— সৈয়দ কবির হুসেন
খুলনায় নির্বাচন হয়ে গেল রিমোট কন্ট্রোলে — পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ম্যাজিস্ট্রেট, টহল সব ছিল । ছিল না সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। খুলনায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে বারবার বিএনপি ‘সেনা মোতায়েন’ এর জন্য অাকুল অাবেদন জানালেও নাকচ করে দিয়েছে ঠুঁটো জগন্নাথ নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে তাদের কর্মতৎপরতা ও পারঙ্গমতা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে সবকিছুর যেমন ব্যতিক্রম থাকে নির্বাচন কমিশন পেরেছে জাতিকে উপহার দিতে যার বর্ণনায় দৈনিক প্রথম অালো বলেছে ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন।’ খুলনা সিটি নির্বাচনের ভাগশেষ হলো - বাংলাদেশে মানুষের ভোটাধিকার সুরক্ষায় একমাত্র জাতীয় সেনাবাহিনীই ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যসব বাহিনী তাঁদের ব্যর্থতা বারবার প্রমাণ করে চলেছে।
বলাবাহুল্য, খুলনার মানুষ দেখেছে কম্যান্ডো স্টাইলের নির্বাচন। ক্লিন সার্জিক্যাল অপারেশন। বেশির ভাগ নেতা কেন্দ্রে অাসার সাথে বা রিমোট কন্ট্রোলের নির্দেশে ‘জাল-ভোট-গ্যাং’ এসেছে অতর্কিতে ,কাজ সারতে দেরি হয়নি যদিও পুলিশ ফরজ কর্তব্য হিসেবে তাদেরকে সতর্ক করে করে বলেছে ‘সিল’ মারতে এতো দেরি! পুলিশের অালীগ-ছাত্রলীগের দোসর হিসেবে কাজ করতে ইন্ধন তো ছিলই এবং অাছে।
গ্যাং-এর কম্যান্ডো ট্রেনিং তো ছিলই। তারা প্রতিপক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে্,দল বেঁধে ঢুকে ব্যালটে সিল মেরে, বাবা-শিশু মিলে ভোট দিয়ে, দল বেঁধে জাল ভোট দিয়ে, কেন্দ্রে অাগত নিরীহ ভোটারদেরকে সিল মারতে বাধ্য করার সব কাজই করেছে। দুপুরের অাগেই ব্যালট শেষ হয়েছে। সবই ঘটেছে। পুলিশকে যখন খালেকের বিরোধী পক্ষকে ডেকেছে সাহায্যের জন্য তখন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বোবা, অঙ্গপ্রতিবন্ধী। খবর পেয়ে এসেছে ওরা যখন শেষ পর্যন্ত এসেছে সম্ভবত রিমোটের নির্দেশ মাফিক তখন ‘ফেরেশতারা অলরেডি কাম করিয়া কোথায় জানি লুকাইছে’।
প্রথম অালোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে ১১টার পর ভোটের পরিবেশ বদলাতে থাকে। সোনার ছেলেদের কাম সারতে লেগেছে অাধ ঘণ্টারওকম। তারা ফিরে যাবার পরই কেবল শৃঙ্খলা বাহিনী এসেছে তার অাগে নয়। ততোক্ষণে অাতঙ্কিত ভোটার কেন্দ্র ছেড়েছে। অার এসব চলে মাহেন্দ্রক্ষণ সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ১২টা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর ব্যালটে সিল মারে। প্রথম অালোর টিপু সুলতার ও সেলিম জাহিদের বাই-লাইন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় সবকেন্দ্রের সামনেই ছিল অাওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীর জটলা। এরা কার্যত কেন্দ্রের প্রবেশমুখ নিয়ন্ত্রণ করে। ভোটার, পর্যবেক্ষক যেই অাসুন তারা নজরদারি করে, যেটা করার কথা ছিল পুলিশের।
৫৪টি কেন্দ্রের অস্বাভাবিক ভোট পড়ে। এই অস্বাভাবিকতার একটাই অর্থ হতে পারে। নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পারেননি। নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকারি দল। এর অন্যতম প্রমাণ প্রথম অালোর প্রতিবেদনেই অাছে। একজায়গায় বলা হচ্ছে, শহরের বসুপাড়ার নুরানি বহমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের পর্যৈবেক্ষক দলের একজন মাননীয় সদস্য অাওয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতার হাতে অপদস্থ হয়ে বিষয়টি ঘটনাস্থল থেকে উর্ধ্বতন কর্তাদের জানিয়েছিলেন। কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে রওনা দিলে পেছন থেকে তাকে একরকম ধাওয়া করা হয়।
‘প্রায় সব ভোটকেন্দ্রের অনতিদূরে নৌকা প্রতীকের একটি করে অস্থাযী নির্বাচনী কার্যালয় ছিল।সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে নৌকাপ্রতীকের লোকজন সেখানে অবস্থান নেয়।’ ঠিক এর পরেই দেখা যাচ্ছে, রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ‘অনেক কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টরা সেখানে প্রথম বাধা পান।’ খুবই মজার ও কৌতুহলের বিষয় হলো এখানে কলমের খোঁচার অাভাস দেখা যাচ্ছে। তবে সেটা তেমন যুৎসই হতে পারেনি। কেননা, পাঠক যাদের বুদ্ধি অাছে তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করবেন যে অাগের বাক্যের একটি জায়গায় বলা হচ্ছে, ‘নৌকা’ প্রতীকের লোকজন সেখানে অবস্থান নেয়। অর্থাৎ প্রতিবেদকের বক্তব্য ছিল, এসব কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টরা প্রথম বাধা পান। অনেকে শারীরিকভাবে অাঘাত পেয়ে বা অপমানিত-অপদস্থ হয়ে সেখান থেকে ফিরে গেছেন। প্রতিবেদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকাল অাটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবার ৩০ বা ৪৫ মিনিট অাগে এ ঘটনাগুলো ঘটে গণমাধ্যম কর্মীরা কেন্দ্রে পৌঁছানোর অাগেই। এরা কারা? হাঁসের মাঝে বক! আকলমন্দ বুঝিয়াা লন।
কি হয়েছে তাতে? নাগরিক চেতনায় যারা ভোট দিতে এসেছিল এসব ঘটনা দেখে বাড়ি ফিরে গেছে। অার কষ্ট না দিয়ে সরকার দলের কর্মীরা ব্যালটে বেদম সিল মেরেছে। এমনকি এও হতে পারে তারাই ধানের শীষে সিল মেরেছে তা না হলে মঞ্জু এতো ভোট পায় কি করে? কথাটা বলেছেন খুবই তাৎপযপূণভাবে। মাজেজা বুঝতে সুুরমা লাগাতেে হবে চোখে। যারা বলেছেেন ভোট কে দিল তাদেের কাছেেই খবব আছেে। এদিকে বিবিসি বলছেে, তারা অনেক কেন্দ্রে দেখেছে নৌকার লোকেরা ধানের শীষ ব্যাজ পরে আছে।
কী দেখছি অামরা প্রতিবেদনে? বলা হচ্ছে, নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা গাড়ি ও মোটর সাইকেলে নৌকা প্রতীকের স্টিকার লাগিয়ে অবাধে চলাচল করেন। পুলিশ একটি মাত্র কেস ছাড়া কাউকেই এজন্য শাস্তি দেননি বা অর্থদণ্ড করেননি। তাইলে আলীগে ভোট দিছে মঞ্জুরে!
খুলনা শহরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন বলেছেন, খালেক সেই ব্যক্তি যিনি ২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচনে বিনা বাক্যব্যয়ে পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। এ বারের এই নির্বাচনে তাঁকে বিজয়ী দেখানো হলো প্রায় একই পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে। তাঁর মতো ব্যক্তি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, প্রতিদ্বন্দী লোকজনকে পুলিশ দিয়ে মাঠ ছাড়া করে এভাবে জিতবেন অার তাতে তার সায় থাকবে তা অনেকে ভাবতেই পারেননি। শহরের মানুষ এই প্রথমবারের মতো দেখেছে নিয়ন্ত্রিত ভোট। গণতন্ত্রও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে যেমন ফিল্ড মার্শাল এটা করেছিলেন। এ বিষয়ে তালুকদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব এড়িয়ে যান। কীই বা করবেন তিনি। তিনি তো অার নাটের গুরু নন। তিনি কেবলই অাওয়ামী ভোটরঙ্গের নাচের পুতুলের এক পুতুল বৈ আর কিছু নন। খুলনা সিটি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর দিকে শোনা গিয়েছিল, তালুকদার খালেক এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাননা। দৃশ্যপট পরিস্কার — অাওয়ামী লীগ ‘প্রার্থী-সংকটে' ভুগছে। নেতা অাসলে তেমন মিলছে না। কেন? জবার শুনতে হবে ইতিহাসের কাছে যে ইতিহাস লেখা হয় না।
আর, ভোট-ডাকাত যখন স্বয়ং সরকার, তার প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, তখন মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে। খুলনা নির্বাচন প্রমাণ করে দিল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর কোন স্থান নেই।