Search

Thursday, May 31, 2018

BASIC Bank Scam Probe: HC raps ACC

Says long delay indicates connivance of commission officials with the accused


Ashutosh Sarkar


The High Court yesterday expressed utmost dissatisfaction and disappointment with the Anti-Corruption Commission for the long delay in completing investigations in the cases over BASIC Bank loan scams.

“It seems from your [ACC officials] indifference and long delay in completing probes that you have connivance with the accused. If they [the accused] remain in jail for a long period of time, they get a strong ground for getting bail.

“We have to grant the accused bail due to the long delay in completing probe,” said Justice M Enayetur Rahim, the presiding judge of the HC bench now dealing with a number of bail petitions in the loan scam cases.

“We have given so many directives and made observations on this issue. But those have not been implemented properly,” the judge told the ACC lawyers.

“We have to cover our faces with black cloth in shame ... The commission could not submit charge sheet to the trial court in any of the 56 cases filed two and a half years back over the BASIC Bank loan scams.”

The HC bench of Justice Enayetur and Justice Shahidul Karim was hearing several petitions filed by Fazlus Sobhan, ex-deputy managing director of BASIC Bank, and its ex-deputy general manager Shipar Ahmed, seeking bail in loan scam cases.

The court fixed today for passing order on six bail petitions filed by Sobhan and one by Shipar.

BOARD IGNORED COMMITTEED312

Justice Enayetur said it is evident from case documents that the BASIC Bank's credit committee had given negative opinions to the bank's board of directors about granting loans to some applicants. But the board approved the loans ignoring the committee's recommendations.

The board should have sent back the loan applications. Instead, it approved the loans immediately after some loan seekers submitted applications, he said.

“It has been found that a single person has taken loans in the names of different institutions ... State money has been plundered this way. If the state agencies don't act on this, we have nothing to say,” said Justice Enayetur.

He also mentioned that the ACC chairman reportedly said the commission has been trying to trace the embezzled money.

ACC’S ‘PICK & CHOOSE’ POLICY

“If the commission is still trying to trace the [embezzled] money, the probe will not end till the doomsday,” Justice Enayetur said, adding that the commission is applying “pick and choose” policy in arresting people in the corruption cases.

The judge further said some high-profile graft suspects are seen in the television talk-shows and state programmes, but no action is taken against them.

Justice Shahidul said the commission's intention becomes clear from its delay in investigation in the corruption cases.

Eight IOs and their two team leaders appeared before the HC bench yesterday in line with its May 23 summons.

The bench heard the statement of Syed Iqbal Hossain, one of the two team leaders, about the delay in completing investigations.

Iqbal told the court that the IOs could not complete the probes as they were transferred at different times.

The investigations will be completed within a very short time, added the ACC official.

ACC lawyers Khurshid Alam Khan and Syed Mamun Mahbub told the HC that the commission has been working sincerely and neutrally to combat corruption.   

Barrister Rokanuddin Mahmud appeared for Sobhan, who has been accused in 48 cases.

The lawyer prayed to the court for Sobhan's bail, saying his client had advised the BASIC Bank board not to approve the loans.

On November 8 last year, the same HC bench severely rebuked the ACC for foot-dragging and showing weaknesses in investigating the cases over the BASIC Bank loan scams.

The commission lacks neutrality, transparency and competence in dealing with the cases, the bench had said.

ACC QUIZZED BACCHU

Meanwhile, the ACC yesterday quizzed former BASIC Bank chairman Sheikh Abdul Hye Bacchu over Tk 4,500-crore loan scams.

ACC Deputy Director Shamsul Alam grilled Bacchu for around three hours from 10:00am. Bacchu got out of the interrogation cell around 1:00pm and left without talking to reporters.

He was first quizzed on December 4 last year and was grilled for the fourth time on March 8.

According to a Bangladesh Bank enquiry, around Tk 4,500 crore was siphoned out of BASIC Bank between 2009 and 2013 when Bacchu chaired the board of the bank.

Kazi Faqurul Islam, the then managing director of the bank, was removed on May 25, 2014 over his alleged involvement in the financial scams.

Bacchu resigned as the chairman on July 5 that year amid growing allegations that he misappropriated funds by approving shady loans of several thousand crores of taka.

On July 14, 2014, the BB gave the ACC a report on the BASIC Bank scam, detailing how money was embezzled from that bank through fake companies and dubious accounts.

MUHITH ANGRY

Finance Minister AMA Muhith on several occasions expressed anger in parliament as he could not take steps against all involved in the scams in BASIC Bank and Sonali Bank.

On February 24, 2016, he told the House that 27 bank officials, 56 organisations and eight surveyor firms were involved in the BASIC Bank loan scams.

He also said external audit firms appointed by the BB and BASIC Bank detected involvement of Bacchu and the then board members in granting irregular loans.

The BB found that Bacchu illegally influenced all the activities of the bank, leaving it in a grave state.

On July 26 last year, the HC directed the ACC to probe the alleged involvement of Bacchu and board members of the bank in the scams.

  • Courtesy: The Daily Star /May 31, 2018

Wednesday, May 30, 2018

মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতদের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠককালে এ উদ্বেগের কথা জানান রাষ্ট্রদূত।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে। বিনাবিচারে একজন মানুষ মারার অর্থ হচ্ছে ওই পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যাওয়া।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমরাও চাই। তবে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে আমরা মনে করি।

মাদকের জন্য অভিযুক্ত মূল অপরাধী এবং এর উৎস বন্ধ করার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, মাদকের উৎস বন্ধ না করে এ অভিযান পরিচালনা করলে তা সফল হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।

  • Courtesy: Jugantar /May 30, 2018


‘ইয়াবা–সুন্দরী’র সাম্রাজ্য বনাম বন্দুকযুদ্ধের ছলনা

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব


গাঁজা ও ফেনসিডিলকে পেছনে ফেলে নেশার দুনিয়ায় ভয়াবহ উন্মাদনা এনেছে অনাগ্রা ও ইয়াবা। বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত আট বছরে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৭৭ থেকে ১০০ গুণ। প্রথম দিকে মাদকসেবনের মূল ভূমিকায় সচ্ছল ঘরের শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবা ও মধ্যবয়সীরা। ইয়াবার বাহক ও গ্রাহকদের মধ্যে একসময় সাড়া জাগিয়েছিল কথিত ‘ইয়াবা–সুন্দরীরা’।

২০০৭ সালের পর থেকে একের পর এক আকর্ষণীয় তরুণী এবং তাদের গডফাদার-মাদারসহ ধরা পড়তে থাকে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে। সে সময়ই সামাজিক মাধ্যমে ‘ইয়াবা-সুন্দরী’ কথাটা চালু হয়ে যায়। তাদের মাধ্যমে ইয়াবার মোবাইল ফোনভিত্তিক সুলভ বাজার বিস্তৃত হতে থাকে। ফোনের মাধ্যমে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা, নারী ও শিশুদের মাদকের বিক্রেতা ও বাহক বানানোর কৌশলে ইয়াবার আগ্রাসন দেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ে আর কোনো মাদকের এমন ‘স্মার্ট’ আগ্রাসন আর হয়েছে কি না সন্দেহ।

‘ইয়ো ইয়ো’ থেকে এলেবেলে ‘বস্তির ছেলে’

প্রথম দিকে উচ্চবিত্ত ঘরের বখে যাওয়া ‘ইয়ো ইয়ো’ ছেলেমেয়ে এবং মডেলকন্যা ‘ইয়াবা–সুন্দরী’ভিত্তিক বিপণন দিয়ে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে এসব সুলভ হয়ে ওঠে। শহুরে নিম্নমধ্যবিত্ত, পরিবহনশ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় কর্মী ও বস্তির ছেলেদের গণ্ডি পেরিয়ে এখন গ্রামের সন্তানদের নাগালেও পৌঁছে গেছে ইয়াবা, সঙ্গে কিছু সহযোগী মাদকও। মাদক নেওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, ইভ টিজিং, এমনকি ধর্ষণও। মাদকের বিষে পড়ে গ্রামীণ এলাকা ও শহুরে বস্তিতে ছেলেদের পড়ালেখার গণ্ডি থমকে আছে, কমছে না স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার। যুবসমাজকে ধ্বংসকারী মাদক ইয়াবা ব্যবসার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গাড়ির হেলপার, দিনমজুর, পান দোকানি, শিশু শ্রমিক, কিছু রোহিঙ্গা, এমনকি ছোটখাটো ব্যবসায়ী, সাংবাদিকও এখন কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। কোটিপতি হচ্ছেন পুলিশ এবং নারকটিক্স বিভাগের কিছু কিছু লোক। 

ছেলেমেয়েরা জানে না তারা পড়ালেখা শেষ করে কী করবে? কী আছে তাদের ভবিষ্যতে? যুবসমাজের সামনে মানবসম্পদ পরিচর্যা ও কর্মসংস্থান তৈরির কোনো স্বচ্ছ লক্ষ্য ও প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি ক্ষমতাসীন সরকার। দখল-লুট, সন্ত্রাস, চাঁদা ও বেপরোয়া অর্থ লোপাট এবং পাশবিক দুর্বৃত্তপনা ও হিংস্রতা দেখে দেখেই বড় হচ্ছে একের পর আরেক প্রজন্ম। জীবিকা অর্জনের প্রায় সব কটি মেধাভিত্তিক ও শ্রমনির্ভর সরল পথও ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় কঠিন করে তোলা হয়েছে। অথবা সেসব উপায় একেবারেই রুদ্ধ করে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের বন্দোবস্ত করা আছে।

হতাশাজনক দীর্ঘ বেকারত্ব, উদ্যোক্তা হওয়ার কঠিন পথ পাড়ি দিয়েও ব্যর্থ হওয়ার গ্লানি, গতানুগতিক ব্যবসা কিংবা শেয়ারবাজারে লোকসান করার উপর্যুপরি হতাশা, মানহীন কর্মপরিবেশের ভয়ংকর চাপ ও উৎকণ্ঠা মাদকের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। ম্রিয়মাণ অর্থনীতিতে মধ্য ও নিম্নবিত্তের চাকরি পাওয়ার, চাকরি পেলেও সেখানে ওপরে উঠে আসার আশা কম। বরং সাধারণ মধ্যবিত্ত ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে নিম্নবিত্ত হচ্ছে। যারাই–বা উন্নতি করছে, তাদেরও দিতে হচ্ছে চড়া মূল্য। অবসরহীন পরিশ্রম, একঘেঁয়ে জীবন, শুকিয়ে আসা পারিবারিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ রাসায়নিক সুখে মুক্তি খুঁজবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক।

অপরাধপ্রবণ সমাজে কুসঙ্গের হাতছানি তো আছেই। সঙ্গে আছে কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ, দীর্ঘ শ্রমঘণ্টা, মানহীন কাজের পরিবেশ, দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব, ব্যবসার কঠিন প্রতিযোগিতা ও স্বল্প লাভের পেরেশানি। আছে দিনযাপনের ক্লান্তি ও কষ্ট, কম উপার্জনের হতাশা, পারিবারিক টানাপোড়েন, বিশ্বাসহীন সামাজিক বন্ধন। এমন বহুবিধ কারণে মাদকের বিস্তার সর্বগ্রাসী হয়ে উপস্থিত হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার প্রশাসন ও সমাজের বেশির ভাগ লোকের একসঙ্গে জেগে ওঠা দরকার।

প্রতিবেশীদের মাদক সাম্রাজ্য বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ দরকার


দেশের তারুণ্যনির্ভর উৎপাদনমুখিতা যে কয়েকটি ভয়ংকর কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তার মধ্যে মাদক অন্যতম। তরুণ জনসংখ্যাধিক্যের (ডেমোগ্রাফিক ডেভেডিন্ট) বাংলাদেশের কর্মক্ষমতা মাদকে অপচয় হওয়া এক জাতীয় ক্ষতি। আর এ ক্ষতির কারণ ও সুবিধাভোগী হলো, ১. প্রতিবেশী দেশগুলোর মাদক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কৌশলী গোষ্ঠী, ২. আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়া চক্র এবং (৩) দেশীয় মাদক ব্যবসায়ী-তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকদের ছড়ানো নেটওয়ার্ক। এই তিনে মিলে মাদক ব্যবসার পোক্ত কাঠামো তৈরি করে ফেলেছে। মিয়ানমার ও ভারতীয় মাদকসাম্রাজ্য প্রথমে বাংলাদেশের যুবসমাজকে টার্গেট করে সফল হওয়ার পর প্রসারিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য কিছু দেশেও। সেখানেও ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশে তার প্রতিবেশী দুটি দেশ মিয়ানমার ও ভারতের বর্ডার ফোর্স দ্বারা সরাসরি মাদকসন্ত্রাসের শিকার। বাংলাদেশের তরুণ ও যুববাজারকে নিশানা করে দুটি দেশই সীমান্তের ঠিক পাশে ফেনসিডিল ও ইয়াবার কারখানা চালু রেখেছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক মদদে এই ব্যবসাকে বাংলাদেশে পুশ করছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীদের প্রায়ই ভারতীয় বর্ডার গার্ড হত্যা করে, কিন্তু এই একই বাহিনী ফেনসিডিলের বেলায় হাত গুটিয়েই শুধু রাখে না; অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশি এজেন্টদের টাকা দিয়ে কয়েক যুগ ধরে তারা বাংলাদেশে ফেনসিডিল ব্যবসা পুশ করছে। আর মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড ফোর্স বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে যুক্ত। আফগানিস্তানে তালেবানরা যেমন পপি চাষ করত, মিয়ানমার তেমনি করে ইয়াবার কারবার। বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনা দরকার, শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিও জরুরি।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিবেচনায় দুর্বল বা অসচেতন দেশ যদি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পিছিয়ে থাকে তবে শক্তিশালী প্রতিবেশীরা এভাবে তাদের বুদ্ধিহীন ও মেধাহীন করার সুযোগ নেয়। বাংলাদেশ সম্ভবত এরই শিকার হচ্ছে। এই অপতৎপরতার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মনোযোগ চাই। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও সরকারের ভেতর এ উপলব্ধি জন্মাতে হবে সবার আগে। অন্যথায় কেউই সাহায্যে এগিয়ে আসবে না।

অন্যদিকে, মাদক ব্যবসা সরকারি দলগুলোর সন্ত্রাসী, ছাত্র ও যুব শাখাকে লালনপালন করার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তিমূল। বলা যায়, উন্নয়ন বাজেট লুট, চাঁদাবাজি ও মাদক—এই তিনের ওপর ক্ষমতাসীনদের ছাত্র-যুবসহ লাঠিয়াল সন্ত্রাসী শাখাগুলো আর্থিকভাবে দাঁড়িয়ে উঠেছে। দিকদিশাহীন যুবসমাজকেই তারা টার্গেট করে তাদের অবৈধ আর্থিক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে সমাজের সর্বস্তরে। আমাদের আদর্শহীন দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদেরা ভাগাড়ের পচা মাংস খাওয়ার মতোই মাদক থেকে আসা নোংরা টাকার দিকে লোভী শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

‘বন্দুকযুদ্ধের’ ছলনার দিক


এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সত্যিকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব। দরকার সমাজের ব্যাপক মানুষের একসঙ্গে প্রতিবাদে নামা। অথচ আমরা দেখছি কী? 

বছরের পর বছর ধরে পারিবারিকভাবে মাদকসাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা বদি পরিবারের (এ রকম আরও বেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছে) লোকদের সাংসদ কিংবা সিআইপি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে রেখে তৃণমূল পর্যায়ের কিছু ব্যবসায়ী হত্যা করা মাদকবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে প্রতারণার দিক।

‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হচ্ছে রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। ক্রসফায়ারে বাংলাদেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কিংবা দমন—কোনোটিই হয়নি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর হাতে একচেটিয়া ক্ষমতা দিয়ে তাদের জবাবদিহির বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের হাতে জমা হয়েছে একচেটিয়া ‘সন্ত্রাসের’ ক্ষমতা। ক্রমাগত ক্রসফায়ার জানান দিচ্ছে যে বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থা সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং দমনে কোনোই প্রভাব রাখে না। একদিকে অতি দীর্ঘ কালক্ষেপণের বিচারপ্রক্রিয়া সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখে না, দমন তো দূরের কথা, অন্যদিকে বাংলাদেশের আদালত অপরাধ সংঘটনের গোড়ার কারণ বিশ্লেষণ করে সরকারকে তাদের পর্যবেক্ষণ ও রুলিং দিতে পারছে কি? রাজনৈতিক নিয়োগ ও চাপের কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই অক্ষমও বটে। ফলে মাদক মাদকের জায়গাতেই থেকে বিস্তৃত হচ্ছে, পাচারকারীরা ঘুষ ও তদবির করে পার পেয়ে যাচ্ছে, হয়ে যাচ্ছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। এখন সরকার রাজনৈতিকভাবে না চাইলে মাদকের বিস্তার রোধ অসম্ভব। তাই মাদক রোধে ‘শীর্ষ থেকে নিচ’ অ্যাপ্রোচ নিতে হবে, যেকোনো ‘নিচ থেকে ওপরে’ উদ্যোগ এখানে ব্যর্থ এবং লোক দেখানো।

সবশেষে আমাদের সীমান্ত এলাকার নাগরিকের বেকারত্ব কমাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির টেকসই পথ বের করতে হবে অর্থাৎ এসব এলাকার বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে। সীমান্তে ব্যাপকসংখ্যক নাগরিককে বেকার রেখে, ব্যাপকসংখ্যক উদ্বাস্তু রেখে মাদকসহ যেকোনো পণ্য পাচার সমস্যার টেকসই সমাধানে আসা বেশ দুষ্কর বটে!

শুভ বোধ জাগ্রত হোক দিকে দিকে। তারুণ্য রক্ষা পাক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।

  • Courtesy: Prothom Alo/ May 30, 2018

বেসিক থেকে ফারমার্স কেলেঙ্কারির নেপথ্যে পরিচালকরা

হাছান আদনান 

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) ওপর চাপ ছিল বড় অংকের ঋণ বিতরণের। ব্যাংকিং নীতিবহির্ভূত হওয়ায় পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ওই ঋণ বিতরণে রাজি হননি তিনি। পরিচালকদের পক্ষ থেকে আবার চাপ এলে চাকরিই ছেড়ে দেন ওই এমডি।
ব্যাংকিং নীতিবহির্ভূত এ চর্চা চলছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেই। ব্যাংক চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের অনৈতিক এ চর্চা বিপর্যয় ডেকে এনেছে বেসিক ব্যাংকে। নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকের বিপর্যয় সৃষ্টির মূলেও পরিচালকদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসিক থেকে ফারমার্স ব্যাংক— প্রায় সব কেলেঙ্কারির নেপথ্যেই কোনো না কোনোভাবে রয়েছেন পরিচালকরা।

যদিও পরিচালনা পর্ষদ নীতি প্রণয়ন করবে আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নীতির প্রয়োগ ঘটাবে, এটিই ব্যাংক ব্যবস্থার মূলমন্ত্র। কিন্তু কয়েক বছর ধরে উল্টো ধারায় চলছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। নীতি প্রণয়নের বদলে দেশের অনেক ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ বিতরণে জড়িয়েছেন। নিয়োগ-পদোন্নতি থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রায় সব কাজেই হস্তক্ষেপ করছেন চেয়ারম্যানরা।

ব্যাংক পরিচালনায় পর্ষদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের মাশুল দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত লুটপাটের শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। একসময়ের আদর্শ ব্যাংকটিকে ধসিয়ে দেয়ার নেপথ্যে ছিল শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন তত্কালীন পরিচালনা পর্ষদ। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংকের এননটেক্স ও ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারির সঙ্গেও পরোক্ষভাবে যুক্ত পরিচালকরা। পুরো ব্যাংকিং খাতকে নাড়িয়ে দেয়া ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির সূত্রপাতও হয়েছে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের হাতেই। একই কারণে বিপদে পড়েছিল নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্ষদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের ক্ষমতা ক্রমেই কমছে। অনেক ব্যাংকের ঋণ বিতরণ, আদায়, সুদ মওকুফ, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন পরিচালকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা অনেক বেশি। একই পরিবার থেকে এখন এক ব্যাংকে চারজন পরিচালক থাকার সুযোগ পেয়েছেন। পর্ষদের অন্য সদস্যদেরও আত্মীয়-স্বজন দ্বারা সাজানো হচ্ছে। ফলে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ একেকটি পরিবারের হাতে চলে গেছে। এতে ব্যাংকের সব কাজেই পরিচালকদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে বাধ্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্নভাবে চাপে রাখছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন মোটেও কার্যকরভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কারির ঘটনা দিন দিন বাড়বে।

পরিচালকদের ভূমিকা কী হবে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। আইনের ১৫খ (১) ধারায় পর্ষদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা এবং তা পরিপালনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ দায়বদ্ধ থাকবে।

আইনের এ ধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগের ২০১৩ সালে জারি করা ১১ নম্বর প্রজ্ঞাপনে। ওই প্রজ্ঞাপনের ৪.১ (খ)তে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের আওতায় ঋণ ও বিনিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন, মঞ্জুরি ও বিতরণ, ঋণ আদায়, পুনঃতফসিলীকরণ ও অবলোপনের নীতি, কৌশল, বিধি ব্যবস্থা ইত্যাদি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে প্রণীত হবে। পর্ষদ ঋণ ও বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে বণ্টন করবে এবং অনুরূপ বণ্টনের ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব প্রধান নির্বাহী ও তার অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপর ঋণ মঞ্জুরির ক্ষমতা অর্পণ বাঞ্ছনীয় হবে। একই বিধানে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ করবেন না।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব নীতিমালা উপেক্ষিত হয়েছিল বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রে। ব্যাংক দুটির বেশির ভাগ ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়েছে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের তদবিরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ নিয়ে কথা হয় দেশের বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডির সঙ্গে। তাদের প্রায় সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন ঋণ দেয়ার জন্য পরিচালনা পর্ষদের তদবিরের কথা। কিন্তু কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেন, দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকেই বড় ঋণের ক্ষেত্রে পরিচালকরা তদবির করছেন। এমডিদের চাপ দিচ্ছেন জামানতের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ার জন্য। চেয়ারম্যান কিংবা পরিচালকদের চাপে বিতরণ করা ঋণই পরবর্তীতে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় খেলাপি হওয়া এ ঋণ আদায় করাও সম্ভব হচ্ছে না।

বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় ব্যাংকগুলোয় খোঁজখবর নিয়েও। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকের এমডিদের এখন সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষমতা রয়েছে। অল্প কয়েকটি ব্যাংকের এমডির ক্ষমতা আছে ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণের। কিছু ব্যাংকের এমডি নিজ ক্ষমতায় ১ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারেন না। সে হিসেবে এমডির ক্ষমতার বাইরে থাকা সব ঋণ প্রস্তাবই বিভিন্ন কমিটিতে যাচাই-বাছাই শেষে পরিচালনা পর্ষদে উঠছে। পর্ষদের অনুমোদনের পরই সে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, পরিচালকদের চাপেই অনেক সময় ঋণের প্রস্তাব পর্ষদে উঠছে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চাইলেই সে প্রস্তাব আটকাতে পারছে না।

তবে ঋণ বিতরণের সব ক্ষমতা ও দায়ভারই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বলে জানান বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বলেন, ব্যাংকারই যাচাই-বাছাই করে পরিচালনা পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কাগজপত্র ঠিক থাকার পর পর্ষদ ঋণ অনুমোদন করে। পরিচালকদের গ্রাহকের অবস্থান জানার সুযোগ হয় না। যদি কোনো ঋণ প্রস্তাবে ত্রুটি থাকে, তার দায়ভার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। ব্যাংকের এমডিদের দায়িত্ব হবে চেয়ারম্যান বা অন্য পরিচালকদের তদবির না শোনা। স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে কাজ করা।

ব্যাংক পরিচালকদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ৪.১(ঘ) তে বলা হয়েছে, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, প্রণোদনাসহ মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত নীতি এবং চাকরিবিধি পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক প্রণীত ও অনুমোদিত হবে। কিন্তু অনুমোদিত চাকরিবিধির আওতায় নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রমে পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পরিচালকরা কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালাও দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেই লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ আছে। বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কর্তৃক ‘চিরকুট’ দেয়ার প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও উঠে এসেছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের আশীর্বাদেই হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ৪.৩-এ বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ কর্তৃক গঠিত কোনো কমিটির চেয়ারম্যান কিংবা কোনো পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে কোনো নীতিনির্ধারণী অথবা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার রাখেন না বিধায় তিনি ব্যাংকের প্রশাসনিক বা পরিচালনাগত তথা দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ কিংবা হস্তক্ষেপ করবেন না।

একই বিধানে বলা হয়েছে, পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যাংকের ব্যবসায়িক স্বার্থে চেয়ারম্যানের অনুকূলে একটি অফিস কক্ষ, একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন পিয়ন, অফিসে একটি টেলিফোন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য একটি মোবাইল ফোন ও একটি গাড়ি দেয়া যেতে পারে।

দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেই নীতিমালার এ বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে। চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ আছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের অভ্যন্তরে বিলাসবহুল কক্ষে বসে কোনো কোনো চেয়ারম্যান নিজ ব্যবসার কর্মকাণ্ড পরিচালনা কিংবা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করছেন।

ব্যাংকিং খাতের বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে পর্ষদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে একমত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে পর্ষদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ত্রুটিই বেশি ছিল। তবে ওরিয়েন্টাল থেকে শুরু করে হাল আমলের ফারমার্স কেলেঙ্কারির জন্য পরিচালনা পর্ষদই দায়ী।

ড. জায়েদ বখত বলেন, আশার কথা হচ্ছে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট স্বাধীন। আমরা ব্যাংকের নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করছি। কোনো বড় ঋণ পুনঃতফসিল কিংবা অনুমোদনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচালক যুক্ত থাকতে পারেন। সামষ্টিকভাবে অসৎ পরিচালনা পর্ষদ এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নেই। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ অনেক বেশি ক্ষমতার চর্চা করছে। এ ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

  • কার্টেসিঃ বনিক বার্তা/ মে ৩০,২০১৮ 


বড় বাজেট এক ধরনের প্রতারণা

একান্ত সাক্ষাৎকারে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ


হামিদ বিশ্বাস 


বাজেট হতে হবে স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তবায়নযোগ্য। বেসরকারি ব্যাংকের মাত্র কয়েক উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়; এমনকি সরকারও জিম্মি হয়ে পড়েছে। এভাবে জিম্মিদশা চলতে থাকলে পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের মতো কয়েক ব্যক্তিবিশেষের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে ব্যাংকিং খাত, যা অর্থনীতির পরিপন্থী। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ সংশয় প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হামিদ বিশ্বাস

যুগান্তর : বাজেট কেমন হওয়া উচিত?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : প্রতি বছর বিশাল বাজেট দেয়া হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। অবাস্তব বাজেট এক ধরনের চাটুকারিতা ও প্রতারণার শামিল। তাই বাজেট হতে হবে স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তবায়নযোগ্য।

যুগান্তর : বাজেটে জনগণের করের টাকা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ রাখার যৌক্তিকতা কী?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে লুটতরাজ করে, বছর শেষে বাজেট থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া অনৈতিক ব্যবস্থা, যা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। এ ব্যবস্থার বিলোপ চাই। এসব ব্যাংককে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। এর আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সরকারি ব্যাংক কখনও লাভের মুখ দেখবে না।

যুগান্তর : বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের একের পর এক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের আর কোনো সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না। ধীরে ধীরে তারা গ্রাস করে ফেলছে ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ টাকা জমার হার (সিআরআর) বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা, সরকারি তহবিলের ৫০ শতাংশসহ চারটি সুবিধা নিয়েছে।

বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথা তারা শোনেনি। ঋণের সুদ এক টাকাও কমায়নি। উল্টো কোনো কোনো ব্যাংক সুদ আরও বাড়িয়েছে। এখন তারা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা নামমাত্র দেড় থেকে দুই শতাংশ সুদে নেয়ার ফন্দি করছে।

এটা দেয়া কিছুতেই ঠিক হবে না। এর আগে তারা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেছিলেন। যেখানে একই পরিবারের চারজন পরিচালক এবং টানা ৯ বছর থাকার বিধান রাখা হয়।

এতে করে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো মাত্র কয়েক উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে জিম্মি হয়ে গেল। খুব শিগগিরই আইনটি পরিবর্তন না হলে পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবারের মতো গুটিকয়েকজনের হাতে চলে যাবে ব্যাংকিং খাতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, যা কিছুতেই শোভনীয় নয় এবং বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতির পরিপন্থী।

যুগান্তর : ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতিরোধে বাজেটে কী ধরনের নির্দেশনা থাকা দরকার?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : এবারের বাজেটে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। এর অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে’ তুলে নিতে হবে। কারণ বিভাগটি চালু হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বেপরোয়া হয়ে যায়।

গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি ও ডিএমডি নিয়োগ দিয়েছিল এ বিভাগ। ওইসব বোর্ড এবং ম্যানেজমেন্টের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি এবং বেসিক ব্যাংকে ভয়াবহ লুটপাট সংঘটিত হয়। এসব ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কারও বিচার হয়নি।

বিচারহীনতার কারণে পরবর্তী সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতেও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকিং খাতের আজকের করুণ পরিণতির দায়-ভার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নিতে হবে। এছাড়া কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতে যে লুটপাট হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। এজন্য একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা খুব জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতকে ঢেলে সাজানোর জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা যেতে পারে।

যুগান্তর : বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : এবারের বাজেটে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, টাকা-পয়সার অপব্যবহার হতে পারে। এর সদ্ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় রোধে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকায় জনতুষ্টির জন্য অনেক প্রকল্প নিতে পারেন। প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই হওয়া উচিত। তৃতীয়ত, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা। চতুর্থত, দেশে আয়-বৈষম্য দূর করা এবং শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

যুগান্তর : সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : এবার বাজেটে এমন কিছু ব্যবস্থা থাকা উচিত, যা দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা লাঘবে অবদান রাখতে পারে। সমস্যা দুটি হল মানুষে মানুষে আয় বৈষম্য হ্রাসকরণ এবং শিক্ষিত বেকারদের জন্য কর্মসৃজন।

এ উদ্দেশ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ অর্থের সুষ্ঠু ও যথার্থ বিতরণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এছাড়া নিুবিত্তদের মধ্যবিত্তে উত্তরণ এবং মধ্যবিত্তদের উচ্চমধ্যবিত্তে উত্তরণের কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে, সাবকন্ট্রাক্টিং পদ্ধতিকে উৎসাহিত করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্প্রসারণে ফলপ্রসূ প্রণোদনা দিতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করযোগ্য ব্যক্তি আয়ের সীমা বাড়াতে হবে।

আয়হীন বৃদ্ধ ব্যক্তিদেরও পর্যাপ্ত রেয়াত দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কাজের পরিমাণ ও অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারণ করে মনিটরিং করতে হবে। যাতে বছর শেষে দুতিন মাসে ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা যায়।

  • কার্টেসিঃ যুগান্তর/ মে ৩০,২০১৮ 

নির্বাচনের ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে - বি. চৌধুরী

নির্বাচনের অন্তত ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিকল্পধারা সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, যাতে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য আগেই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর অল কমিউনিটি ক্লাবে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিএনপির মাহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী,গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, শাহ আহম্মেদ বাদল আসাদুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ।

বি. চৌধুরী বলেন, যুক্তফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রিুতিবদ্ধ। ফ্রন্ট নিশ্চয়তা দিচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মেধাবী লোকদের সাথে নিয়ে দেশেকে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশাল বাজেট দেওয়া হচ্ছে এবং যার জন্য দুর্নীতি সর্বোচ্চ শিখরে। কোনো সরকারি অফিস দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। বি. চৌধুরী আরো বলেন, দেশে রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে এবং গণতন্ত্র নেই। ঢাকায় ২০ ভাগ ভোটারের বসবাস হলেও বিরোধী দলকে সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, বিনা বিচারে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক হয়রানি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একধিক চ্যানেল সরকার নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয় এবং এর সা¤প্রতিক উদাহরণ খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। পেশী শক্তি ও অবৈধ অস্ত্রের কারণে গনতান্ত্রিক নির্বাচনের সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটেছে। বি. চৌধুরী বলেন, কালো টাকার জন্য সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষ, ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখন জাতীয় নির্বাচন জনগণের মৌলিক দাবি। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/মে ৩০,২০১৮ 

Most ‘fast-track’ power projects miss schedule

M Azizur Rahman


The government's decision to allow installation of 10 oil-fired power plants under 'fast-track' programme has failed to achieve the desired objectives.

The Power Division under the Ministry of Power, Energy and Mineral Resources (MPEMR) in August last year approved setting up of five diesel-fired power plants and five furnace-oil fired power plants in the private sector. The plants having a total generation capacity of 1,768 megawatt (MW) were selected without any bidding.

All the five diesel-fired power plants failed to initiate electricity generation within their stipulated deadline February 10, 2018, a senior official of state-run Bangladesh Power Development Board (BPDB) told the FE Tuesday.

Only one furnace oil-fired 300 MW power plant owned by Summit Group could meet the deadline, May 10, 2018, he said.

As on May 29, 2018 only four 'fast-track' power plants three diesel and one furnace oil were in operation and their overall generation was hovering around 657 MW.The electricity generated by these plants was around one-third of the targeted output, according to BPDB statistics.

The diesel-fired power plants are now together producing around 371 MW of electricity, less than half of the targeted 800 MW. The lone furnace-oil fired power plant of Summit Group is producing around 286 MW of electricity. The BPDB had a target to get 978 MW from all five furnace oil-based plants.

The government had awarded these diesel and furnace oil-fired power plants to private sector on the basis of unsolicited offers under the Speedy Supply of Power and Energy (Special Provision) Act 2010. The law has a provision for granting immunity to all those involved with the quick-fix remedies.

The government also allowed the private entrepreneurs duty-free import of furnace oil to run their power plants with 9.0 per cent service charge along with recovery of import costs. Besides, there is a provision for capacity payment as incentives, said a senior official of Power Division.

Both the diesel and furnace oil-fired power plants were awarded under the independent power producer (IPP) category. The BPDB is contractually-bound to purchase electricity from the diesel-fired power plants at rates between Tk 19.66 and Tk 19.99 per kilowatt-hour (1 unit). The tariff is almost three-fold of the existing average retail level electricity price Tk 6.84 per unit.

From the furnace-oil fired power plants, the BPDB is pledge-bound to purchase electricity at the tariff rate between Tk 8.25 and Tk 8.37 per unit.

"We awarded the diesel and furnace oil-fired power plants under fast-track to meet the mounting electricity demand from early summer this year," BPDB chairman Khaled Mahmood told the FE. But, unfortunately, many of them could not begin their operations timely, he said.

When contacted, energy adviser of the Consumers' Association of Bangladesh (CAB) Prof M Shamsul Alam said, "These power plants were awarded not to generate electricity but to facilitate a few to launder money abroad."

It is unfortunate that the government is putting thrust on generating electricity without considering the costs, he said. "But it can't be a sustainable policy and it is a wrong one," he said.

  • Courtesy: The Financial Express/May 30, 2018

Death count tops 100 in 15 days

12 more 'drug dealers' killed in 'shootouts'; number of arrestees crosses 10,000 as raids continue



So-called shootouts in the ongoing anti-narcotics drive keep claiming lives with the number of deaths standing at 108 until last night.

Twelve more alleged drug dealers were killed in Dhaka and eight other districts yesterday.

Although the “extrajudicial killings” in the “gunfights”, mostly involving law enforcers, are drawing criticisms from rights activists, the police headquarters yesterday extended their 10-day special anti-drug drive, beginning on the first day of Ramadan on May 18, until further notice.

The Rab drive has also been continuing since May 4, raising concerns that the number of the “shootout victims” may rise.

During the nationwide drive for the last 15 days, law enforcers have arrested around 10,000 people over their alleged involvement in drug peddling while mobile courts have jailed and fined at least 3,276 others.

Of the arrestees, 70 were held by police in drives in Uttara and Lalbagh areas of the capital yesterday. 

Law enforcers also claimed to have seized around 23 lakh yaba tablets, 2,700 kgs of cannabis, 23,000 bottles of phensedyl, 26kgs of heroin, and 2,08,000 litres of local liquor.

Yesterday, two alleged drug dealers were killed in Comilla and two others in Kushtia while one each in Dhaka, Mymensingh, Thakurgaon and Borguna in what law enforcers said were gunfights with them.

Two other “drug dealers” got killed in “gun battles” between rival groups of drug peddlers in Jessore and one each in similar incidents in Brahmanbaria and Satkhira.

Police officials claimed to have seized hauls of phensedyl bottles, hemp, yaba pills, firearms and bullets from the crime scenes.

According to the police, each of the 12 deceased was facing multiple cases filed under the anti-narcotics act. They claimed several cops were also injured during the alleged gunfights in some districts.

The “shootout” narratives remain the same -- law enforcers go for drives taking along arrested drug dealers, or on secret information about gathering of drug dealers or to recover drugs waiting to change hands. However, the law enforcers come under attack and they retaliate by firing back. It triggers a gunfight, leaving the drug dealers dead.

In Comilla, two suspected drug dealers -- Liton alias Kana Liton and Baten Mia -- were killed in a “shootout” with police in Gunjor Beribadh area of Muradnagar upazila.

Police also claimed to have recovered the body of another “listed peddler”, Aktar Hossain, 30, along the Comilla-Chandpur highway in the district yesterday. He was facing at least four drug cases filed with Barura Police Station, according to law enforcers. 

Police claimed that a CNG-run auto-rickshaw was found near the spot and Aktar's head was badly damaged.

The two people killed in Kushtia were identified as Mokaddes Hossain, 30, son of late Reazul Haq, and Fazlur Rahman alias Title, 50, son of late Yakub Ali of Daulatpur upazila.

Suspected drug dealer Sumon Miah alias Khuku Sumon was killed in Dakkhin Khan area of the capital around 12:10am.

In similarly narrated incidents, Md Mizan was killed in Bhaluka of Mymensingh and Harun, 45, in Haripur upazila of Thakurgaon.

Firoz Mridha, 45, was killed in a “gunfight” with Rab in Borguna's Kajirabad Betagi municipality area. 

Jessore police said alleged drug dealers Manik Mia, 35, and Asar Ali, 45, were killed in a “gun-battle” between two groups of drug peddlers in Chachra Raipara area of Sadar upazila.

CONTRADICTORY STORY

Brahmanbaria police claimed that alleged drug dealer Jony Mia, 30, was killed in “gunfight” between two groups of drug peddlers in Khalajora area.

Jony's wife Jotsna Akter, however, said eight to 10 men in plainclothes went to their home on May 21, handcuffed her husband and took him along with them. She said her husband was never a drug trader.

In Satkhira, police recovered the body of one Anisur Rahman from Kolaroa upazila and claimed that he was a drug dealer who got killed in a “gunfight” between two groups of drug dealers.

THE RAIDS IN DHAKA

Around 600 policemen, along with members of the Detective Branch (DB) of police, a special armed force and a dog squad, conducted a three-hour drive in Baunia of Turag area.

Police held 31 people in the drive from 11:00am, said Shafikur Rahman, inspector (investigation) of Turag Police Station, adding that 5,100 yaba pills and around five kgs of cannabis were recovered from there.

Locals said police, divided into groups, gathered in the area around 10:00am and started the drive an hour later.

In another drive in Islambagh area of Lalbagh, police arrested 39 people, said Ibrahim Khan, deputy commissioner of DMP (Lalbagh Division).

Around 500 policemen, along with a special armed force and a dog squad, took part in the two and half hours drive, which started around 2:30pm.

Police claimed to have recovered 370 yaba pills, 800gms of heroin, 2kgs of cannabis and 50 litres of locally-made alcohol from the spot.

  • Courtesy: The Daily Star/ May 30, 2018

Tuesday, May 29, 2018

অার কিছু নয়, নির্বাচনের বছরে ‘প্রতিদান’ চান হাসিনা মোদিজির কাছে একান্তে


মোহাম্মদ আলী বোখারী


শান্তিনিকেতনের ‘বাংলাদেশ ভবনে’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে ‘প্রতিদান’ চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমনটাই গত ২৬ মে পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকায় অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় রচিত “দিল্লির পাশে থেকেছে ঢাকা, মোদীর কাছে ‘প্রতিদান’ চান হাসিনা” শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

সূচনায় বলা হয়েছে, “দিয়েছেন অনেক, প্রতিদানে এবার ভারতের সহযোগিতা চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।” তাতে সবিশেষভাবে ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে ভারতের সহযোগিতা চাই’ কথাটি যুক্ত করে বলা হয়েছে। “শুক্রবার ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পরে সেখানেই মোদীর সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন, তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, মোদীকে হাসিনা বলেছেন, তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল পাকিস্তনি শোষণে ছিবড়ে হয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড় করানো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের মতো এই কাজেও ভারতকে পাশে চান।”



প্রতিবেদনটিতে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদীর এক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার ছবিও যুক্ত করা হয়েছে।

পাশাপাশি তাতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৭২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে পাশে নিয়ে কলকাতার জনসভায় সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি। দেওয়ার কিছু নেই। শুধু বুক ভরা ভালবাসা জানাই ভারতের মানুষকে।’’ ছেচল্লিশ বছর পরে হাসিনার বার্তা, তাঁরা যা দিয়েছেন, ভারত এবার তার প্রতিদান দিক। একই সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে যে, মোদীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি কী বলবেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা সেরে এসেছিলেন হাসিনা। তাঁর দফতরের এক সূত্র জানান, হাসিনার বার্তা, মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পূর্বের দু’দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।

তবে সেখানে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, “মোদীর জবাব জানা যায়নি। ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পরে বক্তৃতায় তিনি জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো খাতে ৮০০ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছে দিল্লি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়ে ১১০০ মেগাওয়াট করা হবে। মহাকাশ প্রযুক্তিতেও সাহায্য করতে চায় দিল্লি।”

এছাড়া প্রতিদেনটিতে উল্লেখ রয়েছে, ভবন উদ্বোধনের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় অনেক জল গড়িয়েছে। আরও জল গড়াবে। দুই দেশের সুসম্পর্কও এগিয়ে চলবে।’’ দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আলোচনায় তিস্তা প্রসঙ্গ ওঠা স্বাভাবিক বলে অনেকেই মনে করেছেন। যদিও এ নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে তার আগে বক্তৃতায় হাসিনা বলেন, “অনেক অর্জনের মধ্যে কিছু বকেয়াও রয়েছে, যা উল্লেখ করে এমন সুন্দর অনুষ্ঠানের অঙ্গহানি করতে চাই না আমি!’’

একই সঙ্গে প্রতিবেদনটি বলেছে, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী কালে ভারতের অবদান স্মরণ করতে গিয়ে এদিন গলা ধরে আসে হাসিনার’। তিনি বলেন, “এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ভারতের মানুষ। যুদ্ধে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে। লড়াইয়ে প্রাণও দিয়েছেন ভারতের সেনারা।’’ ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট রাতের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু তাঁর বাবা-মা, ভাইদের হত্যা নয়, তাঁর পরিবারের আরও তিনটি বাড়িতে সে রাতে হামলা করে হত্যাকাণ্ড চালায় ‘পাকিস্তানের চরেরা’। “আমরা দুই বোন-সহ পরিবারের যে ক’জন সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম, ভারতের স্নেহচ্ছায়াতেই কাটিয়েছি পরের কয়েক বছর,’’ বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, বাবার স্বভাব ছিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি। স্টিমারের ডেক-এ দাঁড়িয়ে ভরাট গলায় উচ্চারণ করতেন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই!’ সেই রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে দুই দেশ মিলে একটি ভবন উদ্বোধন করল। দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল, দু’টিই রবীন্দ্রনাথের লেখা। হাসিনা জানান, বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের জমিদারি অঞ্চল শাহজাদপুরে তাঁর সরকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে।
  • লেখক কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক। 


ডুবছে কৃষি ব্যাংক

  • মূলধন ঘাটতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • বাজেটে ভর্তুকি চায় দেড় হাজার কোটি টাকা


রুকনুজ্জামান অঞ্জন


কৃষি খাতের উন্নয়নে নিয়োজিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এখন ডুবতে বসেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতি, সরকারের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা, কৃষি ঋণের সুদের হার কম ও তহবিল পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।  অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটি বলেছে, তাদের মূলধন ঘাটতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এত বেশি ঘাটতি নিয়ে ব্যাংকটির ব্যবসা পরিচালনা ও ঋণদান কর্মসূচি কঠিন হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী বাজেট থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে বিকেবি।

ব্যাংকটির এমডি মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া চিঠিতে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পরিচালনগত লোকসান এবং সমন্বিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দেশে-বিদেশে স্টেকহোল্ডারদের বিভ্রান্ত করে; এমনকি আমানতকারীদেরও নিরুৎসাহিত করে। যে কারণে ১০৩১টি শাখা সংবলিত একটি ব্যাংকের দীর্ঘ ৪৮ বছরের আমানতের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বিশেষায়িত খাতের এ ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৫৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুনে যার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নিট লোকসানের পরিমাণ ৯৮১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১ হাজার ৩১ শাখার মধ্যে ১৪৮টি শাখাই পরিচালিত হচ্ছে লোকসানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্য ব্যাংক যেখানে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়, সেখানে কৃষি ব্যাংক-কে ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করতে হয়। অথচ তাদের আমানত নিতে হয় বেশি সুদে। ব্যাংকটির তহবিল পরিচালন ব্যয়ের চেয়ে ঋণের সুদের হার কম হওয়ায় বছর বছর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এতে কিছু টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে যাচ্ছে। ব্যাংকটিকে বাঁচাতে চাইলে এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিকেবির চিঠিতে বলা হয়েছে, কৃষি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮২ শতাংশ সরাসরি কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত। দেশের কৃষকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কৃষিঋণের ওপর অন্যান্য ব্যাংক ও ঋণ খাতের মতো বাজারভিত্তিক সুদ আরোপ না করে সরকার নির্দেশিত হ্রাসৃকত সুদ হারে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে, যা ব্যাংকটির তহবিল ব্যয়ের চেয়েও কম। আর এ কারণেই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কম সুদে ঋণ দেওয়ার কারণেই কৃষি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হচ্ছে— তেমনটি নয়। ব্যাংকটির সামগ্রিক পারফরমেন্স খারাপ হওয়ার জন্য অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দায়ী। কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে গতবছর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতায় গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তার বিপরীতে কিছু কিছু শাখায় ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ ধরনের ৪৪৭টি ঋণের বিপরীতে বিতরণকৃত অর্থের প্রায় পুরোটাই চলে গেছে কর্মকর্তাদের পকেটে। কৃষি ব্যাংকের লোকাল প্রিন্সিপাল অফিস ও সাভার শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে মনো প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্রের (এলসি) পণ্য ছাড় করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই গ্রাহকের কাছে ব্যাংকের পাওনার বিষয়টি কোনো হিসাবে দেখানো হয়নি। কৃষি ব্যাংকের কক্সবাজার, বনানী করপোরেট শাখাতেও কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সেই ঋণ ফেরত পায়নি ব্যাংকটি। এর বাইরে ভল্টের টাকা ও সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাতের মতো ঘটনাও রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেবির এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনিয়ম কোথায় নেই, সে তুলনায় কৃষি ব্যাংকে বরং কম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা ভুল ধারণা আছে। তারা বলছে, সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করতে পারলে কৃষি ব্যাংক কেন পারে না। কিন্তু ওসব ব্যাংক ২ থেকে ৩ শতাংশ কৃষি ঋণ দেয়। আর আমাদের কৃষিঋণের পরিমাণ প্রায় ৮৪ শতাংশ। ঋণের পার্সেন্টেজ বেশি হওয়ায় আমাদের ক্ষতির পরিমাণও বেশি। এমডি জানান, ব্যাংকটিতে তহবিল পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। আর তারা ঋণ দিচ্ছে ৯ শতাংশ হারে। এ ছাড়া সময়মতো ভর্তুকির টাকা না পাওয়ার কারণেও তাদের মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। ব্যাংকটির পারফরমেন্স ভালো করতে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে এমডি বলেন, আগামী জুন থেকে আমাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে।

  • Courtesy: Bangladesh Protidin/ May 29, 2018