Search

Thursday, November 11, 2021

গণতন্ত্র মুক্তি পাক

—  মোঃ মিজানুর রহমান

১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম স্বপদে ফিরে যান। ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানী পার্সপোট ব্যবহার করে লন্ডন ও ভারত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং একদিন পর ১২ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতি, লুটপাটের ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এরই মাঝে দেখা যায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ (বর্তমান জাতীয় সংসদ)-এ এই সংবিধান গৃহীত হয় ও একই বছর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংবিধান কার্যকর হয় এবং সংবিধান কার্যকরের দুই বছর একমাস দশদিনের মধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমান এর শাসনামলেই সংবিধান চারবার সংশোধন করে, এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করে একদলীয় ‘বাকশাল’ শাসন কায়েম করেন শেখ মুজিবুর রহমান-ই এবং আওয়ামী লীগ নেতারা হয়ে যান বাকশাল এর নেতা। সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী ছিল-‘সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতির  প্রবর্তন ও বাকশাল গঠন’। এটি ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে উত্থাপিত হয়; ঐ একই দিন পাস হয় এবং ঐ দিনই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন। 

দুর্নীতি, লুটপাট, ক্ষুধা-দারিদ্র্র্য তথা দুর্ভিক্ষ আর সংবিধানের কাটা-ছেঁড়ায় একদলীয় বাকশাল শাসনের ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতা দেখা যায়। সেই সাথে এসব খবর যেনো প্রকাশ না পায় সেজন্য সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা-দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, The Bangladesh Observer, The Bangladesh Times, বাদে দেশের সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয় ঐ একই বছর ১৬ জুন। স্বাধীন দেশে যেনো স্বাধীনভাবে রাজনীতি করা বন্ধ, সংবাদপত্রে লেখা বন্ধ। ফলে অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতাই শুধু নয় যেনো মাৎসনালয়ের রূপ ধারণ হয়েছিল। এমন অরাজকতার মাঝেই শেখ মুজিবুর রহমান পরিবার-(দুইমেয়ে ছাড়া) পরিজনসহ নিহত হন ঐ একই বছর ১৫ আগস্ট এবং ক্ষমতা নেন শেখ মুজিবুর রহমান’রই রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ সহচর খন্দকার মোশতাক; ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই খন্দকার মোশতাক ঐ বছরই ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ইনডেমনিটি’ অধ্যাদেশ জারি করেন। ক্ষমতার জন্য মাথাচড়া দিয়ে উঠেন খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল তাহেরও প্রভাব খাটাতে থাকেন। খালেদ মোশাররফ তেসরা নভেম্বর  মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-কে শহীদ মইনুল রোডের ৬ নং বাড়ীতে বন্দি করে কর্তৃত্ববাদি হয়ে উঠেন। সেনাসদস্যসহ দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে অসন্তোষ বেড়ে যেতে লাগলো। এমন অবস্থায় দেশজনতা ও সিপাহী সেনারা ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়ে স্লোগানে স্লোগানে সঠিক নেতৃত্বের জন্য মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে মুক্ত করে আনেন ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর এবং ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন। ৭ই নভেম্বর হলো ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’।  




শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কৃষি, শিল্প-কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, কারিগরি, বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন বিষয়ারলী ইত্যাদি অথাৎ স্বাধীন দেশ ও জাতিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ থেকে আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত করতে- এমন কোন খাত নেই যে অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে তিনি কাজ করেননি। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম এর রেখে যাওয়া সে বাংলাদেশকে স্বৈরশাসন ও স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে আপসহীন থেকে মুক্ত করেন তারই সহধর্মিনী বধূ থেকে রাজনীতিতে আসা গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া-যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তিনি জিয়াউর রহমান এর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখেন এবং নারীশিক্ষা, যুব উন্নয়ন, বিধবা ও বয়স্কভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আইন করে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষাক্ষেত্রে উপবৃত্তি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন, সংসদীয় গণতন্ত্র পদ্ধতি চালু, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চালু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কম্পিউটার শিক্ষা কোর্স চালু, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করণ, ‘শিক্ষার জন্য খাদ্য’ কর্মসূচির প্রচলন, দেশে সর্বপ্রথম কার্ড ফোন চালু, সেলুলার ফোন-আইএসডি ফোন চালু, ‘দুস্থ মহিলাদের ঋণদান’ কর্মসূচি চালু, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীদের মৃত্যু হলে প্রথম বারের মতো তাদের স্ত্রী ও প্রতিবন্দী সন্তানদের জন্য আজীবন পেনশনের ব্যবস্থা করণ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, মানুষের ভোটের অধিকার তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড প্রতিষ্ঠা করণ, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করেন। 

গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়েন ২৮ অক্টোবর, ২০০৬ সালে। তারপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১/১১’র চক্রান্তমূলক সরকার নিয়ে আসেন-যা ছিল তাদেরই ফসল ও অসাংবিধানিক। ১/১১’র চক্রান্তমূলক সরকার সংবিধান লংঘন করে দুই বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসান। ক্ষমতায় বসেই সরকার প্রধানের সুপ্ত মনের গুপ্ত লালসা উন্মোচিত হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার [৩০ জুন, ২০১১] বাতিলের মাধ্যমে। তার আগে গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথমে শহীদ মইনুল রোডের বহু স্মৃতিজড়িত বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করেন ১৩ নভেম্বর, ২০১০।  ক্ষমতায় থেকেই ৫ই জানুয়ারী, ২০১৪ জবর-দখল নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকেন আওয়ামী লীগ। তারপর প্রহসনের রায়ে সাজা দিয়ে গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্ধী করে রেখে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকেন। এসব কাজে প্রশাসনিক অনিয়মতান্ত্রিক সহযোগিতা পুরোটাই ভোগ করেন আওয়ামী লীগ। এসব ভোটের চিত্র এমনিই ছিল যে মোট ভোটের চেয়ে প্রাপ্ত ভোটের পরিমান বেশী। মৃত মানুষের ভোটও অবৈধভাবে দেয়া হয় ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থাকার অভিলিপ্সায়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা ত্রাস সৃষ্টি করে যেনো বিরোধী দলের কেউ ভোট দিতে না পারে। বিরোধী দলের এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না; এমনকি তুলে নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় রাখা হয়। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও জনগণ এই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারেন না। ফলে গণতন্ত্রেরর নামে একক কর্তৃত্ববাদ স্বৈরাশাসন চলমান। এমন শাসনের ফলেই দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী সৈন্যরা। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন করেন ক্ষমতাসীনদের লালিত-পালিত বাহিনী। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শেয়ার বাজারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া, হলমার্কের টাকা, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বছরে বছরে বাজেট বাড়িয়ে টাকা ক্ষমতাসীনরা নিজেদের পকেটে ভরান। ক্যাসিনোর মহানায়ক লীগ নেতারা। শাহেদ-পাপিয়াদের হোতা তারা? কিছু দিন পর পর তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানোয় টাকাগুলো যায় ক্ষমাসীনদের পকেটে। বালিশকাণ্ড-পর্দাকাণ্ড মাধ্যমে দুর্নীতির যেনো মহোৎসব চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন আউট যেনো রীতি; এমনকি ২য় শ্রেণীর পরীক্ষারও প্রশ্ন আউট হয়। আর এখন একদিকে এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয় অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাথে সাথে উত্তর পাওয়া যায়। এই সরকারের সময় জেনারেশনটা মেধায় পিছনে রয়ে গেলো। বিশ্ব জ্ঞান সূচকে বায়লাদেশের অবস্থান ১৩৮ টি দেশের মধ্যে ১১২ তম। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তো আরো বিপর্যয়। ঘরে ঘরে টিভিতে ভারতীয় সিরিয়ালের তামাশা। সিনেমা হলের বেহাল দশা। দেশীয় হলে কলকাতার সিনেমা চালানো এখন তো একপ্রকার রীতি। আমাদের সংস্কৃতিকে ওরা কালো মেঘ হয়ে ঘিরে ধরেছে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থাকতে ও বিরোধীদল দমনে ব্যস্ত-ঐদিকে খেয়াল নেই না-কি শুভংকরের ফাঁকি। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি মারাত্মক বিপর্যয়ে এবং ইউএনডিপি আর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশর অবস্থান ১৩৫। চলতি বছরের অক্টোবরেই ধর্ষণের শিকার শিশুসহ ১০০ জন [সূত্রঃ ০৩ নভেম্বর, ২০২১ দিনকাল]। সেই সাথে লুটপাট, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি চলমান। করোনা মহামারীতে ঘরে ঘরে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই লাজুক। তার উপর নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। জীবন যাপনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। লেখক, গবেষক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সুশীল, জনগণ কেউ কিছু বলতে বা লেখতে পারেন না। কেননা, ক্ষমতাসীনরা তাদের তৈরী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালা-কানুনতে নিপীড়ন, নির্যাতন, জেল-জুলুম করে দাবিয়ে রাখেন। 

এই যখন দেশের অবস্থা তখন জনগণের ভাবনায় গ্রোথিত যে  সংকটকালীন সময়ে দেশ-বিদেশের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ’৭১ এর ২৬ মার্চ, ’৭৫ এর ৭ নভেম্বর যে বীর দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে সঠিক পরিচয় দিয়ে এবং সঠিক নির্দেশনায় স্বনির্ভর আর উন্নতির দরজা দেখিয়ে;  আত্মনির্ভরশীল করে দেশ-জাতিকে নিয়ে গেছেন এগিয়ে। তার এগিয়ে নেয়া দেশকে শিক্ষাক্ষেত্রে জাগরণ ঘটিয়ে সার্বিকভাবে ইমার্জিং টাইগারে পরিণত করেছেন তার সহধর্মিনী দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাদেরই যোগ্যতম উত্তরসূরি তারুণ্যের অহংকার দেশনায়ক তারেক রহমান-ই পারবেন দেশের এই আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংকটকে বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল দিয়ে মোকাবেলা করে একক কর্তৃত্ববাদের ফ্যাসিবাদ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে এবং নিয়ন্ত্রিত চাপ উপেক্ষা করে সময়ান্তে সেই যোগ্য উত্তরসূরির পতাকার তলে জনগণ একাত্মতা হয়ে দুঃশাসনের বেড়াজাল ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে। তাই আজ ধ্বণিতেছে এক সুর- “৭ নভেম্বরের প্রেরণায়-জাগ্রত হোক জনতা,  সময়োপযুক্ত সঠিক দিক-নির্দেশনায় তারুণ্যের অহংকার জাতীয়তাবাদী নেতা। দুঃশাসন ছিন্ন করে হোক মানবাধিকার আর ভোটের নিশ্চয়তা এবং নিঃশর্ত মুক্তি পাক গণতন্ত্র।”

  • লেখক সাংবাদিক ও কলামিস্ট  


No comments:

Post a Comment