Search

Wednesday, February 28, 2018

তিন দফায় সিমেন্টের দাম বাড়ছে বস্তাপ্রতি ৬০ টাকা



বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে সিমেন্টের দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশের সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা। তবে বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম পূর্বঘোষণার চেয়ে অনেক বেশিই বাড়ানো হচ্ছে। লোকসান এড়ানোর কথা বলে গত বছরের শেষ দিকে নির্মাণ খাতের অন্যতম কাঁচামালটির দর ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে এখন ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম তিন দফায় ৬০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম ১৫-১৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাসে সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েছে। চীন একসময় ক্লিংকার রফতানিতে শীর্ষে থাকলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে ক্লিংকারের আমদানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। চীন ও ভিয়েতনামে ক্লিংকারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে এর দামেও প্রভাব পড়েছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে ক্লিংকারের টনপ্রতি দর ৩৫-৩৮ ডলার থেকে বেড়ে ৫০-৫২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এ অবস্থায় লোকসান পুষিয়ে নিতে খুচরা পর্যায়ে সিমেন্টের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ২০ টাকা বাড়ানো হয়। আগামীকাল থেকে প্রতি বস্তার দাম আরো ২০ টাকা বাড়ছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী ১৫ মার্চ থেকে বস্তাপ্রতি আরো ২০ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সিমেন্ট প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকরণ সমিতির পক্ষ থেকে।

সমিতির নির্বাহী পরিচালক বেলাল হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, সিমেন্টের দাম বাড়ানো নয়, বরং সমন্বয় করা হচ্ছে। চীনসহ বেশ কয়েকটি ক্লিংকার রফতানিকারক দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে সিমেন্ট উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। ২০১৭ সালে দেশের প্রায় সব উৎপাদক প্রতিষ্ঠান লোকসান গুনেছে। বাধ্য হয়েই চলতি বছর সিমেন্টের দাম উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ সমিতির সভায় দাম বাড়ানোর বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সমিতির তথ্যানুসারে, দেশে সিমেন্ট কারখানার সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০। তবে উৎপাদনে রয়েছে ৩২টি। ২০১৭ সালে বিশ্ববাজার থেকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টন ক্লিংকার আমদানির বিপরীতে সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টন। চলতি বছর ২ কোটি ৮০ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের, যা আগের বছরের চেয়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি।

সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমত. ক্লিংকারের দাম বেড়েছে। এর ওপর আবার দেশের পরিবহন খাতে এক্সেল লোড ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে পণ্যটির পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। আগে একটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে ৪০০ বস্তার মতো সিমেন্ট পরিবহন করা যেত। বর্তমানে ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ বস্তা পরিবহন করা যায়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিনিময়মূল্যও বেড়েছে। এতে সিমেন্টের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। কিন্তু বাজার স্থিতিশীলতা বিবেচনায় নিয়ে এতদিন দাম বাড়ানো হয়নি। লোকসানের কারণে দেশের ক্ষুদ্র পরিসরের কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিংকারের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুবিধাজনক দেশ থেকে আমদানি করতে না পারায় দেশের অনেক সিমেন্ট কারখানাই ক্লিংকার সংকটে রয়েছে। এরই মধ্যে দু-একটি কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লিংকার আমদানি করতে না পারায় বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি কারখানা।

জানতে চাইলে আরামিট সিমেন্টের ডিজিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মীর মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্লিংকার রফতানিকারক দেশগুলোয় সংকট থাকায় এখন ওইসব দেশই আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এতে বিশ্ববাজারে ক্লিংকারের দাম বেড়ে গেছে। দেশের সিমেন্ট খাতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সিমেন্ট কারখানাগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই বলে দাবি করেন তিনি।

কয়েক মাস ধরে নির্মাণ খাতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল রডের দাম টনপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাড়ছে সিমেন্টের দাম। এতে দেশের নির্মাণ খাতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগেও খুচরা বাজারে কোম্পানিভেদে প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হতো ৩৪৫ থেকে ৩৯০ টাকায়। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ থেকে ৪১০ টাকা। আগামী মাসের শুরুতেই একই মানের সিমেন্ট ৩৮৫ থেকে ৪৩০ টাকায় কিনতে হবে। আর মার্চের মাঝামাঝিতে তৃতীয় দফায় দাম বাড়ানো হলে সিমেন্টের বাজারে অল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের দর পরিবর্তন হবে। এতে বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

  • Courtesy: Bonikbarta Feb 28, 2018

No comments:

Post a Comment