Search

Saturday, November 20, 2021

তারেক রহমান : পরম্পরার নিশানটি যার হাতে


— প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম



১৯৭১ সালের মার্চে দেশমাতৃকার টানে নিজের চাকরি, পরিবার-সবার কথা বিস্মৃত হয়ে সর্বাগ্রে দেশকে স্থান দিয়ে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে ঘোষণা দেন-“উই রিভোল্ট”! স্ব-উদ্যোগে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে! মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক অবদান রেখে স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে করতে একসময় আবারো ডাক আসে দেশমাতৃকার মুক্তির! ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহি-জনতা পরম মমতায় তাঁকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। দেশের ঐতিহাসিক প্রয়োজনে নিজের পরিবারের কথা চিন্তা না করে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। দেশের শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দেন, শুরু করেন উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতির। নিজের জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ চালান। আধিপত্যবাদী কায়েমী স্বার্থবাদী মহল-এর প্ররোচনায় ১৯৮১তে শহীদ হন। আবারও গণতন্ত্র শৃঙ্খলিত হয়। ১৯৮২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে নামেন। শুরু করেন স্বৈরাচার বিরোধী আপোসহীন সংগ্রাম। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের নবযাত্রা শুরু হয়। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সূচনা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর দায়ত্বি পালন করেন খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়ার অনুসৃত পন্থায় দেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রাখেন খালেদা জিয়া। দেশ এগিয়ে যায় স্বনির্ভরতার পথে। ঠিক এই সময় ২০০৭ সালে দেশী-বিদেশী কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের প্ররোচনায় দেশের গণতন্ত্র আবারো শৃঙ্খলিত হয়।

জিয়াউর রহমান : সৈনিক থেকে রাষ্ট্রনায়ক

১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে জাতির চরম সন্ধিক্ষণে সৈনিক জিয়া দেশের প্রতি অনুপম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। এরপর সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে পেশাগত অবদান রাখেন। ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে মারা যায় কয়েক লক্ষ মানুষ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সীমাহীন ব্যর্থতার পটভূমিতে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদলের নিয়মতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এরকম অনিবার্য পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে জিয়াউর রহমানকে সিপাহি-জনতা বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে। এবারে তিনি জাতির সামনে এলেন সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে। ১৯৭৭ সালে সময়ের প্রয়োজনেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। জাতির প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। নিজে নির্বাচিত হন রাষ্ট্রপতি। শুরু করেন উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। তাঁর প্রবর্তিত ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে দিনরাত ১৮-২০ ঘণ্টা নিরলস পরিশ্রম করেন। এর মাঝে বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছিল ২০টি সামরিক অভ্যুত্থান। নির্মোহ নৈর্ব্যক্তিক রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন ঢেলে সাজান জিয়াউর রহমান। দেশ পুনর্গঠনে নিজে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটেছেন। তাঁর স্বল্পকালীন রাজনৈতিক জীবনে ৫০০০ জনসভা, কর্মিসভা ও সমাজ গঠনমূলক সভা করেছিলেন- পরিণত হয়েছিলেন রাষ্ট্রনায়ক জিয়ায়। জনসাধারণের মাঝে সৃষ্টি করেছিলেন অভূতপূর্ব আশা উদ্দীপনা। তাঁর জীবনপণ প্রচেষ্টায় জাতীয় জীবনে যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিল তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদাবান আসন লাভ করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের এরূপ সম্মানজনক অবস্থান স্বার্থবাদী মহল, সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী শক্তির এদেশীয় এজেন্টরা সহ্য করতে পারলো না। তাদের সম্মিলিত চক্রান্তে ১৯৮১ সালের ৩০ মে শহীদ হলেন জিয়া। তাঁর শাহাদাত বরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র আবারো শৃঙ্খলিত হল।

খালেদা জিয়া : গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রী

বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির পত্নী হলেও তিনি বাংলাদেশের একজন সাধারণ গৃহবধূর মতই সন্তানদের লালন-পালন এবং সাংসারিক কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। রাজনীতির মাঠে কখনো বের হননি। এমনকি রাষ্ট্রপতির পত্নী হিসেবে খালেদা জিয়া কয়েকবার বিদেশ সফরের সুযোগ পেলেও তাঁর সন্তানরা বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাননি। বিদেশে লেখাপড়া দূরে থাক, ঢাকা শহরে স্কুলে যেতেও গাড়ি় পাননি- রিকশায় যেতে হয়েছে! এটাই তাঁর পারিবারিক জীবন! একান্তভাবেই তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক সৈনিকের স্ত্রী, একনিষ্ঠ দেশসেবক রাষ্ট্রপতির সংসারকর্ম পরিচালনায় নিয়োজিত। জিয়ার শাহাদাতবরণের পর শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার মানসে ১৯৮২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে” রাজনীতিতে যুক্ত হন গৃহবধূ খালেদা জিয়া।

শুরু হয় স্বৈরাচারবিরোধী আপোসহীন সংগ্রাম। ১৯৮৩ সালের ২৮শে নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রথম আঘাত হানেন। কয়েক লক্ষ কর্মী নিয়ে ঘেরাও করেন সচিবালয়। ঘোষণা করেন-“সামরিক আইন মানি না।”এই ঘেরাও কর্মসূচিতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ, এমনকি গুলিবর্ষণ পর্যন্ত হয়। খালেদা জিয়ার গতিবিধিতে কড়াকড়ি় আরোপ করা হয়। ১৯৮৪তে এরশাদ জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলে, খালেদা জিয়া সেটি প্রত্যাখ্যান করেন।১৯৮৫ সালের নভেম্বরে সান্ধ্য আইনের আওতায় এরশাদ প্রথম নির্বাচন সম্পন্ন করলেও খালেদা জিয়া সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অটল থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। ফলে প্রবল গণরোষে লোক দেখানো ’৮৫-র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত মিলিয়ে যায়।

স্বৈরাচার এরশাদ ’৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিলে, খালেদা জিয়া “নির্বাচন নয়-আগে স্বৈরশাসকের পদত্যাগ” দাবি করেন। খালেদা জিয়া আরো ঘোষণা করেন-“অবৈধ সরকারের আয়োজিত নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে ।” শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়া প্রদর্শিত পথে না হেঁটে আপসকামী ‘জাতীয় বেইমান’ হিসেবে ১৯৮৬-এর নির্বাচনে গেলেন। ১৯৮৭-তেই সেই সংসদের পতন ঘটল। ১৯৮৮-তেও কতিপয় দালাল সৃষ্টি করে সংসদ নির্বাচন করেন স্বৈরাচার এরশাদ। অবশেষে ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ আট বছর স্বৈরাচার বিরোধী আপোসহীন নিরন্তর সংগ্রাম সফল হয়-পতন হয় স্বৈরাচার এরশাদের। গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া পরিণত হন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ায়।

স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংবিধান সংশোধন করে বাকশালের ভূত ‘রাষ্ট্রপতি শাসিত’ সরকারের পরিবর্তে ‘সংসদীয় ব্যবস্থা’য় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে বুনিয়াদি গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায়। জিয়াউর রহমান প্রদর্শিত উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতিকে মূলমন্ত্র ধরে বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশের অভ্যন্তরে শক্তিশালী জাতীয় প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে তোলেন, তেমনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০১-২০০৬ শাসনামলে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’ এবং ‘লুক ইস্ট পলিসি’র মাধ্যমে বাংলাদেশের কূটনীতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়ার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন আধিপত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সহ্য হলো না। তাদের মিলিত ষড়যন্ত্রে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দেশের গণতন্ত্রকে দীর্ঘমেয়াদে শৃঙ্খলিত করে।

তারেক রহমান : পিনো থেকে দেশনায়ক

১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য মেজর জিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তখন পিনো মাত্র ৭ বছরের শিশু! ১৯৭৫ সালে নভেম্বরের টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি মাত্র ১১ বছরের বালক! ১৯৮১তে যখন পিতা জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করেন তখন তিনি ১৭ বছরের কিশোর! ১৯৯১তে মা বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন তিনি ২৭ বছরের যুবক! এই বয়সের মধ্যেই তিনি বাবার যুদ্ধে যাওয়া দেখেছেন! অভ্যুত্থানে বাবার বন্দী হওয়া যেমন দেখেছেন, আবার পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতেও দেখেছেন। মাত্র ১৭ বছরে পিতৃহারাও হয়েছেন! মাকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যেমন দেখেছেন আবার প্রধানমন্ত্রী হতেও দেখেছেন-এমন অভূতপূর্ব বিস্ময়কর পারিবারিক পরিমণ্ডলে থেকে বেড়ে উঠেছেন পিনো! পৃথিবীতে এমন সন্তান বিরল যার বাবা এবং মা দু’জনেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছিলেন! সারা পৃথিবী খুঁজলেও সম্ভবত এমন সন্তান পাওয়া যাবে না যিনি বিদেশে না গিয়ে আরাম-আয়েশে ভোগবিলাসে লিপ্ত না হয়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন!

বয়স যখন ৩৪ তখন গণমানুষের সেবার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ ভিন্ন মিশনারি পন্থা অবলম্বন করেন। ঠিক জিয়ার মত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের সার, কীটনাশক, গবাদিপশু বিতরণ যেমন করেছেন, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে চিকিৎসা সেবাও পৌঁছে দিয়েছেন। শহীদ জিয়ার ১৯ দফার বাস্তবায়নে মৌলিক চাহিদাগুলো-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সব সেক্টরে অবদান রাখতে আরম্ভ করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।

মা বেগম খালেদা জিয়া যখন তৃতীয়বার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি ৩৭ বছরের যুবক। দল ক্ষমতায়, সরকারের অংশ না হয়ে, বেছে নেন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে! ঠিক কর্মবীর জিয়ার মত! ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন করে তৃণমূল নেতাদের সাথে নিজের আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাঁর চোখ ধাঁধানো ক্যারিশমায় সমগ্র দল হয় উজ্জীবিত! যেন নতুন জিয়ার পুনর্জন্ম হয়েছে! জিয়া প্রদর্শিত পন্থাগুলো নেতাকর্মীদের মধ্যে অভূতপূর্ব প্রাণের সঞ্চার করল!

জিয়া প্রদর্শিত পন্থাগুলো পুনর্পাঠ করে আমরা পিনোকে বোঝার চেষ্টা করি!

প্রথমত: জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে প্রতিভাবানদের খুঁজতেন, সাহায্য করতেন এবং সহায়তা করতেন। গ্রামে ইউনিয়নের সফল চেয়ারম্যান থেকে সফল সমাজকর্মী সবাইকে তিনি উৎসাহ দিতেন। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছেন জিয়াউর রহমান। ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে পিনো তৃণমূলের সঙ্গে নাড়ি়র সম্পর্ক স্থাপন করে সর্বত্র সাংগঠনিক প্রাণসঞ্চার করেন।

দ্বিতীয়ত: জিয়াউর রহমান খাল খনন, গণশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পিনোও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গ্রামীণ কৃষক, শ্রমজীবী তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জিয়ার মতই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন।

তৃতীয়ত: জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া দু’জনেই ভাষা প্রয়োগে মিতাচারী। রাজনৈতিক বিষোদগার থেকে দু’জনেই দূরত্ব বজায় রাখতেন। বিরোধীদলকে গালিগালাজ, অন্য নেতৃত্বকে অসম্মান করার দূরতম প্রচেষ্টাও লক্ষ্য করা যায়নি। বাবা এবং মায়ের মতোই পিনোও মিতাচারী। কথা বলেন ধিরে-যুক্তি দিয়ে। কথা বলার চেয়ে শোনার প্রবণতা বেশি।

চতুর্থত: জিয়াউর রহমান সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে পরিবর্তনের চিন্তা করেছিলেন। এ লক্ষ্যে প্রণীত হয় তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর গৃহীত কৃষি, খাল খনন ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ-আজও প্রাসঙ্গিক। পিনোও সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক সম্পৃক্তকরণের কৌশল অনুসরণ করেই জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন তৈরি করেন।

পঞ্চমত: জিয়াউর রহমান বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঘড়ি ধরে সময়মত উপস্থিত হতেন। রাজনৈতিক সহকর্মীদেরও সময়মতো বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দিতেন! যা এদেশে কোনো রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রপ্রধান কেউই কখনো ফলো করেননি! পিনোও এক্ষেত্রে ঠিক জিয়ার মত! প্রত্যেকটি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ঘড়ি ধরে সময়মতো উপস্থিত হওয়াটাকে রেওয়াজে পরিণত করেছিলেন পিনো!

জিয়াউর রহমানের দেশ গঠনমূলক কর্মকান্ড যেমন সাম্রাজ্যবাদী দোসরদের উদ্বিগ্ন করেছিল, ঠিক তেমনি পিনোর কর্মকান্ডও তাদের উদ্বিগ্ন করেছিল! সাম্রাজ্যবাদী ও তার এদেশীয় দোসররা চরম উদ্বিগ্নতার সাথে প্রত্যক্ষ করে-যদি পিনোর উদ্যোগগুলো সফল হয়, তাহলে স্বনির্ভর মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান রোধ করা সম্ভব হবে না! এই উত্থানকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মোকাবেলার উপায় জানা না থাকায়, তারা বেছে নেয় কূটকৌশল! এই কূটকৌশলে উদ্ভব হয় ওয়ান-ইলেভেন ২০০৭-এর! এর মধ্য দিয়ে দেশে আবারও শৃঙ্খলিত হয় গণতন্ত্র! সেই ২০০৭ সাল থেকে শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে তারেক রহমান আজ পিনো থেকে দেশনায়কে আসীন হয়েছেন!

স্বাধীন বাংলাদেশে শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সৈনিক জিয়া থেকে রাষ্ট্রনায়ক জিয়ার উত্থান হয়। জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর আবারও গণতন্ত্র শৃঙ্খলিত হলে তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন আপোসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া। গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার বিরোধী আপোসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উত্থান হয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। বিগত ১৪ বছর বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবার শৃঙ্খলিত! বেগম খালেদা জিয়া আজ শারীরিকভাবে অসুস্থ। স্বৈরাচার হাসিনার অত্যাচারে গোটা দেশ আজ বৃহত্তর কারাগারে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র আবারো শৃঙ্খলিত। এই পরিপেক্ষিতে শৃঙ্খলিত গণতন্ত্র মুক্তির পরম্পরার নিশানটি এখন তারেক রহমানের হাতে।

এদেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের স্বপ্ন শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়া শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে যেমন মুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনি তারেক রহমানও শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবেন। এজন্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাটুরিয়া-কোটি কোটি মানুষ প্রহর গুনছেন-সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, যখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে আবার শৃঙ্খলিত গণতন্ত্র মুক্তি পাবে!

No comments:

Post a Comment