Search

Monday, September 4, 2023

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিএনপি ——— আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ড. মোর্শেদ হাসান খান







কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? ঘোষণা দিয়ে মানুষ হত্যা। আইন করে গণমাধ্যম বন্ধ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোহিত। সাংবাদিকরা বেকার। রাজনৈতিক দলের অফিসে ঝুলছে তালা। ভেড়ার পালের মতো বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গণভবনে। কারও কোনো স্বাধীনতা নেই, নেই কারও স্বতন্ত্র অবস্থা। অন্যদিকে,  দুর্ভিক্ষে ক্ষতবিক্ষত দেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ। প্রতিবাদ করার কেউ নেই। নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। একটাই দেশ,  তার একজনই নেতা। দেখা দেয় নেতৃত্বের শূন্যতা, শুরু হয় দম বন্ধ করা পরিস্থিতি। এমনই একদলীয় শাসনের বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিল সময়ের দাবি। পোড় খাওয়া ক্ষুব্ধ  রাজনীতিবিদদের মনের সেই সুপ্ত বাসনা জাগিয়ে তোলার দায়িত্বটি পালন করেছেন  জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর আগমন খুবই আকস্মিক কিন্তু সময়ের দাবির কাছে বাস্তবিক ও স্বাভাবিক। অনেকটা ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে তাঁর। রাজনীতির এমন ঘনঘোর অমানিশা কাটাতে সময়ের চাহিদা এবং দেশের দাবিতে এসেছিলেন তিনি। তবে কোন চোরাগলি দিয়ে নয়, রাতের অন্ধকারে ষড়যন্ত্র করে নয় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর   দেশপ্রেমিক সিপাহি -জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে এই মহান নেতার। ১৯৭২ থেকে '৭৫ এর রাজনৈতিক ব্যর্থতার বিপরীতে সাফল্যের রূপকার হয়ে আসেন তিনি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতির কবর রচনা করেন চিরকালের সংগ্রামী নেতা শেখ মজিবর রহমান। জিয়াউর রহমান যখন নেতৃত্বে আসেন তখন দেশে কোন রাজনীতি ছিল না। ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া একদলীয় বাকশাল, বাকি রাজনৈতিক দল ছিল নিষিদ্ধ। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করা সত্ত্বেও শেখ সাহেব  আবির্ভূত হলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন ব্যবস্থার নেতা হিসেবে। নির্বাচন ছাড়াই  জাতীয় সংসদে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়। ফলে রুদ্ধ হয় ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেই  সুযোগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের সবচেয়ে  প্রিয় সহযোদ্ধা খন্দকার মোস্তাক আহমাদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অফিসাররা রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দখল করে নেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা । একই বছর তেসরা নভেম্বর খালেদ মোশারফ এর নেতৃত্বে  পাল্টা ক্যু এর মাধ্যমে খন্দকার মোস্তাকও ক্ষমতাচ্যুত হন। গৃহবন্দি হন জেনারেল জিয়াউর রহমান। এতসব ক্যু পাল্টা ক্যু এর বিরুদ্ধে ৭ই নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক সংহতির মধ্য দিয়ে সংগঠিত হয় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই পরিবর্তন ছিল স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার, সভাসমাবেশ ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে।  সেই পরিবর্তনের নেতৃত্বে ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান ঘোষক জেনারেল  জিয়াউর রহমান। এই পরিবর্তনের জন্য তিনি রাজনীতি ফিরিয়ে আনেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন, গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি। 
এই রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে নিয়ে যেতে চাই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেঁস্তোরায়।  সেদিন  এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়া ঘোষণা দেন নতুন এই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্রতিষ্ঠাকালে দলের অন্যতম সৌন্দর্য ছিলো ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী সবার অংশগ্রহণ।
সেদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, বাস্তবিক পক্ষে জাতীয় প্রয়োজনের জন্যই নতুন দল করা হচ্ছে, এই দল জাতিকে দৃঢ় করবে এবং দেশ ও দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেন,  ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। অনেকে তখন মনে করেছেন, এই স্বাধীনতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু স্বাধীনতার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব । বিপুল জাতীয় সম্পদ রয়েছে তার সদ্ব্যবহার করলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমি দেখেছি হাজার হাজার নরনারী দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের ভুললে চলবে না, প্রশ্ন করতে হবে কেন তারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাদের আস্থা, দেশ স্বাধীন হলে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই নতুন দলের অঙ্গীকার।
প্রেসিডেন্ট  জিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার অঙ্গীকার, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার চেতনা সৃষ্টি। ১৯-দফা কর্মসূচি ছিল দলের মৌল আদর্শ। রাষ্ট্রনীতির চারটি মৌলিক আদর্শ তথা গণতন্ত্র, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র, এই ছিল দলীয় কর্মসূচির মর্মবাণী।
বিএনপি গঠনের পর চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের  নেতৃত্বে  বিএনপি ১৯৭৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি  দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  অংশ নিয়ে ২০৭ আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ ৩৯ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার একান্ত উদ্যোগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা  ১৯৮১ সালের ১৭মে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এর মাত্র ১৩ দিনের মাথায় ৩০মে চট্টগ্রামে একদল বিপথগামী সৈন্যের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়া শাহাদাৎবরণ করেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া যখন শাহাদাতবরণ করেন তখন বিএনপি'র জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। যার প্রমাণ মিলে তার জানাযায় উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল দেখে। গোটা জাতি পালন করে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয়  শোক। তৎকালীন সেনাপ্রধান ধুরন্দর এরশাদ এটাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলেন। এখান থেকেই তিনি তার পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ধারণ করে ফেলেন। প্রথমেই সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার যারা তার চলার পথে কাঁটা হয়ে দাড়াঁতে পারে তাদের রাতারাতি কোর্ট মার্শাল করে কতক ফাঁসি, কতক বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দিয়ে সেনানিবাস থেকে দূরে সরিয়ে দেন। 
শহিদ জিয়ার শাহাদাৎবরণের পর ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর সকলদলের অংশগ্রহণে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি প্রার্থী  বিচারপতি আবদুস সাত্তার।  মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
নেতাকর্মীদের ইচ্ছায় বিএনপির রাজনীতিতে ভূমিকা  রাখতে শুরু করেন শহিদ জিয়ার পত্নী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি  যখন রাজনীতিতে আসেন সেটা অনেককে চমকে দিয়েছিল। ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল এরশাদের।
বেগম খালেদা জিয়া প্রথম জনসমক্ষে বক্তব্য রাখেন ১৯৮৩ সালের  ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে । এরপর ১৯৮৪ সালের ১০ই মে তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়া যদি তখন বিএনপির হাল না ধরতেন তাহলে বিএনপি নিঃসন্দেহে গভীর সংকটে পতিত হতো । সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, শামসুল হুদা চৌধুরী, মওদুদ আহমদ, ডাক্তার মতিনরা তখন বিএনপি ভেঙে নতুন নতুন দোকান খোলা শুরু করলেন যারা পরবর্তীতে এরশাদের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই দুর্দিনে একক হাতে দলকে সামলে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে বেগম জিয়াকে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁকে কয়েকবার আটক করা হলেও আন্দোলন থেকে সরে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। অবশ্য ততক্ষণে তিনি রাজনীতির মাঠে বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন। এরশাদের দমন,পীড়ন,  নির্যাতন পায়েদলে আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি। সঙ্গে ছিল তার তরুণ বাহিনী ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, মহিলা দল, কৃষক দল সবাই ছিল এক কাতারে বেগম খালেদা জিয়ার পিছনে একট্টা। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ১৫ দল,  সাতদল এবং জামায়াতে ইসলামী যখন যুগপথ আন্দোলন করছেন তখন একপর্যায়ে এরশাদ তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারী সকল সংগঠন এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশের জনগণের কাছে চিহ্নিত হলেন জাতীয় বেঈমান হিসেবে এবং নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া হলেন আপসহীন নেত্রী। শেখ হাসিনা এবং জামায়াত ইসলাম সংসদে এরশাদের দোসর হিসাবে যোগ দিলেন আর রাজপথে থাকলেন বেগম খালেদা জিয়া। ঘটনার আকস্মিকতায় এবং নির্বাচনের ঢামাঢোলে প্রথম দিকে আন্দোলনের মাঠ একটু থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু বেগম জিয়া ঘরে উঠে যাননি, বরং পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। সঙ্গে পেলেন ১৫ দল থেকে চলে আসা ৫ দলীয় বাম জোট এবং আরও কিছু ছোট খাটো দলকে।
এরশাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার মধুচন্দ্রিমা বেশিদিন স্থায়ী হলো না। আবার তাকে নামতে হলো রাজপথে। আবার শুরু হল যুগপথ আন্দোলন। দীর্ঘ ৯ বছর একটানা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন  শেষে  ১৯৯০ এর ৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত পতন ঘটলো এরশাদের। আসলো ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পত্রপত্রিকা এবং বিভিন্ন সংস্থা জরিপ চালিয়ে বলে দিল, নির্বাচনে বিজয়ী হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী জোট। শেখ হাসিনা এক বিদেশি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বললেন, বিএনপি পাবে মাত্র ১০ আসন। বিএনপি হবে বিরোধী দল। কিন্তু সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে  ১৪০ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলেন বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষমতার পাদপিঠে আবারো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশের মাটিতে সূচিত হয় ওয়েস্টমিনস্টার  স্টাইলে ধ্রুপদী গণতন্ত্র সংসদীয় ব্যবস্থা।  বেগম খালেদা জিয়া হলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। এরশাদের ফেলে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি, দুর্নীতিবাজ প্রশাসন, অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনার বিপরীতে বেগম খালেদা জিয়া যখন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে ব্যস্ত তখন শুরু হয় আবার ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এবং গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী হরতাল অবরোধ অগ্নিসংযোগ করে গোটা দেশ অচল করে ফেলে। দাবি একটাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। বেগম জিয়া নিয়ম রক্ষার জন্য ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্বলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করলেন। ২০০১ সালে আবারও সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট ভূমিধস বিজয় অর্জন করে সরকার গঠন করেন। ধারণা করা হয়েছিল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনায় স্থায়ীরূপ লাভ করতে পারে। কারণ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলো নির্বাচন দেশে এবং বিদেশে প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলো। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সারা জীবন নির্বাচিত হবেন ক্ষমতায় থাকবেন এবং বিরোধীদল বিএনপি এর উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাবেন। এটাকে একধরনের সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব বলা চলে।
কিন্তু দিন যে বদলে গেছে, মানুষের মনে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট এমন ভাবে ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছে যে তারা আজ ফুসে উঠেছে দেশনায়ক তারেক রহমানের বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে।  জবর দখল করে ক্ষমতায় জেঁকে বসা হাসিনার সরকারকে তারা এখন হটাতে চায়। ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়,  গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়,  মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চায়,  সর্বোপরি মানবাধিকার বাস্তবায়ন চায়। এবারও জনগণের সেই আন্দোলনের পুরোভাগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনার রেস্তোরাঁয় জিয়াউর রহমান যে জাতীয়তাবাদী দলের গোড়াপত্তন করেছিলেন হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ৪৫ বছরে একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দলের রূপ নিয়েছে। এই দলটিকে ভাঙার জন্য, বিরোধ সৃষ্টির জন্য শেখ হাসিনার সরকার এমন কোন কাজ করেন নাই যা ইতিহাসে বিরল। কখনো তৃণমূল বিএনপি কখনো বা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্ট।  কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নাই, বিএনপি থেকে একটি কর্মীও ভাগায়ে নিতে পারে নাই, এখানেই শেখ হাসিনার চরম ব্যর্থতা। শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী যত নির্যাতন করে যত খুন করে গুম করে মামলা দেয় ততই নেতাকর্মী ঘুরে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনা ধ্বংস করতে চায় বিএনপিকে কিন্তু বারবার সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসে ফিনিক্স পাখির মত। তারেক রহমানের পরিকল্পনায় বিএনপির নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আজ সারা বিশ্বের কাছে মডেল। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে,  একটি দলবাজ পুলিশ প্রশানের বিরুদ্ধে, একটি অনুগত আদালতের বিরুদ্ধে,  এমন পরিকল্পিত সংগ্রাম প্রসংশা কুড়িয়েছে সর্বমহলে। আন্দোলনের এই শান্তিপূর্ণ কৌশলের কাছে ধরাশায়ী আওয়ামী লীগ নানা ফন্দিফিকির করে এর ওপর সন্ত্রাসের তকমা লাগাতে মরিয়া। কিন্তু দেশের জনগণের কাছে আজ দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে বিএনপি নয় আওয়ামী লীগই সন্ত্রাসী দল। বিগত ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আওয়ামী লীগ নিজেরা বাসে আগুন দিয়ে,মানুষ পুড়িয়ে দোষ চাপিয়ে বিএনপিকে কোনঠাসা করেছিলো কিন্তু এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তেমন শক্তিশালী ছিলো না, ছিলো আওয়ামী লীগের কিছু দালাল মিডিয়া। তারা এসব পরিকল্পিত হামলার শিকার মানুষকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে স্যুটিংস্পট বানিয়ে ফেলেছিলো। সেখান থেকে তারা প্রতিনিয়ত বিভৎস প্রতিবেদন বানিয়ে সকল দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপিয়ে প্রচার করতো। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির ওপর জনগণের ঘৃণা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। কিন্তু সচেতন দেশবাসী তা জানে। 
এখন আন্দোলন হচ্ছে, পুলিশ আগের মতই বুকে গুলি করছে, উল্টো গায়েবি মামলা দিচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা জীবন দিচ্ছে কিন্তু পাল্টা কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছে না। যে কারণে বিএনপির মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে এবং বাড়ছে সমাবেশের আয়তন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, নির্যাতন নিপীড়ন, জেল-জুলুম, হুলিয়া মাথায় নিয়ে শহিদ জিয়ার হাতে গড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা আজ দলকে এগিয়ে নিচ্ছে। এখন  আন্দোলন,সংগ্রাম,রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু বিএনপি। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পতাকা তিন তিনবারের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে এখন তারুণ্যের প্রতীক দেশনায়ক তারেক রহমানের মুষ্টিবদ্ধ হাতে যৌবনপ্রাপ্ত।
কবি হেলাল হাফিজের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’

No comments:

Post a Comment