যুবসমাজকে কর্মমুখী করে তোলা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কে জোরদার করাসহ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়; হেলেন কেলারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘অন্ধ হয়ে জন্ম নেওয়ার চেয়ে খারাপ কী হতে পারে?’ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘দৃষ্টি আছে কিন্তু রূপকল্প (vision) নেই।’ তারেক রহমান সেই রূপকল্প প্রণয়ন  করেছেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে।

No comments:

Post a Comment