Search

Monday, June 25, 2018

১১ কোটি টাকায় মেরামত পরে ‘অচল’ ঘোষণা!

লালমনি এক্সপ্রেসে কোচ সংযোজন    

ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে ৬ জুন লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে মেরামতকৃত ১৪টি কোচ সংযোজন করা হয়। কিন্তু চালু করার ছয়দিনের মাথায় সবগুলো কোচ অচল হয়ে যায়। জানা যায়, এসব কোচ মেরামত ও রঙ করার কাজে খরচ হয়েছে ১১ কোটি টাকারও বেশি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সৈয়দপুর কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় ও লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে ইরান থেকে কিছু কোচ আমদানি করা হয়েছিল। কোচগুলো সুবর্ণ এক্সপ্রেসে যুক্ত করা হয়। ট্রেনটিতে পরে নতুন কোচ সংযোজন হলে ইরানিগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন পড়েছিল। গত বছর এর মধ্যে ২২টি কোচ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এনে মেরামত ও রঙ করা হয়।

মেরামতকৃত কোচের মধ্যে ১৪টি লালমনি এক্সপ্রেসে সংযোজন করে ঈদ স্পেশাল ট্রেন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ১২ জুন কোচগুলো অকেজো হয়ে পড়লে ১৩ জুন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগ তা ‘ড্যামেজ’ বা অচল ঘোষণা করে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিটি কোচ মেরামত ও রঙ করার কাজে প্রায় ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ১৪টিতে খরচ হয়েছে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

এসব বিষয়ে লালমনিরহাট সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইরানি কোচগুলো দিয়ে নতুন সাজে লালমনি এক্সপ্রেস ৬ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা শুরু করা হয়। ১২ জুন কোচগুলোর এয়ার ব্রেকে ত্রুটি ধরা পড়লে ১৩ জুন সবগুলো ‘ড্যামেজ’ ঘোষণা করা হয়। এখন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের খোলা ইয়ার্ডে কোচগুলো রাখা আছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে এগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা বলেন, লালমনি এক্সপ্রেসে নতুনভাবে সংযোজন করা ইরানি কোচগুলো ড্যামেজ ঘোষণার বিষয়টি আমাদেরকে অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। শিগগিরই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে মেরামত করা হবে।

এদিকে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে নতুন করে ১৪টি কোচ সংযোজন করায় এ অঞ্চলের মানুষ স্বস্তিতে ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ছয়দিনের মাথায় তা অকেজো হওয়ায় আবার অত্যন্ত নিম্নমানের কোচে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষও। লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের যন্ত্র প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আপাতত পুরনো কোচ দিয়ে লালমনি এক্সপ্রেস চালু রয়েছে। এতে যাত্রী পরিবহনে কিছুটা সমস্যা যেমন হচ্ছে, তেমনি যাত্রীরাও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। 

রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম দুঃখ করে বলেন, ঈদের আগে পাওয়া ইরানি ১৪টি কোচ দিয়ে নতুনভাবে লালমনি এক্সপ্রেস সাজিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোচগুলো ড্যামেজ ঘোষণা করতে হয়েছে। এসব কোচ এখন আমাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব দ্রুত মেরামত করে সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

নিয়মিত যাত্রীদের চাপ সামাল দেয়া লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার নিজাম উদ্দিন বলেন, ট্রেনযাত্রা মানুষের প্রথম পছন্দ। সে কারণে যাত্রীর চাপ থাকলেও আগের কোচ দিয়েই লালমনি এক্সপ্রেস চালু রাখা হয়েছে। ইরানি কোচ ড্যামেজের বিষয়টি নিয়ে সৈয়দপুর কারখানায় মেরামতের বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।

বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী রেলমন্ত্রীকে বহুবার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১১ সালের এক জনসভায় বুড়িমারী স্থলবন্দর-ঢাকাগামী ‘তিনবিঘা এক্সপ্রেস’ নামে একটি ট্রেন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে রেলমন্ত্রীকে বলেও কিছু হয়নি।

  • Courtesy: BanikBarta /June 25, 2018

No comments:

Post a Comment