— মুহম্মদ মাহাথির
কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতার ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’ লাইনটি বিখ্যাত হয়ে আছে, যা বোঝাচ্ছে, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাই আজকের শিশুর সঠিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যত। দুঃখজনক হলেও সত্য দেশে বিদ্যমান দারিদ্রতার কষাঘাতে জীবনের শুরুতেই থেমে যাচ্ছে অনেক শিশুর সঠিক বিকাশ।
শনিবার, জানুয়ারি ২২, ২০২২, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘শিশুশ্রম নিরসনে ট্রেড ইউনিয়ন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময়সভায় জানানো হয় দেশে প্রায় অর্ধকোটি শিশু শ্রমিক রয়েছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
দেশের খাবারের হোটেলে, পরিবহণে, কৃষিকাজে, কলকারখানায়, হাটবাজারে, রাস্তাঘাটে অগণিত শিশুদের নানা রকম অমানবিক কাজ করতে দেখা যায়। অসংখ্য শিশু ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত। অথচ এই সময়ে তাদের থাকার কথা ছিল বিদ্যালয়ে পড়ালেখায়, পরিবারে আদর স্নেহে।
সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে শিশুদের কী করুণ অবস্থা।
এপ্রিল ২৫, ২০২২, বদরগঞ্জ, রংপুর থেকে আলতাফ হোসেনের লেখা ‘প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে খাবার চায় শিশু দুটি, তাই শিকলে বেঁধে রাখছেন মা–বাবা’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার পকিহানা গ্রামের রেলবস্তির দুই শিশু সহোদর সুমন হোসেন, ১০ ও সিমন হোসেন, ৮, কে যথাক্রমে ছয়মাস ও ১৫ দিন ধরে পায়ে শিকল লাগিয়ে রেখেছে তাদের মা।
দরিদ্র ওই পরিবারের সদস্যদের অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটে। ক্ষুধার জ্বালায় সুমন ও সিমন বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে খাবার চায়, কখনোবা গোপনে গাছের ফল ছিঁড়ে নিয়ে আসে। এসব কারণে প্রতিবেশীদের কথা শুনতে হয় তাঁদের মা–বাবাকে। তাই এই ব্যবস্থা।
বাগেরহাট থেকে সরদার ইনজামামুল হকের ‘চাল কিনবে বলে শাক বেচতে বের হয়েছে ছোট্ট আরিয়ান’ হেডলাইনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শিশু আরিয়ানের কথা যে অনাহারের থাকা মায়ের জন্য চাল কিনবে বলে রাস্তার ধার থেকে শাক কুড়িয়ে কয়েক মাইল হেঁটে যায় বাগেরহাট শহরে। সে নিজেও ছিল ক্ষুধার্ত।
শুধু আরিয়ান, সুমন ও সিমনই নয় দেশের প্রতিটি জনপদে অগণিত শিশুর জীবন দারিদ্রতার কঠিন আঘাতে তছনছ। খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনভাবে বেড়ে উঠছে তারা। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে থাকছে নিরক্ষর। ফলে তৈরি হচ্ছে এক বিশাল অদক্ষ ও অসুস্থ জনগোষ্ঠী। এদের অনেকেই সমাজে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দক্ষতার অভাবে ভালো কোন কাজ এরা পায় না। দারিদ্রতার দুষ্টচক্রে বাধা পড়ছে এরা।
বর্তমান অবৈধ সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার কোন ব্যবস্থা করেনি।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত দক্ষ সরকার ও ভিশনারি নেতৃত্বই একমাত্র পারবে শিশুদের জন্য একটি সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে।
টেইক ব্যাক বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment