Search

Friday, June 1, 2018

জিয়ার প্রতি এত আক্রোশ কেন?


মিনার রশিদ 



মিনার রশিদ 

বুধবার, মে ৩০, দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব যা জানিয়েছেন তা সত্যিই দু:খ জনক । পরিত্যক্ত কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানির অভাব, গুমোট আবহাওয়া ও নিয়মিত বিদ্যুৎহীনতার কারণে দেশনেত্রীর শ্বাসকষ্ট ও জ্বর লেগেই আছে। প্রতি রাত্রে তার জ্বর আসছে। এটা যে কোনো সুস্থ মানুষের জন্য অত্যন্ত এলার্মিং। জ্বরটা যাচ্ছে না।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার পরিবারের ওপর অবৈধ সরকারের আক্রোশ এত তীব্র কেন? এই প্রশ্নটি প্রায়শই মনের মধ্যে উদয় হয় ।

উত্তর বোধহয় একটাই । শহীদ জিয়া এবং তাঁর পরিবারটি আধিপত্যবাদ ও তাদের এদেশীয় লেন্দুপ দর্জিদের জন্যে সত্যিকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে পড়েছে । এই দেশটিকে সিকিম বানানোর পথে শহীদ জিয়ার স্মৃতি ও রেখে যাওয়া পরিবারটিই প্রধান বাঁধা ।

আজ ৩০ শে মে । আজ থেকে ৩৭ বছর আগে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন জিয়া । কিন্তু জীবনের এই সময়টুকুতে যে কীর্তি রেখে গেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর ।

তাঁর জীবন ও কর্ম একটু অধ্যয়ন করলেই সরকারের গায়ের জ্বালা উপলব্ধি করতে সহজ হবে ।

ইতিহাসের বাকে যেখানেই অন্যদের ব্যর্থতা ফুটে উঠে - সেখানেই তাঁর সফলতা জ্বল জ্বল করে ওঠে । স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লব - সব জায়গাতেই এই ফ্যানোমেনাটি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। 

এদেশে রাজনীতি মানেই ছিল রাজধানীতে বসে বাঘ ভাল্লুক মারার গলাবাজি বা চাপা বাজি । এই চাপাবাজদের জব্দ করতেই তিনি বলেছিলেন, I will make the politics difficult for the politicians। তিনি করেছিলেনও তাই । একজন লোক জোরে হাঁটছেন, পাশে সবাই দৌড়াচ্ছেন । বিভিন্ন আর্কাইভে শহীদ জিয়ার যতগুলো ভিডিও দেখা যায় প্রায় সব জায়গাতেই এই দৃশ্যটি চোখে পড়ে । জিয়া অলস বসে কবিতা আবৃত্তি করছেন কিংবা বসে বসে সিগারেটে সুখ টান দিচ্ছেন- এমন ছবি কোথাও দেখা যায় না । জিয়া মানেই গতি, জিয়া মানেই সামনে এগিয়ে যাওয়া । তার ছবি সে কথাই বলে ।

যে সামরিক শাসন নিয়ে তাকে দোষারূপ করা হয় - তা জারি করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমেদ । তিনি বরং দেড় বছরের মাথায় সেই সামরিক শাসন তুলে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । আজীবন গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রাম করা এক নেতার হাত দিয়ে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয় । অন্যদিকে এক জেনারেলের হাত দিয়ে সেই গণতন্ত্র মুক্তি পায় । এটাও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের কাছে এক চরম বিষ্ময়ের ব্যাপার!

হেনরি কিসিন্জার এই দেশটিকে ৭৪ সালে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে ঠাট্টা করেছিলেন । শহীদ জিয়া সেই তলাবিহীন ঝুড়িকে কয়েক বছরের মধ্যেই খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে তুলেছিলেন । ৭৫ এর পর এক বছরের মধ্যেই খাদ্যের দাম অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিলেন । যে রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল করছে তার শুরুটাও তিনিই করে দিয়ে গেছেন । 

আজকে প্রতিটা ক্ষেত্রে যে সফলতা তার প্রায় প্রতিটির গোড়াপত্তন তিনি করে গেছেন । এমনকি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তাঁর হাত দিয়েই শুরু হয় । আজকের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য । 

তিনি খাল কাটা কর্মসূচী শুরু করেন । নদী খনন ও খাল কাটার মধ্যেই জাতির অস্তিত্ব নির্ভর করছে - সেই ম্যাসেজটিও তিনি রেখে গেছেন ।

তিনি SAARC এর স্বপ্নদ্রষ্টা । ইরাক - ইরান যুদ্ধ বন্ধের মধ্যস্ততাকারী। তাঁর সময়েই বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য পদ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয় জাপানকে টপকিয়ে । ইন্দো-চিন সামরিক কনফ্লিক্টে মালয়শিয়া-বাংলাদেশের যুক্ত ইশতেহার প্রকাশ করা হয় । যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং চীন সফর করেন এবং চীন থেকে সেই সময়ে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা পান । তিনি যখন ভারতে সফরে যান তখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাকে রিসিভ করেন । এসব ক্ষেত্রে তাঁর স্মার্টনেস বিশ্ব পরিসরে বিশেষ সম্মান নিয়ে আসে । 

ফিলিপিনস সফরের সময় তাঁর ছবি দিয়ে ধাতব মুদ্রা ছাপানো হয় । এই ধরণের কোনো সম্মান এদেশের অন্য কোনো সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের কপালে জুটেছে কি না জানা নেই । যাদেরকে বিশ্ব নেতা বা নেত্রী বলে কান গরম করে ফেলা হয় তাদের এরকম ছবি খুব একটা দেখা যায় না । আমার এক বন্ধু শহীদ জিয়ার এমন একটি দুর্লভ ছবি পাঠিয়েছে । পাঠকদের সাথে সেটি শেয়ার করছি ।
তিনি স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষিত এবং প্রফেশনাল সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেন। বামপন্থীদের চরম হঠকারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা তিনিই ফিরিয়ে আনেন । তাঁর এই কন্ট্রিবিউশন সেনাবাহিনী কোনোদিন ভুলতে পারবে না ।

একটি শেষ কথা । একজন মানুষ দশটি ভালো কাজ করলে একটি ভুল করতেই পারে । কারণ তিনি দোষে গুণে মানুষ ছিলেন , ফেরেশতা ছিলেন না । তবে শাসক শ্রেণীকে সমালোচনা করার এই সুযোগটি এই দেশের মানুষকে তিনিই করে দিয়ে গেছেন । এটা কোনো চাটুকারী দাবী নয় - সাপোর্টিং ডকুমেন্ট মজুদ আছে । 

বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবন- সেটাও শহীদ জিয়াই করে দিয়ে গেছেন । তাদের নেত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন । এর পুরস্কার হিসাবে অবশ্য কয়েক দিন পরেই তাকে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে! 

দেশের মানুষ তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানটির এই আত্মত্যাগকে শাহাদত হিসাবে গণ্য করে। পরম করুণাময় যেন দেশের মানুষের মনের এই আকুতিটিকে গ্রহন করেন, তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন । আমিন ।

  • লেখক পলিটিক্যাল এনালিস্ট ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। 

Thursday, May 31, 2018

জোসেফ-বিকাশদের মুক্তি এবং আইনের শাসন

রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ


গোলাম মোর্তোজা



বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দগুলোর অন্যতম ‘সংবিধান’ এবং ‘আইনের শাসন’।

‘সংবিধান মানতে হবে’ ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে’- কথাগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির খুব পরিচিত শব্দ। আইন, আইনের শাসন, আইনের ব্যাখ্যা বা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু কথা।

১. জোসেফ

জোসেফের নাম জানেন না, এমন মানুষ বাংলাদেশে আছেন বলে মনে হয় না। জোসেফ নামে না চিনলেও ‘সন্ত্রাসী জোসেফ’ নামে সবাই চিনবেন। জোসেফ কত মানুষকে হত্যা করেছে, সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়নি, হলেও তাতে জোসেফেরে নাম ছিল না। মামলা যে সব হত্যাকাণ্ডে হয়েছিল, তার একটিতে ফাঁসির রায় হয়েছিল জোসেফের। হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন। আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। বিশেষ বিবেচনায় দণ্ড মওকুফের আবেদন করা হয়েছিল। জোসেফের মায়ের আবেদনে জেল দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। ‘জোসেফ অসুস্থ’- চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যেতে চেয়েছিল। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। গত ২৭ মে অত্যন্ত গোপনে জেল থেকে জোসেফকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার পর সংবাদটি গণমাধ্যম জানতে পেরেছে।

জোসেফের জেল দণ্ড মওকুফ, বিদেশে চলে যাওয়া বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে।’

এত বড় সন্ত্রাসীর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তারও কারণ আছে। বড় কোনো অসুখ ছাড়া টানা ২০ মাস কারাগার থেকে হাসপাতালে এনে এসি কেবিনে রাখা হয়েছিল জোসেফকে। গণমাধ্যম বিশেষ করে দৈনিক প্রথম আলো সংবাদ প্রকাশ করে ঝামেলা করেছিল। জোসেফকে কারাগারে ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল। জোসেফের মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছিল, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে।’

সন্ত্রাসী জোসেফের বড় ভাই হারিস, জোসেফের চেয়েও বড় সন্ত্রাসী। স্বৈরাচার এরশাদের পুরো সময়কালে জাতীয় পার্টির শেল্টারে দোর্দণ্ড প্রতাপে মানুষ হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। ধারণা করা হয় সে এখন ভারতে পালিয়ে আছে। আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপুও সন্ত্রাসী ছিল। ১৯৮৯ সালে সন্ত্রাসীর গুলিতে সে নিহত হয়।

২. বিকাশ

আরেকজন সন্ত্রাসী বিকাশের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা, যেন সৃজনশীল গল্পের চেয়েও চমকপ্রদ।

২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কাশিমপুর কারাগারের গেট দিয়ে বেরিয়ে এলো এক যুবক। চোখে সানগ্লাস। ভোর থেকে তার জন্যে কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছিল চারটি প্রাডো জিপ। ছয়টি মোটরসাইকেল। প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুজন বসা। কালো গ্লাসের জিপে কে বা কারা বা কতজন ছিল, জানা যায়নি। সানগ্লাস পরিহিত যুবক একটি জিপে উঠল। চারটি জিপ, ছয়টি মোটরসাইকেল জিপগুলোর আগে-পিছে। রাস্তা থেকে আরও তিনটি গাড়ি বহরে যোগ দিল। ১৫ বছর জেল খেটে জামিনে যে বেরিয়ে গেল, তার নামই বিকাশ। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বিকাশ।

কয়েকটি তথ্য-

ক. দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেওয়ার আগে জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানাতে হয়। এটাই রীতি। বিকাশের মুক্তির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

খ. সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্তের আগে কারাগার থেকে বন্দি মুক্তি দেয়াটাই রীতি। বিকাশকে ছাড়া হয়েছে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে।

গ. জেল গেটের রিসিপশনে সিসি ক্যামেরা আছে। বিকাশ জেল থেকে বেরিয়েছে, কিন্তু সিসি ক্যামেরায় তা ধারণ করা নেই।

ঘ. একটি সূত্রানুযায়ী, তখন ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আরেকটি সূত্রানুযায়ী, বের হয়ে যাওয়ার পরপরই ওই অংশটুকু মুছে দেয়া হয়।

৩. বিকাশের মুক্তির সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, আদালত জামিন দেওয়ায় বিকাশ মুক্তি পেয়েছে।



সেই সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সঙ্গে কারাগারে পরিচয় হয়েছিল বিকাশের। কারাজীবনের কঠিন সময়ে বিকাশ নানাভাবে সহায়তা করেছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে।

হত্যাসহ ১২টি মামলার ছয়টিতে অব্যাহতি এবং ছয়টিতে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হয় বিকাশ। চলে যায় বিদেশে। বিকাশের ভাই প্রকাশও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। প্রকাশ প্যারিসে থাকে। ধারণা করা হয় বিকাশও এখন প্যারিসে থাকে।

বিকাশের মুক্তির ব্যাখ্যাতেও বলা হয়েছিল, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে।’

৪. ত্বকীর কথা মনে আছে অনেকেরই। নারায়ণগঞ্জের ত্বকী। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাফিউর রাব্বীর সন্তান ত্বকী। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয়েছিল। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে লাশ পাওয়া গিয়েছিল ৮ মার্চ। পুলিশি তদন্তের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছিলেন ত্বকীর বাবা। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। তদন্ত করেও। র‍্যাব তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর এবং তয়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি। সুলতান-শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দেয়। ২০১৪ সালে র‍্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে ১১ জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে আজমেরি ওসমানের নেতৃত্বে। অভিযোগপত্রও চূড়ান্ত হয়েছে। যেকোনো দিন দেওয়া হবে।

র‍্যাব অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছিল। সেই টর্চার সেল থেকে রক্তমাখা শার্ট, লাঠিসহ অনেককিছু উদ্ধার করেছিল।

আজমেরি ওসমান প্রয়াত জাতীয় পার্টির এমপি নাসিম ওসমানের বড় ছেলে। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমান।

২০১৪ সালের মার্চের পর অনেকগুলো মার্চ মাস চলে গেছে। আজমেরি ওসমান কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসেছে। ত্বকীর বাবা-মায়ের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়েছে। অভিযোগপত্রের দেখা মেলেনি।

সব কিছু ‘আইন অনুযায়ী চলছে’ তদন্তও।

৫. সাগর-রুনী হত্যার কত বছর হলো? একবারে উত্তর তার সহকর্মীরাও সম্ভবত দিতে পারবেন না, হিসেব করে বলতে হবে।

মাদকবিরোধী অভিযানে গত ১৬ দিনে ১২২ জন মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে তারা সবাই ‘মাদক চোরাচালানি’। মারা গেছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’। এর মধ্যে আসলে কতজন ‘মাদক চোরাচালানি’ নিরপেক্ষ কোনো অনুসন্ধান এখনও হয়নি। অন্তত দুজনের তথ্য জানা গেছে, কাউন্সিলর একরামুল ও হাবিবুর রহমান মাদক চোরাচালানি ছিল না। তাদের পরিবার অভিযোগ করেছেন, একারামুল প্রতিপক্ষ এবং মোশারফকে সোর্স ভুল তথ্য দিয়ে হত্যা করিয়েছে। অন্য ১২০ জনের মধ্যে অনেকের পক্ষে কথা বলার হয়তো লোকও নেই।

অপরাধী বা মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবস্থা নেবে, সেটাই স্বাভাবিক। ‘যেহেতু এদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না, সে কারণে মানুষ “বন্দুকযুদ্ধে” হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে’- কী অদ্ভুত যুক্তি।

এক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হচ্ছে’।

৬. লক্ষ্মীপুরের তাহেরপুত্র বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড, জেলদণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন আগের রাষ্ট্রপতি। জিন্টুও মানুষ হত্যা করেছিল, বিপ্লবও। আদালতে তা প্রমাণ হয়েছিল।

হত্যার দায়ে দণ্ডিত অপরাধীদের ফাঁসি-জেল দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া দেশেই তো ‘সংবিধান’ ‘আইনের শাসন’ বা ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হচ্ছে’- শব্দগুলো বেশি আলোচিত হওয়ার কথা!

  • The Daily Star Bangla/ May 31,2018 

জনগণের কাছে সরকারের প্রত্যাশা

আনু মুহাম্মদ 

প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার আগে আগে সাংবাদিকরা অভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে হাজির হন— ‘এই বছরের বাজেট থেকে আপনার কী প্রত্যাশা?’ আমার বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখতে ইচ্ছা করছে, ‘জনগণের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?’

বাজেট থেকে আলাদা করে আমাদের কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? অর্থনীতি যে সামগ্রিক পরিকল্পনা, নীতিকাঠামো এবং প্রভাববলয় দিয়ে পরিচালিত হয়, তা অব্যাহত রাখাই প্রতি বছরের বাজেটের কাজ। বাজেট নিজে নিজে কোনো নতুন মোড় নিতে পারে না। কর-শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে যে ওঠানামা হয়, তা এ পরিকল্পনারই অংশ। যেমন— অনেক ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানি করে দেশে উৎপাদন করলে শুল্ক বেশি, চূড়ান্ত পণ্য দেশে আমদানি করলে শুল্ক কম। এটা হঠাৎ করে ঘটে না, ঘটে শিল্পোদ্যোক্তার চেয়ে আমদানিকারকমুখী অর্থনীতি পরিচালনার নীতির প্রকাশ হিসেবে।

যেমন— জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে অপরাধীদের দায়মুক্তি আইন দিয়ে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি, অনিয়ম এবং প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশী প্রকল্প করা হচ্ছে একের পর এক। বাজেট কি এ আইন বাতিল করে পুরো খাতে স্বচ্ছতা আনবে? রামপাল, রূপপুরসহ এসব সর্বনাশা প্রকল্প ও চুক্তি বন্ধ করবে? সরকারের নীতিগত অবস্থানে পরিবর্তন ছাড়া বাজেট এগুলো কিছুই করবে না। বরং বাজেট এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে তার বিধ্বংসী তত্পরতা নিশ্চিত করবে।

বাজেট ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, উন্নয়ন বাজেটে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত প্রথমে যোগাযোগ ও পরিবহন এবং দ্বিতীয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। কোনো সন্দেহ নেই, এ দুটো খাতেই সরকারের অর্থ বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি। এতে কি আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা? অর্থ বরাদ্দ বেশি মানেই যে বেশি উন্নয়ন নয়, তা কাণ্ডজ্ঞান থেকেই বোঝা সম্ভব। কারণ প্রথমত. যে কাজ ১০০ টাকায় করা সম্ভব, তা যদি করা হয় ৫০০ টাকায়, তাহলে বাজেটের আকার বড় হয়, জিডিপিরও বৃদ্ধি ঘটে কিন্তু তা চরম অদক্ষতা এবং/অথবা বড় আকারের দুর্নীতির কথা জানান দেয়। বাংলাদেশ এরই মধ্যে সড়ক-সেতু-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছে। এসব ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো তো বটেই ইউরোপ-আমেরিকার অনেক ব্যয়বহুল অর্থনীতির তুলনায়ও বাংলাদেশে সড়ক সেতু বানানোর খরচ অনেক বেশি। আবার গুণগত মানও যে খারাপ, তা মানুষের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা। তাহলে এই যে বাড়তি বিপুল টাকা, তা যায় কোথায়? সহজেই বোঝা যায়, তা যায় ক্ষমতাবানদের পকেটে, তা দেশের চোরাই অর্থনীতির আকার বাড়ায় আর সম্পদ দেশের বাইরে পাচার হয়। তাহলে বাজেট কী করতে পারে? বাজেট এসব দুর্নীতি-অনিয়মকেই বৈধতা দিতে পারে, সেটাই যে দেবে, তা অর্থমন্ত্রীর কথা থেকে বোঝাই যাচ্ছে।

ব্যাংক খাত নিয়ে বহু অবিশ্বাস্য ঘটনার কিছু কিছু দেশের মানুষ সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের কোষাগার লুণ্ঠন, বহু হাজার কোটি টাকা লোপাটের খবর সবার জানা। এটাও জানা যে, এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। শুধু এসব ব্যাংকই নয়, যেকোনো অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষিত প্রতিষ্ঠান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশে যার নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানেই ফুটা করে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে। অন্য দেশের সংবাদপত্রের খবর থেকে আমরা জেনেছি এ বিষয়, আরো হয়েছে কিনা জানি না। দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ত ভাব বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। অর্থমন্ত্রী মাঝেমধ্যে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার জন্য উচ্চস্বরে কথা বলেন, কিন্তু এ দুর্গ লুণ্ঠনের কারণ অনুসন্ধান, অপরাধীদের পাকড়াও করার ব্যাপারে তার বা সরকারের কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। বরং এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি আড়াল করাতেই তাদের সক্রিয়তা বেশি।

ব্যাংকিং খাতে এসব তত্পরতায় এসব প্রতিষ্ঠান যখন তহবিল সংকটে, তখন সরকার করের আওতা বাড়িয়ে মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়িয়ে সেই টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে এসব ব্যাংকে। তলাবিহীন ঝুড়িতে ক্রমাগত যত টাকা যাবে, তার সবই ফাটা তলা দিয়ে চলে যাবে অন্য কারো পকেটে। সরকারের তাতে কোনো আপত্তি আছে বলে মনে হয় না। বাজেট সেই বরাদ্দই দিতে যাচ্ছে, তাহলে বাজেট আর কী পরিবর্তন করবে?

এ বছরও বলা হবে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। অংকের ফাঁকি অব্যাহত থাকবে। চিকিৎসা খাতেও অনেক সাফল্যের গল্প বলা হবে। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও সরকারের উচ্চপদের ব্যক্তিরা দেশের ভেতর চিকিৎসা করানোর মতো হাসপাতাল তৈরি করতে পারেননি। তারা জনগণের অর্থে মেডিক্যাল চেকআপ করতেও বিদেশে যান।

অর্থশাস্ত্রের গতানুগতিক প্রশিক্ষণে বড় হওয়া অর্থনীতিবিদরা শুধু সংখ্যা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। জিডিপি, বিনিয়োগ; তারা সংখ্যার বাইরে আর কিছু দেখার প্রয়োজন বোধ করেন না। সব সরকারের জন্য সেটাই নিরাপদ। তার ফলে জিডিপি বৃদ্ধি কীভাবে হচ্ছে, বিনিয়োগ কোথায় হচ্ছে, তার ফলাফল বা  প্রভাব কী, তা মনোযোগের বাইরে থাকে। বিভিন্ন প্রকল্পে যদি উচ্চহারে দুর্নীতি হয়, সেসব প্রকল্প যদি দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলেও বাজেটে বড় সংখ্যা দেখা যাবে, জিডিপি বৃদ্ধিতে সরকারি ব্যয় তাই উত্তরোত্তর বাড়ছে। এ বৃদ্ধি সামাল দিতে করের আওতা বাড়ছে। দুটোতেই বাজেটের চেহারা আরো ভালো দেখায়। জনগণ কর দিচ্ছে সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সার্ভিস পেতে। অর্থনীতিবিদরা জিডিপি-কর অনুপাত নিয়ে অনেক কথা বলেন, এবং এ অনুপাত বৃদ্ধি করতে অর্থাৎ আরো কর বাড়াতে সুপারিশও করেন। কিন্তু তাঁরা কর-সার্ভিস অনুপাত, অর্থাৎ কতটা কর দিচ্ছি, তার বিনিময়ে কতটা সার্ভিস পাচ্ছি সেই অনুপাত, কখনো পরীক্ষা করেন না। আমরাই ভ্যাটসহ নানা মাধ্যমে সরকারকে কর দিই, সরকারের টাকা বলে আলাদা কিছু নেই।

সরকার সেই টাকাতেই সরকার চালায়, সরকারের সব প্রতিষ্ঠান চলে তা দিয়েই। ঋণ দেয়ার কারণে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ নানা সংস্থা প্রতিনিয়ত ছড়ি চালায়, তাদের শর্ত মেনে নিয়ে কত কিছু করে সরকার, জনগণের ওপর কত বোঝা বসায়। অথচ যারা মূল অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করে, সেই জনগণের মতামতের কোনো গুরুত্ব থাকে না। জনগণের টাকা, কিন্তু সরকারি শানশওকতে খরচ হয় সেই টাকা নির্দ্বিধায়, সর্বজনের অর্থে প্রতিপালিত পুলিশ শ্রমজীবী অনাহারী মানুষের ওপর নির্যাতন করে, ক্রসফায়ার, আটক বাণিজ্য নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকলেও জনগণের দিক থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায় থাকে না। ভুল বা জনবিধ্বংসী প্রকল্প নিয়ে জনমত বিবেচনারও প্রয়োজন মনে করে না সরকার। জনমত নিয়ে সরকারের বিন্দুমাত্র দায়বোধ থাকলে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প অনেক আগেই বাতিল হতো।

এসব দেখে-শুনে আমার তাই প্রশ্ন, সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা করার যেখানে কোনো সুযোগই নেই, সেখানে জনগণের কাছে কী প্রত্যাশা নিয়ে সরকার তার যা খুশি তাই কাজ চালাচ্ছে? জনগণ সম্পর্কে সরকার কী মনে করে? কী ধারণা থাকলে সরকার এভাবে কাজ করতে পারে? একটা তালিকার কয়েকটি পয়েন্ট হতে পারে এ রকম:

প্রতিদিন শহরের ভেতর কিংবা মহাসড়কে ভয়াবহ ভোগান্তিতেও জনগণ মন খারাপ করবে না, রাগ করবে না। যতই হাত-পা ভাঙুক, কষ্ট হোক, স্কুলে শিশুদের, হাসপাতালে রোগীদের যেতে যতই সমস্যা হোক, মানুষ মুগ্ধ হয়ে বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকবে, টিভি পত্রিকার বিজ্ঞাপন ও বাণীর কথা মনে রাখবে। ভাবতে থাকবে, অসুবিধা কী? পদ্মা সেতু তো হচ্ছে।

একটু বৃষ্টিতে ঢাকা শহর অচল হয়ে গেলে, ড্রেন উপচে পড়লে, গ্যাস-পানি সংকট চলতে থাকলেও মানুষ বিরক্ত হবে না। তাঁরা বরং খুশি হয়ে দেখবে সরকার এবং দক্ষিণ মেয়রের সাফল্য নিয়ে শহরজুড়ে প্রচারণা।

সার্ভিস না থাকলেও কর যতই বাড়ানো হোক, মানুষ তা হাসিমুখে পরিশোধ করবে, কারণ দেশে উন্নয়ন চলছে।

ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার কারসাজি, সম্পদ পাচার হলেও মানুষ খুশি থাকবে এটা ভেবে যে, এ লুণ্ঠনকারীরা নিশ্চয়ই দেশের উন্নয়ন করছে!

নিয়োগ বাণিজ্য আর আটক বাণিজ্যে বিপর্যস্ত হলেও মানুষ খুশি থাকবে, কারণ দেশে উন্নয়ন চলছে। সড়ক দুর্ঘটনা, ক্রসফায়ার, সরকারি দলের লোকজনদের দখল-সন্ত্রাস দেখেও মানুষ ভাববে, উন্নয়ন চাইলে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে!

রামপাল প্রকল্পসহ দেশের রক্ষাপ্রাচীর সুন্দরবন বিনাশের সব আয়োজনে, নদী-পাহাড় দখলে মানুষ খুশি থাকবে। জনগণকে না জানিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে অচিন্তনীয় মাত্রার বিপজ্জনক, বিশাল ঋণনির্ভর বোঝা তৈরি করতে থাকলেও মানুষ খুশি থাকবে। কারণ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। জনগণের প্রতি সরকারের এ প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হচ্ছে/হবে, সেটা চাইলে সরকার নিজেই জানতে পারবে।

  • লেখক: অর্থনীতিবিদ/ অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  • Courtesy: BanikBarta /May 31, 2018

স্বপ্নপূরণের বাজেটে অপ্রাপ্তিই বেশি

অর্থমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি

গত সোমবার বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত ‘স্বপ্নপূরণের বাজেট, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির রূপরেখা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বাজেট বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে যেসব কথা শোনালেন, তার প্রায় সবটাই হতাশাজনক। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যটি খুবই উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন, আমলাদের অসহযোগিতার কারণেই বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। আগে বাজেটের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হতো, এখন সেটি নেমে ৮০ শতাংশে এসেছে। 

অর্থমন্ত্রী প্রতিবছর বিরাট অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন করেন। কিন্তু অর্থবছরের শেষে গিয়ে দেখা যায়, সেই বাজেটের অনেকাংশই বাস্তবায়িত হয় না। অনেক সময় বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত পাঠাতে হয়। বাজেট বাস্তবায়ন একটি সমন্বিত প্রয়াস। সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাজেট বাস্তবায়নে গতি আনতে অর্থমন্ত্রী যে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকদের (পিডি) নিয়ে একটি পুল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, গত দুই বছরেও তা কার্যকর করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী এ জন্য আমলাদের দায়ী করেছেন। তার পেছনে হয়তো কারণও আছে; বাজেট বাস্তবায়ন যত প্রলম্বিত হবে ততই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পোয়াবারো। প্রকল্পের মেয়াদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ানো যায়। দেশি-বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় তো বাড়ছেই। সেই সঙ্গে ছোট প্রকল্পগুলোর ব্যয়ও বেড়ে চলেছে। 

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে যে কঠিন সত্যটি বেরিয়ে এসেছে, তা হলো সরকারের নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিরাট ফারাক আছে। এই ফারাকটি ঘোচানোর দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর পরই অর্থমন্ত্রীর স্থান। তিনিই যদি বাজেট বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমলাদের কথা না শোনাতে পারেন, অন্য মন্ত্রীদের অবস্থা কী, তা সহজেই অনুমান করা যায়। বাজেট বাস্তবায়নের ধীরগতি ও কাজের মান নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তখন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হয়তো অর্থমন্ত্রীকে এভাবে আক্ষেপ করতে হতো না।

যেকোনো দেশের প্রশাসন পরিচালনায় পুরস্কার ও তিরস্কারের বিধান থাকতে হবে। যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় বসাতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতির জন্য যেসব সরকারি কর্মকর্তা দায়ী, অর্থমন্ত্রীর উচিত হবে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। সেই সঙ্গে আরও একটি বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। 

সংসদে বাজেট অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের জন্য বরাদ্দ অর্থ ছাড় হয়, সেই নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ করা হয়, অর্থ ছাড় না হওয়ার কারণে তারা কাজ শুরু করতে পারছে না। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে কাজ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু অর্থই যদি ছাড় না হয় তারা কাজ শুরু করবে কীভাবে? সমস্যা দুদিক থেকেই আছে। 

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচনের হারও কমে যাওয়ার যে তথ্য দিয়েছেন, সেটাও উদ্বেগজনক। সরকার প্রথম দিকে দারিদ্র্য বিমোচন অন্যতম অগ্রাধিকার কর্মসূচি ঘোষণা করলেও হালে মনোযোগ কমেছে বলেই ধারণা করি। একই কথা প্রযোজ্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিষয়েও। 

সব মিলিয়ে সরকারের শেষ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে, সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। গত ছয় বছরে বাজেটের আকার ছয় গুণ বেড়েছে। এটি আশার দিক। কিন্তু সেই বাজেট যদি বাস্তবায়নই না হয়, তাহলে বড় অঙ্কের বাজেটের সার্থকতা কী।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/সম্পাদকীয়/ মে ৩১,২০১৮


সৌরবিদ্যুৎও আমদানির উদ্দেশ্য কী?

মওদুদ রহমান


ভারত থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে তৈরি হতে থাকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হবে কি না এবং সেই সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে কি না, তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কোনো কিছুর ঘাটতি পূরণে আমদানিই একমাত্র সমাধান নয়, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমাধান তালিকায় এটি হচ্ছে সর্বশেষ এক উপায়। সংকটের সমাধান হিসেবে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে সহজ, বিপরীতে দূরদর্শী নীতির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। আমদানির ফরমাশ পেলেই চলে আসে ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’, বেড়ে যায় দাম। আর নিজস্ব উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তুললে গড়ে ওঠে গোটা ইন্ডাস্ট্রি, সেই সঙ্গে কমতে থাকে দাম।

মাত্র দেড় দশকেরও কম সময়ে সারা দেশে ৪৫ লাখেরও বেশি সোলার হোম সিস্টেমের ব্যবহার শুরু করার নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যখন এই সিস্টেমের দাম ছিল চড়া, ব্যাটারির মেয়াদ ছিল ক্ষণস্থায়ী, তখনো মানুষ রাতের বেলা মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনে সোলার হোম সিস্টেম কিনতে পয়সা খরচ করেছে। আর এখন যখন বাজারে দীর্ঘস্থায়ী লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চলে এসেছে, প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুতের দাম গত ৭ বছরে ৭২ শতাংশ কমে গেছে, ভারতে মাত্র সাড়ে তিন টাকা খরচে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড তৈরি হয়েছে, তখন ঠিক কী কারণে বাংলাদেশে নিজস্ব উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা না করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে হবে, সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন।

গত মাসে নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানিবিষয়ক সভায় অংশগ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ভারত থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন (ঢাকা ট্রিবিউন, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮)। কিন্তু এই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সস্তা বিকল্প উপায় খুঁজে দেখা হয়েছে কি না, কিংবা এটি বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদন আর বিতরণ ব্যবসার ক্ষতি করবে কি না বা আমদানি করা বিদ্যুতের বাড়তি দাম পরিশোধের কারণে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে কি না, সেসব প্রশ্ন এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত।

অবশ্য আমদানির এই হুজুগ হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি। এর পেছনে বিদ্যুৎ খাতের সর্বশেষ নীতিমালার (পিএসএমপি-২০১৬) জোরালো সমর্থন রয়েছে। এই নীতিমালায় কমতে থাকা সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের দাম ভবিষ্যতে আরও কমে যাওয়ার হিসাব উল্লেখ করা আছে। এরপরও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে কী কারণে মাত্র ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটার ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

দেশ-বিদেশের প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলোয় সৌর, বায়ু ও বর্জ্যবিদ্যুৎ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনার দিকগুলো উন্মোচিত হচ্ছে। সেহেতু দেশের ভেতরে উদ্যোগের পরিধি না বাড়িয়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের গুজরাট ও রাজস্থান থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির তোড়জোড়ে লাভের গুড় শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাতে জুটবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সর্বোচ্চ সূর্যালোকপ্রাপ্তির ক্রমতালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। এত দিন পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জমির পরিমাণকে বড় বাঁধা হিসেবে দেখে আসা হলেও বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় সোলার শেয়ারিং, মিনি গ্রিড, মাইক্রো গ্রিড এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় কৃষিজমি নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগই এখন আর নেই। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসারে প্রকৃতই কত জমি প্রয়োজন হবে, সে হিসাব করার পাশাপাশি রেলওয়ের কী পরিমাণ জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে, নদী ভরাট করে কী পরিমাণ জমিতে দালানকোঠা উঠেছে, রাষ্ট্রের কী পরিমাণ জমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির দলিলে উঠে গেছে, সে হিসাবও করা জরুরি। যেখানে বাংলাদেশের শুধু অকৃষি খাসজমি ব্যবহার করেই কমপক্ষে পাঁচ লাখ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব, সেখানে কোনো যুক্তিতে ভারত থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, তা খুঁজে দেখা জরুরি।

ভারত ২০২২ সালের মধ্যেই ১ লাখ ৬০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ স্থাপন করার নীতি ঘোষণা করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সস্তা বিদ্যুতের কারণে এরই মাঝে সেখানে ১৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হয়েছে (দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, ২৩ মে, ২০১৭)। চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও সর্বোচ্চটুকু উৎপাদন করতে পারছে না আর অপচয় কমাতে ২০২৭ সালের মধ্যেই ৫০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা (ফোর্বস, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮)। এভাবে গড়ে উঠতে থাকা নিজস্ব এই বিশাল ইন্ডাস্ট্রির চুঁইয়ে পড়া বাড়তি উৎপাদন বিক্রি করতে কে না চাইবে! কিন্তু বাংলাদেশ যদি এই আমদানির বাজার থেকে নিজেকে উন্মুক্ত করে, তবে নিশ্চিতভাবেই কমতে থাকবে নিজস্ব গবেষণা, উদ্ভাবন আর সস্তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ।

এসব কারণেই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের উপায় হিসেবে সম্ভাবনার জায়গাগুলোর দিকে প্রথমে নজর দিতে হবে। আলাপ-আলোচনা আর গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে হবে। সস্তা ও পরিবেশসম্মত উপায়ে বিদ্যুৎ পেতে চাইলে আমদানির টোটকা সমাধানে আখেরে কোনো লাভ হবে না।

  • মওদুদ রহমান: প্রকৌশলী, গবেষক। 
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 

‘কী কথা তাহার সাথে?’

মহিউদ্দিন আহমদ

সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। এতে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ভূমিধস জয় পেয়েছিলেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ঢাকায় মন্ত্রিসভা গঠিত হলো। তারপর তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। ৪ মে (১৯৫৪) কলকাতায় এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বলেন, বাংলা ভাগ হয়েছে, কিন্তু বাঙালির সংস্কৃতি আর বাঙালিত্বকে কোনো শক্তিই কোনো দিন ভাগ করতে পারবে না। দুই বাংলার বাঙালি চিরকাল বাঙালিই থাকবে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর সংবাদদাতা কালাহান শেরেবাংলার একটা সাক্ষাৎকার নেন এবং তাঁর প্রতিবেদনে শেরেবাংলার বক্তব্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের’ ইঙ্গিতের কথা বলা হয়। এই সাক্ষাৎকার ছাপা হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে

হইচই পড়ে যায়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ‘দেশদ্রোহী’ ফজলুল হককে বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন চালু করা হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য ফজলুল হক করাচি যান। সঙ্গে যান তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান, নান্না মিয়া, মোহন মিয়া ও আশরাফউদ্দিন চৌধুরী।

২৯ মে ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান ও নান্না মিয়া করাচি থেকে ঢাকার পথে রওনা হন। পরদিন ঢাকায় পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁরা আর সরকারে নেই। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অস্থায়ী সংবিধানের ৯ (ক) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় গভর্নরের শাসন জারি করেছে। শেখ মুজিবসহ পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের ৩৫ জন সদস্য এবং হাজারের ওপর লোক গ্রেপ্তার হন। ফজলুল হককে নিজ বাড়িতে অন্তরীণ করা হয়। পুলিশ যুক্তফ্রন্টের ৫৬ নম্বর সিমসন রোডের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় (সূত্র: মহিউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০, প্রথমা প্রকাশন)।

যে সময়ের কথা বলছি, তখন ভারত ছিল বৈরী দেশ। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে খোলামেলাভাবে সৌহার্দ্যের কথা বলা ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের চোখে ভীষণ খারাপ কাজ। 

ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। পূর্ব বাংলা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। পাকিস্তান এখন বৈরী দেশ, ভারত আমাদের পরম মিত্র। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভারতে দুদিনের সফরে গিয়ে দুটি ভাষণ দিয়েছেন। তিনি দুই দেশের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা বারবার উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, এ বন্ধন এবং বন্ধুত্ব দিন দিন মজবুত হচ্ছে এবং কেউ এই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না। এই বন্ধনের প্রতীক হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁরা আমাদের সবার, সব বাঙালির সম্পদ।

৬৪ বছর আগে শেরেবাংলা যে কথা বলে ‘শাস্তি’ পেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় তা-ই ঘুরেফিরে এসেছে। তাঁর কথার মধ্যে একটি সুর ছিল স্পষ্ট-আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলছি এবং আরও যেসব সমস্যা আছে, তারও শান্তিপূর্ণভাবে সুরাহা হবে।

প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের আর্থিক অনুদানে তৈরি ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করতে। পরদিন তিনি আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট খেতাব পান। প্রথমটির সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জড়িত। সে ক্ষেত্রে এটাকে প্রধানমন্ত্রীর সাংস্কৃতিক সফরও বলা যায়। দ্বিতীয়টি ছিল একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। তিনি বলেছেন, এটি তিনি সব বাঙালির জন্য উৎসর্গ করেছেন। এটি তাঁর বদান্যতা, আমরা সবাই খুশি।

বিদেশে আমাদের অনেক স্থাপনা তৈরি হয়। এসব উদ্বোধনের জন্য সরকারপ্রধানের যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গেলেন। এটি তাঁর রাষ্ট্রীয় সফরও ছিল না। তবে তিনি যাওয়ায় সফরটি গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং দিল্লি থেকে ছুটে এলেন শান্তিনিকেতনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করার জন্য। তাঁরা দুজন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও উপস্থিত ছিলেন। মোদি ছিলেন পদাধিকারবলে, আচার্য হিসেবে। শেখ হাসিনা ছিলেন বিশেষ সম্মানিত অতিথি। তাঁদের দুজনের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু একটি উদ্বোধনপর্বকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘হাই প্রোফাইল’ উপস্থিতিকে হালকা করে দেখা যায় না।

আমাদের দুই দেশের মধ্যে হাজারো সমস্যা, অনেক সমস্যা মিটে গেছে। অনেকগুলো এখনো ঝুলে আছে। সমস্যার সমাধানে ভারতের আন্তরিকতা নিয়ে বাংলাদেশে অনেক প্রশ্ন আছে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হলো স্থলসীমানা নিয়ে। আমাদের জাতীয় সংসদ ওই বছরেই চুক্তিটি অনুমোদন করে। ভারতের পার্লামেন্ট এটা অনুমোদন করতে সময় নিয়েছে চার দশকেরও বেশি। এর মধ্যে লাখো ছিটমহলবাসী অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিরোধ ছিল। আলোচনা করে সেটা মেটানো যায়নি। শেষমেশ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ফোরামে মামলা করে সীমানা নির্ধারণ করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার এবং ভারতের আচরণ ও ভূমিকা ছিল একই রকম।

আমাদের ৫৪টা নদীর প্রবাহ ও পানি ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা আছে। গঙ্গা নিয়ে টালবাহানা হয়েছে অনেক। দেব গৌড়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আগ্রহ ও সহানুভূতিশীল ভূমিকার কারণে ১৯৯৭ সালে গঙ্গার পানির ভাগাভাগি নিয়ে একটি মধ্যমেয়াদি চুক্তি করা সম্ভব হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, গঙ্গার পথ ধরে অন্য নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা করা সম্ভব হবে। কিন্তু তিস্তায় গিয়ে আমরা হোঁচট খেলাম। এখানে দিল্লির সঙ্গে কলকাতার বোঝাপড়ার সমস্যা আছে। সমাধান আমাদের হাতে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই চাইছেন, এর একটি সুরাহা হোক। কিন্তু হচ্ছে না।

তিস্তা নিয়ে এই সফরে যে কিছু হবে না, তা জানাই ছিল। হুটহাট করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কিংবা স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয় না। কিন্তু শুধু সৌজন্যের খাতিরে দুই প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে বসেছিলেন, এটি মনে হয় না। নিশ্চয়ই তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।

অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এমনকি কোনো সম্মেলনের করিডরে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলেও অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা যায়। চীন-মার্কিন সম্পর্কের বরফ গলা শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে চীনের একটি টেবিল টেনিস দলের সফরকে কেন্দ্র করে। যা পিংপং ডিপ্লোম্যাসি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রীদের মেয়াদেই তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। এখন তো বেলা পশ্চিমে হেলেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান মেয়াদ বড়জোর আর সাত মাস। নরেন্দ্র মোদিকেও আগামী বছর নির্বাচনযুদ্ধে যেতে হবে। আমরা আশা করছি, তাঁদের মেয়াদেই হয়তো সমস্যার সুরাহা হবে, বর্তমান মেয়াদে না হলেও পরবর্তী মেয়াদে। পরবর্তী মেয়াদেও যে তাঁরা থাকছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট আস্থাশীল।

প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা খবর ছাপা হয়েছে—হাসিনা ‘প্রতিদান’ চান মোদির কাছে। তিনি কী চেয়েছেন বা আদৌ চেয়েছেন কি না, তা তিনিই জানেন। মোদির সঙ্গে তাঁর ৩০ মিনিটের ‘একান্ত বৈঠকে’ তাঁরা কী আলোচনা করেছেন, তাঁরা সেটি না জানালে আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না। সফরের আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, মোদি চাইলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ইঙ্গিতটি স্পষ্ট।

আমাদের নির্বাচন হবে এ বছরের শেষে। আমাদের নির্বাচনে ভারতের একটা স্টেক বা ভূমিকা থাকে, এটা সবাই জানি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের প্রকাশ্য দৌড়ঝাঁপ আমরা দেখেছি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ বিদেশিরাই ঠিক করে দেন, এখানে কে জিতবে, কে হারবে।

হঠাৎ মনে পড়ে গেল জীবনানন্দ দাশের আকাশলীনা কবিতার একটি লাইন-কী কথা তাহার সাথে? একান্ত বৈঠকে কি তাঁরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন? গুঞ্জন আছে এ নিয়ে এবং ক্রমেই তা ডালপালা মেলছে।

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 

এক কদম পিছু হটল নির্বাচন কমিশন

সিটি নির্বাচন বিধিমালা

সমালোচনার মুখে কিছুটা পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব সাংসদকে প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে বিধিমালা সংশোধন অনুমোদন করার পাঁচ দিনের মাথায় ইসি বলছে, স্থানীয় সাংসদেরা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, তবে অন্য সাংসদেরা পারবেন।
মঙ্গলবার ইসির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ইসির নতুন এই অবস্থানের কথা জানান। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া সিইসি ও আরেক কমিশনারের কথায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উঠে আসে।

কমিশন কবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সিইসির বক্তব্যে পরিষ্কার হয়নি। কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ইসির বৈঠকেও এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিইসির বক্তব্যের দুই ঘণ্টা পরও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাননি। তাঁরা তখন পর্যন্ত জানেন, সব সাংসদ প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে গতকাল পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রস্তুত হয়নি। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের দাবির মুখে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধনী অনুমোদন করেছিল ইসি। সেদিন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, সব সাংসদই প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

ইসির এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনা তৈরি হয়। এর মধ্যে গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, পর্যায়ক্রমে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করা হবে। তবে স্থানীয় সাংসদেরা (যে এলাকায় নির্বাচন হবে সে এলাকার সাংসদ) প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। বাকি সব সাংসদ অংশ নিতে পারবেন। তবে স্থানীয় সাংসদেরা তাঁর এলাকায় থাকতে পারবেন।

সমালোচনার মুখে ইসি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল সিইসি বলেন, তাঁরা পুনর্বিবেচনা করবেন না। ১৩ জুনের আগে সংশোধনী চূড়ান্ত হলে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে সাংসদেরা প্রচারের সুযোগ পাবেন। না হলে নয়।

সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সিইসি বলেন, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়। তাই দলীয় কর্মীদের অংশগ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে। সংবিধানের ৩৬-৩৭ অনুচ্ছেদে ‘ফ্রিডম অব মুভমেন্ট, ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রিডম অব অ্যাসেম্বলি’ দেওয়া আছে। একজন জনপ্রতিনিধি কোনো মিটিং বা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, এটা ইসির কাছে সঠিক মনে হয়নি। সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সংসদ সদস্যরা সরকারি সুবিধাভোগী নন। তাঁদের দপ্তর নেই। নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার তাঁদের সুযোগ নেই বলে মনে করেন সিইসি।

তাহলে স্থানীয় সাংসদেরা কেন সাংবিধানিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও শেষ করতে পারেননি সিইসি। এ সময় তাঁর পাশে থাকা আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সাংসদের কিছু প্রভাব বিস্তার করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর হাতে কিছু ত্রাণ, অনুদান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি কাজ করেন। সে জন্য তাঁরা সুপারিশ করেছেন যে স্থানীয় সাংসদ প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

কমিশনের এই সিদ্ধান্তে একজন কমিশনার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, একজন নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন, বাকি চারজন পক্ষে আছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সরকারের চাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ইসিকে বলেছিল। ইসি দেখেছে যে এটা করা যেতে পারে। অন্য কোনো দল যদি এই প্রস্তাব করত, তাহলেও ইসি এভাবেই চিন্তা করত।

কিন্তু খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে বিএনপি পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। তা আমলে নেওয়া হয়নি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপির বিষয় না। পুলিশ কমিশনার কোথায়, কে থাকবে, না থাকবে বিএনপি আপত্তি করতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে খুলনার পুলিশ কমিশনারকে নির্বাচনের আগে বদলি করা সমীচীন হবে না।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 


Two dozen China-funded projects: Progress belies expectations

Mir Mostafizur Rahaman


Due to the bureaucratic tangles, more than two dozen China-funded projects are not progressing at a satisfactory pace.
So far, the disbursement has been made against only two projects.

The projects include the construction of a tunnel under the Karanafuli River worth US$705.80 million and the development of ICT network (Phase -2) worth $156.56 million.

Officials blamed the procedural complications and the long process of negotiations for the delay in loan disbursement.

"We are trying our best to expedite the China-funded projects. These were signed during the visit of President Xi Jinping to Bangladesh," Chinese ambassador to Bangladesh Zhang Zuo told the FE recently.

"My main priority is to speed up the entire exercise for implementation of these projects," he said.

A senior official at the Economic Relations Division told the FE on Wednesday that both sides were sincere about implementing these projects quickly. But there were some procedural complexities.

For example, for loan approval, the division needs the greenlight from both the Chinese Commerce Ministry and the EXIM Bank.

Previously, the approval from only EXIM Bank was required. The loan disbursement process takes additional two or three months due to the new system.

Recently, a loan agreement was signed for the $3.1 billion Padma Bridge rail link project. Out of the remaining 24 projects, necessary preparations for signing loan agreements have been completed for six.

These include $ 1.6 billion power system network strengthening project, $1.3 billion power grid strengthening project, $1.9 billion Dhaka-Ashulia elevated expressway project, $ 231 million modernisation of telecom network project, $280 million China Economic Zone project and the $125 million project for establishing six TV stations.

The progress of 10 other projects is slow and many of them are at the negotiation stage.

Among them are $500 million single point mooring project, $467 million replacement of five million electro meter project, $ 256.41 million extension of underground mining project, $521 million pre-payment metering project, $200 million project for setting up inland container terminal at Dhirasram.

The other projects include $230 million for the replacement of overloaded transformer, $150 million water supply and solid waste management, and $ 500 million project for modernisation of rural and urban lives through ICT.

The remaining eight projects are at an advanced stage and the loan agreements for those will be signed soon, ERD officials said.

Talking about the situation, an official of the economic wing of the Chinese embassy said that they were taking all-out efforts to ensure the projects would be implemented as soon as possible.

"Yes, there are procedural complexities on both sides but we are working to resolve this," Li Gunagjun, the economic and commercial counsellor of the embassy, said.

  • Courtesy: The Financial Express/May 31, 2018

Drug purge on, so is killing

A record 14 killed in a single day; ASK decries shootout spree


A record 14 people were killed in so-called shootouts in a single day yesterday, taking the tally of those killed in such incidents to 122, amid the countrywide anti-narcotics drive which has been going on for the last 16 days.

The “gunfights” continue amid growing criticism and concern from rights bodies, opposition leaders and foreign diplomats over the “extrajudicial killings”.

The ongoing drive already became the bloodiest anti-crime drive with death tolls surpassing that of the 2002 Operation Clean Heart (57 deaths) or even the anti-militant drive after the 2016 Gulshan attack (80 deaths).

Yesterday, nine were killed in “gunfights” with police and Rab while five others between rival gangs. All of the deceased were listed drug dealers, according to law enforcers. The Daily Star could not independently verify their claims. 

Three of 14 were killed in Dhaka while one each in Cox's Bazar, Chittagong, Chuadanga, Comilla, Sirajganj and Narail. The other five were killed in so-called infightings in Magura and Jessore's Benapole, our correspondents reported quoting police and Rab officials.

During the drives, the officials claimed to have recovered a huge quantity of drugs.

Rights body Ain o Salish Kendra (ASK) yesterday again expressed concern over the “extrajudicial killings” and condemned the shootout spree. Citing media reports, it said 119 people have been killed in so-called gunfights and around 10,000 people have been apprehended during the ongoing clampdown.

“The deaths of such a huge number of people in such a short span of time are not acceptable,” the ASK said in a press release. As per the constitution and international human rights charters, every citizen is entitled to justice. Therefore, the offenders must be tried through the legal process but not by law enforcement agencies, the release added.

Earlier, different rights activists and political leaders criticised the deaths, saying “killing could never be a solution to ending crimes”. Recently, diplomats stationed in Dhaka also expressed concern over the “extrajudicial” killings.

During the nationwide drive, law enforcers have arrested around 11,000 people over their alleged involvement in drug peddling while mobile courts have jailed and fined at least 3,547 others.

They also claimed to have recovered over 25.41 lakh yaba tablets, 26.5kgs of heroin and over 23,000 bottles of phensedyl. 

  • Courtesy: The Daily Star/ May 31, 2018

President pardons top terror Joseph

The convicted killer leaves country


Tofayel Ahmed Joseph, one of the top criminals in the police list of the 1990s, has been “secretly” freed from jail after a presidential clemency that cut short his life sentence for murder.
Joseph, brother of a former director general of Border Guard Bangladesh, on Sunday left Dhaka Medical College Hospital, where he was “being treated”.

“The president pardoned him. We released him upon receiving the order,” Jahangir Kabir, senior jail superintendent of Dhaka Central Jail in Keraniganj, told The Daily Star yesterday.

While his whereabouts are not known, Home Minister Asaduzzaman Khan yesterday told reporters that Joseph was supposed to leave the country for medical treatment.

In December 2012, another infamous criminal Bikash Kumar Biswas got out of Kashimpur Jail-2 on bail and fled the country.

Law enforcers believe he runs organised crime rackets from abroad. The home minister yesterday seemed to know little about the matter.

“He applied mentioning that he was very ill. About one to one and a half years of his sentence remains. He filed a mercy petition. The honourable president must have granted the petition.

“The president permitted him to be treated abroad. I know this much,” he told reporters at his secretariat office.

Asked for comment, noted human rights activist Sultana Kamal said, “It falls under the purview of the president's powers. We can only hope that he took the decision upon much consideration.”

She also hoped that the presidential clemency would bring a positive change in Joseph and prevent him from causing harm to anyone in future.

A jail source said the process of his release apparently began on March 31 when he was shifted to a cabin on the 9th floor of the new building of the DMCH.

No prisoner without a major disease is kept there. Prisoners are usually kept at the Cabin Block on the second floor, the officer added. “It has been done to free him secretly and to dodge the law enforcement and intelligence agencies,” he said, seeking anonymity.

A Dhaka court on April 25, 2004, sentenced Joseph to death for killing Freedom Party leader Mostafizur Rahman Mostafa in 1996. Joseph's elder brothers Haris Ahmed and Anis Ahmed were also given life sentence for the murder. Haris and Anis remain absconding.

The verdict was upheld by the High Court.

On December 9, 2015, the Supreme Court commuted the death sentence of Joseph to life sentence.

Joseph was accused in 10 other cases of extortion, and possession of illegal firearms. A lawyer for Joseph in 2015 said his client served over 18 years in jail and he had been in the condemned cell of Dhaka central jail for over 10 years.

The lawyer also said a life sentence meant 30 years in prison as per the jail code and the period had been reduced considering the convict's good behaviour in prison.

Jail officials said the process of presidential clemency for Joseph started on June 7, 2016 when his mother Renuja Begum applied to the home ministry for commuting Joseph's sentence. Two weeks later, the appeal was sent to the law ministry for opinion.

Sources in the jail said Joseph was treated well inside the prison. He had stayed comfortably at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University (BSMMU) hospital for “back pain”. It was reported in newspapers that he spent his hospital days gossiping with friends.

Joseph was a Chhatra League leader of Mohammadpur. He entered politics under the guidance of his elder brother Haris Ahmed. He later joined the infamous Subrata Bain's gang known as Seven Star. He exerted his power in the city and became one of the top criminals of the country.

Soon after the general elections in 2001, the BNP-led government announced a list of 23 most wanted criminals and a reward ranging between Tk 50,000 – 100,000 for each of their arrest.

  • Courtesy: The Daily Star /May 31, 2018