বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পনি লিমিটেডের (বিটিসিএল) টেলিফোন সংযোগ দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে ১৪ লাখ ৬২ হাজার। এ সক্ষমতার বিপরীতে গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার। অর্থাৎ টেলিযোগাযোগ খাতের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির সংযোগ সক্ষমতার ৫৫ শতাংশই অব্যবহূত রয়েছে। মানহীন সেবা ও সেলফোনের সহজলভ্যতার কারণে গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও প্রতি বছর সংযোগ সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প গ্রহণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮ অনুযায়ী, বিটিসিএলের সংযোগ সক্ষমতা অব্যবহূত থাকার পাশাপাশি প্রতি বছর বড় অংকের লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ-সংক্রান্ত সর্বশেষ নিরীক্ষিত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ওই অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল ১৮৪ কোটি টাকা। একই অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় করে ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর বিটিসিএলের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩৩৬ কোটি টাকা। একই অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিকে সংযোগ সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহূত হচ্ছে না, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বণিক বার্তাকে বলেন, শুধু ফিক্সড ফোনই নয়, সেলফোন নেটওয়ার্কের ভয়েস কলের চাহিদাও কমছে। এখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডাটাভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। এজন্য বিটিসিএলের আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। আগামীতে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে বলে জানান তিনি।
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, মানোন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটিকে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। তত্কালীন বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বিটিসিএল। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত পরিবর্তন হলে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সরকার যে লাভের আশায় বিটিসিএলের রূপান্তর করে, সে আশা আজ অবধি পরিবর্তন হয়নি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে পারেনি বিটিসিএল। ২০০৫ সালে বিটিটিবির সংযোগক্ষমতা ছিল প্রায় ১০ লাখ। পরবর্তী কয়েক বছরে সংযোগক্ষমতা প্রতি বছর বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০ ভাগ টেলিফোন লাইনের অবস্থা খারাপ। বিভাগীয় শহরে এ অবস্থা আরো নাজুক। বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রায় ৬০ ভাগ লাইন বিভিন্ন সময় অকার্যকর থাকে। জেলা শহরগুলোতে এ হার ৭৫ ভাগ। উপজেলা পর্যায়েও বিটিসিএলের সেবার মান আরো নাজুক।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিটিসিএলে প্রতি মাসে টেলিফোন কল হয় ৮০ লাখের কাছাকাছি। আগে প্রতি মাসে সংস্থাটির রাজস্ব আয় হতো ৪৫-৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে সংস্থাটির প্রতি মাসে স্থানীয় রাজস্ব আয় ২১ কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশই লাইন ভাড়া হিসেবে পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিটিসিএলের প্রতি মাসে প্রায় ১১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় শুধু লাইন ভাড়া থেকে। বাকিটা আসে কলচার্জ থেকে।
টেলিযোগাযোগ খাতের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কলের বাজার দখলে শীর্ষে ছিল বিটিসিএল। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির আয়েও ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা ছিল। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি খাতে সেলফোন অপারেটর ও ফিক্সড ফোনসেবা চালু হওয়ায় বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যায়।
বিটিসিএল ল্যান্ড ফোনের নতুন সংযোগমূল্য আগের তুলনায় অর্ধেকেরও কম করা হয়েছে। ঢাকায় সংযোগ মূল্য ২ হাজার আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ১ হাজার টাকা। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে ৬০০ টাকা। কল রেটও আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। লোকাল কলের ক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি মিনিট ৩০ পয়সা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১০ পয়সা। বিটিসিএল থেকে অন্যান্য অপারেটরে কলপ্রতি মিনিট ৮০ পয়সা। মাসিক লাইন রেন্টও আগের তুলনায় কমিয়েছে বিটিসিএল। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রতি মাসে লাইন রেন্ট ১৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে লাইন রেন্ট ১২০ টাকা। উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারের গ্রাহকদের জন্য ৮০ টাকা। বিটিসিএলের এত সব সুযোগও আগ্রহ বাড়াতে পারেনি গ্রাহকদের।
- Courtesy: BanikBarta/ June 25, 2018