Search

Monday, May 28, 2018

জোরপূর্বক গুম, সরকারের কার্যত স্বচ্ছতা নেই



জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের নীবরতায় তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। সরকার জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলোতে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এমনটা অভিযোগ করে অনলাইন দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্র তা বার বারই প্রত্যাখ্যান করছে। ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ থেকে ১৮ই মে পর্যন্ত জেনেভায় জাতিসংঘের ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এ বাংলাদেশ সরকার এ অবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সর্বশেষ এই রিপোর্টে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ক্ষমতাসীন বাংলাদেশে সবচেয়ে পুরনো দল আওয়ামী লীগ অস্বীকার করেছে।

ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের মে মাসের সেশনে ১৪টি দেশের অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘ জোরপূর্বক গুমকে ‘হায়েনার মতো অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রেই এমন গুমকে মদদ দিয়ে আসার অভিযোগ আছে। কিন্তু ইউপিআরে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে এ ইস্যুটি উল্লেখও করা হয়নি। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের গঠনাগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে এবং এর গভীরে গিয়ে তদন্ত করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ইউপিআরে সর্বশেষ যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে সরকারের নীরবতার কড়া সমালোচনা করেছে এইচআরডব্লিউ। এ সংগঠনের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী জোপূর্বক গুম, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত। এর বেশির ভাগই ঘটে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। তাই এমন সব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে নজর দেয়া উচিত এবং এসব ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়ার রীতি বন্ধ করা উচিত। 

ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ড. শাহদিন মালিক বলেছেন, জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ ‘ভয়াবহভাবে প্রত্যাখ্যানের’ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মোটেও নজর দিচ্ছে না। এটা উদ্বেগজনক বা এলার্মিং।  সুইডেনের জেনেভাতে ইউপিআরের তৃতীয় দফা বৈঠকে আগের রিভিউয়ের সময় যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তার কতটুকু বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই রিভিউয়ের সুপারিশ অনুসরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি দেশে সম্প্রতিক মানবাধিকার বিষয়েও জোর দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ২০০৬ সালের জুনে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সবাইকে এরপর দুবার রিভিউ করা হয়েছে। একটি ছিল প্রথম দফায় এবং পরেরটি ছিল তৃতীয় দফায়। বাংলাদেশের জন্য প্রথম রিভিউটি হয়েছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় রিভিউটি হয়েছিল ২০১৩ সালের এপ্রিলে। দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, ইউপিআরের তৃতীয় রিভিউতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল শুধু সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে। তবে তারা জোরপূর্বক গুম, গোপন ও খেয়ালখুশি মতো আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। বাংলাদেশ ওই রিপোর্টকে বড় করে দেখাতে চেষ্টা করে যে, তারা কিভাবে অভিজাত বাহিনী র‌্যাবের ১৬ সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে। একজন সিটি মেয়র ও তার ৬ সহযোগীকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয় তাদেরকে। এই ঘটনাকে দেশে প্রেসের কাছে তুলে ধরা হয় এভাবে যে, আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর অপরাধের বিষয়ে শূন্য সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করেছে বাংলাদেশ। 

এর আগে দ্বিতীয় রিভিউতে বাংলাদেশ রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৩ সালে। তাতে বলা হয়, বিদ্যমান আইনগত কাঠামোতে গুম বা জোরপূর্বক গুমের কোনো স্থান নেই। আইনগতভাবে যে শব্দটি প্রচলিত আছে দণ্ডবিধিতে তা হলো কিডন্যাপ/এবডাকশন। এতে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কিডন্যাপ বা এবডাকশনের মতো ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব বা আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর নাম ব্যবহারের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ওই সময় পর্যন্ত র‌্যাব কমপক্ষে ৫০০ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব অপরাধী অপহরণের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত। 

দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, মজার বিষয় হলো ইউপিআরের দ্বিতীয় রিভিউয়ের পর জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। ডকুমেন্ট আকারে ঘটনা সামনে আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় রিভিউয়ে এসব বিষয়ে যে রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছিল তার চেয়ে ২০১৮ সালে অনেক কম রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে জমা দেয়া রিপোর্টে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তার সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের ও অন্যান্য অংশীদারদের দেয়া রিপোর্ট মিলিয়ে দেখবে ইউপিআর। এসব অংশীদারের মধ্যে রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন গ্রুপ। জোরপূর্বক গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের কথা ভীষণ জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। এমন বিষয়কে তারা চাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইউপিআরে অন্যরা যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে এসব অপরাধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। 

এমন রিপোর্টের একটি তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার। আরেকটি রিপোর্ট তৈরি করেছে জাতীয় পর্যায়ের ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম সারির ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার বাংলাদেশের ওপর যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন তাতে উচ্চ মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক গুম, রাষ্ট্রীয় নিয়ামক শক্তিগুলোর অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ, তদন্তে ঘাটতি ও অপরাধীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ঘাটতি রয়েছে বলে বলা হয় এবং এ অবস্থায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনাকে কার্যত অপরাধ হিসেবে সমর্থন করে না বাংলাদেশের আভ্যন্তরণীন আইন। তাই বাংলাদেশ জোরপূর্বক গুমের ঘঠনাকে স্বীকার করে না। নিজেদের রিপোর্টে নির্যাতন, নির্যাতনমুলক আচরণ, টর্চার অ্যান্ড কাস্টডিয়াল ডেথ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি। এতে সব অভিযোগ তদন্ত করতে একটি স্বাধীন মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশের প্রতি। এতে অভিযুক্ত অপরাধীকে অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয। এরই মধ্যে ইউপিআরে অন্যান্য অংশীদাররা যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম ও খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। 

এসব অংশীদারদের রিপোর্ট ৮৪৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৮ জন নির্যাতনের ফলে মারা গেছেন। এতে আরো বলা হয়, ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩০০ মানুষ। এসব মানুষকে পরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, এসব গুমের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বহুক্ষেত্রে কিন্তু বহু অভিযোগ এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের পরও সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পয়েন্টআউট করেছে। ইউপিআর কমিটির কাছে সরকারের দেয়া রিপোর্ট ও অন্য দুটি রিপোর্ট দেখা যাচ্ছে সাংঘর্ষিক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, দেশে মানবাধিকার নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে যে চাপ রয়েছে তাতে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগের ইউপিআরের রিভিউতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে হলেও সব রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে তদন্ত করবে এবং তার বিচার করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, কিন্তু তারপর থেকেই ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা, বিশেষ করে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপর সহিংসতার মতো নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে আসছে বাংলাদেশ। সরকারের প্রতিনিধিরা বলেছেন, যারা এমন নিয়ম লঙ্ঘনকারী তাদের বিরুদ্ধে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের এমন দাবি প্রমাণের পক্ষে স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে। 



Rights Groups Criticize Bangladesh Government for 'Silence' on Enforced Disappearances


Bangladesh is accused of ignoring the issue in a report before its UN human rights review


By Faisal Mahmud/  May 23, 2018

Human right bodies have slammed the Bangladesh government for turning a blind eye toward enforced disappearances, saying the state is repeatedly denying increasing occurrences in the past few years.

The latest example of such a denial by the ruling Awami League — the oldest political party of Bangladesh —  government was the state report it submitted at the United Nation’s Universal Periodic Review (UPR) in Geneva, held from May 7-18. Bangladesh was one of the 14 states reviewed by the UPR Working Group during its May session.

Even though enforced disappearance is considered by the United Nation a “heinous crime” and the sitting government of this South Asian nation of 170 million is being accused of even patronizing such disappearances on some occasions, the report it submitted to the UPR did not even mention the issue.

U.S.-based NGO Human Rights Watch (HRW), which conducted a thorough and in-depth investigation on Bangladesh’s enforced disappearances, strongly criticized the country’s silence on this issue in the latest round of UPR.

Brad Adams, Asia Director of HRW, said in a statement, “Bangladesh needs to stop ignoring and start addressing serious human rights violations, such as when its security forces engage in enforced disappearances, killings, torture, and arbitrary arrests, many of them politically motivated.”

“The Bangladesh government should use the Universal Periodic Review at the UN Human Rights Council as a time for reflection, not self-congratulation,” Adams added.

Dhaka-based human rights lawyer Dr. Shahdeen Malik said that the Bangladesh government is in a state of “dangerous denial” about enforced disappearances. “This gross violation of human rights is not at all addressed by the authorities concerned. This is alarming,” said Malik.

During the third UPR cycle in the Swiss city of Geneva, Bangladesh was asked to spell out the steps it has taken to implement recommendations posed during its previous reviews, which the state committed to follow up on, as well as to highlight recent human rights developments in the country.

Since the UN Human Rights Council’s first meeting held in June 2006, all 193 UN member states — including Bangladesh — have been reviewed twice, in the first and second UPR cycles. Bangladesh’s first and second UPR reviews took place in February 2009 and April 2013, respectively.

UN Human Rights Council, Geneva

A general view of participants at the 16th session of the Human Rights Council in Geneva, Switzerland. UN Photo/Jean-Marc Ferré. 



At the third UPR review, according to HRW, the Bangladesh delegation led by its Law Minister Anisul Huq highlighted only what the government considered to be positive steps and glossed over concerns about critical issues such as enforced disappearances along with secret and arbitrary detention and extrajudicial killings.
The closest the Bangladesh state report comes to those aforementioned issues is when it narrates how the court sentenced 16 Rapid Action Battalion (RAB) — an elite police force — members for the abduction and murder of a city mayor and his six aides. The episode was raised to press home the claim that “Bangladesh maintains a ‘zero tolerance’ for crimes by law enforcement agencies.”

The country, in its previous state report submitted at the second round of UPR review in 2013, said, “The existing legal regime does not contain any reference to disappearance/enforced disappearance. The legally recognized term for it under the Penal Code is kidnapping/ abduction.”

It also said, “In recent times, there has been a tendency to use the name of RAB and other LEAs [law enforcement agencies] in relation to cases of kidnapping/abduction. RAB has, so far, arrested more than 500 criminals disguised as LEAs, including those involved in abduction.”

Interestingly, even though occurrences of reported and documented enforced disappearances and extra-judicial killings have increased since the second periodic review, the state report submitted in 2018 made even fewer references to the issue than the 2013 document. (Editor’s note: The Bangladesh government has since responded to the criticisms. View the response here.)

However, in addition to the national report provided by the state, the UPR will also consider the report prepared based on the information gathered by the UN’s High Commissioner of Human Rights and the report based on the information provided by other stakeholders, including national human rights institutions, regional organizations, and civil society groups.

While the Bangladesh government has largely ignored and suppressed the issue of enforced disappearance and extrajudicial killings, other reports submitted to the UPR — including the one prepared by the United Nation’s High Commissioner of Human Rights and the one prepared by a total of 56 prominent national and international organizations — mentioned these crimes.

The report on Bangladesh from the UN’s High Commissioner of Human Rights expressed concerns about the “reported high rate of extrajudicial killings and reports of enforced disappearances and the excessive use of force by State actors, and at the lack of investigations and accountability of perpetrators.”

The UN report said that domestic law did not “effectively criminalize enforced disappearances and that Bangladesh did not accept that enforced disappearances occurred.”

In its report, the UN Human Rights Committee urged Bangladesh to put an end “to the practice of torture and ill-treatment and enforce the Torture and Custodial Death (Prevention) Act.” It also asked the country to establish an independent complaint mechanism to investigate all reported allegations and ensure that alleged perpetrators of those crimes were prosecuted.

Meanwhile, the report of the stakeholders submitted at the UPR mentioned of the “increasing number of extrajudicial killings, enforced disappearances, and arbitrary arrests.”

The stakeholder report documented 845 cases of extrajudicial killings and about 48 cases of victims being tortured to death from May 2013 until September 2017. It also mentioned of about 300 persons allegedly subjected to enforced disappearance from May 2013 to September 2017, many of whom were found dead later on.
The stakeholder report mentioned that the “involvement of law enforcement agencies in disappearance cases was confirmed” on a number of occasions but “was denied by the government despite numerous and credible allegations.”

HRW has pointed out the stark contrast between the state report and the other two reports placed before the UPR committee. According to the NGO, the Bangladesh government “has failed to respond to pressing human rights concerns in the country.”

HRW also pointed out that Bangladesh had  pledged during the previous periodic review “to thoroughly and impartially investigate and prosecute all allegations of human rights violations, in particular by the security forces.”

“But it has ignored and denied reports of violations since then, including about violence by the security forces during the 2014 elections and against people who protested the conduct of the elections. The government delegation claimed that it is taking action against those responsible for abuse, but there is little evidence or transparency on this,” said HRW.

Faisal Mahmud is a Dhaka-based journalist
Courtesy — thediplomat.com   Link —  https://bit.ly/2xhrtHj

Sunday, May 27, 2018

সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ না করার আহ্বান অ্যামনেস্টির

ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য কথা বলার জায়গা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বলা হয়েছে, এটা অর্জন করা যাবে তখনই, যখন দু’দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম থাকবে। সাংবাদিকদের ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। হয়রানি করা যাবে না। তাদের ওপর হামলা করা যাবে না। এ ছাড়া সাংবাদিকদের নিষ্পেষণমূলক আইন ব্যবহার করে কণ্ঠরোধ করা যাবে না।

গতকাল শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আগে এমন আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি। বৈঠকে সুনির্দিষ্ট মানবাধিকার নিয়ে যে উদ্বেগ আছে তাও তুলে ধরার জন্য উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানায় এ সংস্থাটি। অ্যামনেস্টির ভারত বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক আকার প্যাটেল এমন আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার- তাদের তা সমুন্নত রাখা উচিত। সামনেই দু’দেশের জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে মানবাধিকারের প্রতি দু’দেশের সরকারের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির প্রতি অটল থাকতে আহ্বান জানানো হয়।

আকার প্যাটেল তার বিবৃতিতে বলেন, ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে একপেশে হয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলো ও ভারতে মানবাধিকার রক্ষার পক্ষের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অথবা ভয়াবহতার কাছাকাছি এমন হামলার তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে মোদি ও হাসিনাকে। বাংলাদেশে উপজাতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কর্মীদের ওপর হামলারও তদন্ত করতে হবে। এ সময় প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য নিজেদের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুসরণীয় বলে অভিনন্দিত করা হয়। কিন্তু ভারতে ৪০ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে যে গড়িমসি করছে তাতে হতাশা প্রকাশ করেন আকার প্যাটেল। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে ধরে তা অনুসরণ করা উচিত ভারত সরকারের। একই সঙ্গে নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা থেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষিত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান আকার প্যাটেল। 

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/ মে ২৭, ২০১৮ 

Participation of MPs in electioneering

Will create bumpier playing field


The Election Commission has approved 11 changes to its City Corporation Election Code of Conduct Rules 2016, one of which will permit parliament members to participate in electioneering in local elections. 

What is surprising is that not only have they been delisted from the list of people barred from campaigning in local elections, but also that the decision was taken hastily without discussing the issue with other political parties, to accommodate the demands of the Awami League. Coming as it does on the heels of Khulna City Corporation which has done nothing to enhance the credibility of the commission, this decision will further erode public confidence in the EC.  

It was for very good reason that the caveat to electioneering in local elections by certain categories of officials, including members of parliament, was imposed. One cannot deny the impact of their presence in their respective constituency. And for very obvious reasons the local administration is beholden to the local MP because of the political clout he carries. And contrary to what the EC contends, local facilities are provided to the lawmaker whenever he or she visits his or her area.

A very significant change was made to the local government election when it was shorn considerably of its nonpartisan character by allowing party-based election. And with the new provision its local character will vanish completely. These elections are meant to be local. It cannot be so with the direct interference and influence of the local lawmakers that the new EC rule will ensure. The decision we think is a rank bad idea which will do anything but provide a level playing field for all the other political parties, and make the elections anything but local.
  • Courtesy: The Daily Star/EDITORIAL /May 26, 2018

মানুষকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন হয় না

আবুল মোমেন

রণাঙ্গনের যুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্র বদল বা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, কিন্তু সমাজ বদলের যুদ্ধের প্রকৃতি ভিন্ন। তার রণাঙ্গন যেমন সমাজ-বাস্তবতার উপরিকাঠামোয় ছড়ানো, তেমনি সমাজমানসের অন্দরজুড়েও বিস্তৃত। স্বভাবতই কাজটা কঠিন। ১৯৭১-এ আমরা নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের পত্তন করেছি, কিন্তু সমাজমানস রয়ে গেল পুরোনো আদলে। তবু এটি মুক্তির সংগ্রাম ছিল বলে এ সময় পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্যের চেয়েও আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন বড় ছিল। এ আন্দোলনের মেরুদণ্ড ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এর মূল উপাদান উদার মানবতাবাদ, যা সহজাতভাবে অসাম্প্রদায়িক, সম্মিলনকামী। সঙ্গে ছিল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের অঙ্গীকার। এগুলো রাজনৈতিক কার্যক্রম হলেও উভয়েরই সামাজিক ভূমিকা ও প্রভাব ব্যাপক।

সমাজের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ওপরই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ নির্ভরশীল। একই কথা খাটে সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশের তিনটি ঘোষিত আদর্শের মৌলিক নীতিরই অন্তর্নিহিত প্রণোদনা ধর্মনিরপেক্ষ, যা আমাদের চতুর্থ মূল নীতি ছিল। বাঙালির চিরায়ত ভাবাদর্শের মানবিক প্রণোদনার কারণেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক। আবার গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের সব জনগণ আইনের চোখে সমান, দায়িত্ব ও অধিকারে কোনো তারতম্য থাকার কথা নয়। তার সঙ্গে সমাজতন্ত্র যুক্ত হলে প্রত্যেক নাগরিকের বৈষয়িক প্রাপ্তির ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত হয়। এভাবে এরও অন্তর্নিহিত আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।

রাষ্ট্রের ও আমাদের রাজনীতির এই নতুন অর্জনগুলো কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি বা বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয় ছিল না। একসময় গ্রামীণ জীবন যৌথ যাপনের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তাদের জীবনসংগ্রাম এবং জীবনযাপন ও উদ্‌যাপন সবার সহযোগিতায় সার্থকতা পেত। তাই এ সমাজের নিম্নবর্গ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ছিল উদার ও মানবিক। কিন্তু ক্রমেই নগরজীবনের প্রাধান্য বাড়ল, সমাজের চেয়ে রাষ্ট্র প্রধান হয়ে উঠল, রাজনীতি সংস্কৃতির চেয়ে প্রভাবশালী ভূমিকা নিল।

গ্রামীণ সমাজে জমিদার ও উচ্চবর্ণের প্রাধান্য ছিল, বৈষম্য ও শোষণ ছিল, তার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে প্রজার বিদ্রোহও ঘটেছে। কিন্তু বৃহত্তর সমাজে অর্থাৎ নিচতলার সমাজে একধরনের সাম্যের আবহে উদার মানবতার চর্চা হয়েছে। কিন্তু নগর, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্রম-প্রাধান্যের ফলে যে রূপান্তর, তাতে নতুন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর উত্থান হলো, এ ব্যবস্থায় রাজনীতি ও বাণিজ্য জোটবদ্ধ হয়েছে। তাদের দৌরাত্ম্যে সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় সমাজমানসের বিকাশ অসম্ভব হয়ে পড়ে। সমাজমানসের বিকাশের জন্য চাই অবাধ জ্ঞানচর্চা, উচ্চতর গবেষণা, সৃজনশীলতার মুক্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত সুযোগ। এর জন্য পুরোনো চিন্তা, বিশ্বাস, অভ্যাসের অচলায়তনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর, খারিজ করার, সংশোধনের, নতুন কথা বলার মতো পরিবেশ প্রয়োজন। অন্ধবিশ্বাস‌‌, অভ্যস্ত চিন্তা, গতানুগতিক আচারের পক্ষে শক্তিশালী ক্ষমতাবান গোষ্ঠী আছে। তাই সমাজ পরিবর্তনের কাজে যেমন চাই মেধার মৌলিক ব্যবহারের ক্ষমতা, তেমনি প্রয়োজন প্রচলিত অন্ধতার প্রাচীর ভাঙার সাহস।

এ সমাজে ব্যক্তিগত সম্পদ ও বিত্তবৈভব অর্জনে বেপরোয়া প্রচেষ্টা ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণসমাজও এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের রাজনীতি এখন চিন্তা ও চেতনায় সম্পূর্ণ আপসকামী। উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনসহ সমগ্র শিক্ষাঙ্গন অত্যন্ত গতানুগতিক ধারায় ডিগ্রি ও সনদের যূপকাষ্ঠে মাথা পেতে রেখেছে। সাহসী ভাবুক, চমকে দেওয়ার মতো নতুন চিন্তকের দেখা নেই। যাঁরা টিমটিম করে জ্বলছেন তাঁরা সত্যিই নিঃসঙ্গ, সচেতনভাবে তাঁদের কাজ থেকে দূরে রাখা হয়। কেউ কেউ তাতেও নিবৃত্ত না হলে তাঁদের কাজে বাধার সৃষ্টি করা হয়, তাঁদের অকেজো করে রাখা হয়।

এ রকম সমাজে ব্যক্তির উত্থান, নাগরিক হিসেবে মর্যাদা নিয়ে স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সব মানুষ তো নীতি-রুচি-অঙ্গীকার নিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত থাকেন না, পরিবারের ভাবনায় কাতর সংসারীর কাছ থেকে তা প্রত্যাশাও করা যায় না। কিন্তু সব মানুষ সংসারের জালে আটকে পড়লে সে সমাজের সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়। আমাদের সমাজে বহুকাল ধরেই পরিবর্তনের চাবিকাঠির ভূমিকায় আছে ছাত্র-তরুণেরা। আশঙ্কার কথা হলো, পুঁজিবাদের পণ্যাসক্তি ও ভোগবাদিতার মোহও তো কম শক্তিশালী নয়। তা যদি শৈশব থেকেই প্রভাবিত করতে থাকে এবং ভাবনা-কল্পনা ও সৃজনশীলতার অবকাশ না রাখে, তাহলে তারুণ্যের সর্বনাশ ঠেকানো মুশকিল। তারুণ্যের অপচয় মানে সমাজের পচন। তার লক্ষণ সমাজদেহে যথেষ্টই প্রকাশ পাচ্ছে।

সড়ক মেরামতের কথা আমরা ভাবি, সেতু নির্মাণের দাবি তুলতে পারি, মেট্রোরেল বা বড় বড় স্থাপনার পরিকল্পনা করি। এসব কাজ সমাজ ও রাষ্ট্র একযোগেই করছে। কিন্তু জ্ঞানে, দক্ষতায়, মানসিকতায় উন্নত মানুষ তৈরির কথা কেউ ভাবি না। মূল্যবোধের সংকট, মানবিক চেতনার ভাটাও দেখতে পাই। এ নিয়ে আলোচনাও কম হয় না, কিন্তু ব্যাধির প্রতিকার ও অবস্থার পরিবর্তনের জন্য যথাযথ কাজ করতে পারছি না। রাষ্ট্র ও রাজনীতির অ্যাজেন্ডায় মানুষের পরিচর্যা ও উন্নত মানুষ তথা উন্নত মানবসমাজ তৈরির মতো জরুরি বিষয় নিতান্ত গতানুগতিক ভাবনায় আটকে আছে। সেটা রাষ্ট্রের কর্তাদের ভূমিকায় এবং বাজেট বরাদ্দেও প্রকাশ পায়। একটি সমাজের আগাপাছতলা যদি বিষয়-আশয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকে তাহলে সেটা কি আর মানুষের সমাজ থাকে? এমন সমাজে অজান্তেই কখন ঘুণপোকায় পরিণত হয় মানুষ। এমন বাস্তবতায় যখন দেখি কেউ আইনের শাসনের স্বপ্ন দেখেন, তখন বুঝি এরা রবীন্দ্রনাথের সেই তরুণ বালক, যারা উন্মাদ হয়ে ‘কী যন্ত্রণায় মরিছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে’।

এর জের টেনে কি বলব, আমাদের কণ্ঠ আজ রুদ্ধ, বাঁশি সংগীতহারা? আমাদের এ সমাজ কি অমাবস্যার আঁধারে কারাতুল্য হয়ে উঠেছে? আমাদের জগৎ কি দুঃস্বপনের তলে বিলুপ্তির পথে? রবীন্দ্রনাথের কথা ধার করে বলতে হবে, এমন শোচনীয় বাস্তবতার কথা আমরা ভাবব না। কেননা, সমস্যাগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, বুঝতেও পারছি। এবং সুড়ঙ্গের শেষে আলোর রেখার মতো দেখতে পাচ্ছি বিশাল এক তরুণসমাজ। তারুণ্যের ক্ষমতায় এখনো আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি; কেননা, নতুন প্রজন্মের মধ্যে চিন্তার কিছু স্বাবলম্বিতা, কিছু মৌলিকত্ব কিংবা সাহসের কিছু ভ্রূণ দেখতে পাচ্ছি। জানি, তাদের দমিয়ে, দাবিয়ে ও ভুলিয়ে রাখার অপশক্তির অভাব নেই, তবে প্রাণশক্তির সহজাত প্রবণতা যে জেগে ওঠার ও বিকাশের দিকে—সেটাই আশার কথা।

এর মধ্যেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, তরুণদের বিশাল উপস্থিতি থাকলেও তার একটি শক্তি হিসেবে জাগরণের লক্ষণ আপাতত নেই। তারুণ্যের মধ্যে চিন্তার জরা, কর্মের জড়তাও লক্ষ করার মতো। কীভাবে যেন আমাদের সমাজটা ভোগের ঊর্ধ্বে উদ্‌যাপনের পর্যায়ে যেতে পারছে না। 

এ সমাজ বাস্তব জীবনে নানা আধুনিক পণ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, কিন্তু এর পেছনে যে সৃজনশীলতা, যৌক্তিক চিন্তা, নিরলস বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান, সংশয়, কৌতূহল, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, মূল্যায়ন ইত্যাদি কাজ করেছে, তাকে গ্রাহ্যই করছি না আমরা। এ যেন গায়েগতরে বড় হচ্ছে, স্বাস্থ্যের জৌলুশ বাড়ছে কিন্তু বুদ্ধি-কল্পনা-মনন-সৃজনে বামন হয়ে থাকার অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশসমূহের নানা অনাচারের কথা আমরা জানি। ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনের উদাহরণ এখনো জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু তারা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলোয় হস্তক্ষেপ করে না। তাদের স্বাধীন বিকাশ ও অবদান অব্যাহত আছে। তাতে রাষ্ট্রে নানা সংকট ও অবক্ষয় হলেও ব্যক্তি ও সমাজের মানবিক বিকাশ ও উত্তরণের অবকাশ ক্ষুণ্ন হয় না।

সত্যিই মানবসমাজ হিসেবে এগোতে হলে চিন্তাচর্চা ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রগুলোর স্বাধীন বিকাশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। গোড়ায় অবশ্য শিক্ষাকে ঢেলে সাজিয়ে কিশোর-তরুণদের মৌলিক চিন্তাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসা, উদ্যম ও সৃজনশীলতা ধরে রাখার ও লালনের দিকে নজর দিতে হবে।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭, ২০১৮ 


সরকারের ইচ্ছাই পূরণ করছে ইসি

বিতর্কে নির্বাচন কমিশন

সরকারের ইচ্ছাপূরণেই কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইসির বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

ইসি সূত্র জানায়, সরকারি দল আওয়ামী লীগ গত এপ্রিলে ইসির বৈঠক করে তিনটি দাবি জানিয়েছিল। সেগুলো হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া, সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন না আনা এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কারের আগে তা আরও পর্যালোচনা করা। ইসির একজন কমিশনারের আপত্তির মুখে সিটি নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আরপিও সংস্কারকাজও আরও পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন না আনার দাবি পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে পূরণ করেছে ইসি।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল। ইসি ঢাকা থেকে একজন যুগ্ম সচিবকে সমন্বয়কারী করে খুলনায় পাঠায়। বিএনপির দাবি ছিল, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ূন কবীর এবং গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করা। ইসি সেই দাবি আমলে নেয়নি।

আবার অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার, ‘না’ ভোটের বিধান আবার চালু, প্রবাসীদের ভোটার ও ভোটাধিকার দেওয়া, বিভিন্ন ধাপে সংসদ নির্বাচন করে এক দিনে ফলাফল ঘোষণা করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত, প্রস্তাব ও দাবি এসেছিল। এই বিষয়গুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল—এই অজুহাতে ইসি সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে।

এসব পদক্ষেপের কারণে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন এই সংস্থা এখন সরকারের ইচ্ছাপূরণে বা সরকারের দেখানো পথে হাঁটছে—এমন আলোচনা সামনে এসেছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইসির বিভিন্ন পদক্ষেপে মানুষের মনে সন্দেহ জেগেছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, সরকারি দল বলল আর ইসি তা করল। ইসি কীভাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে, তা তাদের ঠিক করতে হবে।

নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জবরদখল, প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ঘটনা ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সর্বশেষ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির দুর্বলতা প্রকটভাবে প্রকাশ পায়। গণগ্রেপ্তার এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে এক পক্ষকে মাঠছাড়া করা, পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা, বিভিন্ন কেন্দ্রে বুথ দখল করে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা, বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে নীরবতার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসিকে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি শুরু থেকে বলে এসেছে, এই কমিশন নিরপেক্ষ নয়। এখন তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপে প্রমাণিত হচ্ছে, সরকার যা যা চাইছে, ইসি তা-ই করছে। বিএনপির কোনো দাবির প্রতি তারা কর্ণপাত করছে না। ক্ষমতাসীনদের নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে ইসি।

তবে সরকারের ইচ্ছাপূরণে ইসি কাজ করছে—এ কথা মানতে নারাজ ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের ইচ্ছাপূরণে ইসি কাজ করছে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসির অংশীজন। তারা যেকোনো বিষয়ে প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য মনে হলে ইসি বিবেচনা করে।

তড়িঘড়ি করে বিধি সংশোধন

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল গত ১২ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংসদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানায়। এর দেড় মাসের মাথায় অংশীজনদের কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন। একজন নির্বাচন কমিশনার আপত্তি করলেও সেটা আমলে নেওয়া হয়নি।

সীমানা নিয়ে পিছু হটা

গত জুলাইয়ে ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনায় আগামী নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য নতুন করে আইন করার উদ্যোগও নিয়েছিল ইসি। তখন আওয়ামী লীগ সংলাপে অংশ নিয়ে জানিয়েছিল, তারা আগামী নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তনের বিপক্ষে। এরপর ইসির নতুন আইন করার উদ্যোগ থেমে যায়।

বিদ্যমান আইনে ৪০টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছিল ইসি। প্রভাবশালী মন্ত্রী-সাংসদের অনেকে এই পরিবর্তনের প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হন। শুনানি শেষে শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৫টি আসনে পরিবর্তন আনে ইসি। যেসব মন্ত্রী ও সাংসদ তাঁদের সংসদীয় এলাকার সীমানায় পরিবর্তন প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তাঁদের এলাকায় পরিবর্তন প্রস্তাব কার্যকর হয়নি।

ঝুলে গেছে আইন সংস্কার

ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে আইন সংস্কারের খসড়া প্রস্তুত এবং এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কারসংক্রান্ত কমিটি আরপিওতে ৩৫টি সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছিল। এগুলো নিয়ে গত ৯ ও ১২ এপ্রিল দুই দফা আলোচনা করে কমিশন। এরপর ১২ এপ্রিল বিকেলে আওয়ামী লীগ ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, আরপিও সংস্কারের খসড়া যেন আরও পর্যালোচনা করা হয়। এ দাবি জানানোর ঘণ্টা দুয়েক আগেই ইসি সিদ্ধান্ত নেয় আরও পর্যালোচনা করার। সুপারিশগুলো আবার কমিটিতে ফেরত পাঠানো হয়। আগামী নির্বাচনের আগে আইন সংস্কার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছর নিজেদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, নারীনেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এতে আসা সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে—সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রস্তাব, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল প্রস্তাব এবং ইসির এখতিয়ারভুক্ত প্রস্তাব। এর মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার করা না-করা, ‘না’ ভোটের বিধান আবার চালু ও প্রবাসীদের ভোটার করার মতো আলোচিত সুপারিশগুলোকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় বলছে ইসি।

আরপিওতে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সেনাবাহিনীকে বিচারিক (ম্যাজিস্ট্রেসি) ক্ষমতা দেওয়ার দাবি ছিল বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর। আওয়ামী লীগসহ তাদের সমমনা কয়েকটি দলের অবস্থান এর বিপক্ষে। বিএনপির দাবি পূরণ করতে হলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। সরকার না চাইলে তা সম্ভব নয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণ বাদে একইভাবে অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও আইন সংশোধনের প্রশ্ন আছে। তবে ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনের যে প্রাথমিক খসড়া করেছে, তাতে সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সংজ্ঞাভুক্ত করার কোনো সুপারিশ নেই।

আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হোক। বিএনপি এর বিপক্ষে। আরপিও সংশোধনীর খসড়ায় ইভিএমে ভোট নেওয়ার সুযোগ রাখার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবেও ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ইসি তা আমলে নিচ্ছে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এ জন্য যা যা প্রয়োজন তা তাদের করতে হবে, সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো সরকারের হাতে, সেগুলো সরকারকে প্রস্তাব দিতে হবে। কিন্তু ইসির পুরো আচরণ এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা যে আচরণ করছে, তা হতাশাব্যঞ্জক।

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭, ২০১৮ 

MPs can join city polls campaigns

EC decides; to send the proposal to law ministry for vetting soon


In line with the ruling Awami League's recommendations, the Election Commission yesterday decided to allow lawmakers to participate in city corporation election campaigns.
“The Commission has approved changes to 11 clauses of the existing City Corporation (Election Code of Conduct) Rules 2016,” said EC Secretary Helaluddin Ahmed.

He was talking to reporters after an EC meeting at the Nirbachon Bhaban in the capital. Chief Election Commissioner KM Nurul Huda presided over the meeting, which made the decision.

A top BNP leader and an election expert decried the move, saying it would go in favour of the ruling party.

But the EC secretary said, “Members of parliament don't hold any office, don't use any government vehicle and government officials are not attached with them They also don't hold any office of profit So, the Commission recommended that MPs be excluded from the Very Important Person (VIP) definition. They can take part in city corporation election campaigns." 

However, lawmakers will not be able to use circuit houses or government rest houses during the campaign, as per the new amendment, he added.

The approved proposals will soon be sent to the law ministry for vetting, Helaluddin said.

Responding to a query, he said chances of implementing the amended code of conduct in the upcoming Gazipur City Corporation election was slim as the polls schedule has already been announced.

Responding to another question, he said as a registered political party, the AL too was a stakeholder of the Commission and that the decision was made after reviewing its proposals.

Contacted, Shujan Secretary Badiul Alam Majumdar said the concept of level-playing field will suffer a blow if MPs are allowed to take part in polls campaigns.

“MPs are very powerful in their areas and they allegedly have control over everything in their constituency. So their participation in the campaign will really tilt the election in favour of those they will campaign for,” he said.

BNP standing committee member Amir Khashru Mahmud Chowdhury said after closing political and democratic space, the government has closed the electoral space through the EC.

“Now there will be no election in the country as the election will be turned into a selection process. The present subservient Election Commission has sealed the path of holding a free, fair and impartial election through allowing MPs to carry out election campaigns,” he added.

An AL delegation, led by Prime Minister's Political Affairs Adviser HT Imam, made the proposal to the EC on April 13, after the Commission announced the polls schedule of Khulna and Gazipur city corporation elections.

The AL delegation argued that allowing MPs to join the polls campaign would ensure a level-playing field for all candidates.

Following the proposal, the EC held the meeting on April 19 and formed a committee to evaluate the suggestion.

Earlier in 2015, a similar move by the EC, then headed by Kazi Rakibuddin Ahmad, drew huge flak. At the time, the Commission was mulling over changing the election code to allow ministers and MPs to join local election campaigns.

  • The Daily Star/May 27,2018 

তিস্তায় নীরব হাসিনা, মোদি চুপ রোহিঙ্গায়

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য

  • তিস্তা ইস্যুতে ‘চুপ’ ছিলেন হাসিনা।
  • তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু অমীমাংসিত।
  • তিস্তা নিয়ে মোদি প্রতিশ্রুতি পূরণে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হাসিনা



বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে গত শুক্রবার এক মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতাই যেন প্রবল হয়ে বাজল। একদিকে শেখ হাসিনা তিস্তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি, অন্যদিকে মোদির মুখেও ছিল না রোহিঙ্গা ইস্যু।

গতকাল শনিবার ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু আজও অমীমাংসিত। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। তাঁর মতে, বাংলাদেশকে পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে এই ইস্যুটি সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে, তবে আমি সেসব বিষয় তুলে এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে ম্লান করতে চাই না।’ 

হাসিনা বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তারা যখন এল, তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত বলে মনে হলো আমাদের। এমনকি নিজের থালার ভাতসহ আমাদের সীমিত সম্পদ তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছি। আমরা দ্রুততার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চাই। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দুই দেশকে অবশ্যই মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নিতে বলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে বক্তব্য দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দু-মুসলিম সাম্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুলের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন তিনি। তবে তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই বলেননি।

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা, রোহিঙ্গা—কোনো ইস্যু নিয়েই কথা বলেননি। তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য শেখ হাসিনার। এই লক্ষ্য অর্জনে তাঁকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে ভারত।’

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সহায়তা কামনা
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে রাজি নয়। তারা রোহিঙ্গাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ধারণার বিপক্ষে। তিনি রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আগ্রহী।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭, ২০১৮ 

পিরোজপুরে ‘বাড়ি দখল করতে’ যুবলীগ নেতার অবিশ্বাস্য কাণ্ড

  •  পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে থাকে গীতা রানীর পরিবার। 
  •  ওবায়দুল বাড়ি ও ক্লিনিক দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ। 




বাসাটিতে গ্যাস নেই। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় নয় মাস ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ গীতা রানী মজুমদার ও তাঁর স্নাতকপড়ুয়া একমাত্র মেয়ে।

গীতা রানীর বাসার বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ কোনো কর্তৃপক্ষ বিচ্ছিন্ন করেনি। পরিবারটিকে বের করে দিয়ে বাড়িটি দখল করতে পিরোজপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক ওরফে পিন্টু এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের মাছিমপুর এলাকায় সার্জিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পঞ্চম তলায় থাকে গীতা রানীর পরিবার। তাঁর স্বামী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। এর অর্ধেক মালিকানা বিক্রি করা হয় যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকের কাছে। সেই সূত্রে তিনি বাড়িটির অর্ধেকের মালিক হন। কিন্তু তিনি ক্লিনিকের ব্যবসা করায়ত্ত করার পর এখন পুরো বাড়িটিও দখল করতে চান বলে বিজয় কৃষ্ণের পরিবারের অভিযোগ।

গীতা রানী জানান, গত বছরের আগস্টে তাঁদের বাসার পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আনতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। কারা এটা করছে—জানতে চাইলে গীতা রানী বলেন, বাড়ি ও ক্লিনিকটি পুরোপুরি দখল করে রেখেছেন ওবায়দুল হক। তিনিই পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। বাসায় আসা-যাওয়া করতে বাধা দিচ্ছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদক পিরোজপুরে ওই বাসায় গেলে নিচতলা থেকে পিছু নেন তিন যুবক। পঞ্চম তলায় গীতা রানীর বাসার কলবেল চাপতেই তিনজনের মধ্যে রেজাউল পরিচয় দিয়ে একজন এই প্রতিবেদককে জেরা করা শুরু করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কিছুটা দমে যান। তবে এই প্রতিবেদক ওই বাসা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত বাসার সামনেই বসে ছিলেন তাঁরা।

গীতা রানীর বাসার একটি কক্ষে আলমারি, ওয়ার্ডরোবের তালা ভাঙা। ঘরে কেরোসিনের একটি চুলা। গীতা রানী বলেন, ‘প্রায় দিনই হোটেল থেকে খাবার কিনে আনিয়ে খেতে হয়। অন্য বাসায় গিয়ে গোসল করতে হয়। সব সময় আতঙ্কে থাকি। এভাবে কত দিন বেঁচে থাকতে পারব জানি না।’ বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ, মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ দায়িত্বশীল সবাই জানেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

২০১৬ সালের ২১ মার্চ গভীর রাতে ক্লিনিকটির মালিক চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার, তাঁর মা, স্ত্রী গীতা রানী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েকে একদল দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকে মারধর করে এবং দামি জিনিসপত্র লুট করে। চোখ ও হাত-পা বেঁধে তাঁদের ঝাটকাঠি এলাকার একটি বাড়িতে রেখে আসে। স্থানীয় লোকজন সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে শহরের পালপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় পৌঁছে দেন। পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল খবর পেয়ে পুলিশের সহায়তায় পরিবারটিকে তাদের বাসায় তুলে দেন। এর পাঁচ দিন পর সাংসদের হস্তক্ষেপে মামলা নেয় পিরোজপুর সদর থানার পুলিশ। মামলায় ওবায়দুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।

গীতা রানী জানান, মামলা করার পর তাঁদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। পুলিশও ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে তিনি আদালতে নারাজি দিয়েছেন।

চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার তাঁর ক্লিনিকের অর্ধেক শেয়ার ওবায়দুল হকের কাছে বিক্রি করেন। এর পরপরই ২০১৫ সালের অক্টোবরে রহস্যজনকভাবে অপহৃত হন বিজয় কৃষ্ণ। আহত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। এরপর তিনি মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই ক্লিনিকসহ পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন ওবায়দুল হক। শুধু পঞ্চম তলায় বিজয় কৃষ্ণের পরিবার থাকে। গীতা রানী বলেন, এখন তাঁদের উচ্ছেদের জন্য অমানবিক পন্থা বেছে নিয়েছেন ওবায়দুল হক।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওবায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দুই কোটি টাকা দিয়ে এই ক্লিনিকের অর্ধেক মালিকানা কিনেছি। পরে আরও টাকা দিই পুরোটা কেনার জন্য।কিন্তু রেজিস্ট্রি করার আগেই চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে পড়েন।’ একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘সাংসদ পরিবারটিকে বাসায় তুলে দেওয়ার কারণে তাদের সরাতে পারছি না।’

সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আমি তাঁদের বাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছি। এখন শুনছি পুরো বাড়িটি দখল করার চেষ্টা চলছে। এর বিচার হওয়া উচিত।’ সাংসদ আরও বলেন, ওবায়দুল হকের দাবি অনুযায়ী, বাড়িটি যদি তিনি কয়েক কোটি টাকা দিয়ে কিনে থাকেন, তাহলে তাঁর আয়ের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। তাঁর আয়কর নথি যাচাই-বাছাই করে দুদকের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।

জানতে চাইলে পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, ওই সম্পত্তি নিয়ে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে দুই পক্ষের একসঙ্গে থাকা কঠিন। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল হক যে দুই কোটি টাকা দিয়ে অর্ধেক মালিকানা কিনেছে, তার চেয়ে কিছু কম টাকা ফেরত দিলেও সে সরে আসবে।’ অথবা চিকিৎসক বিজয়ের পরিবার চাইলে বাকি অর্ধেক শেয়ারের জন্য আগের চেয়ে বেশি টাকা ওবায়দুল হকের কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারেন তিনি।

মেয়রের এ প্রস্তাব শুনে গীতা রানী বলেন, মেয়রের বক্তব্যেই তো প্রমাণ হয়, ওবায়দুল হক যে পুরো বাড়ি তাঁর বলে দাবি করছেন, তা মিথ্যা।

যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকরা তিন ভাই। বড় ভাই পুলিশ পরিদর্শক। ছোট ভাই অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একজন নেতা।

জানতে চাইলে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির বলেন, ‘মালিকানার বিষয়ে আমার করণীয় কিছু নেই। কিন্তু তাঁদের ওপর অমানবিক আচরণ করলে সেটা দেখতে পারি।’ পরিবারের নিরাপত্তা ও প্রতিকার চেয়ে গীতা রানী প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। এমন কাজ যে-ই করুন, তিনি পার পাবেন না। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/মে ২৭,২০১৮ 

বদি ভাই ভয় নাই, জয় বাংলা বলে এগিয়ে চলো...

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের এমপি আবদুর রহমান বদি এখন মিডিয়ায় এক বিরাট সম্রাট। প্রতিদিনই মিডিয়া তাকে নিয়ে নানা ধরনের খবর প্রচার করছে। শুধু প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি এক বিরাট হিরো। 

হিরো অবশ্য তিনি নতুন নন। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই টেকনাফ- উখিয়ায় তাকে সম্রাট হিসেবে চেনেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। আর এমপি হওয়ার পর তো কোনো কথাই নেই। বাংলাদেশে রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি আবদুর রহমান বদির নাম জানেন না। সে দিক থেকে তিনি ‘হিরো নম্বর ওয়ান’।

সম্প্রতি তার নাম মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার কারণ, সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান। এই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে প্রতিদিন। এই লেখা যেদিন প্রকাশিত হবে, তত দিনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শতাধিক হয়ে যেতে পারে। সরকার এই অভিযানকে বলছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। 

যখন থেকে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে, তখন থেকে একই কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। নতুন কোনো ক্রিয়েটিভ কাহিনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকার তৈরি করতে পারেনি। সে কাহিনী গৎবাঁধা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাকেই আটক করুক, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আটক ব্যক্তি একজন ‘কুখ্যাত’ ঘাতক কিংবা সন্ত্রাসী অথবা অস্ত্রবাজ। পুলিশ বা র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী ওই ব্যক্তিসংশ্লিষ্ট বাহিনীর কানে কানে জানায় যে, অমুক জায়গায় তার আরো অস্ত্র লুকানো আছে। তখন ওই বাহিনী ফোর্স নিয়ে সে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নির্ধারিত এলাকার দিকে রওনা হয়। কিন্তু ওই এলাকায় আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে সন্ত্রাসীর সহযোগীরা।

ওই সহযোগীরা এতই দক্ষ যে, তারা আগে থেকেই অত্যন্ত নির্ভুলভাবে জানতে পারে যে, ঠিক কোথায় র‌্যাব বা পুলিশ অভিযানে যাচ্ছে। এদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কও অত্যন্ত শক্তিশালী। কখনো তারা ভুল করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছাকাছি যেতেই তারা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ ক্ষেত্রেও আটক ব্যক্তির সহযোগীরা চিতার চেয়েও ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে মুহূর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আর নিহত হয় পুলিশের জিম্মায় থাকা কথিত সন্ত্রাসী। আজ পর্যন্ত ওই সন্ত্রাসীর সহযোগীদের কেউ ধরাও পড়েনি বা নিহত হয়নি। 

এসব অভিযানে গিয়ে এত বড় বন্দুকযুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নিহত হয়নি। কখনো কখনো বলা হয় যে, এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব কথা কেউ বিশ্বাস করে না। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, কথিত ওই সন্ত্রাসীকে র‌্যাব বা পুলিশ ঠাণ্ডামাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। সরকারের সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযানেও হত্যা সম্পর্কে একই কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। আর যথারীতি মানুষ তা অবিশ্বাসও করে যাচ্ছে।

এই অভিযানেই এসেছে এমপি বদির নাম। দীর্ঘকাল ধরে বদি নিজ এলাকায় তো বটেই গোটা দেশেই মাদকসম্রাট হিসেবে সুনাম নিয়ে আছেন। তার ওপর তার বিরুদ্ধে আছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় আদম পাচারেরও অভিযোগ। সেভাবে তাকে আদমসম্রাটও বলা হয়। এই মাদকবিরোধী অভিযানের আগে সরকারের পাঁচটি সংস্থা মিলে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় শীর্ষ মাদকসম্রাট হিসেবে আছে এমপি বদির নাম। মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় মাদক কারবারি হিসেবে এক নম্বরে আছে এমপি বদির নাম। কিন্তু সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে কিছুতেই রাজি নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার বরং বদির পক্ষ নিয়ে কথা বলতে কসুর করছে না। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বদির পিঠ চাপড়ে দিয়ে আগে বলেছিলেন যে, উখিয়া টেকনাফে এমপি বদির বিকল্প নেই। আর এখন মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তিনি বলছেন, একজন এমপিকে তো আর চট করে ধরা যায় না। কেন ধরা যায় না? সাধারণ মানুষ যারা বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন হচ্ছেন, তাদের পরিবারের তো ভিন্ন ভাষ্য আছে। তারা বলছেন, পুলিশ টাকা চেয়েছিল, দিতে পারেনি বলে বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন করা হয়েছে। এখানে তো ন্যায়বিচার হলো না।

এটা সবাই জানেন যে, ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদকের মূল উৎস টেকনাফ। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। টেকনাফের অনেক স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ইয়াবার সঙ্গে জড়িত থাকায় বারবার এমপি বদির নাম উঠে এসেছে। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ কর্মী ও আত্মীয়স্বজনের নামও জড়িত ইয়াবার কারবারে। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। 

গত ২২ মে সচিবালয়ে এমপি বদির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। আমরা সেই অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। বদিসহ অন্য মাদকব্যবসায়ীদের বিষয়ে আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের দিন। বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তথ্য-প্রমাণ নাই।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে ১৪১ জনের তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় গডফাদার হিসেবে বদি ও তার পাঁচ ভাইয়ের নাম রয়েছে। তালিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠার একটি প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছু হয় না। দেশের ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’ তালিকায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি বলা হয়েছে। এতে বদির সঙ্গে তার পাঁচ ভাইয়ের নামও উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে সরকারের প্রায় সব সংস্থার তালিকায় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ছাড়াও তার পাঁচ ভাইয়ের নাম রয়েছে। তার ভাইয়েরা ছাড়াও তালিকায় আছে তার পিএস মং মং সেন ও ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপুসহ বেশ কয়েক জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম।

এক সহযোগী জানিয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাসংক্রান্ত গোপনীয় প্রতিবেদনের ভূমিকা অংশে বলা হয়েছে, সরকারদলীয় এমপি হওয়ার সুবাদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী-সহযোগী নিয়ে তিনি ইচ্ছামাফিক ইয়াবা কারবারিসহ অন্য উৎস হতে অবৈধ আয়ে জড়িত আছেন। শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবার করার সাহস রাখে না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জেলার অন্য শীর্ষ মাদক কারবারি বা টেকনাফের যেকোনো চাঁদাবাজ এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সক্ষম নয়। বিশেষত, মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হওয়া ইয়াবা কারবার বন্ধ করার জন্য তার ইচ্ছাশক্তি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’ এক বছর আগে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যে তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে ইয়াবা কারবারির সংখ্যা বলা হয় ২০০ জন। 

দুই বছর আগে এই তালিকায় মাদক কারবারির সংখ্যা ছিল ৫৫৪ জন। দু’টি তালিকাতেই কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে আবদুর রহমান বদি, তার আপন ও সৎ চার ভাই রয়েছেন। এর বাইরে বদির বেয়াই আক্তার কামাল ও শাহেদ কামাল, মামা হায়দার আলী, মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল ও ভাগ্নে নিপুও ইয়াবা কারবারে জড়িত বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বদির ঘনিষ্ঠজন ও ডান হাত জাফর আহমেদ ও তার চার ছেলের নাম রয়েছে শীর্ষ কারবারি হিসেবে। অর্থাৎ বদির বৃত্তের বাইরে নেই কারবারিদের কেউ। আবার টেকনাফের রাজনীতি, অর্থনীতি সব চলছে ইয়াবাকে কেন্দ্র করে। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে এমন কোনো সেক্টর নেই, যারা ইয়াবা কারবারের মাঝে জড়িত নন।

আর একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে- ভারতের সীমান্তবর্তী একটি জেলার পুলিশ সুপার তাদের জানিয়েছেন, ‘পুলিশের একটি অংশ ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। তাদের সামাল দেয়া বড় কঠিন। কারণ, তাদের বেশির ভাগই মাদক কারবারিদের সঙ্গে মিশে গেছে। মাদক কারবারিদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একটা অংশ মিশে গেছে। তারা প্রকাশ্যে কিংবা পর্দার অন্তরালে থেকে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। একই সঙ্গে তারা মাদক কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পাচ্ছেন। তাই মাদক নির্মূলের পাশাপাশি জড়িত পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তবে আপাতত আবদুর রহমান বদির কোনো ভয় আছে বলে মনে হয় না। কারণ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আছেন বদির পাশে। তারা বলছেন, বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কোনো প্রমাণ নেই। যেন, যে ৬০ জনের বেশি মানুষকে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে মাদক কারবারের প্রমাণ রয়েছে! তাদের বিরুদ্ধেও কোনো প্রমাণ নেই। তাহলে কেন এই হত্যাযজ্ঞ? এই বিচারবহির্ভূত হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে আমরা স্লোগান দিতে পারি- ‘বদি ভাই ভয় নাই, রাষ্ট্র আছে তোমার সাথে’, ‘বদি ভাই এগিয়ে চলো, সরকার আছে তোমার সাথে’, ‘বদি ভাই চিরজীবী হোক’।
  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ মে ২৭,২০১৮