Search

Thursday, June 7, 2018

আর্থিক খাতের শৃঙ্খলায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

আর্থিক খাতে এখন বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে না আনতে পারলে বাজেট ফলপ্রসূ হবে না, সাধারণ মানুষ বাজেটের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। তাই বাজেটে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় শৃঙ্খলা ফেরানোর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। বাজেট হতে হবে জন-উন্নয়নের জন্য।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আর্থিক খাতকে সুসংহত করতে হবে। দেশের আর্থিক খাতে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

আমি সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধী। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমালে মানুষ ব্যাংকে যাবে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে— এসব অর্থহীন যুক্তি। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। সঞ্চয়পত্র বিক্রির টাকা সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। সে হিসেবে দেশের টাকা ঘুরে-ফিরে দেশের মানুষের হাতেই আসছে। সে টাকা মানুষ আবার ব্যাংকেই রাখছে। সুতরাং সঞ্চয়পত্র কোনো ক্রমেই ব্যাংকে অর্থ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে না। বরং ব্যাংকগুলোর কেলেঙ্কারির সংবাদই মানুষকে ব্যাংকবিমুখ করছে। এজন্য জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে হবে। সঞ্চয়পত্র সমাজের যে শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য চালু করা হয়েছে, সে মানুষগুলোর জন্য কিছু করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। কোনোভাবেই সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো উচিত হবে না।

শুধু প্রবৃদ্ধি আর উন্নয়ন দিয়ে কোনো দেশ সামনে এগোতে পারে না। দেশের জিডিপি বাড়লেও সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হয়নি। অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। সম্পদের বণ্টনে অসমতা তৈরি হয়েছে। আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এজন্য বাজেট হতে হবে কল্যাণমুখী উন্নয়নের জন্য। আর উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলো স্বচ্ছ হওয়া দরকার। কোনো অযৌক্তিক কিংবা অহেতুক ব্যয়ের জন্য জনগণের ওপর যেন করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়। এজন্য বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। অপচয়, অপব্যয় কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা অর্থের জোগান যেন জনগণকে দিতে না হয়।

অনেক প্রকল্প শুরু থেকেই ঠিক থাকে না। সময় যত গড়ায়, প্রকল্পের ব্যয়ও তত বাড়ে। জনগণকে এর মাশুল গুনতে হয় অতিরিক্ত কর পরিশোধের মাধ্যমে। উৎপাদনমুখী ও জনগণের কল্যাণে আসে, এমন খাতে বাজেটের অর্থ ব্যয় করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাজেট বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে হবে। কেননা দিন দিন এসব প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

  • —ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
  • কার্টেসিঃ বনিক বার্তা/ জুন ৭, ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment