Search

Thursday, March 9, 2017

নাগরিকত্ব আইন : মানুষ যেন শৃঙ্খলিত না হয়





হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ


বর্তমান সরকার বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ নামে একটি আইন পাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি-২০১৬ খ্রিস্টাব্দ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৯৫১ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, বাংলাদেশ নাগরিকত্ব অধ্যাদেশ-১৯৭২ এবং আইন কমিশনের ২০০৫ ও ২০১২ সালের সুপারিশের আলোকে নাগিরকত্বের খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।   সংসদে যে কোনো অধিবেশনে এটা বিল আকারে উত্থাপিত হবে এবং পরবর্তীতে পাস হলে এটা আইন আকারে প্রতিষ্ঠা পাবে। আইনটিতে নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন পদ্ধতি, নাগরিকত্বের অযোগ্যতা, পরিত্যাগ, অবসান এবং অপরাধ বিচার ও দণ্ড ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আইনটির উৎকর্ষ ও অপকর্ষের বিষয়ে আলোচনার আগে আমরা নাগরিকত্ব বলতে কী বুঝি সেটা একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন। 

বস্তুত সেই ব্যক্তি নাগরিক যিনি কোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য পোষণ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার উপভোগ করেন এবং রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে বিদ্যমান তিনিই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ এর বিভিন্ন ধারায় যে অসঙ্গতি বা ত্রুটিগুলো সমাজের আইনজ্ঞসহ বিশিষ্টজনদের চোখে অনুমিত হয়েছে তা থেকে বলা যায় যে, প্রস্তাবিত আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন, আইনগত দলিল, রায়, ডিক্রি ইত্যাদিতে যা কিছুই থাকুক না কেন তার ওপর প্রাধান্য পাবে। উক্ত ৩ ধারাটি সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য হয় তাহলে সে আইনে যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হবে। তাছাড়া আমরা জানি যে কোনো আইনের ব্যাখ্যাকর্তা ও সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে বিচার বিভাগের প্রাধান্য স্বীকৃত। তবে এ আইনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টির কোনো ব্যত্যয় হবে কিনা তা সবার ভেবে দেখা প্রয়োজন। 

আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হবেন যদি তার পিতা-মাতা এ আইন বলবৎ হওয়ার তারিখে বা উহার পরে অথবা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে এই আইন বলবৎ হওয়ার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হন বা থাকেন। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে চলে গিয়ে লন্ডন, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। যদি এ আইন পাস হয় তাহলে তাদের এবং তাদের ছেলেমেয়েদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। আবার ৪ এর (২) উপধারা (খ) পিতা বা মাতা বিদেশি শত্রু হন তাহলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক বলে গণ্য হবেন না। এক্ষেত্রে পিতা-মাতার অপরাধের কারণে তার দায় সন্তানের ওপর আসা ন্যায়সঙ্গত নয় বলে বিবেচিত হবে।  

এই আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাইরে জন্মগ্রহণ করলেও বাংলাদেশের নাগরিক হবেন, যদি তার বাবা-মা এই আইন কার্যকর হওয়ার আগে বাংলাদেশের নাগরিক হন। এ জন্য সন্তান জন্মানোর দুই বছরের মধ্যে ওই দূতাবাস বা মিশনের কার্যালয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। তা না হলে ওই সন্তান জন্মগ্রহণ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিবেচ্য হবেন না। এই আইন প্রবর্তনের পর কোনো প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করলে এবং প্রবাসে তার কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে উক্ত সন্তান জন্মগ্রহণের দুই বছরের মধ্যে দূতাবাস বা হাইকমিশন অফিসে নাম নিবন্ধন না করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের যোগ্য হবে না। কিন্তু এ আইনের মধ্যে কোনো সুস্পষ্টতা না থাকায় প্রবাসে বসবাসরত তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্মের সন্তানদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হবে। এ আইনের ৬ ধারায় প্রবাসীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বিদেশে বাস করলে তার আবেদনের ভিত্তিতে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারবেন। যদি তার বাবা-মা, দাদা বা নানা বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের আগে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন। তবে অনুরূপ প্রবাসী নাগরিকদের সীমাবদ্ধতা বিষয়ে ৭ এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, (৬) ধারা অনুযায়ী নাগরিকত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া রাষ্ট্রপতি পদে, বিচারক পদে বা প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগ পাবেন না। এমনকি রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবেন না। বাংলাদেশের কেউ যদি এখন বিদেশে যান এবং তার সন্তান জন্ম হয় তাহলে সেই সন্তান বাংলাদেশের নাগরিক হবেন অথচ নির্বাচন করতে ও রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবেন না আবার প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাবেন না যা সংবিধানের ২৯ (সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা) ৩৮ অনুচ্ছেদের (সংগঠনের স্বাধীনতা) পরিপন্থী। তাছাড়া দেশের অনেক মেধাবী তরুণ প্রবাসে থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে এসে সব পর্যায়ে সেবা করতে চায়। কিন্তু এ আইনের কঠিন শর্তের বেড়াজালে পড়ে তাদের অনেকের সেবা থেকে জাতি বঞ্চিত হবে। আইনের ৮ ধারায় দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক সার্কভুক্ত দেশ, মিয়ানমার বা সরকার কর্তৃক গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত রাষ্ট্র ব্যতীত বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন যে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবে। এই আইনে এটা নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে। তবে ৮ এর ২(১) ধারায় আছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক জাতীয় সংসদ সদস্য বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত বা শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বা প্রজাতন্ত্রের অসামরিক কর্মে নিয়োজিত থাকার সময়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে অনেক সংসদ সদস্যের সদস্যপদ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কেননা তাদের অনেকের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তবে বাংলাদেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে যারা বসবাস করছে তাদের একটা তালিকা সরকারের করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন। 

প্রস্তাবিত আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিদেশি কোনো নাগরিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে উক্ত বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসেবে কমপক্ষে পাঁচ বছর বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। এক্ষেত্রে নাগরিকত্ব লাভের কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ। কেননা এখানে শর্ত শিথিল করা হলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। 
আবার আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ভূখণ্ড বাংলাদেশের অংশ হিসেবে সংযোজিত হলে বা অন্তর্ভুক্ত হলে সেখানকার অধিবাসীরা নাগরিক হতে পারবেন। তবে কারা নাগরিক হবেন সেই তালিকা সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করবে এবং এই তালিকার লোকজনই নাগরিক হতে পারবেন। এখানে তালিকা করার সময় স্বজনপ্রীতি, সংগঠনপ্রীতি ও আদর্শপ্রীতি দেখে তালিকা করলে অনেকে নাগরিকত্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। ইদানীং বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে এমন প্রশ্ন উঠেছে। প্রস্তাবিত আইনের ১৩ তে নাগরিক অধিকারের ওপর কতিপয় বাধা নিষেধ ধারা ৫, , , ১০ ও ১১ এর অধীনে যথাক্রমে বংশসূত্রে নাগরিকত্ব, দ্বৈত নাগরিকত্ব, সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, দেশীয়করণ সূত্রে নাগরিকত্ব ও বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো চাকরি অথবা কর্মে এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। অধিকন্তু রাষ্ট্রপতি পদে অথবা জাতীয় সংসদ সদস্য পদে অথবা স্থানীয় সরকারের যে কোনো পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারবেন না। এটাও যেমন নাগরিকত্বের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী তেমনি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। 

এই আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করে থাকলে তার নাগরিকত্ব থাকবে না। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা আন্দোলনের নামে বাংলাদেশ থেকে বিছিন্ন হতে চায় তাদের নাগরিকত্ব কীভাবে নির্ধারিত হবে এবং আইনের ২০ ধারায় আছে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করেছেন এমন তথ্য পেলেই একজনের নাগরিকত্ব চলে যাবে। কিন্তু তিনি কীভাবে বাংলাদেশবিরোধী বা আনুগত্যহীন তা পরিমাপের ক্ষেত্রগুলোকে কি সেটার বিস্তারিত ব্যাখ্যা এই আইনে নেই। এমনকি বাংলাদেশে বসবাসরত বিহারি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তাদের নাগরিক অধিকার লাভ করলেও এই আইনের ফলে তাদের নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও এই নাগরিকত্ব আইনের কথা জেনে নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে উদ্বেগে আছেন। কারণ এ ধরনের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়। বিদেশে ননরেসিডেন্স বাংলাদেশি এবং দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করেন এবং প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করেন। এই আইনে তাদের নাগরিক অধিকার সঙ্কুচিত করার ফলে সর্বোপরি বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। এমনকি ননরেসিডেন্স বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকের সহায়-সম্পদ বাংলাদেশে আছে। সেক্ষেত্রে তাদের সহায়-সম্পদ রক্ষা ও বণ্টনের ক্ষেত্রে যাতে নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারে সে বিষয়টি ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 

অধিকন্তু গত ৯ ফেব্রুয়ারি সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত নাগরিকত্ব আইন-২০১৬শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, যাতে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা দায়িত্ববোধ ভেঙে না যায়। তিনি আইনটির খসড়া আরও যাচাই-বাছাই হবে বলে মতামত দেন। অন্যদিকে একই সভায় সংসদবিষয়ক সচিব শহিদুল হক বলেন, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনের ৭ এর (২) এর (গ) এবং (ঙ) ধারায় বর্ণিত রাজনীতি ও নির্বাচন করার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাতিল করা হবে মর্মে সভায় উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন এবং উক্ত সভার প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সচিবের বক্তব্য সমর্থন করে বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রবাসী নাগরিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না বলে মতামত দেন। 
      
পরিশেষে বলা যায়, কোনো আইন প্রণয়নের আগে জনস্বার্থ ও সর্বজনীন বিষয়টি চিন্তা করা প্রয়োজন। এই আইনের দ্বারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো বিশেষ শ্রেণির মানুষের সুবিধা তৈরি করে অন্য কারও অধিকার সঙ্কুচিত করলে তাতে সার্বিক জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, মানবাধিকার ও প্রচলিত সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো বিবেচনা নিয়ে নাগরিকত্ব আইনটি হওয়া উচিত বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় এক কোটি মানুষ আছে যাদের কোনো রাষ্ট্র নেই। এর একটা বড় কারণ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব আইন। তাই এই আইনের ফলে আমাদের দেশের মানুষ তার নিজের জন্মভূমি থেকে যেন নাগিরকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রহীন অবস্থায় পড়ে না যায়। একই সঙ্গে পিতা-মাতার দায় যেন সন্তানের ওপর না আসে সেই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এর অপব্যবহার ও অপ্রয়োগ না হয় সেদিকে সবার দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। এ ছাড়া আইনটি কার্যকরের আগে এর খসড়া অংশটিও ওয়েভসাইটে প্রকাশ করে সুশীল সমাজসহ দেশে-বিদেশের ব্যাপক মানুষের মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।   এর ফলে স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সার্বিক মানবাধিকার সন্নিবেশিত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ কার্যকর হতে পারে।   তখন আর এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হবে না। মানুষ আর শৃঙ্খলিত হবে না।


  • লেখক : চেয়ারম্যান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। ই-মেইল: kirondebate@gmail.com

Monday, March 6, 2017

সাধারণ নাগরিকের দৃষ্টিতে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প


ইস্রাফিল খসরু



রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প’র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছিল যেন ইস্যুটা চাপা পড়ে গিয়েছিল। গণমাধ্যম একটা পর্যায়ে এসে গুরুত্ব দিয়ে ইস্যুটাকে আর দেখছিলনা বলে মনে হচ্ছিল। অবশ্যই দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া, গণমাধ্যম - ইলেকট্রনিক অথবা প্রিন্ট, সবাই একযোগে রামপাল ইস্যুটাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল। একগুয়েমি অবস্থানে থেকে সরকার১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই প্রকল্প নিয়ে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ২৬শে জানুয়ারি রামপাল প্রকল্প বিরোধীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচী চলাকালে তাদের উপর ঢাকার শাহবাগ সহ অন্যান্য  জায়গায় হামলা করার প্রেক্ষিতে এই ইস্যুটি আবার প্রধান গণমাধ্যমে আলোচনায় ফিরে এসেছে। প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের এই দ্রুততায় জনমানসে এই প্রশ্নের উদয় ঘটেছে যে, এই প্রকল্প কিভাবে এবং কি কি কারণে এতো ব্যতিক্রমী হলো যে দেশে বিদেশে এত বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার রামপাল প্রকল্প নিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আসুন আমরা একজন সাধারণ নাগরিকের দৃষ্টিতে ইস্যুটাকে একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। 

ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এই কয়লা নির্ভর প্রকল্পটি ভারতের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভোলপমেন্ট বোর্ড-এর একটি যৌথ উদ্যোগ। প্রকল্পটিকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসি)’। এই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সুন্দরবন’র সীমানা প্রাচীর থেকে মাত্র ১৪ কিমি উত্তরে ১৮৩৪ একর জমির উপর অবস্থিত, যেটি বাস্তবায়িত হলে তা হবে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। যদিও, পরিবেশগত ভাবে হুমকির সম্মুখীন একটি এলাকা থেকে কমপক্ষে ২৫ কিমি দূরে এই ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হয়, যা বিশ্বজুড়ে একটি অপরিহার্য প্রধান মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। উপরন্তু, পাওয়ার প্ল্যান্টটির জ্বালানি সরবরাহের জন্য সুন্দরবনের বুক চিরে নদীপথে প্রতিনিয়ত কয়লা পরিবহণ করতে হবে, যার ফলে সুন্দরবনের উপর বহুমাত্রিক মারাত্নক হুমকি সৃষ্টি হবে পরিবেশগত ইস্যুগুলোকে প্রস্তাবিত এই প্রকল্প পরিকল্পনা পত্রে যথাযথ ভাবে দেখা হয়নি। ইউনেস্কোর ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঠিকই এই প্রজেক্টটির জন্য প্রণীত পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইআইএ)-টিকে ব্যাপক ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলা হয়েছে, যা এতদিন ধরে এই প্রকল্প সম্পর্কে  সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে যে দ্বিধা ছিল, সেটাকে আরো যুক্তিযুক্ত ও সঠিক করেছে। অনেক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ একই ভাবে ইআইএ-কে মোটা দাগে ভুল বলেছেন। পরিবেশিত এবং প্রাপ্ত নানা মৌলিক তথ্যের আলোকে পরিবেশ কর্মী এবং পরিবেশবিদদের রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটির বিরোধিতার কারণগুলো আমরা ঠিকই বুঝতে পারি। 

প্রকল্পটির মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই প্রকল্পটির ৭০% বিনিয়োগ আসবে ঋণ থেকে আর বাকি ৩০% আসবে সমহারে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছ থাকে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনোমিকস অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল এনালাইসিস-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রকল্পে উৎপন্ন বিদ্যুতের মূল্য বাংলাদেশে অন্য সব প্রকল্পে উৎপন্ন বিদ্যুতের চেয়ে ৩২% বেশি, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছ থেকে কয়েক ভাবে ভর্তুকি  পাওয়া সত্ত্বেও। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার ১৫ বছরের জন্য এই প্রকল্পে কর মওকুফের প্রস্তাব করেছে, যার ফলে সরকার বড় আকারের রাজস্ব থেকে বঞ্ছিত হবে। এইসব চিত্র আমাদের এই প্রকল্পটির অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার উৎসাহব্যঞ্জক কোন ভবিষ্যত আদৌ দেখায় না। এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক  বিষয়গুলোর এমন অনিশ্চিত ও অস্পস্ট চিত্র দেখার পর, একজন সাধারণ নাগরিকও কোনভাবেই বুঝতে পারছেনা   - এমন প্রকল্প নিয়ে কেন সরকার একতরফা ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সকারের কর্মকান্ড ও উদ্দেশ্য যদি আমরা যা ভাবছি তার থেকে পুরো ভিন্ন হয়, তাহলে সরকার কেন এই প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তা-ও অবোধগম্য হবে না 

একটি সরকারকে শুধুমাত্র তার কাজ দ্বারাই বিচার করা যায়, এবং কেবলমাত্র ইতিবাচক কাজ দিয়েই তারা সচেতন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। কিন্তু সরকার যদি তা করতে ব্যার্থ হয়, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে রামপাল প্রকল্পের মতো আরো প্রকল্প দেখব - যেখানে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশগত নিরাপত্তার ইস্যুগুলো মোটেও গুরুত্ব পাবে না। উত্তর মিলবে না অনেক প্রশ্নের। আমি এখন ব্যাখ্যা করে বলতে চাচ্ছি, যেখানে দুইটি ব্যবসায়িক অংশীদার এই প্রকল্পের সমান বিনিয়োগকারি, অথচ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ তার অংশীদারের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে,  অন্যায়ভাবে নিজ দেশের মানুষের প্রতিবাদকে তুচ্ছ করে দেখছে। আর এটাই যদি আসল ঘটনা, তাহলে পরিবেশগত ইস্যুগুলো আর প্রধান ইস্যু থাকে না। এখানে আরো বড় বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর তা হলো আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব। যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়া এবং পরিবেশগত বহুমাত্রিক মারাত্নক বিপর্যয় থাকা সত্ত্বেও এই প্রকল্প নিয়ে সরকার যে অনড় অবস্থান নিয়েছে, তাতে সরকারের দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাবের প্রশ্নটি বড় আকারে উঠে আসে। এখন পর্যন্ত সরকার এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারিদের শক্ত হাতে দমন করছে এবং এই প্রকল্পের পক্ষে ব্যর্থ সাফাই গাইছে। অথচ, ন্যূনতম হুমকি থাকলেও এমন প্রকল্প থেকে সরকারের অনেক আগেই সরে আসার কথা ছিল। উন্নয়নের নামে সরকার এই প্রকল্পের পক্ষে কথা বলছে যদিও তারা জনগণকে এর অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার ইতিবাচক কোনও কিছু দেখাতে পারছে না। এছাড়া এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের সাথেও সরকার কোনও কথা বলে পুরো ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করছে না, শেষে এই প্রকল্পটির কোন কিছু ছাড় দিতে হয় এই ভয়ে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদের বড় দাবিটি হচ্ছে, এই প্রকল্পের অবস্থানঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুত শক্তিকে গুরুত্বকে ছোট করে কেউ দেখছে না কিন্তু সরকার এই প্রকল্প স্থানান্তরের মতো যৌক্তিক অথচ অতিসহজে মানা যায় এমন দাবিটা পর্যন্ত মানছে না। বাংলাদেশের মানুষের প্রকল্পটি স্থানান্তরের এই নগন্য দাবিটাকে না মেনে প্রকারান্তরে  আমাদের দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে । সরকার এমন কিছু করতে পারে না, যেখানে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না, আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করতে পারবে।  সুন্দরবন আন্দোলন গতি পাওয়ার সাথে সাথে আমাদের আরো বড় ইস্যু সার্বভৌমত্বের ইস্যুটিকে বড় আকারে দেখতে হবে, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত সবার। দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলোকে এই ব্যাপারে বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে। রামপাল প্রকল্পের সাথে অনেক ইস্যু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু এই ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপর্যাপ্ত, বলা চলে নিয়ন্ত্রিত। সরকারের মতো গণমাধ্যমকেও তাদের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। রামপাল প্রকল্প বিষয়ে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। নিরাপদে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে আমরা এই জটিল সমস্যা থেকে রেহাই পাবো না।


  • ইস্রাফিল খসরু ব্যবসায়ী এবং সচেতন নাগরিক।

Tuesday, February 28, 2017

আপনার পরিবারকে খাবে


জিয়া হাসান

গ্রাফিক্স - দৈনিক শেয়ারবিজ
বাংলাদেশের শাসক শ্রেণি সব সময়েই লুটেরা ছিল। কিন্তু, ক্ষমতা পরিবর্তনের ভয়ে, তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও চেক এন্ড ব্যালেন্স ছিল।

কিন্তু যখনই সে ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’ দিয়ে নাগরিককে বিভাজন করতে পেরেছে -  শাহবাগি আর হেফাজতিতে, সেকুলার এবং ইসলামিস্টে, আর কর্পো-পলিটিকো-সিভিল-মিলিটারি-বুরোক্রেসি-মিডিয়ার এলিটদেরকে সন্তুষ্ট করেছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে, মরুদাসের লাশ, নারী শ্রমিকের ঘামের ডলারের উপরে নির্মাণ করেছে উন্নয়নের আষাঢ়ে গল্প, সত্যকে নির্মাণ করেছে পোষা মিডিয়া দিয়ে, প্রশ্নহীন চেতনাকে দাঁড় করিয়ে মানুষের প্রশ্ন করার ক্ষমতাকে ধ্বংস করেছে তখনই সে পেরেছে যূথবদ্ধ নাগরিকদেরকে ভেঙ্গে একেকটা বিচ্ছিন্ন ক্ষমতাহীন এটম তৈরি করতে। এবং তখনই নিশ্চিত হয়েছে তার ৫০ বছরের শাসন।

এবং তখনই এতো বছরের লুটেরাদের নিয়ন্ত্রিত লুটের জায়গায় সে ইংরেজ নীলকরদের থেকে বেশী বেপরোয়া হয়ে গেছে। এখন আর তার কোন লুকানোর দায় নাই, জবাবদিহিতার ভয় নাই। এখন ভীষণ, ভীষণ রকম ২০৪১।

তাই ৯১ এ আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের পর ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক বার্নার বা দুই বার্নার গ্যাসের দাম প্রতিটা সরকারের আমলে সর্বোচ্চ যেখানে বেড়েছে ১৪০ টাকা এবং ১২০ টাকা - ২০১৪ সালের পরে সেই দাম সে বাড়িয়ে নিয়েছে ৫০০ টাকা।

এ খাই খাই কোথায় গিয়ে আপনাকে খাবে, সেইটা এখনো দেখেন নাই।

ব্যাংক, সুন্দরবন, নদী, শেয়ারবাজার, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান, বাজার, ব্রিজ, রেলওয়ে, রাস্তা সব কিছু খেয়ে এর খিদা মিটবেনা। কারণ দিনে দিনে তার হা বড় হচ্ছে। সব খেয়ে যখন তার খাওয়ার মত তেমন কিছু থাকবেনা, সে আপনার বেডরুমে এসে আপনাকে খাবে, আপনার পরিবারকে খাবে। অপেক্ষা করেন। 
তথ্য সূত্রঃ দৈনিক শেয়ারবিজ।  

  •     জিয়া হাসান লেখক, উদ্দোক্তা এবং ইন্টারনেট এক্টিভিস্ট।

Monday, February 27, 2017

বিএনপি বিশ্ব স্বীকৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল — সাবিনা আহমেদ

 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র পতাকা

কানাডার একটি আদালতের দেয়া রায়কে দেশেবিদেশে জনগণ,  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও ব্যক্তিকে বিভ্রান্ত করতে অসত্যভাবে উপস্থাপন করে চলেছে বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী। 

চলুন দেখি কানাডার আদালতের জুডিশিয়াল রিভিউতে এই ব্যাপারে কি লেখা আছে।

জুয়েল হোসেন গাজী কানাডায় পৌঁছেন ২০১৩ সালের ১৮ই জনুয়ারি। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি কানাডায় রেসিডেন্সি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। 
রেসিডেন্ট ভিসা অ্যাপ্লিক্যান্ট গাজী নিজেকে বিএনপির সদস্য বলে উল্লেখ করেন। গাজী তার অ্যাপ্লিক্যাশানে এমনভাবে কেইস সাজানোর চেষ্টা করেছেন যাতে তার আবেদন কানাডা মঞ্জুর করতে বাধ্য হয়। তিনি বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে উদ্দেশ্য সাধন করতে চেয়েছেন।  বিএনপিকে তিনি নিজেই প্রথমে সন্ত্রাসী দল বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন বিএনপি হরতাল চলাকালে সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত থাকলেও নিজেকে যে কোন সন্ত্রাসী কাজ থেকে দূরে রেখেছেন। এখন দেশে ফিরলে বিএনপি তার জান নেয়ার চেষ্টা করবে, অতএব,  কানাডা তাকে রেসিডেন্ট ভিসা দিয়ে কানাডায় থাকার অনুমতি দিক। কিন্তু পরিশেষে নিজের জালে নিজেই ধরা পড়ে যান গাজী । ইমিগ্রেশান প্রক্রিয়ার  প্রথম ধাপ পার হতে পারলেও দ্বিতীয় ধাপে আটকে যান তিনি। এদিকে,  বিএনপি বলেছে যে এই গাজী তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সদস্য নন। জুয়েল হোসেন গাজী নামে কেউ বিএনপির কোন পর্যায়ের কোন কমিটিতে নেই। কানাডার আদালত, বিএনপির কেউ নন, এমন একজনকে বিএনপির লোক হিসেবে বিবেচনা করেছে! 
যাহোক, ২০১৬ সালের মে মাসে গাজীর রেসিডেন্সির আবেদন রিভিউ করে নাকচ করে দেয় আদালত। 

উল্লেখ করা যায় যে ২০১৫ সালে আমেরিকার আদালতের মতে বিএনপি কোন সন্ত্রাসী দল নয়। US Immigration Court, dated July 2015, which found that the BNP had not 'evolved into a terrorist organization'. আর আমেরিকা এই রায় দিয়েছে প্রমাণ বা 'preponderance of evidence' এর ভিত্তিতে। 

কানাডার আদালতের রিভিউয়ে হরতাল বা ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের সব দলকেই একই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

"The BNP and the Awami League have been the two main political parties in Bangladesh. As counsel for the applicant has noted, politics in Bangladesh is a violent affair. In that respect both parties have engaged in similar tactics. One such practice is the use of general strikes (hartal) as a form of political protest." 


বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।


কানাডার আদালতের রিপোর্টে থাকা দুইটি নিউজ এই ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য —  

১। Congressional Research Service report, CRS report:
“Both the AL and the BNP, when out of power, have devoted their energies to parliamentary boycotts, demonstrations, and strikes in on effort to unseat the ruling party. "
২।  The Immigration and Refugee Board of Canada IRB Report:
"Both government and opposition party supporters used armed violence and intimidation to enforce hartals or disrupt rival parties' demonstrations and street rallies."
অতএব, আওয়ামী লীগও কানাডার আদালতের চোখে ধোয়া তুলসি পাতা নয়। এই ব্যাপারে তাদের বিচারে দুই দলই নিদেন পক্ষে একই অবস্থানে আছে। আর এতে বরং তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত যে তারা দেশে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সর্বশেষ কথা, কানাডার সরকার বিএনপিকে কখনই জঙ্গি দল হিসাবে লিস্টেড করে নাই। আদালতের রিভিউ রিপোর্টেই এই কথা লেখা হয়েছে, "the Canadian government has not listed the BNP as a Listed Terrorist Entity" 

আর আমেরিকান সরকার এবং আদালতের প্রমাণের ভিত্তিতে বিএনপি কোন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী দল নয়। বরং দলটি আধুনিক ও গণতন্ত্রবাদী দল হিসেবে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিতি লাভ করেছে। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিশ্ববাসী 'গণতন্ত্রের মাতা' বলে ডাকে। আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 


লেখাটি কানাডার আদালতের রিভিউ ডকুমেন্টে ফাইল #IMM-2401-16 এর ভিত্তিতে লেখা। 
  •      লেখক ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট।

Sunday, February 26, 2017

The govt spin of Canada corruption ruling

David Bergman / Scroll.In


On Tuesday, BGR group, a Washington based lobbying firm working for the Bangladesh government, sent out a press advisory titled, Canadian court vindicates Bangladesh on Padma bridge case; baseless World Bank claims discredited.

The press advisory stated that a Canadian court had ruled that there was no “credible, compelling and corroborated” evidence and no “reasonable and probable grounds to believe” that corruption had occurred in the construction of the Padma bridge, a mega project in Bangladesh, which was to be partly funded by the World Bank until it suspended its $1.2 billion loan in 2012 alleging a “high-level corruption conspiracy”. The advisory was e-mailed to the media along with a message stating that the Canadian court had also held that the corruption allegations against the Bangladesh government “were baseless”.

Sajeeb Wazed Joy, the son of Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina and the government’s chief Information Technology advisor, also made similar claims in an article on his Medium blog titled, World Bank owes Bangladesh an apology after failed attempt to defame country, where he wrote that the Canada court had stated that the evidence of corruption in the project “was based on ‘gossip and rumour.’ In other words, it was made up”.

These views are not restricted to government representatives. Bangladesh’s media appears to be in almost complete agreement that the Canadian court proceedings have proven that the corruption allegations were a hoax, and that the country was the victim of a conspiracy involving the World Bank and other so called anti-national elements.

Even The Daily Star, Bangladesh’s leading independent English language newspaper, reported on its front page that the Canada court “has literally trashed the investigation by Canadian police and evidence of World Bank” and held that “the allegations were based on nothing more than ‘gossip, speculation and rumour’”.

Alternative facts


Yet, despite the widespread unanimity, these comments are wholly inaccurate. They misrepresent – indeed distort – the nature of the court proceedings in Canada, which, earlier this month, resulted in the acquittal of three business executives accused of corruption in the Padma project.

Whilst a Canadian court did rule in January that certain information in the case was “nothing more than speculation, gossip and rumour”, this conclusion only applied to information contained in four e-mails from so-called “tipsters” that triggered the police and World Bank inquiries in early 2011. It did not apply to the evidence they collected as a result of the subsequent investigations.

In fact, the court ruling – which the BGB Group, the prime minister’s son and the Bangladesh media refer to – had absolutely nothing to do with the strength of the World Bank or police evidence substantiating claims of corruption within the Padma bridge project, or indeed the merits of the prosecution case against the three accused.

The consultancy contract


The corruption allegation concerned a relatively small construction supervision contract worth about $50 million that was tendered by the Bangladesh Bridge Authority, the executing agency for the project.

In December 2010, five shortlisted companies were ranked in order of their technical qualifications for this contract, and then at the end of March 2011, re-ranked taking into account how much money they sought to do the work. This resulted in the large Canadian engineering company SNC Lavalin coming second, behind the UK engineering company, Halcrow.

Two months later, however, on June 12, the Bangladesh Bridge Authority wrote to the World Bank awarding the contract to SNC Lavalin, claiming that there were”issues/concerns” regarding Halcrow’s financial and technical proposals.

Investigations start


In the first few months of 2011, some months before SNC Lavalin was awarded the contract, the World Bank received four e-mails claiming that SNC Lavalin officials were seeking to corrupt the bidding process and offer bribes to Bangladesh government officials in order to win this consultancy contract.

On the basis of this information, Integrity Vice Presidency, an independent unit within the World Bank started inquiring into the matter, and in March that year passed on the e-mails to the Canadian police, which started its own investigation the following month.

In May that year, just weeks into its investigation, and on the basis of the four e-mails forwarded by the World Bank, a Canadian court authorised the police to intercept private communications of certain individuals. The authorisations were renewed in June and August 2011. The information provided to the court to obtain these authorisations were six years later the subject of the January ruling in Canada that has been so distorted by Bangladesh government representatives and the media.

Post-May 2011 investigation


Before looking at that recent ruling in Canada, it is important to note that post-May 2011, investigations by both the World Bank and the Canadian police continued apace.

In September, four months after the intercept authorisations were provided, Canadian police raided SNC Lavalin’s Oakville office and in April 2012, a year into its investigation, the police charged two low level officers of the Canadian company for bribery offences.

World Bank investigations were also continuing, with the international lender now describing the incident as a “high-level corruption conspiracy among Bangladeshi government officials, SNC Lavalin executives, and private individuals”. It stated that it had “credible evidence corroborated by a variety of sources”, to support this claim.

Two months later, in June 2012, the international lender announced that it was suspending its loan, and in January 2013, a panel of eminent experts, appointed by the World Bank wrote to the Anti-Corruption Commission in Bangladesh setting out the conclusions of their investigations up to that date. These included details of meetings, emails and agreements that were said to have taken place between SNC Lavalin and Bangladesh government officials. The letter was leaked to the media providing the public with the first opportunity to see the extent of the evidence alleging corruption.

The information in the letter is significant as it shows that the four 2011 e-mails sent by tipsters to the World Bank and passed on to Canadian authorities were the beginning, and not the end, of the World Bank investigation.

Following the letter, in April 2013, SNC Lavalin accepted a Negotiated Resolution Agreement, which meant that along with its affiliates, the company would be barred from bidding for World Bank contracts for 10 years. This is particularly significant as one of the four criteria required before the international donor agrees to a negotiated settlement is: “Whether an accused party has admitted culpability”. It is fair to assume that SNC Lavalin had done so.

Four months later, in September 2013, the Canadian police charged three additional men, including a former senior executive of SNC-Lavalin and a former state minister for foreign affairs Abul Hasan Chowdhury of bribery offences.

The January ruling


By the end of 2016, there remained only three Canadian citizens, including two former executives of SNC Lavalin charged with bribery offences relating to the alleged Padma bridge corruption case. With a trial imminent, these three accused challenged the legality of the judicial decision made in May 2011, which had authorised the use of wiretaps.

The wiretaps were crucial to the prosecution as it was, in part, relying on the information obtained from them to substantiate its case against the three accused.

To determine whether the original authorisation was legally justified, the new judge had to review whether the court in May 2011 was right to have concluded that the information, provided by the police showed that there were “reasonable and probable grounds [that] an offence is being or has been committed”. Mere suspicion was not sufficient, the information had to be “compelling, credible and corroborated”.

In its application requesting permission for the use of wiretaps six years ago, the Canadian police had relied primarily on the information set out in the initial four e-mails that had triggered the investigation.

It was an assessment of the adequacy of this evidence – and this evidence alone – that resulted in Justice Ian Northeimer concluding that it was not sufficient to justify wiretap authorisation, and on which he made his widely quoted criticisms.

The judge said:


“Reduced to its essentials, the information provided [in the May 2011 application] was nothing more than speculation, gossip and rumour. Nothing that could fairly be referred to as direct factual evidence, to support the rumour and speculation, was provided or investigated.”

To avoid any ambiguity, however, the judge specifically stated that his ruling did not consider any evidence collected by the Canadian police after May 2011.

Justice Northeimer stated:


“[T]he focus is on the information available to the police at the time of the application rather than information that the police acquired after the original application [to wiretap] was made…

“I have specifically not reviewed the information provided from the intercepted communication.”

Implications of the ruling


Though the ruling did not concern the overall evidence substantiating corruption in the tender, or more specifically the merit of the prosecution case against the three accused, the ruling did have significant implications. It meant that the evidence obtained from surveillance, which had initially been authorised six years earlier, was no longer admissible in the criminal trial.

The prosecution now had to decide whether, without the wiretap evidence – which was presumably incriminating as otherwise the accused would not have challenged its admissibility – it still had enough evidence to provide a “realistic prospect of conviction”.

A month later, on February 10, the Canadian prosecutor told the judge that without the surveillance evidence it would not proceed further. The court then acquitted the three men.

Distorting the ruling


Those who claim that the Canadian proceedings prove that the World Bank allegations were baseless or that the evidence was made-up are distorting the contents and meaning of Justice Northeimer’s January ruling.

Putting it charitably, they have failed to understand three things about it. First that the judge was only assessing the initial information that the police had in its possession one month after it started its investigation – the information that triggered subsequent inquiries. Second, that the judge’s criticism was only made in the context of a police application seeking judicial authorisation to undertake communication surveillance. And third, that the review undertaken by the judge was not concerned about any of the evidence subsequently collected by the World Bank detailed in its letter to the Anti-Corruption Commission in January 2013, or the evidence collected by the Canadian police.

Despite this reality, the language of the Canadian court ruling, combined with the subsequent acquittal of the three men accused of corruption, has allowed Bangladesh government representatives to create a strong fictional narrative that appears credible to those unaware of the details of the court proceedings.

Since in the current political climate few in Bangladesh will dare to confront this fictional narrative, the government is likely to exploit the situation and seek to show that the government is free from corruption, that it is a victim of conspiracies by international bodies like the World Bank and foreign police forces, and that civil society organisations, particularly those raising issues of corruption, cannot be trusted.

Truth, however, is a stubborn thing. So even in this new post-fact world, saying inaccurate things about Canadian judicial orders may just come back to bite the government.

ভুয়া সংবাদে বিএনপি যখন ‘সন্ত্রাসী দল’!

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে


পেশাগত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা হচ্ছে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চালিকা শক্তি। সে জন্য নৈতিকতাসম্পন্ন সাংবাদিকতা করতে গেলে তথ্যের মুক্ত আদান-প্রদানে হতে হয় নির্ভুল, স্বচ্ছ ও যথোপযুক্ত। তাই নৈতিক সাংবাদিক মাত্রই কর্মে হন শুদ্ধ ও সত্যশীল। কেননা তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হয়, তিনি সতর্ক, সাহসী ও দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে সত্য অন্বেষণে সংবাদ পরিবেশন করেন; ঔদ্ধত্য বা খামখেয়ালিতে কাউকে অহেতুক অপরাধী প্রতিপন্নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকেন; জনগণের সেবার ব্রতে সংবাদ ও প্রচারণার পার্থক্য বুঝে বিনা স্বার্থে স্বতন্ত্র অবস্থানে অবিচল থাকেন এবং সর্বোপরি জনগণের কাছে জবাবদিহিতায় নিজেকে সদা স্বচ্ছ রাখেন। এই চারটি বিশেষ গুণাবলিই হচ্ছে নৈতিক সাংবাদিকতার মানদন্ড। সেটাই সাংবাদিকতায় শেখানো হয়।

এখন সেই শিক্ষায় যেন গুড়েবালি! সত্য হয়েছে সত্যোত্তর। অর্থাৎ ‘ট্রুথ ইজ পোস্টট্রুথ’। বিশ্বে ২০১৬ সাল তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কেননা কদর্য রাজনীতি ও সংযোগ স্থাপনের বিপ্লবে মিথ্যার প্রসারতা, ভুল ধারণা দেওয়া বা বোঝানো ও সন্দিগ্ধ প্রবণতা এক বিশেষমাত্রায় উচ্চকিত হয়েছে। ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্যুতি বা ‘ব্রেক্সিট’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয়, এ দুটো ঘটনাই সেই সত্যকে সত্যোত্তর করেছে। অর্থাৎ ধারণাতীত বিষয়কে বাস্তবসম্মত করেছে।

এতে ‘নৈতিক সাংবাদিকতা’ বিবর্জিত প্রেক্ষাপটে একটি ভুয়া সংবাদে রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘সন্ত্রাসী দল’ প্রতিপন্ন! শুধু গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচারণায় নয়, বরং ওই সংবাদ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এমনকি বিভিন্ন টিভি ‘টকশো’র উপজীব্য হয়েছে। যে ব্যক্তিটি ওই সংবাদের উৎস হয়েছেন তার পরিচয় কী? কী তার নৈতিক অবস্থান? ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে তার ‘দাসত্বের’ ইতিবৃত্তটি প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, এই টরন্টোয় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুন নাগাদ তার পরিবেশিত অন্তত দুটি মিথ্যা বা ভুয়া সংবাদ পরিবেশনার যথোপযুক্ত প্রমাণাদি আমার সংগ্রহে রয়েছে। সর্বশেষটি কানাডার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল লিবারেল পার্টির সংসদ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেই আমি তাকে ই-মেইলে নোটিস দিয়েছি। তা পেয়েই ফোনে জানান, সংশোধন করবেন; কিন্তু করেননি।

তেমনি ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে বিএনপিকে প্রতিপন্নে ‘জুডিশিয়াল রিভিউ’ বিষয়টি ওই সংবাদ পরিবেশকের কাছে ছিল বোধগম্যহীন! কেননা ‘রিভিউ’ যে পুনর্বিবেচনা, সেটি ছাড়াই প্রত্যাখ্যাত রায়ে বর্ণিত কার্যকরণ ‘সন্ত্রাসী দল’ লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে, যা দায়িত্বহীনভাবেই অন্যরা সংবাদ পরিবেশনায় লুফে নিয়েছে। তাতে সংবাদের ‘সিক্স-সিগমা’ বা ‘ফাইভ ডব্লিউ ওয়ান এইচ’ বা প্রকৃত তথ্য উন্মোচনগত বিষয়াবলির মাঝে ‘ওয়ান এইচ’টি ছিল নিরুপায় উদাও!

সাধারণ মাত্রই বুঝবেন, যে ‘তথাকথিত’ শরণার্থী মোহাম্মদ জুয়েল হোসেন গাজী কানাডায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে নিজের দল বিএনপি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিপূরণে সশস্ত্র সংগ্রাম ও সহিংসতা করে থাকে’, এমনকি ‘অস্ত্রেশস্ত্রে যুদ্ধংদেহী হয়। তারা হাতবোমা, পিস্তল ও বড় তরবারি ব্যবহার করে। তারা হরতাল বা মিছিল চলাকালীন সরকার পক্ষের লোকদের উপর আক্রমণ করে’- এমন স্বীকারোক্তিমূলক বর্ণনায় তার কানাডায় অভিবাসন হতে পারে? বলাবাহুল্য, ওই ‘বেসিস অব ক্লেইম’-এর ভিত্তিতে সম্পূরক বিশ্লেষণে প্রথমে উচ্চপদস্থ একজন অভিবাসন কর্মকর্তা তার স্থায়ী অভিবাসনের আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেন, যা আবার শেষটায় ফেডারেল কোর্টে রিভিউর আবেদন করলে একই কারণে বহাল রাখা হয়। বিচারক হেনরি এস ব্রাউন ৩৩ পৃষ্ঠা সংবলিত ওই রায়ে সম্পূরক কার্যকারণ বিশ্লেষণ সাপেক্ষে মাত্র দুই লাইনের রায়ে লিখেন: ‘দিস কোর্টস জাজমেন্ট ইজ দ্যাট দ্য অ্যাপ্লিকেশন ফর জুডিশিয়াল রিভিউ ইজ ডিস্মিসড্, নো কোয়েশ্চেন ইজ সার্টিফাইড অ্যান্ড দেয়ার ইজ নো অর্ডার অ্যাজ টু কস্টস’। অর্থাৎ এই কোর্টের রায়টি হচ্ছে আবেদনকারীর আইনি পুনর্বিবেচনাটি বাতিল করা হলো, কোনো প্রশ্ন সত্যায়ন করা হয়নি এবং খরচ প্রদানেরও কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে যারা শরণার্থীর ‘বেসিস অব ক্লেইম’-এর উল্লেখ ছাড়াই কোর্টের রায়ে কার্যকরণে বিবৃত সম্পূরক বিশ্লেষণ থেকে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ প্রতিপন্নের মতো বিভ্রান্তি ছড়ান, তারা নৈতিক সাংবাদিকতার মানদন্ডে কতটা ‘সত্যকে সত্যোত্তর’ করেন; বিষয়টি ভাবনার বৈ কি!