Search

Thursday, June 7, 2018

একজন শক্তিশালী অর্থমন্ত্রী প্রয়োজন

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

নগণের করের টাকায় সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করাটা পুরো অযৌক্তিক। কয়েক বছর ধরে দেখছি, ঋণের নামে ব্যাংকগুলোতে লুটতরাজ চালানো হচ্ছে। সরকারি ব্যাংকে সরকারি মদদে ও দুষ্ট পরিচালকেরা বেসরকারি ব্যাংক লুট করেছেন। এর ঘাটতি পূরণে আবার টাকা দেওয়া হলে তা দুভাবে এসব অপকর্মে সমর্থন দেয়। প্রথমত, জনগণের আমানতের টাকা লুটপাটে সমর্থন। দ্বিতীয়ত, করের টাকায় এর ক্ষতিপূরণ। এতে দুর্নীতি আরও উৎসাহিত হয়। এর চেয়ে বরং মুনাফা করে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে চাপে রাখা যেতে পারে। এ সময় মূলধন ঘাটতি সামলাতে সরকার বিশেষ গ্যারান্টি দিতে পারে। তাহলে ব্যাংকগুলো চাপে থেকে ভালো ঋণের দিকে ঝুঁকবে। ঘাটতি থাকলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চাপে থাকবে।

সরকারি ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সরকারি ভাতা দিচ্ছে বলে অনেক সচল মনে হচ্ছে। ব্যাংকের মূল যে কাজ, জনগণ থেকে আমানত নিয়ে উৎপাদনশীল শিল্পে বিতরণ করা, সেটা তারা করছে না। তারা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতো ব্যবসাও করতে পারছে না, বরং ব্যবসা হারাচ্ছে।

বাজার অর্থনীতি বিবেচনা করলে লুট হয়ে যাওয়া ফারমার্স ব্যাংককে এভাবে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে না। কারণ, বাজার অর্থনীতিতে ভালো করলে ব্যবসা বাড়বে, খারাপ করলে গ্রাহকই পরিত্যাগ করবে। এমন ব্যাংককে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা মানে সরকারই এগিয়ে এল বাঁচাতে। এটা ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে না। কারণ, এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো মনে করবে, লুটপাট হলে সরকারই এগিয়ে আসবে। এ ছাড়া দুর্দশার মধ্যে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাড়ে খারাপ একটি ব্যাংকের বোঝা চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক হয়নি।

ব্যাংক খাত তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। মনে হচ্ছে তারা কোনো ভীতির মধ্যে আছে। ব্যাংক খাতে যেসব ঘটনা ঘটছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন থাকলে তা হতো না। এর কারণ হতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ করছে। গভর্নরের পৃথক কোনো সত্তা আমরা দেখতে পারছি না। আলাদা সত্তা থাকলে হোটেলে ডেকে নিয়ে মুদ্রানীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতো না। এতে গভর্নরের স্বাধীনতা খর্ব হয়। আর মন্ত্রণালয়ের প্রতি গভর্নরের বিশেষ ঝোঁক থাকলে পুরো কেন্দ্রীয় ব্যাংকই মন্ত্রণালয়ের শাখায় রূপ নেয়। কেউ সিদ্ধান্ত নিতে সাহস করে না।

এ জন্য প্রয়োজন একজন সত্যিকারের শক্তিশালী অর্থমন্ত্রী, যিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না। বরং অন্য কেউ প্রভাবিত করতে চাইলে অর্থমন্ত্রী তাতে বাধা দেবেন। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এমন একজন অর্থমন্ত্রী প্রয়োজন। আর অর্থ মন্ত্রণালয় যা কিছুই বলুক না কেন, তা মানবেন না এমনই গভর্নর প্রয়োজন। ব্যাংক খাতের স্বার্থে এমন মাথা উঁচু করার গভর্নর এখন খুব প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে শক্তিশালী অর্থমন্ত্রী ও মাথা উঁচু করা গভর্নর প্রয়োজন।

  • খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ৭,২০১৮

No comments:

Post a Comment