Search

Wednesday, June 27, 2018

আধ ঘণ্টাও কেন্দ্রে টিকতে পারেননি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে আধ ঘণ্টাও টিকতে পারেননি বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পোলিং এজেন্টরা। সকাল আটটায় শুরু হওয়া নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০ থেকে ২০ মিনিট করে বসতে পারলে পরে তাদের বের করে দেয়া হয়। গতকাল সারাদিন নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো ঘুরে এ চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে। 

কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করার অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। সকাল সাড়ে আটটার  দিকে নিজ এলাকা টঙ্গী কলেজ গেট সংলগ্ন বছির উদ্দিন উদয়ন একাডেমিতে ভোট দিতে এসে তিনি জানিয়েছেন ভোট শুরুর আগেই ১০টিরও বেশি কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এসময় তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হওয়ার কোনো নিদর্শন দেখছি না।

আমার পোলিং এজেন্টদের হয়রানি করা হয়েছে। ভোট শুরুর আগেই ১০ কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। 

এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নিয়ে দখলে নেয়া শুরু করে। একই সঙ্গে পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনও করা হয়। গাজীপুর কোনাবাড়ীর বিভিন্ন কেন্দ্রে সরজমিন দেখা যায়, এই এলাকার একটি কেন্দ্রেও ভোটকক্ষে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। জরুন হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে দেখা যায় নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ধারণ করে ভোট কক্ষগুলোতে বসে আছেন এজেন্টরা। 

কিন্তু সেখানে ধানের শীষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার কাজী নাসির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে ধানের শীষের কেউ আবেদন করেননি। কারো তালিকা আমার কাছে নেই। ভয়ভীতি দেখিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন- এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, আমার কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। আর আমার কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে। কোনো পক্ষ এসে ভয়ভীতি দেখানোর সুযোগ নেই। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক কথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এ কেন্দ্রে ঘটেনি। তবে জরুন এলাকার এই হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে দেখা যায় বেশ কিছু ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ ভেতরে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও। এ সময় কিছু লোক বাইরে থেকে এসে লাইন ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রটিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী দাঁড়িয়ে থাকলেও নীরব ভূমিকাই পালন করেছেন। 

একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে ওই এলাকার আরেক কেন্দ্র টাঙ্গাইল প্রি ক্যাডেট স্কুলে। সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার সুকুমার চন্দ্র রায় জানান, সকাল থেকে ধানের শীষ প্রার্থীর একজন পোলিং এজেন্ট এসেছিলেন। তবে ১৫ মিনিট থাকার পর তিনি চলে গেছেন। তার নাম আমি জানি না। কেন জানেন না- এ প্রশ্নের জবাবে সুকুমার বলেন, আমার কাছে কেউ এসে রিপোর্ট করেনি। এসব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি দেখা গেলেও কোনাবাড়ির আরেক কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সকাল থেকেই এখানে থমথমে পরিস্থিতি ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে সরজমিন গিয়ে দেখা যায় ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা দখল করে নেয়। সকালেই বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয় ভোটকেন্দ্র থেকে। 

আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুপুর ১১টার দিকে এ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার মহিদুল আমিন জানান, কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তাই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতও হয়নি। হ্যাঁ পাঁচ মিনিট বৃষ্টির কারণে বন্ধ ছিল। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমরা সব ঠিক করে নিয়েছি। ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কোনাবাড়ির আরো কয়েকটি কেন্দ্রে। এর মধ্যে জেনুইন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড  কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পোলিং এজেন্টদের কেউ উপস্থিত নেই।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট ও তাদের সমর্থকরা সরব। কেন্দ্রে সাংবাদিক আগমনের খবর শুনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। এদের মধ্যে ভোটার নন একজনের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। কেন্দ্রে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক আনসার সদস্য বলেন, জোর করে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে যায়। কে বা কারা কোন দলের সেটা জানি না। কিছু বললে উল্টো ধমক দেয়। এ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট নেই কেন- জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার একেএম সালাহউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট আমার কাছে এসে রিপোর্ট করেনি। আবেদনও পাইনি। কেন্দ্রে না আসার কারণ তো আর আমি বলতে পারবো না।

  • Courtesy: Manabzamin /June 27, 2018 

No comments:

Post a Comment