Search

Sunday, January 5, 2020

নিত্যপণ্য — বছর শুরু অস্বস্তিতে









শুরু হয়েছে নতুন বছর। ক্রেতাদের আশা ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গত বছরের চেয়ে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। গত বছর অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ দিকে বেশকিছু পণ্যের দাম কমার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু নতুন বছরে আবারও নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে চিনি, তেল, পিয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। পিয়াজ গত সপ্তাহের থেকে দেশি পিয়াজ প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছে কেজিতে। আমদানিকৃত পিয়াজের দাম হালকা কিছুটা বেড়েছে। একমাস আগে সয়াবিন তেলের যে মূল্য ছিল, এখন তা কেজিপ্রতি গুনতে হবে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি।

আর সপ্তাহের ব্যবধানে ৭ থেকে ৮ টাকা বেশি দামে কিনতে হবে সয়াবিন তেল। চিনির দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহের থেকে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি গুনতে হবে একজন ক্রেতাকে। এছাড়া মান ভেদে সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম কেজিতে ৩০ টাকা এবং রসুনের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী খলিল আহমেদ বলেন, কিছুই করার নেই ভাই। ডিসেম্বরের শেষ দিন বাড়িওয়ালা ডেকে বলে আগামী মাস থেকে নাকি ১ হাজার টাকা বেশি ভাড়া দিতে হবে। এদিকে বাজারে এসে দেখি পিয়াজ, তেল ও চিনি সবকিছুর দামই বেড়েছে। এত টাকা কই পাব বলেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পিয়াজ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে আমদানি করা চীনা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কাওরান বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান বলেন, নতুন মৌসুমে দেশি পিয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে পিয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে চিনির দাম গত সপ্তাহের থেকে ৭ থেকে ৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যে চিনি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।

এদিকে, সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। সঙ্গে প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়ানো হয় কেজিপ্রতি ৭ টাকা। এর আগে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা সয়াবিন তেলের দামও লিটারপ্রতি ৮ টাকা ও পাম সুপার তেলের দাম ১৬ টাকার মতো বেড়েছে। বাজেটের পর এখন পর্যন্ত খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ টাকা।

টিসিবির হিসাবে, বর্তমানে গত বছরের তুলনায় ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। আর কমেছে ৭টি পণ্যের দাম। যেসব পণ্যের দাম কমেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাল, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, ব্রয়লার মুরগি, লবণ, ডিম ও লবঙ্গের দাম। চালের দাম মানভেদে কমেছে ৪ থেকে ১৮ শতাংশ, রুই মাছ ১১, ইলিশ মাছ ৬, ব্রয়লার মুরগির দাম ১১ শতাংশ, লবণের দাম ৫, ডিমের দাম ৩ ও লবঙ্গের দাম ৩০ শতাংশ কমেছে।

এছাড়া জরুরি পণ্যের মধ্যে যেগুলো দাম বেড়েছে তার মধ্যে রয়েছে- খোলা আটা, ময়দা, খোলা সয়াবিন তেল, পাম তেল, মসুর ডাল, আলু, পিয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, গুঁড়ো দুধ, গরুর মাংস, দেশি মুরগি, গরম মসলা, দারুচিনি ও এলাচি। ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে যে রসুনের (দেশি) কেজি ১৬০ টাকা বিক্রি হতো, সেই রসুন এখন ২০০ টাকা। আর ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারের দামের সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দামের পার্থক্য পাওয়া গেছে। তবে টিসিবির হিসাবেও সপ্তাহের ব্যবধানে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকার মতো।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশি পিয়াজ ১৬০-১৮০ টাকা এবং আমদানি করা পিয়াজ ৬০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, বাজারে শীতের সবজি ভরপুর থাকলেও তা ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। সরবরাহ বাড়লেও কোনো সবজির দাম কমেনি, বরং কিছু সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। সবজি বাজারে করলা, বরবটি, ঢেঁড়স, টমেটো ছাড়া সব সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার নিচে। বাজারে প্রতিকেজি করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, বরবটি, ঢেঁড়স আর টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এছাড়া বাজারে ছোট-মাঝারি মানের ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বড় ভালো মানের ফুলকপি ৩৫-৪০টাকা দরে এবং বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকা, শালগম ৩০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া (ছোট) ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে লাউয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বাজারে ভালো মানের শিম ৫৫-৬০টাকা এবং নিন্মমানের সিম ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মুলা ২০-২৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে এবং নতুন আলু ২৫-২৭ টাকা, পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে কেজি প্রতি নদীর আইড় ৮০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা, কোরাল ৪৮০ টাকা, কাতল ২৭০ টাকা, রুই ২৮০, বেলে ৫০০ টাকা, পাবদা ৫৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, চিংড়ি সাইজ ভেদে ৪০০-৪৫০ টাকা, পুঁটি ২৮০ টাকা, দেশি টেংরা ৪০০ টাকা, মেনি ৪০০ টাকা, নওলা ৩৮০ টাকা, বড় শিং ৪৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, টাকি মাছ ২৮০ টাকা এবং এক কেজির শোল ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানি কর্ক মুরগি ২১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ডজন এবং দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি।

  • কার্টসি —  মানবজমিন / জানুয়ারি ৪, ২০২০

No comments:

Post a Comment