Search

Monday, August 22, 2022

দুর্নীতি জ্বালানি সঙ্কট-এর উৎস

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সেমিনার পেপার - “দুর্নীতি জ্বালানি সঙ্কট-এর উৎস”

 


তারিখঃ ২২ আগস্ট, ২০২২। স্থানঃ আব্দুস সালাম হল, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা।

প্রবন্ধ উপস্থাপন  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিএনপি এবং সাবেক মন্ত্রী।


আসসালামু আলাইকুম। 

ভূমিকাঃ

বাংলাদেশের মানুষ গত এক দশক ধরে ভয়ংকর এক সময় অতিক্রম করছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা থেকে শুরু করে, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন। সমগ্র বাংলাদেশ আজ এক ভয়ংকর শকুনের ছোবলে বাকরুদ্ধ। জনগণের মাঝে ভয়ানক এক ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার একে একে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ০৫ আগস্ট মধ্যরাতে ডিজেল, অকটেন, পেট্রল ও কেরোসিনের দাম দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর নজিরবিহীন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। ২০১৮ সনের মধ্যরাতের ভোট ডাকাত সরকার ৫ আগস্ট মধ্যরাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে পাশ কাটিয়ে, এমনকি BERC এর অনুমোদন গ্রহণের আইনগত বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা ও পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করেছে। তেলের মূল্য ৪২.৫% থেকে ৫১.৬% বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক লাফে এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি নজিরবিহীন এবং অভূতপুর্ব। 


গত নভেম্বর ২০২১ সালেও সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল। ২০২১ সনের নভেম্বরে ২৩ শতাংশ, এখন আরও ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে কৃষিসেচ, গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৬৫ শতাংশ। অথচ এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে গড় বৃদ্ধি সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ, যা এখন দ্রুতই কমে আসছে। অতএব এ পর্যায়ে তেলের  মূল্য  মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি ভয়াবহ, অযৌক্তিক ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।  


প্রভাবঃ 

দুই অঙ্কের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব, আর দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে জ্বালানি তেলের এহেন অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি  বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে গণশাস্তি দেয়ার শামিল। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গণপরিবহন, দৈনন্দিন দ্রব্যের মূল্য, শিল্প ও কৃষিসহ সব খাতেই ভয়াবহ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।  রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি, চালসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে এসব প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের কৃষি, গণপরিবহন ও প্রান্তিক অর্থনীতির প্রধান তিন স্তম্ভ হচ্ছে সার, ডিজেল ও কেরোসিন তেল ।  এই তিন খাতেই  মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কর্মহীনতা, চাকরিচ্যুতি, অর্থকষ্ট ও ক্ষুধার বিভীষিকা শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন ধারার “জ্বালানি দারিদ্র্যের” আতংকগ্রস্ততা।


জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে গণপরিবহন খাতে যেমন, বাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, লঞ্চ- সব ক্ষেত্রেই ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। রেলওয়েও ভাড়া বৃদ্ধির ইংগিত দিয়েছে। তাছাড়া কৃষি উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য- চাল, ডাল, শাকসব্জি, মাছ, ডিম, তেল, ভোজ্যতেলসহ সব পণ্যে। নিম্নবিত্ত ও গরিব জনসাধারণ বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে মূল্যস্ফীতি দুই ডিজিটের ওপর চলে গেছে এবং তা দিনে দিনে আরো খারাপ হচ্ছে। 


যে সকল যুক্তি দেখিয়ে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকারঃ 

বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ভারতসহ অনেক দেশই নিজ দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। 

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিপিসির লোকসান কাটিয়ে উঠা। 

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জ্বালানি তেল চোরাচালান প্রতিরোধ করা।


বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ভারতসহ অনেক দেশই নিজ দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছেঃ  

বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে এ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলা হলেও গত ০৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বরং কমে প্রতি ব্যারেল ৯৪.১২ ডলারে নেমে এসেছে। আগস্ট মাসের ৩ তারিখ থেকেই বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম আগের তুলনায় কমতে থাকে। ৩ আগস্ট ছিল ৯৬.৮ ডলার, ৪ আগস্ট ছিল ৯৪.১ ডলার, ৫ আগস্ট ছিল ৯৪.৯ ডলার এবং ৮ আগস্ট তা নেমে আসে ৯৩.৯ ডলারে। বর্তমানে এ দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। প্রজেকশন হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ ব্যারেল প্রতি দাম ৮০ ডলারের নিচে নেমে আসবে। 

বিপিসি’র লোকসান কাটিয়ে উঠাঃ 

সরকার বলছে, গত কয়েক মাসে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান করেছে। গত ৮ বছর ধরে সরকারের একমাত্র লাভজনক সংস্থা হিসেবে গ্রাহকদের কাছে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি। অতএব বিপিসির লোকসান দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এক নজরে বিপিসি’র বছরওয়ারি লাভের হিসাবঃ 

২০১৫ সালে ৪ হাজার ১২৬ কোটি টাকা, 

২০১৬ সালে ৯ হাজার ৪০ কোটি টাকা টাকা , 

২০১৭ সালে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা টাকা ,

২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা

২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, 

২০২০ সালে ৫ হাজার ৬৭ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালে ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা।  


বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২২’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার তেল আমদানিতে কোনোরকম ভর্তুকি দেয়নি, বরং শুল্ক থেকে আয় ছাড়াও বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২৩ মে, ২০২২ পর্যন্ত সরকারের এ মুনাফার পরিমাণ মোট ৪৮ হাজার ১২২ কোটি ১১ পয়সা।  


এমনকি চলতি বছরে তেল বিক্রি করে ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা লাভ করলেও ৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা লোকসানের কথা বলছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি)। যা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল। 


আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় বিপিসি এই বিপুল পরিমান মুনাফা করেছে। এসময়কালে বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিতিশীল হলে সরকার দেশেও মূল্য বাড়িয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যহ্রাসের সুবিধা থেকে সাধারণ ভোক্তাদের বঞ্চিত করেছে সরকার। 


২০১৮ অর্থবছর থেকে বিপিসি শুল্ক, কর ও লভ্যাংশ বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। নিয়মিত পরিচালন খরচ এবং অন্যান্য কর দেওয়ার পরও বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে বিপিসির রয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। তিনটি তেল বিতরণকারী কোম্পানির ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংক আমানত রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের তথ্য। আগামী অর্থবছরে বিপিসি সরকারকে ট্যারিফ, ট্যাক্স এবং মুনাফা (dividend) হিসেবে ৯,২৫১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। উল্লেখযোগ্য যে ২০১৭ থেকে আর্থিক বছর ২০২২ পর্যন্ত বিপিসি সরকারকে ৬৫,৬৫৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। তন্মধ্যে ২০২০ ও ২০২১ সালে দুই কিস্তিতে বিপিসি সরকারকে তথাকথিত উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকা করে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ডিজেল এবং কেরোসিনে শুল্ক, ভ্যাট, এআইটি এবং অগ্রিম কর বাবত প্রায় ৩৪% বিপিসি সরকারকে পরিশোধ করে থাকে। জ্বালানি সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিপিসি’র আমানতে থাকা এই বিপুল পরিমান অর্থ দিয়ে সরকার চাইলেই দাম না বাড়িয়েও মুনাফার টাকায় আরও প্রায় ২১ মাস জ্বালানি সরবরাহ করতে পারত।


সরকার দাবী করছে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় দেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু ৪ আগস্ট থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য ৯৫ ডলারে নেমে এসেছে এবং প্রতিদিনই কমে আসছে। বর্তমানে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমতে শুরু করেছে তখন দেশের বাজারে সে অনুসারে কমিয়ে সমন্বয় করা হয়নি। বরঞ্চ অযৌক্তিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। অতএব বিশ্ববাজারের মূল্যের সাথে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে বলে সরকারের বক্তব্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং জনগণের সাথে এক ভয়াবহ প্রতারণা মাত্র।


মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সরকারের মন্ত্রী-সাংসদরা বিশ্বের অন্যান্য দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোথাও তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশী নেই। সরকারের তরফে মূল্যবৃদ্ধির এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে ডিজেলের প্রতি লিটার দাম ৯৭.৯ টাকা। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে,  হংকংয়ের  জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের চেয়ে বেশী। কিন্তু  হংকংয়ের  মাথাপিছু আয়  ৪৯ হাজার ৬৬০ ডলার। আর আমাদের মাথাপিছু আয় বিবিএস এর ভুল তথ্যের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েও মাত্র  ২ হাজার ৫০৩ মার্কিন ডলার। যা ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হারানোর ফলে আরও কমে গেছে। কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের  মাথাপিছু আয়ের সাথে মিলিয়ে দেখাটাও জরুরি। 


চোরাচালান প্রতিরোধকল্পে মূল্যবৃদ্ধিঃ

সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তেলের দামের ব্যবধান থাকায় দেশ থেকে জ্বালানি তেল পাচার হয়। তাই ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করতে দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু গত নভেম্বর ২০২১ এর আগে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ বাংলাদেশে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা ছিল। অন্যদিকে আমাদের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তখন ডিজেলের মূল্য আরো বেশি ছিল। কিন্তু পাচারের কোনো তথ্য শোনা যায়নি। এদিকে বিজিবি বলছে, দেশের কোনো সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি তেল পাচার হয় না। ২০২১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ৭১১ লিটার তেল পাচারের চেষ্টা করা হয়েছে এবং সবগুলো আটক করা হয়েছে। ৭১১ লিটার পাচার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে এদেশে জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে, এটাও অগ্রহণযোগ্য। আর সত্যি যদি পাচার হয় (আমার মনে হয় সেটা dismiss করা যায় না) তাহলে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে দায় জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়।


অতিরিক্ত লাভ করছে বিপিসিঃ 

তেলের মূল আমদানি ব্যয় ও শোধনকৃত মূল্যের চেয়ে এবার জ্বালানির মূল্য অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম সর্বোচ্চ ৯২ ডলার। অর্থাৎ লিটারপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম টাকার অংকে মাত্র ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা। তেল শোধনে লিটারে খরচ পড়ে দেড় টাকা। শোধন, পরিবহন ও কিছু সিস্টেম-লস মিলে লিটারে খরচ সর্বোচ্চ ৬২ টাকা। কিন্তু সরকার লভ্যাংশ, সরকারের কর, শুল্ক, ভ্যাট এই চার স্তরের মুনাফার পরে লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, পেট্রোল ১৩০ এবং অকটেন ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ ১ ব্যারেল অপরিশোধিত তেলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা খরচ করে সেটা বিক্রি করা হচ্ছে ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি(সূত্রঃ প্রথম আলো, ১২ আগস্ট, ২০২২)।এর অর্থ হচ্ছে, বিপিসি প্রতি ০১ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ করে। সরকার এক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে কাজ করেছে, জনকল্যাণে নয়। 


BERC কে পাশ কাটিয়ে মূল্যবৃদ্ধি আইনের ব্যত্যয়ঃ 

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অ্যাক্টের ২২ ধারা অনুযায়ী সব ধরনের জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব কমিশনের (বিইআরসি)। গত ৫ আগস্ট  জারিকৃত  প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি আইনের সুস্পষ্ট  লঙ্ঘন এবং বিইআরসি আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধী কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। সরকার যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি করল, এটা লুণ্ঠনমূলক (প্রিডিয়েটরি) বৃদ্ধি। প্রতিযোগিতা আইনের আওতায় এই মূল্যবৃদ্ধিটাকে লুণ্ঠনমূলক বৃদ্ধি বলা হয়। BERC কে পাশ কাটিয়ে এভাবে মূল্যবৃদ্ধি একটি ফৌজদারি অপরাধ। মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এ দায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অনুমোদন ব্যতিত এধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অসম্ভব। অতএব,আইনের এ ব্যত্যয়-এর দায় সুস্পষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর বর্তায়।  


জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাব্য কারণসমূহঃ

কিছু বিশ্লেষক মনে করে সম্প্রতি সরকার আইএমএফ’র কাছ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। তাই আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার আগেই ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি হ্রাসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার আইএমএফকে দেখাতে চায় শর্ত পালনে ঢাকা কতটা আন্তরিক। 


কিন্তু আবার অনেকে মনে করেন বৈশ্বিক সংকট, আই এমএফ’র শর্তপূরণ কিংবা বিপিসি’র লোকসান মেইক-আপ, কিংবা ভারতে পাচার রোধ- এসবই অজুহাত মাত্র। গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে জ্বালানি তেল বা খাদ্য আমদানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিলে চাপ পড়েনি। ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় কমেছে ১১ শতাংশ আর খাদ্যে কমেছে ৪ শতাংশ। কিন্তু এ সময় আমদানি ব্যয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ ৮৯ বিলিয়ন ডলার। ৫ আগস্ট পূর্ব পর্যন্ত আমদানি ব্যয় আরো অনেক গুন বেড়ে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট একাউন্টে চাপ পড়েছে। মূলত অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি বাণিজ্যের ভারসাম্যকে ধ্বসিয়ে দিয়েছে। এদিকে যে পরিমাণ আমদানির কথা বলা হচ্ছে, দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানসহ সার্বিক অর্থনীতির সূচকে তার প্রতিফলন নেই। এ সকল ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানিকৃত পণ্য বাস্তবেই দেশে এসেছে কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া মেগা প্রজেক্টসহ নানা খাতে দুর্নীতি ও অপখরচ করা হয়েছে। এক বিদ্যুৎ খাতেই ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে লুট করা হয়েছে। বেসরকারি অনেক ব্যাংক পথে বসে যাচ্ছে অর্থনৈতিক অনিয়মের কারণে। কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আসলে কোথায়?  দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার, আমদানির নামে অর্থ পাচার, বিনা উৎপাদনে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অর্থ লোপাট, খেলাপি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় এখন জ্বালানি তেল, পরিবহন সেবা ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হ’ল সরকারের এই হরিলুট সাগরচুরির খেসারত জনগণকে দিতে হবে কেন?


আবার কিছু অর্থনীতিবিদদের মতে সরকার অর্থনীতিকে কন্ট্রাক্ট বা সংকোচন করার উদ্দেশ্যে তেলের দাম এক লাফে ৪২% থেক ৫১% করেছে যাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা স্থবির হয়ে আসবে এবং এর ফলে এগ্রেগেট ডিমান্ড হ্রাস পাবে। এগ্রেগেট ডিমান্ড কমলে চাহিদাও কমবে এবং আমদানি ও রিজার্ভের ওপর চাপও কমবে। পত্রিকা রিপোর্ট করবে অর্থনীতিতে সুবাতাস ফিরে এসেছে। এলসি ওপেনিং ৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অনেকে মনে করেন তেলের দাম এক লাফে ৫১% বৃদ্ধির এটাই কারণ। 


অনেকে মনে করেন- সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আমদানির জন্য ডলারে টান পড়েছে। সরকার সেই টান থেকে বাঁচতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর টেকনিক অবলম্বন করছে। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের জন্য অর্থ প্রয়োজন। জ্বালানি খাত থেকে রাজস্ব বাড়ানোও সরকারের একটি টার্গেট। এতে বিপিসি যে বাড়তি মুনাফা করবে সেখান থেকে সরকারেরও বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে। জ্বালানি থেকে সরকার ৩৫% কর পেয়ে থাকে। এখন পেট্রল ও অকটেনের দাম যে আরও বাড়ান হয়েছে তাতে বিপিসি’র ৪৫ টাকার বেশি মুনাফা থাকবে। 


জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বহির্বিশ্বের উদাহরণঃ  

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে  স্থানীয় বাজারে বৃদ্ধি করা, আবার আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলে স্থানীয় বাজারেও কমানো- এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভারত গত মার্চে জ্বালানি মূল্য  ১১বার  সমন্বয় করেছে। ভারত প্রতি লিটারে ৫ টাকা আবগারি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। তারপর আরও ৬ টাকা কমিয়ে দিয়েছে, যাতে জনগণের  ওপর চাপ কম পড়ে। উল্লেখ্য, ভারত এখন আর তেলে ভর্তুকি দিচ্ছে না, একই সাথে তারা জ্বালানি তেলে উচ্চ মুনাফাও করছে না। ভারত এই পদ্ধতি অনুসরণ করে  বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমুল্যের মাঝেও জ্বালানির মূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত  মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে  আমাদের সামগ্রিক জীবনকেই  চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সমগ্রদেশে লোডশেডিংয়ের তীব্র প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবন এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। শিল্প উৎপাদন খাত ও রপ্তানি খাতে সুনামির সতর্ক সংকেতে  জনজীবনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এখন ১১৪ টাকার প্রতিলিটার ডিজেল থেকে ৩৪ টাকা কর আদায় করছে সরকার। সরকার যদি এই মুহূর্তে থেকে সব রকমের কর প্রত্যাহার করে, তাহলে এই মুহূর্ত থেকে প্রতিলিটার ডিজেলের মূল্য ৩৪ টাকা কমবে। প্রতিবেশী  ভারত অনেকটাই এই পদ্ধতি অনুসরণ  করেছে। 


প্রতিবেশী ভারতে জ্বালানি তেলের দাম ডাইনামিক ডেইলি প্রাইসিং মেথডে (DDPM) প্রতিনিয়ত বাজারমূল্যের সাথে সমন্বয় করা হয়। আফগানিস্তানও এ পদ্ধতি অনুসরণ করে। 


বাংলাদেশে তেলের দাম নির্ধারণ হয় সরকারি নির্বাহী আদেশে ফিক্সড প্রাইস মেথডে (FPM)। এর ফলে বিশ্ববাজারে আচমকা দাম বেড়ে গেলে ভর্তুকি দিতে হয়। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে গেলেও দেশের বাজারে কমানো হয় না। ফলে তেলের মূল্য কম থাকার যে সুবিধা সেটি থেকে ভোক্তারা বঞ্চিত হয়।  বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বা কমলে দেশের বাজারে খুব বেশি সমন্বয় করা হয় না। গত ২০ বছরে দেশে ১৭ বার ডিজেলের দাম সমন্বয় করা হয়। এর মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে এবং কমেছে মাত্র ৪ বার। 


গ্যাসভিত্তিক জ্বালানির চিত্র ও দেশীয় সম্পদ আহরণে মধ্যসত্ত্বভোগী সরকারের অনীহাঃ  

বাংলাদেশের শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনার অনেকটাই দাঁড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক গ্যাসকে কেন্দ্র করে। প্রতি বছরই দেশের আবাসিক, শিল্পোৎপাদন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাড়ে ৭ বছরের আগেই মজুদ ফুরিয়ে আসবে। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিস্কার এবং জ্বালানির বিকল্প উৎসের সংস্থান করা না গেলে সামনের দিনগুলোয় জ্বালানি খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।


গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম কার্যত বন্ধঃ 

বঙ্গোপসাগরের গভীর-অগভীর অংশে ব্লকগুলোয় দুই দশক ধরে কোনো ধরনের অনুসন্ধান কার্যক্রম নেই বললেই চলে। দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গোপসাগরের অফশোর ও অনশোরে (গভীর ও অগভীর) অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক। দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। আন্তর্জাতিক আদালতে জয়ী হয়ে মিয়ানমার ও ভারত এরিমধ্যে বঙ্গোপসাগরে নিজ নিজ এলাকায় অনেক খনিজ পদার্থ আবিষ্কারে সমর্থ হলেও বর্তমান সরকার এক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মূলত নিজস্ব ব্যবসায়ীদের স্বার্থে জ্বালানিতে আমদানিনির্ভরতার কারণে দেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকর রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সও দীর্ঘদিন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যদিও দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনার বৃহদংশ ঘুরপাক খেয়েছে পুরনো গ্যাসক্ষেত্রের উত্তোলনকে কেন্দ্র করে। নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধান চালানো হয়নি। 


অতএব ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে বঙ্গোপসাগরসহ সারাদেশে বাপেক্স ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন এবং নতুন করে গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কারের কার্যক্রম/মহা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। 


এক নজরে গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানিব্যবস্থাপনার চিত্র (Annexure-1) এবং পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী কিছু তথ্য (Annexure-2) আকারে সংযোজিত। 


গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ)-এর অর্থ এলএনজি আমদানিতে হস্তান্তরঃ 

নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, উন্নয়ন, উত্তোলন ও সংস্কার কার্যক্রমের জন্য ২০০৯ সালে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) গঠিত হয় । গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৪৬ পয়সা করে কেটে রেখে দেশের জ্বালানি সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যয়ই এ তহবিল গঠনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অথচ, গত ০৮ মে ২০২২ এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলাকে এ তহবিলের ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর আগেও ২০২১ সালে পেট্রোবাংলা গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের তিন হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আয় দেখিয়ে অর্থ বিভাগকে দিয়েছিল।  জনগণের অর্থে গঠিত “গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা” এলএনজি কেনার কাজে ব্যবহারের কোনো ন্যূনতম সুযোগ নেই। এটি কার্যত বেআইনি।  কারণ, এ অর্থ জনগণের।  যা কেবল দেশের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নকাজে ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। জিডিএফ তহবিলের টাকা দিয়ে এলএনজি আমদানি করার কোন প্রভিশন নেই। 


জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনৈতিক সাপ্লাই  চেইনে বিপর্যয়: 

এককালীন জ্বালানি তেল (পেট্রল, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিনের) মূল্য গড়ে ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি “মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা” বললেও কম বলা হবে।  এমনিতেই  প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে সমগ্র দেশজুড়ে, নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে দেশজুড়ে। এরই মাঝে বিশাল মাত্রায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে বিশাল বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রী গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে পিষ্ট নিম্নবিত্তের জীবনে এ মূল্যবৃদ্ধি অভিশাপ হয়ে এসেছে। একমাত্র ভবিষ্যৎই বলতে পারবে সামনে এর প্রতিঘাত কী হবে। মানুষের জীবনযাত্রায় এর নেতিবাচক প্রভাব সহজেই অনুমেয়। মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় মানুষের আয় কিংবা বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে না।  কোনো কোনো পন্যের মূল্যস্ফীতি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জ্বালানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে ডমিনো ইফেক্ট হিসাবে যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাড়বে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা। কৃষি, শিল্প সব ক্ষেত্রেই চতুর্মুখী সংকট সৃষ্টি করবে। এমনিতেই সারের দাম বেড়েছে, এর মধ্যে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সেচ মৌসুমে কৃষিক্ষেত্রে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে। লোডশেডিংয়ের সময় অজস্র ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার প্রকৃতপক্ষে ডিজেলের চাহিদা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রথম আলোর ১৪ আগস্টের বিশেষ প্রতিবেদনের হেডলাইনের দিকে চোখ বোলালেই যে কেউ আঁতকে উঠবে। শিরোনামটি ছিল ‘বাংলাদেশে জ্বালানির দাম: আমি হয়তো রাস্তায় ভিক্ষা করতে শুরু করব’। এতে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামে একজন পরিবহন শ্রমিকের বয়ান তুলে ধরা হয়েছে। এতে তিনি বলেন,  ‘ভয় পাচ্ছেন যে, তাঁকে শিগগিরই ভিক্ষা করতে হয় কি না’।  নুরুল আরও বলেন, ‘আমি যদি আমার চাকরি হারাই, তাহলে আমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করা শুরু করতে হতে পারে’। নুরুলের মতো কোটি কোটি নুরুল আজকে বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে এক অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে। যার জন্য গণবিচ্ছিন্ন এই সরকারের লুটেরা নীতিই দায়ী।   


সংকট সমাধানে করণীয়ঃ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমগ্র রাষ্ট্রীয়  অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে এথেকে মুক্তি পেতে হলে অতিসত্ত্বর কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন: 

স্বল্প-মেয়াদী

জ্বালানি আমদানিতে বর্তমানে শুল্ক, কর বাবত যে ৩৪% ব্যয় করা হয় তা অনতিবিলম্বে মওকুফ করে আমদানি ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে আনা। 

জ্বালানি তেলের মূল্য ৫ আগস্টের পূর্বাবস্থায় পুনঃনির্ধারণ। 

বিশ্ববাজার থেকে কম দামে তেল ক্রয় করে জনগণের কাছে উচ্চমূল্যে তা বিক্রির মাধ্যমে এত দিন বিপিসি যে মুনাফা করেছে, তার সঙ্গে গত কয় মাসের বা সম্ভাব্য লোকসানকে সমন্বয় করা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্যাস উত্তোলনের সময় by-product হিসেবে উৎপাদন হয় বলে দেশেই অকটেন ও পেট্রলের মজুদ রয়েছে এবং তা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আছে। সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি দিয়ে এগুলোর দাম বাড়ান কোনোভাবেই সমীচীন হয়নি।  তাছাড়া উপজাত হিসেবে উৎপাদিত বিধায় এই পণ্যের উৎপাদন খরচ প্রায় শূন্য, সেক্ষেত্রে এগুলোর দাম অবশ্যই কমানো সম্ভব। 

দিন আনে দিন খায়- এই শ্রেণির হতদরিদ্র নিম্ন আয় ও নির্ধারিত আয়ের গরিব মানুষের জন্য cash incentive দেয়া। 

ওএমএস’র আওতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আইটেম ও পরিমাণ বৃদ্ধি। 

বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে রেশন-কার্ডের বিপরীতে খাদ্য সরবরাহ। 

এসব বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ। 

ছোটো ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান। 

জ্বালানি ক্ষেত্রে  সরকার দুভাবে মুনাফা করছে। একদিকে বিপিসি যেন কোনোভাবেই লোকসান না করে, সে জন্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের নামে জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, জ্বালানির ওপর কর আরোপ করে সরকার বর্ধিত রাজস্ব আদায় করছে। এই দ্বৈত নীতি পরিহার করা।  


মধ্য-মেয়াদী

মূল্য চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে Stakeholder সাথে আলোচনাক্রমে নির্ধারণ পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। 

জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের  ক্ষেত্রে একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।  সেই প্রক্রিয়ায় বৈশ্বিক  বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে  স্বচ্ছ  প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় মূল্য সমন্বয় করার দাম বৃদ্ধি, এবং বৈশ্বিক  বাজারে মূল কমার সাথে সাথে দ্রুততার সাথে মূল্য সমন্বয় করে দাম হ্রাস করা।  যেমনটা ভারত সহ  দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। 

আমদানি নির্ভরতা পরিহার করে প্রাইমারী এনার্জি পলিসি রিভিউকরন। 

নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। 

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন পলিসি গ্রহণ করা। 

বিপিসিকে সুশাসন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহির আওতায় এনে একটি দক্ষ সংস্থায় রূপান্তর। 

শেষ কথাঃ

সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকলে জনকল্যাণের প্রতি তাদের একটা দায়িত্ববোধ থাকতো। সরকার এক লাফে জ্বালানির মূল্য ৫১% বৃদ্ধি না করে বিকল্প পথে বিষয়টির সমাধান করতে চেষ্টা করতো। সরকারের ভেতরে অসাধু এক ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করেছে যা আতংকের কারণ।


সরকারের নিশিরাতের সিদ্ধান্তে জ্বালানি তেলের আস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা এই সরকারের পক্ষে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয় কেননা এদের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। সরকার জনকল্যাণের চেয়ে তাদের নিজস্ব দলীয় ব্যবসায়ি ও সিন্ডিকেটের স্বার্থকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দেয়ায় সাধারণ জনগণের কাঁধে সমস্ত আর্থিক বোঝা চেপে বসেছে। এমতাবস্থায় অবিলম্বে প্রবল গণ আন্দোলন গড়ে তুলে এই অবৈধ লুটেরা সরকারকে বিতাড়িত করতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যার অধীনে রাতে নয়, নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে, সকলের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে সত্যিকারের অর্থে একটি জনগণের সরকার। তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের অধিকার আদায়ে সর্বাত্মকভাবে গণ-আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোন বিকল্প নেই।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ্ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। 


Annexure- 1 

এক নজরে গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানিব্যবস্থাপনার চিত্রঃ 

দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। 

এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হতো। 

দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে আসে ২২০-২৩০ কোটি ঘনফুট।  

৭০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট আমদানি করা হয় এলএনজি হিসেবে। 

কিন্তু বর্তমানে ২৭০ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরকার দিতে পারছে না। এই গ্যাস আবার শিল্প খাত ও বিদ্যুৎ খাতে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়।

বিশ্ববাজারে এখন প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৪১ ডলারের কাছাকাছি। যা কোভিড-১৯ এর পূর্বে ছিল ৪ ডলার।

২০১০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশীয় গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ, যা কিনা ২০২২ সালে কমে প্রায় ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। 

এদিকে গত ১০ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৯০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। 

দেশে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনের হার কমে গেছে। আর এর ফলে দেশীয় জ্বালানি তথা গ্যাসের পরিবর্তে ব্যবহার বাড়ছে আমদানি করা অতি উচ্চমূল্যের এলএনজির ব্যবহার। 

প্রতি ইউনিট দেশীয় গ্যাসের মূল্য যেখানে ২ থেকে ৩ ডলার, সেখানে প্রতি ইউনিট আমদানি করা গ্যাসের (এলএনজি) জন্য ব্যয় হয় ১২ ডলার (দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি) থেকে ৩৫ ডলার (স্পট মার্কেট) পর্যন্ত। 

দেশে বর্তমানে মোট গ্যাস সরবরাহের কেবল ২৫ শতাংশ আমদানি করা এলএনজি দ্বারা মেটানো হয়। এর বেশী এলএনজি আমদানি করার জন্য দেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশকে কেন নিয়ে যাওয়া হ’ল! জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি ওঠা বদ্বীপ অঞ্চল এবং বাংলাদেশ গ্যাসসম্পদে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত গ্যাস জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নেও একই মত প্রকাশিত হয়েছে। 

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস পেট্রোবাংলার সঙ্গে যৌথ জরিপে দেখায় যে বাংলাদেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসসম্পদের গড় পরিমাণ ৩২ টিসিএফ। 

একই সময় নরওয়ের জাতীয় তেল–গ্যাস কোম্পানি এনডিপি বাংলাদেশ সরকারি এজেন্সির সঙ্গে সম্পাদিত জরিপে দেখায় যে দেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসসম্পদের গড় পরিমাণ ৪২ টিসিএফ। 

২০১৮ সালে ডেনমার্কের গ্যাস পরামর্শক র্যামবোল তাদের জরিপে দেখায় যে এর পরিমাণ ৩৪ টিসিএফ। 

সবাই যে বিষয়ে একমত তা হলো, বাংলাদেশে যথেষ্ট মাত্রায় গ্যাস অনুসন্ধান না হওয়ার কারণে গ্যাস সংকট তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গ্যাসসম্পদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা কম অনুসন্ধানকৃত দেশগুলোর একটি। যথেষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভূগর্ভে লুক্কায়িত গ্যাস উত্তোলন করলে বর্তমানে যে দেশে গ্যাস সংকট তা তৈরি হতো না ।


Annexure- 2 

পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী কিছু তথ্যঃ 

দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা ১ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)।

দেশের ২৭টি গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ ৯ হাজার ৯০১ বিলিয়ন ঘনফুট বা ৯ দশমিক ৯ টিসিএফের কিছু বেশি। 

এর মধ্যে উৎপাদনে থাকা ২০ গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ রয়েছে ৮ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস। 

বাকি গ্যাসের মজুদ রয়েছে উৎপাদনে না থাকা সাত গ্যাসক্ষেত্রে, যার পরিমাণ এক টিসিএফের কিছু বেশি।

ভূতাত্ত্বিক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি গ্যাসকূপ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করা যায়। 

বাংলাদেশের গ্যাসকূপগুলো অনেক পুরনো হবার ফলে অঞ্চলভেদে এসব কূপ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। 

সে হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সাড়ে ৭ টিসিএফের বেশি গ্যাস উত্তোলন করা প্রায় অসম্ভব।

সে অনুযায়ী দেশে এখন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ টিসিএফ। বার্ষিক চাহিদা বিবেচনায় এ মজুদ দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা যাবে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত বছর পর্যন্ত।

পাঁচ বছর আগেও দেশে গ্যাসের দৈনিক উত্তোলন ছিল ২৮০ কোটি ঘনফুট। 

পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, দেশীয় কূপগুলো থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ২৩০ কোটি ঘনফুট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। 

এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে আরো ৭৮ কোটি ঘনফুট ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, 

দেশীয় কোম্পানিগুলোর আওতায় থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোর বেশির ভাগই ষাট দশকের। উৎপাদনে থাকা এসব গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন কমে গেলেও সঠিক সময়ে কম্প্রেসার বসানো হয়নি। যে কারণে উৎপাদন ঠিক রাখা যায়নি। 

অন্যদিকে বিদেশী কোম্পানিগুলোর (আইওসি) আওতাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় কম্প্রেসার বসিয়ে উত্তোলন ঠিক রাখা হয়েছে। 

বর্তমানে দেশে মোট উত্তোলনের ৬৯ শতাংশই এসেছে আইওসিগুলো থেকে। এসব কোম্পানির অধীন গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে চারটি। গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিদিন ১৬১ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। 


প্রবন্ধটি রচনায় যেসকল তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে: 

1. বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২২ (জুন ২০২২-এ প্রকাশিত)

2. সেন্টার পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) প্রতিবেদন।

3. Bangladesh Energy Sector | PDF | Asian Development Bank

4. A Review of Energy Sector of Bangladesh

5. Energy Sector in Bangladesh: An agenda for reforms

6. পলিসি রিসার্চ ইন্সটিউট অব বাংলাদেশ। 

7. যুগান্তর, ০৬ আগস্ট ২০২২।

8. দৈনিক সমকাল ০৬ আগস্ট ২০২২,

9. বণিক বার্তা, ০৬ আগস্ট ২০২২।

10. টিবিএস, ০৭ আগস্ট,২০২২।

11. বণিক বার্তা, ০৭ আগস্ট, ২০২২। 

12. দি ডেইলি স্টার, ০৮ আগস্ট ২০২২।

13. দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৮ আগস্ট ২০২২।

14. মানব জমিন, ০৮ আগস্ট ২০২২।

15. প্রথম আলো, ১২ আগস্ট ২০২২।

16. দি ডেইলি স্টার, ১২ আগস্ট ২০২২।

17. প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট ২০২২।

18. বণিক বার্তা,  নভেম্বর ২৭, ২০২১

19. বিবিসি বাংলা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 

20. বণিক বার্তা, ০৫ মার্চ ২০২২। 

21. বণিক বার্তা ১৬ অক্টোবর ২০২২। 

22. প্রথম আলো, ১০ আগস্ট ২০২১

23. বণিক বার্তা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১। 

No comments:

Post a Comment