আবুল হাসান
চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াসের কাছে তাঁর এক শিষ্য জু কুং জানতে চেয়েছিলেন, ভাল সরকার কেমন? জবাবে তিনি বলেন,"কোনো সরকার জনগণকে পর্যাপ্ত খাবার দেয়া, দেশের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত সৈন্যসামন্ত রাখা এবং দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করলেই তাকে ভালো সরকার বলা যায়। এখন এই তিনটির মধ্যে কোনও একটিকে বাদ দিতে বলা হলে, প্রথমে সৈন্য-সামন্ত বাদ দিতে হবে। বাকী দুটোর মধ্যে একটিকে বাদ হলে,বাদ দিতে হবে খাবার। কারণ শেষ পর্যন্ত সব মানুষই মারা যাবে। কিন্তু জনগণের আস্থা ছাড়া কোন সরকারই টিকে থাকতে পারে না।" মৃত্যু মোকাবেলায় বেপরোয়া অসীম সাহসী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এই জন অাস্থা অর্জনেই যতো ভয়। তাঁর মুখের জজবা আর ক্ষমতার বিলক্ষণ দাপটে নিত্য রক্তগঙ্গা বয়। বৈঠা রক্তরঙে সাজে মসজিদের অাঙিনায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ডানা এতই বিস্তৃত, ছড়ানো, এতোই বিশাল যে মাটিতে তিনি পা রাখতে পারছেন না। অনন্ত আকাশেই ওনার বসবাস। সূর্যের দিকে পিঠ দিয়ে সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এখানে তিনি তাঁর নিজের ছায়াই দেখতে পান আর তাঁর ছায়াই তাঁর আইন। যেমনটা শেখ মণি দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলার বাণী পত্রিকায় শিরনাম করেছিলেন -"আইনের শাসন চাই না, মুজিবের শাসন চাই"। কিন্তু সূর্য কি কেবলমাত্র ছায়াধারী ধাতব পাত্র? সেই আইন যা উনার নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে একজন আখতারুজ্জামানের কাছে অর্পণ করেছে, সেই আইনই যে একদিন উনাকে অর্পণ করবে না অারও কোনও প্রবল শক্তিধরের হাতে সে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি?
জাতি আজ আশাহীন । কূট-অর্থনীতিক চাণক্য যেমন বলেন "চর্চায় না থাকলে জ্ঞান হারিয়ে যায়, অজ্ঞতায় থাকলে মানুষ হারিয়ে যায়,সেনাপতি না থাকলে সেনাদল হারিয়ে যায় আর স্বামী না থাকলে হারিয়ে যায় নারী"। ঠিক তেমনি সরকার না থাকলে হারিয়ে যায় রাষ্ট্র। দেশের সার্বভৌমত্ব অন্যের কাছে বন্ধক রাখলে আর যাইহোক তাকে আর সরকার বলা যায় না।
বয়স ও অভিজ্ঞতার অভাবহেতু ব্যক্তিমানসের জীবন যেমন ভুল-ত্রুটি, ভালো-মন্দের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যায়, ঠিক তেমনি একটি রাজনৈতিক দলও বয়স ও অভিজ্ঞতার অপ্রতুলতায় ভুলত্রুটি, ভালমন্দের ফিউশনে বিবর্তিত হয়। উপরন্তু- "Politics is not a moral prescription" এর তত্ত্ব নিশ্চয়ই রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুসরণ করেই চলবে। তবে গুম-খুন,লুটপাট, দূর্নীতির আওয়ামী অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতির মাত্রাজ্ঞানের সাথে জাতীয়তাবাদী শক্তির তুলনা নিছক দেশরক্ষার ঈমানী দায়িত্বের সাথে প্রতারণা বৈ বেশী কিছু নয়।
নোবেল বিজয়ী ইংরেজ সাহিত্যিক ও নাট্যনির্দেশক ইহুদিপুত্র হ্যারল্ড পিন্টারের কবিতা থেকে শিরনামটি ধার নিয়েছিলাম। আর আলোচনা করেছি রোমান দার্শনিক সেনেকা ও লেবাননের সাহিত্যিক কাহলীল জিবরানের চিন্তার আলোকে। এবার পবিত্র আল কোরআনের আলোয় নিজে মৌলবাদী সেজে অাজকের এ লেখার যবনিকাপাত ঘটাবো।
হযরত নূহ (আঃ) এর কওমে নূহ, হযরত হুদ (আঃ) এর আদ , হযরত ছালেহ (আঃ) এর ছামূদ , হযরত লূত (আঃ) এর কওমে লূত, হযরত শোয়েব (আঃ) এর আল মাদাইন এবং হযরত মূসা (আঃ) ও হারুন (আঃ) এর ফারাও -- এই ছয়টি জাতিকে মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। জাতি হিসেবে তারা অন্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা একে অপরকে সতর্ক করেনি। আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূলগণকে তারা অনুসরণতো করেইনি,উপরন্তু ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল।
শিক্ষায় সীমাহীন নৈরাজ্য, ব্যাংক-বীমা ও শেয়ার বাজারে লুটপাট, পুলিশ ও আমলাতন্ত্রের লাগামহীন অত্যাচারসহ দূর্নীতি-দূর্বৃত্তায়নের প্রধান কারণ হলো গাঁয় মানে না অাপনি মোড়ল ‘স্বনির্বাচিত ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার।’ শেখ সাদি তাঁর গুলিস্তাঁ কাব্যে বলছেন, রাজা যদি কোন গৃহস্থ বাড়ি থেকে বিনামূল্যে একটু লবণও খায় তাহলে বাকী সভাসদরা সে বাড়ীর হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়সহ সবকিছু উজাড় করে দেবে। প্রধান বিচারপতিসহ অারও ২/১ জন বিচারপতিকে দেশছাড়া হতে হয়েছে আর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়াকে নিক্ষেপ করা হয়েছে ‘পতিত’ কারাগারে।
এত অত্যাচার,এত অবিচার এত নৈরাজ্যের পরও যদি আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারি,তাহলে জাতি হিসেবে কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব না? ব্যর্থ রাষ্ট্রের সংজ্ঞাটাইবা কি? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না -- eternal vigilance is the price of liberty - "কেবল চির তীক্ষ্ন নজরদারির মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব"। রাসূল (সাঃ) বলেছেন-"অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণই সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ"। মনে রাখতে হবে,অন্যায়কারী অন্যায় করতে পারে না তোমাদের গোপন ইচ্ছাশক্তি ছাড়া। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেন-"আমি ততক্ষন পর্যন্ত সে জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করি না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়"।
পিথাগোরাস পৃথিবীর সবকিছুকেই সংখ্যা মনে করতেন। তেমনভাবে এই সরকারও সবকিছুকেই ৩২ , ৫৭ এর মত সংখ্যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়!! এই সংখ্যা দুটোর অঙ্ক পরিবর্তন করলে হয় ২৩ আর ৭৫. একজনের ২৩ বছরের সংগ্রাম ৭৫ এ শেষ হয়ে গেল। ৫-১৫-২৫-৭৫ থেকে ৬৩২ হয়ে ১১৬২ এর পরিণতি কোন সংখ্যায় গিয়ে শেষ হয়, তা দেখা সময়ের ব্যাপার।
প্রায় ৫৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দে চৈনিক সেনাপতি সান জু’র লেখা ,"The art of war" বইয়ের নীতি অনুসারে "Winning war without giving fight" অর্থাৎ যুদ্ধ না করে যুদ্ধ জয়, বেগম খালেদা জিয়ার আরেকটি কালজয়ী সিদ্ধান্ত। তবে সরকার এই অহিংস কর্মসূচিগুলোকে দিয়ে বিএনপিকে পরিমাপ করার অর্থই হবে দূর্বল ফেনার সাহায্যে সমুদ্রের ক্ষমতাকে গণনা করা। হোঁচট খাওয়া বাকশক্তি অধিকতর শক্তিশালী করতে পারে একটি দূর্বল জিভকেও। কারণ সাম্রাজ্যবাদী রোমের বিরুদ্ধ অন্যতম সেরা বিশ্ব সেনাপতি জাতীয়তাবাদী হানিবাল-এর বাহিনীকে উইস্টন চার্চিলের মতই বলতে শুনেছি-"We shall never surrender". শুরুটা হ্যারল্ড পিন্টারকে দিয়ে করেছিলাম। জাতিকে সতর্ক করে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁকে দিয়েই আবার শেষ করি -
পালাবার পথ নেই
---
---
তুমি তোমার পিছনটাকে সামলে রেখো।