Search

Friday, June 8, 2018

হঠাও নয়, গরিবি উন্নয়ন চলছে দুর্বার!


সৈয়দ কবির হুসেন  


অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, কল্যাণরাষ্ট্রের পিতা গুনার মিরডাল তাঁর ক্লাসিক রচনা —  ‘এশিয়ান ড্রামা’ গ্রন্থে বলেছেন, সম্পদের সুষম বণ্টন হলো রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্য শর্ত। ঠিক একই যুক্তিতে বলা হয়, দেহের সমস্ত পরিমাণ রক্ত মুখে বা মাথায় জমা হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। ঠিক সে কারণেই উন্নয়ন যদি সুষম না হয় তাহলে তা হলে তা কেবল মাত্র বিপর্যয়ই ডেকে আনতে পারে। তিনি অতি পরিস্কারভাব উল্লেখ করেছেন, সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য দরকার যে বিত্তবানদের ঘরে আনুপাতিক হারে দারিদ্র্য ঢু‌কিয়ে দেওয়া। সেটা হলেই কেবল হতে পারে সম্পদের সুষম বণ্টন। এশিয়ার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির বিষয়ে তাঁর যে অসাধারণ বিশ্লেষণ হয়ে আছে আজও তা বর্ণে বর্ণে সত্যি।

শুধু তাই নয়, সুষম উন্নয়ন ছাড়া অন্য যে কোনো ধরণের উন্নয়ন ক্ষতিকর। অর্থনীতির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য যা করতে হয় তা সাধারণের বোধগম্য পরিভাষায় বলা হয় ভারসাম্যবিধানের কাজ যা বাংলাদেশের মানুষের বেশিরভাগ বোধগম্য পরিভাষা হলো ব্যাল্যান্সিং অ্যাক্ট। সমষ্টি অর্থনীতির যে সব সূচক ম্যানিপুলেট করে ম্যান্ডেটবিহীন সরকার যে তুর্কিনাচন নেচেকুদে চলেছেন তার বিষাদময় ফল অচিরে ভোগ করবেন সাধারণ জনগণ যাদের তথাকথিত ভোটের নামাবলি পরে ক্ষমতার পাট দখল করেছেন। অার জনগণ আজ মাইনাস হয়ে গেছেন। এই লেখক বেগম খালেদা জিয়ার মাইনাস হবার কথা বলছেন না ববং বলছেন দেশের গোটা জনসমষ্টিই মাইনাস হয়েছেন। 

বার্ষিকপ্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক নয়।দেশের সিংহভাগ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাছে, তাও অাসলে উনুৎপাদিত সম্পদ ‌হিসেবে।
এবার আসি আসল কথায়। দেশে গরিবের বহর লম্বা  হচ্ছে। এটা নতুন কোনো কথা নয়। সাধারণত পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ধনীর সংখ্যা যদি অবিশ্বাস্য হাতে বাড়ে তাহলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির রায়ই হলো গরিব বাড়তেই হবে। 

খবরের শিরনাম হলো —  ‘ গরিব মানুষ বাড়ছে’।  সরকার দাবি করছেন মানুষের মাথাপিছু গড় আয় এখন ১৬১০ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় ১লাখ আট চল্লিশ হাজার টাকার মতো। নির্দয় নির্মম ডারউইনীয়  পুঁজিবাদী নিযমে সেটাই হয়। আর যদি কুড়িগ্রাম  ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭১ জনকেই দৈনিক দেড় ডলারে জীবনযাপন করতে হয়, তাহলে সেই উন্নয়নের দরকারটা কি? 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ।দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে আগে ছিল ৩৮ শতাংশ, এখন হয়েছে ৬৪ শতাংশ।কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। আর লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে।বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলায় দারিদ্র্য পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। দারিদ্র্যের হার এখন রংপুরে ৪৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ২৬ দশমিক ৩শতাংশ ও নীলফামারীতে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও দারিদ্র্য অনেক বেড়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে নওগাঁ জেলায় দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।

সরকার প্রচার করছে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় বেড়েছে। গরিবের সংখ্যা কমেছে। বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ সময়ে করাএক জরিপে বলা হয় দেশের দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালে ছিল মোট জাতীয় আয়ের ০.৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ০.২৩ শতাংশ। বিপরীত দিকে ধনী ৫ শতাংশের আয়২০১০ সালে জাতীয় আয়ের ছিল ২৪.৬১ শতাংশ যা ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ২৭.৮৯ শতাংশে। একইভাবে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় ২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায়১.০১ শতাংশ আর ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫.৩৪ শতাংশ থেকে ৩৮.১৬ শতাংশে। আরও উল্লেখ্য বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে শ্রমিক শ্রেণীর প্রকৃত আয় ২০১৬সালে ২০১০ সালের তুলনায় হ্রাস  পায় ৭.৫৮ শতাংশ।

বিবিএসের জাতীয় হিসেবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। আয়ের এইবৃদ্ধির সঙ্গে একই হারে বেড়েছে প্রকৃত মাথাপিছু ভোগ। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীতে এইচআইইএস ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী পারিবারিক পর্যায়ে প্রতিটি ব্যক্তির প্রকৃত আয় কমেছে ২০১০ সালের তুলনায় ২শতাংশ এবং ভোগের জন্য প্রত্যেকের প্রকৃত ব্যয় কমেছে ১ শতাংশ। 

No comments:

Post a Comment