Search

Saturday, February 24, 2018

ডিএসইর অংশীদার হতে চাপ


·         শেয়ার কিনতে চায় জোট।
·         জোটের অংশীদার ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশের নাম প্যারাডাইস পেপারে।
·         ডিএসইর শেয়ার কিনতে নানামুখী তদবিরের অভিযোগ।



দর প্রস্তাবে পিছিয়ে থেকে এখন নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মালিকানার অংশীদার হতে চাচ্ছে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ও বাংলাদেশের কোম্পানি ফ্রন্টিয়ারের সমন্বয়ে গঠিত জোট। এ জোটের অংশীদার ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশের নাম এসেছে বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত অর্থ পাচার-সংক্রান্ত ঘটনা প্যারাডাইস পেপার কেলেঙ্কারিতে। অর্থ পাচারের জন্য অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে গঠন করা জোট এখন ডিএসইর শেয়ার কিনতে নানামুখী তদবির চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।



জানা গেছে, ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হতে দর প্রস্তাবে অংশ নিয়ে শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখায় চীনের বৃহৎ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ সেনজেন ও সাংহাইয়ের সমন্বয়ে গঠিত জোট এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ারের সমন্বয়ে গঠিত জোট। এ দুটি জোট আলাদাভাবে দর প্রস্তাব করে। তাতে সর্বোচ্চ ২২ টাকা দর প্রস্তাব করে সেনজেন ও সাংহাই জোট। আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ারের জোট শেয়ারের জন্য দর প্রস্তাব করে ১৫ টাকা। এ অবস্থায় গত শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বোচ্চ দরদাতা চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করার বিষয়ে একমত হয় ডিএসইর পর্ষদ। এরপরই দেখা দেয় বিপত্তি। দর প্রস্তাবে পিছিয়ে থাকা জোটের হয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ তৈরি হয়। এ নিয়ে ডিএসইর বর্তমান শেয়ারধারীদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে ডিএসইকে এখন বলা হচ্ছে চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের জোট এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ার জোটের মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ করে মোট ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করার। এতে আপত্তি জানিয়েছে ডিএসইর বর্তমান শেয়ারধারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর শেয়ারধারী প্রভাবশালী একাধিক সদস্য বলেন, দর প্রস্তাবের নিয়ম অনুযায়ী, সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই শেয়ার বিক্রি করা হবে, এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এখন এসে যদি ভাগ-বাঁটোয়ারা করে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে দর প্রস্তাব ডাকার বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেবে।

এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর চেয়ারম্যান আবুল হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলবেন না বলে টেলিফোনের লাইন কেটে দেন।

 

জানা গেছে, সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডিএসইর ওপর চাপ তৈরি করা হয় ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ার জোটের কাছে শেয়ার বিক্রির বিষয়ে।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কেউ যেকোনো অভিযোগ তুলতে পারে। তবে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বৃহত্তর নানা বিষয় বিবেচনা করে। এখনো আমাদের কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রি-সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব আসেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না। এমনকি এ বিষয়ে ডিএসইর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনগত এখতিয়ার নেই। নানা বিষয়ে বিএসইসি আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। পরামর্শ করতে পারে। এটিকে চাপ প্রয়োগ বলে ব্যাখ্যার কোনো সুযোগ নেই।’

 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর অংশীদার হতে এখন আরও বেশি দাম দিতে রাজি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ জোট। সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ জোটের প্রস্তাব করা দামেই ডিএসইর শেয়ার কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে জোটটি।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা করার পর ডিএসইর মোট শেয়ার ২৫০ সদস্যের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা হয়। এসব শেয়ারের মধ্যে ৪০ শতাংশ সদস্যদের নিজেদের জন্য আলাদা করা হয়। বাকি ৬০ শতাংশ শেয়ার সদস্যদের বাইরে বিক্রির জন্য আলাদা করে ব্লক হিসেবে রাখা হয়। এ ৬০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রির জন্য আইনিভাবে নির্দিষ্ট করা ছিল। বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য আইনিভাবে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, আগামী ৮ মার্চ বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তিন দফা বাড়িয়ে এ সময়সীমা নির্ধারণ করেছে বিএসইসি। বিএসইসির নির্দেশনায় এ সময়সীমা আরও বাড়ার আইনি সুযোগ রয়েছে।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে আইনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ প্রক্রিয়ায় আইনের মাধ্যমে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা হয়। ১৩ সদস্যের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক রাখা হয়েছে সাতজনকে। আইনে বিধান করা হয়েছে, সাত স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্য থেকেই সভাপতি নির্বাচিত করতে হবে।

এ ছাড়া পর্ষদে শেয়ারধারী পরিচালক থাকবেন চারজন। পর্ষদে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর জন্য একটি পরিচালক পদও সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের জোট চূড়ান্তভাবে কৌশলগত মালিকানার অংশীদার হওয়ার অনুমোদন পেলে তাদের একজন প্রতিনিধি থাকবেন ডিএসইর পর্ষদে।

 

Courtesy: Protham Alo Feb 24, 2018

No comments:

Post a Comment