Search

Saturday, April 14, 2018

চাকরিতে কোটা — বাতিল নয়, সংস্কারেই সমাধান



আলী রীয়াজ


কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবসানের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক। কয়েক মাস ধরে যে তরুণেরা এই আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এবং গত কয়েক দিনে পুলিশের নির্যাতনের শিকার ও সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা তাঁদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে যথাযথ বলে বর্ণনা করছেন।

রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে তাঁরাই আগ বাড়িয়ে প্রশংসা করছেন, যাঁরা এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেও যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের দাবির মধ্যে ষড়যন্ত্রের জাল দেখতে পেয়েছিলেন এবং এ ধরনের সংস্কারকে রাষ্ট্রবিরোধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবমাননাকর বলে বর্ণনা করেছেন। সামান্য পরিবর্তনকেও অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, কিন্তু কোনো রকম কারণ ছাড়াই এখন পুরো কোটাব্যবস্থা বাতিলকে অভিনন্দন জানানোর মধ্যে যে স্ববিরোধিতা আছে, তা ওই সব ব্যক্তির না বোঝার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এখন তাঁদের প্রতিক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের সব দায় আন্দোলনকারীদের। তাঁরা জানেন যে আন্দোলনকারীদের দাবি বাতিলের দাবি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীও তা জানেন।

যাঁরা এখন সরকারি সিদ্ধান্ত সমর্থনে অকুণ্ঠিত, তাঁদের বক্তব্যে এটা তাঁরা স্বীকার করেই নিচ্ছেন যে এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক নয়; কিন্তু যেহেতু এর দায় অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাচ্ছে, তাতে করে তাঁরা এখন এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তার কারণও সুস্পষ্ট-এটি ভালো রাজনৈতিক কৌশল এবং তাতে করে আন্দোলনকারীরা বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। ছাত্রলীগের ‘আনন্দ মিছিল’ এবং সরকার-সমর্থকদের এই প্রতিক্রিয়া একই সূত্রে বাঁধা-এর থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া গেলে, এমনকি তা যদি সাময়িকও হয়, তাতে যদি দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে, তাতেও তাঁরা বিব্রত নন। আন্দোলনকারী ও তাঁদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে গোপন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে, অথচ এই সিদ্ধান্ত যে রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত, সেটা সরকার-সমর্থকেরা অস্বীকার করছেন না।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে বহুভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা হয়েছে। ২০১৩ সালে যখন প্রথম এ বিষয়ে ক্ষোভ আন্দোলনে রূপ নেয়, তখন থেকেই সেই চেষ্টা হয়েছে। ২০১৩ সালে এ ধরনের প্রচেষ্টা সফলও হয়েছে। এই দফায় একে কোটা বাতিলের আন্দোলন বলে অভিহিত করার চেষ্টা যখন সফল হয়নি, তখন প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত একে সেই জায়গায় নিয়েই দাঁড় করাল। শেষ পর্যন্ত সব ধরনের কোটা বাতিলের জন্য সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হোক অথবা না হোক, যে তরুণেরা এই আন্দোলনে যুক্ত, ভবিষ্যতে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের ব্যত্যয়ের জন্য তাঁদের দায়ী করার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে নারীরা বঞ্চিত হবেন-এই ভবিষ্যদ্বাণী করে তার জন্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি কেউ কেউ ইতিমধ্যে শ্লেষাত্মক বাক্য ছুড়ে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না।

সংস্কারের দাবির বিরোধিতা করতে গিয়ে একে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, তাঁদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা বলে সরকার-সমর্থকেরা বলে এসেছেন। আন্দোলনকারীরা সব সময় বলেছেন যে তাঁরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নন। বিরাজমান ব্যবস্থায় সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা রয়েছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের ৪৭ বছর পরে এই কোটার সুবিধা যে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা পাচ্ছেন না তা বোধগম্য; এর সুবিধা পাচ্ছেন তাঁদের উত্তরসূরিরা। মনে রাখা দরকার, ‘সরকারি কর্ম কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮২ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা লক্ষণীয় মাত্রায় কমতে শুরু করে। ১৯৮৯-৯০ সাল নাগাদ এটি ১ শতাংশে নেমে আসে, বাকি ২৯ শতাংশ কোটা অপূর্ণ থেকে যায়।’ (‘রাজাকারের বাচ্চা’ বনাম মুক্তিযোদ্ধা কোটা’, শাখাওয়াত লিটন, ডেইলি স্টার, ১১ এপ্রিল ২০১৮)।

১৯৯৬ সালে কোটাব্যবস্থায় সংস্কার করে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে অপূর্ণ কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিধান চালু করা হয়’। যে ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রহণযোগ্য তালিকা তৈরি করা যায়নি, সেখানে তাঁদের উত্তরসূরি নির্ধারণের উপায় এবং তার সম্ভাব্য অপপ্রয়োগের বিষয়কে অস্বীকারের উপায় নেই।

কোটাব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রয়েছে। যেকোনো ধরনের সংস্কার প্রতিটি ক্যাটাগরির ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হবে। কিন্তু এর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গকে এককভাবে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে সংস্কার প্রস্তাবকেই এমনভাবে চিত্রিত করা হলো এবং তা বাতিলের মধ্য দিয়ে সংস্কারের দাবিদার তরুণদের এমন জায়গায় নিয়ে দাঁড় করানো হলো, যেন মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি ও তরুণেরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ এই তরুণদের মধ্যেই যে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিরা আছেন, তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।

১৯৮৭ সাল থেকে এক দশক ধরে সরকারি কর্ম কমিশন সামগ্রিক কোটাব্যবস্থায় সংস্কারের কথা বলে এসেছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব সরকারি কর্ম কমিশনের পক্ষ থেকেই প্রথম দেওয়া হয়েছিল। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, তাঁদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা’ করে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তাতে এমন ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হলো যেন আন্দোলনকারীরা কেবল একটি ক্যাটাগরির ব্যাপারেই সংস্কার দাবি করছিলেন।

একবার সংস্কার করলেই বারবার সংস্কারের দাবি উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এমন ধারণা দেয় যে এই কোটাব্যবস্থা আগে কখনোই সংস্কার করা হয়নি। অথচ গত ৪৭ বছরে একাধিকবার সংস্কারের ঘটনা ঘটেছে, সেটা তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন-‘১৯৭২ সাল থেকে এই কোটা পদ্ধতি চলছে। সময়-সময় সংস্কার করা হয়েছে।’ সেটাই স্বাভাবিক। এখন রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে যেভাবে সংস্কারের দাবিকে মোকাবিলা করা হলো, তাতে করে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও অসন্তোষের পথকেই উন্মুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভক্ত দেশে আরও একধরনের বিভক্তির সুযোগ থেকে ক্ষমতাসীনেরা হয়তো লাভবান হবেন বলেই মনে করছেন; কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য তা যে ইতিবাচক হবে না, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

অনেকেই প্রশ্ন করবেন, সরকার কী করতে পারত? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে সরকার সময় চেয়েছিল, কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা দিতে রাজি হননি। পেছনে ফেরার পথ নেই, কিন্তু এই প্রশ্ন তো করাই যায় যে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের হামলার আগে কি এই আলোচনা শুরু করা যেত না?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি এবং পুরো পরিস্থিতির সুযোগে উপাচার্যের বাসভবনে তাঁর ভাষায় ‘প্রশিক্ষিত দুষ্কৃতকারী’দের হামলার আগে কেন এ বিষয়ে আলোচনার তাগিদ ছিল না, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো যদি প্রধান লক্ষ্য হয়, যদি কোটা প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য সমাধান উদ্দেশ্য হয়, তবে রাজনৈতিক কৌশলে শিক্ষার্থীদের পরাস্ত করার ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। সে জন্য কোটা বাতিলের ঘোষণা পরিহার করে সংস্কারের জন্য কার্যকর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার দিকেই সরকারের মনোযোগ দেওয়া দরকার।

মনে রাখতে হবে, অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানে সরকারের ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। সরকারি দল রাজনৈতিক কৌশলে পারদর্শিতা দেখাতে গিয়ে সেই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আর এই সিদ্ধান্তের দায় আন্দোলনকারী তরুণদের ওপর চাপিয়ে দিতে যাঁরা ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠছেন, তাঁরা আশা করি ভেবে দেখবেন যে এই তরুণেরাই দেশের ভবিষ্যৎ।

আলী রীয়াজ  — যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। 

কার্টেসি  —  প্রথম আলো/এপ্রিল ১৩, ২০১৮ ।



Friday, April 13, 2018

সেই রাতের ঘটনা কারা ঘটিয়েছিল?



সোহরাব হাসান


গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আরেকটি ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ তৈরি হয়েছিল। সকাল ১০টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের দিকে আসছিলেন। শাহবাগ মোড়ে দাঁড়াতেই দেখি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কাফেলা। যেকোনো ছাত্রসংগঠনের মিছিলে সামনে কয়েকজন ছাত্রী থাকেন, বাকি সবাই ছাত্র। কিন্তু এই মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব পাশের সড়ক দিয়ে আসা মিছিলটি শাহবাগ মোড় ঘুরে দক্ষিণ দিকে রাজু ভাস্কর্য অভিমুখে যাচ্ছে। মিছিলকারীদের কারও হাতে ফেস্টুন, কারও মুখে স্লোগান, ‘কোটা প্রথার সংস্কার চাই’। কোনো হট্টগোল নেই।

ওদিকে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর হেলমেটধারী সদস্যরাও ছিলেন শান্ত, ধীরস্থির। কেউ মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি। মিছিলের পুরোভাগে যাঁরা, সজাগ ছিলেন কোনো অঘটন যেন না ঘটে। এরই মধ্যে মিছিল থেকে একজন পানির একটি খালি বোতল ছুড়ে মারলেন পুলিশের দিকে। নেতারা সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিলেন।

নব্বইয়ের পর এত বড় মিছিল ঢাকা শহরে আর দেখা যায়নি।

সঙ্গে থাকা একজন সাংবাদিক বন্ধু, যিনি নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন কভার করেছেন, বললেন, নব্বইয়ের পর এত বড় মিছিল ঢাকা শহরে আর দেখা যায়নি। তখনো মিছিল আসছিল। সবার গন্তব্য রাজু ভাস্কর্য। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী একজনকে জিজ্ঞেস করি, শহরের আর কোথায় কোথায় সমাবেশ হচ্ছে? তিনি বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এখানে এসেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আলাদা সমাবেশ করছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ও পাশের সড়কে মিছিল-সমাবেশ করছেন। আমরা যখন কারওয়ান বাজার পার হচ্ছিলাম, দেখি পান্থপথে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল করছিলেন। আসলে গতকাল সত্যিকারভাবেই ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কষ্টেরও।

রাজু ভাস্কর্যের চারদিকে ঘিরে বলতে গেলে মহাসমাবেশ। সাংবাদিকদের ব্যস্ততা, টিভি ক্যামেরার ছোটাছুটি। অস্থায়ী মঞ্চ থেকে নেতারা কী বলছেন, শোরগোলে সবটা বোঝা গেল না। তবে যেটুকু শুনলাম, কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তখনো শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে মুহুর্মুহু স্লোগান, ‘সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’। তাঁরা একজন মন্ত্রীর নাম ধরেও স্লোগান দিচ্ছিলেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-রোষ
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জ ছিল অনেকটা সরগরম। সবার মুখে কোটা আন্দোলনের প্রসঙ্গ। কেউ কেউ আবার সরকারের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন। নীল দলের সমর্থক একজন শিক্ষক বললেন, ‘বুঝতে পারছি না সরকার কেন ছাত্রদের ন্যায্য দাবি মানছে না। তারা তো সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে না।’ অপর একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, যিনি একসময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, খেদের সঙ্গে বলেন, ‘এই যে বাইরে বিপুল জনস্রোত দেখছেন, শত শত শিক্ষার্থী হল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, এটি শুধু কোটা সংস্কারের জন্য নয়; দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভেতরে যে চাপা ক্ষোভ ছিল, এই আন্দোলনে তারই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিটি হলে প্রায় প্রতিদিন ছাত্রলীগের মিছিল হয়। আর সেই মিছিলে বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যোগ দিতে হয়। মিছিলে না গেলে কেউ হলে থাকতে পারে না।


তাঁর কথায় আগের রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটনা মনে পড়ল। সেখানে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ‘অপরাধে’ তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন হল ছাত্রলীগের নেত্রী ইফফাত জাহান। এতে আরেক শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জানালার কাচে তাঁর পা কেটে যায়। এতে হলের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ইফফাতকে হল ও ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। হলের সাধারণ ছাত্রীদের দাবি, তাঁকে শুধু বহিষ্কার করলে চলবে না, বিচারও করতে হবে।

সেই রাতের ঘটনা কারা ঘটিয়েছিল?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনের পাশাপাশি গতকাল সরগরম আলোচনা ছিল উপাচার্যের বাসভবনে হামলার বিষয়টি। আগের দিন শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল টেলিফোনে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল সরেজমিন দেখার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে দেখি, উপাচার্যের বাসভবনের কয়েকজন কর্মী ছাড়া কেউ নেই। শিক্ষকেরা এসে চলে গেছেন। তাঁদের জরুরি বৈঠক ছিল। টিভির খবরে দেখলাম, শিক্ষক সমিতি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে, সংহতি জানিয়েছেন উপাচার্য আখতারুজ্জামানও। কিন্তু তাঁরা কাজটি আগে করলে অনেক অঘটনই এড়ানো যেত।

সেদিন রাতে উপাচার্যের বাসায় কারা হামলা করেছে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীদের ব্যবহার করে থাকতে পারে। বিএনপি বলেছে, আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ‘সরকারের এজেন্টরা’ এই কাজ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, উপাচার্যের ভবনে যারা হামলা করেছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ফেসবুকে যারা ওই রাতে একজন ছাত্র নিহত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, সেদিন রাতে পুলিশ বিনা উসকানিতে নির্বিচারে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত ও রক্তাক্ত করলে তাঁরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এরই মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে একজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এরপর শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্ষোভের কথা জানাতে উপাচার্যের বাসভবনে গিয়েছিলেন, এ কথা ঠিক। কিন্তু সেখানে মুখে কাপড় পরে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের তাঁরা চেনেন না। আন্দোলনেও তারা ছিল না। উপাচার্যের বাসভবনে দায়িত্ব পালনকারী একজন কর্মী জানান, হামলার সময় ভেতরে দুজন কর্মী, তিনজন প্রহরী ও বাইরে পাঁচজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল হাজারের বেশি। এই ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ঘটনার পরপর আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এলেও কেন পুলিশকে খবর দেওয়া হলো না?

আন্দোলনকারীরা বলেছেন, উপাচার্যের বাসভবনে যারা হামলা করেছে, সরকার তাদের ধরুক। কিন্তু নিরীহ ও নিরপরাধ শিক্ষার্থীরা যেন নিগৃহীত না হন। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে গেলেও আন্দোলনকারীদের মনে ভয় আছে। কয়েকজন আমাকে বললেন, ‘ভাই, আমাদের কথা লিখুন, তবে নাম প্রকাশ করবেন না। বিপদ হবে।’

নীল ও সাদা দলের বাইরের একজন শিক্ষক বললেন, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যতবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিগৃহীত হয়েছেন, প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েও তাঁরা পাননি। ফলে প্রশাসনের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি
এ কলাম লেখা পর্যন্ত কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘তারা চায় না, তাহলে দরকার কী? কোটা পদ্ধতিরই দরকার নাই।’ তাঁর এ বক্তব্যের পর আজ সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে ধারণা করি।

আন্দোলনকারীরাও বলেছেন, আজ সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা চাই অবিলম্বে বিষয়টির সুরাহা হোক।


  • সোহরাব হাসান: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি  (sohrabhassan55@gmail.com)


  • কার্টেসি — প্রথম আলো/ এপ্রিল ১২, ২০১৮। 


ঢাবির রগ কাটার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বললেন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে ওই হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা।

মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অগ্নিগর্ভে পরিণত হয় গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিভিন্ন আবাসিক হলের ছাত্ররা জড়ো হন কবি সুফিয়া কামাল হলের সামনে। রাত পৌনে তিনটায় বিজয় একাত্তর হলের গেট ভেঙ্গে প্রায় সব সাধারণ ছাত্ররা মিছিল করে ছুটে যেতে থাকেন সুফিয়া কামাল হলের দিকে। ওদিকে সুফিয়া কামাল হলেরও সব সাধরণ ছাত্রীরা রুম ও ফ্লোর থেকে বের হয়ে হলের সামনে নেমে আসেন। ভেতরে ছাত্রীরা আর বাইরে অবস্থান নেন বিভিন্ন হলের ছাত্ররা। এমন অবস্থায় রগ কাটা ছাত্রলীগ নেত্রীর গলায় জুতার মালা পড়ায় সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ ছাত্রীরা। এরপর শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম অনুযায়ী তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগও তাকে বহিষ্কার করেছে সংগঠন থেকে।

ছাত্রীরা জানায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদানকারী অনেক ছাত্রীদেরই কয়েক দিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল এশা। যে ছাত্রীর পায়ের রগ কাটা হয়েছে তার নাম মোরশেদা আক্তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এশা কর্তৃক মারধরের শিকার হওয়া অন্য ছাত্রীরা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শারমিন সুলতানা তমা, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আফিফা আক্তার রিভু, ভূতত্ত্ব বিভাগের ঋতু ও স্বর্ণা।



ঘটনার পর থেকে মোরশেদার কাটা পায়ের ছবিসহ ঘটনার অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ওয়েবসাইটে। ইশার গলায় জুতার মালা পড়ানো, বিজয় একাত্তর হলের গেট ভেঙ্গে ছাত্রদের দল বেধে বেরিয়ে যাওয়া, সুফিয়া কামাল হলের সামনে অবস্থান, সুফিয়া কামাল হলের সিঁড়ি ও রুমের মেঝেতে রক্তের ছবি এবং ভিডিও ছাড়া হয়েছে ইন্টারনেটে।

সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রীর রগ কাটা এবং পরবর্তী ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং হলের আবাসিক শিক্ষকরা ।

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিজয় একাত্তর হলের প্রায় সব ছাত্ররা রাত দুইটার পর থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু হলের গেট বন্ধ থাকায় তারা বাইরে বের হতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বাঁধা উপেক্ষা করে হলের গেট ভেঙ্গে তারা বের হয়ে যান এবং সুফিয়া কামাল হলের সামনে গিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ

সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী সাফিয়া শারমিন হলের রাতের ঘটনা সামনে থেকে দেখেছেন। তিনি এ বিষয়ে তার ফসেবুকে স্ট্যাটাস দয়িছেনে। তার ওই স্ট্যাটাস এখানে তুলে ধরা হলো — 

সুফিয়া কামাল হল থেকে বলছি...

ঘটনার সূত্রপাত আনুমানিক ১২ টার দিকে, সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। এক ফ্রেন্ডের ফোনে ঘুম ভাঙ্গছে, লাফিয়ে উঠে নিচে দৌড় দিলাম। ৯ তলা থেকে নামতে নামতে দেখলাম ৩-৪ তলায় সিড়িতে রক্ত, ফ্লোরে রক্ত। ভিড় ঠেলে নিচে নামলাম, আপুদের কাছে জিজ্ঞাসা করার বলল তিনদিন ধরেই অত্যাচার চলতেছিল নিরবে, যারা পলিটিকালি হলে উঠেছে তাদের উপর, এখন এক মেয়ের পা কেটে দিয়েছে। কেউ ভয়ে মুখ খুলে নাই।

প্রত্যয় প্রদীপ্ত দুটো মুখোমুখি ভবন। এশা প্রত্যয়ে মেয়েদের মারার সময় কিছু মেয়ে দেখে চিৎকার করছে। কিছু মেয়ে নিচে নেমে আসলে তাদেরকে বলছে ‘ত্যাঁলাপোকা দেখে চিৎকার দিছে, কিছু হয় নাই।’ কিন্তু ফ্লোরে সিড়িতে রক্ত দেখে হলের মেয়েরা একত্রিত হইছে।

এর মধ্যে এশা ওই মেয়েদেরকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিছে। তারপর হলের হাউজ টিউটর ম্যামরা এসে মেয়েটাকে হাসপাতালে পাঠাইছে, এবং হলের মাঠে সব মেয়েরা তখন ক্ষ্যাঁপা। এশার বহিষ্কার স্লোগান দিচ্ছিল, এর মধ্যে এশাকে কিছু মেয়ে মাঠে নিয়ে আসছে, তখন কিছু মাইরও খাইছে।

এর মধ্যে ভাইয়ারাও চলে আসছে হলের সামনে। ম্যামরা জানতে চাইলো আমরা কি চাই? বললাম এশাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার, ওকে জুতার মালা পরাবো আমরা। যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলন অহিংস আন্দোলন, তাই মারবো না । এর মধ্যে ভাইয়ারাও চলে আসলো উদ্ধার করতে। সামনের দিকেই ছিলাম, আস্তে করে বললাম ‘ভুয়া’ সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল প্রক্টর তুই দুর হ, ভুয়া।

অনেক কথাবার্তার পর এশাকে নিয়ে আসা হলো সবার সামনে মাফ চাওয়ার জন্য, জুতার মালা পড়ানোর জন্য। কিন্তু প্রক্টর এশাকে জুতার মালা পরাতে দিবেন না। মেয়েরা ক্ষেপে গেল, তারপর শুরু হল ধাক্কাধাক্কি। এদিকে গোলাম ও তার সাথের লোকজন এশাকে ঘিরে বাঁচাতে চাইছেন প্রাণপণে। এ সময় রগকাটা নেত্রী সহ অনেকে মাইর খেলেন।

এদিকে দুই ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় আমরা ক্যান্টিনের পিছনের গেট দিয়ে হলে মেইন গেটে চলে আসলাম, যাতে কেউ পালাতে না পারে। ভাইয়ারা তখন বাইরে অবস্থান করছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। এদিকে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে এশাকে জুতার মালা পড়ানো হলো, হাউস টিউটর কাছ থেকে মৌখিক বিবৃতি নেওয়া হলো।

এরপর ম্যামরা ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে প্রক্টর এবং এশাকে হাউস টিউটর ভবনের ভিতরে ঢুকিয়ে কলাপসিপল গেট বন্ধ করে দিল। তখন মেয়েরা হাউস টিউটর ভবনের সামনে অবস্থান নিল, তারপর আমরা আমাদের দাবি এবং স্লোগান সমানতালে চলতে থাকলো। ভিতরে আমরা বাইরে ভাইয়ারা। সুফিয়া কামাল হল থেকে তিনটি দাবি দেওয়া হয়েছে যে হলে কোন আনুষ্ঠানিক রাজনীতি থাকবে না, ছাত্রীদের উপর অত্যাচারের বিচার এবং আমাদের ভাইবোনদের উপর অত্যাচারের বিচার করতে হবে। রাত ৪ টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, ভাইয়ারা ফিরে গেছেন। মেয়েরা তাদের দাবি আদায়ে গণস্বাক্ষর করছে।


সুফিয়া কামাল হলের ঘটনা সম্পর্কে ঢাবি ভিসি


কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটনার পর উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন ঢাবি ভিসি মো. আখতারুজ্জামান। তিনি রাতে এই ব্রিফিং করেন।

ভিসি বলেন, ‘দুঃখজনক। এটা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমি তাৎক্ষণিক প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্টরের টিমকে ওখানে পাঠিয়েছি। হল প্রশাসনকে বলেছি, মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তারপর আমি বিস্তারিত জেনেছি। আমি অবহিত হয়েছি — হলের ইফাত জাহান এশা আরেকটি মেয়েকে মেরেছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। হল প্রশাসনকে বলেছি, দোষী মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে। আগামীকাল এর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। প্রকৃত ঘটনা জানতে একটি তদন্ত কমিটিও করে দেবো। কেউ যেন সীমালঙ্ঘন না করে। আইনহীনতা, বিচারহীনতা চলতে পারে না। সে যেই হোক, বিচার হবে।

ইফাত জাহান এশাকে এর আগেও বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং পুনরায় বহিষ্কারাদেশ প্রতাহ্যার করা হয়। এবারও কি সেরকম হবে কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ভিসি বলেন, ‘আমরা সজাগ থাকবো, সেরকম যাতে না হয়। রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • কার্টেসি - dailynayadiganta.com/April 11, 2018 


Thursday, April 12, 2018

জার্মানির কাছ থেকে যে রাজনীতি শিখতে পারে বাংলাদেশ

আরাফাতুল ইসলাম/ডয়চে ভেলে



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি দেশ আবার বিশ্বের বুকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ দেশটির আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজনীতবিদরা৷ বলছি জার্মানির কথা৷ 

একথা সত্য, জার্মানির এক ভয়াবহ অতীত রয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কয়েক কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য অনেকটাই দায়ী এই দেশ৷ সে সময় ইহুদি ধর্মের মানুষদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলেন জার্মানির তৎকালীন শাসক এডল্ফ হিটলার, যিনি যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আগে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে আত্মহত্যা করেছিলেন৷ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার অপরাধের কথা অস্বীকার করে না জার্মানি৷ বরং অকপটে সেই অন্ধকার অতীতকে স্বীকার করে, প্রয়োজনের জায়গায় ক্ষতিপূরণ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে দেশটি৷ ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত দুইভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া জার্মানি আবারো নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, একত্রিত হয়েছে৷ ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে বড় ভুমিকা রেখেছেন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশটির দায়িত্ব নেয়া জার্মান রাজনীতিবিদরা৷ 

জার্মানিতে আসার পর গত এক দশকে তিনটি জাতীয় নির্বাচন দেখার সুযোগ হয়েছে আমার৷ বাংলাদেশ থেকে আসা একজন সাংবাদিক হিসেবে জার্মান রাজনীতির যে তিনটি দিক আমার ভালো লেগেছে, সেগুলো তুলে ধরছি এখানে৷  

ব্যক্তি নয়, দেশ আগে 


জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে পরিবারতন্ত্র কিংবা ব্যক্তিস্বার্থের ছায়া দেখেনি আমি৷ বরং দেশের প্রয়োজনে, দলের প্রয়োজনে দলগুলোর শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসতে দেখেছি৷ জার্মানির সবচেয়ে পুরাতন দল এসপিডি’র কথাই ধরুন৷ জার্মানির গত তিন সরকারের দু’টিতে মহাজোট সরকারের জুনিয়র পার্টনার হিসেবে রয়েছে দলটি৷ ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে এসপিডি’র চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হন পেয়ার স্টাইনব্রুক৷ 

দক্ষ এই রাজনীতিবিদ নির্বাচনের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে ম্যার্কেলের অধীনে মন্ত্রিসভায় আর কাজ করবেন না তিনি৷ অর্থাৎ চ্যান্সেলর হবেন, অথবা থাকবেন না মন্ত্রিসভায়৷ কিন্তু সেবছর নির্বাচনের ভোটাভুটির পর দেখা গেলো, এককভাবে বা সিনিয়র পার্টনার হিসেবে সরকার গঠনের মতো ভোট পায়নি এসপিডি৷ বরং সিডিইউ’র সঙ্গে সরকার গঠনই দল ও দেশের স্বার্থে মঙ্গলজনক৷

স্টাইনব্রুক তাঁর কথা রেখেছেন৷ তিনি জোট সরকার গঠনের পথে এসপিডিকে সহায়তা করেছেন বটে, তবে যোগ দেননি ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায়৷ 

২০১৭ সালের নির্বাচনের আগে এসপিডি’র চ্যান্সেলর প্রার্থী হলেন মার্টিন শ্যুলৎস৷ এই নির্বাচনে এসপিডি আগেরে চেয়েও কম ভোট পেলো৷ অন্যদিকে আশাতীতভাবে তৃতীয় অবস্থানে চলে গেলো অভিবাসী ও মুসলমনাবিরোধী উগ্র ডানপন্থি দল এএফডি৷ সেই নির্বাচনের পরপরই এসপিডি ঘোষণা দেয় যে, সিডিইউ’র সঙ্গে জোট গড়বে না তারা৷ বরং সংসদের বিরোধী দল হিসেবে থাকবে দলটি, যাতে এএফডি প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানে যেতে না পারে৷ 

সেই ঘোষণার পর ম্যার্কেলও চেষ্টা করেছিলেন এসপিডিকে ছাড়া সবুজ দল এবং এফডিপিকে নিয়ে জোট গড়তে৷ কিন্তু কয়েকমাস চেষ্টার পরও সেটা সম্ভব হয়নি৷ ফলে, সরকার গঠন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়৷ আলোচনা তখন নতুন আরেকটি নির্বাচনের দিকে যেতে থাকে৷ এমনকি কেউ কেউ ম্যার্কেলের পদত্যাগের সময় ঘনিয়ে এসেছে বলেও মনে করতে থাকেন৷ কিন্তু শেষমেষ এসপিডিকেই এগিয়ে আসতো হলো সিডিইউ’কে রক্ষায়৷ আবারো তৈরি হলো জার্মানির বড় দুই দলের মিলনে জোট সরকার৷ 

সেসময় দেশের, দলের স্বার্থে নিজের স্বার্থত্যাগ করেছেন মার্টিন শ্যুলৎস৷ জোট সরকারের মন্ত্রিসভাতে বড় পদ পেতে পারতেন, কিন্তু নেননি৷ এমনকি এসপিডি দলের শীর্ষপদটিও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি৷ জার্মান রাজনীতিবিদদের কাছে দেশ, দলই যে সবসময় প্রাধান্য পায়, শ্যুলৎস তা আবারো প্রমাণ করেছেন শুধু৷ 


জনগণই শেষ কথা 

জার্মানির বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে রাজনীতির যে ফাঁকফোকড় গলিয়ে হিটলার দেশটির শাসক হয়েছিলেন, সেসব ফাঁকফোকড় এখন আর নেই৷ বরং রাজ্য এবং জাতীয় নির্বাচন থেকে চ্যান্সেলর পদে নির্বাচন অবধি পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল করা হয়েছে, যেখানে জনগণের আকাঙ্খার বাস্তবায়ন কয়েক ধাপে করা হয়৷ আর বলাই বাহুল্য, এদেশের নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাধীন৷ সেগুলোর উপর সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই৷ 

এই দেশে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের কথা আমি কখনো শুনিনি৷ বরং নির্বাচনের ফলাফল যা হয় তাই মেনে নিয়েই পরবর্তী পরিকল্পনা সাজায় দলগুলো৷ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতি জার্মান সমাজের একাংশকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল৷ প্রায় দশলাখের মতো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়াকে মেনে নিতে পারেননি তারা৷ নির্বাচনের ফলাফলে সেটার প্রতিফলন ঘটে৷ এএফডি নামের দলটি আশাতীত ভালো ফলাফল করে৷ 

নির্বাচনের পর নড়েচড়ে বসেন ম্যার্কেল৷ নতুন সরকার গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি শরণার্থীদের প্রতি থাকা তাঁর উদার মানসিকতা থেকে কিছুটা সরে আসেন তিনি৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া শরণার্থীদের ধরে ধরে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়৷ নতুন করে শরণার্থী নেয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াও জটিল করা হয়েছে৷ এমনকি, ম্যার্কেল এমন একজনকে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন, যিনি শরণার্থী এবং মুসলমানদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর মানসিকতার রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত৷ সর্বোপরি ম্যার্কেল এই ঘোষণাও দিয়েছেন যে, যেসব মধ্য ডানপন্থি ভোটার গত নির্বাচনে তাঁর দলকে ভোট দেয়নি আগামী চার বছর তাদের মন জয়ের চেষ্টা করবেন তিনি৷ 

এখানে জার্মানির সংসদের আরেকটি ইতিবাচক দিক উল্লেখ না করলেই নয়৷ সেটা হচ্ছে, সাংসদদের ‘ফ্লোর ক্রসিংয়ের’ সুযোগ৷ অর্থাৎ সংসদে কোন বিষয়ে ভোটাভুটি হলে সেক্ষেত্রে দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়েও একজন সংসদ নিজের পছন্দমত ভোট দিতে পারেন৷ ফলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটি চাইলেই যে কোনো কিছু সংসদে অনুমোদন করিয়ে নিতে বা যে কোনো কিছু বাতিল করতে পারে না৷ এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেই৷ 

অনেক পশ্চিমা দেশে সমকামীদের মধ্যে বিয়ে বৈধ হলেও জার্মানিতে সেটা বৈধ ছিল না৷ গত বছর নির্বাচনের আগে এই নিয়ে ম্যার্কেলের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ ম্যার্কেল তখন এক পর্যায়ে ঘোষণা দেন যে, সংসদে এই বিষয়ে ভোটাভুটি হবে৷ সেই ভোটাভুটিতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷ কিন্তু তাঁর দলের অনেক সংসদ পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ অর্থাৎ চ্যান্সেলর হয়েও সমকামীদের বিয়ে সংক্রান্ত প্রস্তাব ঠেকাতে পারলেন না ম্যার্কেল৷
জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ায় জার্মান রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চাও দেখা যায়না৷ যুক্তিহীনভাবে শুধুমাত্র খামখেয়ালিপনা থেকে আগের সরকারের কোন সিদ্ধান্ত পরের সরকার পরিবর্তন করেছে এমনটা আমি দেখিনি৷ বরং সরকার পরিবর্তনের প্রভাব উন্নয়নের ধারায় যাতে না পরে সেটার দিকে খেয়াল রাখেন রাজনীতিবিদরা৷ 

দেশবান্ধব পররাষ্ট্রনীতি

বাঙালি লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর চাচাকাহিনীতে লিখেছিলেন এক জার্মান সেনা কর্মকর্তার কথা যিনি নিজের মেয়েকে ত্যাজ্য করেছিলেন শুধুমাত্র সে এক ফরাসি যুবককে বিয়ে করেছিল বলে৷ ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানির অনেক পুরনো শত্রুতা ছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেই শত্রুতাকে ঝেড়ে ফেলে দুই দেশ বরং বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে৷ এক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রেখেছেন দুই দেশের রাজনীতিবিদরা৷ আর সেই বন্ধুত্বের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক শক্তিশালী ইউনিয়নে পরিনত হয়েছে৷ 

জার্মানি এমন একটি দেশ যার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এমনকি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে৷ অথচ এই দেশগুলোর একে অপরের মধ্যে কিন্তু বিরোধ চরমে৷ বিদেশি বিভিন্ন দেশ বা শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে জার্মান রাজনীতিবিদরা, কূটনীতিকরা নিজের দেশের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন৷ আর দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশি নির্দিষ্ট কোন দেশ বা শক্তির দ্বারস্থ হয় না৷ ফলে দেশটির রাজনীতিতে বিদেশিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই৷

আবার এমনও নয় যে, জার্মানির সব রাজনীতিবিদ ধোয়া তুলশি পাতা৷ তবে, জনগণের প্রতি তাদের জবাবদিহিতা তুঙ্গে৷ তাই, কোন রাজনীতিবিদ যদি বড় ধরনের অপকর্মে জড়ান, তাহলে তার রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না৷ গত দশবছরে একাধিক রাজনীতিবিদকে আমি দেখেছি, যাদের অনেক বড় কিছু করার সুযোগ থাকলেও অপকর্মের দায় নিয়ে সরে যেতে হয়েছে৷ 

কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত


সরকারি চাকিরতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন  সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে  দুপুরে একটি আনন্দ মিছিল করার কথাও রয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। তার বক্তব্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে চলমান আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

বুধবার রাতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সবাই এ সিদ্ধান্ত নেন জানিয়ে হাসান আল মামুন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখব।

তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি করার পর যদি বুঝি আমাদের ন্যায্য দাবি প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি, তখন আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে একটি চিঠি দেব। যারা কোটার প্রাপ্য দাবিদার, তারা কোটা পাক, এটি আমরাও চাই। যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং প্রতিবন্ধী কোটার দাবিদারদের কোটা দিতে ওই চিঠিতে আহ্বান জানাব। তবে সেটি যেন প্রাপ্য পরিমাণযোগ্য হয়। এর পর তারা ছয় দফা দাবি জানান।

আন্দোলনকারীদের প্রথম দাবি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, সারাদেশে গ্রেফতারকৃত আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তি। আন্দোলনে ‘পুলিশি নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের দাবি রয়েছে তৃতীয় দফায়। চতুর্থ দাবি হলো, পুলিশ ও ঢাবি প্রশাসনের দায়ের করা পাঁচটি অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পঞ্চম দাবিতে রয়েছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও নেতাদের পরবর্তীতে হয়রানি যাতে না করা হয়। না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ফের আন্দোলন হবে। ষষ্ঠ দফায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীর যৌক্তির দাবিতে সহমত পোষণ করা সব শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুক্ত আহ্বায়ক নূরুল হক নূর, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, রাশেদ থান ও ফারুক হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। প্রেস রিলিজেও তাদের চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে।

  • Courtesy: আমাদের সময়.কম/Apr 12, 2018

ছাত্রদের আন্দোলনকে এখন বিতর্কিত করারও চেষ্টা করা হচ্ছে

মাহমুদুর রহমান মান্না


নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ভিসি’র বাড়িতে হামলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের আন্দোলনকে এখন বিতর্কিত করারও চেষ্টা করা হচ্ছে। যৌক্তিক প্রশ্ন আসতেই পারে, দিনভর আন্দোলনের মধ্যে ক্যাম্পাসে অসংখ্য পুলিশ থাকার পরও কেন এমন ভাঙচুর হতে পারলো? বুধবার এক সাক্ষাৎকারে মান্না এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোটা-সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্রদের যে আন্দোলন চলছে- সেটা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আছে। পুলিশকে ফুল দিয়ে তারা শান্তির বার্তা রেখেই আন্দোলনে নেমেছিলো। কিন্তু সেদিনই পুলিশ আর ছাত্রলীগের যুগপৎ আক্রমণ প্রমাণ করেছে সরকার ন্যায্য দাবির পক্ষে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও করতে দিতে চায় না।

  • Courtesy: আমাদের সময়.কম /Apr 11, 2018

Banks' NPL a curse for sustainable growth

ICCB calls for further efforts to combat the menace



The International Chamber of Commerce-Bangladesh has called growing non-performing loans (NPL) a curse for sustainable growth, urging the government to do more to combat the menace.

 The ICCB said until now, only limited action has been taken to penalise defaulters, curtail risks and strengthen bank management. “To tackle the sector's deep-rooted problems of corruption and poor risk practices, further efforts are needed,” according to an editorial in the current news bulletin of the chamber.

It said now that Bangladesh was on course to become a developing country, all efforts should be made to strengthen the banking sector, which is the backbone of the economy.

The chamber, in its bulletin for the January-March period, said the best way to meet the requirements and challenges of a developing country was to strengthen the capital and liquidity ratio of banks.

The NPL is an issue that is impacting the capital adequacy of the sector.

In Bangladesh, six state-owned commercial banks account for about a quarter of the total banking sector assets. They are supplemented by two state-owned specialised banks, 40 private commercial banks and nine foreign banks.

According to a Bangladesh Bank study covering 2012 to 2016, the average ratio of NPLs to total loans was about 27.10 percent.

It was 4.9 percent for private commercial banks, 6.5 percent for foreign banks and 22.56 percent for state banks.

The percentage of the classified loan to the total outstanding stood at 10.1 percent in June 2016, with private commercial banks accounting for 5.4 percent, state banks 25.7 percent and foreign banks 8.3 percent.

Until September 2017, the total banking sector loan amounted to Tk 752,730 crore, of which Tk 80,307 crore, or 10.67 percent, was bad debt.

If the restructured loans were included, the NPL goes up to 17 percent of the outstanding loans.

At the end of September, the state banks had a combined bad debt of Tk 38,517 crore, private banks Tk 33,973 crore, and foreign banks Tk 2,298 crore.

“Naturally, these high NPLs have affected the profitability and the overall capital to risk-weighted assets ratio,” said the chamber.

The ICCB said bad loans are routinely restructured to permit further lending to the same borrowers.

An average bank rescheduled bad loans of Tk 10,910 crore annually in 2010-14, according to a study of the Bangladesh Institute of Bank Management.

Despite the regular injection of funds, state-run banks have not been able to improve their NPL positions, said the editorial. 

The government has earmarked Tk 2,000 crore in the current budget to recapitalise the state-owned banks.

  •  Courtesy: The Daily Star/Apr 12, 2018


Save Sundarbans from torment

Says rights activist Sultana Kamal; greens criticise govt decision of allowing 190 industrial units within 10km of the forest



Green activists yesterday demanded that the government keep all kinds of industrial and haphazard human activities away from the ecologically critical area (ECA) of the Sundarbans.

Activities such as cutting woods, poaching and building establishments inside the critical area should not be allowed, they added.

Bangladesh declared the 10-kilometre periphery of the mangrove forest as the ECA in 1999, a couple of years after the Unesco listed the Sundarbans as a natural world heritage site.

As per Bangladesh Environment Conservation Act 1995 (amended in 2010), no one is allowed to set up any factory in the ECA.

The ECA is the shield and protector of the Sundarbans, they said at a press conference. The National Committee to Save the Sundarbans and Bangladesh Poribesh Andolon (Bapa) organised it at Dhaka Reporters' Unity.

However, going against its own policy, the government over the last few years permitted setting up of 190 industrial and commercial units in the ECA, which, according to experts, poses a serious threat to the biodiversity of the world's largest mangrove forest.

Twenty-four of those units belong to the “red category”, meaning those are extremely harmful to the fragile biodiversity of the Sundarbans, said rights activist Sultana Kamal.

The worrisome point is that recently an amendment has been made in the related law to legitimise those “red category” units and declare them “green” or “environment friendly”, she said, reading a written statement.

“Changing scientific decisions… through such an administrative order is a rare incident,” she added. She demanded saving the Sundarbans from manmade “torment”.

“We are stunned and concerned about such an arbitrary decision,” she said. After the changes, these 24 “red category” units will not have to show any Environmental Impact Assessment (EIA), she added.

EIA is a comprehensive assessment method of analysing environmental issues that are primarily or secondarily related to the planning, implementation, operation and maintenance stages of a project for sustainable development. EIA analyses the project from the environmental point of view.

Sultana said those industries will not have to explain what measures they have taken to control pollution or inform the authorities about waste management.

She demanded a logical explanation from the government regarding the changes.

Responding to a query, she said green activists will continue their movement to protect the world's largest mangrove forest and to stop building ecologically harmful establishments such as the Rampal Power Plant near it.

Sultana, also convener of the National Committee to Save the Sundarbans, urged all conscious citizens to join the movement.

Bapa General Secretary Abdul Matin said there were also other categories in between the “red” and “green” ones. However, the government declared the “red category” industrial units “green” overlooking other possibilities, he added.

Under the ECA and ECR (environment conservation rules), for the purpose of issuance of Environmental Clearance Certificate, the industrial units and projects have been classified under four categories: Green, Orange A, Orange B and Red.

The category is based on the location and its impact on the environment.

Save the Sundarbans Foundation President Sheikh Faridul Islam said the government should work as per law. It should not give any privilege to any section.

Bapa Joint Secretary Sharif Jamil said the process of turning “red category” industries into “green” ones is a “policy-level corruption”.

  • Courtesy: The Daily Star Apr/ 12, 2018

অমানবিক আচরণ

মিরপুরে স্কুলমাঠে ক্লাবঘর কেন?



মিরপুরের বাউনিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ক্লাবঘর নির্মাণ করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত শৌচাগারগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাড়াও ৩০০ শিশু কষ্টে আছে। শৌচাগারের পয়োনালা বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে তারা প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেক সময় শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে কাজটি করতে হয়। দীর্ঘ সময় পায়খানা বা প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।

যেকোনো বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্ষালনাগার থাকা অপরিহার্য। মিরপুরে বাউনিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছিল। প্রথম আলোর রাজধানী পাতার খবর অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশ দখল করে স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সাবেক সাংসদ হারুন মোল্লার নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শৌচাগারের পয়োনালা বন্ধ হয়ে যায়। এতে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমস্যাটি সমাধানে ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েও সফল হননি। কেননা ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের বরাবরই আইনের ঊর্ধ্বে ভাবেন। না হলে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে তাঁদের ভাষায় ‘কমিউনিটি ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করবেন কেন? ক্লাবের সহসভাপতি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পয়োনালার সমস্যার কারণে আগে থেকেই ছয়টি শৌচাগারের মধ্যে দুটি বন্ধ ছিল। আর ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর সব কটি বন্ধ হয়ে গেছে। যাঁরা স্থানীয় মানুষের হিতসাধনে কমিউনিটি ক্লাব করেছেন, তাঁদের কি বিদ্যালয়ের ৩০০ শিশু শিক্ষার্থীর প্রতি কোনো দায় নেই?

ক্লাবের সহসভাপতির দাবি যে সম্পূর্ণ অসত্য, তার সাক্ষী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা । তিনি সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেও সফল হননি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসহযোগিতার কারণে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও বলেছেন, ক্লাবের কর্মকর্তারা কোনোভাবে লাইন মেরামত করে দিতে রাজি হচ্ছেন না। তাঁরা বিদ্যালয়ের জায়গায় ক্লাব নির্মাণ করে পয়োনালা বন্ধ করে দেবেন। আর সেটি চালু করার কথা বললেও শুনবেন না। সরকারি দলের নামে এই দৌরাত্ম্য আর কত দিন চলবে?

স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা, যাঁর বাবার নামে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত, তিনিও স্বীকার করেছেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় ক্লাব হতে পারে না। কিন্তু সাংসদের এই স্বীকারোক্তি যথেষ্ট নয়। তাঁর সম্মতি ছাড়া যদি ক্লাব হয়েও থাকে, তিনি সেটি ভেঙে দিচ্ছেন না কেন? তাঁর বাবার নাম ব্যবহার করে অবৈধ দখলদারি কেন মেনে নিচ্ছেন? অবিলম্বে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে ক্লাবটি সরিয়ে ফেলা হোক। শিশু শিক্ষার্থীরা যাতে প্রক্ষালনাগারটি ব্যবহার করতে পারে, সাংসদ সেই ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।

  • Courtesy: Peothom Alo /সম্পাদকীয় /Apr 12, 2018

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জনমত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে


তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাটি একটি কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার এটি টানা প্রায় নয় বছর ব্যবহার করার পর এখন প্রস্তাবিত ডিজিটাল আইনে তার অদলবদল করেছে। আমরা এতে বিস্মিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। যদিও আমরা ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে উপযুক্ত আইন থাকার পক্ষে। সরকার আবারও প্রমাণ করল, তারা কত সহজেই জনমত উপেক্ষা করতে পারে। খসড়া ডিজিটাল আইনের যে প্রায় অর্ধডজন ধারা সম্পর্কে গণমাধ্যম, বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, তার সবই অপরিবর্তিত রেখে সোমবার জাতীয় সংসদে বিল আকারে তা পেশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিল পাস হলে তা বাক্‌স্বাধীনতা এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার প্রতি নতুন করে হুমকি সৃষ্টি করবে।

প্রস্তাবিত আইনের যেসব দিক আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে, তার মধ্যে তিনটি বিষয় জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে প্রতীয়মান হয়।

এক. এমন অনেক নতুন অপরাধ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। যেমন মানহানির সংজ্ঞা ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি অনুযায়ী আমরা বুঝব। কিন্তু অন্য অনেক অপরাধ এতটাই অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক যে তা অপব্যবহারের পথ খুলে দেবে। এই বিল একটি অধিকতর পুলিশি রাষ্ট্রের বিপদের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ‘দেখিলে শুনিলে নীতিভ্রষ্ট’ হওয়ার মতো অপরাধের অস্পষ্ট পরিভাষা নিয়ে নাগরিক সমাজের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ ছিল। বিশেষ করে, গত কয়েক বছরে এসব বিষয়ে অনেক সভা-সেমিনার হয়েছে এবং আইনমন্ত্রী এসব কালাকানুন বাতিলের অঙ্গীকার করেছিলেন। 

দুই. ফৌজদারি আইনের আওতায় নৃশংস অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে দণ্ডবিধিতে যে শাস্তির পরিমাণ স্থির করা আছে, শাস্তির সেই অনুপাতের তুলনায় ডিজিটাল আইনের আওতায় জেল ও জরিমানার পরিমাণ বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। তিন. আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রচলিত দণ্ডবিধির আওতায় শাস্তির মাত্রা নির্ধারণে বিচারকের স্বাধীনতা অবারিত রাখা আছে। যেমন দণ্ডবিধিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। জরিমানার টাকার অঙ্ক বেঁধে দেওয়া নেই। কিন্তু ডিজিটাল আইনে ন্যূনতম কারাদণ্ড ও জরিমানার টাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফসল যে বাহাত্তরের সংবিধান, তার ৩৯ অনুচ্ছেদে সংসদকে বাক্‌স্বাধীনতা হরণকারী আইন তৈরি করার এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। বরং সংসদ যাতে যা খুশি তা-ই করতে না পারে, সে জন্য শর্ত দেওয়া হয়েছে যে সংসদকে অবশ্যই যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে আইন করতে হবে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক্‌ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক কাঠামোগুলোর মধ্যে সর্বাধিক মৌলিক। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফাসহ তাঁর সব কর্মসূচিকে বাংলার জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে সাংবাদিকেরা অকুতোভয় ছিলেন। সেই সাহস ও ঐতিহ্যকে স্বীকার করতেই সংবিধানে বাক্‌স্বাধীনতার বাইরে সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতাকে আলাদা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, সে কারণে এ রকম অনুচ্ছেদ উপমহাদেশের অন্য কোনো সংবিধানে নেই।

সুতরাং, আজ সময় এসেছে সব স্তরের সচেতন মহলকে প্রস্তাবিত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার। আশঙ্কা করি, কোনো প্রকার সংশোধনী ছাড়াই সরকার বিলটি সংসদে দ্রুত পাস করিয়ে ফেলতে পারে। ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হয়েও জাতীয় পার্টির তরফে যেটুকু প্রতিবাদ সংসদে করা হয়েছে, তা ইতিবাচক। দলটি কি অধিকতর ভূমিকা নিতে পারে না?
  • Courtesy: Prothom Alo/ সম্পাদকীয় /Apr 11, 2018