Search

Sunday, June 10, 2018

ব্যাংকমালিকদের জন্য বড় সুবিধা

  • ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী
  • ব্যাংক মালিকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারে নীতিনির্ধারণী পরিবর্তন


বেসরকারি ব্যাংকমালিকদের আরও বড় সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। তাঁদের বেশি মুনাফার জন্য ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করও একই হারে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক পরিচালকেরা যা চাইছেন, তাই পাচ্ছেন, এমন রীতি চালু হচ্ছে মনে করেন ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞরা।

ব্যাংকমালিকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে বেশ কিছু নীতিনির্ধারণী পরিবর্তন আনতে হয়েছে। পরিবর্তন আনতে হয় আইনেও। সুদের হার কমানোর আশ্বাসে ব্যাংকমালিকদের চাপে এসব সুবিধা দেওয়া হলেও কমেনি সুদ হার। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা কার্যকর হলে বাড়বে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা। এতে ব্যাংকের পরিচালকেরা আগের চেয়ে বেশি মুনাফার ভাগ পাবেন। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নয়টি নতুন ব্যাংক। কারণ এসব ব্যাংক এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। মুনাফা ভাগাভাগি করে নেবেন পরিচালকেরা। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে করপোরেট কর ও নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদ দেওয়ার পরই নিট মুনাফা হিসাব হয়। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৪০ শতাংশ হবে। 

তবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে এভাবে কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী। ২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নতুন নয় ব্যাংক নিট মুনাফা করে ৫৩৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা বৈষম্যমূলক আচরণ। দেশে ব্যাংক কোম্পানি ছাড়া আরও অনেক কোম্পানি আছে। অন্য কাউকে তো এ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়নি। 
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের আমানতে তাদের অংশগ্রহণ মাত্র ১০ শতাংশ। আগেও তাদের অনেক সুবিধা দিতে হয়েছে। তাদের চাপে আইন পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি আমানত বেশি নিয়েছে তারা, নগদ জমার হারও কমিয়েছে। ব্যাংক পরিচালকেরা তো যা চাইছে, সরকার তা-ই দিচ্ছে। এটা ঠিক নয়। 

করহার নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের করহার কিছুটা বেশি হওয়ায় আমি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার আড়াই শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। এতে এ খাত থেকে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে।’ 

এর আগেও ব্যাংক পরিচালকেরা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চাপ দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা নেয়। সুদহার এক অঙ্কে (১০-এর নিচে) নামিয়ে আনা হবে, এ জন্য এসব সুবিধা প্রয়োজন এমন শর্ত জুড়ে দেয় তারা। তাদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমায়। এ ছাড়া ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সময় আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পাশাপাশি সরকারি তহবিলের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ দেয় সরকার। 
গত ১ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক সভায় এসব সুবিধার সিদ্ধান্ত হলেও কমেনি সুদহার। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে গভর্নর ফজলে কবিরকে সুদহার কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বছরে একবারের বেশি সুদহার বাড়ানো যাবে না। সুদ হার বাড়াতে হলে তিন মাস আগে গ্রাহককে জানাতে হবে। 
যদিও গতকাল অর্থমন্ত্রী জানান, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আমানত ও ঋণের সুদহার মাসে শুধু একবার পরিবর্তন করতে পারবে ব্যাংক। ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। 

করহার কমানো হলে ব্যাংকগুলোতে কী প্রভাব পড়বে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ ও আমানতের সুদহার ৪ শতাংশ নির্ধারণ করায় আমাদের আয় কমে যাবে। করহার কমালে তা সমন্বয় হতে পারে। আমরা মুনাফা না করে সুদহার কিছুটা কমিয়ে দিতে পারব।’ 

এতে কি আসলেই সুদহার কমবে—এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সুদহার নির্ভর করবে আমানতের সুদহারের ওপর। এ ছাড়া ব্যাংকের কর্মীদের মাথাপিছু খরচ ও ঝুঁকি প্রিমিয়ামের ওপরও সুদহার নির্ভর করে। তবে করহার কমানোর প্রভাব সুদহারে কিছুটা তো পড়বেই।’ 

বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠনের ফলে ব্যাংক খাতে কাঠামোগত ব্যর্থতা (সিস্টেমেটিক ফেইলর) বন্ধ করা গেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকটির পুনর্গঠন নিয়ে তিনি বলেছেন, এর ফলে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে। 

অবশ্য বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠন করা হয় সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও আইসিবি মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংককে। সংকটে পড়া এ সরকারি ব্যাংকগুলো বাঁচাতে গত ছয় বছরে সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে দেওয়ার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তা ছাড়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। 

জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, সেই পরিমাণ টাকাই সরকারকে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
  • Courtesy: Prothom Alo /June 08, 2018

No comments:

Post a Comment