Search

Monday, February 19, 2018

রাজস্ব আহরণ - সাত মাসেই ঘাটতি সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা

আব্বাস উদ্দিন নয়ন



নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় খাতটি থেকে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির আশঙ্কা আগেই করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের রাজস্বে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিও হয়েছে এ খাতটিতেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে শুধু মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব এসেছে। শুল্ক ও আয়কর যোগ করলে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে এনবিআর।

আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক মিলে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এনবিআরের সাময়িক হিসাবে, এর বিপরীতে আলোচ্য সময়ে রাজস্ব এসেছে ১ লাখ ৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রাজস্ব আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ হিসাব করে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ খাতে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে অনলাইন পদ্ধতির কথা চিন্তা করে আয়কর খাতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও ব্যাহত হয়েছে এ প্রক্রিয়া। পাশাপাশি সিগারেট, ব্যাংক, বীমাসহ বৃহৎ খাতগুলো থেকে রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে এনবিআর।

জানতে চাইলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। বকেয়া আদায় ও মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব মামলা চলমান আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও বকেয়া রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কর ও ভ্যাটের জরিপ চালিয়ে করজালের বাইরে যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায় করা হবে। তবে মানুষকে চাপ দিয়ে, কষ্ট দিয়ে কর আদায় করা হবে না। বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেড) করার মাধ্যমে কর আদায় করা হবে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রাজস্ব আহরণে সবচেয়ে বেশি ১৫ শতাংশ ঘাটতি দেখা দিয়েছে ভ্যাটে। ৪৮ হাজার ৯০২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ সময়ে ভ্যাট থেকে রাজস্ব এসেছে ৪১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এ রাজস্ব গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা কম। যদিও ভ্যাট সচেতনতা বাড়াতে ভ্যাট সপ্তাহ, ভ্যাট দিবসসহ নানা কর্মসূচির পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকি রোধে মাঠপর্যায়ে বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করেছে এনবিআর। এ সময়ে ভ্যাট রিটার্নের সংখ্যাও ৩২ হাজার থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৯০ হাজারে উন্নীত করেছে সংস্থাটি।

আয়কর মেলা, আয়কর সপ্তাহ, আয়কর ক্যাম্প আয়োজনসহ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও আয়করেও বড় ধরনের ঘাটতিতে রয়েছে এনবিআর। রাজস্ব আহরণের দ্বিতীয় বৃহৎ খাতটিতে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে আয়কর ও ভ্রমণ করে ৩৮ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করেছে ৩২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এ সময় আয়করে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থবছরের শুরুতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার হার কিছুটা কম থাকায় এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়করের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে আমদানি-রফতানি পর্যায়ের শুল্ক। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৩৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শুল্ক থেকে রাজস্ব এসেছে ৩৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাতে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে ২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় খাতটি থেকে ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর।

বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় এ ঘাটতি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। শেষ মুহূর্তে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে সরে আসাকেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য দায়ী করছেন তারা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা

নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এনবিআরের সক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় এ সময়ে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অর্থবছর শেষে ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির কথা বলা হলেও এটি তার চেয়ে বেশি হবে। তবে প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের একটি রীতি চালু হয়েছে। এবারো তা-ই করতে হবে। এ থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার কারণে পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অনলাইনভিত্তিক নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে আবারো ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ভ্যাট থেকে আহরণের লক্ষ্য ধরা হয় ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর থেকে ৮৭ হাজার ১৯০ কোটি ও শুল্ক বাবদ ৭০ হাজার কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর।

  • Courtesy: Bonikbarta Feb 19, 2018

No comments:

Post a Comment