Search

Wednesday, February 28, 2018

২৫ প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা



ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৯৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা (২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। 

বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা নিয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, শীর্ষ ২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্সের খেলাপি ঋণ ৮৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের ৫৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা, জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ৫৪৭ কোটি ৯৫ লাখ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৫১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ঢাকা ট্রেডিং হাউস ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আনোয়ার স্পিনিং মিলস ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, সিদ্দিক ট্রেডার্স ৪২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ ৪১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড ৪০১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, লিজেন্ড হোল্ডিংস ৩৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, হল-মার্ক ফ্যাশন লিমিটেড ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ৩৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, মুন্নু ফেব্রিক্স ৩৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স লিমিটেড ৩২২ কোটি ৪ লাখ টাকা, সাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড ৩১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিডেট ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কেয়া ইয়ার্ন লিমিটেড ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড ২৮৭ কোটি ১ লাখ টাকা, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেড ২৭৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা, এসকে স্টিল ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড ২৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, হেল্প লাইন রিসোর্সেস লিমিটেড ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেড ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড ২৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা দূর করা, ঋণখেলাপি বন্ধে আইনি সংস্কারে করণীয় ঠিক করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তাদের পারিবারিক পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং আইনে দুর্বলতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো বলে, ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ আদালতে গিয়ে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেয়। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চিন্তা আছে সংসদীয় কমিটির।

এ ছাড়া কমিটির বৈঠকে শেয়ারবাজার নিয়েও আলোচনা হয়। আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারত ও চীনের দুটি কনসোর্টিয়ামের বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে কমিটি।

আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরহাদ হোসেন এবং আখতার জাহান বৈঠকে অংশ নেন।
- .prothomalo.com/ ফেব্রুয়ারি ২৮,  ২০১৮

বাংলাদেশ ও মুসলিম-বিরোধিতা বাড়তে পারে

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ইমতিয়াজ আহমেদ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি, চীন-ভারত সম্পর্ক ও দেশ দুটির প্রতিযোগিতামূলক তৎপরতায় বাংলাদেশের অবস্থান ও সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানের এক বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয় ধরে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

প্রথম আলো: ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেছেন, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান বাংলাদেশের মুসলমানদের ভারতে পাঠাচ্ছে। ভারতের সেনাপ্রধানদের মুখে সাধারণত রাজনৈতিক বক্তব্য শোনা যায় না। এমন মন্তব্যের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: এ ধরনের বক্তব্য দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের দেখা দরকার যে তিনি কেন এ কথা বলেছেন। বক্তব্যটি পরিষ্কারভাবেই রাজনৈতিক, তাই এর পেছনে সেনাপ্রধানের নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। তিনি অবসরে যাবেন, সরকারি দল বিজেপিকে হয়তো কোনো কারণে তুষ্ট করতে চাইছেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর চলমান নির্বাচনের সঙ্গেও এর সম্পর্ক থাকতে পারে।

প্রথম আলো: এই মন্তব্য দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আসলে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ বা এ ধরনের কথাবার্তা ভারতের রাজনৈতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। এর মূল কারণ আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো হয়। ক্রমাগত এসব বলার ফলে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলেও এর একটা প্রভাব পড়েছে। এসব বক্তব্য ভারতে বাংলাদেশ ও মুসলিমবিরোধী মনোভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও আমরা একই চর্চা দেখেছি ও দেখি। এখানেও ভারত-বিরোধিতার রাজনীতির চেষ্টা হয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে ওই মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। ভারতীয় সেনাপ্রধান যে মন্তব্য করেছেন তার সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক-দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। আগেই বলেছি ভারতে বাংলাদেশ ও মুসলমান-বিরোধিতা বাড়তে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাড়তে পারে ভারত-বিরোধিতা। এ ধরনের মন্তব্য আসলে বাংলাদেশের ভারতবিরোধীদের খুশি করবে, কারণ একে তারা সহজেই কাজে লাগাতে পারবে।

প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতকে উদ্বিগ্ন না হতে বলেছেন। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ভারতের মধ্যে কি কোনো অস্বস্তি দেখা দিয়েছে? যে কারণে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে আশ্বস্ত করলেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন।

প্রথম আলো: তার মানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ভারতের অস্বস্তি রয়েছে এবং সে কারণেই ভারতীয় সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করেছেন। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আসলে চীন-ভারত সম্পর্কের বিষয়টি খুব জটিল।’ ৬২ সালের যুদ্ধের ছায়া এখানে ভূমিকা পালন করে। সেই যুদ্ধে পরাজয়ের বিষয়টিকে ভারত সব সময় মাথায় রাখে। ভারতের চলচ্চিত্র, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় ও রাজনীতিতে এসব বিষয় চর্চা হয়। আবার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে দেখবেন একক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য চীনের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে যত শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছে, সবচেয়ে বেশি গেছে চীনে। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভারতের কোনো প্রতিবেশী দেশ যখন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক করতে চায়, তখন ভারত তা মানতে ও পছন্দ করতে চায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন যে তোমরা চীনের সঙ্গে যেমন উন্নয়নের স্বার্থে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করো, আমরাও তা-ই করছি।

প্রথম আলো: ভারতের বিচলিত হওয়ার পেছনে কী কাজ করেছে বলে মনে করেন? চীনের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর, বিশাল আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি? নাকি চীন থেকে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনা? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: সমস্যা হচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যে মাত্রায় পরিশীলিত হওয়া উচিত, কার্যত তেমন নয়। ভারত হয়তো ভেবেছিল গত নির্বাচনে তারা যেভাবে বর্তমান সরকারকে সমর্থন করেছে তাতে বাংলাদেশ তাদের চাওয়ার বাইরে কিছু করবে না। কিন্তু বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে, তাদের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনেছে-এসব হয়তো ভারত ভালো চোখে দেখছে না। যদি এমন ভেবে থাকে তবে বলতেই হবে যে ভারতে পররাষ্ট্রনীতির পরিপক্বতার অভাব রয়েছে।

প্রথম আলো: সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব আগের তুলনায় কমেছে। এটা কেন হচ্ছে বলে মনে করেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: ভারতের চিন্তায় প্রতিবেশী দেশের দুটি মডেল রয়েছে বলে মনে হয়। একটি পাকিস্তান ও অন্যটি ভুটান। প্রতিবেশী দেশগুলোকে তারা এভাবেই দেখতে চায়। ভারতকে এটা বুঝতে হবে যে প্রতিবেশীদের এভাবে দেখা যায় না। বাংলাদেশ কোনোভাবেই পাকিস্তান নয়। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। আবার ভুটানের অনেক কিছু যেভাবে ভারত নিয়ন্ত্রণ করে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব নয়। নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এসব করতে গিয়ে ভারত তার অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেসব দেশে ভারত-বিরোধিতা বেড়েছে। রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা নেপালের ক্ষেত্রে এখন দেখবেন যে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে একধরনের মতৈক্য হয়েছে। কিন্তু ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনছে না। ভারত নিজে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখবে কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোকে তা করতে দেবে না-এমন নীতি পরিপক্বতার লক্ষণ নয়।

প্রথম আলো: কিন্তু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তো শুধুই অর্থনৈতিক নয়। সামরিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা এবং সেখান থেকে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়টি তো দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কোনো দেশ যখন অস্ত্র কেনে তখন স্বাভাবিকভাবেই সে নিকট প্রতিবেশী দেশের চেয়ে আলাদা ও ভিন্ন ধরনের অস্ত্র কিনতে চায়। এটা ভারতের না বোঝার কোনো কারণ নেই। বিশ্বের সব দেশ তা-ই করে। আপনি এর আগে চীন থেকে সাবমেরিন কেনার কথা বলেছেন। ভারতের বোঝা উচিত যে এখন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে। এই সমুদ্রসীমা পাহারার প্রয়োজন রয়েছে। জলদস্যুদের তৎপরতা ও অবৈধভাবে মাছ ধরা ঠেকানোর বিষয়টি খুবই জরুরি। এসব ঠেকাতে আমাদের নৌবাহিনীর জন্য অনেক জাহাজ কেনার চেয়ে সাবমেরিন কেনা অনেক সাশ্রয়ী উদ্যোগ। ভারত পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশ, শক্তিশালী নৌবাহিনী রয়েছে তাদের। এখন বাংলাদেশ চীন থেকে অস্ত্র কিনলে বা দুটি সাবমেরিন কিনলে ভারত যদি তা মেনে নিতে না পারে, তাহলে তো বিপদ।

প্রথম আলো: এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীন-ভারতের প্রতিযোগিতার মধ্যে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইমতিয়াজ আহমেদ: আগেই বলেছি চীন-ভারত প্রতিযোগিতার কিছু মানসিক দিক রয়েছে, আবার রয়েছে কিছু কৌশলগত দিক। মানসিক দিক থেকে ভারতের অবস্থানের কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। আসলে ভারতের ব্যবসায়ীরা চীনকে যতটা বোঝেন, ভারতের আমলারা তা বোঝেন না। ভারত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত না হলেও ভারতের অনেক ব্যবসায়ী কিন্তু তা চান। এখন চীনের সঙ্গে একধরনের বিরোধ টিকিয়ে রাখার পেছনে কিছু কৌশলগত কারণ রয়েছে। ভারত যদি এটা দেখাতে পারে যে চীনের সঙ্গে তার বৈরিতা রয়েছে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমের কাছ থেকে কিছু সুবিধা আদায় করা সম্ভব। ভারত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এর সুবিধা নিয়েছে। পারমাণবিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাচ্ছে। ভারত জানে যে চীনের সঙ্গে বৈরিতা থাকলেও তারা একে সংঘাতের পর্যায়ে নিয়ে যাবে না। কৌশলগত কারণেও চীন-বিরোধিতা বা একটি বৈরিতার পরিস্থিতি জারি রাখা জরুরি।

প্রথম আলো: এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশ কীভাবে একই সঙ্গে দুই বড় ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে অর্থনীতিকেন্দ্রিক করে ফেলা উচিত। ভারত ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারে। এই তিন দেশের অর্থনৈতিক উদ্যোগে সব পক্ষই লাভবান হবে। বিশেষ করে ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেখানকার জনগণেরও অর্থনৈতিক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বাংলাদেশের এখানে বড় ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। কারণ, এই বড় দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো শত্রুতা বা প্রতিযোগিতা নেই, ভূখণ্ডগত কোনো সমস্যাও নেই।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের বর্বরতা এবং শরণার্থী সংকটে আমরা দেখলাম ভারত ও চীন স্পষ্টতই মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, কিন্তু ভারতের মিয়ানমারের পক্ষ নেওয়া বিস্ময়কর। বাংলাদেশ কেন ভারতকে পাশে পেল না? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমি মনে করি, ভারত আসলে বড় ভুল করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ও ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছিল। ভারতের নীতিনির্ধারকেরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা জাতি নিধন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারত একাত্তর সালে বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল ও সে জন্য দেশ হিসেবে বিশ্বে যে সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করেছিল, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে চুপ থেকে ভারত তার সেই অবস্থানকে অনেকটাই দুর্বল করেছে। ভারতের এটা বোঝা উচিত যে চীনের অর্থনৈতিক শক্তির ধারেকাছে যাওয়ার অবস্থায়ও ভারত নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরও সেই অবস্থা নেই। ফলে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় ভারত চীনের সঙ্গে পেরে উঠবে না। আর মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক তাতে দেশটিকে ভারত চীনের কাছ থেকে নিজের বলয়ে আনতে পারবে না। মাঝখান থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন হারিয়েছে এবং দেশটির ভূমিকা বাংলাদেশের জনগণকে হতাশ করেছে। চীন থেকে সাবমেরিন কেনা বা আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভারত এমনটি করেছে কি না, কে জানে।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: চীন নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে ভেটো দিয়েছে। এরপর আমরা দেখেছি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং সমস্যা সমাধানে তিন পর্যায়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। মিয়ানমারে গিয়েও তিনি একই প্রস্তাব দিয়েছেন। এর ওপর ভিত্তি করেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করেছে। আমরা দেখলাম যে চীন যে রকমই হোক একটি ভূমিকা পালন করেছে। ভারত কিন্তু কোনো ভূমিকা রাখতে পারল না।

প্রথম আলো: মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছে তা কতটুকু কার্যকর হবে, সেই সংশয় কিন্তু দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন বাংলাদেশের তরফে কিছু করণীয় আছে কী? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমরা দেখেছি যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীনের অবস্থান কাছাকাছি। কিন্তু এই সংকট সমাধানে দেশ দুটির করণীয় রয়েছে। আমি মনে করি শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উচিত বেইজিং ও দিল্লি সফর করা। এ ধরনের সফর অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশ তো সব সময়ই দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ও সংবেদনশীলতাকে বিবেচনায় নিয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির জন্য চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার সব উদ্যোগ নিয়েও বাংলাদেশ মূলত ভারতের আপত্তির কারণে তা করেনি। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: চীনের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অন্য দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলের পার্থক্য রয়েছে। চীন সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সময় নিয়ে লেগে থাকে। কোনো কিছুতে বাধা এলে তারা তা বাদ দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। পুরোনো কিছু নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। তারা অপেক্ষা করার নীতি নেয়। সোনাদিয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ রাজি হয়নি, এতে কিন্তু চীন দমে যায়নি বা এতে বিরক্তি প্রকাশ করেনি। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছেন এবং বিপুল সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি নিয়েই এসেছেন। বাংলাদেশের উচিত এ ধরনের কাঠামো যাতে সবাই মিলে করা যায়, তেমন উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে ভারত ও চীনের যৌথ বিনিয়োগেই গভীর সমুদ্রবন্দর হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর হলে তার ফল ভারত ও চীনসহ আশপাশের অনেক দেশই ভোগ করতে পারবে। কলম্বো সমুদ্রবন্দরে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। সেই বন্দর কিন্তু ভারত ব্যবহার করছে। কারণ, বন্দর তো শুধু একটি দেশের সুবিধার জন্য তৈরি হয় না।

প্রথমআলো: সম্প্রতি দিল্লিতে এক সেমিনারে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের তরফেই বলা হয়েছে যে ভারতীয় কূটনীতিতে বাংলাদেশ যথাযথ মনোযোগ পায় না, অথচ এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। আপনার মন্তব্য কী? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা প্রতিবেশী দেশগুলোকে মানচিত্রের বিবেচনায় দেখেন। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ছোট। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে মানচিত্র সবকিছু বলে না। সেখানে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব, কৌশলগত গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব-এসব দেখা যায় না। সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ কোরিয়ার আকার মানচিত্রে দেখে এর গুরুত্ব বিবেচনা করলে হবে না। বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। এত জনসংখ্যার একটি দেশকে যেকোনো বিবেচনাতেই উপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভারতকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত আছে। বাংলাদেশের অনুন্নয়ন বা অস্থিতিশীল ভারতের জন্য ভালো কিছু নয়। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে ভালো করছে। এখন ভারত কি এতে ঈর্ষান্বিত হবে নাকি এই অগ্রগতিকে সমর্থন করবে। ভারতকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশ বা প্রতিবেশীদের যেকোনো উন্নয়ন ভারতের নিজের স্বার্থেই জরুরি। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। মানচিত্র দেখে প্রতিবেশীদের বিবেচনা করার মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের গত একতরফা নির্বাচনকে ভারত কোনো রাখঢাক না করেই সমর্থন করেছিল। সামনে নির্বাচন আসছে। এবার ভারতের অবস্থান কী হতে পারে বলে মনে করেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: গত চার বছরে ভারতের কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। সরকারি দলকে সহায়তা করলেই সবকিছু মিলবে-এমন ধারণা যে ভুল, তা হয়তো তারা টের পেয়েছে। আসলে আগে যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে তা করা গেছে আমাদের নিজস্ব রাজনীতির সমস্যার কারণে। এবার ভারত কোনো দলের পক্ষে সরাসরি থাকতে চাইবে বলে মনে হয় না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দিকেই তাদের আগ্রহ থাকবে বলে মনে হয়।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • Courtesy: Prothom Alo Feb 28, 2018

Alarming fall in city's air quality

Why are city authorities oblivious?

Editorial/The Daily Star/February 27, 2018



Air pollution is a common phenomenon in major urban centres around the world. What is not common, however, is that the authorities in big cities in our country are taking a hands-off position and letting things get out of control. This is where Dhaka city is excelling. Air pollution is getting worse progressively and now dust has been added to the various toxins in the air resulting in various lung-related diseases affecting both children and adults. Environmental experts have pointed out that it is possible to minimise the adverse effects of pollution simply by enforcing laws and rules already in existence, but for that to happen, government bodies that are mandated to fight pollution must act.


A Norwegian survey in 2013 found that 58 percent of Dhaka's pollution is caused by brick kilns. 18-19 percent of pollution comes from vehicles, 10 percent from road/soil dust, and 8-9 percent due to construction. There are so many things that can be done but aren't. Had there been enforcement, we would have seen the relocation, or closure, of illegal brick kilns to outside of Dhaka unless they conformed to minimum health standards, and BRTA would have had regular spot checks on the roads to measure vehicle exhaust emissions and fined errant vehicles. Were the authorities concerned with public health, steps would have been taken by the two Dhaka city corporations to spray water on dusty roads to keep dust under control.

For our cities to have a healthy population, we have to accept the fact that there is no recourse to implementing rules, regulations and laws. And while we thank the Directorate General of Health Services advising us to use facemasks while moving around outside, we would also like to ask city authorities and relevant departments to do their job so that city residents may breathe a little cleaner air.

তিন দফায় সিমেন্টের দাম বাড়ছে বস্তাপ্রতি ৬০ টাকা



বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে সিমেন্টের দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশের সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা। তবে বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম পূর্বঘোষণার চেয়ে অনেক বেশিই বাড়ানো হচ্ছে। লোকসান এড়ানোর কথা বলে গত বছরের শেষ দিকে নির্মাণ খাতের অন্যতম কাঁচামালটির দর ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে এখন ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম তিন দফায় ৬০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম ১৫-১৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাসে সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েছে। চীন একসময় ক্লিংকার রফতানিতে শীর্ষে থাকলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে ক্লিংকারের আমদানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। চীন ও ভিয়েতনামে ক্লিংকারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে এর দামেও প্রভাব পড়েছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে ক্লিংকারের টনপ্রতি দর ৩৫-৩৮ ডলার থেকে বেড়ে ৫০-৫২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এ অবস্থায় লোকসান পুষিয়ে নিতে খুচরা পর্যায়ে সিমেন্টের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ২০ টাকা বাড়ানো হয়। আগামীকাল থেকে প্রতি বস্তার দাম আরো ২০ টাকা বাড়ছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী ১৫ মার্চ থেকে বস্তাপ্রতি আরো ২০ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সিমেন্ট প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকরণ সমিতির পক্ষ থেকে।

সমিতির নির্বাহী পরিচালক বেলাল হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, সিমেন্টের দাম বাড়ানো নয়, বরং সমন্বয় করা হচ্ছে। চীনসহ বেশ কয়েকটি ক্লিংকার রফতানিকারক দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে সিমেন্ট উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। ২০১৭ সালে দেশের প্রায় সব উৎপাদক প্রতিষ্ঠান লোকসান গুনেছে। বাধ্য হয়েই চলতি বছর সিমেন্টের দাম উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ সমিতির সভায় দাম বাড়ানোর বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সমিতির তথ্যানুসারে, দেশে সিমেন্ট কারখানার সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০। তবে উৎপাদনে রয়েছে ৩২টি। ২০১৭ সালে বিশ্ববাজার থেকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টন ক্লিংকার আমদানির বিপরীতে সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টন। চলতি বছর ২ কোটি ৮০ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের, যা আগের বছরের চেয়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি।

সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমত. ক্লিংকারের দাম বেড়েছে। এর ওপর আবার দেশের পরিবহন খাতে এক্সেল লোড ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে পণ্যটির পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। আগে একটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে ৪০০ বস্তার মতো সিমেন্ট পরিবহন করা যেত। বর্তমানে ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ বস্তা পরিবহন করা যায়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিনিময়মূল্যও বেড়েছে। এতে সিমেন্টের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। কিন্তু বাজার স্থিতিশীলতা বিবেচনায় নিয়ে এতদিন দাম বাড়ানো হয়নি। লোকসানের কারণে দেশের ক্ষুদ্র পরিসরের কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিংকারের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুবিধাজনক দেশ থেকে আমদানি করতে না পারায় দেশের অনেক সিমেন্ট কারখানাই ক্লিংকার সংকটে রয়েছে। এরই মধ্যে দু-একটি কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লিংকার আমদানি করতে না পারায় বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি কারখানা।

জানতে চাইলে আরামিট সিমেন্টের ডিজিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মীর মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্লিংকার রফতানিকারক দেশগুলোয় সংকট থাকায় এখন ওইসব দেশই আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এতে বিশ্ববাজারে ক্লিংকারের দাম বেড়ে গেছে। দেশের সিমেন্ট খাতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সিমেন্ট কারখানাগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই বলে দাবি করেন তিনি।

কয়েক মাস ধরে নির্মাণ খাতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল রডের দাম টনপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাড়ছে সিমেন্টের দাম। এতে দেশের নির্মাণ খাতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগেও খুচরা বাজারে কোম্পানিভেদে প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হতো ৩৪৫ থেকে ৩৯০ টাকায়। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ থেকে ৪১০ টাকা। আগামী মাসের শুরুতেই একই মানের সিমেন্ট ৩৮৫ থেকে ৪৩০ টাকায় কিনতে হবে। আর মার্চের মাঝামাঝিতে তৃতীয় দফায় দাম বাড়ানো হলে সিমেন্টের বাজারে অল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের দর পরিবর্তন হবে। এতে বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

  • Courtesy: Bonikbarta Feb 28, 2018

তরুণদের জন্য বিনিয়োগ না হলে সংকটে পড়বে বাংলাদেশ

অ্যাকশনএইডের সম্মেলনে বক্তারা


তরুণদের শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা না হলে ২০৪১ সালের পর মারাত্মক আর্থসামাজিক সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব হবে না।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘তরুণদের জন্য বিনিয়োগ’ শিরোনামে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী যুবা সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার। অন্যদের মধ্যে ছিলেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক আবদুস সালাম, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক, ডেনমার্ক সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডানিডার বাংলাদেশ প্রধান পিটার বোগ জেনসেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক তরুণ হওয়ায় বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তবে ২০৪১ সালের পর বর্তমানের তরুণরা কর্মক্ষমতা হারাবে। তাই তরুণদের শিক্ষার মান, কর্মদক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। তবে সেই বিনিয়োগ এখনো আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ চলমান এবং গত কয়েক বছরের বাজেটে দেখা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ মোট বাজেটের এক-শতাংশেরও কম।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন বয়সে তরুণ। এ দেশের যেকোনো পরিস্থিতির উন্নতির কথাই আমরা বলি না কেন, তরুণদের লাগবেই। তারা যদি দক্ষ ও যোগ্য না হয়, তাহলে আমাদের দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবে না। তাই তরুণদের কথা শুনতে হবে; জানতে হবে তরুণদের চিন্তা-ভাবনা। বিনিয়োগ করতে হবে তরুণদের জন্য।

  • Courtesy: Banikbarta Feb 2018


Eminent citizens for justice for Tawqi


Twenty-one eminent citizens on Tuesday demanded justice for Tanwir Muhammad Tawqi, a brilliant student of Narayanganj, who was abducted and murdered in 2013.

In a statement, they said they were worried and aggrieved as the charge sheet was not filed in the murder case in last five years.

The signatories said Rapid Action Battalion, the investigating agency of the case, within a year of the murder claimed that they had detected why, when, where, who and how Tawqi was killed. RAB even supplied a draft charge sheet to the media and said they would submit the charge sheet to the court soon. But the charge sheet had not been submitted to the court yet, they said.

‘It could not be an example of fair trial process’, they said.

Language Movement veteran Ahmad Rafique, educationists Serajul Islam Choudhury, Anisuzzaman, Sanjida Khatun, journalist Kamal Lohani, writer Hasan Azizul Huq, Anu Muhammad, rights activist Sultana Kamal and actor Mamunur Rashid, are among the 21 eminent citizens, confirms a press release issued by Santrash Nirmul Tawqi Mancha. 

The Rapid Action Battalion had announced in March 2014 that they would submit the charge sheet in weeks.

Tawqi, 17, an A-level student of the ABC International School in the city, was abducted on March 6, 2013 and his body was found in a canal in the city after two days. Rafiur filed the case with the Narayanganj police station on March 8, 
2013 against some unnamed people. 

He, however, named seven people including ruling Awami League MP AKM Shamim Osman, his son Ayon Osman, their associates Jahirul Islam Parvej, who went missing few months after the killing of Tawqi, Mizanur Rahman Sujon, Rajib Das, Saleh Rahman Simanto, and Rifat.

In March 2014, the then battalion additional director general Ziaul Ahsan said they found involvement of Ajmeri Osman and 10 others in the murder.

The battalion in March 2014 also cited Rabbi’s support to Narayanganj city mayor Selina Hayat Ivy was the motive behind the murder. 

  • Courtesy: New Age Feb 28, 2018

BCL clash foils council, injures 15



At least 15 activists of Bangladesh Chhatra League were injured in a scuffle following chanting slogans at the council of north district unit of Chittagong BCL on Tuesday. 

Following the scuffle there was a hand-made bomb exploded during first session at the council of the ruling party Awami League-backed student organisation at Engineers’ Institution in Chittagong around 1:00pm. Chittagong north district BCL organised the council after seven years of its last committee formation in 2011.

After the explosion, disorder overtook the entire council session and several groups of BCL hurled chairs to each other. Some leaders and activists fell on the ground and at least 15 people, including two journalists, received injuries while trying to make way during the rush of people.

Of the injured, seven were identified as BCL activist Sobuj Ahmed, Robiul Islam, Nipu Howlader, Saidur Rahman, Md Rifat and two journalists Saidul Islam and Mitoon Chowdhury, received minor injuries. Injured five BCL activists were admitted to Chittagong Medical College Hospital, said the hospital police outpost’s assistant sub-inspector Mohammad Alauddin Talukder.

At the time of explosion the programme’s chief guest Awami League’s presidium member engineer Mosharraf Hossain, also the housing and public works minister, central BCL general secretary SM Zakir Hossain and other senior leaders were present at the dais. The leaders tried to restore order but failed. 

At one stage, BCL leaders immediately postponed the first session of the council. The second session of the council was scheduled to be held at Chittagong Zilla Parishad auditorium in the afternoon but later around 5:00pm it was also postponed. Abu Taiyob, incumbent general secretary of north district BCL, said that senior leaders cancelled the council programme as trouble ensued. The leaders will take further decision about new committee, he said. 

Taiyob alleged that a group of outsiders foiled the council programme.

Some eye witnesses said that a group of outsiders suddenly hurled a chair from the last row of the venue to the front side where several groups of BCL activists were chanting slogans supporting their candidates. Soon it turned into scuffle. At one stage, they exploded a hand-made bomb at the venue.

‘Five outsiders who entered into the venue from the tiny door at the back side foiled the council in a planned way. They might be the follower of a Lalkhanbazar ward AL leader,’ a BCL leader who saw the entering to the venue from the back door said seeking anonymity. 

Jahangir Alam, senior assistant commissioner of Chittagong Metropolitan Police, said additional law enforcers were deployed avoiding unpleasant incidents at the council of Chittagong north district BCL. He said there was a little trouble ensued in the venue. Some people received minor injuries while trying to make way during the rush of people, Jahangir said. 

The ruling party-baked student organisation’s leaders and activists engaged in the clashes following scuffle in Chittagong for the second consecutive day.

On Monday, some BCL factions clashed hurling chairs over chanting slogan at Laldighi field during a memorial meeting was being held for former Chittagong mayor late Mohiuddin Chowdhury.

  • Courtesy: New Age Feb 28, 2018 


Bangladesh’s roads among worst in Asia



Bangladesh’s roads are among the worst in Asia, DataLeads say in a recent infograph published based on an opinion survey of the World Economic Forum.

It ranked at 113 among the Asian countries for road quality, only ahead of Nepal, ranked worst for lack of resources and hilly terrain posing a major barrier to development.

Singapore is ranked at the top in Asia and second globally in terms of road infrastructure in the country.  It is followed by Japan and Taiwan which have equally well-maintained roads ranked 5 and 11 respectively.  South Korea and Malaysia ranked 14 and 20 respectively also figure in the countries with best roads in Asia.

China is ranked 39 in the world. It has good roads owing to the rising economy and growing development. China has the longest highway in the world stretching 85,000 kilometres. Brunei and Sri Lanka rank better than other south Asian countries. The condition of Indian roads in getting better with the country ranked 51, ahead of Thailand and Pakistan at 60 and 77 respectively.

Bhutan ranked 80 needs to develop the road infrastructure by leaps and bounds. It is followed by Vietnam and Laos that have also not invested much in developing road infrastructure to make travelling easy around the country.

Cambodia ranked 93 has sporadic road development in both rural and urban areas. Philippines’ roads are less developed compared to other East Asian countries. It is followed by Mongolia at 109 and Bangladesh at 113. Nepal has the worst road in Asia.

  • Courtesy: The Daily Star F2b 28, 2018

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার বন্ধে ইসিকে চিঠি বিএনপির



তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে ইসিতে পাঠানো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা একটি চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে।

চিঠির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন চিঠিটি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। এ ছাড়া আলাদা একটি চিঠিতে কমিশনের চাওয়া দলীয় কিছু তথ্যও দেওয়া হয়েছে।

মুনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে তিনি বিএনপির মহাসচিবের সই করা চিঠি ইসিতে পৌঁছে দিয়েছেন। একটি চিঠিতে ইসিকে বিএনপির দলীয় কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। অপরটিতে তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধে উদ্যোগ নিতে এবং বিষয়টি ইসিতে অবহিত করে লেখা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে প্রচার-প্রচারণা করছেন। তফসিল ঘোষণার আগে এ ধরনের নির্বাচনী প্রচার চালান আচরণবিধি ও আইনের লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রচারণা বন্ধে ইসিকে আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার প্রধানের এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির পরিপন্থী পাশাপাশি তা আইনেরও লঙ্ঘন।

নির্বাচন কমিশনের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এখনো তাঁরা চিঠিটি পাননি। চিঠি পড়ে তাঁরা যা করার তাই– করবেন।

চলতি বছরের শেষে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বিএনপি চিঠিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর, ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফর এবং রাজশাহী সফরে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া, সমাবেশ করা ও ভোট চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে।

  • Courtesy: Prothom Alo Feb 28, 2018

Tuesday, February 27, 2018

এ কথা বন্ধুত্বের নমুনা নয়

 ড. মাহবুব উল্লাহ্


আজ যখন দৈনিক যুগান্তরের জন্য নিয়মিত সাপ্তাহিক কলামটি লিখছি, তখন যে দিনটি অতিবাহিত হচ্ছে সেটি ২৫ ফেব্রুয়ারি। আজকের এদিনে ২০০৯ সালে বিডিআর বাহিনীতে এক কলঙ্কময় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় আমাদের সামরিক বাহিনীর ৫৭ জন চৌকস ও দেশপ্রেমিক অফিসারকে। তাদের সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন আরও অনেকে।

আমাদের জাতীয় ইতিহাসে কিছু বেদনাঘন দিন আছে। তার সঙ্গে সেদিন যুক্ত হয়েছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। চ্যানেল আই তৃতীয়মাত্রা অনুষ্ঠানে ২৫ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ছয়জন শহীদ সেনা অফিসারের স্ত্রী-পুত্র কন্যাদের। তাদের অনুভূতির কথা শুনে অশ্রু সংবরণ করা সম্ভব হয়নি। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জিল্লুর রহমানও একপর্যায়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েছিলেন। দিবসটিকে ঘিরে আমাদের স্মৃতির বীণায় যে করুণ সুর জাগিয়ে তোলা হয়েছিল তার জন্য চ্যানেল আই এবং উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের প্রতি রইল অন্তরসিক্ত কৃতজ্ঞতা। একজন শহীদ অফিসারের সন্তান বলতে চাইল, ‘ওটা বিদ্রোহ ছিল না, ছিল হত্যাকাণ্ড।’ যুক্তিস্বরূপ এ যুবক বলল, বিদ্রোহের একটা আইডিওলজি থাকে। সে জন্য মানবসমাজে বিদ্রোহ নন্দিত হয়। ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ইংরেজদের ভাষায় যে ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ হয়েছিল, কার্ল মার্কসের দৃষ্টিতে তা ছিল ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’।

যারা ইতিহাসে উপস্থাপিত ঘটনাবলি সম্পর্কে কোনো বিকৃতি বা বিচ্যুতি মানতে চান না, তাদের অনেকে মার্কসের দোহাই দিয়ে যে শব্দগুচ্ছ উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো মার্কসের নিজের কথা ছিল না বলে দাবি করেছেন। মার্কস ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন সম্পর্কে বেশকিছু লেখা লিখেছিলেন। সেগুলো সংকলিত করে প্রকাশ করতে গিয়ে একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্কস-লেনিন ইন্সটিটিউট এই মহাবিদ্রোহ সম্পর্কিত লেখাগুলোর শিরোনাম করেছিলেন, ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’। ইতিহাসের ইতিহাস নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, আমাদের কাছে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তার সঙ্গে চির অম্লান হয়ে থাকবে মহাবিদ্রোহের মহানায়কদের নাম। যেমন, তাতিয়া তপী, নানা ফড়নবীশ, সিপাহি মঙ্গল পান্ডে এবং মওলানা আহমদ উল্লাহ। তাদের সঙ্গে যে নামটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সেই নামটি হল বাহাদুর শাহ জাফর।

২০০৯-এর ২৫ ফেব্রুয়ারির বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জন্য এ দেশের কোনো মানুষেরই সামান্যতম সহানুভূতি থাকবে না। ইতিহাসের ধারায় তারা তৈরি করেছিল এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। যে বীর সেনা অফিসাররা সেদিন প্রাণ হারিয়েছিল, তারা জানতে পারেনি তাদের কী অপরাধ। তারা জানতে পারেনি কোন ষড়যন্ত্রীরা দেশের কোন সর্বনাশ করার জন্য তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। একজন সৈনিকের জন্য সবচেয়ে গর্বের বিষয় হল তার ইউনিফর্ম।

ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তাদের হত্যা করা হয়েছিল। এ ছিল তাদের ইউনিফর্মের প্রতি চরম অবমাননা। একজন সৈনিক দেশের জন্য প্রাণ দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং দেশের জন্য শাহাদতবরণ করাটা তারা অতি গর্ব ও বীরত্বের কাজ হিসেবে গ্রহণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে এত বিশালসংখ্যক অফিসার শহীদ হননি। তাহলে কি এদের হত্যা করে কুচক্রীরা চেয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বর্মটিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে। এসব সেনা অফিসারের স্বজনরা আজও অপেক্ষায় আছেন দিবসটিকে যেন শহীদ সেনাদিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্র। তারা দিবসটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও চান না। তাদের একটি মাত্র চাওয়া হল, দিবসটির প্রতি জাতির অকুণ্ঠ মর্যাদা জ্ঞাপন।

কী শোকাবহ ছিল এ সেনা অফিসারদের মৃত্যু! তাদের কফিন যেসব সেনা অফিসার ইউনিফর্ম পরে কাঁধে বহন করে ধীর পদক্ষেপে শেষ যাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তারাও অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। কী গভীর বেদনাভূতি এ ঘটনাটির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা সহজ নয়। এমন শোকে মানুষ ভাষা হারিয়ে ফেলে, হয়ে যায় বাকশক্তিহীন। তাই তো গায়ক হায়দার হোসেন গেয়েছিলেন, ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার।’

শুধু সেনা অফিসার হত্যার জন্যই স্মরণীয় নয়, ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার মাস, শহীদদের মাস, মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিরোধের মাস। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বরকত, সালাম, রফিক ও জব্বাররা আমাদের যেভাবে আত্মসচেতন করে গেছেন, সেটাই আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

আমরা একটি দেশের উপনিবেশবাদের শৃঙ্খল ভেঙেছি অন্য একটি দেশের উপনিবেশে পরিণত হওয়ার জন্য নয়। গত দু-তিন দিনের সংবাদপত্র পড়ে মনে হচ্ছে আমাদের আত্মমর্যাদাবোধকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর ২য় পাতায় একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল, ভারতীয় সেনাপ্রধানের মন্তব্য/‘বাংলাদেশিদের’ ব্যবহার করছে চীন ও পাকিস্তান। এ সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান ‘বাংলাদেশি’ মুসলমানদের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঠেলে পাঠাচ্ছে- প্রকারান্তরে এ কথাই বলেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল দিপিন রাওয়াত। গত বুধবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি জানান, ভারতের পশ্চিম প্রান্তের প্রতিবেশীর কাছে এটা আরেক ধরনের ছায়াযুদ্ধ।

ছায়াযুদ্ধের চরিত্র কেমন তা বোঝাতে গিয়ে রাওয়াত আসামের রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (AIUDF) উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, রাজ্যে এ দলটির বাড়-বাড়ন্ত বিজেপির চেয়ে অনেক বেশি। বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি মুসলমান জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন। এই যে বেড়ে যাওয়া, তার একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি বন্যার কথা বলেছেন, যার ফলে নিম্ন প্রবাহিকার দেশ বাংলাদেশে বাসস্থানের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। তার ব্যাখ্যায়, চীনের সাহায্যে পাকিস্তান ওই মানুষজনকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে পাঠিয়ে জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে। এটা ওদের এক ধরনের ছায়াযুদ্ধ। ওদের উদ্দেশ্য এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অশান্তি জিইয়ে রাখা।

জেনারেল রাওয়াতের এ মন্তব্যে হতভম্ব হওয়া ছাড়া কী-ই বা করার থাকে! ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বঞ্চনাজনিত কারণে একধরনের সশস্ত্র বিদ্রোহাত্মক তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কখনও এই তৎপরতা বেড়ে যায়, আবার কখনও স্তিমিত হয়ে পড়ে। ওখানে যা ঘটছে সেটি ঘটছে মূলত অভ্যন্তরীণ কারণে। এসব বিদ্রোহাত্মক তৎপরতার সূচনা ১৯৪৮ সাল থেকে। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরের বছর থেকে। এ কথা অনস্বীকার্য, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে পূর্ববঙ্গের গরিব কৃষকরা আসামে অভিবাসন শুরু করে। অর্থনীতির ভাষায় একে বলা যায়, পুশ অ্যান্ড পুল ফ্যাক্টর। এ গরিব কৃষক প্রজারাই আসামের বন-জঙ্গল সাফ করে এবং হিংস্র পশুদের দমন করে আসামকে কৃষির জন্য উপযোগী করে তোলে। অথচ দেখা গেল একপর্যায়ে আসামের মূল বাসিন্দারা এটা পছন্দ করছে না। তারা ‘বাঙাল খেদা’ আন্দোলন গড়ে তুলল। এই ঘৃণাশ্রয়ী আন্দোলন প্রতিরোধ করতে গিয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে লাইন প্রথাবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সেই সময় থেকেই আসামে বারবার বাঙালি বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। এ থেকে পশ্চিম বাংলার বাঙালিরাও রেহাই পায়নি।

জেনারেল রাওয়াতের দাবি, বন্যা ও জনসংখ্যার চাপের ফলেই আসামে ‘বাংলাদেশি’দের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ফলে আসামের জনবিন্যাসে পরিবর্তন হচ্ছে এবং দিনে দিনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের সামরিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে এটা হল এক ধরনের জনমিতিক আগ্রাসন বা Demographic Invasion; কিন্তু গত ২-৩ দশকে বাংলাদেশে যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তার ফলে বাংলাদেশিদের আসামে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশিরা ভারতের তুলনায় পৃথিবীর অন্য অনেক দেশকে আকর্ষণীয় মনে করে। এ ছাড়া আসামে ১৯৪৭-এর পর এমন কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়নি যার ফলে বাংলাদেশিরা কর্মসংস্থানের গন্তব্য হিসেবে আসামকে বেছে নিতে পারে। সর্বোপরি চীনের সহায়তায় পাকিস্তান ‘বাংলাদেশি’ মুসলমানদের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঠেলে পাঠাচ্ছে- জেনারেল রাওয়াতের এমন অভিযোগ উদ্ভটও বটে। কারণ বাংলাদেশে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতাকে দমিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার প্রচণ্ডভাবে তৎপর রয়েছে। এ কথা নিশ্চয়ই জেনারেল রাওয়াত আমাদের মতো বেসামরিক নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি অবগত আছেন। বাংলাদেশ সরকার অনুপ চেটিয়াসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহী নেতাদের ভারত সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। এর ফলে ভারতের নিরাপত্তা শঙ্কা দূরীভূত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে এখন ভিন্নতর অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এর সঙ্গে চীনকেও যুক্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কথিত উদ্বেগ প্রশমনের জন্য অতি সম্প্রতি বলে দিয়েছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ততটুকুই, যতটুকু প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। বাংলাদেশ ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছে- দিয়েছে করিডোর সুবিধা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমনে সহায়তা।

এতকিছু করেও ভারতের মন জয় করা সম্ভব হয়নি। আরও কত কী করলে ভারতের মন জয় করা সম্ভব হবে বলা দুষ্কর। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৩-৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স যায় ভারতে। এখন মনে হচ্ছে জনমিতিক বিন্যাসে ভারসাম্য আনার নামে ভারতও মিয়ানমারের মতো ২০-৪০ লাখ মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে। এটা কি বন্ধুত্বের নমুনা? ভারত ভালো বন্ধু হলে অন্তত তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিত। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে পেতে চাই, অভিযোগ উত্থাপনকারী প্রভু হিসেবে নয়।

ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
  • দৈনিক যুগান্তর/২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮