Search

Monday, May 21, 2018

Bangladesh government must increase spending on education


A DECLINE in spending on education — from 14.4 per cent of the total government expenditure in the 2017 financial year to 12.59 per cent in the 2018 financial year — belies the government claim of having improvement in the quality of education as a priority. Bangladesh spends, as New Age reported on Sunday quoting from the 2017–18 Global Education Monitoring Report that UNESCO, 1.9 per cent of the gross domestic product, which accounts for about 13 per cent of the total government expenditure while it should range, as the report suggests, between 4 per cent and 6 per cent of the gross domestic product or 15 per cent and 20 per cent of the total government expenditure. 

The figures for Bangladesh, as the report says, remain less than what other South Asian neighbours have in spending on education. The war-torn Afghanistan is reported to have spent 3.3 per cent of the gross domestic product on education, Bhutan 7.4 per cent, India, 3.8 per cent, the Maldives 5.2 per cent, Nepal 3.7 per cent, Pakistan 2.6 per cent and Sri Lanka 2.2 per cent.

In 2015, the median global public expenditure on education was 4.7 per cent of the gross domestic product and even the median South Asian expenditure was 3.3 per cent and Bangladesh’s spending is nowhere near the South Asian median. The allocation for education in the budget decreased from 15 per cent in the 2011 financial year to 11–12 per cent in the 2018 financial year, having telling effects on national education. 

Education is the door to a sound nation and quality education often calls for additional resources, higher pay for teachers, reduced class size and improved facilities. With the government coming to spend less on education, it will be highly difficult, or almost impossible, to improve the quality of national education. This seems more so as while the spending on education thins away, the number of students keeps increasing, leaving managers of education grappling with the situation that may ultimately make a mess of it. The decline in spending on education also forces the government to largely ignore educational institutions in rural areas, or spend a bit more on institutions in urban areas, contributing to the widening disparity between urban and rural students. This calls out the government on spending more on education. But all education stages may not need the same amount of money and the government should, therefore, ensure that the money is allocated where it will have the greatest impact.

In a situation like this, the government must increase spending on education to improve the quality and the reach of education. While doing so, it must attend to issues such as the misuse and wastage of money; the increased spending would, otherwise, will have no meaning in the end. The government must also not solely focus on equity, which has so far not been achieved, but also on adequacy as far as education spending is concerned. 

  • Courtesy: New Age /Editorial May/ 21, 2018

রমজানে অস্বাভাবিক বাজার

অতিরিক্ত মুনাফা ও চাঁদাবাজির রাশ টানুন


রমজান মাস শুরু হয়েছে এবং ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বাস মিথ্যা প্রমাণ করে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বিভিন্ন মাত্রায় বেড়েছে। কিন্তু অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে এই মাত্রায় দাম বাড়ার যুক্তিসংগত কারণ নেই, কেননা বাজারে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বিপুল। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে পণ্যের দাম বাড়ে, কিন্তু যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, সেগুলোর কোনোটার সরবরাহে ঘাটতি আছে—এমন খবর পাওয়া যায়নি।

তাহলে এমন অস্বাভাবিক মাত্রায় দাম বাড়ার কারণগুলো কী হতে পারে?

প্রথমত, ব্যবসায়ীরা রমজান মাস উপলক্ষে বাড়তি মুনাফা করার লোভ সামলাতে পারছেন না। একটি উদাহরণ চিনি, যার চাহিদা রমজান মাসে বেশ বাড়ে। সব উৎস থেকে পাওয়া খবর হলো, দেশে এই মুহূর্তে চিনির মজুত আছে মোট চাহিদার তুলনায় বেশি, বাজারে সরবরাহেরও কোনো ঘাটতি নেই, উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমেছে। কিন্তু দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫ টাকা বেড়েছে। বোঝা যায়, ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়েছেন। যেমন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রোজা উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা তা বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা দরে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার ফলে যেসব আমদানি পণ্যের দাম দেশের বাজারেও কমেছে, সেগুলোর খুচরা বিক্রেতারা দাম কমাননি। ভোজ্যতেল ও ছোলার ক্ষেত্রে এ রকম দেখা যাচ্ছে, দাম কমার সুফল পাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা, ভোক্তারা নন। লবণ কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের প্রতি কেজি লবণে ১০ টাকা কমিশন দিচ্ছে, ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমাচ্ছে না। অর্থাৎ এসব ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামাফিক।

দ্বিতীয়ত, কৃষিজাত খাদ্যপণ্যের দাম ভোক্তা পর্যায়ে দুই থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদক বা কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বগুড়া জেলার মহাস্থান হাটে কৃষক এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করে পাচ্ছেন ২০ টাকা, সেই মরিচ মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। বেগুন, পটোল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, শসাসহ অন্যান্য সবজির দামেও এ রকম অস্বাভাবিক তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। উৎপাদনকারী বা কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসলের যে দাম পান, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেন না; অনেক ক্ষেত্রে লাভ দূরে থাক, উৎপাদন খরচই ওঠে না। কিন্তু সেই একই কৃষিপণ্য ভোক্তাকে কিনতে হয় অনেক বেশি দামে—আমাদের দেশের বাজারব্যবস্থার এই অসংগতি প্রায় সারা বছরই লেগে থাকে। কিন্তু রমজান মাসে দেখা যাচ্ছে অসংগতিটা বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক মাত্রায়।

এর কি কোনো প্রতিকার নেই? কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বগুড়া জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তার বক্তব্য হলো: ‘পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের দামের পার্থক্য নিয়ে জেলা পর্যায়ের সভায় বহুবার আলোচনা হয়েছে। সবজির খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণের উপায় খোঁজা হচ্ছে।’ আমাদের বক্তব্য হলো, পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের অস্বাভাবিক পার্থক্য গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখতে হলে এই অস্বাভাবিকতার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সবজির পাইকারদের সংঘবদ্ধভাবে কৃষকদের ঠকানোর অভিযোগ বহুলালোচিত, কিন্তু খুচরা বাজারেও যে একধরনের সংঘবদ্ধ ‘পকেট কাটা’র অভিযোগ আছে, তা নিয়ে আলোচনা কম হয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তা ছাড়া, পণ্য পরিবহনের পথে বিভিন্ন পর্যায়ে যে চাঁদাবাজি চলে এবং রমজান মাসে যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, সেটা দমন করার প্রবল উদ্যোগ প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। এসব বন্ধ করতে হবে।
সর্বোপরি বাজারের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো / মে ২১, ২০১৮ 

Sunday, May 20, 2018

‘প্রজ্ঞাপন না হলে কঠোর আন্দোলন’ — রাশেদ খান-নুরুল হক



২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটাভিত্তিক  নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন বা বিক্ষোভ। স্বাধীনতা যুদ্ধের দীঘ চার দশকের বেশি চালু থাকা  কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিক বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা।

বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের বেশি কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। তবে নিয়ম অনুসারে এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

এদিকে সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদসমূহে চাকরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরার জন্য সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হয়েছেন কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান এবং নুরুল হক নুরু। যৌথ সাক্ষাৎকার‌টি নিয়েছেন ব্রে‌কিং‌নিউজের স্টাফ ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।


ব্রেকিংনিউজ: কোটা আন্দোলনের শুরুর কথা সম্পর্কে কিছু বলুন।

রাশেদ খান-নুরুল হক: কোটার মাধ্যমে চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময়ে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, তখনকার সময়ে সরকারের সাথে আলোচনাও করেছিল। কিন্তু এটা আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কোটা নিয়ে এ পর্যন্ত তিনবার সরকারের পক্ষ থেকে তিনটা কমিশন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোটারই বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু মুখেই সংস্কারের কথা সীমাবদ্ধ ছিল। এ কারণে ধীরে ধীরে সবার মধ্যেই একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে  সেজন আমাদের এই আন্দোলন। এর পরিপেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করি। কোটার কারণে যারা চাকরি পাচ্ছে না, পদগুলো ফাঁকা হচ্ছে অথচ আপনার-আমার যোগ্যতা আছে কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না। তারা আন্দোলনের জন্য কোনো প্লাটফর্ম পাচ্ছিল না বা নেতৃত্ব পাচ্ছিল না। আমরা যখন প্রথম ডাক দিই ১৭ ফেব্রুয়ারি তখন শাহবাগে শুধু মানববন্ধন করি। সেই মানববন্ধনে অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে যোগ দেয়। মানববন্ধন আমাদের সাহস জুগিয়েছিল যে এইভাবে যদি আমরা একটা জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি তাহলে কোটা সংস্কার হলেও হতে পারে। এরপর ১১মার্চ আমরা প্রচারের জন্য সাইকেল র‌্যালি করি। এরপর আমরা ঢাকার বাইরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে একটা আহ্বায়ক কমিটি করি। শুধু ছাত্ররাই নয় শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সবাই আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে। ১-৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার সপ্তাহ পালিত হয়। এই আন্দোলনের সবাই আমাদের সাথে এসে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমরা আগামী প্রজন্মকে একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার ও যোগ্যদের যোগ্য স্থান দেয়ার জন্য এই আন্দোলন করছি।

ব্রেকিংনিউজ: ঢাবির ভিসির বাসায় হামলা সম্পর্কে কি বলবেন?
রাশেদ খান-নুরুল হক: হামলার পরে আমাদের ভিসি স্যার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় যারা হামলা করেছে তারা খুবই দক্ষ এবং পরিকল্পিতভাবে করেছে। এই হামলার সাথে আমার ছাত্ররা জড়িত নয়।’ এমনকি ডিএমপি কমিশনারও বলেছিলেন, এই হামলা দক্ষ লোক ছাড়া করতে পারে না। তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েই কিন্তু হামলার ব্যাপারে আমরা জড়িত না সেটি পরিষ্কার। একটা গোষ্ঠী আমাদের রাজনৈতিকভাবে জামায়াত-শিবিরের কর্মী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কিন্তু আমরা বলেছি সারা বাংলার ছাত্রসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলন করছে এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। তারা প্রচার করেছিল যাতে আমাদের আন্দোলন দুর্বল হয়ে যায়। তারা ওই প্রচারে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মনে করি তারাই ভিসি স্যারের বাড়িতে জঘন্য এই হামলা চালিয়েছে। নির্দিষ্ট করে বলা যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদি হাসান ৮ এপ্রিল পুলিশের সাথে ছাত্রদের ধরে ধরে মেরেছে সেই ভিডিও ইউটিউবে আছে। আমাদের ধারণা ভিসির বাসায় হামলা মেহেদি হাসান ও তার নেতৃত্বে হয়েছে।

ব্রেকিংনিউজ: রাশেদ খানের কাছে প্রশ্ন, একটি গোষ্ঠী আপনাকে শিবিরের কর্মী বলে দাবি করছে এই ব্যাপারে কি আপনি বলবেন?
রাশেদ খান-নুরুল হক: এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সকল গোয়েন্দা বিভাগ যারা নেতৃত্বে আছি আমাদের সবাইকে নিয়ে তদন্ত করেছে।  আন্দোলনের গত তিনমাসে তারা কেউই কোনো সময় বলেনি আমরা কেউ কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের কিংবা আমাদের পরিবার রাজনীতির সাথে জড়িত অথবা স্কুল-কলেজে ছাত্র রাজনীতির কোনো পোস্টে ছিল। এ ধরনের কথা কোনো পত্রিকাও দেখাতে পারেনি। ইত্তেফাকের মতো পত্রিকা আমার  শিবিরের যে সম্পৃক্ততার কথা লিখেছিল সেটি ভুয়া প্রমাণ হয় এবং পরে তারা ক্ষমাও চেয়েছে। আমার বাবা একজন কাঠমিস্ত্রী। আমার বাবা অথবা আমার পরিবারের কারো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যদি সম্পৃক্ত থাকে তাহলে কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি চ্যালেঞ্জ করছি ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাইবো।

ব্রেকিংনিউজ: যে ৫টি দাবি করে কোটা আন্দোলন চলছিল তার সবগুলো যদি সরকার না মেয়ে নেয় তাহলে আপনাদের ভূমিকা কি হবে?
রাশেদ খান-নুরুল হক: আমাদের ৫ দফা দাবির ব্যাপারে সরকারের প্রতিনিধি দলের সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাদের দাবির ৫৬% থেকে কমিয়ে ১৫% করতে চেয়েছে। এখানে আমরা ৫% ছাড় দিয়েছি। ১৫% করে হলেও দ্রুত আমরা দ্রুত প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন চাই।

ব্রেকিংনিউজ: ছাত্রলীগ কি আপনাদের সাথে আছে?
রাশেদ খান-নুরুল হক: আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীরা আমাদের সাথে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। ছাত্রলীগ যেহেতু একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন সেহেতু তাদের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর  ৮ এপ্রিলের পর থেকে সরাসরি তারা আমাদের সাথে নেই। তবে ছাত্রলীগের একটি বৃহৎ অংশ আমাদের সাথে এখনও রয়েছে। আপনারা জানেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে কোটা সংস্কার আন্দলোনের জন্য অনেকেই পদত্যাগ পর্যন্ত করেছে।

ব্রেকিংনিউজ: আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কি আপনারা সন্তুষ্ট?
রাশেদ খান-নুরুল হক: এই আন্দোলনটা ছিল সাধারণ ছাত্রদের। যদি এই আন্দোলনে জামায়াত-শিবির ঢুকে থাকে তাহলে প্রশাসন শুধু তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবস্থা নিত। কিন্তু কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে ঢুকে গুলি চালাবে? রাবার বুলেট নিক্ষেপ করবে? কেন টিয়ারশেল মারবে? কেন হলের মসজিদে ঢুকে আমাদের উপর হামলা চালাবে? আমরা মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই আন্দোলনে সম্পূর্ণ  ব্যর্থ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ তাদের ক্যাম্পাসে তাদের অনুমতি ছাড়া কিভাবে পুলিশ রাতভর সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালালো? সেদিন শুধু পুলিশই নয় অনেক বহিরাগত ক্যাম্পাসে রামদা চাপাতি নিয়ে শোডাউন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়নি?


ব্রেকিংনিউজ: কোটা প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে সর্বশেষ আপনাদের অবস্থান কি?
রাশেদ খান-নুরুল হক: বিভিন্ন কুচক্রীমহল আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার বলেছি আমরা কখনই সরকারবিরোধী নয় আমরা সরকারের উন্নয়নের সহযোগী। যে কারণে যখনই সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে আমরা তখনই তাদের কথা শুনেছি। তার বড় প্রমাণ হল- গত ৯ এপ্রিল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও মাননীয় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডেকেছিলেন আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলাম এবং ২৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ন্যাম ভবনে ডেকেছিলেন সেখানেও আমরা আলোচনার জন্য গিয়েছি। তারা আমাদের প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে ৭ মে পর্যন্ত ঘোষণা দেয়ার পরও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার পর আমরা আবারও সোমবার (১৪ এপ্রিল) আন্দোলনে নামি এবং মঙ্গলবার (১৫ মে) সারা দেশে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে নির্দেশনে দেন তার উপরে আর কোনো নির্দেশনা থাকে না বলে আমরা মনে করি। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরেই আমরা আনন্দ মিছিল করেছি এবং তাকে আমরা ‘মাদার অব এডুকেশন’ নামেও ঘোষণা দিয়েছি। আমরা মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটার ব্যাপারে যে কথা বলেছেন তা দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।

ব্রেকিংনিউজ: সময় দেয়ার জন্য আপনাদের দুজনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রাশেদ খান-নুরুল হক: ব্রেকিংনিউজ ও আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।


  • কার্টেসি — breakingnews.com.bd

গণতন্ত্রহীণতার কারণেই দেশে অস্থিরতা — হেলেন জেরিন


 এস এম আতিক হাসান


বিএনপির রাজনীতিতে যে কয়জন নারী নেতৃত্ব মেধাবী, পরিশ্রমী, সৎ ও বিনয়ী তাদের মধ্যে অন্যতম মাদারীপুরের কৃতীসন্তান ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি  হেলেন জেরিন খান। নেতৃত্বের অসাধারণ গুণাবলি এবং সবসময় রাজপথ আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় ক্রমে হয়ে উঠছেন বিএনপির অপরিহার্যদের একজন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন।

দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের। ২০০১ সালে সংরক্ষিত আসনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হন এই রাজনীতিক। দীর্ঘ সময়ের কথোপকথনে উঠে আসে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও ব্যক্তিজীবনের জানা-অজানা নানা তথ্য-উপাত্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট এস এম আতিক হাসান।

ব্রেকিংনিউজ: দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু ব্যখ্যা করুন।
হেলেন জেরিন খান: দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কি বলবো? দেশে তো একনায়কতন্ত্র চলছে। এতদিন দেশের মানুষ বলেছে, এখন এটা সারা বিশ্ব থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছে বর্তমান এই স্বৈরাচারী সরকার। আপনি জানেন যে কিছুদিন আগে জার্মানির একটি সংস্থা যে রিপোর্টে নতুন যে পাঁচটি স্বৈরাচারী দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বর্তমানে যারা বিরোধী দল তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য যা যা করার দরকার সেটা ধাপে ধাপে করছে এই অবৈধ সরকার। প্রথম তারা  ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভুয়া ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। তারপর বিরোধী দল যখন এই ভুয়া নির্বাচনের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে তখনই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার এবং হয়রানি শুরু করে।

বিরোধী দলের চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কেউ হয়রানি করা হচ্ছে। শত শত মামলা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ৭৮ হাজারের অধিক মামলা দিয়েছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসনকে মিথ্যা ও ভুয়া মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছে। শুধু কারাগারে রেখেছে তা নয়, এই মামলা নিয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে যদি কারো পাঁচ বছরের সাজা হয় সাধারণত তার বয়স বিবেচনা করে জামিন দেয়া হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া একজন মর্যাদাশীল মানুষ এবং তার বয়স অনেক, তিনি অসুস্থ এসব বিষয় বিবেচনা করলে জামিন পান। কিন্তু হাইকোর্ট জামিন দিলেও সুপ্রিম কোর্ট তাকে আটকে দিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। আসলে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। বিরোধীদল কোনো সভা করতে পারে না। মানববন্ধন করতে গেলে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে ধরে নিয়ে যায়। তারা বলে যে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিন্তু আমরা মনে করি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না আসলে তারা ভুয়া সরকারের পেটোয়া বাহিনী এবং ভুয়া সংগঠনেরই কেউ হতে পারে তারা। গুম খুন হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এখন অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে।

ব্রেকিংনিউজ: দেশের এমন পরিস্থিতিতে আপনাদের দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনকে কীভাবে দেখছেন?
হেলেন জেরিন খান: দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন এই মুহূর্তে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে বারবার হারানো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সবচেয়ে বেশি যার অবদান, তিনি হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই আপসহীন নেত্রীকে অন্যায় ও সাজানো মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমি মনে করি শুধু বেগম খালেদা জিয়াকে না পুরো দেশকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে পারলে সারা দেশের মানুষ মুক্ত হবে। সে কারণে আমি মনে করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে মুক্ত করা দরকার, যদি দেশকে মুক্ত করতে হয়। দেশের জনগণকে মুক্ত করতে হয়, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হয়, প্রতিষ্ঠা করতে হয়, দেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

ব্রেকিংনিউজ: দেশের এই ক্রান্তিকালে বিএনপি যে আন্দোলন করছে এ আন্দোলন কি সঠিক পথে আছে?
হেলেন জেরিন খান: কোনো আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে না। সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনও ভিন্ন রূপ ধারণ করে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ সরকারকে হঠাতে হবে। সেই কারণে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশেই বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেটা চেয়েছিল, যে ফাঁদ তারা পেতেছিল, সে ফাঁদে বিএনপি পা দেয়নি বলে আওয়ামী লীগ টালমাটাল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ভেবেছিল খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখলে বিএনপি কঠিন আন্দোলন দিবে জ্বালাও-পোড়াও করবে, হরতাল দিবে আর সেই হরতালে গাড়ি পোড়াবে আওয়ামী লীগ। হরতাল দিবে বিএনপি আর সেই হরতালে অসংখ্য মানুষ পোড়াবে আওয়ামী লীগ। সেই কারণেই বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। আপনি দেখবেন যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হচ্ছে চুপ থাকা। বিএনপি এই মুহূর্তে যে কর্মসূচিগুলো দিচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের। বিএনপি হরতাল দেবে আর জ্বালাও পোড়াও করবে আওয়ামী লীগ আর তারা সারা বিশ্বে বলে বেড়াবে বিএনপি একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর দল, জ্বালাও-পোড়াওয়ের দল। আর সেই কারণেই বিএনপি এ রকম আন্দোলনে যায়নি। তবে আমি মনে করি দেশের মানুষের প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশকে মুক্ত করবো।


ব্রেকিং নিউজ: আপনারা সবসময় বলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ বিএনপিকে ভোট  দেবে। জনগণ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে?
হেলেন জেরিন খান: জনগণ এই কারণে ভোট দেবে বিএনপি সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল। বাকশাল নয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছন  বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আমাদের নেত্রী কোনদিন অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। বিএনপিকে এই কারণে জনগণ ভোট দিবে। বিএনপির আমলে কোন ব্যাংক ডাকাতি হয়নি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়নি, দেশে আইনের শাসন ছিল, নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারত। আজকের নারীরা যতটা অনিরাপদ এতটা মনে হয় একাত্তরেও হয়নি। এই আমলে যতটা নারীদের অনিরাপদ আর কোনো সময়ই এতটা অনিরাপদ হয়নি। এই কারণেই বিএনপিকে জনগণ ভোট দেবে আর বিএনপির আমলে সব প্রতিষ্ঠানই সচল ছিল। আপনি বিচার বিভাগ বলেন, আইন বিভাগ বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেন, সব জায়গা তেই স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই অচল করে দেয়া হয়েছে। একটা মাত্র প্রতিষ্ঠান সচল আছে, সেটা হল অবৈধ সরকার। আর এই সরকারের কাজ হলো এদেশে যত বিরোধী দল, মত এবং লোক আছে, সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। দেশের এমন অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হলে বিএনপিকে দরকার আর এই কারণেই জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।

ব্রেকিংনিউজ: বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস যদি দীর্ঘায়িত হয় সেক্ষেত্রে বিএনপি কেমন কর্মসূচি গ্রহণ করবে?
হেলেন জেরিন খান: আমি বিশ্বাস করি না ম্যাডামের কারাবাস দীর্ঘায়িত হবে। ম্যাডাম এমন কোন কাজ করেননি যে তার কারাবাস দীর্ঘায়িত হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি মঙ্গলবার যে রায়টি হবে সেই রায়ের মাধ্যমেই ম্যাডাম জামিন পাবেন এবং কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।

ব্রেকিংনিউজ: একজন নারী নেত্রী হিসাবে আগামীর আন্দোলনে নারীদের কিভাবে সম্পৃক্ত করবেন?
হেলেন জেরিন খান: নারীদের আন্দোলন আগে যেরকম ছিল এখনও সেরকমই থাকবে। আপনারা দেখেছেন ম্যাডামের ৮ ফেব্রুয়ারি রায়কে কেন্দ্র করে আড়াইশ জন নারীনেত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর আগে কিন্তু এতো হয়নি। গ্রেফতার হয়েছেন এই কারণে যে তারা পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে আন্দোলন করেছেন। আরেকটি বিষয় হলো এই সরকারের আমলে নারীদের কোন নিরাপত্তা নেই, স্বাধীনতা নেই, বিএনপি সময় কিন্তু নারীদের পুরো স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। নারীদের নামে মামলা দেয়া তো দূরে থাক এটা চিন্তা করতো না। এজন্য আওয়ামী লীগের নারীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করে বেড়াতন আর বর্তমানে আমাদের নারীনেত্রীদের কে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

ব্রেকিংনিউজ: সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভারতের প্রভাব কমেছে অথচ বাংলাদেশে এর প্রভাব বেড়েছে। এর কারণটা কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
হেলেন জেরিন খান: এটার মূল কারণ হলো আমাদের দেশের গণতন্ত্রহীনতা। যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, একটি দল জোর করে করে ক্ষমতা দখল করে আছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ভারতে দেশে ঢুকে পড়েছে। এমন হয়েছে যে বাংলাদেশ একটি নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে ভারতের মতামত ছাড়া হবে না। সে কারণে জাতির কাছে একটি বড় প্রশ্ন আমরা কি স্বাধীন? আমরা দেশের জনগণ হিসেবে একটি ভোট দিব, সেটাও যদি দিতে না পারি তাহলে কি কারণে এবং কিভাবে আমরা স্বাধীন এবং স্বাধীন দেশে বাস করি। আরেকটি বিষয় হলো আমাদের দেশের বর্ডারগুলো খুবই অরক্ষিত। মাঝে মাঝে দেখা যায় এবং শোনা যায় ভারতের বাহিনী বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, গুলি করে মেরে ফেলছে। এটার মূল কারণ হল গণতন্ত্রহীনতা। এই যে দেখেন মিয়ানমার থেকে নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিল। এর সম্মানজনক প্রতিকার আমরা করতে পারলাম না। মিয়ানমারের মতো একটি দেশ রোহিঙ্গাদেরকে নির্যাতন করে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিলেও আমাদের পাশে ভারত, রাশিয়া, চীন কাউকে আমরা পেলাম না। আমরা তীব্রভাবে প্রতিবাদ করতে পারলাম না। কেন কারণ আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন ইউনিটি নেই। আজ যদি সব দলের মধ্যে একতা থাকতো তাহলে মিয়ানমার কিন্তু এতটা সাহস করতে পারত না। এখন আবার শুনতে পাচ্ছি, আসাম থেকে মুসলমানদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বা নির্যাতন করা হচ্ছে আর এগুলোর একটাই কারণ হলো আমাদের দেশে গণতন্ত্রহীনতা।

ব্রেকিংনিউজ: এতো পেশা থাকতে রাজনীতিতে কেন আসলেন?
হেলেন জেরিন খান: আমার বাবা ভালো মানুষ এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তাকে সংসারের হাল ধরার জন্য চাকরি নিতে হয়েছিল। কারণ তিনি আমাদের পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। আমার মাও  সমাজসেবক ছিলেন। আমার মা এবং বাবা সব সময় আমাকে বলতেন রাজিয়া সুলতানা। আমাকে বলতেন আমার মেয়েকে রাজিয়া সুলতানা বানাবো। বাবা ছিলেন জেলা বিএনপির ভাইস ভাইস চেয়ারম্যান। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো এই যেমন:১৬ ডিসেম্বর ২৬ শে মার্চ এসব অনুষ্ঠানে আমার বাবা বক্তব্য দেয়ার জন্য আমার নাম লিখে দিতেন এবং তিনি বক্তব্য লিখে দিতেন আমাকে বলতেন তুমি বক্তব্য দাও। আমার সাহসটা সেখান থেকেই। বলা যায় রাজনীতিটা পারিবারিকভাবেই এসেছে।

তখন আমি বুঝিনি। যখন আমি ইডেন কলেজে আসলাম তখন আমার বাবা-মায়ের কার্যক্রমকে মনে পড়তো এবং দেখি মেয়েদের নানান সমস্যা কলেজে পানি সমস্যা আবার গার্জিয়ান ছাড়া বের হতে দিত না, বাজার করতে দিত না। তখন এরশাদের শাসন ছিল। দেখা যেত এরশাদ কিংবা রওশন এরশাদের কোন প্রোগ্রাম হলে মেয়েদের জোর করে নিয়ে যাওয়া হতো। মেয়েরা যেতে চাইত না আর এসবের প্রতিবাদ করতে করতেই রাজনীতিতে ঢুকে যাই। সে সময় ইডেনে বিভিন্ন সমস্যা ছিল, খাওয়ার সমস্যা ছিল, কারো কাপড়ের সমস্যা থাকলে নিজের কাপড়টা দিতাম। খাবার এনে দিতাম আর এইভাবে সবার কাছে পরিচিত হই। তারপর ইডেনের ভিপি হলাম আর এভাবেই রাজনীতিতে আসা।


ব্রেকিংনিউজ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
হেলেন জেরিন খান: ব্রেকিংনিউজকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।


  • কার্টেসি — breakingnews.com.bd

চট্টগ্রামে ইয়াবায় রাতারাতি শ’শ’ কোটিপতি

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

ইয়াবার কল্যাণে চট্টগ্রামে শ’শ’ কোটিপতি গজে উঠছে রাতারাতি। যাদের নামের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে পুলিশের খাতায়ও। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তালিকায় দামি গাড়ি এবং একাধিক ফ্ল্যাটধারী এমন অনেকেরই খোঁজ মিলছে। ইয়াবা যাদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। আর তাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে বেড়ে উঠা কিশোর-তরুণরা। কোটিপতি ব্যবসায়ীরাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পার্ট টাইম জব হিসেবে অনেক ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষদের আয়েশি জীবনের টোপ দিয়ে কাছে টেনে নিচ্ছে।

যাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া ও সাতকানিয়ার। এছাড়া রয়েছে কুমিল্লা ও বরিশাল জেলার লোক। যারা সড়ক, সমুদ্র ও আকাশপথ দিয়ে নিয়মিত ইয়াবা পাচারে জড়িত।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি বন্দর) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ইয়াবা পাচারকারীদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে চট্টগ্রামে শ’শ’ কোটিপতির সন্ধান মিলেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সামপ্রতিক যে তথ্য আছে সেটা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করছেন। পণ্য পরিবহন তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। পণ্যের আড়ালে ইয়াবা পাচারই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কারণে প্রথাগত পরিবহন ব্যবসায়ী যারা আছেন তারাও বিপাকে পড়ছেন।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, ইয়াবা ব্যবসা চলছে এখন মুঠোফোনে। টেকনাফের বিশেষ একজনকে জানাতে হয় কী পরিমাণ ইয়াবা লাগবে, পাঠাবেই বা কোথায়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ইয়াবা চলে যায় সেই ঠিকানায়। লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। টেকনাফ থেকে ইয়াবা তাই চট্টগ্রাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। 

তিনি বলেন, ২০০৬ সাল থেকেই মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে ইয়াবার চালান আসতে থাকে এ দেশে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কয়েক বছর আগেও টেকনাফে পেশা হিসেবে যারা জেলে, রিকশাচালক, বেকার যুবক, পিঠা বিক্রেতা, কৃষক বা ক্ষুদ্র লবণচাষি ছিলেন, তাদের প্রায় অধিকাংশই এখন সচ্ছল, কেউ কেউ কোটিপতি, গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন। গ্রামের রাস্তার দু’পাশে সব সুরম্য বাড়িঘর। এরমধ্যে অন্যতম টেকনাফের নাজিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এজাহার মিয়ার ছেলে নূরুল হক ওরফে ভুট্টো। একটি রিকশা কেনার সামর্থ্য ছিল না নূরুল হকের। বসতবাড়ি বলতে ছিল গোলপাতার একটি ঘর। সেই নূরুল হক এখন নাজিরপাড়ার দুটি বাড়ির মালিক। চট্টগ্রাম ও খুলনায় তার ফ্ল্যাট আছে। আছে তিনটি গাড়িও। জমিজমাও কিনেছেন অনেক। নাজিরপাড়ায় রাস্তার পাশে এখন একটি মার্কেটও নির্মাণ করছেন। 

নূরুল হক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। নূরুল হক একাই শুধু নন, সঙ্গে আছেন তার পিতা এজাহার মিয়া, ভাই নুর মোহাম্মদ ওরফে মংগ্রী, ভগ্নিপতি নূরুল আলম, ভাগিনা জালাল উদ্দিন, বেলাল, আবছার উদ্দিন, হেলাল, হোছেন কামাল ও নুরুল আমিন ওরফে খোকন। তারা সবাই ইয়াবা মামলার আসামি। চলতি বছরের ৮ই এপ্রিল চকরিয়ার নূরুল হুদা নামে এক যুবক ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। সাত বছর আগে যে ছিল বাসের হেলপার। আর এখন চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকার যে ফ্ল্যাটে তার পরিবার থাকে, সেটির ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। আয়ের উৎস একটাই, ইয়াবা। মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। গাড়ি আছে দুটি। বিউটি পার্লার খুলে দিয়েছেন স্ত্রীকে। রয়েছে মুঠোফোনের দোকান। জমি কিনেছেন কক্সবাজার শহরে, ফ্ল্যাট কিনেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম শহরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িসহ হুদাকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেদিন হুদার গাড়িতে ১০ হাজার ইয়াবা ছিল। হুদা এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দুবার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। তার অর্থবিত্তের বিষয়টি এতদিন অজানা ছিল।

আনোয়ারা গহিরাকেন্দ্রিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান মোজাহের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর এলাকার চান মিয়ার ছেলে। মুখোশের আড়ালে তিনি ইয়াবা পাচারের কাজ করতেন। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান মো. মোজাহারের নগরীতে আছে ছয়তলা বাড়ি। এর দ্বিতীয় তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান নয়-দশ বছর আগেও ছিলেন বেকার। টেকনাফ মৌলভীপাড়ার চোরাচালানের ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর ইয়াবা পাচার শুরু করেন। এখন দুটি মাইক্রোবাস ও চারটি ভারতীয় বিভিন্ন মডেলের দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের মালিক। একটি আলিশান বাড়িও বানিয়েছেন। তার ছোট ভাই আবদুর রহমান ও কামাল হোসেন ইয়াবা ব্যবসায় সক্রিয়।

গ্রীনলাইন পরিবহনের এসি বাসে কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় নতুন ব্রিজ এলাকায় তল্লাশির সময় মহিলা ক্রিকেটার মুক্তা ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন ৩০শে এপ্রিল সকালে। তিনি প্রায়ই কক্সবাজার যাওয়া-আসা করতেন। মুক্তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্রী ছিলেন। মাদকাসক্ত হওয়ার পর অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়। তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ, মহিলা ক্রিকেট লীগে নিয়মিত অংশ নেন। মহিলা ক্রিকেট আনসার টিমের তিনি একজন নিয়মিত ক্রিকেটার বলে জানান বাকরিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী। ওসি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, কক্সবাজারে গিয়ে প্রায়ই তিনি নাহিদ নামে এক লোকের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় রিপন নামে আরেকজনকে সরবরাহ করতেন। ৪ঠা মে শুক্রবার চট্টগ্রামের হালিশহরের শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্লাটে ধরা পড়ে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে এই অভিযানে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ মো. আশরাফ (৩৪) ও হাসান (২৪) নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে আশরাফ ছিলেন সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের বাড়ি বান্দরবান পার্বত্য জেলায়।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আশরাফ প্রবাস জীবনে তেমন উন্নতি করতে না পারলেও দেশে এসে মাত্র এক দুই বছরে ইয়াবা পাচার করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির ওই ফ্লাট ছাড়াও নাসিরাবাদে একটি ফ্লাট ও বাকলিয়ায় একটি প্লটের মালিক তিনি। রয়েছে দুটি গাড়িও। 

গত বছর ৩১শে আগস্ট সিদ্দিকুল ইসলাম নামে এক ইয়াবা ব্যসায়ীর খোঁজ মিলে। যার কৌশলের কাছে বারবার পরাস্ত হতে হয়েছিল পুলিশের কৌশল। তবে শেষরক্ষা হয়নি তার। ইয়াবা পাচারে সিদ্দিকুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন পারিবারিক সিন্ডিকেট।

সূত্র জানায়, ইয়াবার চালান টেকনাফ থেকে ঢাকায় আনা এবং ঘাটে ঘাটে পৌঁছে দিতে চারটি জিপ ব্যবহার করেন সিদ্দিকুল ইসলাম। একটি জিপে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চালান আনা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনতে ব্যবহার করেন দুটি জিপ। আর ঢাকায় ঘাটে ঘাটে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে বাকি জিপটি ব্যবহার করা হয়। ইয়াবাবাহী জিপ পুলিশ রাস্তায় আটকালে অনেক সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের গাড়ি বলে পরিচয় দিয়েও রক্ষা পান তারা। গাড়ি চালানোর জন্য রয়েছে বেতনভুক্ত চারজন দক্ষ চালক। প্রতি চালানেই তাদের আবার দেয়া হয় ঝুঁকি ভাতা।

সিদ্দিকের তিন ছেলের দু’জনই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। স্ত্রী রশিদা খাতুনও গ্রেপ্তার হয়েছেন দু’দফা। টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন সিদ্দিকের দুই ছেলে রবিউল ইসলাম ও ফরিদুল ইসলাম। একেক সপ্তাহে একেক ছেলে এই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তার আগে নেয়া হয় অভিনব এক কৌশল। চালান আনতে যাওয়ার আগে রবিউল কিংবা ফরিদুল নিজের মোবাইল নম্বরটি কয়েকদিন আগেই বন্ধ করে দেন। তখন ব্যবহার করেন নতুন সিম ও ফোন সেট। পাশাপাশি ঢাকার কোনো একটি থানায় সিদ্দিক বা তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ জিডি করা হয়। যেন চালানসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও আদালতে দেখাতে পারেন, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি তিনদিন বা চারদিন আগেই নিখোঁজ হয়েছেন। এমন তথ্যই বের হয়ে এসেছে তাদের গ্রেপ্তারের পর। আর এ পদ্ধতিতে আদালত থেকে সহজেই জামিন পেয়ে যান তারা। এরমধ্যে ছেলে রবিউল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যদিও ঠিকমতো ক্লাস করেন না, বাবার ইয়াবা ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত তিনি। নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াবা সিন্ডিকেট।

টেকনাফের নাজিরপাড়ার নুরুল আলম ভালো ফুটবল খেলতেন। আর্জেন্টাইন ফুটবলারের নাম অনুসারে লোকে তাকে ডাকতেন ডি মারিয়া বলে। সাত-আট বছর আগেও নুরুল আলম রিকশা চালাতেন। এখন ইয়াবার কারবার করেন। তার ভাই ফরিদুল আলমের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে দেড় কোটি টাকা। তাকে নারায়ণগঞ্জের দুটি ইয়াবার মামলায় আটক করা হলে তিনি জামিনে ছাড়া পান। গত বছর ১৮ই সেপ্টেম্বর ১০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আতিকুল ইসলাম তারেক তার ভগ্নিপতির হাত ধরে মাদক কারবারে জড়িয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারেক (২০) চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির এলএলবি সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি টেকনাফে। তার বাবা টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, তারেকের এক বোনের স্বামী টেকনাফের মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা ফজর আলী। ফজর আলী ও তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী পুলিশের তালিকাভুক্ত ইয়াবা বিক্রেতা। মাস খানেক আগে চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে ফজর। 

কামরুজ্জামান বলেন, তারেক একাই একটি ফ্ল্যাট নিয়ে চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো এলাকায় থাকেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় সচ্ছল পরিবারের ইয়াবা আসক্ত ছেলেদের সঙ্গে তার উঠাবসা সহজ ছিল। ইয়াবা কেনাবেচা করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীতে পরিণত হওয়া ব্যক্তিরা পরিবহন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে বলে তথ্য দিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান কিনে নিজেরা পরিবহন প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে সেই গাড়িতে কৌশলে বিশেষ চেম্বার বানিয়ে পাচার করছে ইয়াবা। নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (বর্তমানে কোতোয়ালি থানায় বদলিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারী চক্র তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। ২১টি ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান কিনে তারা নিজেদের পরিবহন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। সেই পরিবহনে তারা সাধারণত পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ পরিবহন করছে। মূলত পণ্য পরিবহনের মতো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবা চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতদের একটা তালিকা জমা দেয়া আছে। এক সংসদ সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রায় সব পেশার লোকের নাম ওই তালিকায় উল্লেখ আছে; কিন্তু সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়িত থাকায় প্রশাসন এখন এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/ মে ২০,২০১৮ 

৩ ডিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ব্যবস্থা নিতে চিঠি

নোয়াখালী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি)-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর ডিসি মো. মাহবুবুল আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া টাঙ্গাইলের ডিসি খান মো. নূরুল আমিনের বিরুদ্ধে পাট দিবসের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের ডিসি মো. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে ওই জেলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইনুদ্দীন মণ্ডল অভিযোগ দিয়েছেন। যদিও পরে আরেকটি চিঠি দিয়ে তা প্রত্যাহার করে নিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেছেন, তার প্যাড ও সই স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। তিন ডিসি’র বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিলে টাঙ্গাইলের আরমান নামে এক ব্যক্তি তার জেলার ডিসি খান মো. নূরুল আমিনের বিরুদ্ধে পাট দিবসের চেক জালিয়াতির অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি জানান, ৬ই মার্চ পাট দিবস পালিত হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সরকার জেলা প্রশাসক বরাবর ২৫ হাজার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ১৫ হাজার টাকার চেক দেয়। কিন্তু টাঙ্গাইলের ডিসি ১১টি উপজেলার ইউএনও’র চেক আটকে দেন। এরপর ইউএনওদের কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা নেন।

অভিযোগে বলা হয়, ইউএনওদের চেকগুলো ডিসি’র নির্দেশে টাঙ্গাইলের মুখ্য পাট পরিদর্শক শহিদুল্লাহ ও উপ-সহকারী পাট পরিদর্শক রায়হান ডিসি অফিসের নাজির জয়নাল আবেদীনের মাধ্যমে ডিসির কাছে পৌঁছায়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের নামে আসা ২৫ হাজার টাকার চেকটি নাজির জয়নাল আবেদীন নিজ নামে উত্তোলন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরমানের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩০শে এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-১ (১) অধিশাখার উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন-এর স্বাক্ষরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে নোয়াখালীর ডিসি মো. মাহবুবুল আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আবদুল জলিল নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগে তিনি বলেন, ডিসি হিসেবে মাহবুবুল যোগদানের পর থেকে মাইজদী শহরের বিভিন্ন ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরকারি সম্পত্তি হরিলুটে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। মোটা অঙ্কের সুবিধার বিনিময়ে মাইজদী নিশাত প্লাজার উত্তর পাশে হেলাল, মানিক ও হায়দার ইলেকট্রিককে গণপূর্তের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখলে সহযোগিতা করেছেন। এ অভিযোগটিও খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইনুদ্দীন মণ্ডলের ডিও লেটারে অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জেলার ডিসি মো. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। যদিও গত ৩রা এপ্রিল আরেক ডিও লেটারে চাঁপাই নবাবগঞ্জের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইনুদ্দীন মণ্ডল জানান, চাঁপাই নবাবগঞ্জের ডিসি একজন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা। তিনি সুনামের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন ডিসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন তারা। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে
  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/ মে ২০,২০১৮ 


Reducing Dhaka's waterlogging

Words not matched with deeds


Editorial 



Waterlogging has become a ritualistic affair in Dhaka. It is unfathomable how a city of over 16 million people still does not have a working storm drainage system.

Every year during the monsoon season, whenever a little rain inundates the entire city, we are accustomed to hearing platitudes of the public officials that the problem would soon be over. For example, the LGRD and cooperatives minister pledged last year that we would not witness waterlogging in Dhaka in 2018. In reality, however, there hasn't been any noticeable improvement of the situation.

If anything, it only gets worse day by day as remaining floodplains and canals are getting occupied by powerful locals, blocking the passage of rainwater, as is evident in one of yesterday's front-page stories of this newspaper. If the government really wants to reduce waterlogging in Dhaka, the order of the day should be recovering the occupied canals and water retention areas as soon as possible.

The fact that there are seven authorities to deal with Dhaka's drainage affair on a piecemeal basis speaks volumes of the lack of coordination among public offices.

In addition, every year the government allocates a huge amount of money in improving the city's infrastructure, including the existing drainage system, which obviously is not being properly spent. It's high time that misspending of public money was stopped and instead allocated where it is needed, such as in building a storm drainage system.
  • Courtesy: The Daily Star /May 20, 2018  

চট্টগ্রাম মাদকের আখড়া, পৃষ্ঠপোষকেরা আ'লীগ নেতা ও পুলিশ


চট্টগ্রামে মাদকের বিস্তার ঘটছে দ্রুত। সাম্প্রতিক সময়ে মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলেও এদের সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত আট মাসে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান মাদক আস্তানা ‘বরিশাল কলোনি’ এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাতেই।

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় মাদক ব্যবসায় যুক্ত ৯০ জনের একটি তালিকা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আরেকটি তালিকা করা হয়েছে পৃষ্ঠপোষকদের। এই তালিকায় ৪৫ জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী এবং নগরের পাঁচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৫ জনের নাম আছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিতর্কিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরের নাম আছে এ তালিকায়।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক বিক্রেতা, সেবনকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের আজকের মধ্যে মাদক ব্যবসা ছাড়তে হবে। নইলে কাল তাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। তারা যত বড় প্রভাবশালীই হোক, আর কোনো ছাড় নয়।’

পুলিশ ও র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম নগরের প্রায় ৫০০ জায়গায় মাদক বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে বরিশাল কলোনি, চট্টগ্রাম স্টেশন, কদমতলী বাস টার্মিনাল, মতিঝরনা, এনায়েতবাজার গোয়ালপাড়া, বায়েজিদ শের শাহ কলোনি, অক্সিজেন মোড়, ফিরোজ শাহ কলোনি, অলংকার মোড়, পাহাড়তলী, টাইগারপাস, বাটালি হিল মাদকের সবচেয়ে বড় বাজার।

মাদক চোরাকারবারিদের সহায়তাকারী হিসেবে তালিকায় নাম আছে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ ওসির। তাঁদের মধ্যে পাহাড়তলী থানার ওসি মো. আলমগীর ও আকবর শাহ থানার আলমগীর মাহমুদ সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। অন্য তিন ওসি হলেন পাঁচলাইশ থানার মহিউদ্দিন মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার আবুল কাসেম ভূঞা ও বন্দর থানার এস এম ময়নুল ইসলাম। এ ছাড়া থানা বা ফাঁড়ির ২০ জন এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলের নাম আছে তালিকায়।

ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া।’ আবুল কাসেম ভূঞা বলেন, ‘আমরা মাদক ধরছি বলে কেউ আমাদের নাম বলতে পারে।’ এস এম ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দর এলাকায় মাদকের ব্যবহার কম। তবু প্রতি মাসে ১৮-২০টি মামলা আমরা নিচ্ছি। বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে কেউ আমাকে ফাঁসাতে পারে।’

পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় নগরের ২৮ নম্বর মোগলটুলি ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের রয়েছেন। তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ‘মাছ কাদের’ নামে পরিচিত এই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ২০১৫ সালে কাউন্সিলর হন। মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

৫০০ স্থানে মাদক কেনাবেচা

পুলিশ জানিয়েছে, নগরের ৫০০ স্থানে মাদক কেনাবেচার হাট।গতকাল দুপুরে নগরের মুরাদপুর, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, বরিশাল কলোনি গিয়ে কিছু যুবককে দেখা গেছে ইয়াবা কিনতে। তাঁদের মধ্যে আছেন গাড়িচালক ও ছাত্র। মুরাদপুরে একটি দোকানের সামনে এক গাড়িচালক মাদকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মুঠোফোনে কথা বলার পরই ওই চালকের কাছে এক যুবক এসে ছোট পোঁটলা ধরিয়ে চলে যান। জানতে চাইলে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। ওই চালকও দ্রুত সটকে পড়েন।

চট্টগ্রাম স্টেশনের পাশে গিয়ে দেখা যায়, গাঁজা ও ইয়াবা ক্রেতাদের আনাগোনা। সেখানে একজন ছাত্র ইয়াবা কিনতে যান। একজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, রমজানের প্রথম দিন হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে গ্রাহক কম। সন্ধ্যায় বাড়বে।

নিরাপদ রুট চট্টগ্রাম

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দেশে সরবরাহ হচ্ছে। প্রতিদিনই ইয়াবা পাচার হচ্ছে। আবার প্রতিদিনই ধরাও পড়ছে। কিন্তু পাচারের তুলনায় জব্দ হচ্ছে খুব কম। ৪ মে নগরের হালিশহরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত বছরের ১৫ এপ্রিল পতেঙ্গাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ট্রলার থেকে ২০ লাখ ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছিল র‍্যাব। একই দিন নগরের পাঁচলাইশ এলাকার একটি বাড়ি থেকে ইয়াবা পাচারের মূল হোতা মোজাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৭ মে পর্যন্ত র‍্যাব অভিযান চালিয়ে ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ২২৫টি ইয়াবা উদ্ধার করে।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ-উল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম মাদক পরিবহনের প্রধান রুট। এর সঙ্গে কিছু গডফাদার যুক্ত। গডফাদার ও ব্যবসায়ীদের তালিকা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করেছে। ৫ ওসিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।

কারাগারে ৭০ ভাগই মাদক মামলার আসামি

চট্টগ্রাম কারাগারে ৭ হাজার ১৫০ জন পুরুষ ও ৩৩২ জন নারী বন্দীর মধ্যে ৭০ ভাগ মাদক মামলার আসামি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বন্দীদের বেশির ভাগই মাদক মামলার আসামি। প্রতিদিন আসছেন আর জামিনে মুক্তিও পাচ্ছেন। মাদকাসক্ত বন্দীদের নিয়ে বেকায়দায় থাকতে হয়। মাদকের জন্য তাঁরা ছটফট করেন। কারা হাসপাতালে রেখে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

২০১৩ সালে নগরের ১৬ থানায় মাদকের মামলা হয়েছিল ১ হাজার ৭০৬টি। তিন বছর পর তিন গুণ বেড়ে ২০১৭ সালে হয় ৪ হাজার ১৯১টি মামলা। এসব মামলার বাদী র‍্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

জামিনে বেরিয়ে উধাও

জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে প্রথম দু-তিন মাস আদালতে হাজিরা দেন মাদক মামলার আসামিরা। কিন্তু রায় ঘোষণার সময় এগিয়ে এলেই উধাও হয়ে যান তাঁরা। রায়ে আদালত সাজা দিলেও পুলিশ আর তাঁদের খুঁজে পায় না। গত বছরের ১ মে থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাত মাসে চট্টগ্রামের ১৩টি আদালতে ৩১২টি মাদকের মামলার রায় ঘোষণা হয়। এসব মামলায় কারাদণ্ড হয় ৬৪৯ জনের। এর মধ্যে ৩৮২ জনই রায় ঘোষণার আগে জামিন নিয়ে পলাতক। তবে মাদক মামলার কত আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন, সে পরিসংখ্যান নেই পুলিশের কাছে।

ইয়াবা আনতে অভিনব কৌশল

ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে ইয়াবা পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা নিয়ে আসছেন। পেটের ভেতর, পেঁয়াজ ও কুমড়ায়, মোটরসাইকেল ও গাড়ির জ্বালানির ট্যাংক, কাভার্ড ভ্যানের ভেতরে বিশেষ বাক্সে করে আসছে ইয়াবা। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল নগরের কোতোয়ালি থানার ব্রিজঘাট এলাকা থেকে রশিদ আহমেদ ও ফরিদ আহমেদ নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পেটের ভেতর ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন তাঁরা। তাঁদের পেট থেকে ৫ হাজার ৮০০টি ইয়াবা বের করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, নতুন নতুন কৌশলে নগরে মাদক ঢুকছে। অভিযান চালিয়ে মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডু মাদকের বিস্তার সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতি ও অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে উন্নয়ন হলেও কর্মসংস্থান কম। এ কারণে বেকার যুবকেরা হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা থেকে মাদকের প্রতি ঝুঁকছেন। ফলে বাংলাদেশ এখন মাদকের রমরমা বাজার। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মাদকের লাগাম টেনে ধরতে হবে।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/মে ২০, ২০১৮ 

ফারমার্স ব্যাংককে টেনে তুলতে শর্ত আরো শিথিল হলো

হাছান আদনান



বিপর্যস্ত ফারমার্স ব্যাংকে আগে থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ৫৫৩ কোটি টাকা জমা আছে। এ অর্থ তুলে নেয়ার শর্তে নতুন করে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়ার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর। ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে এবার সেই শর্তও শিথিল করা হয়েছে। নতুন মূলধন জোগানের পাশাপাশি আগের অর্থও জমা থাকছে ব্যাংকটিতে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক ১৬৫ কোটি টাকা মূলধন হিসেবে ফারমার্স ব্যাংককে জোগান দিচ্ছে। গত ২ এপ্রিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৫৫৩তম সভায় চার শর্তে ফারমার্সে মূলধন জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর একটি হলো— অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃক এরই মধ্যে ব্যাংকটিতে যাওয়া ১৬৪ কোটি টাকা অতি দ্রুত আদায়ের পদক্ষেপ নেয়া।

যদিও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৫৫৮তম সভায় শর্তটি রহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে রহিত করা হয়েছে ৫৫৩তম সভায় নেয়া অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন সরকারি প্রতিনিধিকে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করার শর্তটিও।

অগ্রণী ব্যাংকের মতো সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকও চেয়েছিল চার শর্তে ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দিতে। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের পরও শর্ত পালন থেকে পিছিয়ে এসেছে ব্যাংকগুলো। মূলত ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপেই চার শর্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। শিথিলকৃত শর্তেই গত সপ্তাহে ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে চার ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবি।

অগ্রণী ব্যাংকের ১৬৪ কোটি টাকার পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের ১৪৫ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১০০ কোটি ও জনতা ব্যাংকের ৯৯ কোটি টাকা আগে থেকেই আছে ফারমার্স ব্যাংকে। মেয়াদি আমানত ও কলমানি হিসেবে ফারমার্সকে এ টাকা ধার দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে এ টাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ফেরত দিতে পারেনি ফারমার্স ব্যাংক। এমনকি প্রায় পাঁচ মাস ধরে সুদও পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংকটি। সুদসহ রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের বিনিয়োগ আরো বেশি। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন হিসেবে সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবির বিনিয়োগ রয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে দ্রুততম সময়ে টাকা উদ্ধারের শর্ত শিথিলের বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধান বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে আমরা ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূলধন দিয়েই বিনিয়োগকৃত টাকা আদায় করার পথে হাঁটলে ফারমার্স ব্যাংক দাঁড়াতে পারবে না। এজন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছি। সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের এমডিরা ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদের সদস্য হচ্ছেন। আশা করছি, ব্যাংকটিকে আমরা টেনে তুলতে পারব। ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ালে টাকা উঠে আসতে সময় লাগবে না।

আগের অর্থ জমা রেখেই ফারমার্স ব্যাংকে ১৬৫ কোটি টাকা করে মূলধন জোগান দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। ৫৫ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে আইসিবি। নতুন এ মূলধন পেলে ফারমার্স ব্যাংকে রাষ্ট্রায়ত্ত এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের অর্থের জোগান দাঁড়াবে ১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের অর্থের পরিমাণ ৩২৯ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ৩১০, রূপালী ব্যাংকের ২৬৫, জনতা ব্যাংকের ২৬৪ এবং আইসিবির ১০০ কোটি টাকা।

নতুন করে মূলধন জোগানের বিষয়ে জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ  বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে এখনো নতুন মূলধন পরিশোধ করা হয়নি। আশা করছি, চলতি সপ্তাহেই এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বসেই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ নতুন পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত নই।

সূত্রমতে, আমানতের তুলনায় ঋণ বেশি দেয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিপর্যয় শুরু হয় ফারমার্স ব্যাংকে। অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ আদায় না হওয়ায় ক্ষত আরো বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকে ফারমার্স ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বিপর্যস্ত ফারমার্স ব্যাংকে রাখা প্রায় ৬০ কোটি টাকা তুলতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ব্যাংকটির কাছে আটকে গেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিলের ৫০৮ কোটি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মচারী অবসরভাতা তহবিলের ১৭ কোটি এবং বিআইডব্লিউটিএ বেনেভোলেন্ট ফান্ডের ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৮০ কোটি টাকাও আটকে আছে ফারমার্স ব্যাংকে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা না পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এরই মধ্যে অভিযোগ জানিয়েছে। আমানত তুলতে মুখিয়ে আছেন সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ ফারমার্স ব্যাংকে টাকা রাখা গ্রাহকরাও।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত ফারমার্স ব্যাংককে টেনে তুলতে গত বছরের শেষের দিকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২৭ নভেম্বর ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। একই দিন ব্যাংকটির অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীও পদচ্যুত হন। আরেক পরিচালক ড. মোহাম্মদ আতাহার উদ্দিন ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর বৈঠকে ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদকে চেয়ারম্যান ও মারুফ আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। নতুন করে ব্যাংকটির সব কমিটি পুনর্গঠন করে ঢেলে সাজানো হয়। কিন্তু ফলাফল ভালো না হওয়ায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে আরো পরিবর্তন আসে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত।

পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের সব ব্যক্তি পরিচালক পদ হারিয়েছেন। নতুন করে গঠিত হচ্ছে ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক হচ্ছেন। রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির পর্ষদে থাকছেন চারজন। বাকি দুজন হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক।

এ প্রসঙ্গে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত বণিক বার্তাকে বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন হয়েছে। এরই মধ্যে মূলধন জোগানের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আইসিবির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের জোগানকৃত ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন পেয়ে যাব।

তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কোনো ব্যক্তি উদ্যোক্তা থাকতে পারবেন না। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ব্যাংকের পরিচালক হবেন। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। পৃথিবীর অনেক বড় বড় ব্যাংক এভাবেই সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুরো ব্যাংককে ঢেলে সাজানো হবে।
  • কার্টেসিঃ বনিক বার্তা / মে ২০,২০১৮ 

সাংসদদের জবাবদিহি ও ‘বিষিয়ে তোলা মন’

সোহরাব হাসান

কয়েক দিন আগে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম ‘বিরোধী দলবিহীন’ জাতীয় সংসদ কেমন চলছে। তাঁর জবাব ছিল, খুবই ভালো চলছে। এখন সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদদের আলোচনায় সংসদ প্রাণবন্ত। এমনকি সরকারি দলের সাংসদেরা (যাঁদের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্যও আছেন) অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবেরও কড়া সমালোচনা করেছেন। 

এ রকম একটি অতি কার্যকর সংসদ সম্পর্কে নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীনেরা নেতিবাচক কোনো সংবাদ শুনতে বা দেখতে চান না। তারপরও নেতিবাচক সংবাদ আসে এবং তাঁদের সেটি হজমও করতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। কীভাবে সরকার চলবে, কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ হবে, সরকারের বৈদেশিক নীতি কী হবে—সবই ঠিক করে দেয় সংসদ। এটা হলো বইয়ের কথা। বাস্তবে কী হয়, সেটি আমরা প্রতিদিনই প্রত্যক্ষ করছি। অনেক সময় সরকার ও সংসদকে ফারাক করাও কঠিন হয়ে পড়ে। 

সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধী দলের সদস্যসংখ্যা যত কমই হোক না কেন, সংসদ সব সময় সরকারকে নজরদারিতে রাখে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সংসদে উত্থাপিত বিলের বিরুদ্ধে সরকারি দলের সাংসদেরা হয়তো ভোট দিতে পারেন না, কিন্তু সরকারের কাজের সমালোচনা করতে বাধা নেই। নবম সংসদেও আমরা দেখেছি, সরকারি দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য বেহাল যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে তৎকালীন মন্ত্রী ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। বর্তমানে দেশের সড়ক যোগাযোগের হাল আরও খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সংসদে তা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করছেন না। 

সংসদে বিরোধী দলকে বলা হয় বিকল্প সরকার। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে বিরোধী দলের সাংসদদের নিয়ে ছায়া সরকার গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক তাদের কমিটি থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদে যে দলটি বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে, তারা একই সঙ্গে সরকারেরও অংশীদার। সরকারে সেই দলের তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আছেন, দলের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং কো-চেয়ারপারসন সংসদে বিরোধী দলের নেতা। ফলে তাদের পক্ষে নীতিগত বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। দু-একজন স্বতন্ত্র সদস্য মাঝেমধ্যে বিবেকের ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁদের কণ্ঠস্বর লুই কানের নকশা করা সুরম্য ভবনের দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলে ফিরে আসে। 

সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদেরা যে সংসদকে প্রাণবন্ত ও কার্যকর বলে অভিহিত করেছেন, গত বৃহস্পতিবার সেই সংসদের কিছুটা চিত্র তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ নামে তারা প্রতিবছরই একটি প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে সংসদকে কার্যকর করতে বেশ কিছু সুপারিশও করে। তাদের এবারের ১৪ দফা সুপারিশের মধ্যে আছে, সাংসদদের আচরণবিধি আইন প্রণয়ন, অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের কার্যকর ভূমিকা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদীয় কমিটির নিয়মিত বৈঠক করা। 

এসব সুপারিশ শোনা না–শোনা সাংসদদের এখতিয়ার। কিন্তু সংসদ বা সরকার সম্পর্কে সমালোচনা করলেই সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মন বিষিয়ে তোলার কথা বলা স্বৈরাচারী মানসিকতা ছাড়া কিছু নয়। টিআইবি যেসব তথ্য দিয়েছে, তার কোথায় ভুল আছে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানাতে পারতেন। তা না করে তিনি সোজাসুজি বলে দিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে। এসবের প্রশংসা নেই। ছোটখাটো এসব বিষয় নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে মানুষের মন বিষিয়ে দেওয়া যাবে না।’ এই তথ্যটি তাঁকে কে দিলেন যে টিআইবি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মন বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। টিআইবির প্রতিবেদনে আছে প্রধানমন্ত্রী তথা সংসদ নেতা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পরও ৮০ শতাংশেরও বেশি সময় সংসদে থাকেন। কিন্তু সংসদ নেতা সংসদে থাকতেও দেখা যায়, অনেক মন্ত্রী ও সাংসদ সংসদে উপস্থিত থাকেন না। এটাই টিআইবি হিসাব কষে দেখিয়ে দিয়েছে। 

টিআইবির অনুসন্ধান অনুযায়ী, গত বছর বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে গড়ে প্রতিদিন কোরাম সংকটে অপচয় হয়েছে ৩০ মিনিট, যা নবম সংসদে ছিল ৩২ মিনিট। কোরাম সংকটের কারণে গত চার বছরে ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৫ টাকা। জাতীয় সংসদের সদস্য ৩৫০ জন। সংবিধান অনুযায়ী, কোরাম পূর্ণ করতে কমপক্ষে ৬০ জন সদস্য উপস্থিত থাকতে হয়। প্রতিবেদনে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অনুষ্ঠিত পাঁচটি অধিবেশন (১৪তম থেকে ১৮তম) বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মোট কার্যদিবস ছিল ৭৬টি। এর মধ্যে ৩৮ ঘণ্টা ৩ মিনিট (১৩ শতাংশ সময়) কোরাম সংকটের কারণে অপচয় হয়। প্রতি কার্যদিবসে গড়ে অপচয় ৩০ মিনিট। সংসদ পরিচালনার ব্যয়ের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী প্রতি মিনিটে গড়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৬ টাকা খরচ হয়। সে হিসাবে প্রতি কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকটের সময়ের অর্থমূল্য ৪৯ লাখ ১০ হাজার ৫৮০ টাকা। পাঁচটি অধিবেশনে কোরাম সংকটে ব্যয় হওয়া মোট সময়ের অর্থমূল্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ টাকা। গত চার বছরের কোরাম সংকটের কারণে এই ব্যয় ১২৫ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৫ টাকা। তাহলে ক্ষতির পরিমাণটি ভাবুন। কোরাম সংকটে অপচয় না হলে এই ১২৫ কোটি টাকা দেশ ও জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা যেত। 

টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, সংসদে বিভিন্ন আলোচনা পর্বে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহারে মোট সময়ের ৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে ১৯৫ বার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ২৩ বার এবং নিজ দলের সমালোচনায় একবার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। অনির্ধারিত আলোচনার মোট সময়ের ২৬ শতাংশজুড়ে ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সুশীল সমাজের সমালোচনা। সংসদে যিনি উপস্থিত নেই বা যাঁদের উপস্থিত থাকার সুযোগই নেই, তাঁর বিরুদ্ধে একতরফা গালমন্দ করা সাংসদদের কাজ হতে পারে না। 

সংসদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন। অথচ এই আইন প্রণয়নেই তাঁরা সবচেয়ে কম সময় দেন। একটি বিল উত্থাপন থেকে পাস করতে সময় লাগে গড়ে প্রায় ৩৫ মিনিট। আইন প্রণয়নের চেয়ে ব্যবসা–বাণিজ্যের দিকেই সাংসদদের নজর বেশি। নবম সংসদে ব্যবসায়ীদের হার ছিল ৫৩ শতাংশ। দশম সংসদে তার চেয়ে কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। 

সংসদকে কার্যকর করতে স্থায়ী কমিটিগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সংসদীয় দেশের অনুসরণে আওয়ামী লীগ কমিটিগুলোর প্রধান করেছিল সাধারণ সদস্যদেরই। এমনকি কয়েকটি কমিটির প্রধান পদে বিরোধী দলের সাংসদকেও নেওয়া হয়েছিল। তবে অর্থ বা সরকারি হিসাব কমিটির প্রধান পদে বিরোধী দলের কাউকে কখনো নেওয়া হয়নি। নবম সংসদে চারটি কমিটির প্রধান ছিলেন বিরোধী দলের। এবার মাত্র একটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

চিফ হুইপ টিআইবিকে মানুষের মনে বিষ না ঢুকিয়ে অন্যান্য দেশের সংসদ নিয়ে গবেষণা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মনোযোগ আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র চালু আছে—এ রকম অন্তত ১০০টি দেশের সংসদ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গবেষণা ও তদারকি করে থাকে। তাই এ কথা ভাবার কারণ নেই যে বাংলাদেশের সংসদ নিয়েই শুধু মনিটরিং করা হয়। 

টিআইবি বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কে যেসব কথা বলেছে, সেসব কথা অনেক আগেই বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। এমনকি তাঁরা জনগণের কাছে মুখ দেখাতে পারেন না বলে অনুশোচনাও করেছেন। আবার দুজনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি জানিয়েছেন, দলের মন্ত্রীদের যেন তিনি সরকার থেকে বাদ দিয়ে দেন। বিরোধী দলের যে নেতা নিজ দলের নেতাদের মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার করাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি পেশ করেন, তিনি কীভাবে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করবেন? আর বিশেষ দূতের বিশেষ ভূমিকার কথা না হয় না–ই বললাম।
  • সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২০,২০১৮