Search

Monday, May 28, 2018

পুলিশের শেল্টারে ১৫ স্পটে ইয়াবা আসর

  • ২৫ মাদক ব্যবসায়ী জোগানদাতা 
  • ক্যাম্প ইনচার্জ বাচ্চু ও ক্যাশিয়ার শামীম বেপরোয়া 
  • হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে শঙ্কিত মানুষ



দেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে ইয়াবার বিষ।
দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও ঢামেক হাসপাতালের অন্তত ১৫টি স্পটে হরদম চলছে ইয়াবা সেবনের আসর। অভিযোগ, ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই (এবি) বাচ্চু মিয়ার সহযোগিতায় এসব মাদকের আসর বসে।

প্রতি আসর থেকে বাচ্চু নিজে নতুবা তার ক্যাশিয়ার আনসার শামীম টাকা নেয়। শুধু তাই নয় বাচ্চুর সহযোগিতায় চানখাঁরপুল ও চকবাজার এলাকার পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হাসপাতালে ইয়াবা সাপ্লাই দেন।

শনিবার ঢামেক হাসপাতাল এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। মাদকের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

এ কারণে তাদের অনেকে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিকত-উৎকণ্ঠিত। জানা গেছে, হাসপাতালে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় কতিপয় চিকিৎসক, শিক্ষানবিস চিকিৎসক, নার্স, ব্রাদার, ওয়ার্ডবয়, স্পেশালবয়সহ সেবার কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের একটি অংশ ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকের নেশায় ঝুঁকে পড়ছেন।

অভিযোগ সম্পর্কে বাচ্চু মিয়া যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতালে মাদক ব্যবসা হয়- বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বলেন, গত পরশুও শাহবাগ থানার ওসিকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে।

তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, ইয়াবার আসর থেকে টাকা তোলার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই বাচ্চু মিয়া ফোনলাইন কেটে দেন। এরপর তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এ সংবাদ যাতে প্রকাশ করা না হয় সেজন্য একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে এ প্রতিবেদককে ফোন করিয়েছেন বাচ্চু মিয়া।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শাহ আলম তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, মাদকাসক্তি এক ধরনের অসুস্থতা। তাই কোনো মাদকাসক্তের হাতে রোগীর শতভাগ চিকিৎসা কিংবা সেবা আশা করা যায় না। তিনি বলেন, হাসপাতালের কোনো কর্মচারী মাদকে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মাদকসহ যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া আছে।

ঢামেক হাসপাতালে মাদক সেবনের চিত্র : শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢামেক হাসপাতালের সাবেক পিজি ডক্টর কিচেনের একটি রুমে ইয়াবা সেবন করছিল পাঁচ যুবক। তাদের মধ্যে কয়েকজন এ হাসপাতালের কর্মচারী। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া ওই রুমে প্রবেশ করে ৫ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই যুবকরা বেরিয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে দিনে কমপক্ষে পাঁচ দফা ইয়াবা সেবনের আসর বসে। প্রতি আসর থেকে ১০০ টাকা করে নেন বাচ্চু। বিকাল ৫টায় হাসপাতাল-২ এর ছাদে বসে ইয়াবা সেবন করছিলেন ছয়জন।

এক রোগীর স্বজন বিল্লাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ছাদে গেলে দেখবেন, ডাক্তার-কর্মচারীরা গোল হয়ে বসে ইয়াবা টানছেন। দিন-দুপুরে যারা নেশা করেন তারা রোগীর সেবা কিংবা চিকিৎসা দেবেন কি করে?

বিকাল সাড়ে ৫টায় মিলন অডিটরিয়ামের পাশে বসে কয়েকজন যুবককে নেশা করতে দেখা যায়। ওই এলাকার ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা আজিম যুগান্তরকে বলেন, মিলন অডিটরিয়াম, মর্গের পেছন ও কলেজ চত্বরের বিভিন্ন চিপা গলিতে বসে ইয়াবার আসর।

পুলিশ ও আনসার তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। ঢামেক হাসপাতাল এলাকার এ ধরনের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ইয়াবা সেবন। এসব পয়েন্টে হোম ডেলিভারি পদ্ধতিতে মাদকাসক্তদের চাহিদা অনুযায়ী মাদকদ্রব্য পৌঁছে যায়।

ঢামেক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী যুগান্তরকে জানান, পুরাতন পিজি ডাক্তার হোস্টেলের কিচেন ও এর আশপাশ, ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগ, শহীদ মিনারের পেছনে মাজার সংলগ্ন এলাকা, নার্সিং হোস্টেলের পাশ, কলেজের শহীদ ডা. মিলন অডিটরিয়াম এলাকা, মর্গ এলাকা, জরুরি বিভাগ সংলগ্ন পানির ট্যাংকি এলাকা এবং বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আশপাশের ফাঁকা জায়গা, হাসপাতাল-২ এর ছাদ হল ইয়াবা সেবনের নিরাপদ আস্তানা। শুধু এসব স্পটই নয়, হাসপাতালের বিভিন্ন বাথরুমকে মাদকসেবীরা সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি পয়েন্ট থেকে এসআই বাচ্চু মিয়া ও তার ক্যাশিয়ার আনসার শামীম টাকা নেন। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও বাচ্চু মিয়া মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নিচ্ছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে একটি বিশেষ বাহিনী দিয়ে সাইজ করানোর হুমকি দেন তিনি। এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের একজন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করছেন বাচ্চু মিয়া।

ঢামেক হাসপাতালের একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী যুগান্তরকে বলেন, চকবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের মাদক ব্যবসায়ীরা হোম ডেলিভারির মাধ্যমে এ হাসপাতাল এলাকায় ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করেন। হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী যুগান্তরকে জানান, চকবাজার থানার হোসনি দালানের ইয়াবা জাফর, নেতা সুমন, আসিক, অনিক, পাপন, হাসান, জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী ঢামেক হাসপাতালে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে তাদের ঘোরাফেরা করতেও দেখা যায়।

একজন স্পেশাল বয় যুগান্তরকে বলেন, বাচ্চু মিয়াকে মাদক ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মাদক ব্যবসা করেন। হাসপাতাল এলাকায় শাহীন, চণ্ডি, আয়েশা ও আছিয়া, কলেজ ক্যাম্পাস ও ডা. মিলন অডিটরিয়াম এলাকায় লাবু, বুলবুলি মাদক সম্রাট বলে পরিচিত। বার্ন ইউনিটসংলগ্ন এলাকায় স্বপন ও রনি ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। নতুন ভবনের সামনে ব্যবসা চালান ইয়ার হোসেন ওরফে চিনচিন। র‌্যাবের হাতে তিনি ইয়াবাসহ আটকও হয়েছিলেন। তার সহযোগী বিল্লাল, হেদায়েত, মোমেন এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতাল এলাকায় আজম বিল্লাল, লাক্কা লাভলু, আমীর, আয়েশা, বুলবুলিসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঢামেক হাসপাতালের কিছু স্টাফ মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া হাসপাতাল এলাকায় ভবঘুরে, বখাটে ও রিকশাওয়ালার ছদ্মবেশেও মাদক বিক্রি চলে। তাদের কাছ থেকে মাদক কিনে ঢামেক হাসপাতালের টয়লেট এবং বিভিন্ন রুম এবং দেয়ালঘেঁষা নির্জন স্থানে বসে মাদকাসক্তরা মাদক সেবন করছেন। আবার কেউ কিছু বললে মাদকসেবীরা তার ওপর হামলা চালায়। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীর একটি অংশ মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ বিষয়টি নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়মিত মাদক সেবন করা একজন চিকিৎসকের জন্য চরম গর্হিত কাজ। যা চিকিৎসা পেশার নৈতিকতার পরিপন্থী। এর ফলে রোগী ও সাধারণ মানুষ চিকিৎসকদের ব্যাপারে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। বিষয়টি হাসপাতালের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক যুগান্তরকে বলেন, দু-একজন জুনিয়র চিকিৎসক মদ-গাঁজা খান। এটা নতুন কিছু নয়। তবে কিছুদিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে- যেন পুরো হাসপাতালটাই মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

তারা জানান, বহিরাগত মাদকসেবীদের সঙ্গে কলেজ ও হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক মাদক সেবন করছেন। কর্মচারীদেরও কেউ কেউ মাদক সেবনে জড়িত। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবসার অভিযোগও আছে।

তারা বলেন, চিকিৎসক-কর্মচারীরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় এ হাসপাতালের সুনাম ও ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলবে। সুনাম ও ভাবমূর্তি রক্ষা তথা রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা দেয়া নিশ্চিত করতে অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে সরকারের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি। 


  • কার্টেসিঃ যুগান্তর /মে ২৭,২০১৮ 

বদির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন একরাম, মামলাও ছিল না

টেকনাফের কাউন্সিলর একরাম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত  


টেকনাফ সীমান্তে শনিবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬) ইয়াবার কারবারি ছিলেন না, বলছে এলাকার মানুষ। বরং তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলে এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন। টেকনাফ থানার পুলিশ জানিয়েছে, কাউন্সিলর একরামুলের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। তিনি ইয়াবা কারবারি ছিলেন বলে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই। উপজেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতারাই বলছেন, একরামুল ইয়াবা কারবারি ছিলেন না, সেটা হলে তাঁরা জানতেন। তিনি অর্থনৈতিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিলেন না।

ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার পর তিনবার নির্বাচিত এই  কাউন্সিলরের নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে। কোথাও ভুল হলো কি না সে সন্দেহ করছে অনেকে।

র‌্যাব একরামুলের নিহত হওয়ার বিষয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি এবং ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার। র‌্যাবের কক্সবাজারের কম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মিঠাপানির ছড়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে এক বন্দুকযুদ্ধে একরামুল নিহত হন। পরে সেখান থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

জানতে চাওয়া হলে টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিহত পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। তবে একটি মদের মামলা ছিল, সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।’ ওসি বলেন, ‘একরামুল ইয়াবা কারবারি ছিলেন মর্মে পুলিশের কাছে তেমন কোনো রেকর্ড নেই।’

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টেকনাফের রাজনীতির মাঠে এমপি বদির পরিবার ও সাবেক এমপি গণির পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘকালের। নিহত একরামুল হক ছিলেন বরাবরই এমপি বদিসহ স্থানীয় ইয়াবা ডনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ কারণেই একরামুলের মৃত্যুকে সীমান্তের লোকজন সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না।’

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল বশর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৌর কাউন্সিলর একরাম অত্যন্ত স্বচ্ছতার মাধ্যমে জীবন যাপন করতেন। দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল অত্যন্ত চমৎকার। তাঁর ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার কথা কোনো দিনই শুনিনি। তদুপরি অর্থনৈতিকভাবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল।’ টেকনাফ পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মেম্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একরামুল ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই জানতাম। কিন্তু কোনো দিন শুনিনি তিনি ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন।’

শনিবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল নিহত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, ক্রসফায়ারের নামে ত্যাগী রাজনীতিকদের হত্যা করা হচ্ছে। এসব ত্যাগী রাজনীতিকরা সারা জীবন ইয়াবার বিরুদ্ধে এবং আবদুর রহমান বদির পরিবারের ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। অথচ এক দিন আগে এমপি আবদুর রহমান বদির বেয়াই আকতার কামাল মেম্বারের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় ফেসবুকে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যে কাউন্সিলর একরামুলের বাবার নাম ও ঠিকানা না মেলায় অনেকে সন্দেহ করছে, নিরীহ লোক বন্দুকযুদ্ধের শিকার হলেন কি না! র‌্যাব নিহত কাউন্সিলরের বাবার নাম-মোজাহার মিয়া ওরফে আব্দুস সাত্তার এবং তিনি কক্সবাজার জেলার টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা জানায়, নিহত কাউন্সিলরের বাবার নাম আব্দুস সাত্তার এবং তিনি টেকনাফ পৌরসভার কাইয়ুকখালী (৩ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার বাসিন্দা। 

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকের তালিকায় টেকনাফের মৌলভীপাড়া এলাকার একজন একরামুল হকের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। তাঁর বাবার নাম ফজল আহমদ। র‌্যাব সম্ভবত সেই একরামুলের নামের মিল থাকায় একজন নিরীহ ব্যক্তিকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে।’ শফিক মিয়া বলেন, তিনি একটানা ২১ বছর ধরে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে একরামুল ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। আজ এমন একজন রাজনৈতিক কর্মী ইয়াবার নামে খুনের শিকার হলেন। অথচ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া অগণিত ইয়াবা কারবারি বহাল তবিয়তে রয়েছে। নিহত একরামুলের জ্যেঠাতো ভাই, স্থানীয় সাবেক এমপি আবদুল গনির ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই একরামুল হক বাস্তবে ইয়াবার বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন সব সময়। আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমপি বদির পরিবারের সম্পর্কও মোটেই ভালো নেই। এ কারণেই আমার ভাই বলি হলেন কি না আমাদের সন্দেহ।’

  • কার্টেসিঃ কালের কণ্ঠ / মে ২৮,২০১৮ 

‘আমাকে বাঁচতে দিন আর মাইরেন না’


ওয়ার্ড ১০১, বেড নং ১০। ওয়ার্ডে ঢুকতেই চোখে পড়ে সোহেলকে ঘিরে বসে আছে ১০-১২ জন বন্ধু। পাশেই করুণ চাহনি আর এক বুক হতাশা নিয়ে আহত ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন সোহেলের বিধবা মা। হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র এপিএম সোহেল। একইসঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন সোহেল ও তার মা। দুপুর ১২.১০ মিনিটে ঢামেকের জরুরি বিভাগের সামনে জামতলায় সংবাদমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন সোহেল।

কান্না জড়িত কণ্ঠে সোহেল বলেন, বাবা মৃত মো. নাজির হক মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন তার মা জমিলা বেগম। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সোহেল ৪র্থ। অন্যের ক্ষেতে কাজ করে চলে তাদের সংসার। মায়ের স্বপ্ন পূরণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হয়ে টিউশনি করে কোনোমতে লেখাপড়া চলে তার। কিন্তু কোটা আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে ২৩শে মে নির্মম ভাবে তাকে আহত করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী। 

সোহেল তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেন, আমি যে বেডে শুয়ে আছি। সেই বেডের কয়েক বেড পরই দুইজন আসামিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আসামির নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশের ২জন সদস্য। এই কয়দিন বিছানা থেকে উঠতে পারি নাই তেমন। পিঠের দাগগুলো কালো হয়ে আছে। প্রচণ্ড ব্যথা। ওরা মারার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলাম। হাতেও ব্যথা। লিখতে কষ্ট হচ্ছে যদিও। ডান পায়ের হাঁটুতে ওরা অনেকগুলো আঘাত করেছিল। পা সোজা/বাঁকা করতে গেলেই হাঁটুর জয়েন্টে টান পড়ে। আমাকে চারপাশে কয়েকজন ধরে রেখেছিল। একজন সেলফি তুলতেছিল এই বলে যে “ভাইয়ের চেহারা খুব সুন্দর, আয় মাইরের আগে সেলফি তুলি।” 

নিজে খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি, তাই অন্যের কষ্ট আমার কাছে লাগত। আমি নিজ থেকে খুঁজে খুঁজে আমার মত যারা তাদের টিউশনি, কোচিং,পার্ট টাইম জব ম্যানেজ করে দিতাম। বিনিময়ে কোনদিন ১কাপ চাও খাই নি। অথচ আমাকে মারার পরেও প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে আমাকে নাকি আরো মারবে। মাইর নাকি কম হয়ে গেছে। কোটা আন্দোলনের জন্য দ্বিতীয়বার মারল আমাকে। প্রথমবার থাপ্পড়, লাথি। আর দ্বিতীয়বারতো দেখতেই পাচ্ছেন। ঠোঁটের বাইরে ৮-৯টা সেলাই। ঠোঁটের ভিতরে ২টা সেলাই। আর সারা শরীরে ব্যথাতো আছেই। পিঠের মাইরের দাগগুলো এখনো স্পষ্ট। কোটা অ্যান্দোলনে সমর্থন দিয়ে আমি আমার প্রথম সেমিস্টার ফাইনালটাও মিস করি। আমার পরিবারের সবাই কাঁদছে। আপনারা যারা রাজনীতি করেন, যারা করেন না, যারা আমার বন্ধু, যারা আমার ভাল চান, যারা আমার খারাপ চান, সবার কাছে করজোড়ে মিনতি আমাকে বাঁচতে দিন। আমাকে আর মাইরেন না। আমার বিধবা মায়ের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে দেন। আমার আব্বা নাই। আমিই আমার পরিবারের সব। প্লিজ, আমাকে বাঁচতে দিন। আমাদের নিরাপত্তা দিন। আমরা বাংলাদেশের সন্তান। আমরাও বাঁচতে চাই। বিধবা মায়ের মুখে হাঁসি ফোটাতে চাই। ভাইয়ের কান্না দেখতে চাই না।

সোহেল মানবজমিনকে বলেন, ২৩শে মে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পরপরই ৩-৪ জন ছেলে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ওখানে নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরা থাকায় ফুজি গলির ভেতরে আমাকে নিয়ে যায় এবং মারধর করে। তারা সকলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট গ্রুপের কর্মী। আমি কোটা আন্দোলন তো আমার জন্য করি নাই। কোটা আন্দোলনটা সবার ছিল। তাহলে ওরা আমাকে মারলো কেন এভাবে। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। এই যে দেখছেন আমার মা ভাই তারা অন্যের জমিতে কাজ করে। আমরা খুব কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত আসছি। আমাদের পরিবারে আমার মতো কেউ নাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার বাবা নাই। আমি একটা এতিম ছেলে। আমাকে মারলো কেন। আমি এর বিচার চাই। সোহেলের মা জমিলা বেগম বলেন, আমার ছেলে সবার ভালোর জন্য আন্দোলনে গেছে। তার পরেও আমার ছেলেটাকে কিসের জন্য মারলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাইছি। 

ঢাকা মেডিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ বলেন, তারা চেষ্টা করছে আমাদের আন্দোলনে যারা আছে তাদেরকে যেকোন সময় হেনস্থা করা। এবং তারা সবসময় সুযোগে আছে কখন আমাদেরকে হত্যা করবে। এবং আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করবে। আমরা দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। তাছাড়া ভবিষ্যতে আর কোনো কর্মীর উপর হামলা হলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। 

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/ মে ২৮,২০১৮ 

A farce of a raid










Police pick up “suspects” during an anti-narcotics raid at the city's Karwan Bazar. Photo: Rashed Shumon

It was 1:30pm. Some 1,000 policemen started gathering near Karwan Bazar kitchen market in the capital yesterday. The mobilisation of so many cops drew a huge crowd, curious to know what was happening. 

Some policemen told bystanders why they were there: within an hour, they would conduct an anti-narcotics raid at Karwan Bazar railway slum, just a few steps from where they took position.

Presently, they were waiting for their bosses to come and instruct them on how they should go about their job. Meantime, some policemen were gossiping, some sipping tea at nearby tea stalls and some were seen buying litchis.

Detectives, dog squads and even a water cannon were also on the scene.

“How can you conduct a drive against narcotics after such public announcement?” a constable was heard asking his colleague, mockingly.

Around 2:30pm, the additional deputy commissioner of Tejgaon division and the officers-in-charge of Tejgaon and Tejgaon Industrial police stations arrived at the scene.

About 15 minutes later, the deputy commissioner of Tejgaon division reached the spot and instructed the policemen to detain the people whom the cops would suspect as drug abusers.

This is how a “secret” anti-drug operation started at Karwan Bazar railway slum, raising questions about the objective of such drives.

The drive finally began at 3:00pm, with detectives and policemen going from hut to hut and taking away anyone they thought was a suspect.









Officers forcibly drag another “suspect” on the rail lines. Photo: Rashed Shumon

Some were sleeping; some were sitting in front of the shanties while some were loitering on the railway track.

Most of them were day labourers (porter) and street vendors who worked all night and were sleeping at the time of the raid, slum dwellers claimed.

Some of them were small drug peddlers and drug users.

According to locals, drug trade in Karwan Bazar slum remains suspended for about six months. Only a handful of the peddlers are active now with the help of police sources.

On Saturday night, the police sources tipped those peddlers off about the raid and asked them to leave the area, a number of slum dwellers alleged.

During the raid, detectives and policemen were calling some suspects by names as if they knew each other. 

Within half an hour, they picked up 47 people, including four women.

Nure Haowa, 40, was crying near a police van. She alleged three of her relatives were picked up.










Police officers peeking inside shanties looking for drug peddlers and abusers. The “surprise” raid started an hour after a contingent of a thousand police officers had gathered at the spot, possibly tipping off drug peddlers in the areas. Locals also alleged that sources had informed the drug peddlers about the drive beforehand. Photo: Rashed Shumon

Among them, Sharif and Raju are potato vendors who worked all night and were sleeping in the room when the cops came, she said.

When some policemen saw this correspondent taking photos and footage of the raid, they approached him and asked him to stop filming.

“Put the phone down, put the phone down. You cannot film the raid. You have to take permission,” said a cop named Rafique, threateningly.

Briefing reporters at the spot around 3:45pm, DB Joint Commissioner Abdul Baten claimed their “special team” was working to arrest the listed drug dealers.

“And here [drug spot] we are conducting the raid to arrest people who would be found with drugs and who are still out of the drug traders list,” he said.

Asked about the link of some cops with drug dealers, Baten said there were bad people in every profession. “We will take action if allegations are found against any policemen.”

Such preparations, announcements and arrangements before raids have raised questions of if law enforcers would really be able to catch any top drug dealers and their patrons.

One of such raids was conducted in Korail slum of Mohakhali on Saturday night. Around 1,000 policemen with a dog squad gathered on T&T ground just beside the slum around 7:30pm. They set up a tent, four bright lights, and two horn speakers which they used to warn slum dwellers that they would be conducting a raid there.

Meanwhile, in another drive at Ganaktuli area of Hazaribagh yesterday, over 100 people, including five women, were detained on suspicion of drug abuse.

After interrogation, 50 people were arrested in different cases, said Masudur Rahman, deputy commissioner (media) of DMP.

The drive at Sweeper Colony started at 11:00am and continued for three hours, Abdullahil Kafi, additional deputy commissioner (Ramna Division) of DMP said, adding that around 700 policemen took part in the drive.

Around 1,500 litres of locally made alcohol, 300 pieces of yaba, some cannabis and phensedyl were seized from the area, the police official said.

A factory that made local alcohol was also sealed off.

Several people there said many of the detainees were innocent school and college students.

Kabir Hossain, 26, was picked up from his room while he was taking rest. Kabir is a labourer who works in Malaysia and came home on vacation for Eid.

Like him, tenth grader Jewel Das, 17, was picked up from his house.

“I requested the policemen not to take him away. My son is neither a drug abuser nor a peddler. I told them [police] you didn't get anything. Why are you taking him? They whisked him away forcefully,” Jewel's mother Chaina Rani told The Daily Star.

Several hundred family members of the detainees gathered in front of the Institute of Leather Engineering and Technology and criticised the mass detention without verification.

The nationwide anti-drug drive was launched by Rab on May 4 on the prime minister's instructions. Police have been carrying out their own drive since May 18.

At least five raids were conducted in major drug spots in the capital and over 300 people were arrested in the last two days. They produced similar results -- big-time dealers escaping arrest and a handful of low profile dealers being detained.

Till Saturday, more than 7,000 alleged drug traders have been held and sued in around 5,500 cases across the country. Another 3,100 people were sentenced to various jail terms by mobile courts, according to police and Rab data.

  • Courtesy: The Daily Star/ May 28, 2018

ENSURE ACCOUNTABILITY: What they think of ongoing drives

SULTANA KAMAL

Human Rights activist 

The noted human rights activist said the law enforcement agencies' actions would not provide a sustainable solution against illegal drugs.
“They [law enforcement agencies] have started killing drug peddlers and drug users. If they think that they will resolve the problems in that way then they will have to kill millions of people who use drugs.”

She also said people could clearly see that law enforcement agencies were not taking any actions against those who were godfathers and patrons of drug peddlers.

“Besides, we see absence of transparency in the anti-narcotics drive.”

About the “killings in crossfire”, she said people would not buy the same old story.

“We can never support killing of people in the name of drive against drugs as it is against the law and the constitution,” she said.

“We will have to eliminate drugs from the society upholding the existing laws of the country.” 

KAZI REAZUL HOQUE
Chairman, NHRC

“We strongly condemned and protest the killing of people in the name of crossfire,” said Chairman of the National Human Rights Commission (NHRC) Kazi Reazul Hoque.

“We want to say unequivocally that the criminals, whoever she or he is, must face actions through due legal procedure.”

The NHRC boss also said they would formally write to the government expressing their grave concerns over the ongoing extra-judicial killings in the anti-narcotics drive.

“We, as well as the whole nation, support the drive against illegal drugs, but not at the cost of any lives.”

Reazul said the law enforcement agencies should primarily ensure illegal drugs do not enter Bangladesh from neighbouring countries.

“The illegal drug problems will not be resolved through killing people. The government will have to take a holistic approach and comprehensive actions to fight illegal drugs.”

About the killing of “drug peddlers” in the name of crossfire, he said the responsible members of law enforcement agencies must be brought to book for killing anyone, whether that person was involved in drug dealing or not.

He said that the continuation of such killings could create a dreadful situation in society, adding that law enforcement agencies must ensure accountability and transparency in their ongoing drive, so that no one gets punishment without trial.

 “Killing people in the name of fight against drugs cannot be acceptable in anyway. We strongly protest against this.”

The law enforcement agencies would have to stop illegal drugs without violating laws and human rights. 

NURUL HUDA 
Former Inspector General of Police

The ongoing drive against illegal drugs would create fear among the drug peddlers. That's why movement of drugs would decrease in different parts of the country. In this context, it could be said that the ongoing anti-narcotics drive may bring partial success to the fight against illegal drugs.

“But in a bid to gain success in the long term, the law enforcement agencies should take decisive actions to combat illegal drugs,” added the former IGP.

For instance, Nurul Huda said they should prepare a more authentic list of drug peddlers, their patrons and financers and bring them to book.

He also stressed the need for cutting the flow of illegal drugs at the source.

For example, he said, yaba pills generally come from Myanmar through Cox's Bazar; steps should be taken to ensure that yaba did not enter the country from the source point.

He also said law enforcement agencies would have to file cases against the kingpins involved in the drug business and send them behind bars.

“If necessary, drug lords or patrons of drug peddlers will have to be kept behind bars under the preventive detention law.”

About the controversial killings of alleged drug peddlers, the former police boss said it was only acceptable if a gunfight ensued between cops and a criminal gang and someone was killed as a consequence of that.

“The law enforcement agencies should investigate on a case by case basis [and find] whether any police or Rab members have violated laws during the drive,” he added. 

JYOTIRMOY BARUA 
Supreme Court lawyer

Jyotirmoy Barua, a Supreme Court lawyer, said the government and the law enforcement agencies' idea to eliminate drugs through killing some drug peddlers was “certainly an unrealistic fantasy”.

“I think members of the law enforcement agencies who believe in eliminating drugs through killing drug peddlers are mentally ill,” he said.

The illegal drug business didn't develop in a day or two. It flourished with the patronisation of a section of law enforcement agencies and politicians. The size of the economy of illegal drugs was high. Therefore, killing of some drug peddlers wouldn't bring an end to the menace. 

Drug lords had developed a system in which new people would replace those killed. 

“Fight against narcotics in any country, including the USA, Canada, and the Philippines, weren't successful through killing drug peddlers or through enacting laws. The ongoing drive against drugs also won't be successful in Bangladesh if the government does not address the root cause of the problem.”

He also raised questions regarding whether the government had any policy on how to save the country's youth from this menace.

“We have failed to set any hope before the youth. They are not interested in politics due to its confrontational nature.  There are many youths in the country without jobs. That's why they are lured towards drugs. With so much going on to remove drugs from the country, does the government have any real policy on how to save the youth from drug abuse?” he asked.

  • Courtesy: The Daily Star/ May 28, 2018

বন্দুকযুদ্ধ চমৎকার! মানুষও মরবে, নেশার লাটিমও ঘুরবে

ফারুক ওয়াসিফ

ধরা যাক, দেরিতে হলেও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে। তারা সত্যিই মাদক নির্মূলে আন্তরিক, এটাও আমরা বিশ্বাস করছি। কিন্তু মাথায় একটা খটকা লেগেছে। সরকার বন্দুকযুদ্ধকে জনপ্রিয় করতে চায়, নাকি মাদক ব্যবসার দফারফা করত চায়? ‘বন্দুকযুদ্ধ’ জনপ্রিয় করার বিনিয়োগ তো আগেভাগেই করা সারা। সুবিচার ও সুশাসন না থাকলে তো বিচারবহির্ভূত পথে জাতির উৎসাহ বাড়বেই। দশকের পর দশক প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মাদকের ফাঁদে পড়তে দেখেও কিছু করা হয়নি। কোটি পরিবারকে মাদকের অভিশাপে চূড়ান্ত রকম জর্জরিত হতে দেওয়া হয়েছে। দেশজোড়া মাদক ছড়ানোর জাল পাততে দেওয়া হয়েছে। কত কত পরিবার সন্তান-ভাই-স্বামী-কন্যাকে ঠেকাতে না পেরে মাদক-মহাজনদের অভিশাপ দিয়েছে, তাদের মৃত্যু চেয়েছে। আজ যখন ১৩ দিনে ৯১টি লাশ পড়েছে, তখন ভুক্তভোগী অনেক অভিভাবকই হয়তো খুশিই হবে। কিন্তু এতে কি মাদকের বিস্তার কমবে?

বিএনপি আমলের ক্লিনহার্ট-ক্রসফায়ার উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে। এসবের প্রায় দেড় যুগ হয়ে গেল, না মাদক কমল না অপরাধ কমল। ভুল রাস্তায় জোর কদমে হাঁটাহাঁটি করলে শক্তি খরচ ছাড়া আর কিছু হয় না। মৌমাছির চাক অটুট রেখে এদিক-ওদিক কয়েক শ মৌমাছি মারায় রানি মৌমাছি ভয় পায় না। বিস্তর মৌমাছি তখনো রয়ে যায়, আর রানি মৌমাছির রয়েছে অঢেল প্রজনন ক্ষমতা। আমাদের দেশের কথা থাক। মাদকবিরোধী যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হলো যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আমেরিকার শরীরে মাদকের বিষ কমল কই? খোদ সিআইএ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে গলা ফাটিয়ে যাচ্ছেন সে দেশের সৎসাহসী বুদ্ধিজীবী নো’ম চমস্কি। তাঁর কথাও বাদ। মাদকযুদ্ধে পোড়খাওয়া কলাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিজার গাভিরিয়ার কথা তো আর ফেলা যায় না। ১৯৯০-৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর আমলে কলাম্বিয়ায় বিরাট মাদকবিরোধী অভিযান চলে। এই যুদ্ধে অস্ত্র, টাকা, গোয়েন্দা দিয়ে পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের এক নম্বর মাদকসম্রাট পাবলো এসকোবারকে তিনি আটক করেন, মাদকচক্রকে আটকে রাখার জন্য বিরাট জেল বানান, এসকোবার জেল থেকে পালালে তাঁকে হত্যাও করান।

কিন্তু গাভিরিয়া কী লিখেছেন দেখুন: ‘বেআইনি মাদক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়, কিন্তু এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেবল সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে জেতা যায় না। আরও বেশি সেনা ও পুলিশকে মাদকের বিরুদ্ধে লাগালে টাকার অপচয় তো হয়ই, সমস্যাটা আরও গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়। অহিংস প্রতিবাদী ও মাদকসেবীদের জেলে ভরার ফল হলো উল্টা, সংগঠিত অপরাধটক্র আরো শক্তিশালী হলো...মাদকচক্র ও মাদক দূর করার লাগাতার অভিযানে আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢাললাম। ...আমাদের মাদকবিরোধী ক্রুসেডে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেল, অনেক উজ্জ্বল রাজনীতিবিদ, বিচারক, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকেরা (মাদকচক্রের হাতে) প্রাণও দিলেন। কিন্তু হলো কী? মাদকচক্র বিপুল অর্থ ঢেলে প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং আইনপ্রণেতাদের কিনে ফেলল।’

২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসে গাভিরিয়া এ লেখা লেখেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তসহ সব মাদকযুদ্ধে মজে যাওয়া শাসকদের হুঁশিয়ার করার জন্য। গত জানুয়ারি পর্যন্ত দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, বন্দী হয় হাজারো মানুষ। এর মধ্যে শুধু অপরাধীরা ছিল না, ছিল বিরোধী দলের কর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ অনেক নিরীহ মানুষও। গাভিরিয়া জানাচ্ছেন, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা কলাম্বিয়ায় মাদকের চাহিদা ও জোগান সামান্যই কমাতে পেরেছে। তারপরও এহেন যুদ্ধ ফিলিপিন থেকে বাংলাদেশ; কম উন্নত, কম গণতান্ত্রিক এবং বেশি দুর্নীতির দেশগুলোতে কেন ছড়াচ্ছে? গাভিরিয়ার স্বীকারোক্তি, আসল কাজ না হলেও এতে সরকারের জনপ্রিয়তা সাময়িকভাবে বাড়ে।

ওদেকে মাদকচক্রের প্রাণভোমরা দুর্নীতির দুর্গে বসে হাসছে। দুর্নীতি থাকলেই মাদক অবাধে ছড়াতে পারে। কিশোর-তরুণের মন-মগজ খেয়ে ফেলার এ ব্যবসার বখরা দিয়ে পুলিশ-প্রশাসন-মন্ত্রী-এমপি-সীমান্তরক্ষী, সবখানেই গর্ত করে বের হয়ে যাওয়া যায়। লাভের টাকা পাচার করা যায় বিদেশে। প্রবাসে কিংবা কারাগার কিংবা জঙ্গলে বসেও চোরাচালানের জাল সুন্দর করে টানা-ছাড়া করা যায়। আর যেখানে ক্ষমতাসীন সংগঠন আর মাদকের সংগঠন অনেক জায়গায়ই একাকার, দলের অনেকের গাড়ি-বাড়ির উৎস যেখানে মাদক ব্যবসা, সেখানে বিষবৃক্ষের ডালপালা ছেঁটে লাভ নেই।

দুর্নীতি ও দুবৃত্ততন্ত্রের গোড়ায় হাত দিতে লাগবে। সেটা ছাড়া কিছু গুলি ফোটালে আর কিছু মানুষ মারলে মাদকব্যবস্থা ধসে পড়ার বদলে আরও গভীরই হবে।

কীভাবে? 

১. ডাল কেটে দিলে কিছু গাছ আরও বাড়ে। হিসাবের বাইরে বেড়ে ওঠা কিছু টিউমার-টাইপ মাদক বিক্রেতা মারলে পুরো নেটওয়ার্কের স্বাস্থ্য আরও ভালোই হবে। নতুন রিক্রুটদের জায়গা খালি হবে। ব্যবসার নবায়নও হবে।

২. প্রাণের ভয়ে বাকিরা বখরার হার বাড়িয়ে দেবে। মারবেন তিন জনকে, কিন্তু তিরিশজন জানের কাফ্ফারা বাবদ ঈদখরচ পাঠিয়ে দেবে।

৩. মাদকাসক্ত জাতি খুনে আসক্ত হবে। খুন করাই সব সমস্যার সমাধান হিসেবে সামাজিক বৈধতা পাবে। নেশায় ঝিমানোরা কোনো প্রশ্ন করবে না।

৪. সময়মতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও এ অভিযান চালানো যেতে পারে।

গাভিরিয়ার মূল কথা এই, মাদকক সামরিক নয় সামাজিক সমস্যা। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক প্রতিষেধক তৈরির কথা ভাবলে উপকার পাওয়া যাবে। তাঁর সুপারিশ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারবিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, মানবাধিকার রক্ষা এবং বেকারত্ব দূর ও টেকসই উন্নতি মাদকের চাহিদা ও জোগান কমিয়ে আনতে পারে। মোদ্দা কথা, সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ মাদক কমিয়ে আনতে পারে। পশ্চিম ইউরোপে দুর্নীতি কম, তাই মাদকও কম। তাদের আরেকটা পদক্ষেপ হলো কম ক্ষতিকারক মাদককে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পাওয়ার ব্যবস্থা করা। আসল জাদুটা এখানেই। মাদক থেকে আগে মুনাফা দূর করুন, তাহলেই ব্যবসাটা পড়ে যাবে। সরকারি নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু মাদক চিকিৎসা ও বিনোদনের জন্য খোলা রাখলে মস্তিষ্ক ও প্রাণধ্বংসী মাদকের চাহিদা কমে যায়।

মাদক কখনোই একেবারে দূর করা যায় না, তবে কমিয়ে আনা যায়। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে উপায় আছে। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধকে জনপ্রিয় করলে ভয় ও মাদক হাত ধরাধরি করে চলবে, সরকারের ‘আন্তরিক উদ্দেশ্যটি’ আর সফল হবে না। মানু্ষও মরবে, নেশার লাটিমও ঘুরতে থাকবে। দেশের সম্ভাবনাময় প্রজন্মের সর্বনাশ হবে, দেশটা ধুঁকতে থাকবে এবং ‘বন্দুকযুদ্ধের হাত’ আরও শক্তিশালী হবে। মাদকবিরোধী অভিযানে হত্যার মাদকতা বন্ধের কোনো উপায় কি আমাদের হাতে আছে? মনে পড়ছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করা প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের একটা হুঁশিয়ারি। ২০০৬ সালে ঢাকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি এমন অবস্থা আসে, যেখানে হাজার হাজার লোক বিনা বিচারে আটক হচ্ছে, হাজার হাজার লোক কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় মারা পড়ছে, সে অবস্থা ঠেকানোর কোনো প্রস্তুতি কি আপনাদের আছে?’ (২৪ জুলাই ২০০৬, সমকাল)

আসলেই কি আছে?

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৮,২০১৮ 

নিজেদের জন্য দুদকের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা কমাতে চান আমলারা


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যেকোনো অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত পর্যায়ে যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সে ক্ষমতার রদ চাইছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়া সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮-তে এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা যেমন ক্ষুণ্ন হবে, তেমনি সাধারণ নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।

সম্প্রতি প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮’ অনুমোদন করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের পর সেখানে এটি অনুমোদন পেলে সংসদে পাঠানো হবে। সংসদে অনুমোদনের পর সেটা আইনে পরিণত হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের আগে সরকার তথা ওই কর্মচারী যে কর্তৃপক্ষের অধীনে কর্মরত, তার অনুমতি নিতে হবে।

১৯৬৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী দুদক অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়েও যে–কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫ ধারায়ও এ বিধান বলবৎ রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী আইনে প্রস্তাব রয়েছে, এই বিধান তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

আইনটির এ ধারার উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যদি গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়, তবে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে একটি উপকমিটি গঠন করা হয় প্রস্তাবিত খসড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। উপকমিটি সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দেয়। এর ভিত্তিতে সচিব কমিটির বৈঠকে সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের হাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের হার বেড়ে গেছে। এ থেকে নিস্তার পেতে দুদকের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা কমাতে চাইছেন তাঁরা।

এসব কর্মকর্তার কথার সূত্র ধরে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৮৮ জনের মধ্যে ১৬৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়া ১৮২ জনের মধ্যে ৮৪ জন সরকারি কর্মকর্তা। চলতি বছরও দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৫ জনের বেশি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী। এর বাইরে মামলা হয়েছে দ্বিগুণের বেশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

গত দুই বছরে দুদক পরিচালিত ২৯টি ফাঁদে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৯ জন সরকারি কর্মকর্তা। এঁদের বেশির ভাগই সেবা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা। সাম্প্রতিক সময়ে নৌ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী নাজমুল হককে ঘুষের পাঁচ লাখ টাকাসহ রাজধানীর একই হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করে দুদক। আগের বছর একই দপ্তরের আরেক প্রধান প্রকৌশলী নিজ দপ্তরেই গ্রেপ্তার হন ঘুষের টাকাসহ।

দুদক সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের তালিকায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীও রয়েছেন। সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এ তালিকায় নেওয়া হলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বড় হবে।

দুদক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফাঁদ পেতে দুদক যাঁদের গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের বিষয়ে আগে অনুমতি নিতে হলে আসামি ধরা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। এ ছাড়া মামলা বা অনুসন্ধানের প্রয়োজনে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা বাইরে থাকলে অভিযোগের আলামত নষ্ট, অনুসন্ধানে প্রভাব বিস্তারসহ নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন। তাই অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তারের বিধান দুদকের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরবে।

এ প্রসঙ্গে দুদকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য আসেনি। জানতে চাইলে দুদক সচিব শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারী আইন নিয়ে কমিশনের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রক্রিয়াধীন। তৈরি হলে গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে আইনজীবীরা বলছেন, এ বিধান আইনে পরিণত হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার করতে কারও অনুমতির প্রয়োজন হবে না। কিন্তু মাত্র ১২ লাখ সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে অনুমোদন লাগবে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কোনো বিধান আইনত গ্রহণযোগ্য নয়, সংবিধান অনুমোদন করে না। এর মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি করা হবে। তিনি আরও বলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে কি হবে না, তা অপরাধের ওপর নির্ভর করবে। এটি যদি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে, তাহলে তা মধ্যযুগীয় বা সামন্তবাদী আইন বলতে হবে। 

আরেক আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। তাই গ্রেপ্তার ও শাস্তির ক্ষেত্রে সবার জন্য একই বিধান থাকবে—এটাই সংবিধানের কথা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এ কারণে তাঁদের জন্য বিশেষ বিধান কোনোমতেই হতে পারে না।

২০১৩ সালে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দিতে আরেকটি আইন সংসদে পাস হয়েছিল। দুদক সংশোধন আইনের ৩২(ক) ধারা অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় বলা আছে, যে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মকর্তা কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হলে সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো আদালত সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন না। কোন আদালতে এই মামলার বিচার হবে, তা সরকার নির্ধারণ করে দেবে। এর ফলে কমিশন সরকারের অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আমলে নিতে পারছিল না।

সংসদে পাস হওয়া ওই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছিল। রাষ্ট্র বনাম হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের ওই মামলার রায়ে হাইকোর্ট আইনকে সংবিধান পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেন।

ওই রায়ে বলা হয়, কোনো একটি দুর্নীতির ঘটনায় সরকারপ্রধান বা মন্ত্রীদের সঙ্গে সরকারি কর্মচারী জড়িত থাকলে সরকারপ্রধান কিংবা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে; কিন্তু সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে অনুমতি লাগবে। এই পরিস্থিতির সমন্বয় কীভাবে ঘটানো হবে, এর কোনো দিকনির্দেশনা সংশোধিত দুদক আইনে নেই। আইনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করাটা অযৌক্তিক বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

রায়ে আরও বলা হয়, সংশোধিত এ আইন দেশের সাধারণ মানুষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে। দুর্নীতিবাজদের রক্ষাকবচ হবে, যা অসাংবিধানিক।

হাইকোর্ট ওই ধারাটি বাতিল করার পর সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব খন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির মামলা করে দুদক। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

উচ্চ আদালত ওই রায় দেওয়ার পরও ২০১৫ সালে মন্ত্রিসভা সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া অনুমোদন করে, যা হাইকোর্টের রায়ের চেতনার পরিপন্থী বলে মত দেন আইন বিশেষজ্ঞরা। মন্ত্রিসভা আইনটি অনুমোদন দেওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে যে সরকারের মন্ত্রী-সাংসদদের গ্রেপ্তার করতে হলে কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না; কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের বেলায় তা হবে কেন?

নানা বিতর্কের পর ২০১৬ সালের আগস্টে আইন মন্ত্রণালয় খসড়া আইন পরিবর্তনের পক্ষে মত দেয়। মন্ত্রণালয় দুদক আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির এখতিয়ার বহাল রেখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আইন করার পক্ষে মত দেয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ওই খসড়া আলোর মুখ দেখেনি।

দীর্ঘদিন পর গত বছরের ডিসেম্বরে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে প্রধান করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষাসংক্রান্ত এই উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রথম সভা করে ১৩ ডিসেম্বর। এরপর আরও ৪টি সভা করে ২ এপ্রিল সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত করে।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় নব্বইয়ের দশকে। তখন এর নাম ছিল সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট। এ-সংক্রান্ত নানা উদ্যোগের মধ্যে ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের সহায়তায় প্রকল্প প্রণয়ন, বিদেশ ভ্রমণ এবং বিভাগীয় শহরে সেমিনার আয়োজন। অংশীজনদের সঙ্গেও দিনের পর দিন বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ২০১১ সালের মার্চে এর খসড়া তৈরি করে তা ওয়েবসাইটে দিয়ে মতামত নেওয়া হয়।

২০১৩ সালে এসে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট নয়, সরকারি কর্মচারী আইন করা হবে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট করলে শুধু ক্যাডার কর্মকর্তারাই অন্তর্ভুক্ত হবেন। তাই সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া করা হয়। 

২০১৩ সালের পর থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এ আইন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। অংশীজনেরা তাঁদের মতামত দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব ওঠার পরও সেটা স্থগিত হয়েছে। ২০১৮ সালে এসে নতুন যে প্রস্তাব করা হচ্ছে তাতেও নতুন করে পুরোনো প্রস্তাবটি রাখা হচ্ছে, যাতে করে সেই বিতর্কই উঠে আসছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে সমতা না রেখে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব নতুন করে চলে এসেছে।

আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের জন্য আইন করা জরুরি। কিন্তু তাঁদের জন্য এক রকম এবং রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের জন্য আরেক রকম আইন কাম্য হতে পারে না। আর দুর্নীতিবিরোধী আইনের ক্ষেত্রে সমতা রাখা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, জনগণের করের টাকায় বেতন পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি তৈরি করা হবে আইনটির মাধ্যমে। এ ধরনের আইন তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত সেটা টিকবে না। এ নিয়ে আবারও মামলা হবে। মামলায় সংবিধানবিরোধী এ আইন বাতিল হবে।

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৮,২০১৮ 

Bangladesh's Philippines-style drugs war creating 'atmosphere of terror'


Human rights activists say campaign, in which 50 people shot dead in a week, is politically motivated

Bangladesh border guards search a fishing boat for drugs as part of the crackdown on the narcotics trade that has left 50 dead in one week. Photograph: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images 

By Michael Safi and Shaikh Azizur Rahman 

Bangladeshi police have shot dead more than 50 accused drug traffickers in the past week as part of anti-narcotics crackdown that activists fear could escalate into a Philippines-style campaign of mass extrajudicial killings.

Questions are already being raised about some of those killed in the campaign against the “drug menace”, with one family telling the Guardian their relative was an opposition political activist who never touched drugs.

They and another family say their relatives were last seen being taken into police custody hours before being found dead in what authorities are characterising as nighttime shootouts with criminal gangs.

Bangladesh launched the crackdown last week in response to what it said was a surging trade in illegal drugs particularly cheap methamphetamine pills known as “yaba”.

The stimulant usually enters the country through neighbouring Myanmar and authorities estimate the supply surged to 300m pills last year, blaming the influx on Rohingya refugees fleeing military violence and the fishermen who ferried them over.

Bangladesh prime minister Sheikh Hasina says the campaign will match the intensity of an earlier crackdown on Islamic militancy that left dozens of accused radicals dead.

The death toll has leapt each day so far since the clampdown was launched last week. Nine accused drug dealers were reported killed on Thursday morning, bringing the confirmed total to 52 people in 10 days.
 Bangladesh border patrol search for drugs at a checkpoint along the Teknaf-Cox’s Bazar highway. Photograph: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images 

One of those killed was Amzad Hossain, who police say was gunned down early on Tuesday after leading police to a drug hideout in Netrokona town in northern Bangladesh. The gang fired on officers and Hossain was killed in the exchange of fire, police said.

“There are 14 murder, violence and drugs-related cases pending against him,” Ashraful Alam, additional superintendent of Netrokona district, told the Guardian. “Following a tip-off we raided his house and recovered a good amount of yaba pills from the spot.

“Later, he got killed in crossfire when, after being challenged, some other members of his gang fired upon us,” he said.

But his brother, Mahid Ahamed Ansari, told the Guardian Hossain had no connection to the narcotics trade, claiming police had violently raided their home hours before the alleged shootout.

“During the surprise raid police beat up my brother badly,” he said. “The charge that he sold drugs is completely baseless. They killed him just because he was a popular activist of the student wing of the [opposition] BNP.”

He said the cases against his brother were part of a campaign of harassment against opposition political activists in the lead up to national elections later this year.

Many of the raids are being led by the Rapid Action Battalion (RAB), a controversial paramilitary force that human rights groups have repeatedly accused of extrajudicial killing and disappearing suspected criminals and political opponents of the government.

Officers from RAB were involved in the killing on Monday morning of Shukur Ali, who the elite battalion claimed was a “notorious” yaba and cannabis dealer with at least 10 drug cases against him.

According to a RAB statement, officers raided a drug hideout in Chittagong when they encountered armed resistance, and that Ali was found dead at the scene after other alleged gang members fled.

But relatives of Ali, 45, told the Guardian men in plainclothes had come to his house and taken him away just after midnight on Monday.

“Some time after we heard the sound of gunshots,” said Mohammad Sohel, the dead man’s son-in-law. “I came out of the house and found the body of my father-in-law lying some distance away from our house.

“It’s clear the men who took him out of his house shot him dead,” Sohel said. “It’s not true that he was at a hideout where he was shot. He was a drug user. It’s not true that he was a drug seller.”

Pinaki Bhattacharya, a Dhaka-based human rights activist, said the spree of police shootings had “created an atmosphere of terror across the country”.

“These are nothing but extrajudicial killings amounting to a serious level of human rights violation. The forces have a free hand and are acting as judge, jury and executioner.”

Human Rights Watch said the killings needed to be investigated.

“Considering that one minister has proposed shooting addicts and the prime minister has compared this effort to ending Islamic militancy, there is concern that security forces will once again operate without proper accountability and oversight,” said Meenakshi Ganguly, the organisation’s South Asia director. 

Courtesy — theguardian.com 

দেশে কালো টাকার পরিমাণ সাত লক্ষ কোটি — অর্থনীতি সমিতি



দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা বলে মনে করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এই কালো টাকা উদ্ধারে একটি কার্যকর কমিশন গঠন করে আগামী বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের প্রস্তাব করা হয় সমিতির পক্ষ থেকে। 

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৮-১৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।

আবুল বারকাত বলেন, দেশে এখন ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থপাচার হচ্ছে। বাজেটে এ সমস্যা সমাধানে পদ্ধতিগত নির্দেশনা থাকতে হবে। আমরা অর্থপাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব করছি। 

একই সঙ্গে তিনি বলেন, দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে কালো টাকা দেশের মোট জিডিপির ৪২-৮০ শতাংশ। বিষয়টি বাস্তব সত্য। এটাকে কমানোর জন্য সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে, অন্যদিকে একটি কার্যকর কমিশন গঠন করতে পারে। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। যদিও কি পদ্ধতিতে এই টাকা উদ্ধার করা হবে সেটা স্পষ্ট করেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বারকাত। 

  • তথ্যসূত্র - dailydinkal.net/ রোববার, মে ২৭, ২০১৮।  


‘নিখোঁজদের ফিরিয়ে দিন, অথবা আমাদের মেরে ফেলুন’




(বাংলাদেশি ভয়েসেস ডেস্ক) —  ওদের কারও ছেলে, কারও স্বামী, কারও ভাই, কারও বাবা গুমের শিকার হয়েছেন। চার বছর ধরে তাদের অপেক্ষার অার যেন শেষ নেই। নিখোঁজ হওয়া বাবা ফিরবেন- এমন আশায় নিত্যদিন ভোর হয় সন্তানের। বৃদ্ধ আর বাবার প্রতিটি সকাল আসে প্রিয় সন্তানের শূন্যতা নিয়ে। ঈদ যায়, ঈদ আসে। কিন্তু হারানো সন্তান আর ফেরে না।

শনিবার, মে ২৬, ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছিল এমন কয়েকটি পরিবার। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের ফেরত চেয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। নিখোঁজ হওয়া বিএনপি কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, এখানে আজ আমার মায়ের আসার কথা ছিল কিন্তু তিনি কাঁদতে কাঁদতে কুঁজো হয়ে গেছেন। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে কাছে পেতে চাই। তাদের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আপনি তো আপনার স্বজনকে নিয়েই ঈদ করেন। তবে আমাদের কেন ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন? 

শিশুকন্যা লামিয়া আক্তার মীম বলেন, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে। ঈদের জামা কিনে দেবে। অন্যদের মতো বাবার হাত ধরে আমিও হাঁটতে চাই। 

আফরোজা ইসলাম আখি বলেন, হয় নিখোঁজ হওয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিন, না হয় আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন। এভাবে তিলে তিলে মৃত্যু না দিয়ে একসঙ্গে মরে যেতে চাই। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না। 

এ সময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রতি বছরই এই জায়গায় এসে মায়েদের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও কাঁদতে হয়। আমাদের কারও কান্না প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে না। কারণ, নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের কারো সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আত্মীয়তা নেই। এখানে ছাত্রলীগের তপুর মা সালেহা বেগম রয়েছেন। তিনি প্রায়ই বলেন, আমরা তো আওয়ামী লীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগে ভোট দেয় এবং আমার ছেলে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিল। তাকে কেন গুম করা হলো? এর জবাব কী প্রধানমন্ত্রী জানেন? তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার মতিনের ছেলে সেও যুবলীগ করতো। সেও নিখোঁজ। এ সময় মান্না বলেন, রমজান মাস নাকি সংযমের মাস। এই মাসেই মানুষ হত্যায় নতুন করে মেতে উঠেছে সরকার। আর সবকিছুর মূল আগামী একাদশ নির্বাচন। বিনা চ্যালেঞ্জে আবার ক্ষমতায় যাবার জন্য এসব টালবাহানা করছে। কিন্তু দেশবাসী আর ছাড় দেবে না। যেকোনো মূল্যে এই সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন - জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালাসহ নিখোঁজ হওয়া পরিবারের সদস্য সাইফুল রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী, তরিকুল ইসলাম তারার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেবী, মো. নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুব রহমান সুজনের ভাই জাহিদ খান, কাজী ফরহাদের ভাই আমান, ছাত্রলীগ রামপুরা থানার সভাপতি এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা আলহাজ সালেহা বেগম, ড্রাইভার কাওসারের শিশুকন্যা লামিয়া আক্তার মীম, মাহবুবুর রহমান রিপনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান শিপন, আমিনুল ইসলাম জাকিরের ভাই আলমগীর হোসেন আলিক, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমা, নিখোঁজ পিন্টুর ভাই মো. ইসলাম রেজা এবং নিখোঁজ আসাদুজ্জামান রানা, জাহিদুল করিম তানভীর ও আলামীনের পরিবারের সদস্যরা।