Search

Friday, December 9, 2016

বিএনপির নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ১৩ দফা এবং কানাডায় ‘মাই ডেমোক্রেসি’!

By মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো

সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গত ১৮ নভেম্বর তিনি এ প্রস্তাব দিয়েছেন।


বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে বিরোধী দল বিএনপি একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে কানাডার নির্বাচন পুনর্গঠন নিয়ে ক্ষমতাসীন লিবারেল দলীয় জাস্টিন ট্রুডোর সরকার ‘মাই ডেমোক্রেসি’ অর্থাৎ ‘আমার গণতন্ত্র’ শিরোনামে অনলাইনে একটি জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছে। লক্ষ্যগত দিক থেকে উদ্দোগ দুটির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে অতি প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত ‘গণতন্ত্র’ অর্জন!

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব পেশ এবং তা নিয়ে দলটির মাঠ পর্যায়ে জনগণকে সম্পৃক্তকরণ এবং একই ইস্যুতে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সভা সেমিনার করার সিদ্ধান্তসহ সরকারের উপর দেশি-বিদেশি চাপ সৃষ্টিতে উন্নয়নসহযোগী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ কাকতালীয়ভাবে কানাডার সেই ‘মাই ডেমোক্রেসি’র সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।

কানাডার সেই অনলাইন ‘মাই ডেমোক্রেসি ডটসিএ’তে বলা হয়েছে- পরিপুষ্ট গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের উচিত জনগণের মতামত সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই জাতীয় উদ্যোগের ক্ষেত্রে কানাডা সরকার যথাসম্ভব সকল নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতে ‘ইলেকটোরাল রিফর্ম’ বা নির্বাচন পুনর্গঠন চায়। পাশাপাশি নির্বাচন পদ্ধতি, ভোট গ্রহণ, বাধ্যতামূলক ভোট ও অনলাইন ভোট, সবটাই হবে ‘মাই ডেমোক্রেসি ডটসিএ’র অন্তর্ভুক্ত। এটি সামাজিক ও পরিসংখ্যান বিজ্ঞানীসহ কানাডা সরকার এবং নির্বাচনি রাজনীতি ও গবেষণা পদ্ধতির বিশেষজ্ঞ দলের একটি যৌথ উদ্ভাবন। লক্ষ্যগত দিক থেকে তা নির্বাচন পুনর্গঠনে কানাডার জনগণকে মতামত প্রদানে সুযোগ করে দেবে। এটির তথ্য ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে দেড় কোটি কানাডিয়ানের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া শুরু করবে। পরবর্তীতে কানাডা সরকার জনসমক্ষে তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরবে। সেটাই হবে নির্বাচন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে দেশব্যাপী সফরে মিনিস্টার অব ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশন বা গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক মন্ত্রী মরিয়ম মুন্সেফের নির্বাচন পুনর্গঠনসংক্রান্ত মতামত বিনিময়ের অভিব্যক্তিটিও যুক্ত থাকবে।



ফলশ্রুতিতে কানাডা সরকারের ‘পরিপুষ্ট গণতন্ত্র’ হচ্ছে জনগণের মতামত, অর্থাৎ ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’, বাংলাদেশও তাই বলে। তথাপি প্রশ্নটি হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে কানাডার নির্বাচন পুনর্গঠন কতটা সাযুজ্যপূর্ণ, যদিও সরকার দেশটি ডিজিটাল হওয়া ছাড়াও মধ্যমসারির দেশে উন্নীত হওয়ার আশাবাদটি ব্যক্ত করে।

তাই রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপি প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসংক্রান্ত ১৩ দফার বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা কতটা সফল হবে কিংবা তাতে রাষ্ট্রপতি কতটা জনগণের সম্পৃক্তিকে মূল্যায়ন করবেন, সেটাই দেখার বিষয়। 

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আপামর মিডিয়ার ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকা পালনটিও হবে বিবেচ্য। কেননা গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ কিংবা জনগণের সার্বিক মূল্যায়ন বা ক্ষমতায়নে বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ সবটাই দেখা তাদের উপর নির্ভরশীল।

Tuesday, December 6, 2016

বেগম জিয়ার প্রস্তাবনা - একটি স্থায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন’র রূপরেখা




By জাকারিয়া চৌধুরী 


 
সকল রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে সকল দল বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে কোন না কোন সময়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে তাঁদের অথবা সেসব দলের প্রতিনিধিদের সমন্বিত জোটের ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্থায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গেল ১৮ নভেম্বর হোটেল ওয়েস্টিনে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম, বিএনপি সহ বিশ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ, দেশি বিদেশী অতিথি সহ সমাজের নানান শ্রেণী পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে তিনি তাঁর প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। যার মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতির প্রতি জোটের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন।

তাঁর পুরো বক্তব্যে যে সকল বিষয় স্পষ্ট হয়ে সামনে এসেছে তা হচ্ছে - অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ, সৎ, দক্ষ ও সাহসী নির্বাচন কমিশন গঠনের কোন বিকল্প নেই। এ ধরনের একটি কমিশন গঠনের মৌলিক প্রক্রিয়া, যোগ্য লোক বাছাইয়ের মাধ্যমে সমন্বিত করণ, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনমনের ভীতি  দূরীকরণ ও জন আস্থা ফিরিয়ে এনে একে আনন্দমুখর করে তোলা। প্রজাতন্ত্রের বিতর্কিত ও প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মচারীদের চিহ্নিত করণ এবং তাদেরকে যে কোন নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা-ই ছিল এই প্রস্তাবের মূল বিষয়।

বর্তমানে যে আজব দুর্গন্ধময় এবং সঙ'য়ে পরিপূর্ণ, প্রকাশ্যে আনুগত্যকারী ভাসমান, পদলেহনকারী নির্বাচন কমিশন রয়েছে তাঁর মেয়াদ স্বাভাবিক নিয়মে শেষ হবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ এবং এ কমিশনের পরে নতুন যে কমিশন গঠিত হবে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সেটার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বুকে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক, চাতুর্যপূর্ণ, প্রহসনে ভরা, কুকুর বেষ্টিত যে নির্বাচন ( যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পেছনে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন , দ্রুত সময়ের মধ্যেই সকলের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তিনি আরেকটি নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন। এ জাতি শেখ হাসিনাকে যেমন জানেন, নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তেমন ব্যবহার করেছেন। বেমালুম ভুলে গেছেন পুরো বিষয়টা ) হয়েছিল। এরপর  যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা দিক দিয়ে গুরুত্ব বহন করে। আর এ কারনেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী কাঠামোকে যুগোপযোগী করা তথা নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন ও শক্তিশালী করণ এবং নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয় -  একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করণ এবং নির্বাচনোত্তর শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে। 

গণতন্ত্র একদিনের কোনও পায়ে হাঁটা সহজ পথ নয়। আজকের প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রই হয়ত একশ বছর পার করে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের রূপ পায়। আর এ কাঠামোর মাধ্যমেই জনমতের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। বাংলাদেশের সংবিধানে পরিস্কার বলা আছে, ‘দেশের সকল ক্ষমতার উৎস এর জনগণ’।  সেই জনগণ তাঁদের স্বীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতি পাঁচ বছর পর ভোটের মাধ্যমে তাঁদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন। আর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে তাঁদের জবাবদিহিতা দিতে বাধ্য। আবার যেসকল সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন, তাঁদের জবাবদিহিতার প্রশ্ন হুমকির মুখে পড়ে। ফলে গণতন্ত্রের অন্যান্য বাহন বা নিয়ামক যেমন - আইনের শাসন,  ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সুশাসন, মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলোর স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা সবই সেই অনির্বাচিত সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

সরকারকে তখন তার ন্যায্যতা, যোগ্যতা, দক্ষতা, ক্ষমতা প্রমাণ করতে গিয়ে নানান ফন্দিফিকির আর ছলাকলার আশ্রয় নিতে হয়। নতুন নতুন ফর্মুলার মুলা ঝুলিয়ে জনগণকে চমক দেখিয়ে ব্যস্ত রাখতে হয়। গত ক’বছরে আমরা এমন সব আজব কর্মকাণ্ড দেখেছি। ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’, ‘বেশি উন্নয়ন কম গণতন্ত্র’, ‘সীমিত গণতন্ত্র’ ইত্যাদি নানা অগণতান্ত্রিক ফন্দি, যার কোনোটিই সাংবিধানিক পথ নয় এবং এসব কলা রাষ্ট্র, সরকার বা জনগণের জন্য শুভ পরিণতি বয়ে আনে না। আবার গণতন্ত্রের প্রধান বাহন যে নির্বাচন - তা যদি একটি দক্ষ, যোগ্য, সৎ, নিরপেক্ষ, সাহসী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশনের অধীনে না হয় - তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এ কারণেই একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রথম ও প্রধান শর্ত। নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে আমাদের সংবিধানের ১১৮ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে - ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন।’

দুঃখজনক হলেও সত্য, এ আইন বা বিধানাবলি আজো প্রণীত হয়নি। ঠিক সে কারণেই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্কের ধারাও অব্যাহত আছে। আর তাই নির্বাচন কমিশন গঠন ও তা শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়। তবে যত দিন পর্যন্ত না আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণীত হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে কী করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন ও তা শক্তিশালী করা যায়, সেটিই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপরিউক্ত সুপারিশমালা প্রদানের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সদ্য সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রীর নির্বাচন কমিশন নিয়ে পুনর্গঠন প্রস্তাবনা চর্বিতচর্বণ ও অন্তঃসার শুন্য। তাঁর এ প্রস্তাবনা প্রমান করেছে যে, তিনি জনগণের উপর আস্থাশীল নন। তিনি এমন কিছু প্রসঙ্গ এনেছেন যা ইতোমধ্যেই আমাদের সংবিধান বা নির্বাচনী আইনে অন্তর্ভুক্ত আছে। তিনি আওয়ামী লীগের পুরানো অভ্যাসমত কথায় কথায় অতীত টেনে এনে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে যে সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, তা খুবই হাস্যকর। কারন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপ আহবানকে অসম্মান দেখিয়েছেন। তাঁর পুত্র বিয়োগের পর প্রধানমন্ত্রী তাকে সমবেদনা জানাতে গুলশান কার্যালয়ে গেলে তিনি কার্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে সংলাপের সম্ভাবনাকে চিরদিনের জন্যে রুদ্ধ করে দিয়েছেন। ( পাঠক, খেয়াল করুন নির্বাচনের আগে হাসিনার উসিলা ছিল সংবিধান সুরক্ষা এবং আজকে ওবায়দুল কাদেরের উসিলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া কেন দুয়ার বন্ধ রাখলেন সেজন্য আলোচনা হবে না। অথচ, কিছুদিন আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা মুখে ফেনা তুলে ফেলছিলেন এই বলে যে, বেগম খালেদা জিয়া কেন একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেশ করছেন না। এটি যেন মেষ শাবক আর সিংহের একই ঘাঁটে পানি খাওয়ার গল্পকে মনে করিয়ে দেয়। ) তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘কোনও প্রেসক্রিপশন দেওয়ার আগে খালেদাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা, মানি লন্ডারিং ......ইত্যাদি ইত্যাদি’র জন্যে। এখানে পাঠকদের আরেকটা বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই। যারা শেখ হাসিনার সাংবাদিক সম্মেলন প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা যখন হাসিনার মতামত জানতে চাইলেন তখনও তিনি ওবায়দুল কাদেরের কথা গুলোই যেন প্রতিধ্বনিত করলেন। একটা শব্দ কিংবা একটা বর্ণ পর্যন্ত এদিক সেদিক হয়নি। এর মানে দাঁড়ায়, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা শুরুর আগেই তাঁদের প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত ছিল। তাঁদের দুজনের কেউই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে এগিয়ে এলো না, বেগম খালেদা জিয়া তাঁর প্রস্তাবনায় কি কি ভুল করেছেন, কোথায় কোথায় তাঁরা দ্বিমত করছেন কিংবা কোথায় কোন সমস্যা আছে যার কারনে একে গ্রহন করা যাচ্ছে না? তাঁদের আচরন রয়ে গেল ৬০ এর দশকের আওয়ামী লীগের মতই যা তাঁদের মত নয় তা অবশ্যই শত্রুদের মত। সুতরাং, ভিন্ন মত দেখলেই চালাও তলোয়ার। তবে হ্যাঁ, একটা বিষয় জনমানসের মনে আশা যুগিয়েছে। যে প্রস্তাবনা আওয়ামী লীগ ও তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে সে প্রস্তাবনই গ্রহন করেছে এদেশের সাধারন মানুষ, কিছু কূটনীতিক এবং সাবেক দুইএকজন নির্বাচন কমিশনার। তাঁরা বলেছেন এটি ভাল প্রস্তাব এবং নিঃসন্দেহে এটি আলোচনার দাবি রাখে। মাঝখানে জামাতকে টেনে এরা আবারো আগের মতই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল যা হালে পানি পায়নি।

এই বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অন্য এক আলোচনা সভায় বলেন, ’বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের প্রধান নিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এ নিয়োগ কোন পদ্ধতির মাধ্যমে হবে সেটা সংবিধানে উল্লেখ নেই। এ সমস্যাটির সমাধান রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনায়।’ জনাব খসরু সাহেব বিষয়টিকে পরিস্কার করে দেবার পরেও এরা আর কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আর কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আসলে কেউই চায় না। কিন্তু নির্বাচন যাতে আর প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই। প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের প্রাথমিক শর্তই হলো একটি প্রশ্নমুক্ত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। তাই সরকারের এ বিষয়ে সদিচ্ছা কতটুকু বা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সরকার আসলে কেমন দেখতে চায়, সেটা পরিষ্কার হবে ২০১৭ সালের নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়েই। 

বিভিন্ন সূত্রের সহায়তা নেয়া হয়েছে।

Wednesday, November 30, 2016

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

জন গোমেজের সমালোচনা, আর কোন টাকা দেবে না : এবিএস-সিবিএন নিউজ

নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলাকেই দায়ী করেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন। এ কারণেই আর কোন টাকা দেবে না বাংলাদেশকে।

এছাড়াও ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের সমালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, অনৈতিকভাবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ফিলিপাইন সরকারকে অর্থ পরিশোধ করতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

আরসিবিসি ব্যাংকের পরামর্শক থিয়া ডায়েথ বলেছেন, এ চুরি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলারি কারণেই হয়েছে। তাছাড়া আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি তারা যাতে ফিলিপাইন সরকারের কাছে যথার্থ প্রমাণ উপস্থাপন করে এবং প্রকৃতপক্ষে কারা এই চুরির জন্য দায়ী তাদের চিহ্নিত করে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আর কোন অর্থ দেবে না রিজাল ব্যাংক। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দোষীদের চিহ্নিত করারও আহ্বান জানান দায়েপ।

উল্লেখ্য, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখায় স্থানান্তর করে অজ্ঞাত হ্যাকারেরা। যার বেশির ভাগ অর্থই ফিলিপিন মুদ্রা পেসোয় রূপান্তরিত হয়ে ক্যাসিনোয় চলে যায়। ক্যাসিনো থেকে অর্থ আদায়ের দুর্বল ব্যবস্থার কারণে সেখান থেকে মাত্র ১৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করতে পেরেছে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনায় ইচ্ছাকৃতভাবে সন্দেহজনক লেনদেনসমূহ সংঘটিত হতে দেয়ায় রিজাল ব্যাংকের এক কোষাধ্যক্ষসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে ফিলিপাইনের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। এছাড়াও এ ঘটনায় ব্যাংকটিকে রেকর্ড ১ বিলিয়ন পরিমাণ জরিমানা করে কর্তৃপক্ষ। সূত্র : এবিএস-সিবিএন নিউজ।


এ ওয়ান নিউজ

Monday, November 28, 2016

নির্বাচন কমিশন গঠন : শুভবুদ্ধি ও সদিচ্ছার আলামত দেখার ব্যর্থ প্রতীক্ষা


By আমীর খসরু
 


রাজনীতিতে এবং শাসনকাজে মাঝে মাঝে নীরবতা এবং সব কিছুই চুপচাপ ঠিকঠাক চলছে – অনেকের ধারণা মতে এমন একটি সময়কাল বর্তমানে অতিক্রান্ত হচ্ছে। জনঅংশগ্রহণ যদিও এই গণতান্ত্রিক সমাজে দিনে দিনে কমেছে এবং এর দেখা পাওয়াটা এখন দুষ্কর। তবে জনঅংশগ্রহণবিহীন কথিত গণতন্ত্রে কতোটা সিস্টেমের অন্তর্গত দুর্বলতা অথবা শাসকসৃষ্ট এহেন পরিস্থিতি – তা নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হতে পারে। আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এবং রাজনীতিতে অতিসজ্জন বলে পরিচিত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ বছরেই এ ধরনের নীরবতামূলক পরিস্থিতির বিদ্যমানতায় বেশ কিছুটা শংকা প্রকাশ করেছিলেন। অবশ্য সৈয়দ আশরাফের প্যাটার্নটাই এমন যে, তিনি আকার-ইঙ্গিতে বহু কথা বলেন, বহু কথা না বলেই। বিষয়টা এমন যে, ‘অনেক কথা যাও যে বলে, কোনো কথা না বলে।’ এসব নীরবতাকে কখনো কখনো অস্বস্থিকর, যাকে ইংরেজিতে ‘আনইজি কাম’ বলা হয়ে থাকে। আর এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে কোন কিছু নিয়েই এখন আর প্রকাশ্য কোনো মাথা ব্যথা নেই। দিনে দিনে পরিস্থিতি যা দাড়াচ্ছে তাতে এসব বিষয়ে তাদের মাথাও যেমন থাকবে না, তেমনি ব্যথারও কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রথমেই অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা বৃহদাকার ধারন করায় প্রতিনিধিত্বশীল শাসন ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। তবে প্রতিনিধিত্বশীল শাসন ব্যবস্থার প্রণেতা এবং দার্শনিকরা নিজেরাই এ কথা গোড়াতেই কবুল করে নিয়েছেন যে, আদতে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থাটি ঘুরেফিরে সেই কতিপয়ের শাসনই পরিণত হয়- যদি না আগেভাগে যথাযথ ব্যবস্থাবলী গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বর্তমানে ‘আমার ভোট আমি দেবো’ এমন ব্যবস্থাটি অর্থাৎ নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতাই আর চালু নেই। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বহু দেশে এমনটা ঘটছে। তবে এখানে জোর দিয়েই একটি কথা বলতে হচ্ছে, নির্বাচন বা ভোট যখন গণতন্ত্রের অপর নাম হয়ে দাড়ায় অথবা সমাথর্ক বলে কতিপয়কেন্দ্রীক শাসন এবং স্বৈরশাসকগণ স্বজ্ঞানে, কূটকৌশলের অংশ হিসেবে যখন এমনটা চর্চা বা প্র্যাকটিস করতে শুরু করলো -তখনই প্রকৃত গণতন্ত্রের ছিটেফোটাও যা বাকি ছিল, তারও বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। কারণ নির্বাচন বা ভোট এবং গণতন্ত্র যে এক কথা নয়, সাধারণের মনোজগত থেকে সে কথাটি পর্যন্ত স্বৈরশাসকবর্গ সুকৌশলে মুছে দিয়েছে। বাংলাদেশও কোনোক্রমেই এর বাইরে নয়।

এক্ষেত্রে অবিভক্ত পাকিস্তানের বহু উদাহরণ দেয়া যায়। গণতান্ত্রিক পথ-প্রথা, পদ্ধতি ভাঙ্গার জন্য প্রথমে মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন আইয়ুব। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার শুরুটা যেসব কারণে হয়েছিল তার অন্যতমটি ছিল গণতন্ত্র। অর্থাৎ স্বাধীনতার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রাপ্তি ও চর্চার মধ্যদিয়ে সবার জন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু শুধুমাত্র ভোটই যে গণতন্ত্র এমন একটি অপকৌশল বাস্তবায়ন করা হয় শাসকবর্গের পক্ষ থেকে, দেশটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অল্পকাল পরেই। যার স্পষ্ট আলামত প্রথমবারে দেখা যায় ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এরপরে ছোট বড় যতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার প্রায় সবই অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয়, নানাবিধ প্রভাব আর পেশী ও অস্ত্রশক্তির উপর ভর করে। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পরে সামরিক শাসন আমলের নির্বাচনে আমরা আইয়ুব খানের নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি দেখেছি কমবেশি। আমাদের দেখতে হয়েছে হ্যাঁ-না ভোট, এরশাদ জামানার নানা কিসিমের নির্বাচন।

একটি বিষয় বলতেই হবে, যৎসামান্য হলেও নির্বাচন জনগণের জন্য গণতন্ত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও সুরক্ষা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে জনমনে সামান্য হলেও অধিকার আদায়ের শক্তিটুকু দিয়ে থাকে; যার সবকিছুই এখন বিদায় নিয়েছে। একথাটিও বলতে হবে, ১৯৯০ সালের স্বৈরশাসনের বিদায়ের পরে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে একে একে নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠানোর যে ত্বরিৎ কর্মটি আমরা নানা সময়ে বাধ্য হয়ে প্রত্যক্ষ করেছি, তা প্রতিবারই নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবনকারী এবং অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন তথাকথিত ভোটদান পর্বকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নেতিবাচক ইতিহাস হিসেবেই বহু বহুকাল বিবেচিত হবে। অথচ এ কথাও আমাদের স্মরণে আছে, ২০০৮-এ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নানা সুন্দর সুন্দর কথা বলা হয়েছিল। এতে আরো নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছিল; যার দু’একটির উল্লেখ করা প্রয়োজন। নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকারের প্রধান ৫টি বিষয়ের ৫.৩ দফায় নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির ইতিবাচক সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। ওই ইশতেহারে ভিশন ২০২১-এর প্রথম দফায়ই বলা হয়েছিল, ‘একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা, নিয়মিত নির্বাচন, সরকারের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।’

এসব প্রতিশ্রুতির পরে শুধু সংসদ নির্বাচনই নয়, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, এমনকি বাজার-স্কুল কমিটির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন পক্ষের নানা তেলেসমাতি আমাদের দেখতে হচ্ছে ও হয়েছে। নির্বাচনকে অকার্যকর মাধ্যম হিসেবে পরিণত করে এমন প্রথা-পদ্ধতি ও ঐতিহ্যকে নির্বাসনে পাঠানোর যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্নের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক  সরকার ব্যবস্থাও বাতিল করা হয়। অর্থাৎ পরে জিগিরও তোলা হয়- গণতন্ত্র নয়, উন্নয়ন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ার এমন ওলোট-পালট অবস্থার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন হঠাৎ কেন জানি সরগরম হয়েছে। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন সম্পর্কে যে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে, তা যে নতুন কোনো উদ্ভাবন বা আবিষ্কার তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বিএনপির প্রধান যে দাবি তা হচ্ছে – একজন যোগ্য ও নিরপেক্ষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের তালাশ-তল্লাশি করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা। তাছাড়া সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনকালীন কিছু ক্ষমতা প্রদানের জন্যও বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিএনপি রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চায়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন।

বাস্তবে আওয়ামী লীগ বিশেষভাবে জানে যে, বাস্তবে কি ঘটতে যাচ্ছে। আর বিএনপি এতোকাল পরেও নানা অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ হয়ে রাষ্ট্রপতির শুভবুদ্ধি ও সদিচ্ছার উন্মেষ ও উদয়ের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির শুভবুদ্ধির বা সদিচ্ছার মূল্য আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান অনুযায়ী কতোটুকু দেবে বা শুভবুদ্ধির অংকুর কতোটুকু বাড়তে দেবে-তা তাদের উপরই নির্ভর করে। সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও  ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেনঃ

তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।

কাজেই ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যথারীতি সাংবিধানিক নিয়মে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই গঠিত হবে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিএনপির ১৩ দফার মধ্যে প্রকারান্তরে সরকারের সাথে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যের কথা আকার ইঙ্গিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এবারে এবং আগেও আওয়ামী লীগ এসব প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই রাজনৈতিক সংলাপ এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছে-এবারেও দিয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিকসহ নানা রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এনিয়ে নানা ফায়দা লুটবে- এটাই স্বাভাবিক।

তাহলে প্রশ্ন উঠে যে, ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে কেন একটি সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছিল? যতোদূর জানা যায়, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পরে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকগণ এটা মনে-প্রাণে দেখাতে চেষ্টা করেছিলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হলেও অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ ও সদিচ্ছার কোনোই কমতি নেই। কিন্তু লোক দেখানো ওই ব্যবস্থা যেমন বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার নয়, তেমনি তা হয়ওনি।

এবারেও ঐকমত্য, সংলাপ, বিএনপির কথা মতো সার্চ কমিটি গঠন এবং এ জাতীয় কর্মকান্ডের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছা ও শুভবুদ্ধির উদয় হবে-তা মনে করার আদৌ কোনো কারণ নেই। শুভবুদ্ধির উদয় এবং সদিচ্ছার উত্থান ঘটতো যদি বিএনপি তার নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা ও শক্তি প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগকে বাধ্য করতে পারতো। বিএনপিকে এ বিষয়টিকেও মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন ও ১৩ দফা প্রস্তাবনা যদি রাজনৈতিক কৌশল হয়েই থাকে তবে তা অচিরেই ব্যর্থ হবে। এখানে বিএনপির বড় দুর্বলতা হচ্ছে, বিএনপি নিজেই।

-    amaderbudhbar.com

Sunday, November 27, 2016

নির্বাচন কমিশন এবং বিএনপির ভাবনা

By রুমীন ফারহানা

 
সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত ১৮ নভেম্বর তিনি এ প্রস্তাব দিয়েছেন। তার পুরো বক্তব্যে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের একটি কমিশন কী করে, কাদের সমন্বয়ে গঠন করা যায়, যার প্রতি জন-আস্থা ফিরে আসবে, তা-ই ছিল মূলত এই প্রস্তাবের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

বর্তমানে বহুল বিতর্কিত যে নির্বাচন কমিশন আছে, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মেয়াদ শেষে নতুন যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০১৪ সালে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক এক নির্বাচনের পর ২০১৮-এর শেষে বা ২০১৯-এর শুরুতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা দিক দিয়ে তা গুরুত্ব বহন করে। এ কারণেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ ও নির্বাচনের সময় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চত করা সরকারের জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বাহন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের সংবিধানে পরিষ্কার বলা আছে- ‘দেশের সকল ক্ষমতার উৎস এর জনগণ’। জনগণ এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতি পাঁচ বছর পরপর ভোটের মাধ্যমে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। যেহেতু জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন, তাই তাদের জবাবদিহিতা থাকে জনগণের প্রতি। কোনো সরকার যদি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হয়, তাহলে জবাবদিহিতার প্রশ্ন হুমকির মুখে পড়ে এবং গণতন্ত্রের অন্যান্য যে বাহন বা নিয়ামক যেমন- আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সুশাসন, মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা এ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারকে তখন তার ন্যায্যতা কায়েম করতে ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’, ‘বেশি উন্নয়ন কম গণতন্ত্র’, ‘সীমিত গণতন্ত্র’ ইত্যাদি নানা অগণতান্ত্রিক ফর্মুলার আশ্রয় নিতে হয়, যার কোনোটিই রাষ্ট্র, সরকার বা জনগণের জন্য শুভ পরিণতি বয়ে আনে না। আর গণতন্ত্রের প্রধান বাহন যে নির্বাচন- তা যদি একটি দক্ষ, যোগ্য, সৎ, নিরপেক্ষ, সাহসী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশনের অধীনে না হয়- তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এ কারণেই একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রথম ও প্রধান শর্ত। নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে আমাদের সংবিধানের ১১৮ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে- ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন।’ দুঃখজনক হলেও সত্য, এ আইন বা বিধানাবলি আজো প্রণীত হয়নি। ঠিক সে কারণেই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্কের ধারাও অব্যাহত আছে। আর তাই নির্বাচন কমিশন গঠন ও তা শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন বাঞ্ছনীয়। তবে যত দিন পর্যন্ত না আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণীত হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে কী করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন ও তা শক্তিশালী করা যায়, সেটিই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এ বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটি চর্বিত চর্বণ, অন্তঃসারশূন্য, হাস্যকর, জাতির সাথে তামাশা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার। আমাদের এই স্বাধীন দেশে অন্তত ক্ষমতায় যারা আছে, তাদের যথেচ্ছ মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের তার ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করতেই পারেন। তবে এটি যদি তাদের দলীয় বক্তব্য বা স্ট্যান্ড হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কোন প্রক্রিয়ায় ১৩ দফার এই প্রস্তাবটি আওয়ামী লীগ ১৩ সেকেন্ডের কম সময়ে কোনোরকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই নাকচ করে দিলো? অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের কোথাও এটি স্পষ্ট হলো না যে, তিনি বা তারা এর কোন কোন অংশের সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন, কেন করছেন, এর বিকল্প প্রস্তাব কী হতে পারে, একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগের ভাবনাই বা কী? ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বারবারই বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এটি আংশিক সত্য। কিন্তু যে অংশটি তারা বাদ দিয়ে যাচ্ছেন তা হলোÑ সংবিধানের ৪৮(৩) ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগ দেবেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে। এখানেই যত বিপত্তি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নাম যদি সব রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবে অভিন্ন না হয়, তখনই বিতর্কিত দলীয় নিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। আর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন কোনো অবাস্তব প্রস্তাব নয়। ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বহু দেশে সরকার ও বিরোধী দল যৌথভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠন করে থাকে। তবে আশার কথা হলো, আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে প্রস্তাবটি নাকচ করলেও দেশের সুধীসমাজ ও বেশ কয়েকজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং স্বীকার করেছেন যে, প্রস্তাবটি আলোচনার দাবি রাখে। এখানেই এ প্রস্তাবের স্বার্থকতা।

বেগম খালেদা জিয়ার এ প্রস্তাবকে বিতর্কিত করার প্রথম চেষ্টা হিসেবে বলা হয়েছে- বিএনপির এ প্রস্তাব কৌশলে জামায়াতকে সাথে রেখেই নির্বাচনের একটি কৌশল। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো- প্রস্তাবনায় সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নেই। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয় বিকল্প অর্থাৎ কী ধরনের রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা হতে পারে, সে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দল’। উল্লেখ্য, প্রস্তাবের প্রথম ও দ্বিতীয় বিকল্পের মাঝে ‘এবং’ ‘অথবা’ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যদি দ্বিতীয় বিকল্পের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির আপত্তি থাকে, তাহলে তাকে প্রথম বিকল্প অর্থাৎ কেবল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেই আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সুতরাং সুকৌশলে নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দল জামায়াতকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করার কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেননি বেগম খালেদা জিয়া। বরং অযাচিতভাবে জামায়াতকে সামনে এনে অযথা বিতর্কের চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হয়।

কোনো কোনো মহল আবার নির্বাচনের সময় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাবে গোস্বা হয়ে এমনও প্রশ্ন তুলেছেন যে, এ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বিএনপি দেশে একটি সামরিক আইন জারি করতে চায়। এ প্রসঙ্গে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, জাতীয় প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়োজিত করার সুযোগ আছে। সিআরপিসিতে যার অনেক নজিরও আছে। এ ধরনের মোতায়েনকে সামরিক আইন বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রিরিয়াল ক্ষমতা প্রদান বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষমতা বুঝায় না। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রতিরক্ষা বাহিনী আইনানুগভাবে তথা সীমা লঙ্ঘন না করে, অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করে দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশ অ্যাক্টের অধীন পুলিশ কমিশনার এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কেবল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োগ করলে কার্যকর ও সন্তোষজনক ফল পাওয়া সম্ভব হয় না বিধায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সালে আরপিও সংশোধনের আগ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এর মধ্যে দু’টি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও দু’টিতে বিএনপি জয়লাভ করে। ২০০৯ সালের পর থেকে নির্বাচনের কাজে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বাদ দেয়ার পর যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়, তাতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ভূমিকা সমালোচিত হয়েছিল এবং বিভিন্ন সময় এসব বাহিনীপ্রধানদের রাজনৈতিক বক্তব্যও দিতে দেখা গেছে। তাই জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আর কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আসলে কেউই চায় না। কিন্তু নির্বাচন যাতে আর প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই। প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের প্রাথমিক শর্তই হলো একটি প্রশ্নমুক্ত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। তাই সরকারের এ বিষয়ে সদিচ্ছা কতটুকু বা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সরকার আসলে কেমন দেখতে চায়, সেটা পরিষ্কার হবে ২০১৭ সালের নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়েই।                 

-       লেখক : আইনজীবী ও রাজনীতিক 

Ignoring the UN's plea

David Bergman / Scroll.In

Sheikh Hasina pledged support to refugees at the UN, but Bangladesh is shutting out Rohingyas
Two months ago, Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina stood at the United Nations General Assembly in New York and gave a speech in front of assembled government delegations. After quoting her father, the country’s independence leader Sheikh Mujibur Rahman, Hasina said:
“Violent conflicts continue to rage in several places, with heavy toll of human lives. Those fleeing from conflicts are often denied protection across borders. Dire humanitarian needs are at times ignored or access blocked. What crime Aylan Kurdi, the 3-year innocent child of Syria who drowned in the sea, had committed? What was the fault of 5-year-old Omran, who was seriously wounded by airstrike at his own home in Aleppo? It is indeed hard to bear all these cruelties as a mother. Won’t these happenings stir the world conscience?”
Such views would, of course, be expected from the leader of a country whose independence in 1971 followed a war that resulted in many millions of Bengalis obtaining sanctuary in India.
Two months on from her speech to the UN, however, the prime minister seems to have totally forgotten her very own words – and her country’s history.
Rather than giving sanctuary to thousands of Rohingyas fleeing extreme Army violence in Myanmar’s Rakhine state, Hasina’s government is using armed guards to prevent boats carrying hundreds of the refugees, including children, from landing on the coast of southern Bangladesh, and has rejected the United Nations’ plea to open the country’s borders.
Amnesty International has described the Bangladesh government’s decision to push back the fleeing Rohingyas as callous.
Deaf to UN plea
On November 18, the United Nations urged the government to give sanctuary to Rohingyas fleeing a Myanmar military operation that is alleged to have razed villages and brutalised residents. The military operation followed attacks on police outposts that killed 10 police officers on october 9, which the Myanmar government claims were committed by a Rohingya group.
“We are appealing to the government of Bangladesh to keep its border with Myanmar open and allow safe passage to any civilians from Myanmar fleeing violence,” Adrian Edwards, a spokesperson for the United Nations High Commissioner for Refugees, stated at a press briefing in Geneva.
A spokesman for the UN’s Office for the Coordination of Humanitarian Affairs told AFP, “Up to 30,000 people are now estimated to be displaced and thousands more affected by the October 9 armed attacks and subsequent security operations across the north of Rakhine state. This includes as many as 15,000 people who, according to unverified information, may have been displaced after clashes between armed actors and the military on November 12-13.”
The news agency AFP reported that on the same day the UN made its appeal, Bangladesh government enforcement authorities patrolling the Naf river, which separates the country’s southeastern border from western Myanmar, pushed back a group of Rohingyas trying to enter the country. “There were 125 Myanmar nationals in seven wooden boats,” Coast Guard official Nafiur Rahman told AFP. “They included 61 women and 36 children. We resisted them from entering our water territory.”
Another Coast Guard officer said he saw two bodies floating in the river while on patrol.
Two days later, Bangladesh Home Minister Asaduzzaman Khan Kamal said that the Border Guard Bangladesh and the Coast Guard had been alerted to prevent the illegal entry of Rohingyas at the Bangladesh-Myanmar border. “Rohingya migration is an uncomfortable issue for Bangladesh,” Kamal was quoted as saying by the Dhaka Tribune.“Hopefully, no more illegal migration will happen now.”
The Daily Star reported that at Teknaf, the Border Guard Bangladesh had increased the number of troops at border outposts to prevent infiltration. A colonel with the paramilitary force was quoted as saying that they were holding meetings with residents, including fishermen, to help them stop the Rohingyas from entering the country.
And four days later, AFP continued to report that the government was doing all it could to stop the Rohingyas from landing. It said Border Guard Bangladesh troops had blocked nearly 300 Rohingyas from crossing the border overnight, the highest number since the crisis began last month. “We’re preventing them on the zero line, especially those who were trying to cross the barbed-wire fences erected by Myanmar,” an official was quoted as saying.
Despite these efforts, however, as many as 2,000 Rohingyas are reported to have avoided detection and entered Bangladesh, though the government maintained that it was determined to push back into Myanmar those they can detain.
Rohingyas in Bangladesh
There is a sizeable Rohingya population in Bangladesh with hundreds of thousands of them having fled to the country in the last 25 years to escape persecution from the military junta and Buddhist nationalists.
At present, there are two distinct groups of Rohingyas living in Bangladesh. There are 33,000 registered refugees living under UNHCR protection in camps near Cox’s Bazaar, which they can only leave with permission from camp commanders. And then there are another 300,000 or so unregistered Rohingyas living in makeshift settlements surrounding the official camps who have no legal status and no legal rights.
The United Nations High Commissioner for Refugees has expressed willingness to help the Bangladesh government cover the costs of registering the unregistered refugees and providing them services, but the government has refused to allow this to happen.
In Bangladesh, Rohingya camps are perceived as a hotbed of criminality as well as a national security concern. Government officials also argue that the country is small and heavily populated and they do not have the resources to assist the Rohingyas. In addition, Rohingyas are viewed with additional suspicion as they are religiously conservative and seen as natural allies of the Opposition political party Jamaat-e-Islami.
Sheikh Hasina’s stand
The Bangladesh prime minister’s current position is more consistent with her past record than her sweet words at the UN General Assembly.
In an interview to Al Jazeera Television in 2012, which was also a time when the government was stopping fleeing Rohingyas from entering Bangladesh, Sheikh Hasina was asked, “These are people in a desperate humanitarian situation and surely, there are basic principles, human principles, moral principles that compel you to help them?” She had replied, “Bangladesh is already an overpopulated country. We cannot bear this burden.”
The interviewer then said, “But we have seen pictures ourselves. Bangladeshi guards physically turning people back, returning them to danger.” The prime minister said the guards had behaved in a humanitarian manner, “providing food for them, medicine for them, money for them and just allowed them to return to their own homes”.
She denied the claim made by Al Jazeera that the Rohingyas were “forced to return to their homes”, saying, “No, they did not force them. Rather they pursued them, that they should go back and they went back.”
The interviewer then said the prime minister “must know full well [the Rohingyas] are being persecuted in their own country, they tried to run away and they are refused entry to your own country”. To this, Hasina replied, “Why should we let them enter our country?” She added that she believed Myanmar government officials who had told her that the Rohingyas were living in a “convivial atmosphere” in their country.
Dhaka embarrassment?
Sheikh Hasina’s failure to live up to her words and commitments at the United Nations is certainly tragic for the Rohingyas, but it may also prove embarrassing for her government, which is due to host the Global Forum on Migration and Development in two weeks time in Dhaka.
This forum is intended to build on the work undertaken at the UN Summit on Migrants and Refugees, which had taken place just days before Hasina spoke at the General Assembly, and where she had, surprisingly given her previous position, been a leading participant. At the refugee summit, Bangladesh had become a signatory to the New York Declaration that referred to “our profound solidarity with, and support for, the millions of people in different parts of the world who, for reasons beyond their control, are forced to uproot themselves and their families from their homes”.
The declaration added, “Refugees and migrants in large movements often face a desperate ordeal. We are determined to save lives. Our challenge is above all moral and humanitarian.”
The concept paper for the meeting in Dhaka refers to the need to provide “safe and legal pathways for [migrants and refugees] seeking protection”.
This is something the government is steadfastly refusing to do in relation to the Rohingyas seeking sanctuary in Bangladesh.

Saturday, November 26, 2016

A timely proposal

By Israfil Khosru

On November 18, BNP chairperson Begum Khlaeda Zia revealed a detailed proposal for strengthening the Election Commission on behalf of her party. While the ruling Awami League almost immediately brushed the proposal aside, many experts believe that this revelation has created scope for meaningful dialogue between the major parties.



The BNP quite evidently seems to have opted for a more pragmatic approach by coming through with this proposal in the context of current reality.

The proposal outlines a set of suggestions/prescriptions that, the BNP believes, has to be implemented to ensure the neutrality of the commission and eventual capacity-building. While the proposal is made up of several systemic adjustments that hint towards institutional reform, the key guiding principle that is evident across the content is “consensus.”
In fact, the proposal begins by implicitly declaring consensus of all political parties as a starting point and a compulsory pre-condition before resorting to any measures. In a political environment rife with animosity and mistrust, a consensus on a single issue could prevent us from at least reaching the nadir.

The proposal also immediately delves into the role that can be played by the president of Bangladesh to ensure the much-needed consensus by meeting representatives of all political parties.

This shows that the BNP has kept unbounded faith in the constitutional head of state in terms of fair disposal of his duties. Furthermore, it also reflects the BNP’s willingness to work with the establishment to break the political deadlock by means of a substantial institutional reform that will serve as a long-term solution to election-related woes.

One must also keep in mind that the proposal floated by the BNP strictly focuses on the Election Commission reforms and does not suggest any constitutional amendments. The proposal seems to clearly rest on the fulcrum of belief that if a consensus can be achieved then the execution aspect can take place in good faith.

While political consensus is at the heart of the proposal, the key content of the proposal can be divided into three broad sections: The first broad section deals with the recommendations regarding the formation of a neutral “search committee” which will partake in the selection of the election commissioners. It clearly states that the president of the republic “will constitute the search committee on the basis of consensus among all registered political parties of Bangladesh and/or among all political parties who, over different periods, had representation in the National Parliament since the liberation of Bangladesh.”

The proposal then recommends a search committee constituting of five members including a convener. The proposal emphasises on the need for impartiality, experience, respectability, strong will, and high moral standards of these individuals. There should be no ambiguity regarding the essentiality of these traits and hence the proposal continuously harps on the notion of integrity.

The second broad section outlines a set of qualifications for the Chief Election Commissioner and the election commissioners and their subsequent appointment procedure. It should be mentioned that previously there has been no specific set of guidelines in terms of qualification to select Election Commissioners.

It is rather refreshing to see that this proposal contains specific yardsticks which can be utilised by the search committee to make an informed and unbiased decision. Apart from various procedural recommendations, one of the key suggestions is that “an employee of the Republic or statutory government authority or defense personnel, who has not completed three years after retirement, or resignation, or dismissal, or has not completed a span of three years after completion contractual appointment, or cancellation thereof, shall not be entitled to be election commissioner.”

This specific suggestion in essence holds the key to minimising the influence of the executive on the Election Commission to force an outcome. Yet again, in the context of current political scenario, this particular recommendation holds a lot of water. The third broad section of the proposal deals with the empowerment and strengthening of the Election Commission. While it would be rather difficult to dwell on all the recommendations within a short space, certain recommendations require special attention.

One of the key recommendations in this particular case is that the Bangladesh Election must have its own secretariat. It states clearly that “according to Article 79 of the Constitution, Bangladesh National Parliament has its own secretariat. Likewise, the Bangladesh Election Commission must have its own secretariat as well. Bangladesh Election must have financial power.”

Aimed at empowering the Election Commission, this particular prescription has a long-term implication in terms of delivery of service, capacity building, efficiency and accountability. Furthermore, a secretariat will enable the Election Commission to develop its own resources and gain financial strength. One of the recommendations that has already drawn a lot attention is the deployment of the defense forces during election time.

However, the more specific suggestion in this regard is that “during National Election, the Election Commission will arrange to deploy Defense Forces with magisterial power, especially, at the polling centers and other strategic places. This deployment will come into force seven days ahead of Election Day till gazette notification of the election results.”

Given the nature of elections observed during the recent Dhaka and Chittagong mayoral race, this recommendation has become a necessity to ensure order and fairness. If the member of the forces is not empowered with magisterial power, they will not be able to resolve problems immediately in order to bring order.

Furthermore, magisterial power will also ensure that they will not come under any undue influence during disposal of duties. Given that our defense forces have always stepped forward with integrity whenever calamities arose, ranging from natural disasters to traffic control, it is only rational to think that they should and would play a pivotal role in securing, for the general citizens, the right to vote freely.

As we gradually approach towards an election year in 2019, it is rather heartening to see the BNP come up with a proposal well ahead of time. While the proposal contains a lot of technical details, the crux remains to be the notion of consensus and integrity.

There is enough room and time to at least start a feasible dialogue to move towards resolution. The BNP has already extended an olive branch in the form of this proposal. They at least deserve a hearing. The modalities can be discussed but a partisan approach of being absolutely dismissive will not bear any fruit. The forum is open now and the whole nation is watching.

-    Israfil Khosru is a businessman and a concerned citizen.