ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এজ এর সম্পাদক নূরুল কবীর বলেছেন, ‘একজন নাগরিক হিসেবে আমি বলবো বর্তমান
হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। তার প্রমাণ ইতোপূর্বে অভিজিৎ এবং দিপনের
বাবা আমাদের পরিষ্কার করে দিয়েছেন।’
শনিবার একটি টেলিভিশনের টক শোতে তিনি
এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, র্যাব-পুলিশ
দিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।
নুরুল কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশে
বর্তমান সরকার সঠিক নির্বাচিত সরকার নয়। আমরা পত্রিকা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এটাও
শুনেছি যে, ২/৩ জন পুলিশ
কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়ে দাবি করেছেন যে, ‘বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছি আমরা এবং
ক্ষমতায় রাখছি আমরা’।
তিনি বলেন, ‘সরকার যে ‘উন্নয়ন না গণতন্ত্র’ স্লোগানটা দেন, স্লোগানটা কার? এই স্লোগানটি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর
প্রধান আইয়ুব খানের। যার বিরুদ্ধে এই দেশের মানুষ ৯ মাস সংগ্রাম করেছে। বর্বর
পাকিস্তান সরকার সেই সময় স্লোগান দিত- গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন আগে দরকার। আর তাই
তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের সরকার কিছু স্থাপনা দেখিয়ে জনগণকে বলতো, দেশ উন্নয়ন হচ্ছে। ঠিক তাই করছে বর্তমান সরকার।
বর্তমান সরকারও কিছু ব্রীজ কালভাট দেখিয়ে বলছে দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এই সরকার
অন্যায়ভাবে নির্বাচিত হয়েছে যার ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ নাই। শুধু মাত্র কিছু
অসৎ লোক আছে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে জনগণ নেই তার কারণ আ.লীগ ৫ জানুয়ারির
ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণকে হারিয়েছেন। তাই আ.লীগকে ক্ষমতায় টিকে
থাকতে হলে ২টি শক্তির ওপর ভরসা রাখতে হয়, তা হলো পুলিশ, র্যাব এবং
সেনাবাহিনী। কারণ, তাদের কাছে অনেক
ক্ষমতা আছে এবং তারা অস্ত্রসহ থাকে। যার কারণে যেকোন সময় মানুষের ওপর বল প্রয়োগ
করার ক্ষমতা রাখে। তারা বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম ভেঙ্গে দিতে পারে। তারা
মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে পারে। তাই সরকার এদের সঙ্গে থাকে।
দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র
পুলিশের শক্তি দিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকা যায় না। তাই অনেকদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে
হলে আন্তর্জাতিক কিছু শক্তির প্রয়োজন পড়ে। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ বেশ কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্রের সাহায্য নিচ্ছে।
বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটা মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটছে,
আমরা একটা ধর্মনিরপেক্ষ
দল, তাই এই উত্থান কে ঠেকানোর
জন্য আমাদেরকে ক্ষমতায় রাখ। তাহলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে তোমাদের সঙ্গে থাকব।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের শফী হুজুরকে বর্তমান
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করতে দেখেছি। এখন শফী হুজুরের যে রাজনীতি, নারীদের প্রতি তার যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার যে
গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সেটাও আমরা সবাই জানি। সেই তিনিই যখন বর্তমান
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তখন আমাদের কিন্তু বর্তমান সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ
গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যায়।
তিনি বলেন, এই যে
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন বিষয়টা সম্পর্কেও আমাদের সকলের একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার।
আমরা কি জানি এই বায়োমেট্রিক নিবন্ধন বিষয়ে সরকার কাদের অনুসরণ করছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে মোট ৪টি
দেশ এই বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চালু আছে। তাদের মধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব-আমিরাত। এই ৪টা দেশকে
অনুসরণ করে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের মাধ্যমে জনগণকে
জোড় করছে, যা কোনো ভাবেই
সঠিক নয়। এই ৪টি রাষ্ট্র কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। তাহলে আমাদের গণতন্ত্র কোথায়
?
No comments:
Post a Comment