প্রথম
ধাপের ইউনিয়ন
পরিষদ (ইউপি)
নির্বাচনে ‘অস্বাভাবিক’ ভোট পড়েছে।
এক-চতুর্থাংশ
ইউপিতে এ
ঘটনা ঘটেছে। চেয়ারম্যান
পদে ৮০
শতাংশের বেশি
ভোট পড়েছে
অন্তত ১২৭টিতে। এর
মধ্যে ৯০
শতাংশের উপরে
ভোট পড়েছে
ছয় ইউপিতে। ৭১২টি
ইউপির মধ্যে
৫১৪টির প্রাপ্ত
ফল পর্যালোচনায়
এসব তথ্য
পাওয়া গেছে
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে,
স্থানীয় সরকারের
তৃণমূলের প্রতিষ্ঠান
ইউপি নির্বাচনে
চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত
সদস্য- এ
তিন পদে
ভোট দিতে
হয়।
এতে ৮০
শতাংশের উপর
ভোট পড়া
অবিশ্বাস্য ও অস্বাভাবিক। নির্বাচনে
অনিয়ম, কেন্দ্র
দখল, একের
বেশি যোগ্য
প্রার্থী না
থাকাসহ নানা
কারণে ৮০
শতাংশের উপর
ভোট পড়তে
পারে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে,
১২৭টি ইউপির
মধ্যে ৯১টিতে
আওয়ামী লীগ
মনোনীতরা জয়ী
হয়েছেন।
এছাড়া ১৫টিতে
বিএনপি এবং
২১টিতে স্বতন্ত্র
প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বতন্ত্রদের দু-একজন বাদে বাকি
সবাই আওয়ামী
লীগের বিদ্রোহী
হয়ে এ
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া
২৬৩ ইউপিতে
৭০ থেকে
৮০ শতাংশ
পর্যন্ত ভোট
পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক
নির্বাচন কমিশনার
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত
হোসেন গণমাধ্যমকে
বলেন, নির্বাচনে
কারচুপি, মারধর,
ব্যালট ছিনতাই
ও কেন্দ্র
দখলের প্রতিফলন
নির্বাচনী ফলে দেখা যাচ্ছে।
ইউপি নির্বাচনে
৮০-৯০
শতাংশের বেশি
ভোট পড়তে
পারে তা
বিশ্বাসযোগ্য নয়। সুশাসনের
জন্য নাগরিক
(সুজন) সম্পাদক
ড. বদিউল
আলম মজুমদার
বলেন, ইউপিতে
৮০ শতাংশের
উপর ভোটের
হার অস্বাভাবিক
ও অবিশ্বাস্য। এ
নির্বাচনে একজন ভোটারকে তিনটি ব্যালটে
ভোট দিতে
হয়।
গ্রাম-গঞ্জের
মানুষ ভোট
দেয়ার বিষয়ে
এত সক্ষম
নন।
সিল মারা,
কেন্দ্র দখল,
জবরদস্তি এবং
অনিয়মের প্রতিফলন
ঘটেছে নির্বাচনী
ফলাফলে।
তবে কোনো
কোনো ক্ষেত্রে
ব্যতিক্রমও হতে পারে। তিনি
বলেন, নির্বাচনে
মারামারি, হাঙ্গামার চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত
হয়েছে, তাতে
স্পষ্ট বলা
যায় এ
নির্বাচন সুষ্ঠু
হয়নি।
এর দায়
র্নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না।
যদিও নির্বাচন কমিশন
দাবি করে
আসছে, কিছু
বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ইউপি নির্বাচন
সুষ্ঠু ও
গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এ নির্বাচনে
ভোটার উপস্থিতি
ভালো ছিল। বিশেষ
করে নারী
ভোটারদের দীর্ঘ
লাইন ছিল। নির্বাচন
কমিশন সচিব
মো. সিরাজুল
ইসলাম গতকাল
নিজ কার্যালয়ে
বলেন, ভোটার
উপস্থিতির চিত্র গণমাধ্যমে দেখে উৎসাহিত
হয়েছি।
গ্রামাঞ্চলের নির্বাচন হলেও নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত
অংশগ্রহণ ছিল। নির্বাচনে
গড়ে ৭৩
দশমিক ৮২
শতাংশ ভোট
পড়েছে বলেও
জানান তিনি।
গতকাল ইসি ৫২২টি
ইউপির ফল
জানিয়েছে।
৫২২ ইউপির
মধ্যে আওয়ামী
লীগ ৩৯৪,
বিএনপি ৩৫,
জাতীয় পার্টি
(জেপি) ৭,
ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জাতীয় পার্টি
১, জাতীয়
সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৩, ইসলামী
আন্দোলন ১
ও স্বতন্ত্র
৭৯টিতে জয়
পেয়েছে।
এতে আওয়ামী
লীগ ৫৪
দশমিক ৫৬
শতাংশ ভোট
পেয়েছে।
দলটির প্রাপ্ত
ভোটের সংখ্যা
৩৬ লাখ
৭৯ হাজার
৫৮২।
এছাড়া বিএনপি
পেয়েছে ১৬
দশমিক ৭৮
শতাংশ।
তাদের ভোট
১১ লাখ
৩২ হাজার
৮৮টি।
আওয়ামী লীগের
তুলনায় বিএনপি
এক-তৃতীয়াংশ
ভোট পেয়েছে। বাকি
৫টি দলের
মধ্যে ইসলামী
আন্দোলন বাংলাদেশ
ছাড়া অন্য
দলগুলো এক
শতাংশের কম
পেয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন
বাংলাদেশ ১টি
ইউপিতে জয়
পেলেও প্রাপ্ত
ভোটের হার
২ দশমিক
৩৪ ভাগ।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,
প্রতিটি নির্বাচনী
এলাকার বেশ
কিছুসংখ্যক ভোটার নির্বাচনী দায়িত্বে থাকেন। এছাড়াও
প্রবাসী, চাকরির
কারণে নির্বাচনী
এলাকার বাইরে
অবস্থান এবং
মৃত ভোটারও
থাকে।
অনেকে অসুস্থতার
কারণে ভোট
দিতে যান
না।
এছাড়া উপজেলা
ও পৌরসভা
নির্বাচনের সহিংসতার মাত্রা বেশি থাকায়
অনেক সাধারণ
মানুষ ভোট
দেয়ার আগ্রহ
হারিয়ে ফেলছেন। এসব
কারণে ৮০
শতাংশের উপর
ভোট পড়া
কিছুটা হলেও
সন্দেহজনক।
তবে কর্মকর্তাদের
কেউ কেউ
বলেন, ইউপিতে
সদস্যরা বেশি
তৎপর থাকেন। এ
কারণে ভোটার
উপস্থিতি বেশি
থাকে।
ফল পর্যালোচনায় দেখা
গেছে, ৫১৪টি
ইউপির মধ্যে
৮০ শতাংশের
উপর ভোট
পড়েছে ১২৭টিতে,
যা প্রায়
এক-চতুর্থাংশ। পঞ্চগড়েরর
চারটি ইউপিতে
রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়েছে। এ
নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৩১
ভাগ ভোট
পড়েছে পঞ্চগড়ের
তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে।
আওয়ামী লীগের
মো. কুদরই-ই-খুদা
এ ইউপিতে
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ
ইউপিতে ৯
হাজার ৯৬০টি
ভোটের মধ্যে
৯ হাজার
২৯৪টি ভোট
পড়েছে।
বাতিল ভোটের
সংখ্যা ২১৩টি। বৈধ
ভোটারের সংখ্যা
৯ হাজার
৮১টি।
একই উপজেলার
বডাবুড়ি ইউপিতে
ভোট পড়েছে
৯০ দশমিক
৯০ শতাংশ। এতে
৭ হাজার
৯৫৫টি ভোটের
মধ্যে ৭
হাজার ২৩১
ভোট পড়েছে। ১৪৬
ভোট বাতিল
হয়ে বৈধ
ভোটের সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৫টিতে।
এ ইউপিতে
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তারেক হোসেন
জয় পেয়েছেন। ভজনপুর
ইউপিতে ৯১
দশমিক ৪১
ভাগ ভোট
পড়েছে।
এতে বিএনপির
প্রার্থী মো.
মকসেদ আলী
নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউপিতে
১ হাজার
১২৯ ভোটের
মধ্যে ১
হাজার ৩২
ভোট পড়েছে। একই
উপজেলার দেবনগর
ইউনিয়নে ৯০
দশমিক ২০
শতাংশ ভোট
পড়েছে।
এ ইউপিতে
বিএনপির মো.
মহসিন উল
হক বেসরকারিভাবে
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া
৯০ শতাংশের
বেশি ভোট
পড়েছে কুষ্টিয়ার
মিরপুর উপজেলার
ফুলবাড়ী ইউনিয়নে। এ
ইউপিতে আওয়ামী
লীগের মো.
আবদুস সালাম
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। খুলনার
রূপসা উপজেলার
শ্রীফলতলা ইউপিতে ৯১ দশমিক ৬৪
শতাংশ ভোট
পড়েছে।
এ ইউপিতেও
আওয়ামী লীগের
মো. ইসহাক
সরদার নির্বাচিত
হয়েছেন।
৮০ শতাংশের উপর
ভোট পড়েছে
যেসব ইউপিতে
: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া, আমলা,
কুর্শা, ছাতিয়ান,
তালবাড়ীয়া, পোড়াদহ; কুষ্টিয়ার মিরপুরের বহুলবাড়ীয়া,
বারইপাড়া, মালিহাদ, সদরপুর; খুলনার তেরখাদার
আজগড়া, দাকোপের
কামারখোলা, কৈলাশগঞ্জ, তিলডাঙ্গা, দাকোপ, পানখালী,
বাজুয়া, বানীশান্তা,
লাউডোব, দিঘলিয়া
উপজেলার আড়ংঘাটা,
পাইকগাছার কপিলমুনি, গদাইপুর, দেলুটি, লতা,
বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর, বাটিয়াঘাটা,
বালিয়াডাঙ্গা, ভাণ্ডারকোট, রূপসা উপজেলার আইচগাতী,
টিএস বাহিরদিয়া,
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী, কুশনা, দোড়া,
বলুহর, সাফদারপুর,
বাগেরহাটের ফকিহাটের নলধা-মৌভোগ, পিলজংগ,
বাহিরদিয়ামানসা, বেতাগা, লখপুর, শুভদিয়া, মোংলার
চিলা, মোড়েলগঞ্জের
বনগ্রাম, রামপালের
গৌরম্বা, ভোজপাটিয়া,
রাজনগর, হড়কা,
যশোরের মনিরামপুরের
কাশিমনগর, কুলটিয়া, চালুয়াহাটি, ঢাকুরিয়া, নেহালপুর,
ভোজগাতি, মনিরামপুর,
মনোহরপুর, হরিদাশকাটি, সাতক্ষীরার আশাশুনির আনুলিয়া,
আশাশুনি, কাদাকাটি,
কুল্যা, দরগাহপুর,
তালার খলিলনগর,
সাতক্ষীরা সদর, ব্রহ্মমরাজপুর, ভোমরা, কক্সবাজারের
টেকনাফের সাবরাং,
সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আড়াইসিধা,
তারুয়া, পশ্চিমতালশহর,
লালপুর, বাঞ্ছারামপুর
উপজেলার ছলিমাবাদ,
তেজখালী, কিশোরগঞ্জের
বিন্নাটি, মহিনন্দ, মারিয়া, যশোদল, লতিফাবাদ,
গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়ার গোপালপুর, নেত্রকোনার খলিয়াজুরীর
খালিয়াজুরি, গাজীপুর, চাকুয়া, মাদারীপুরের শিবচরের
সদর, ময়মনসিংহের
ফুলপুরের বওলা,
পটুয়াখালীর বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ, রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া,
পিরোজপুরের নেছারাবাদের বলদিয়া, বরগুনার নলটোনা,
বরগুনা সদর,
বরিশাল সদরের
চন্দ্রমোহন, জাগুয়া, ভোলার দৌলতখানের মেদুয়া,
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, পালশা, বুলকীপুর, আলীহাট,
খট্টামাধবপাড়া, বোয়ালধার, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তেঁতুলিয়া,
শালবাহান, রংপুরের পীরগাছার কল্যাণী, পাবনার
বেড়ার কৈটোলা,
চাকলা, ঢালারচর,
নতুন ভারেঙ্গা,
পুরান-ভারেঙ্গা,
বগুড়া দুপচাঁচিয়া
তালোড়া, সারিয়াকান্দির
চালুয়াবাড়ী, নারচী, বোহাইল, সারিয়াকান্দি, হাটশেরপুর,
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের চন্দাইকোনা, ধানগড়া, ধামাইনগর,
ধুবিল, পাংগাসী,
ব্রহ্মগাছা, সোনাখাড়া এবং সিলেটের জালালাবাদ
ইউপি।
Source: শীর্ষ নিউজ
No comments:
Post a Comment