By ডঃ মুনির উদ্দিন আহমেদ
বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের
প্রস্তুতি চলছে। দলকে
নতুন করে
সাজাতে এবং
শক্তিশালী করতে দলের কাঠামো এবং
বিধি বিধান পর্যালোচনা
করা হচ্ছে।
" এক নেতা এক
পদ" নীতি গ্রহণ করতে
যাচ্ছে দল, কার কি দায়িত্ব
তাও নির্দিষ্ট
করা হবে
এমন কথাও
প্রচার হচ্ছে।
বাদ যাচ্ছে না, উপদেষ্টা পরিষদের
কথাও।
বলা হচ্ছে,
দুইটি উপদেষ্টা
পরিষদ থাকবে। একটি
দলের
উপদেষ্টা পরিষদ এবং আরেকটি চেয়ারপার্সনের
উপদেষ্টা পরিষদ। খুব
আশার কথা। তাই এখানে
উপদেষ্টা পরিষদ
নিয়ে কিছু
কথা বলতে
চাই, বলার
প্রয়োজন মনে
করছি।
প্রথম কথা
হচ্ছে, শুধু
উপদেষ্টা পরিষদ
গঠন করলে
হবে না। উপদেষ্টাদের
কাছ থেকে
উপদেশ বা
পরামর্শ চাইতে
হবে ।
বিগত সময়
আমরা কখনো
এমন কোন
খবর পড়ি
নাই যে, বিএনপি
চেয়ারপারসন উপদেষ্টাদের
নিয়ে নিয়মিত
বসেছেন।
একদিকে
উপদেষ্টাদের নিয়ে নিয়মিত বিরতিতে
বসতে হবে। অন্যদিকে
তাদেরকে এটাও
বলে দিতে
হবে, কখনো
যদি তারা
পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোন ব্যাপারে উপদেশ
বা পরামর্শ
দেওয়া উচিত
মনে করেন, তারা যেন নিজ
থেকে
এগিয়ে এসে নিঃ সংকোচে তা দেন।
গুরুত্বপুর্ন কথা
হচ্ছে, উপদেষ্টা
পদ যেন
সাধারণ পদ
না, বিষয়
ভিত্তিক হতে
হবে। যার যে বিষয়ে
বিশেষ জ্ঞান
আছে, বিশেষজ্ঞতা
আছে তাকে
সেই বিষয়েই
উপদেষ্টা বা
পরামর্শক নিয়োগ
দিতে হবে।
যিনি পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে পড়াশোনা
করছেন বা
এই ফিল্ডে
কাজ করার
অভিজ্ঞতা আছে
তাকেই যেন
সেই বিষয়ের
উপদেষ্টা করা
হয়।
তেমনি বিজ্ঞান
বিষয়ক উপদেষ্টা
পরিষদে
অবশ্যই বিজ্ঞানী থাকবেন।
প্রতিটি বিষয়
ভিত্তিক উপদেষ্টা
পরিষদে নুন্যতম
তিনজন উপদেষ্টা
থাকবেন।
কারণ, একা
একা কোন
মানুষই ভুলত্রুটি
বা সীমাবদ্ধতার
উর্ধ্বে না। নুন্যতম
তিনজন বিশেষজ্ঞ
থাকলে ভুল
ত্রুটির সম্ভাবনা
কমবে, পর্যবেক্ষন
থেকে কিছু
বাদ পড়া
বা ব্লাইন্ড
স্পট এর
সীমা বা
পরিধি কমবে। আর
এরকম বিষয়
ভিত্তিক উপদেষ্টা
সবাইকে যে
বয়স্ক বা
রিটায়ার্ড হতে হবে তাও না। বয়স্কের
সাথে সাথে
তারুণ্যের মিশ্রণ থাকলে তার ফলাফল
বরং ভাল
হওয়ার সম্ভাবনাই
বেশী।
বাংলাদেশ এবং
বিএনপির বর্তমান
প্রেক্ষাপটে যে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ
থাকা জরুরী
তা হচ্ছে,
১।
নেতৃত্ব বিষয়ক
উপদেষ্টা - নেতৃত্বের
গ্রামার বা
ব্যাকরণ জানেন,
এরকম লোকদের
নিয়ে একটা
উপদেষ্টা পরিষদ
বিএনপির জন্য
অতীব জরুরী।
নেতৃত্বের বিষয়ে বলা
হয়- Leader must be seen and heard. এটা রাজনৈতিক
নেতৃত্বের জন্য প্রযোজ্য এবং ক্রান্তিকালে
আরও বেশী
প্রযোজ্য।
কিন্তু এই
মুহুর্তে বিএনপির
শীর্ষ নেতৃত্বকে
( দুই জনকে)
কদাচিৎই দেখা
যাচ্ছে এবং
শোনা যাচ্ছে। এমনকি
বিগত আন্দোলনের
সময়ে যখন
প্রতিদিন শীর্ষ
নেতৃত্ব “ seen and heard” হওয়ার
দরকার ছিল,
তখনও উনাদেরকে
দেখা যায়
নাই এবং
শোনা যায়
নাই ।
উনাদেরকে এই
রকম পয়েন্টে
পরামর্শ দেওয়ার
মত কেউ
আছেন বলে
মনে হচ্ছে
না।
নেতৃত্ব বিষয়ক
আরেকটা কথা
আছে
" Increase your visibility, maintain your availability and
control accessibility.” কিন্তু
বিএনপির দুই শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই
পর্যাপ্ত ভিজিবল
না বর্তমানে;
না
অফলাইনে, না
অনলাইনে।
এইসব জরুরী
কিন্তু সূক্ষ্ম
বিষয়ে পরামর্শ
দেওয়ার মত
বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন উপদেষ্টা বা পরামর্শক
নিয়োগ বিএনপির
উপদেষ্টা পরিষদের
ব্যাপারে সর্বোচ্চ
গুরুত্ব পাওয়া
উচিত বলে
মনে হয়। এই
উপদেষ্টা পরিষদ
শুধু বর্তমান
শীর্ষ নেতৃত্বকেই
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক পরামর্শ দিবেন
তা নয়,
দলের ভবিষ্যত
নেতৃত্বকে কিভাবে উন্নত করা যায়,
সারা দেশে
ছাত্র এবং
যুব সংগঠনের
নেতৃত্বের মান কিভাবে উন্নত করা
যায়, তার
কৌশল এবং
পন্থা নির্ধারণও
এই উপদেষ্টাদের
দায়িত্বের মধ্যে থাকা উচিত।
এই পরিষদ
তাদের দৃষ্টি
সীমা স্বাস্থ্য,
শিক্ষা, বিজ্ঞান,
শিল্প, বাণিজ্য
তথা প্রশাসনিক নেতৃত্বের
মান
কিভাবে উন্নত
করা যায়,
সেই পর্যন্তও
প্রসারিত করতে
পারে।
কারণ মনে
রাখতে হবে,
“ Everything falls and rises on Leadership” - স্বাস্থ্য,
শিক্ষা, বিজ্ঞান,
শিল্প এবং
বাণিজ্য তথা
প্রশাসন এর
উত্থান পতনও
এসব প্রতিষ্ঠানের
নেতৃত্বের উপরই নির্ভর করে।
দেশকে এগিয়ে
নিতে হলে
শুধু রাজনৈতিক
নেতৃত্ব না, স্বাস্থ্য,
শিক্ষা, বিজ্ঞান,
শিল্প
এবং বাণিজ্য তথা প্রশাসনিক নেতৃত্বের
উন্নয়নও করতে
হবে।
২।
পাবলিক কমিউনিকেশন
বা যোগাযোগ
উপদেষ্টা - এই পৃথিবীতে অধিকাংশ সমস্যার
কারণ হচ্ছে
কমিউনিকেশন গ্যাপ বা দুর্বল কমিউনিকেশন। দুর্বল
কমিউনিকেশনের ফলে কানেকশনও দুর্বল
হয় - নেতায়
নেতায়, নেতা
কর্মীতে এবং
নেতায় জনগণে। এই
দুর্বল কানেকশনের
কারণেই
ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরেও কার্যকর আন্দোলন
গড়ে উঠছে
না। তাই তাই এই
দুর্বলতা দূর
করার জন্য
বিএনপিকে অবশ্যই
পাবলিক
কমিউনিকেশন এর বিষয়ে
এক্সপার্টাইজ আছে এরকম একটা
উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে ।
এর বাইরে
আরও যে
বিষয় ভিত্তিক
উপদেষ্টা পরিষদ
থাকা জরুরী
তা হচ্ছে,
" বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি" বিষয়ে একটা
মান সম্পন্ন
এবং কার্যকর
উপদেষ্টা পরিষদ
থাকতেই হবে। কারণ
বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তির উন্নয়ন ছাড়া বিপুল জনগোষ্ঠীর
এই ছোট্ট
ভূমির বাংলাদেশের
সমস্যার টেকসই
সমাধান করা
সম্ভব না।
শুধু দল
বা চেয়ারপারসন
না, দলের
মহাসচিবেরও কিছু উপদেষ্টা থাকা দরকার
উনার কার্যক্রম,
কমুনিকেশন (বডি ল্যাংগুয়েজ, শব্দ চয়ন)
এবং পারফরমেন্স
মনিটর করে
ফিডব্যাক দেওয়ার
জন্য। দল বা উনি
নিজে এরকম
উপদেষ্টা, পরামর্শক বা পর্যবেক্ষক এর
উপদেশ, পরামর্শ
এবং পর্যবেক্ষনকে
ফিডব্যাক হিসেবে
নিয়ে নিজের
এবং দলের
উন্নয়ন করতে
পারেন। উন্নত
দেশ গুলিতে
নেতাদের এরকম
উপদেষ্টা থাকেন
বা নেতারা
রাখেন।
সাধারণভাবে যে কথাটা বলা দরকার
তা হচ্ছে,
নেতাদের ব্যক্তিগত
উদ্যোগেই নিজের
জন্য
অন্তত " নেতৃত্ব ও
পাবলিক কমিউনিকেশন
" বিষয়ে
জ্ঞান ও
ধারনা দুইটাই
রাখেন এরকম
তিন পাঁচ
জন পরামর্শদাতা
বা উপদেষ্টা
বা পর্যবেক্ষক
রাখা দরকার
যাদের কাছ
থেকে উনারা
সময় সময়
কিছু ফিডব্যাক
বা রিভিউ
নিতে পারেন।তাহলে
ক্রমান্বয়ে উনার নেতৃত্বের মান উন্নতহবে
এবং সিড়ি
বেয়ে উপড়ে
উঠা সহজ
হবে।উনাদের সাথে
সাথে দল
ও দেশ
এগিয়ে যাবে। ।
- লেখক, নেতৃত্ব
ও পাবলিক
কমিউনিকেশনের উৎসাহী ছাত্র।
No comments:
Post a Comment