Search

Monday, December 6, 2021

বিকারগ্রস্ত প্রতিমন্ত্রী, অনিরাপদ বাংলাদেশ

শামা ওবায়েদ


বাংলাদেশ কতদিক থেকে অনিরাপদ, অস্থিতিশীল, অমানবিক ও অপ্রীতিকর অবস্থায় রয়েছে, তা দুটো ঘটনা দিয়েই মানুষের সামনে স্পষ্ট। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান নেত্রী, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় শায়িত, উন্নত চিকিৎসার অভাবে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে— এই পরিস্থিতিতে যখন দেশ ও দেশের বাইরে কোটি-কোটি মানুষ— গণতন্ত্রপ্রেমীরা উদ্বিগ্ন, কোনও এক সুখবরের অন্বেষায় প্রতীক্ষারত, তখন আমরা দেখেছি বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের বিনাভোটের এমপি-মন্ত্রীরা তাকে নিয়ে যাচ্ছেতাই মন্তব্য-বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাজনিত প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারদলীয়দের চলমান তামাশার মধ্যেই তাদের আসল রূপ ও চরিত্র বেরিয়ে এলো তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বর্ণবাদী, ঘৃণ্য মন্তব্যে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমান দম্পতির সন্তান ব্যারিস্টার জাইমা রহমান নিয়ে এই প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য এতটাই নোংরা, এতটাই বিচলিতবোধ তৈরি করে, যে দেশের একটি জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিকের বাংলা ওয়েব ভার্সন তার বক্তব্যটিকে প্রকাশ অনুপযুক্ত বলে প্রতিবেদন করেছে। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়— দেশে নারী-পুরুষ কেউই এই সরকারের হাতে নিরাপদ নয় এবং গত ১২ বছর ধরে দেশের অবনতিগ্রস্ত সার্বিক পরিস্থিতি।

কী আছে তাতে? যা আছে তার একটা চিত্র যদি লক্ষ্য করা হয়, উঠে আসবে, স্বৈরশাসকদের প্রতিরূপ।  যখন শাসকদের সঙ্গে মানুষের কোনও সম্পর্ক থাকে না, মানুষের প্রতি তাদের ন্যুনতম শ্রদ্ধাবোধও থাকে না—এই কুলাঙ্গার তার সর্বশেষ উদাহরণ। একজন তরুণীকে নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল এবং সংসদ সদস্য হয়ে যেসব কটুক্তি তার মুখনিশ্রিত হয়েছে—তাতে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মূলত সরকারের অবস্থানই এই লোক তুলে ধরেছে।

দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল স্তরের মানুষ যখন বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি করছে, তার সুচিকিৎসার বিষয়টি যখন দেশের মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে, তখন এইসব বর্ণবাদীদের মাধ্যমে মনোবৈকল্যপনা সৃষ্টি করে পরিস্থিতিতে ভিন্নদিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত অনির্বাচিত সরকার ও তাদের প্রেতাত্মাদের পুরনো খেলা। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিয়ে অতীতের ষড়যন্ত্রের পথ ধরে এসব  কুরুচিকর বক্তব্যও সেই পদ্ধতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। 

দেশের মানুষ বিশ্বাস করে ভোটে হেরে, প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ভীত হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্ররোচণাতেই এসব অসভ্য, কুরুচিকর মন্তব্য উঠে আসে। কে না জানে, এই অসভ্য, জিঘাংসাকাতর মুরাদেরও কন্যা সন্তান রয়েছে, সেও একজন কন্যার বাবা। আমরা মনে করি, এইসব মন্ত্রীদের মানসিক বিকৃতি ঘটেছে এবং অত্যন্ত বিক্ষুব্ধতার সঙ্গে বলছি, এদেরকে বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে দেশের নারী সমাজের কাছে, ক্ষমা চাইতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পাহারাদার জিয়া পরিবারের কাছে। অবিলম্বে তার মন্ত্রীত্ব প্রত্যাহার করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক পরিবারের বিরুদ্ধে তার অশোভন, অমার্জিত বক্তব্য প্রত্যাহার করে অনতিবিলম্বে ক্ষমা না চাইলে দেশের মানুষের প্রতিবাদের দুর্বিপাকে পড়বে সরকার। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসেও যে দেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি, নারীবান্ধব সমাজ হয়নি, বিকারগ্রস্ত মুরাদ হচ্ছে এর সর্বনিকৃষ্ট কারণ।


No comments:

Post a Comment