Search

Wednesday, March 14, 2018

হেফাজতে মৃত্যু কি এখন ‘স্বাভাবিক’?

আলী রীয়াজ



উচ্চ আদালতের দেওয়া ৩৯৬ পৃষ্ঠার একটি রায়ে অন্তর্ভুক্ত নির্দেশনা যখন এক সপ্তাহের মধ্যেই দুই দফা লঙ্ঘিত হয় এবং একজন তরুণের প্রাণহানি ঘটে, অথচ এ নিয়ে আলোচনার কোনো লক্ষণ দৃষ্টিগ্রাহ্য হয় না, তখন তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। শুধু তা-ই নয়, এর একটি ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে দেশে বিরাজমান একটি আইনের বরখেলাপের আশঙ্কাও সুস্পষ্ট। তারপরও না গণমাধ্যমের আলোচনায়, না মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখতে পাই; মানবাধিকার কমিশনের কাছে এ খবর পৌঁছেছে এমন লক্ষণ নেই। অথচ এই ঘটনাগুলো ঘটেছে তখন, যখন প্রায় প্রতিদিনই আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষদের কথা শোনা যায়; আইনের স্বাভাবিক গতির কথা না হয় না-ই বললাম।

২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়ের পূর্ণ ভাষ্যের বিষয় ছিল ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল খারিজ। হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন তার ১৩ বছর আগে, প্রধান বিচারপতিসহ চারজনের বেঞ্চ হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রেখে কিছু বিষয়ে সংশোধনী যুক্ত করে রায় দিয়েছিলেন ২৪ মে। আদালতের যেসব নির্দেশনা ছিল, তার মধ্যে ১৬৪ ধারার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছিল যে সরকারের হেফাজতে থাকার সময় কারও ওপর নির্যাতন করা যাবে না। নবম সংসদের শেষ দিনগুলোতে পাস করা ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) বিল, ২০১৩’ -এও সুস্পষ্টভাবেই সরকারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় কারও ওপর নির্যাতন চালানোকে অপরাধ বলে বর্ণনা করে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

অথচ গত ৬ মার্চ পুলিশ নিজেদের পরিচয় না দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারীকে আটক করে, যা সুস্পষ্টভাবেই ছিল ৫৪ ধারার বিষয়ে ওই রায়ে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার বরখেলাপ (মিজানুর রহমান খান, ‘আদালতের দিকনির্দেশনার লঙ্ঘন ঘটেছে’ প্রথম আলো, ১০ মার্চ ২০১৮)।

ওই দিন মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে ছাত্রদলের একজন নেতা জাকির হোসেনকে রমনা থানার পুলিশ আটক করে। তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শনিবার রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার সকালে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।

তাঁর পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগকে আমাদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। কেননা, ঘটনাপরম্পরা অবশ্যই এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে ইঙ্গিত দেয় না।

২০১৩ সালের আইনে হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তা আমরা স্মরণ করতে পারি। ‘হেফাজতে মৃত্যু’র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তার হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু, অবৈধ আটকাদেশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গ্রেপ্তারের সময় কারও মৃত্যু, কোনো মামলায় সাক্ষী হোক বা না হোক জিজ্ঞাসাবাদের সময় মৃত্যু। আর ‘নির্যাতন’ বলতে বোঝানো হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। জাকির হোসেনের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে এ দুইয়ের প্রাসঙ্গিকতা আছে। এসব বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতা সে কারণেই আমাকে বিস্মিত করে।

হেফাজতে মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আদালতের নির্দেশনার সূচনা সেই ১৯৯৮ সালেই। এর সূচনা হয়েছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কারণেই। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট সন্দেহবশত কাউকে গ্রেপ্তার ও তদন্তের নামে রিমান্ডে এনে আসামিকে শারীরিক নির্যাতন করা থেকে নিবৃত্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না মর্মে সরকারের ওপর রুল জারি করেছিলেন। এই আইনগুলো নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পটভূমি ও ইতিহাস সম্প্রতি ৫৪ ধারার লঙ্ঘন নিয়ে মিজানুর রহমান খানের আলোচনায়ই আছে, আমি তার পুনরুক্তি করতে চাই না।

মনে রাখা দরকার যে আদালত ১৮৯৮ সালের তৈরি করা এই আইন ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনের জন্যই বলেছিলেন; আর সংশোধনের আগ পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক আমলের এই আইন ভারতে বদলে গেছে ১৯৭২ সালে, কিন্তু বাংলাদেশে তা শুধু বহালই আছে তা নয়, এর ব্যবহার এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কতটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, সেটা প্রতিবছর হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ২৬০ জন হেফাজতে মারা গেছেন; ২০১৬ সালে এক বছরেই মারা গেছেন ৭৮ জন।

নিয়মিতভাবে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে আদালতে মামলা হয় একেবারে নগণ্য। তার দুটি কারণ আমরা সহজেই চিহ্নিত করতে পারি। এর একটি হচ্ছে অভিজ্ঞতা। যাঁরা এ বিষয়ে খবর রাখেন, তাঁরা নিশ্চয় জানেন যে ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র‍্যাবের হেফাজতে নিহত শাহনূর আলমকে কেন্দ্র করে কী ঘটেছিল।

নবীনগরের বগডহর গ্রামের বাসিন্দা শাহনূর আলমকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে র‍্যাব ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়কের বিরুদ্ধে থানায় মামলার দায়ের করার চেষ্টা করেন তাঁর ভাই মেহেদী হাসান ৷ থানা মামলা না নেওয়ায় ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) বিল, ২০১৩’ আইনের আওতায় মামলা করতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নাজমুন নাহার শুনানি শেষে র‍্যাবের ওই অফিসারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত ৷ এই নির্দেশ দেওয়ার পর ওই বিচারককেই ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর এই মামলার অগ্রগতি সহজেই অনুমেয়। এই অভিজ্ঞতা খুব উৎসাহব্যঞ্জক বলে ভুল করার কারণ নেই।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এই আইন বিষয়ে পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি। ২০১৫ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই আইনের ১৪টি ধারা ও উপধারা সংশোধনী চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যাতে আইনের ৭টি ধারা বিলুপ্ত করার সুপারিশ আছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ‘পুলিশ সপ্তাহে’ পুলিশের যেসব দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়েছে, তাতে এই আইনের ‘সংশোধনী’র কথাও আছে। ফলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সাহস পান না।

কিন্তু আমার কাছে যে বিষয়টি বেদনাদায়ক বলে মনে হয় তা হচ্ছে, এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একধরনের নীরবতা। যদিও এ নিয়ে তাদের চেষ্টায় সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল, এখন তাদের দ্বিধা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী? গত এক দশকে আমরা দেখেছি কী করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ‘স্বাভাবিক’ বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে, কী করে গুমের ঘটনাকে বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।

হেফাজতে হত্যার ক্ষেত্রেও এখন প্রায় সেই অবস্থাই তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসবের পেছনে কাজ করেছে এই ধারণা যে যাঁরা হেফাজতে মারা যাচ্ছেন, যাঁরা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন, যাঁরা গুম হয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা আমার কেউ নন, কিংবা তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাসের সঙ্গে আমি একমত নই। কিন্তু বেঁচে থাকার অধিকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেবল এক দলের জন্য প্রযোজ্য, অন্যের জন্য নয়-এমন ব্যবস্থা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি।

  • প্রথম আলো/১৪-৩-১৮
  • আলী রীয়াজ: (যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর)

আওয়ামী নেতার অপহরণ চক্র

  • ১০ জনের অপহরণ দলে আছেন আ.লীগ-ছাত্রলীগ নেতা 
  • অপহরণের পর নির্যাতন করে টাকা আদায়



বাবা সেলিম মোল্লা (৫০) হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ছেলে রাজিবুল হাসান ওরফে রাজীব (২৭) একই উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁরা দুজনে মিলেই নেতৃত্ব দেন একটি অপহরণ চক্রের। চক্রের অন্য সদস্যরাও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রোববার রাতে এই দুজনসহ ১০ জন ধরা পড়েন র‍্যাবের হাতে। র‍্যাব বলছে, এই চক্রের লোকজন ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নির্যাতন করে স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। 

শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে মো. জাফর ইকবাল (৪০) এবং মো. মিরাজ গাজী (৩৫) নামের দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান তাঁরা। তাঁদের মুঠোফোন থেকে স্বজনদের কাছে টাকাও চাওয়া হয়। জাফরের বোন শুক্রবার রাতেই মানিকগঞ্জে গিয়ে নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। আরও টাকা পাঠানোর জন্য মিরাজের স্বজনদের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়, যার সূত্র ধরেই চক্রের সন্ধান পায় র‍্যাব। 

গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এই চক্রটির সম্পর্কে তথ্য দেয় র‍্যাব।

রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে র‍্যাব–২-এর ২৫ জন কর্মকর্তা হরিরামপুরের কালোয়া গ্রামে সেলিম মোল্লার আলিশান বাড়িতে ঝটিকা অভিযান চালান। বাড়ির বিভিন্ন তলা ও কক্ষ থেকে তাঁরা ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেন। তল্লাশি চালিয়ে ছয়টি পিস্তল, নয়টি ম্যাগাজিন, ৩৬টি গুলি, সাতটি চায়নিজ কুড়াল, চারটি চাপাতি এবং নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। বাড়ির একটি কক্ষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় অপহৃত জাফর ও মিরাজকে।

গ্রেপ্তার অন্য আটজন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন (৪৭) এবং যুবলীগের কর্মী মো. নিরব আহম্মেদ টিটু (২৯), মো. আবদুর রাজ্জাক (৩৫), মো. তারেক হোসেন (৩১), মো. আবুল বাশার বিশ্বাস (৩৩), মো. রুহুল আমিন (৩৫), মো. তারেক হোসেন পুলক (২৬) ও মো. তুহিন বিশ্বাস (৩০)।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, সেলিম মোল্লার তিনতলা বাসার পুরোটাতেই তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা থাকত। এর একটি কক্ষে অপহৃত ব্যক্তিদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। আভিযানিক দল বলেছে, কক্ষটিকে ‘টর্চার করার মতো একটি প্লেস’ বলা চলে। 

প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি অপহরণ করে অত্যাচার করে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা আদায় করে আসছিল। সেলিম মোল্লা বেশ অর্থ–সম্পদের মালিক হয়েছেন এলাকাতেই। সে বিষয়গুলোও পরবর্তী সময়ে তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

উদ্ধার হওয়া মো. জাফর ইকবাল ও মো. মিরাজ গাজী প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার সকালে ব্যবসায়িক কাজে তাঁরা দুজন ফার্মগেটে এসেছিলেন। বিজ্ঞান কলেজের সামনে তাঁরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় একটি মাইক্রোবাস এসে তাঁদের সামনে দাঁড়ায়। ধানমন্ডি কোন দিকে জানতে চায়। তাঁরা যখন তাদের দিক বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন দু-তিনজন নেমে তাদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা দিয়ে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর আনুমানিক দু-তিন ঘণ্টা একটানা চলার পর একটি জায়গায় দাঁড়ায়। তাঁদের চোখ যখন খোলে, তখন একটি কক্ষের মধ্যে ছয়-সাতজন লোক তাঁদের সামনে। তারা বলে ‘টাকা দে’। তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ঘোর কাটার আগেই তাঁদের বেতের লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু করে। একপর্যায়ে কাপড় খুলে লুঙ্গি পরায়। হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে একটি পাটাতনের ওপর শোয়ায়। গলার কাছে কিছু একটা ধরে। ছটফট করতে থাকলে মুখের স্কচটেপ খোলে। টাকা দেওয়া হবে বলে জানালে মারধর থামে।

জাফর বলেন, অপহরণকারীরা তাঁর ফোন থেকে তাঁর বোনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। অপহরণকারীদের কথা অনুযায়ী তিনি চেকবই ও নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে মানিকগঞ্জে যান। অপহরণকারী সদস্যদের একজন তাঁর বোনের সঙ্গে দেখা করে চেক বই ও টাকা নিয়ে আসে। এরপর মিরাজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর মুক্তিপণ পাঠানোর জন্য সেলিম মোল্লার ছেলে রাজিবুল হাসানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়।

জাফর বলেন, শুক্রবার দুপুরে শুধু একবেলা তাঁদের খেতে দিয়েছিল অপহরণকারীরা। নির্যাতনের একপর্যায়ে হাত-পা বেঁধে দুজনকেই চালের আলাদা বস্তায় ঢুকিয়েছিল। বলেছিল নদীতে ফেলে দেবে।

র‍্যাব–২-এর আভিযানিক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ আলী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মিরাজের স্বজনেরা রাজিবুলের অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। রাজিবুল যখন সেই টাকা তুলতে যান, তখনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতে তাঁদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। তাঁরা যখন অভিযান চালান, তখন সেখানে সবমিলে ১৫-২০ জন ছিল। তাদের মধ্য থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে তাঁরা গ্রেপ্তার করেন।

স্থানীয় লোকজন এবং দলীয় একাধিক নেতা-কর্মী জানান, সেলিম মোল্লার গ্রামের বাড়ি হরিরামপুর উপজেলার কামারঘোনা গ্রামে। প্রায় চার বছর আগে তিনি এই এলাকায় বাড়ি করেন। তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি করেন। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে তিনি বেশ অর্থ ও বিত্তশালী হয়ে ওঠেন। তিনতলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ির দক্ষিণ পাশে দুই তলা আরেকটি ভবন নির্মাণ করেছেন। চার-পাঁচ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিন তাঁকে রাজনীতিতে আনেন, পদবি দেন। এ ছাড়া তাঁর ছেলে রাজিবুল হাসানও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ।

সেলিম মোল্লা স্থানীয় ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরপর সভাপতিও। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য রফিকুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রায় আট বিঘা জমিতে মাটি ভরাট করে ৩০০ দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন সেলিম মোল্লা। এর থেকে উপার্জিত তিন কোটি টাকার বেশি সেলিম মোল্লা আত্মসাৎ করেন।

  • প্রথম আলো/ ১৪-৩-১৮  


SC stays Khaleda’s bail until Sunday


The Appellate Division on Wednesday stayed till Sunday the bail order granted to Bangladesh Nationalist Party chairperson Khaleda Zia in the Zia Orphanage Trust corruption case.

A bench of four judges, chaired by Chief Justice Syed Mahmud Hossain also asked the Anti-Corruption Commission to file regular petition by Sunday seeking stay on bail granted by the High Court on Monday.

Khaleda’s lawyer, however, said the court stayed the bail without hearing them.

Earlier on Tuesday, Appellate Division chamber judge Justice Hasan Foez Siddique sent the two petitions to the full bench of the division without passing any order.

Advocate Sufia Khatun filed a petition on behalf of the state while lawyer Khurshid Alam Khan lodged another one on behalf of the Anti-Corruption Commission. On Monday, the High Court granted the interim bail to Khaleda Zia.

On February 22 last, BNP Chairperson Khaleda Zia filed a petition with the High Court seeking bail in the Zia Orphanage Trust graft case. On the day, the HC asked the lower court to submit all the relevant documents within 15 days.

On February 25, Khaleda Zia failed to secure bail in the case as the High Court said it would pass an order on her bail petition upon receiving all the documents relating to the judgment from the lower court.

On February 8 last, the Dhaka Special Court-5 convicted the former Prime Minister and BNP chairperson and sentenced her to five years' imprisonment in the Zia Orphanage Trust graft case. She was then sent to old central jail at Nazimuddin Road in the city.

  • Courtesy: New Age/Mar 14, 2018

Tuesday, March 13, 2018

আমাদের রাষ্ট্রপতি বনাম ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি

রাতুল চৌধুরী 


আমাদের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এমূহুর্তে ভারত সফরে আছেন। প্রথমে `সাতবোনের' মূল রাজ্য আসাম। ছিলেন গুয়াহাটির পাঁচতারা হোটেল ‘তাজ ভিভান্তে’তে। তিনি ভারতে তাঁর এই মঙ্গলযাত্রায় পরিদর্শন করেছেন যাদু, কল্পনা ও কিংবদন্তীর রহস্যে ঘেরা কামাক্ষ্যা দেবীর বহুল বিশ্রুত মন্দির । কিন্ত অসমের কিছু অসম উগ্রবাদী লোক সম্ভবত ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। তারা আমাদের পত্রপত্রিকার প্রকাশিত খবর অনুযা‌য়ী তাঁকে অপমান করতে তাঁর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে। তারা তাঁকে ভারত ছেড়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে শ্লোগানও দেয়।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আসামের উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন হিন্দু যুব পরিষদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হোটেলের সামনে অতিথির বিরুদ্ধে ‌বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আর কুশপুত্তলিকা দাহ করে ‘আবদুল হামিদ গো ব্যাক’ ও ‘বাংলাদেশ হুঁশিয়ার’ বলে  শ্লোগান দেয়।
তাদের অভিযোগ্, বাংলাদেশের মাটিতে ‘ভারতবিরোধী শক্তি’ চীন ও পাকিস্তানকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের আইএসআইকে দিয়ে আসামে বাংলাদেশের মুসলমান অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। আর এই তথাকথিত অভিযোগ নিয়ে আসাম যখন টালমাটাল আর বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন  তখন আমাদের রাষ্ট্রপতির  সফর একটা বোনাস কিনা তা সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।   

এ হলো রাষ্ট্রপতির ভারত দর্শনের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা।

এবার আমরা ভারতের একজন কংগ্রেস দলীয় সাবেক রাষ্ট্রপতির কথায়  যিনি কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরার পরম আস্থাভাজন ছিলেন, যুব কংগ্রেসের উদীয়মান নেতা ইন্দিরা তনয় সঞ্জয় গান্ধীর  বিশ্বস্ত সেবক ছিলেন, যিনি আবার বিজেপির পার্থসারথী হতেও সব্যসাচী, যিনি নড়াইল কন্যার পাণিগ্রহণ করায় আমাদের দেশের একজন বরেণ্য  জামাই, যিনি বাংলাদেশী কিছু লোকের কাছে দয়ার অবতার, যাঁর আশির্বাদে বাংলাদেশের অনেকে ‌বিনাভোটে এমপি পর্যন্ত হয়ে আমাদের সংসদকে সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি কিছুদিন আগে বাংলাদেশ মানে স্বীয় শ্বশুরালয় ঘুরে গেলেন। আমাদের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট দিযে ‘জামাইষষ্টির ‌ বোধ হয় যোগ্যতম  সম্মান দিল।তিনি আপ্লুত হয়ে মূখ খুললেন। বললেন, ‘রথ দেখাও হলো কলা বেচাও হলো।’  চট্রগ্রামে দেবী মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ দর্শনে তিনি গিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। তবে মাস্টারদা’র কথা তিনি ভোলেননি বলেই আমরা জানি।তবেআমাদের রাষ্ট্রপতি কামাক্ষায় গিয়ে ভুলটা করেননি। কারণ তিনি সম্মানিত অতিথি! ভারতের স্বাধীন গণতন্ত্রচর্চয় আর যাই হোক তিনি তো আর বাদ সাধতে পারেন না। বাংলাদেশের সরজমিন  হাল যা-ই হোক। তবে যদি বাংলাদেশে  এ ব্যাপারটা হতো  তাহলে কি হতো সেটা হনুমানের নয় বরং অনুমানের বিষয়। তবে সে অনুমান আপাতত থাক।

অবশ্যই বিদেশী মেহমানের প্রতি অভব্যতা নয়। আর প্রণববাবু এমনই অতিথি যিনি না ‌ দেশী, না বিদেশী।আমরা তাঁকে আমাদের কন্যা সম্প্রদান করেছি।  আমরা সেটা বিশ্বাস করি আর সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী কাকাবাবুকে নিজ হাতে রেঁধে খাইয়েছেন। কারণ কন্যা হিসেবে তার কিছু দেওয়ার  তো ছিলই পিতৃতুল্য প্রণব বাবুকে কেননা যখন বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বরদের নির্মম তাণ্ডব চলছে রক্তের বন্যায় ভাসছে তখন প্রণববাবু  পিতৃ কর্তব্যে হাসিনা-রেহানাকে নিয়ে হরিয়ানায় পিকনিক করিয়েছেন  নিজে সপরিবারে  সঙ্গে গিয়ে ( সূত্র  : The  Dramatic Decade: Indira Years, Pranab Mukhejee)। আমরা জা‌নি নানা সময়ে বাংলাদেশের নাগরিকেরা তাকে নানা সময়ে নানা অবদার জানিয়েছে আর তিনি জামাই লজ্জায় সেসব রাখতেও বাধ্য হয়েছেন। আবদারতো আমরা জানাতেই পারি কেননা তিনি ভারতের বিজেপি সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়তে তিনিই আমাদের সোনালি যোগসূত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওদিকে,  আমাদের পত্রপত্রিকায় দুষ্টলোকেরা অনেক কিছুই রটিয়েছে এই বলে যে তিনি বাংলাদেশে নানা ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে সেটা যদি রম্ভা বেচার কাহিনী  হয়েই থাকে তাতে আমাদেরআগ্রহ নেই। 

তবে আমাদের রাষ্ট্রপতি যে এ ধরনের কাজ করবেন না তা আদাজল খেয়েই বলা যায়। আমরা যেটা জানি ভারততীর্থ  দর্শন করে অবশ্যই তিনি নতুন করে বিমুগ্ধ হবেন যেমন তিনি সিঙ্গাপুর সফর করে সেদেশ সম্পর্কে মুগদ্ধ হয়েছেন আর মনে মনে বলেছেন, আহা! এমন যদি হতো।

কিন্ত তা হবার নয়।  রাষ্ট্রপতির এ স্বপ্নটা খোঁয়ারি থেকে যেতে বাধ্য। সিনিয়র সিটিজেনদের প্রতি সিংহপুরে কি আচরণ করা হয় তানিয়ে তিনি ভাববিহ্বল। কিন্তু তাঁর দেশের সপ্ততিপর নারীকে নিয়ে কী করা হচ্ছে? কেন পুরনো জনমানব‌হীন পড়ো বন্দিখানার জিন্দিগানি কেন একজন ভোগ করবেন বিনা দোষে?  কেন বলা হবে এতিমের টাকা খাওয়ায গজব পড়েছে! বিচারক দূর্নীতির জন্য তাঁ‌কে জেলে পাঠাননি সেটা  তিনি  করেছেন তথাকথিত ব্রিচ অব ট্রাস্ট-এর কারণ দেখিয়ে।  একই সুবাদে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে  যেমন কিছু ভার‌তীয়দের আচরণের জন্য তাকে ঠোঁট সেলাই করে থাকতেই হবে এখ‌ানেও তাঁকে মৌনী থাকতেই হবে। উপায় নেই গোলাম হোসেন। উপায় নেই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির নি‌জের জবানীর `ঝিন্দের ‘বন্দি'র।   

Why the endless bailouts of state-owned banks?


The government has just announced a fresh bailout package to the tune of Tk 20 billion (approximately USD 250 million) so that they may meet some of their capital shortfalls. The state-owned banks (SoBs) that are getting their troubled coffers replenished are Sonali Bank, Janata Bank, Rupali Bank, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank, and Grameen Bank.

The bailout package is 10 percent of the total capital shortfall of these banks, which is a pittance to the bailout amount demanded by these banks which was to the tune of Tk 203.98 billion! While the package is a mere fraction of what was demanded, the fact remains that the bailout is being given without initiating any meaningful reforms in these graft-ridden banks.

When we look at recent media reports about one-third of the SoBs being held hostage to 20 defaulted borrowers, and without any concrete steps to take them to task for loan recovery, we begin to comprehend how bad the situation is in these SoBs. Indeed, going by historical data, the government has been bailing out many, if not most, of these banks over the last four years with billions of taka which could have been spent on more productive sectors of the economy. The idea of “recapitalisation” took on a whole different meaning since the beginning of the government's first tenure.

Before the latest bailout, Tk 14,505 crore had been handed out as “bailout” money for these ailing institutions since 2009. As pointed out recently by Dr Ahsan H Mansur, executive director of independent think-tank Policy Research Institute, banks have been asking for money again and again because the money has gone down the drain, or to put it in another fashion, in the pockets of corrupt and politically connected people.

Although the government appears to have attempted to rein in what has fast developed into a bottomless basket case scenario, the Tk 20 billion allocation is being spent to meet Basel-III requirements. It is astonishing to find indignation coming from bank officials of troubled banks that they are not getting what they have been demanding. The national exchequer is not a lottery fund for hopeless financial institutions. If we look at government data, we find that the government has injected Tk 106.22 billion into the coffers of SoBs and other financial institutions, including privately owned IFIC bank over a five-year period (2012-2017).

Why are we allowing the continuation of a failed system of bank governance in these institutions? Who are we serving by throwing away public money? Despite multi-billion taka scams that have rocked the financial base of this country over the last so many years, the government has failed to check corrupt practices in SoBs. It has failed to jail bankers implicated in corrupt practices. No, we have done none of that. What we have done instead is offer more of the same; more money to be plundered with impunity. Not just any public fund but taxpayers' hard-earned money!

Indeed, from what has been published in this paper, taxpayers' money—thousands of crores of it—has been diverted from development expenditure to pay for these handouts to SoBs. Since its tax money paying for the rich-and-infamous to loot our banks, it makes perfect sense for the government to keep squeezing us of our earnings through innovative ways, either through revamped VAT or excise duty policies on bank deposits.

There have been attempts by some to make a comparison with the India experience of recapitalising its banks to the tune of USD 14 billion under the Indrodhanush Recapitalisation Scheme as an excuse for our bailout. The circumstances that led to Indian banks running into bad loans had everything to do with huge exposure to financing mega infrastructure projects that got delayed by years of bureaucratic red tape. Our situation is vastly different. Our SoBs have not been making sensible investments into projects. No, we have been throwing precious billions away to finance dubious projects of dubious business entities.

Hence, the attempt to compare our case with that of India is flawed to begin with. Since we are on the subject, readers may be interested to learn that the Indrodhanush scheme did not come free to the banks; it entailed a series of reforms that the Indian banks had to initiate in their respective institutions. These included the improvement of due diligence and making provisions for specialised monitoring for loans above Rs 2.5 billion that allowed for bad loans to accrue.

What exactly have we done in this regard? We have practically no accountability, no liability and no transparency in SoBs. Our skepticism about the “recapitalisation” scheme launched by the government to bail out banks stems from these failures by our policymakers, to do what needs to be done, to make these sick banks healthy again. As things stand now, there will be no end to these bailouts. We will be throwing away public money every fiscal so that it may be siphoned off by new groups of defaulters. Fraudulent lending to dubious borrowers has become the name of the game. All that is required is the right political linkages because SoBs have politically appointed board members who wield considerable influence over loan sanctioning.

  • The Daily star/13-3-18

সব দলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হোক সভা–সমাবেশের অধিকার


সম্পাদকীয়


কয়েক দিন ধরে বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও ধরপাকড়ের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে সভা করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি চেয়েও তা মিলছে না।

আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির তরফে যে আবেদন করা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অনুমতি মেলেনি। এই সরকারের আমলে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা বিএনপির জন্য এটাই প্রথম নয়। বরং সভা-সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়াই যেন তাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে।

আমাদের সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধানপ্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু আমরা লক্ষ করছি উল্টো প্রবণতা।

সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলসহ বিরুদ্ধ মতাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের এই অধিকার প্রায়ই লঙ্ঘিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো দল বা সংগঠন সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের ওপর নির্দয়ভাবে বলপ্রয়োগ করে। এমনকি নারীরাও লাঞ্ছনাপূর্ণ নির্যাতনের শিকার হন। শনিবার কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের মিছিলেও পুলিশকে একই ভূমিকায় দেখা গেছে।

সম্প্রতি বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা ও পণ্ড করা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে যাওয়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোথাও রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করে না।

কিন্তু আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তায় সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন না করলেও তাদের কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হয় এবং তা ব্যাপক জনদুর্ভোগের কারণ ঘটায়। গত সাতই মার্চের কর্মসূচি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। সেদিন সভাগামী মিছিল থেকে তরুণী লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকেও এ ব্যাপারে পক্ষপাতমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো অথবা সরকারের সমর্থক অন্য কোনো দলের সভা–সমাবেশে পুলিশ সাধারণত বাধা দেয় না। তাদের সব বাধা শুধু সরকারবিরোধী দল ও সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে। সরকারবিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রেই শুধু জনশৃঙ্খলার যুক্তি তুলে ধরা হয়। পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেন।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার একদিকে রাস্তায় বিরোধী পক্ষকে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না, আবার অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতিও দিচ্ছে না। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে, ওয়ার্কার্স পার্টি জনসভা করছে। বিএনপি কেন সেই সুযোগ পাবে না?

এটা ঠিক যে দল বা সংগঠনই সভা-সমাবেশ করুক না কেন, তাতে জনগণ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা দরকার। কোথাও রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা হলে তার প্রভাবে আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তাসহ সব সড়কের জন্যই এ কথা প্রযোজ্য।

সমাবেশ ও জনসভার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত। কর্মদিবসে জনসভা না করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করার বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকেও একমত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে যানজটে নাকাল নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

  • Prothom Alo/Mar 12, 2018

Monday, March 12, 2018

১০ শতাংশের হাতে সবকিছু কেন্দ্রীভূত হচ্ছে

ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ



দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ। আয় বণ্টন ব্যবস্থার এ কেন্দ্রীভবনের জন্য রেন্ট সিকিং (লুটপাট ও দুর্নীতি) প্রবণতাকে দায়ী করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। সংস্থাটি বলছে, আয়ের এত বড় অংশ কীভাবে মাত্র ১০ শতাংশের হাতে কুক্ষিগত হলো, তা বুঝতে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে অবাধে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়া, পুঁজিবাজার কারসাজি, কর ফাঁকি, সরকারি কেনাকাটা ও ব্যয়ে দুর্নীতি— সর্বোপরি ভূমি দখলের ঘটনাগুলোই যথেষ্ট।

এ প্রক্রিয়ায় গুটিকয় মানুষের হাতে আয় বণ্টন কেন্দ্রীভূত হওয়ার অর্থ হলো, জাতীয় আয়ে বাকিদের অংশ কমছে। ইউএনডিপি বলছে, আয়ের কেন্দ্রীভবন এত দ্রুত ঘটছে যে, সম্পদশালী পরিবারগুলো আরো বেশি ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে আরো বেশি নাজুক হচ্ছে সবচেয়ে দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ উপাত্তের ভিত্তিতে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনডিপি। এতে আয় ও ভোগব্যয় বৈষম্য, সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আয় ও ভোগব্যয় বৈষম্যের অংশটিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

কোনো দেশে আয়বৈষম্য কতটা, তা পরিমাপের নির্দেশক জিনি সহগ। শূন্য থেকে ১— এ পরিসীমার মধ্যে এটি হিসাব করা হয়। জিনি সহগের মান যত কম হয়, আয়বৈষম্য তত কম বলে ধরে নেয়া হয়। আর সহগের মান উচ্চ হলে তা আয় বা সম্পদ বণ্টনে অধিকতর অসমতা নির্দেশ করে। জিনি সহগের মান শূন্য হলে তা দ্বারা চরম সমতা (অর্থাৎ সবার আয় সমান) বোঝায়। সহগটির মান যদি বাড়তে বাড়তে দশমিক ৫ বা তার বেশি হয়, তার অর্থ হলো— দেশে আয়বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বিবিএসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি বলছে, ২০১০ সালে দেশে জিনি সহগের মান ছিল দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৮৩-এ। একই সময়সীমায় গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগের মান দশমিক ৪৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৫-এ। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এ মান ২০১০ সালে ছিল দশমিক ৪৫। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫-এ।

আয়বৈষম্যের এ চিত্র থেকে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইউএনডিপি। প্রথমত. দেশে আয়বৈষম্য ছয় বছরে অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত. এ সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক অংশটি আরো দরিদ্র হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত. সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যেই আয় আরো কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। চতুর্থত. দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি।

উন্নয়নের একটা পর্যায়ে সমাজে আয়বৈষম্য বাড়তে পারে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম। তবে এর লাগাম টানতে দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. শামসুল আলম বলেন, ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সত্ত্বেও কেন আয়বৈষম্য বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলগুলোয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদারের পাশাপাশি শিক্ষা খাতেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে।

দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী আরো নাজুক হচ্ছে মূলত জাতীয় আয়ে তাদের অংশীদারিত্ব কমার কারণে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে ইউএনডিপি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ২০১০ সালেও জাতীয় আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ খানার অংশীদারিত্ব ছিল দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ২৩ শতাংশে। এর বিপরীতে সবচেয়ে সম্পদশালী ৫ শতাংশ খানার আয় অংশীদারিত্ব ২৪ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯ শতাংশে। আয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০ ভাগ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ১০ শতাংশের আয়ের অংশীদারিত্ব ছয় বছরে ৩৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বলেন, কোনো অর্থনীতি যখন দ্রুতগতিতে এগোয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা আয়বৈষম্য তৈরি হতে পারে। তবে সেটি কতটুকু সহনীয় তা দেখার বিষয়। ব্যাপক অনিয়ম ও ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের মতো যেসব ঘটনা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, সেগুলো অর্থনীতিতে ভালো কোনো সংকেত দিচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াও বৈষম্য দূরীকরণের আরো কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে, সেটি ভেবে দেখতে হবে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও মেধাভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি বৈষম্যও কমানো যাবে না।

আয়বৈষম্যের চিত্রের পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে ভোগ ব্যয়েও। ভোগ ব্যয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০ ভাগে ভাগ করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে মোট জাতীয় ভোগ ব্যয়ে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশের অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশে; ২০১০ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশের ভোগ ব্যয়ে অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশে।

ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোগ ব্যয়ের দিক থেকে এ সময় শহরাঞ্চলে বৈষম্যের মাত্রা সামান্য বাড়লেও গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে অনেকখানি। ভোগ ব্যয় সূচকে দেশের গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগের মান ২০১০ সালের দশমিক ৩ থেকে এক লাফে বেড়ে হয়েছে দশমিক ৯। আর শহরাঞ্চলে তা দশমিক ৩৩ থেকে বেড়ে দশমিক ৩৪-এ দাঁড়িয়েছে।

ইউএনডিপির ন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যাডভাইজর শামসুর রহমান বলেন, সরকারের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউএনডিপি। প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

ইউএনডিপি বলছে, ক্রমবর্ধবান এ বৈষম্য থেকে উত্তরণে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছে তারা। এজন্য রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সুপারিশে ইউএনডিপি বলেছে, একটি প্রগতিশীল ও বিস্তৃত প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা বিবেচনায় বলা যায়, এক্ষেত্রে ভ্যাট হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ সমাধান। এছাড়া নীতিমালা ও আইনের প্রয়োগ এবং মানবসম্পদ ও দরিদ্রদের আয়বর্ধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সম্পদ ও আয়ের বহুমুখী বণ্টন এক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাময় সমাধান হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া আয় বণ্টন পরিস্থিতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের সম্ভাব্য আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে মানবসম্পদ উন্নয়ন। এতে দরিদ্রদের জন্য উন্নততর ও বেশি আয়ের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাবে। একটি শিক্ষিত ও সামর্থ্যবান শ্রমশক্তি একদিক থেকে যেমন আয় বণ্টন পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবে, তেমনি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

কার্যকর আর্থিক নীতিমালা প্রয়োগের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমেও আয়বৈষম্য কমানো সম্ভব বলে মনে করছে ইউএনডিপি। সংস্থাটির মতে, এজন্য আইনের শাসন

ও যথাযথ নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিকশিত হতে ও কাজ করতে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, রাজউক, পৌরসভা ও ভূমি প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বদলে নিয়মনীতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলেই দেশে আয় বণ্টন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো যাবে।

  • Courtesy: Dainik Banikbarta Mar 12, 2018

Govt doles out Tk 20b to recapitalise banks

Amount less than 10pc of total capital shortfall


The government will give Tk 20 billion in a latest dollop to state-run banks to meet their capital shortfall, officials said, at a time when reports are rife on irregular big lending.

The funds are set to be handed out to seven financial institutions three state-owned banks (SoBs), three specialised banks and the restructured Grameen Bank (GB) the sources said.

The money will be made available from a Tk 20-billion fund earmarked in the 2017-18 budget for recapitalisation of banks. 

The financial institutions division (FID) under the ministry of finance sent a proposal in this regard to the finance minister for approval, despite criticisms about giving taxpayers' money for so-called recapitalisation of banks time and again.

The minister gave the seal of approval on the proposal on March 7, a source concerned said.

Some Tk 4.0 bilion, Tk 4.0 billion, Tk 3.0 billion, Tk 3.0 billion, Tk 4.0 billion, over Tk 1.997 billion and Tk 2.1 million will go into the coffers of Sonali Bank, Janata, Rupali Bank, Basic, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank (RAKUB) and Grameen Bank (GB) respectively from the budget cake kept for banks, according to finance ministry data.

The amount provided to banks is equivalent to10 per cent of the total capital shortfall of the banks for this year. In this regard, it will make a plan as early as possible, according to a senior official of the division.

"We have given allocation from the recapitalisation fund to the SoBs and other agencies," said a high official of the finance ministry.

Earlier, Bank and Financial Institutions Division (BFID) had sent the proposal for recapitalising the state-run banks and Grameen Bank.

However, the authorities of the banks are not satisfied with the amount of government allocation as they are running their banking operations with substantial capital shortfall in recent days, sources concerned in the state banks said.

Recently, the state-owned banks sought an aggregate amount of Tk 203.98 billion to replenish their emaciated capital.

According to the proposal, some Tk 60 billion, Tk 25 billion, Tk 12.50 billion, Tk 25 billion, Tk 73.48 billion, Tk 8.0 billion and Tk 2.1 million have been sought by Sonali Bank, Janata, Rupali, Basic, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank (RAKUB) and Grameen Bank (GB) respectively from the budgetary fund.

On February 14, 2018, the government moved to give funds for replenishing capital of the banks that suffered such cash crunch, officials said.

The financial institutions division, under the ministry of finance (MoF), had held a meeting, attended by managing directors of SoBs and a representative of Bangladesh Bank, on the matter. Secretary of the financial institutions division Eunusur Rahman chaired the meeting.

The government had earmarked Tk 20 billion as budgetary allocation for recapitalising the banks in need in the current fiscal year.

The Basel-III regulatory framework has raised capital-adequacy requirement for banks, which most SoBs fall short of.

The funds will be fed to banks to meet the Basel-III requirements mostly, said a source.

"We have sought guarantee from the government. This is not traditional guarantee, Managing Director of the SBL Obayed Ullah Al Masud told the FE last Friday.

"We had sought an allocation of Tk 25 billion from government for BASIC to reduce its capital shortfall. A huge amount of funds is an urgent need for the bank," a senior official of the problem-ridden bank told the FE.

"We have heard that Tk 20 billion was allocated for the state banks last week which is a nominal amount for the banks," he added.

"Recently, we have got the proposal sent by state-owned banks seeking funds to meet their capital shortfall from the government fund," a senior official of the banking division said.

The government had injected Tk 106.22 billion into the coffers of the state banks, the House Building Finance Corporation, private IFIC bank and Grameen Bank between the fiscal years (FYs) 2012-13 and 2016-17.

In the period, the scam-ridden BASIC Bank got the highest amount of Tk 33.90 billion as it stood hollowed for fraudulent lending that led to its management shakeup.

Sonali Bank got the second-highest amount of Tk 30.05 billion while Tk 10.81 billion went to  Agrani bank,  Tk  8.14 billion to Janata, over Tk 7.29 billion to Bangladesh Krishi Bank, Tk 3.10 to Rupali Bank, Tk 3.10 billion to Rajshahi Krishi Unnayan Bank, Tk 4.0 billion to HBFC, Tk 1.78 billion to Sonali Bank (UK), Tk 1.25 billion to Palli Sanchaya Bank, Tk 250 million to Karmasangsthan Bank, Tk 1.85 billion to IFIC Bank, Tk 500 million to Ansar-VDP Bank  and Tk 196 million to Grameen Bank,  according to the financing proposal.

Finance Minister AMA Muhith told Parliament on February 26 last that four SoBs-Sonali Bank, Rupali Bank, Janata Bank and Basic Bank- were facing a capital deficit of Tk 76.26 billion.

As of September 2017, Sonali had a capital shortfall of Tk 31.40 billion (3,140.41 crore), BASIC Bank Tk 25.22 billion, Janata Bank Tk 12.72 billion and Rupali Bank Tk 6.89 billion.

  • The Financial Ex/12-3-18

৭ই মার্চ - গৌরব যখন নিপীড়নের প্লাটফর্ম!

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’ এখন অন্যায়ের কাল। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সমাজের সব জায়গা থেকে ন্যায় উধাও হয়ে গেছে। লুটেরা, অন্যায়কারী, জবরদস্তিকারী কেবলই শাসককুলের প্রশ্রয় পাচ্ছে। ফলে সমাজে অন্যায় বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। আর অন্যায়কারীর উল্লাসে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। তেমনি ঘটনা ঘটেছে গত ৭ মার্চ রাজধানীজুড়ে।

সে দিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ এক জনসভা আহ্বান করে। সে জনসভার এসেছিল আওয়ামী লীগের উচ্ছৃঙ্খল এক শ্রেণীর কর্মী, তারা নারীদের বিভিন্ন স্থানে যৌন হয়রানি করেছে। তাদের একাধিক শিকার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে। 

তাদের একজন তার ফেসবুকে বলেছে, ‘আল্লাহ কেন মেয়েদের মাত্র দুটো হাত দিলো! দুটো হাত দিয়ে এতগুলো হাত থেকে বুক পেট বাঁচাব, নাকি কোমর পেট বাঁচাব, ওড়না ধরে রাখব নাকি তাদের হাতগুলো সরাব।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজছাত্রী বলেছেন, 

"আমার সঙ্গে যা ঘটেছে। সেটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ভেবে নেয়া দুর্ভাগ্যজনক। আমি তখন লজ্জায় কাঁদছি। তার মধ্যে আমার মনে হচ্ছিল আমার দোষটা কী, কেন ওরা আমার সাথে এমনটা করছে। আমি তাদের আটকাতে চেষ্টা করছিলাম। চিৎকার দিচ্ছিলাম। কিন্তু একজনও আসেনি। আমি দুঃখে কাঁদিনি। ঘেন্নায় কেঁদেছি।"  

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সালমা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘গাড়ি চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে খামারবাড়ির দিকে যাওয়ার সময় সামনে দুই তিনটা ট্রাকভর্তি ছেলে স্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছিল। রাস্তা ফাঁকা কিন্তু তাদের ট্রাক চলছিল ধীরগতিতে এবং আমার গাড়িকে কোনোভাবেই সাইড দিচ্ছে না। এক-দু’বার আমার গাড়ি তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে চেষ্টা করতেই গাড়ির দিকে বোতল ছুড়ে মারতে থাকে তারা। আমার চালক জানালার কাচ নামানোর সাথে সাথে অশ্রাব্য গালি। তাদের বক্তব্য, আমার গাড়ি তাদের পেছন পেছন যেতে হবে।’

আরেকজন তার স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘হল থেকে বের হয়ে কোনো রিকশা পাইনি। কেউ শাহবাগ যাবে না। হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আর রাস্তাজুড়ে ৭ মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছেমতো টিজ করেছে। নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেমন পারছে টিজ করেছে। বহু হয়রানির পর শহীদ মিনার থেকে রিকশা নিয়ে শাহবাগ যাচ্ছি। এতেও রক্ষা নেই। চারুকলার সামনে একদল ছেলে পানির বোতল থেকে ইচ্ছেমতো পানি ছিটাচ্ছে গায়ে। যখন রাগান্বিত হচ্ছিলাম তখন তো একজন রিকশার পেছন থেকে চুল টেনে দৌড় দিয়েছে। সিরিয়াসলি। রিকশা থেকে নামতে চাচ্ছিলাম। জুতাবো ওইটাকে তাই। পাশের রিকশার ভদ্রলোক খুব ভদ্রভাবে না করল। তাই রিকশা থেকে নামিনি। গৌরবময় ৭ মার্চ। সোনার ছেলেরা এত ভালোভাবে পালন করেছে যে, নিজের ক্যাম্পাসে হ্যারাস হতে হয়।’ 

অর্থাৎ নারীরা কোথায়ও নিরাপদ নয়। বরং সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৪ যৌন হয়রানির শিকার হন। 

আরেকজন লিখেছেন, ‘আজ যে আমি স্বাভাবিকভাবে বাসায় ফিরতে পারব জানতাম না। সায়েন্স ল্যাব থেকে কাকরাইলের জার্নি আমার জন্য কম কষ্টের ছিল না, তা-ও পুরো পথ হেঁটে এসেছি। তবে কিছু কিছু হায়েনার চোখের ভাষা দেখে কেঁদে দেবো ভাবছিলাম (কারণটা বুঝে নেবেন।)। তবে একদম যে বেঁচে গেছি তা কিন্তু না। কেউ বোতলের জল পান করার চেয়ে আমার গায়ে ফেলা দেয়াটা বেশি উপযোগী ভাবছেন। বুঝতেছিলাম না যে, পানি ঢেলে দেয়ার জন্য আপসেট হবো কি না। খালি পানি তো ঢালছে। এটা ভেবে খুশি হবো। কী ভেবে সান্ত্বনা দেবো নিজেকে। জানি না, এটা কেমন ৭ মার্চ। একাত্তরের ৭ মার্চেও কি এমন হতো, জানার খুবই ইচ্ছা। প্রতিদিন একটা না একটা ঘটনার সম্মুখীন হওয়া আমার জন্য, ইনফ্যাক্ট সব মেয়ের জন্য, অভ্যাসের বিষয়। ইনফ্যাক্ট যে দিন কিছু ঘটে না, সে দিন নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবতী মনে হয়। যা হোক, অনেকে আমাকে রাস্তার হাল জানিয়ে ইনফো দিয়ে সাহায্য করেছে। এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কারণ আপনাদের তথ্যের জন্য অন্তত কিছুটা রাস্তা সেইফলি বেছে নিতে পারছিলাম।’ 

এখন ধর্মের ঢাক দ্রুতই বেজে যায়। সময় বদলেছে। প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ফলে খুব দ্রুত এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সে দিনের ঘটনা দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কোনো সত্যকেই চেপে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশ হয়েই পড়ে।

ওই যে একজন লিখেছেন, যে দিন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে দিন তিনি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে। স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরেও নারীরা এখন আর নিরাপদ নেই। কেউ বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। কেউ কাউকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাতেও সম্মত না হলেন তার শরীরে ছুরি বসিয়ে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের যথেচ্ছ হত্যা পর্যন্ত করছে। মাঝবয়সী নারী থেকে শিশুরা পর্যন্ত কেউই সমাজের এই দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। বিচারের ঘটনা যে ঘটে না, এমন বলব না। তবে ঘটনার তুলনায় তার সংখ্যা অতি নগণ্য। বহু ক্ষেত্রে তা হারিয়ে যায়। মেয়েপক্ষ যদি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়, তাহলে তাদের পক্ষে বেশি দিন আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। একসময় তারা রণে ভঙ্গ দেয়। কোনো এক ফাঁকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছাড়া পেয়ে যায়। এ রকম বহু আসামি ছাড়া পেয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় করা মামলা প্রত্যাহারের কারণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কোনোরূপ বাছবিচার না করে এ রকম সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তার মধ্যে খুন, ধর্ষণের মামলাও ছিল বহু। এরপর যথেচ্ছভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমাও ব্যবহার করা হয়েছে নারী নির্যাতনের এই আসামিদের জন্য। 

কিন্তু আমরা আশ্চর্য হলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায়। গত ৮ মার্চ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমাবেশস্থলের বাইরে নারী লাঞ্ছিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটলে সেটা আমাদের দলের বিষয় নয়। তবে এ ব্যাপারে সরকারের দায় আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। ফলে এই দলের নেতাকর্মীরা নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। তবে যারাই এর সাথে জড়িত থাকুক, খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা কাজ করবে। ওবায়দুল কাদেরের ভাষা প্রণিধানযোগ্য। তা হলো সমাবেশস্থলের বাইরে কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলে তার দায়িত্ব দল নেবে না। আর তার দলের নেতাকর্মীরা নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। সমাবেশস্থলের বাইরে সমাবেশের দিকে আসা উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের দিয়ে কোনো নারী লাঞ্ছিত হলে তার দায় কেন আওয়ামী লীগ নেবে না? আবার তিনি যেন এই বলে ওই নেতাকর্মীদের দায়মুক্তি দিয়ে বসলেন যে, তার দলের নেতাকর্মীরা নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। অর্থাৎ আগে থেকেই তিনি নারী নির্যাতনের পক্ষ অবলম্বন করে বসলেন। ওই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা এখন দ্বিগুণ উৎসাহে নারী লাঞ্ছনায় লেগে যেতে পারে। 

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অতটা নিচে নামেননি। তিনি বলেছেন, শ্লীলতাহানির ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটুকু আশার কথা। আমরা দেখতে চাই যে, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো ফেরেশতাদের দল নয়, তার প্রমাণ মিলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহানা মিলির ফেসবুক স্ট্যাটাসে। তাতে তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি বুঝুক না বুঝুক সেক্সনীতি বুঝলে বাপের বয়সী জেলা সাধারণ সম্পাদকের কোলে বসে ফুর্তি করাটাই রাজনীতিতে পদবি পাওয়াতে কাজ দেবে। শিক্ষিত না হলে দোষ নেই। একাধিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের শারীরিক সুখ দিতে পারলেই পদবি পাওয়া যাবে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে দু-চারটা ভালো কথা বলতে না পারলেও হোটেলে গিয়ে শিশুদের ভঙ্গিমায় প্রেমালাপ পারলেই রাজনীতি হবে। স্বামীর রোজগারে ঠিকমতো বাসা ভাড়া আসে না, কিন্তু জীবনযাপনের স্টাইল লাখ টাকার বাজেট করতে পারাটাই রাজনৈতিক সার্থকতা তাদের জন্য। বেসামাল শরীরে অশালীন পোশাকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে সেসব নোংরা ছবি তুলে ফেসবুকে না নিয়ে এলে তাদের ফেসবুক অচল হয়ে পড়ে। তাদের আপত্তিকর পোশাকে না দেখলে হয়তো স্থানীয় বড় পদের বাপদের পেটের ভাত হজম হয় না। শারীরিক বেসামাল গড়ন ও দেহের গড়ন যেন দেহ ব্যবসার বিশেষ পণ্য বস্তু। নিজের সন্তানকে কাজের লোকদের কাছে রেখে রাজনীতির নামে সারা দিন বেশ্যাবৃত্তি করাটাই তাদের কাজ। পরিবারে নেই কোনো জবাবদিহি। তাই যাচ্ছে-তাই করা যায়... স্থানীয় এমপি ও রাজনৈতিক বড় পদের মালিকদের সাথে তাদের গোলাপঝরা সখ্য। আফটার অল তাদের ইয়াবা আর মাদক ব্যবসা এবং রাজনৈতিক পদ বেচে দেহ ব্যবসায় সফল করতে ও সচল রাখতে এসব পদবি আর বয়সে আব্বরাই তো এক মাত্র সহায়ক।’

এ ধরনের একটা স্ট্যাটাসের পরিণতি কী হতে পারে ফারহানা মিলি তা জানতেন। কিন্তু সম্ভবত আত্মগ্লানির কারণে তিনি ঝুঁকি নিয়েই এই কাজ করেছেন। তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফারহানা মিলি এ কথা বলেছেন, তার জেলার আওয়ামী লীগকে নিয়ে। সর্বত্র কিন্তু একই চিত্র নয়। আওয়ামী লীগে ভালো মানুষ একেবারে নেই এমন কথা আমরা বলি না। কিন্তু ফারহানা মিলি এর একটা নোংরা দিক উন্মোচন করে দিয়েছেন। মিলি যেহেতু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ কথা বলেছেন, ফলে এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। তার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে কাজটি ঘৃণ্য। আমরা আগের মতোই বলি ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’ 

  • Courtesy: নয়াদিগন্ত  

নিয়ত করে খেলাপি


‘ধারালে শোধাতে হয়’—আঞ্চলিক এই প্রবাদবাক্য তাঁদের জন্য যেন কথার কথা! এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে আর শোধ করছেন না। ঋণ দুর্বৃত্তদের অপকর্মের খেসারত গুনতে হচ্ছে খেলাপি হতে চান না—এমন ব্যবসায়ীদের। দেশে বিনিয়োগ কম হয় বলে নানা মহল থেকে যখন হতাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে, তখন ঋণ জালিয়াতদের কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ঋণ লাভে বেগ পেতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং এ অর্থের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ রাখা অর্থের ভার পড়ছে ‘ভালো’ ব্যবসায়ীদের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে দেখা যায়, গত এক দশকে খেলাপি ঋণের অঙ্কটি চার গুণ হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে এসে পরিস্থিতির রীতিমতো অধঃপতন ঘটেছে। ২০০৭ সাল শেষে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, ২০১৭-এর সেপ্টেম্বরে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ঘটনায় ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা খেলাপি হতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বন্ধক রাখা জমি বা সম্পদ নিলাম করে ঋণের টাকা আদায় করে ব্যাংক। কিন্তু এখন অনেক ঋণগ্রহীতাই ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছেন। তাঁরা বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম করে টাকা আদায়েও বাধা দিচ্ছেন। ফলে বিপাকে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। আর লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বড় বড় কয়েকটি ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে বড় অঙ্কের কিছু ঋণ পুনর্গঠন করার সুযোগ দেওয়া হলেও তাতে আশানুরূপ ফল দেয়নি। এই ঋণও আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলা করেও সুফল পাচ্ছে না। কারণ ঋণগ্রহীতারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রভাবশালী বিচারপতিদের দিয়ে মামলা পরিচালনা করান। পরিস্থিতির সুযোগ নিতে যেন অনেকটা নিয়ত করেই ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে খেলাপি হচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এতে ব্যাংক ব্যবস্থা ধসে পড়ছে। জনগণের করের টাকায় প্রতিবছর ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্ভরণ করে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে।

কাগজে-কলমে দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৮৮৯ কোটি টাকা। ওয়ান-ইলেভেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে তাঁদের ঋণ পুনর্গঠন করে নিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই এর পর থেকে আর কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। তবে সংসদে সম্প্রতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি শীর্ষ ২৫ খেলাপির যে তালিকা দিয়েছে, এর মধ্যে হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা প্রভাবশালী গ্রুপগুলোর নাম নেই। অর্থাৎ এরই মধ্যে তারা আবারও পুনর্গঠন বা পুনঃ তফসিল করে নিয়েছে।

ঢাকার ইস্কাটনে অবস্থিত একটি শিল্পগোষ্ঠীর চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৩৮২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জামানতের মূল্য ২৩১ কোটি টাকা। গ্রাহক ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর একবার এই ঋণ আট বছর মেয়াদে পুনঃ তফসিল করে নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত আর কোনো কিস্তি দেয়নি। এই ঋণ গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর আবার পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। তাতে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গ্রাহককে কোনো কিস্তি দিতে হবে না। কিন্তু এই গ্রাহকের ৩৮২ কোটি টাকা খেলাপির হিসাবে নেই। একই গ্রাহক নতুন করে ব্যাংকের কাছে ২২০ কোটি টাকার ঋণ চেয়েছে। যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ঋণ চাওয়া হয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছেন, পাঁচটি কম্পানিই বন্ধ রয়েছে। আবার হলমার্কসহ অনেক ঋণ জালিয়াতের কাছ থেকে আপাতত কোনো টাকা পাওয়া যাবে না ভেবে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ অবলোপন করে রেখেছে ব্যাংকগুলো। শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির তথ্যে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলমার্কের মাত্র একটি কম্পানির (হলমার্ক ফ্যাশন) নাম রয়েছে, যে কম্পানিটির নামে ৩৩৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। হলমার্ক গ্রুপের বাকি ঋণ অবলোপন করে রাখা হয়েছে।

হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় হলমার্ক গ্রুপের পক্ষে আদালতে লড়েছেন শুরুতে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, পরে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সর্বশেষ হিসাবে, অর্থঋণ আদালতে বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে দুই লাখের মতো মামলা। তাতে জড়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। আবার অর্থঋণ আদালতে নিষ্পত্তি হলেও এর বিরুদ্ধে আপিল করার পর উচ্চ আদালতে মামলাগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হওয়ার পরও তাঁকে যাতে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা না হয়, সে জন্য আগেই উচ্চ আদালতে রিট করে রায় নিয়ে এসে নতুন করে ঋণ নিচ্ছেন। উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা ঋণসংক্রান্ত বিপুলসংখ্যক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠনে উদ্যোগ নিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও তা এখনো গঠিত হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঋণখেলাপিরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ছে এবং ভালো ব্যবসায়ীদের ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে জালিয়াতি করে ঋণ দেওয়া ও নেওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তাকে ‘ব্যাংক লুটপাট’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন বিশ্লেষকরা। হলমার্ক ঋণের জন্য কোনো আবেদন না করেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকরাও বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা কাদের দিয়েছে, তাদের সবার নাম-ঠিকানাও নেই ব্যাংকের কাছে। একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও এখন এ সংস্কৃতি বেশির ভাগ ব্যাংকেই ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংকাররাও ভুয়া কাগজে ঋণের নামে টাকা দিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন খাচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন বৈঠকেও ব্যাংক থেকে জাল-জালিয়াতি করে টাকা নিয়ে পরিশোধ না করার ঘটনাকে ‘লুটপাট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩৪তম বৈঠকে সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের ঘটনা কিভাবে ঠেকানো যায়, তার ওপর উপায় খুঁজে বের করতে আরো কার্যকর গবেষণা করার সুপারিশ গৃহীত হয়।’

বাংলাদেশে ব্যাংক লুটপাট ও খেলাপির ভয়ংকর এ চিত্র এক দশক আগেও চোখে পড়েনি। তখন ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ প্রকৃত অর্থেই লোকসান করে খেলাপি হতেন। খুব কমসংখ্যক ব্যবসায়ীই ঋণ নিয়ে ইচ্ছা করে খেলাপি হতেন। খেলাপি ঋণ ‘মহামারি আকার’ ধারণ করেছে মূলত ২০১২ সাল থেকে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ১৩.২৩ শতাংশ ছিল। ২০০৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকায় নামে, খেলাপির হার দাঁড়ায় ১০.৭৯ শতাংশ। এই ঋণ ও এর হার পরের বছরগুলোতে ছিল এ রকম : ২০০৯ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.২১ শতাংশ। ২০১০ সালে ২২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা এবং মোট ঋণের ৭.২৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা (৬.১২ শতাংশ), ২০১২ সালে  ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা (১০.০৩ শতাংশ), ২০১৩ সালে ৪০ হাজার ৫৮৩ টাকা (৮.৯৩ শতাংশ), ২০১৪ সালে ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা (৯.৬৩ শতাংশ), ২০১৫ সালে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা (৮.৭৯ শতাংশ) এবং ২০১৬ সালে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা (৯.২৩ শতাংশ)। আর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১০.৬৭ শতাংশ)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ১১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) ৭৩৯ কোটি টাকা এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছয় হাজার ১৫৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়ে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এটি যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০০৩ সালের পর থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো আদায় হওয়ায় অবলোপন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের মধ্য থেকে বড় বড় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ওই ঋণগুলো খেলাপি ঋণের মধ্যে পড়ছে না। এ ছাড়া অনেক ঋণখেলাপি আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিজেদের খেলাপি হিসেবে দেখানোর হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন বলেও জানা যায়। এতেও বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েও খেলাপির হিসাবে যোগ হচ্ছে না। এই ঋণগুলো যোগ হলে খেলাপি ঋণের চিত্র আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব এবং ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার বেশি। সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের মতো কিছু ব্যাংক বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে উচ্চ খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এ ছাড়া সম্প্রতি কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করছে। চলতি অর্থবছরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ব্যাংকগুলোকে দুই হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাকি টাকা জোগান দেওয়া হবে আগামী অর্থবছর, জনগণের করের টাকা থেকে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মোট ১০ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে সরকার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, খেলাপি ঋণ বন্ধে ঋণ বিতরণকালে ব্যাংকারদের সঠিক গ্রাহক বাছাই করা উচিত। আর যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে খেলাপি সংস্কৃতি কমবে না। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে ভালো গ্রাহকদের দুর্ভোগই সবচেয়ে বেশি। কারণ যাঁরা খেলাপি হয়েছেন, তাঁদের নেওয়া ঋণের সুদাসল না পেয়ে ব্যাংক ভালো গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার সময় সুদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সে কারণে খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে।’ সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ মঞ্জুর করায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায়, তা কারো জানা নাই। সরকারি ব্যাংকে ব্যাপক ঋণ অনিয়মের পর এবার বেসরকারি ব্যাংকেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারায় অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। যে উদ্দেশ্যে এসব ঋণ নেওয়া হচ্ছে, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে না। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। এসব ঋণের বড় একটি অংশ আদায় হচ্ছে না।’ 

এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, হঠাৎ যারা ফুলেফেঁপে বড়লোক হতে চাচ্ছে, তারাই এ কাজ করছে। প্রভাবশালীদের মধ্যেই ফাঁকিবাজি বেশি। ব্যাংক অনেক সময় ভালো গ্রাহক মনে করেই ঋণ দেয়। কিন্তু ঋণের টাকা হাতে পাওয়ার পরই ঋণগ্রহীতার চেহারা পাল্টে যায়। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করার কথা ভুলে যায়।

বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের চারজন এবং টানা ৯ বছর থাকার বিধান চালু হওয়ায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে মনে করেন তিনি।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণ ছিল সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়া ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার ২৯.২৫ শতাংশ ঋণই ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের। পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। জুনের তুলনায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২.৪১ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের দেশীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৫.৯৭ শতাংশ। জুনের তুলনায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

তথ্যে আরো দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলোর ৭.৮৯ শতাংশ ঋণই খেলাপি। একইভাবে সেপ্টেম্বরে কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল পাঁচ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলোর ২৩.৭৯ শতাংশ ঋণই খেলাপি।

বেসরকারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাটা খুবই উদ্বেগজনক। এভাবে ঋণ বিতরণ করলে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যেতে পারে।’

  • কালের কণ্ঠ/12-3-18