Search

Wednesday, June 27, 2018

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪০%

বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন


দেশে রেকর্ড আমদানির দায় পরিশোধ নিয়ে ব্যাংকারদের উদ্বেগ আর উত্কণ্ঠা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বাজারে ডলারের সংকট। চলতি বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী মার্কিন মুদ্রাটির বিনিময় হার। এদিকে আমানত নিয়েও হাহাকার চলছে ব্যাংকগুলোতে। আর্থিক খাতে এ পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রমে বাড়ছে সন্দেহজনক লেনদেন।

দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেন ও তত্পরতা বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক ২ হাজার ৩৫৭টি লেনদেন ও তত্পরতার তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এমন লেনদেনের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৮৭। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

কর্মকর্তারা বলছেন, আগেও দেশে সন্দেহজনক লেনদেন হতো। নানা কারণে সংশ্লিষ্টরা বিএফআইইউকে সে তথ্য দিতেন না। কিন্তু বিএফআইইউর তত্পরতায় ব্যাংকারসহ খাতসংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বেড়েছে। ফলে আগের তুলনায় সংস্থাটির কাছে সন্দেহজনক লেনদেন ও কর্মকাণ্ডের তথ্য বেশি এসেছে।

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিতকরণ, নগদ লেনদেনে নজরদারিসহ মুদ্রা পাচার রোধে কাজ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঘুষ-দুর্নীতি, জঙ্গি বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন, মানব পাচার, চোরাচালান, মুদ্রা জাল, অর্থ পাচার ও সম্ভাব্য বেআইনি লেনদেন হলে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি বিএফআইইউতে রিপোর্ট করে। যাকে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর) বলা হয়। আবার ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি যেকোনো ধরনের নগদ লেনদেন হলে তার তথ্যও বিএফআইইউতে পাঠাতে হয়। তবে সন্দেহজনক লেনদেন বা কর্মকাণ্ড মানেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এমনটা নয়।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউর প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন কোনো অপরাধ নয়। লেনদেনে অপরাধের উপাদান পাওয়া গেলে তবেই সেটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিএফআইইউর কাছে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বেশি জমা পড়া প্রতিষ্ঠানটির সফলতারই নির্দেশক। আগে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা দিতে ভয় পেত। কিন্তু আমাদের তত্পরতা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কারণে সংশ্লিষ্টদের মন থেকে ভয় দূর হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন আগেও ছিল। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোর সচেতনতার কারণে বিএফআইইউর সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বেড়েছে। সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যগুলো দিয়ে আমরা একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছি। এ তথ্যভাণ্ডার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অনুসন্ধানেও কাজে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে কারো বিষয়ে অনুসন্ধান করার দরকার হলে, আমরা মানসম্মত প্রতিবেদন তৈরি করতে পারব। এছাড়া সন্দেহজনক লেনদেনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আমরা খতিয়ে দেখছি। অনুসন্ধানে অপরাধের উপাদান পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা পড়েছিল ৪১৬টি। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এমন লেনদেনের সংখ্যা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬২১টি, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ১ হাজার ৯৪ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৮৭টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা পড়ে বিএফআইইউতে। বিদায়ী অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ও তত্পরতা ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৫৭টিতে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে ১৯৬টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের অক্টোবর, নভেম্বর এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিদায়ী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ৩২৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বিএফআইইউতে জমা পড়ে। ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই), অর্থ প্রেরক (মানি রেমিটার) এবং পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে এসব অভিযোগ জমা পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। বিএফআইইউর কাছে জমা পড়া সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ৭০ দশমিক ৫৬ শতাংশই ছিল ব্যাংকের। এছাড়া অর্থ প্রেরকের কাছ থেকে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) কাছ থেকে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য এসেছে।

সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ১৮টি ছিল ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের। এছাড়া আড়াই কোটি থেকে ৫ কোটি টাকার ২৯টি, ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ২৩টি ও ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার ৯৪টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বিএফআইইউর কাছে আসে। সন্দেহজনক অন্য লেনদেনগুলো ছিল ৫০ লাখ টাকার কম মূল্যমানের। সন্দেহজনক লেনদেনের ৫৫ শতাংশই ছিল ঢাকায়।

শুধু সন্দেহজনক লেনদেন নয়, বিএফআইইউর কাছে আর্থিক অপরাধের অভিযোগের সংখ্যাও বিদায়ী অর্থবছরে ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোট ৩০১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৯টি অভিযোগ করে বাংলাদেশ পুলিশ। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছ থেকে ৭১টি, গণমাধ্যমের কাছ থেকে ১৪টি, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১১টি এবং শুল্ক বিভাগসহ অন্যদের কাছ থেকে ৯৬টি আর্থিক অপরাধের অভিযোগ পেয়েছে বিএফআইইউ।

প্রতিষ্ঠানটি থেকে গত অর্থবছর রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে দুর্নীতি, প্রতারণা, অপহরণ, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১২১টি অপরাধের তথ্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৯টি অভিযোগ ছিল দুর্নীতি ও জালিয়াতি সম্পর্কিত। এছাড়া প্রতারণা সম্পর্কিত ২৫টি, অপহরণ-সংক্রান্ত ১০টি, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ে ১০টি অপরাধের তথ্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে দেয়া হয়েছে। বিএফআইইউ থেকে সবচেয়ে বেশি ৭২টি অভিযোগ পাঠানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। ৩৮টি অভিযোগ সিআইডি, ৯টি অভিযোগ কাউন্টার টেরোরিজমে পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

  • Courtesy: BanikBarta /June 27, 2018

False govt promises only prolong teachers’ problems

THERE is a saying that teachers are the future of nation. Primary school teachers play an important role in raising future citizens. In Bangladesh, however, the role of school teachers is not valued. Teachers of government-recognised educational institutions but not enlisted for the monthly payment scheme have intermittently taken to the streets for proper pay since 2013. Among the aggrieved teachers, as New Age on reported Tuesday, there are ones teaching students without any pay for even 20 years. In December 2017, several hundred teachers began a sit-in in Dhaka and went on hunger strike which drew national attention and many lent voice to their cause, criticised the government for not attending to their demand in time. Amid widespread criticism, the prime minister on January 5 assured them of their inclusion into the system. 

Sadly, the assurance did not translate into action as the proposed national budget did not allocate additional budget for enlisting new schools for the monthly payment scheme. It is in this context the teachers concerned under the banner of Non-MPO Educational Institution Teachers and Employees’ Federation started fast-unto-death on Monday. Instead of immediately approaching the peaceful protesters for dialogues, the government shockingly ordered police to harass and attack them, even detain federation organisers.

The monthly payment system for recognised non-government educational institution was introduced in 1981, under which the government has been contributing full basic pay to teachers since 2006. The last inclusion of 1,645 institutions into the scheme took place in 2010. About 75,000 to 80,000 teachers are now employed in the government-recognised 5,242 schools all over Bangladesh who are not under the scheme. The situation reveals absolute apathy of all the authorities concerned. 

Not only has the government avoided heeding the teachers’ cause, it has used brute police force to tackle peaceful protesters on the streets. In mid-June when teachers gathered in front of the National Press Club, the police charged at them with truncheons and injured many teachers. Since then, at least 40 aggrieved teachers have fallen ill spending their day and night under the open sky. It is time that the government initiated a commission to review the performance of the schools in question and work out a mechanism to ensure the payment of teachers for the services they have already provided. False promises from the state managers will only keep the problem alive. 

The government must know that it cannot declare itself a middle-income country leaving school teachers from rural areas starved. The incumbents must immediately take steps to arrange an MPO enlistment drive and review school’s eligibility for financial assistance. While it is important to urgently attend to the demand of the teachers, it must also develop a mechanism through which schools will be evaluated regularly for fresh enlistment.

  • Courtesy: New Age/ Editorial /June 27, 2018

Sorry state of public hospitals

Healthcare stunted

According to a report in this daily published yesterday, patients have to receive treatment in an unhygienic environment at the Narayanganj 300-bed Hospital, the largest public hospital in the district. Beds in the hospital are in a horrible state, infested with bed bugs and cockroaches with soiled bedsheets. Moreover, many of the beds are strutted up with the help of bricks. And although there should be 300 beds in the hospital, currently only 271 beds exist.

The report is fairly representative of the general condition of many public hospitals across the country. Anyone who has ever visited a public hospital in the country might have seen and experienced the same problems. We wonder why the conditions of our healthcare facilities are so deplorable when a big portion of our health budget is allocated for infrastructure development and purchase of modern equipment. And while lack of cleanliness and absence of proper beds are problems that could be easily solved by the authorities, who will solve other major problems, such as, nonattendance of doctors and lack of diagnostic facilities that most of the public hospitals in the country are facing?

We urge the Narayanganj hospital authorities to ensure a clean environment for the patients and replace the existing broken beds immediately. According to a hospital official, the government has decided to upgrade this hospital to a medical college hospital soon. We think, before planning big, it should solve the existing problems of the hospital. There should be a monitoring mechanism in place to oversee that our public hospitals are run efficiently without which quality treatment to the people, who have no other alternative but to seek treatment in these facilities, can't be provided.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial /June 27, 2018

অর্থনীতি নিয়ে ‘নয়ছয়’ বন্ধ হোক

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

তিন শ বছরের কিছু আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ভবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার নির্ধারণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ (টার্গেটিং), সরকারের ব্যাংক এবং ব্যাংকসমূহের ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে অর্থনীতির ওঠানামা সামাল দিয়ে আসছে। সম্প্রতি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সুদের হার ‘নয় ও ছয়’ হবে ঘোষণা দেওয়ায় এবং সাম্প্রতিক কালে এই একই সংগঠনের আরও কিছু কার্যকলাপের ফলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ও অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ‘নয়ছয়’ একটি বাংলা বাগ্ধারা, যার অর্থ হলো অপচয়। কাকতালীয় হলেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিএবির মুখ থেকে আসা এই ‘নয় ও ছয়’-এর ঘোষণাটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।

আগে বাজার অর্থনীতিতে সরকারই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করত। নিয়ন্ত্রণের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে ছিল প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা, একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, জনস্বার্থ, বিশেষত ভোক্তা, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। পরে দেখা গেল যে সরকার এ কাজ সুচারুভাবে করতে পারে না। রাজনৈতিক প্রভাব, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব, অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া, স্বার্থের সংঘাত এর অন্যতম কারণ। ফলে বিশ্বব্যাপী স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার উদ্ভব ঘটে। যেমন ব্যাংকিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রভৃতি। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেল যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না বা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (১৯৮২) অর্থনীতিবিদ জর্জ স্টিগলার প্রথম ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলে’র (রেগুলেটরি ক্যাপচার) ধারণাটি প্রবর্তন করেন। সাধারণভাবে এর অর্থ হলো নিয়ন্ত্রিত সংস্থাসমূহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল। আগেই বলেছি, জনস্বার্থ সুরক্ষার জন্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ গঠন করা হয়ে থাকে। কিন্তু জনস্বার্থের পরিবর্তে যখন এসব সংস্থা যাদের নিয়ন্ত্রণ করার করার কথা ছিল, তাদের স্বার্থে কাজ করে, বলা হয়ে থাকে, তখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। যেমন ধরুন, আমাদের দেশে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রয়েছে। এটা গঠন করা হয়েছে মূলত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু তা না করে বিএসইসি যদি কেবল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কতিপয় কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ করে, তাহলে বলা হবে যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলের ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা

উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে ব্যাংকমালিকেরা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, এমনকি সংসদকেও প্রভাবিত করে তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আদায় করতে সমর্থ হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইনের এক সংশোধনীর মাধ্যমে তাঁরা বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৪ এবং পরিচালনা পর্ষদে সদস্যদের মেয়াদ ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সমর্থ হন। এরপর তাঁরা ক্যাশ রিজার্ভ রেসিও (সিআরআর) ১ এবং রেপো রেট শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করা অর্থের সীমা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে সমর্থ হন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তাঁরা ব্যাংক কোম্পানির জন্য করপোরেট আয়করের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে নন-পাবলিকলি ও পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্য যথাক্রমে ৪০ ও ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করাতে সমর্থ হন। সর্বশেষ তাঁরা ঋণের ওপর ৯ শতাংশ ও জমার ওপর ৬ শতাংশ সুদ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিএবির ঘোষণা অনুসরণ করেছে।

অসুবিধা কোথায়? 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক খাতের করপোরেট ব্যবস্থাপনার সংকট। ব্যাংক কোম্পানি আইনের এক সংশোধনীর মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৪ এবং পরিচালনা পর্ষদে সদস্যদের মেয়াদ ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার ফলে করপোরেট ব্যবস্থাপনার সংকট আরও ঘনীভূত হবে। সিআরওর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ, রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করা অর্থের সীমা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রদান ও খেলাপি ঋণ উৎসাহিত হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক কোম্পানির জন্য আয়করের হার ৪৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ব্যাংকগুলোর মার্জারের এবং এই খাতে অতিপ্রয়োজনীয় সংস্কারের সম্ভাবনা ব্যাহত হবে। আর সুদের হার কী হবে, তা বিএবি নয়, বাজারই নির্ধারণ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতির মাধ্যমে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারে।

কেন এমন হলো? 

দেশের মুদ্রানীতি নির্ধারণ, পরিচালনা ও ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, উল্টো বিএবি তার সাম্প্রতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে লেখার শুরুতে উল্লেখিত ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল’ সম্পন্ন হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তিনটি কারণে। আমাদের দেশে বিভিন্ন নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হলেও এদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, প্রায়ই এসব সংস্থায় অমেরুদণ্ডী ও জি হুজুর-টাইপের প্রধান নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে, যাঁরা নিরপেক্ষভাবে সংস্থা পরিচালনার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহলের হুকুম তামিলে ব্যস্ত থাকেন। সর্বোপরি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা ও সরকারপ্রধানের বিশ্বাসভাজনতা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক কালে এ ক্ষেত্রে আমরা ঘাটতি লক্ষ করছি। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর যাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল, তারাই উল্টো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এখন তারা মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি সবকিছুই নির্ধারণ করছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দখল ও তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিণতি আমরা জানি। ১৯৯৬ ও ২০১১ সালের শেয়ার মার্কেট বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ব্যর্থতা, যার ফলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার কারণেই রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক দখল, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে; ২০১১ সালে তাদের সৃষ্ট অতিরিক্ত তারল্যের কারণে শেয়ার মার্কেটে ধস এবং নিয়ন্ত্রণে শৈথিল্যের কারণে খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনীতিতে নয়ছয় কেবল ব্যাংকিং খাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ব্যবস্থাপনাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রেই তা দৃশ্যমান এবং এগুলো ইতিমধ্যেই আমাদের অন্য সব খাতের অর্জনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বিএবির ওপরে উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো জাতির জন্য অশনিসংকেত বয়ে এনেছে। সুদের হার কম হোক, সিঙ্গেল ডিজিট হোক, বিনিয়োগ বাড়ুক, এটা আমরা সবাই চাই। তবে তা নির্ধারণের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। এটা বিএবির কাজ নয়। তাই ব্যাংকমালিকদের তাঁদের এখতিয়ারবহির্ভূত কাজকর্মের রাশ টেনে ধরতে হবে। ব্যাংকমালিকেরা নিশ্চয়ই ব্যাংকিং খাতসংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিতে পারেন, সরকারের কাছে তাঁদের দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু এ খাতের বিষয়ে তাঁরা একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্ররোচিত করতে পারেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং সরকারপ্রধানকে তা করতে হবে এখনই।
  • মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান: সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

গাজীপুরে ভোটারের হাত থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল


গাজীপুরের পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে সবার সামনেই জালভোট দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। ভোটারের কাছে থাকা তিনটি ব্যালট পেপারের মধ্যে শুধু মেয়র পদের ব্যালট নিয়ে সিল দিয়ে বাক্সে ফেলছিলেন। ওই ব্যক্তি নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের হাত থেকে মেয়র পদের ব্যালট পেপার টেনে নিয়ে কেন্দ্রের ভেতর এক বহিরাগত ব্যক্তি নিজ উদ্যোগেই নৌকা প্রতীকে সিল মারছিলেন।

‘আপনি কেন সিল মেরে দিচ্ছেন’—এমন প্রশ্নে বুথ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তি।

এ ঘটনায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ওই কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টরা নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের প্রায় সবাইকে গলায় ঝুলিয়ে রাখা কার্ড প্রদর্শন না করে শার্টের নিচে, পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রের কাছে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের বসে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে ধানের শীষের এজেন্টদের দেখা যায়নি।

আজ সকাল থেকে পুবাইলের বসুগাঁও এলাকায় পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা যায়, মোট আটটি বুথে পুরুষ (১-৪) ও নারী (৫-৮) ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। নারীদের জন্য চারটি ও পুরুষদের জন্য চারটি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ নম্বর বুথে বিএনপির কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। বাকি বুথগুলোয় দায়িত্ব পালন করা বিএনপির এজেন্টরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন তাঁদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ১ নম্বর বুথে (পুরুষ) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট রয়েছেন। এর বাইরে ব্যালট বাক্সের সামনে সাদা টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ভোটারের হাতে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার তুলে দেওয়ামাত্র সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তি ব্যস্ততার সঙ্গে ভোটারের হাত থেকে শুধু মেয়র পদের ব্যালট পেপার টেনে নিচ্ছেন এবং সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরে দিচ্ছেন। বাকি দুটো ব্যালট পেপারে ভোটার নিজেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

এই প্রতিবেদকের সামনেই ঘটনাটি ঘটছিল। এই প্রতিবেদক ওই ব্যক্তিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ‘আপনি কে? আপনি কেন ভোট দিচ্ছেন’—জিজ্ঞেস করা মাত্র কোনো জবাব না দিয়ে তিনি দ্রুত ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

এ নিয়ে ওই বুথে দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাঁর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার মানা করার পরও তিনি এ কাজ করছেন।’

সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তিকে এরপরও কেন্দ্রে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়।

ওই সময় পর্যন্ত ওই বুথে ১০৩টি ভোট পড়েছিল।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম। তাঁকে এই ঘটনা জানানো হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পাননি। কোনো বুথে বহিরাগত কেউ থাকতে পারবেন না। ওই সময় তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের বুথ থেকে বহিরাগত লোক থাকলে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

বুথের ভেতরে নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের ফোন ব্যবহারের অভিযোগ করা হলে তিনি সবার ফোন ফেরত নেওয়ারও নির্দেশ দেন।

বেলা ১১টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন।

তবে ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পরিদর্শন শেষে কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত লোকজন প্রায় সব কটি বুথে ঢুকে পড়ে প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে থাকেন।

আটটি বুথের বেশির ভাগের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট না হয়েও নৌকার ব্যাজধারী বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এবার তাঁরা ভোটারের হাত থেকে নয়, সরাসরি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকেন। তবে তাঁরা শুধু মেয়র পদের সাদা রঙের ব্যালট পেপারই নিচ্ছিলেন। ভোটারের নাম জিজ্ঞেস করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরতে দেখা যায় তাঁদের। প্রতিটি বুথে এমন একাধিক ব্যক্তি এই সিল মারার কাজ করেছেন।

৮ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই জানালেন. নাম মো. আশরাফুল আলম। গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। বাসা পুবাইলে। বললেন, ‘নৌকার জন্য এটুকু কাজ করতে হয়।’

ওই বুথেই ধানের শীষ প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে এক ব্যক্তিকে জালভোট দিতে থাকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে গল্প করতে দেখা গেছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, নাম সাকিব হোসেন। এই কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট মোবারক মোল্লার কাছ থেকে ধানের শীষের এই কার্ডটি পেয়েছেন বলে জানালেন।

৬ নম্বর বুথে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পরা একজন নৌকা প্রতীকে ব্যালট পেপারে সিল মারছিলেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নাম মো. রাসেল। পুবাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। এবার ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আতাউল্লাহকে ওই সময় বুথ থেকে বুথে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। তিনি বহিরাগত ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি এক বুথ থেকে বের করে অন্য বুথে যাওয়া মাত্র বহিরাগত ব্যক্তিরা ফের ঢুকে জালভোট দেওয়া শুরু করেন।

ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকার এজেন্ট

পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের উল্টো দিকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে করাত ও ঠেলাগাড়ি মার্কা আর মেয়র পদে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের আলাদা ক্যাম্প রয়েছে সেখানে। সেসব ক্যাম্প থেকে ভোটারদের হাতে যাঁর যাঁর প্রতীকের ছাপ দেওয়া ভোটার নম্বরের চিরকুট দেওয়া হচ্ছিল। ধানের শীষের প্রতীকের ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যানার ও পোস্টার থাকলেও তাঁর কোনো এজেন্ট নেই। ধানের শীষের এজেন্টদের বদলে সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ছবিসহ নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী চারজন ভোটার চিরকুট বিতরণ করছেন। তাঁদের একজনের কাছে বিএনপির ক্যাম্পে বসে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘বিএনপির কোনো এজেন্ট এখানে বসেননি। ফাঁকা পেয়ে আমরা বসেছি।’

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি কমাতে আগ্রহ কম

গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি ও অপচয় কমানো এবং গ্রাহক প্রতারণা বন্ধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। বারবার লক্ষ্য ও সময়সীমা পরিবর্তন করেও প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের বিষয়টি কোনোভাবেই গতিশীল করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ করা সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রত্যেক গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনা প্রায় চার বছর আগের। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক এবং প্রায় ৪০ লাখ গ্যাস গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা রয়েছে। সরকারি লক্ষ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখে উন্নীত হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে ১৩ লাখের কম।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের কিছু বেশি। সে হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি জুন পর্যন্ত প্রায় নয় মাসে প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৮ লাখ। এ অবস্থায় আগামী আড়াই বছরে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে মিটারের আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব।

আবাসিক খাতের একজন গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহারের হিসাব দেখিয়ে বিল নেওয়া হয়, গ্রাহকের ব্যবহার তার চেয়ে অনেক কম। ফলে গ্রাহক প্রতিনিয়ত ঠকছেন। যেসব এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, দুই চুলা ব্যবহারকারী একজন গ্রাহক দুই মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকার গ্যাস ব্যবহার করেন। অথচ মিটার ছাড়া গ্রাহককে দুই মাসে দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা।

গ্যাসের বর্তমান গ্রাহক (আবাসিক, শিল্প ও অন্যান্য) প্রায় ৪০ লাখ। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছে মাত্র ১০ হাজার গ্রাহক। আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক-নির্বিশেষে গ্যাস, বিদ্যুৎ উভয় ক্ষেত্রেই প্রি-পেইড মিটারের সুবিধা অনেক। এতে গ্রাহক রিচার্জ কার্ড ব্যবহার করে নিজের প্রয়োজন ও ইচ্ছেমতো গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। আবার বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের আগেই বিল পাবে, যা এখন পায় প্রায় দুই মাস পর। বিল নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ ও হয়রানিরও অবসান হবে।

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম সমন্বয় করছে মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি সহায়তা সংস্থা পাওয়ার সেল। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম একটু পিছিয়ে পড়েছে ঠিকই। শিগগিরই এই কার্যক্রম গতিশীল করা হবে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি যতটুকু, তার সবই হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় কয়েক হাজার মিটার দেওয়া হয়। এরপর বিষয়টি থেমে যায়। অথচ সরকারের পরিকল্পনায় আবাসিক গ্রাহকের জন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা ছাড়াও ‘গ্যাসের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য’ সিএনজি ও শিল্প খাতে ইভিসি (ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টার) মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো মিটার স্থাপন করা হয়নি। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা গ্যাসের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণগত বিশাল পার্থক্য থেকে যাচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকলে সিএনজি স্টেশন ব্যবহৃত ‘ভলিউমেট্রিক’ মিটারে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারিত হয় না। কম গ্যাস ব্যবহার করেও তাঁরা বিল বেশি দেন। আর গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর হিসাবে তা ‘সিস্টেম গেইন’ (পদ্ধতিগত লাভ) হয়।

এ সম্পর্কে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস বিতরণের এই ব্যবস্থায় কোম্পানির লোকসান নেই। কেননা, তারা গ্যাস কম দিয়েও বিল ঠিকই পাচ্ছে। কিন্তু সিএনজি স্টেশন এবং শিল্পমালিকেরা বছরের পর বছর ধরে কেন এটা মেনে নিচ্ছেন, সেটি এক রহস্য। হয়তো বিলের বিষয়ে বিতরণ কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের কোনো বোঝাপড়া থাকতে পারে। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। কারণ, এই ব্যবস্থায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস চুরি ও অপচয় হচ্ছে।

এদিকে যেসব বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন, তাঁরা এক নতুন হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। এই হয়রানি প্রি-পেইড কার্ড রিচার্জ করা নিয়ে। কারণ, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের কিছু শাখা ছাড়া প্রি-পেইড মিটারের কার্ড রিচার্জ করার সুযোগ নেই। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, রাজধানীতে রিচার্জ করার জন্য অনুমোদিত ব্যাংক ও শাখা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, মিটারের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ানো এবং সাধারণ দোকান থেকে রিচার্জ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে রিচার্জ করার পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • Courtesy: Prothom Alo /June 27, 2018

বাইরে সুনসান ভেতরে গড়বড়

গাজীপুরে ভোটচিত্র

সোহরাব হাসান

সকাল ৮টা ২ মিনিট। টঙ্গী বাজারের কাছে মন্নু টেক্সটাইল মিল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখি, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ভোটারদের লম্বা লাইন। বেশির ভাগ লোকের বুকে নৌকার ব্যাজ। দু-একজনের কাছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীকও আছে। কিন্তু কাউকে ধানের শীষের ব্যাজ নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে দেখলাম না। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হলো। এত বড় লাইনেও একজন বিএনপি সমর্থক নেই! এরপর ব্যাজ পরেননি এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, নৌকার প্রতীক নিয়ে যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবাই নৌকার লোক নন। অনেকে নৌকা কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে এসেছেন। তাঁর এ কথার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম আরেকটি কেন্দ্রে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী দাবি করলেন, অন্য প্রতীক নিয়ে ধানের শীষে কাজ করার জন্য তিনি একজনকে বের করে দিয়েছেন।

টঙ্গী ও গাজীপুরে যেসব কেন্দ্রে ‘ভোট উৎসব’ দেখেছি, চেহারা মোটামুটি অভিন্ন। কেন্দ্রের বাইরে নৌকার প্রতীক নিয়ে সবাই ঘোরাফেরা করছেন। ভেতরে সুনসান। কোনো হল্লাচিল্লা নেই। ভোটাররা ভোটও দিচ্ছেন। একজন তরুণ ভোটার বের হতে হতে বললেন, ‘দুইটা সিল মাইরা আইলাম।’ একজনের দুটো সিল মারা কিংবা এলাকার ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও ভোট দেওয়া বন্ধ করতে পারেন যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, তাঁরাই ছিলেন অনুপস্থিত।


রাস্তার পূর্ব পারে টঙ্গী শ্রম কল্যাণকেন্দ্রে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল ছয়টি বুথের মধ্যে দুটিতে বিএনপির এজেন্ট আছেন। এজেন্টের কার্ড নিয়েছিলেন চারজন। দুজন কার্ডই নেননি। পাশের রওশন এরশাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন বয়স্ক ভোটারকে জিজ্ঞেস করি, কোনো গোলযোগ হয়েছে কি না। তিনি বললেন, গোলযোগ বলতে আপনি কী বোঝাতে চান? বললাম, মারামারি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদি। তিনি বললেন, সেসব হয়নি। তবে আসল গোলযোগ হয়েছে। ভোটটা অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি।

রেনেসাঁ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখলাম টেলিফোনে আলাপ করছেন। অপর প্রান্তে কে ছিলেন জানি না। এ প্রান্ত থেকে তিনি বলছেন, ‘স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মতো ভোট হচ্ছে।’ আরেকবার বললেন, আধা স্বচ্ছ। তাঁর কথায় রহস্য আছে মনে হলো। এই কেন্দ্রেই নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয়, যিনি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি জানতে চান, আপনারা কী দেখলেন। বললাম, অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট নেই। তাঁর জবাব, কোনো প্রার্থী নির্বাচনী এজেন্ট না দিলে তো প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কিছু করার নেই। কিন্তু কী কারণে প্রার্থী এজেন্ট দেননি বা দিতে পারেননি, সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব ইসিরই।


টঙ্গী ও গাজীপুরে যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বলেছেন, ভালো ভোট হয়েছে। কিন্তু কেন ধানের শীষের এজেন্টরা নেই, সেই প্রশ্নের সদুত্তর তাঁরা দিতে পারেননি। বলেছেন, ছিলেন তো। হয়তো কোথাও গেছেন। একটু পরেই ফিরে আসবেন। কিন্তু বিকেল চারটা পর্যন্ত কেউ ফিরে আসেননি।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এক শ কেন্দ্র থেকে তাঁদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। গাজীপুরে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫ টি। আমরা সরেজমিনে যা দেখেছি, তাতে বিএনপি এক শ কেন্দ্রেও ঠিকমতো এজেন্ট দিতে পারেনি। তাহলে বিএনপি কি আগেভাগেই মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল?

বেলা আড়াইটায় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডলের অফিসে তাঁর সঙ্গে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। তিনি বেশ আস্থার সঙ্গে বললেন, ‘ভালো ভোট হয়েছে। দু-একটা কেন্দ্রে কিছুটা গোলযোগ হয়েছে। সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন এবং ব্যবস্থাও নিয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে আলাপ চলাকালেই সকালে ঘুরে আসা টঙ্গীর একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা টেলিফোন করে এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘আপনাদের কেউ কাছাকাছি থাকলে এখানে পাঠান। বেশ চাপে আছি।’ ততক্ষণে ব্যালটপেপারে জবরদস্তি সিল মারার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার খবর অনলাইন সংবাদপত্র ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে।

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

For foreigners, Dhaka more expensive than Frankfurt, Boston


Dhaka, the capital city of Bangladesh, is more expensive than Frankfurt of Germany, Brussels of Belgium and Boston of the United States, according to web sites reports.

Mercer's 24th annual Cost of Living Survey, released on Tuesday, ranked Dhaka at 66th costly city for foreigners among 209 cities of the different countries of the world.

In fact, Dhaka is the second most expensive city in South Asia after Mumbai (55th) of India for the expats.

Mercer's survey reveals that Hong Kong has passed Luanda to take the top spot as the world's most expensive city for expatriates.

Tokyo and Zurich are in second and third positions, respectively, with Singapore in fourth, up one place from last year.

This means that four out of five of the world's most expensive cities for expatriates are now in Asia.

Other cities appearing in the top 10 of Mercer's costliest cities for expatriates are Seoul (5), Luanda (6), Shanghai (7), N'Djamena (8), Beijing (9), and Bern (10).

The world's least expensive cities for expatriates are Tashkent (209), Tunis (208), and Bishkek (207).

Mercer's widely recognized survey is one of the world's most comprehensive, and is designed to help multinational companies and governments determine compensation strategies for their expatriate employees.

New York City is used as the base city for all comparisons, and currency movements are measured against the US dollar.

The survey includes over 375 cities throughout the world; this year's ranking includes 209 cities across five continents and measures the comparative cost of more than 200 items in each location, including housing, transportation, food, clothing, household goods, and entertainment.

Mumbai (55) is India's most expensive city, followed by New Delhi (103) and Chennai (144). Kolkata (182) and Bengaluru (170) are the least expensive Indian cities ranked.

Elsewhere in Asia, Bangkok (52) jumped fifteen places from last year.

Kuala Lumpur (145) also rose in the ranking, up twenty places, while Hanoi (137) plummeted thirty-seven places.

Bishkek (207) and Tashkent (209) remain the region's least expensive cities for expatriates.

Australian cities have fallen in the ranking this year. Brisbane (84) and Perth (61) dropped thirteen and eleven spots, respectively, while Sydney (29), Australia's most expensive ranked city for expatriates, experienced a relatively moderate drop of five places.

  • Courtesy: The Financial Express/ June 27, 2018

RHD takes ‘unviable’ road project at inflated cost

The Roads and Highways Department (RHD) has taken up a road upgradation project at a bloated cost despite its 'unviability', official said on Monday.
Project insiders said the RHD itself has shown that there will be very poor return from the project.

Besides, the cost proposed for the project is much higher than that of the similar ongoing projects in the same region of the country.

The project in question is the upgradation of Mostafapur-Madaripur-Shariatpur-Ibrahimpur-Harina-Chandpur (Vatialpara) regional road to a national highway at a cost of Tk 9.29 billon.

All the three major indicators -- Net Present Value (NPV), Benefit-Cost Ratio (BCR) and Internal Rate of Return (IRR) -- have shown either negative or "zero" return from the costly road project.

They said the RHD has sought more funds for land acquisition than that for the main road construction work under the project.

The RHD has proposed 46.53 per cent cost for land acquisition, while it will require nearly 30 per cent for main road upgradation work, insiders said.

Besides, it has also sought nearly 13 per cent of the total project cost for purchasing two axle-load weighing machine for the 35-km road.

According to the RHD proposal, it has sought Tk 4.32 billion or 46.53 per cent of the total project cost for land acquisition only.

It has sought Tk 1.16 billion or 12.50 per cent of the total cost for purchasing two axle-load weighing machines.

Besides, the RHD in its project proposal said it would require Tk 27.17 million to build one km road.

It is spending Tk 21.45 million for constructing one km of paved road under Faridpur (Maizkandi)-Boalmari-Gopalganj (Bhatiapara) road upgradation project.

Again, under the ongoing 'Road Development, Barishal Zone Project', the RHD has kept aside only Tk 4.52 million fund on an average for constructing one km of paved road.

Besides, the RHD has proposed inflated cost for construction of bridges, culverts and also for earth work.

A PC official said they are scrutinising the project seriously, as RHD has proposed an exorbitant cost compared to other road projects.

"Many important and priority projects of the government are facing fund shortage. So, we will not approve those projects, which are of less priority and viability," said a senior PC official.

  • Courtesy: The Financial Express/ June 27, 2018

Tuesday, June 26, 2018

Gas crisis in Chattogram

If crisis of natural gas has been endemic in Chattogram, it has become worse of late. One explanation offered by officials at the Karnaphuli Gas Distribution Company Limited is that pigging work being carried out to remove accumulated carbon and other by-products in the pipeline has temporarily caused the pressure of gas to abruptly fall. Once the task gets completed the pressure of gas will become normal and the crisis will be over. Flushing the unwanted residues from a 175-kilometre-long pipeline cannot be completed overnight. This much is understood. What is however not clear if it is a routine work carried out in order to avert clogging of the supply line by unwanted by-products. In fact, shortage of gas has had a serious consequence on industrial belts in and around Chattogram.

A myth was created by the official circle that the country was virtually floating on natural gas - the reserve of which would last for eternity. How this unwise misrepresentation of gas reserve affected industrial initiatives is a story of frustration and anguish. Investors were enthusiastic about the prospect of using gas as fuel for their factories and industries and they started setting up productive units in an increasing number. But suddenly they were given the disappointing news that the natural gas reserve was much too limited to serve them. Many factories in Chattogram could not go into operation simply because they did not receive gas connection after long wait. They did not have provision for use of other types of fuel or the alternative types would render their venture unprofitable. Housing in the port city also suffered because domestic gas connection was suspended when an objective estimate of gas reserve was at hand.

As a precious resource this country was fortunate enough to strike underground, natural gas suffered the ultimate misuse imaginable. Apart from the Tengratila and Magurchhara gas blowouts, the undying flames in common consumers' kitchens have depleted the fuel in no small measures. Metered use of gas could sustain the supply of gas for domestic use for many more years. Time will arrive soon when residents of cities enjoying this near endless supply will find it totally empty. Both the authorities concerned and consumers are to blame because neither of them gave a good account of themselves so far as rational use of gas is concerned. New gas reserves are yet to be found. Unless offshore reserves in the Bay of Bengal are stricken and made use of, the country's reliance on imported fossil fuel will increase.

Now the government has become wiser. It has already gone for import of liquefied natural gas (LNG). But even here the cart was put before the horse instead of the other way round. The ship carrying LNG has arrived for weeks but it cannot be delivered because the infrastructure for its delivery could not be readied. The fault with the transmission line has delayed the process. This is undesirable. Whose fault is this? People in charge should be taken to task for not making a proper plan and its execution. Had this been accomplished well in time, the impact of disruption of the piped gas would not be so severe on Chattogram.

  • Courtesy: The Financial Express/Editorial/ June 26, 2018