মিনার রশিদ
মিনার রশিদ |
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার পরিবারের ওপর অবৈধ সরকারের আক্রোশ এত তীব্র কেন? এই প্রশ্নটি প্রায়শই মনের মধ্যে উদয় হয় ।
উত্তর বোধহয় একটাই । শহীদ জিয়া এবং তাঁর পরিবারটি আধিপত্যবাদ ও তাদের এদেশীয় লেন্দুপ দর্জিদের জন্যে সত্যিকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে পড়েছে । এই দেশটিকে সিকিম বানানোর পথে শহীদ জিয়ার স্মৃতি ও রেখে যাওয়া পরিবারটিই প্রধান বাঁধা ।
আজ ৩০ শে মে । আজ থেকে ৩৭ বছর আগে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন জিয়া । কিন্তু জীবনের এই সময়টুকুতে যে কীর্তি রেখে গেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর ।
তাঁর জীবন ও কর্ম একটু অধ্যয়ন করলেই সরকারের গায়ের জ্বালা উপলব্ধি করতে সহজ হবে ।
ইতিহাসের বাকে যেখানেই অন্যদের ব্যর্থতা ফুটে উঠে - সেখানেই তাঁর সফলতা জ্বল জ্বল করে ওঠে । স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লব - সব জায়গাতেই এই ফ্যানোমেনাটি স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
এদেশে রাজনীতি মানেই ছিল রাজধানীতে বসে বাঘ ভাল্লুক মারার গলাবাজি বা চাপা বাজি । এই চাপাবাজদের জব্দ করতেই তিনি বলেছিলেন, I will make the politics difficult for the politicians। তিনি করেছিলেনও তাই । একজন লোক জোরে হাঁটছেন, পাশে সবাই দৌড়াচ্ছেন । বিভিন্ন আর্কাইভে শহীদ জিয়ার যতগুলো ভিডিও দেখা যায় প্রায় সব জায়গাতেই এই দৃশ্যটি চোখে পড়ে । জিয়া অলস বসে কবিতা আবৃত্তি করছেন কিংবা বসে বসে সিগারেটে সুখ টান দিচ্ছেন- এমন ছবি কোথাও দেখা যায় না । জিয়া মানেই গতি, জিয়া মানেই সামনে এগিয়ে যাওয়া । তার ছবি সে কথাই বলে ।
যে সামরিক শাসন নিয়ে তাকে দোষারূপ করা হয় - তা জারি করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমেদ । তিনি বরং দেড় বছরের মাথায় সেই সামরিক শাসন তুলে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । আজীবন গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রাম করা এক নেতার হাত দিয়ে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয় । অন্যদিকে এক জেনারেলের হাত দিয়ে সেই গণতন্ত্র মুক্তি পায় । এটাও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের কাছে এক চরম বিষ্ময়ের ব্যাপার!
হেনরি কিসিন্জার এই দেশটিকে ৭৪ সালে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে ঠাট্টা করেছিলেন । শহীদ জিয়া সেই তলাবিহীন ঝুড়িকে কয়েক বছরের মধ্যেই খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে তুলেছিলেন । ৭৫ এর পর এক বছরের মধ্যেই খাদ্যের দাম অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিলেন । যে রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল করছে তার শুরুটাও তিনিই করে দিয়ে গেছেন ।
আজকে প্রতিটা ক্ষেত্রে যে সফলতা তার প্রায় প্রতিটির গোড়াপত্তন তিনি করে গেছেন । এমনকি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তাঁর হাত দিয়েই শুরু হয় । আজকের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য ।
তিনি খাল কাটা কর্মসূচী শুরু করেন । নদী খনন ও খাল কাটার মধ্যেই জাতির অস্তিত্ব নির্ভর করছে - সেই ম্যাসেজটিও তিনি রেখে গেছেন ।
তিনি SAARC এর স্বপ্নদ্রষ্টা । ইরাক - ইরান যুদ্ধ বন্ধের মধ্যস্ততাকারী। তাঁর সময়েই বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য পদ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয় জাপানকে টপকিয়ে । ইন্দো-চিন সামরিক কনফ্লিক্টে মালয়শিয়া-বাংলাদেশের যুক্ত ইশতেহার প্রকাশ করা হয় । যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং চীন সফর করেন এবং চীন থেকে সেই সময়ে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা পান । তিনি যখন ভারতে সফরে যান তখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাকে রিসিভ করেন । এসব ক্ষেত্রে তাঁর স্মার্টনেস বিশ্ব পরিসরে বিশেষ সম্মান নিয়ে আসে ।
ফিলিপিনস সফরের সময় তাঁর ছবি দিয়ে ধাতব মুদ্রা ছাপানো হয় । এই ধরণের কোনো সম্মান এদেশের অন্য কোনো সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের কপালে জুটেছে কি না জানা নেই । যাদেরকে বিশ্ব নেতা বা নেত্রী বলে কান গরম করে ফেলা হয় তাদের এরকম ছবি খুব একটা দেখা যায় না । আমার এক বন্ধু শহীদ জিয়ার এমন একটি দুর্লভ ছবি পাঠিয়েছে । পাঠকদের সাথে সেটি শেয়ার করছি ।
তিনি স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষিত এবং প্রফেশনাল সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেন। বামপন্থীদের চরম হঠকারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা তিনিই ফিরিয়ে আনেন । তাঁর এই কন্ট্রিবিউশন সেনাবাহিনী কোনোদিন ভুলতে পারবে না ।
একটি শেষ কথা । একজন মানুষ দশটি ভালো কাজ করলে একটি ভুল করতেই পারে । কারণ তিনি দোষে গুণে মানুষ ছিলেন , ফেরেশতা ছিলেন না । তবে শাসক শ্রেণীকে সমালোচনা করার এই সুযোগটি এই দেশের মানুষকে তিনিই করে দিয়ে গেছেন । এটা কোনো চাটুকারী দাবী নয় - সাপোর্টিং ডকুমেন্ট মজুদ আছে ।
বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবন- সেটাও শহীদ জিয়াই করে দিয়ে গেছেন । তাদের নেত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন । এর পুরস্কার হিসাবে অবশ্য কয়েক দিন পরেই তাকে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে!
দেশের মানুষ তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানটির এই আত্মত্যাগকে শাহাদত হিসাবে গণ্য করে। পরম করুণাময় যেন দেশের মানুষের মনের এই আকুতিটিকে গ্রহন করেন, তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন । আমিন ।
- লেখক পলিটিক্যাল এনালিস্ট ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।