Search

Monday, July 2, 2018

নির্বাচনী ব্যবস্থায় উদ্বেগজনক সংযোজন

কামাল আহমেদ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দল এখন পরোক্ষে হলেও মেনে নিয়েছে যে তাদের আমলে নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং মহাজোটের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, একেবারে নিখুঁত নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার-সমর্থক সাংবাদিক ও কলামিস্টদের কয়েকজন লিখেছেন, খুলনা ও গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত ছিল। সুতরাং যাঁরা ভোটকেন্দ্রে বাড়াবাড়ি করেছেন, ব্যালটে ইচ্ছেমতো সিল মেরেছেন, তাঁদের এটুকু করা উচিত হয়নি। এগুলো না করলে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করার সুযোগই পেতেন না। এসব যুক্তির মানে দাঁড়ায় অনিয়ম হয়েছে তবে তা ফলাফল বদলে দেওয়ার মতো নয়।

অনিয়মগুলোর একটি বিবরণ বলছে, ‘ওপরে সুনসান, ভেতরে গড়বড়’ (সোহরাব হাসান, প্রথম আলো, ২৭ জুন ২০১৮)। আর গণমাধ্যমে যেসব চিত্র উঠে এসেছে তাতে বেশির ভাগই বলেছেন, গাজীপুর ছিল খুলনার চেয়েও ভালো। ‘ভালো’ বিশেষণটি সম্ভবত ব্যবহৃত হয়েছে ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ অর্থে। খুলনায় দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ ছিল চোখে পড়ার মতো। আর গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণের পুরোভাগে ছিল পুলিশ এবং প্রশাসন। খুলনায় ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের তাড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। আর গাজীপুরে বিতাড়ন নয়, অভিযোগটা পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপির এজেন্টদের অপহরণের। গুম, ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের মতো ঘটনাগুলো যখন দেশে ভয় ও আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তখন নির্বাচনী এজেন্ট অপহরণের ঘটনাকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় এক নতুন ও উদ্বেগজনক সংযোজন হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে।

একবার ভাবুন তো, সাদাপোশাকের লোকজন ‘জরুরি কথা’ আছে বলে ডেকে নিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে কাউকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে গেলে তিনি তা কীভাবে প্রতিহত করবেন। তাঁর দল আরও অসংখ্য বিকল্প এজেন্ট ঠিক করে রাখলেও দ্বিতীয় কেউ কি ওই ঝুঁকি নেবেন? গণমাধ্যমের খবর ও অভিযোগ অনুযায়ী, যাঁদের উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ভোটের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের পাশের জেলায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুম বা ক্রসফায়ারের শিকার না হওয়ায় তাঁরা যে অনেকেই এখন সদকা দেবেন, সন্দেহ নেই। ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোতে পুলিশ লাইনসের বদলে কোথায় ঠাঁই হবে, তা কে জানে।

গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পুলিশ ও সরকার যেভাবে অস্বীকার করে থাকে, এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গাজীপুরের পুলিশ সুপার বলেছেন, বিএনপির কোনো এজেন্টকে আটক বা তুলে নেওয়ার কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। আইনবহির্ভূত কাজে জড়িত থাকলে পুলিশ তার রেকর্ড রাখবে বাংলাদেশে এমন কথা কেউ কখনো শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সুতরাং কাগজে-কলমে এ রকম কোনো তথ্য তো থাকার কথা নয়।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা এবং যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে তাদের আর বিব্রত করার কোনো মানে হয় না। আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং অনিয়মের অভিযোগের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব কমিশন সম্ভবত সরকারের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপারের ক্ষেত্রে অন্তত সে রকমটিই দেখা গেছে। বিএনপি তাঁকে প্রত্যাহারের দাবি জানালে কমিশন তার জবাব দেয়নি, জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্তা এইচ টি ইমাম। আবার খুলনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি দলের অভিযোগ শুনেই তার ওপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য কমিশন ঢাকা থেকে নতুন একজনকে পাঠিয়ে নজির তৈরি করেছে।

ভোটকেন্দ্র অথবা বাড়ি থেকে পোলিং এজেন্টদের তুলে নেওয়ার বিষয়টি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। তাও একজন-দুজন নয় যে একে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলা যাবে। অন্তত ৪২ জনকে অপহরণের হিসাব পাওয়া গেছে (সূত্র: প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার)। বিএনপির দাবি, এর কয়েক গুণ। নির্বাচনী কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কোনোভাবেই এই অপরাধের দায় অস্বীকার করতে পারেন না। পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার আইনগত অধিকার না থাকলেও এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী কর্তাদের ভূমিকা সূত্রে মানবাধিকার কমিশন নিশ্চয়ই এসব গুরুতর অপরাধের তদন্ত করতে পারে। আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা তো অসীম। চাইলে পরে অন্য অনেক বিষয়ের মতো এ ক্ষেত্রে আদালতও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

নির্বাচনী ব্যবস্থায় এই উদ্বেগজনক পরিবর্তন ছাড়াও গাজীপুরে ভোটের দিনে এবং নির্বাচনী প্রচারে যেসব অনিয়ম ও অসংগতি দেখা গেছে, সেগুলোর প্রতিটিই এর ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট এবং তদন্তের দাবি রাখে।

১. মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় এক-চতুর্থাংশ কেন্দ্রেই ভোট প্রদানের হার ছিল অস্বাভাবিক। রিটার্নিং কর্মকর্তা যে ফল ঘোষণা করেছেন, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ৪০টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে অস্বাভাবিক কম (১৪ থেকে ৪০ শতাংশ) এবং ৬১টি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক (৭৩ থেকে ৯৪ শতাংশ) বেশি (ডেইলি স্টার)। ধারণা করা অমূলক হবে না, যেখানে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে, সেখানে ভোটের হার কম, আর যেখানে ইচ্ছেমতো বাক্সে ব্যালট ভরা হয়েছে, সেখানে এই হার বেশি।

২. পর্যবেক্ষকদের মতে, সাড়ে ৪৬ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি পর্যবেক্ষক সংস্থার জোট, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ, ইডব্লিউজি বলছে, তারা ১৫৯টি অনিয়ম দেখেছে। প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

৩. নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা যেসব অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেছেন, তার মধ্যে আছে পোলিং এজেন্ট এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জোর করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা।

৪. পর্যবেক্ষকেরা ৮৮টি কেন্দ্রে ভোট গণনা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তার মধ্যে ২টিতে দেখেছেন নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে লিখেছেন। বাকি যে ৩১৮টি কেন্দ্রের গণনা পর্যবেক্ষকেরা দেখেননি, সেগুলোর কোনোটিতে যে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি, তা দাবি করা যাবে না। সুতরাং শুধু জোর করে ব্যালটে সিল মারা নয়, গণনাতেও মনগড়া হিসাবের অভিযোগ আছে।

৫. কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রচার ও কেন্দ্রে অননুমোদিত কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও সে রকমটি অনেক কেন্দ্রেই ঘটেছে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর এজেন্টদের অনুপস্থিতিতে এক পক্ষের সমর্থকদের এ ধরনের প্রচার ও জমায়েত সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে—সেটাই স্বাভাবিক।

৬. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একজন মেয়র পদপ্রার্থীর দেওয়া খাবার খেয়েছেন বলে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন। স্পষ্টতই এটি নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন।

৭. ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশের হামলা, যা স্পষ্টতই অনিয়মের হোতাদের উৎসাহিত করে নিরীহ ভোটারদের নিরুৎসাহিত করেছে।

৮. কয়েকটি কেন্দ্রে দুপুরের আগেই ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়া। এর মানে হচ্ছে ওই সব কেন্দ্রের ভোটারদের একটা অংশ ভোট দিতে পারেনি।

৯. কমিশনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুলিশ বিরোধী দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের গ্রেপ্তার করলেও কমিশন পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

১০. নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সেখানে উপস্থিতির জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁদের তিরস্কৃতও করেননি।

নির্বাচনে অনিয়ম এবং ভোট দখলের অভিযোগ শুধু বিএনপি এবং পর্যবেক্ষকদের নয়। বিএনপির মিত্র নয় এমন দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সিপিবি বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সবার এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। দলটি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়কে ‘সাজানো ফল’ বলে অভিহিত করেছে।

খুলনার পর মনে হচ্ছিল নির্বাচনের নতুন দুটো মডেল তৈরি হলো। একটি ৫ জানুয়ারির মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, অন্যটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন—যেখানে সবকিছুই এমনভাবে সাজানো হবে যাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটি হবে শুধু ক্ষমতাসীন দলকে বিজয়ী করার একটি আনুষ্ঠানিকতা। গাজীপুরের সাজানো নির্বাচনের মডেলে যুক্ত হয়েছে নতুন উপাদান, এজেন্টদের অপহরণ করে ভোটের সময়টুকু আটকে রাখা।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ২,২০১৮ 

নুরের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে পরিবার


কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আহত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক নুরুল হক নুরকে মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় নুরের শারীরিক অবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার পরিবার।

সোমবার দুপুরে পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন নুরের ভাবি মিতা হক।

তিনি বলেন, ‘নুরের শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ। গতরাতে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার পর আমিও অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। নুরের চিকিৎসার স্বার্থে ও তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা তাকে সব কিছু থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করছি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিতা হক বলেন, ‘গতরাতে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বের করে দেয়। তারা নুরকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে রোববার রাতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ হাসপাতাল ঘিরে ফেলে। আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন আমাদের বের হয়ে যেতে বলে, আমরা বাধ্য হয়ে নিচে নেমে আসি।’

‘নিচে নেমে দেখি অনেক মিডিয়াকর্মী হাসপাতালের নিচে অপেক্ষা করছে। তাই হাসপাতালের গেট লাগিয়ে রাখা হয়, আমাদের বের হতে দেয়া হচ্ছিল না। পরে অনেক রিকুয়েস্ট করে আমরা হাসপাতাল থেকে কোনো রকমে বের হয়ে একটা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চলে আসি। নিরাপত্তা বিবেচনায় এখন আমরা কোথায় আছি, তা বলতে পারছি না’ যোগ করেন নুরের ভাবি।

এর আগে গত শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শীর্ষ নেতা নুরুল হক নুরকে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ তাকে সেখানেও চিকিৎসা দেয়নি। পরে ধানমন্ডির বেসরকারি আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নুরকে।

  • কার্টসিঃ পরিবর্তন ডটকম /জুলাই ২,২০১৮ 

NBR misses revised target by 9.0pc, original 17.0pc

Tax revenue collection in FY '18


Doulot Akter Mala
Tax-revenue mobilised by the National Board of Revenue (NBR) fell short of the revised target by Tk 200 billion in the just concluded Fiscal Year (FY), according to a provisional figure.

Revenue officials and experts attributed the shortfall to the setting of an 'ambitious' target by the government.

The NBR collected an aggregate Tk 2.05 trillion worth of tax revenue in FY 2017-18 against the revised target of Tk 2.25 trillion. Original target for tax revenue collection was Tk 2.48 trillion for the last FY.

According to the provisional data, the revenue collection shortfall is Tk 430 billion against its original target. However, the revenue collection achieved 20 per cent growth over the last FY. In FY 2016-17, the NBR achieved 19 per cent growth in revenue collection.

IT, VAT & CUSTOMS

Both income tax and Value Added Tax (VAT) wing posted around 22 per cent growth each in FY' 18. Customs wing lagged behind achieving 13 per cent growth over the corresponding period, according to NBR figure.

In FY' 18, VAT wing collected the highest revenue worth Tk 778 billion, income tax wing Tk 662 billion and customs wing Tk 615 billion.

Officials said the target was ambitious for NBR in view of current economic condition and pace of private sector investment. A senior official of the NBR said the revenue collection figure may go up after compilation of final data by the end of this month (July).

"We are happy with the impressive growth of revenue collection. The growth may be within 23 to 25 per cent after getting all revenue collection figures until June 30 from the field level offices," he said.

The NBR managed to minimise the volume of its revenue collection shortfall by end of the FY. The shortfall in revenue collection was Tk 300 billion until April while, the volume of shortfall in tax revenue collection was Tk 230 billion in July-March period. Average revenue collection growth in the last five years was 14.28 per cent.

The original revenue collection target for NBR was set expecting 45 per cent growth over the last year. The revised target for the current FY was also set expecting 32 per cent growth over the actual tax revenue collection last year.

‘TARGET WAS OVER-AMBIOUS’

For the upcoming FY, the government has set Tk 2.96 trillion target for NBR eyeing 33 per cent growth. The target is Tk 710 billion higher than that of the revised tax revenue collection target for the current FY.

Talking to the FE Sunday, former finance adviser Mirza Azizul Islam said the government should set revenue collection target considering its trend of last few years. "The target of revenue collection was over-ambitious," he added.

Also, the NBR needs to initiate sufficient steps to expand the tax base rather than increasing tax rate, he added.

There are many people escaping payment of tax who are living outside the major cities, he added.

The revenue board should lay emphasis on collection of proper VAT, he added.

"Many of the shops avoid giving cash memo to the consumers to evade VAT. They do this with the help of a section of VAT officials," he added.

NBR officials said the enforcement mechanism will be strengthened this year with the help of a number of new budgetary measures.

Officials said the compilation of final revenue collection data is taking time this year as it would be reconciled with the Controller General of Accounts (CGA) data.

Last year, there was a large gap between NBR's compiled revenue collection data and CGA's actual figure.

The NBR recorded Tk 1.85 trillion revenue collection in FY 2016-17 but CGA found actual collection of Tk 1.71 trillion.

  • Courtesy: The Financial Express/ Jul 02, 2018

নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে ১৪ বিশিষ্টজনের বিবৃতি


এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের বিশিষ্ট ১৪ নাগরিক। 

গতকাল সাংবাদিক, লেখক কামাল লোহানী  স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃবিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অজয় কুমার রায়, কথাশিল্পী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, লেখক ও রাবির সাবেক অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, শাহজাহাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ, সাহিত্যিক ও কলাম লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার, নাট্যকর্মী মামুনুর রশিদ, সাবেক অধ্যাপক ও সংস্কৃতি কর্মী কাজী মদিনা, শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এএন রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, সংষ্কৃতি কর্মী শংকর সাঁওজাল এবং সংগীত শিল্পী সঙ্গীতা ইমাম। 

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে এমপিওভুক্তির ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তারপরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলা হচ্ছে। এদিকে পাঁচ হাজার ২৪২টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষামন্ত্রণালয় জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করায় শিক্ষকরা চরম হতাশ।

স্বীকৃতির সময় ছয় বছর বেতন দেব না, এ শর্ত দিয়ে ২০ বছর বা তা চেয়ে বেশি সময় বেতন না দেয়া কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে হবে। ১৯৯৪ সালে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী তাদের মুখে শরবত তুলে দিয়ে বলেছিলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের আর কোনো আন্দোলন করতে হবে না। অথচ তার সময়েই শিক্ষকরা রাস্তায় অনশন করছে। পুলিশের নির্যাতন সহ্য করছে। যা জাতির জন্য যেমন কলঙ্কের তেমনি বেদনারও। শিক্ষকদের দাবি দাওয়া দ্রুত মেনে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। 

  • কার্টে সিঃ মানবজমিন/ জুলাই ২,২০১৮ 

Anti-quota campaigners under BCL cosh!

Imperious impunity
Several leaders of the platform demanding civil service quota reform were allegedly set upon by the members of the BCL while they were about to address a press conference regarding the issue on June 30. And this was not for the first time that students ventilating their grievances collectively have suffered the wrath of the BCL activists. Predictably, the matter was denied by the BCL central leaders claiming that no BCL activists were involved in the violence. The explanations they offered do not hold water and the pictures say otherwise.

The behaviour of the Chhatra League activists, particularly on the campus of the country's highest seat of learning, provokes one to ask a few fundamental questions. Firstly, don't the students have the right to air their demands or the liberty to dissent? Secondly, who has given the right to an appendage of the ruling party to stifle the students' demand by force? There have been similar instances in the past where AL appendages were seen trying to chastise opposition dissent behaving as another arm of law enforcement.

We have commented many times before about the unbridled behaviour of the BCL activists, not only in DU but also in several other educational institutions. Regrettably, the central leadership of the party has not moved strongly enough to restrain these elements. Despite the PM expressing annoyance in the past, the situation has not changed. The responsibility of maintaining law and order or addressing students' demands is that of the University administration. We would hope that they would not allow their responsibilities to be outsourced to any student organisation.  

Courtesy: The Daily Star/ Editorial/ Jul 02, 2018 

TIB slams inertia of government

TORTURE OF WOMEN MIGRANT WORKERS

The Transparency International Bangladesh (TIB) yesterday expressed deep concern over the return of several hundred female migrant workers from the Middle East reportedly after being abused and tortured by their employers.

Slamming the visible inertia of the authorities concerned in the country's migration sector in such a crisis, the international graft watchdog's Bangladesh chapter urged the government to ensure accountability of related institutions to stop irregularities, according to a statement.

ENSURE RIGHTS & SECURITY

The TIB called upon the government to ensure the rights and security of female migrant workers in the Middle East, the statement reads.

It says in the last week of June alone, around 120 tortured female workers returned home from the Middle East. In the previous month, 260 others were forced to come back.

“At one end, the return of hundreds of female migrant workers from the Middle East after being subjected to brutal torture, abuse and fraudulence is a glaring instance of lack of good governance in the migration sector.

“On the other hand, the inertia of the authorities concerned over the issue is frustrating and an insulting proof of lack of empathy towards women's rights,” said TIB Executive Director Dr Iftekharuzzaman.

“It is the government's responsibility to ensure the rights, security and legal assistance of the hapless women who went abroad leaving behind their families and dear ones with a hope of financial security and to contribute to the country's economy.

“It is expected the government will take necessary steps in this regard,” he observed.

However, it is unfortunate that no such efforts from the government's end were seen, he added.

COMPENSATE ABUSED WOMEN WORKERS

He also urged the government to take steps to rehabilitate and compensate the abused female workers and take effective measures to prevent this from happening again. Mentioning that allegations of torture of female migrant workers in the ME nations including Saudi Arabia are nothing new, Iftekharuzzaman urged the government to take strict measures in this regard.

He recommended halting the process of sending female workers to those countries where they were subjected to abuse and torture until the countries pledge to prevent such occurrences and sending female workers to countries which are relatively safer and more humane.

He put stress on ensuring legal security of female migrant workers in the destination countries through bilateral agreements, if necessary, by bringing amendment to the legal framework to bring the perpetrators to the book, and ensuring the victims' compensation, medical assistance and due salaries.

  • Courtesy: The Daily Star/ Jul 02, 2018

Sunday, July 1, 2018

জিতলো কে?

রুমীন ফারহানা

একটি সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যখন কোনও নির্বাচন হয় তখন তাতে হার-জিতের বিষয়টিও হয় সহজ,সরল, স্বাভাবিক। যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয় হার-জিত তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে যেহেতু কোনও কিছুই সহজ সরল স্বাভাবিকভাবে হওয়ার কোনও কায়দা নেই, তাই যেকোনও নির্বাচনের পরপরই একটি প্রশ্ন চারপাশে ঘুরপাক খেতে থাকে। জিতল কে? প্রার্থী, দল, গণতন্ত্র, ভোট, নাকি সবক’টিই? এখানে কখনও প্রার্থী জেতে,দল জেতে তো কখনও জেতে ভোট বা গণতন্ত্র। সবক’টি একত্রে জেতার সৌভাগ্য আমাদের জীবনে কমই আসে। পত্রিকাগুলো শিরোনাম করে–‘জিতল মফিজ হারলো গণতন্ত্র’। এ এক আজব অবস্থা।

যেমন ধরুন সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে যদি এখন প্রশ্ন করা হয় এই নির্বাচনে জিতল কে, তাহলে তার সহজ স্বাভাবিক উত্তর হওয়া উচিত ছিল আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, যিনি ২ লাখেরও অধিক ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু আদতে বিষয়টি বোধহয় তত সরল নয়। নির্বাচনটি ঘিরে নানা তরফে এত কথা শোনা যাচ্ছে যে চট করে এর একটি সহজ উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন। আওয়ামী লীগের তরফে যখন দাবি করা হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, মানুষ বিএনপির রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে দেশের অব্যাহত উন্নয়ন, অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে রায় দিয়েছে, ঠিক তখনই ঘৃণাভরে নির্বাচনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি করেছে বিএনপি। ওবায়দুল কাদের অবশ্য বিষয়টি খোলাসা করে বলেছেন যে ‘জিতলে আছি হারলে নাই’ নীতিতে চলছে বিএনপি। তার ভাষায় বিএনপি ‘নালিশ পার্টি’, সুতরাং এই নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবার কিছু নেই।

তবে মুশকিল হলো নির্বাচনটি নিয়ে কেবল যদি বিএনপি আপত্তি তুলতো তাহলে বলার কিছু ছিল না। নালিশ পার্টি নালিশ করবে তা নিয়ে অস্থির হলে চলে না। কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকগুলো এই নির্বাচন নিয়ে গত কয়দিন যাবৎ শিরোনাম করতে গিয়ে লিখেছে, ‘নিয়ম অনিয়মের নির্বাচন’। বলেছে, ‘বাইরে সুনসান ভেতরে গড়বড়’, ‘দিনভর বহিরাগতদের অবস্থান’ কিংবা ‘আওয়ামী লীগ জিতেছে গণতন্ত্র হেরেছে’, ‘খুলনার অভিযোগ গাজীপুরেও’, ‘খুলনার চেয়েও একধাপ এগিয়ে’, ‘অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট, ব্যবধানও বেশি’– ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি বিবিসি এই নির্বাচন নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে তাদের হতাশার কথাই ব্যক্ত করেছে। জাতীয় দৈনিকগুলোর কল্যাণে এই নির্বাচনের যে চিত্র আমরা জানতে পেরেছি তাতে মূলত বলা হয়েছে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে সিল মারা, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ব্যালট ছিনতাই, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের হুমকি ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, কেন্দ্রের ভেতর বাইরে বহিরাগতদের দাপট ইত্যাদি। লক্ষণীয় বিষয় হলো এই সকল অন্যায় অনিয়ম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা বড় অংশকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে, যাতে প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

একটি কথা বারবারই উঠেছে। তা হলো বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিল না। বিএনপির মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল, যারা বারবারই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেছে তাদের কেন পোলিং এজেন্ট থাকবে না? এবার নাকি খুলনার তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে গাজীপুরে তিন সেট এজেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছিল যাতে এক সেট আটক বা নির্যাতনের শিকার হলে পরবর্তী সেট দায়িত্ব নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিন সেট এজেন্ট তেমন কাজে আসেনি। কারণ, তাদের কাউকে ভোটের আগের রাতে, কাউকে ভোটের দিন ভোরে বাড়ি থেকে,কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। 

ভয়ে আতঙ্কে বা গ্রেফতার এড়াতে অনেকে বাড়ি থাকতে না পারলেও শেষ রক্ষা হয়নি। কেন্দ্রের ভেতর বুথ থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ বা ডিবি তুলে নিয়ে গেছে তাদের। ভয়ে নাম পরিচয় গোপন করা সত্ত্বেও এমন ৪২ জন সম্পর্কে জানা গেছে, যারা বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট বা কেন্দ্র কমিটির সদস্য ছিলেন। এদের গাজীপুর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যাতে তারা কোনও ভূমিকা পালন করতে না পারে এবং একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা অন্য এজেন্টদের মধ্যেও ভীতির সঞ্চার করেছে, যাতে তারা মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। জানের মায়া সবারই আছে, নাকি? আরও মজার বিষয় হলো, ভোটের আগের দিন সন্ধ্যায় এলাকা থেকে সক্রিয় নেতাকর্মী ধরে নিয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ, যাদের পরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাওয়া যায়। 

গাজীপুরে শেষের কয়েক দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতারের এতটাই স্টিমরোলার চালান হয় যে অবশেষে নির্বাচনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা আসে এই গণগ্রেফতার বন্ধ করার জন্য। যদিও ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। গ্রেফতারের শিকার হয়েছে অগণিত নেতাকর্মী আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এই আতঙ্ক সৃষ্টিই ছিল মূল উদ্দেশ্য। পুলিশের গাড়িতে  ঘুরেছে সরকারি দলের প্রার্থী, অন্যদিকে বিরোধী দল ব্যস্ত ছিল জান বাঁচানোর খেলায়। নির্বাচনের এত চমৎকার  এবং সুপরিকল্পিত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ কে দেখেছে কবে? আর সকল মুশকিলের আসান-স্বরূপ একজন এসপি তো ছিলেনই সর্বক্ষণ।

গাজীপুরের নির্বাচনটি এতটাই সুনিয়ন্ত্রিত এবং সুপরিকল্পিত ছিল যে ফলাফল ঘোষণার ৪ দিন পার হলেও এর বিশ্লেষণ চলছে এবং নানা নিত্যনতুন আঙ্গিকের দেখাও মিলছে। ২৮টি সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ বা ‘ইডব্লিউজি’ তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে বলছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাড়ে ৪৬ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। এত নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকার পরও যখন প্রায় ৫০ শতাংশ  কেন্দ্রেই অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায় তখন আর যাই হোক সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলার কোনও রাস্তা থাকে না। নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মী এবং একশ্রেণির সুশীল বুদ্ধিজীবী বলার চেষ্টা করছেন ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে মাত্র ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে, শতকরা হিসাবে যা ২ শতাংশের বেশি হবে না। মজা হলো, অনিয়ম সবক’টি কেন্দ্রেই হয়েছে, স্থগিত হয়েছে বা প্রকটভাবে সামনে এসেছে কেবল ৯টি কেন্দ্র। 
ধরা যাক একটি এলাকায় ২ লাখ লোকের বাস। আমরা যদি সেখানে কোনও জরিপ চালাই তাহলে ২০০ থেকে ৫০০ জনের ওপর জরিপ করে সেটাই ওই এলাকার জনমতের প্রতিফলন বলে ধরে নেবো। এটাই রীতি। আর পর্যবেক্ষক বা সাংবাদিক কখনোই সব কেন্দ্রে যান না, যাওয়া সম্ভবও না। একজন অভিজ্ঞ নির্বাচন বিশ্লেষক বলছিলেন যে বাংলাদেশের নির্বাচনের ধারাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ৯১ পূর্ব নির্বাচন, ৯১ থেকে ২০০৮ এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য, ৯১ পরবর্তী যে নির্বাচনের ধারা আমরা তৈরি করেছিলাম তা আর ধরে রাখতে পারিনি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইতিহাস পুরো বিষয়টিকেই বদলে দিয়েছে। এখন ভোট মানেই পুলিশ, প্রশাসন, ক্যাডার ব্যবহার করে সরকার দলীয় প্রার্থীর জয়লাভ। ভোটের সঙ্গে এখন আর ভোটারের তেমন সম্পর্ক  নেই।

সম্প্রতি গাজীপুর আর খুলনা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানাতে গিয়ে সরকারি দলের তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এদেশের নির্বাচন নিয়ে একমাত্র ভারত ছাড়া আর কোনও দেশের মন্তব্য শুনবার মতো ধৈর্য সম্ভবত সরকারের অবশিষ্ট নেই।

গাজীপুর বা খুলনা সিটি নির্বাচন ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এতে হারলেও সরকার পরিবর্তনের কোনও সুযোগ ছিল না। বরং নির্বাচনটা যদি সত্যিকার অর্থেই সুষ্ঠু হতো তাহলে সরকারের দাবি যে তাদের অধীনে ভালো নির্বাচন সম্ভব সেই দাবিই জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা পেত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, আমরা অতীত সরকারের খারাপ নজিরগুলো কেবল যে চর্চা করি তাই নয়, বরং আরও শতগুণ খারাপ কী করে করা যায় তার প্রতিযোগিতায় নামি। তাই আজকে যেকোনও নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গেলেই শুনতে হয় ‘মাগুরা নির্বাচনে’র কথা। এই ‘মাগুরা নির্বাচনকে’ আদর্শ ধরে এগোনোর ফলে প্রতিটি নির্বাচনই এখন ‘মাগুরা মার্কা’ নির্বাচন। পরিশেষে বলি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আর নির্ভুল ভোটার তালিকা দিয়ে কী হবে যদি ভোটার তার ভোটটাই দিতে না পারে?

  • লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
  • কার্টে সিঃ বাংলা টিবিউন/ জুলাই ১, ২০১৮

রক্তাক্ত কোটা সংস্কার, বন্ধকী বিবেক

গোলাম মোর্তোজা


নুরুলদের অপরাধ কী? কেন তাদের উপর এই বর্বর নির্যাতন?

ক. নুরুলরা এমপি-মন্ত্রী বা বড় ব্যবসায়ীর সন্তান নন। তারা গ্রামীণ চাষা-ভুষার সন্তান। এটা তাদের অপরাধ।

খ. যাদের দামি গাড়ি আছে। যাদের সন্তানরা ২০ হাজার ডলার মূল্যের ঘড়ি পরেন। গাড়ির নিচে পিষে মানুষ মারেন, তাদের কাছে ন্যায্যতার কথা বলা, নিঃসন্দেহে অপরাধ। যে অপরাধ নুরুলরা করছেন।

২.
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আর কি করার ছিল?’ বা ‘আর কিছু করার ছিল না’ - একদল মানুষ আছেন সব কিছুর পক্ষ নিয়ে যারা একথা বলেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন, দায়মুক্তির আইন, সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নমানের সড়ক, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, জনসম্পৃক্ত এসব বিষয়ে বারবার তারা এসব কথা বলেছেন।

যখন যুক্তি দেওয়া যায় না, তখন কুযুক্তি দেওয়া হয়। কুযুক্তিতে খুব একটা সুবিধা হয় না। তখন কুৎসিত বিষোদগার শুরু হয়। যুক্তির কাছে, কুযুক্তি-বিষোদগার, সবই তুচ্ছ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে যুক্তি।

যারা ক্ষমতাবান-যারা বিত্তবান, তারা ‘আর কিছু করার ছিল না’ বলে অপকর্মের পক্ষে অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেন। যুক্তি যারা দেন, তাদের উপর ক্ষিপ্ত হন। ক্ষিপ্ততা গোপন থাকে না, প্রকাশ দেখা যায়।

৩.
নুরুলদের ক্ষেত্রেও ক্ষিপ্ততার প্রকাশ দেখা গেছে। নুরুলরা ‘কোটা’ নিয়ে কথা বলেছেন। ‘কোটা’ যে কত ভয়াবহ মাত্রায় অযৌক্তিক পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে, তা যুক্তি দিয়ে তুলে ধরেছেন। তাদের যুক্তির পেছনে গবেষণা-তথ্যের যোগান দিয়েছেন ড. আকবর আলী খানসহ সমাজের কিছু বিদগ্ধ মানুষ।

নুরুলরা অযৌক্তিক অন্যায্য কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছেন, চেয়েছেন ন্যায্যতা।

যুক্তি না থাকায় ক্ষমতাসীনরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার বিরোধী ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখিয়ে বলেছেন ‘হঠাৎ করে কেন এই আন্দোলন?’

নুরুলরা তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, তাদের কোটা সংস্কারের দাবি গত কয়েক বছরের, হঠাৎ করে নয়। বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ‘জামায়াত- শিবির’। অসত্য অভিযোগ ভিত্তি পায়নি।

তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে ধারণ করে ন্যায্যতা প্রত্যাশা করেছেন। দৃশ্যমানভাবে প্রমাণ করেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও পুলিশ-র‍্যাবকে দিয়ে পেটানো হয়েছে। ছাত্রলীগকে দিয়ে আক্রমণ করানো হয়েছে। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। রাস্তা থেকে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কোনো কিছুই কোনো কাজে আসেনি। নুরুলরা চেয়েছিলেন ‘কোটা সংস্কার’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন ‘কোটা থাকারই দরকার নেই’। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কোটা বাতিল হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর কিছু বলার নেই। এও বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কোটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কিন্তু কোটা বাতিল বা সংস্কারের যে উদ্যোগ, সে বিষয়ে দীর্ঘ সময় ‘নীরবতা’ পালন করা হয়েছে। কখনো কখনো বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। ‘কিছু জানি না, নির্দেশ পাইনি’ ‘অগ্রগতি নেই’- জাতীয় কথা সচিব বলেছেন। নুরুলরা রাস্তায় নেমেছেন। তখন বলা হয়েছে, ‘প্রজ্ঞাপন জারির কাজ চলছে’।

‘প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত, বিদেশ থেকে ফিরলেই প্রজ্ঞাপন, রোজার পরে, ঈদের পরে’ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ফিরেছেন, রোজা-ঈদ গেছে, প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। গভীর নীরবতা চলছে।

৪.
কেন নীরবতা, সে বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নুরুলরা। মনে রাখতে হবে, তারা আন্দোলনের জন্যে রাস্তায় নেমে আসেননি। সরকার পতনের ডাক দেননি। তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলতে চেয়েছিলেন, কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করছেন না কেন, প্রজ্ঞাপন জারি করুন।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, এ কথা বলা যাবে না? আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে, নুরুলদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বলবেন, প্রজ্ঞাপন জারির কাজ চলছে, আর ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেবেন পেটানোর জন্যে? এ কেমন নীতি? যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদকারী হিসেবেই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ তো সে কারণেই তাদের শ্রদ্ধা করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা অংশ বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে, ন্যায্যতার দাবিতে আন্দোলনরতদের এমন নির্লজ্জভাবে প্রহার করবে? বঙ্গবন্ধুর গড়া ছাত্রলীগ, লাঠিয়াল-মাস্তান বাহিনী হয়ে উঠল? ন্যায্যতার বিরুদ্ধে অন্যায্যতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে, সাধারণ শিক্ষার্থী নুরুলদের পিটিয়ে আহত-রক্তাক্ত করবে?

তুলনায় আপনি ক্ষিপ্ত হলেও স্মরণ করে দেখেন, আইয়ুব খানের কুখ্যাত এনএসএফ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন নির্দয়ভাবে নির্যাতন করেনি, ছাত্রলীগ এখন যা করছে। শিক্ষকদের কাছে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে পাঠান। শিক্ষিত শিক্ষকরা যে অন্ধ হয়ে গেছেন, তারা যে কানে শোনেন না, চোখে দেখেন না- গ্রামের কৃষক অভিভাবকরা তা জানেন না।

‘ভিসির বাড়ি কেন ভাঙল’- তেজী মূর্তিতে গর্ত থেকে একবার বেরিয়েছিলেন শিক্ষকরা। তখন লিখেছিলাম ‘ভিসির বাড়ি কারা ভাঙল’ তদন্ত করে তা প্রকাশ করার বা ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস শিক্ষক, সরকার বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই। বাড়ি ভাঙচুরের ভিডিও চিত্রে যাদের ছবি দেখা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক সাহস গর্ত থেকে বের হয়ে আসা সেই সব শিক্ষকরা বহু আগে বন্ধক রেখেছেন। তারা আবার গর্তে ঢুকে গেছেন।

নুরুলদের যারা লাথি-ঘুষি-পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকরা তাদের প্রায় সবাইকে চেনেন-জানেন। চিনি না বলার সুযোগ নেই, কারণ ভিডিও চিত্রে প্রায় সবাইকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এদের অনেকের কাছে শিক্ষকরা পদ-পদবির জন্যে তদবির করেন। অনেককে নিজের বা নিজেদের শক্তির জন্যে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা পৃষ্ঠপোষক হয়ে, কী করে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন!

৫.
শিক্ষক হয়ে নিজে যিনি ঘুষি দিয়ে আরেক শিক্ষকের নাক ফাটিয়ে দেন, শিক্ষার্থীদের দেখে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার উপর। তার শক্তির উৎস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী কৃষকের সন্তান নুরুলরা নয়। তার শক্তির উৎস লাঠিয়াল বাহিনী, যে লাঠিয়াল বাহিনী পেটায় কৃষকের সন্তান নুরুলদের। মানুষের বিবেক, শিক্ষকদের বিবেক কতটা নির্দয় হতে পারে! সন্তানতুল্য নুরুলদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হলো, শিক্ষকরা নিশ্চিন্তে ক্লাবে আড্ডা দিলেন, বাসায় ফিরে সন্তানকে আদর করলেন, ভাত খেলেন, ঘুমালেন। হাসপাতালে শুয়ে থাকা, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখা নুরুলদের, একবার স্বপ্নেও দেখলেন না! রক্তাক্ত নুরুলের মুখ, আহত- গ্রেপ্তার রাশেদের মুখ, শিক্ষকদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে না। যারা নুরুলদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করল তারা অক্ষতই থেকে গেল। যারা আহত হলো গ্রেপ্তারও হলো তারাই। এই আকালে একজন অধ্যাপক জাবেদ বাঁচাতে চেয়েছিলেন নাক- মুখ ফেটে রক্ত বের হওয়া নুরুল হককে। রক্তাক্ত নুরুল অধ্যাপক জাবেদের পা আকড়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন। আর কোনো শিক্ষক এগিয়ে আসেননি। রক্ষা করতে পারেননি অধ্যাপক জাবেদ, নিজে কিছুটা আহত হয়েছেন ছাত্রলীগের আক্রমণে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

এই বাংলাদেশে ৫৬ শতাংশ সরকারি চাকরি হয় কোটায়।

এই সেই শিক্ষকরা, যারা বাতাসের গতি বুঝে নুরুলদের কাছে গিয়ে সংহতি জানিয়েছিলেন।

এই সেই ছাত্রলীগ, কোটা আন্দোলনকারীদের প্রথম ‘বিজয়’ মিছিলটি তাদের দিয়ে করানো হয়েছিল। আগের রাতে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে, মাঝরাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে সূর্যসেন হলে আশ্রয় নিয়েছে যে ছাত্রলীগ, আবার পরের দুপুরে ‘বিজয়’ মিছিল করেছে সেই ছাত্রলীগ।

এই সেই ছাত্রলীগ, যাদেরকে দিয়ে সাধারণ ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করানো হয়েছে।

এই সেই ছাত্রলীগ, যাদেরকে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী নুরুলদের জখম-রক্তাক্ত করানো হলো।

  • কার্টেসিঃ The DailyStar Bangla/ jul 1, 2018 

বেসরকারি ব্যাংক খেলাপি বেড়ে দ্বিগুণ, তিন গুণ..

  • এক বছরে পূবালীর খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণ
  • স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বেড়ে হয়েছে তিন গুণ
  • সোস্যাল ইসলামীর খেলাপি ঋণ এখন দ্বিগুণ ছুঁই ছুঁই
  • সাউথইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে


সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও যে খারাপ হয়ে পড়ছে, তা দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। তবে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক চিত্র এক বছরে যে এতই খারাপ হয়েছে, তা একরকম আড়ালেই রয়ে গেছে। কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক বছরে দ্বিগুণ, আবার কারও কারও তিন গুণও বেড়েছে; যার প্রভাব পড়ছে মুনাফায়।

২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩ ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমেছে। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে না পারায় ১৩টি ব্যাংক নগদ লভ্যাংশও দিতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো নষ্ট করেছেন সরকারনিযুক্ত পরিচালকেরা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো খারাপ করার পেছনে দায়ী কিছু দুষ্ট প্রভাবশালী পরিচালক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা রয়েছে, তারপরও তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। এসব ব্যাংকের পরিচালকেরা সরকারকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করছেন। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

এদিকে, সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ জমার হার (সিআরআর), ঋণ আমানত অনুপাত সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ শতাংশ আমানত গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে। বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের চাপে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েমের সুযোগ অবারিত হয়েছে। কমানো হয়েছে ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক কর হারও। এর মধ্যে ব্যাংকমালিকেরা ঋণের সুদ হার কমিয়ে এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।    

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মার্চ শেষে দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের মার্চে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরে স্টান্ডার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন গুণ বেড়েছে। ২০১৭ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪২৮ কোটি টাকা, গত মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) মামুন ‐উ র‐রশিদ বলেন, ‘যেসব ঋণ আগে পুনঃতফসিল করা হয়েছিল, তা আবারও খেলাপি হয়ে পড়েছে। চেষ্টা করছি যোগাযোগের মাধ্যমে ঋণগুলো ঠিক করতে।’

পূবালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৭ সালের মার্চে খেলাপি ছিল ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, গত মার্চে তা হয়েছে ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, কেয়া গ্রুপের ৫৮০ কোটি টাকা ও চট্টগ্রামভিত্তিক এসএ গ্রুপের ২৮০ কোটি টাকার পুনর্গঠন করা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। তবে কেয়া গ্রুপ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

পূবালী ব্যাংকের এমডি আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা টাকা আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

মালিকানায় পরিবর্তনের পর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন দ্বিগুণ ছুঁই ছুঁই। ২০১৭ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৮৩৩ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ২২৯ কোটি টাকা মুনাফা করলেও গত বছরে তা কমে হয় ১৪৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক বছরে ১ হাজার ৮২৯ কোটি থেকে বেড়ে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা হয়েছে। এ ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেমকে পরিচালক পদ ছাড়তে হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবার।

সাউথইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণও এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫২ কোটি টাকা, গত মার্চে তা ১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

২০১৭ সালে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদল হওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ৩ হাজার ৩৬০ কোটি থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা হয়েছে। এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১১২ কোটি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা হয়েছে।

এদিকে আইএফআইসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ৯০৩ কোটি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫২৯ কোটিতে পৌঁছেছে। আইএফআইসির এমডি  শাহ আলম সারওয়ার বলেন, ‘নির্দিষ্ট মাসে অনেকেই কিস্তির টাকা ও সুদ পরিশোধ করতে পারে না। ফলে ত্রৈমাসিক হিসাবে খেলাপি অনেক মনে হচ্ছে।’
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১,২০১৮

‘দুর্ঘটনা’ বললেই ৪০৫ জনের মৃত্যুর দায় খালাস?

মওদুদ রহমান

১০৪ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ডেভিড গোডাল সুইজারল্যান্ডে এসে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করলেন গেল মে মাসে। বেঁচে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ওঠা ডেভিডের সঙ্গে যমদূতের দেখা করিয়ে দেওয়ার খরচ জোগাতে অনলাইনে উঠেছিল ১০ লাখ টাকারও বেশি চাঁদা। অথচ বাংলাদেশের সড়কে বিনা খরচাতেই তিনি দেখা দেন। প্রায় প্রতিদিনই তাঁর কাছ থেকে আমাদের পালিয়ে বাঁচতে হয়। যাঁরা কোনো কারণে পারেন না, তাঁরা মারা পড়েন, হয়ে যান নিহত হওয়ার ‘সংখ্যা’। এবারের রোজার ঈদে বাড়ি যাওয়া-আসার মাঝে মাত্র ১৩ দিনে মারা গেছেন ৪০৫ জন। এর মধ্যে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩৯। এই মৃত্যুগুলোর ওপর দুর্ঘটনার ট্যাগ লাগিয়ে দিলে অনেকেরই দায় খালাস হয়, এমনকি কিছু টাকার বিনিময়ে মামলা পর্যন্ত আপসরফা হয়ে যায়!

২০১১ সালে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সিগনাল, মানুষ, গরু ও ছাগল চিনতে পারার ক্ষমতাকে চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। একই সময়ে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষা ছাড়াই বাস-ট্রাকের জন্য নতুন করে ২৪ হাজার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সুপারিশে মদদ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতজন লাইসেন্স পেয়েছিলেন কিংবা কেবল গরু, ছাগল, সিগনাল আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারার যোগ্যতায় কতজন চালকের আসনে বসে এখন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই পরিসংখ্যান না থাকলেও মৃতের টালিখাতার হিসাব বলছে, বর্তমানে প্রতিদিন সড়কে কমপক্ষে ৬৪ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। আর পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ (প্রথম আলো, ২১ এপ্রিল, ২০১৮)।

কোনো ঘটনার মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। একই ক্রিয়ার নিয়মিত পুনরাবৃত্তিতে জনমনে প্রতিক্রিয়া আর জমে না। ঠিক তাই পত্রিকায় প্রতিদিন সড়কে মানুষ মারা পড়তে থাকার খবর আমাদের কাছে এখন শুধুই ‘সংবাদ’। নিহত ব্যক্তিদের এখন আর ব্যক্তি নামে মনে রাখার উপায় নেই, ‘বড়’ কোনো নাম জড়িত না থাকলে শুধু সংখ্যা উল্লেখেই দায়িত্ব শেষ করে ফেলে সংবাদমাধ্যমগুলো। আর দুই বাসের মাঝে রাজীব হোসেনের কাটাপড়া হাত ঝুলতে থাকার মতো ছবি প্রকাশ পেলে অনলাইনজুড়ে শুরু হয় কয়েক দিনের মাতম। সেই মাতম ঢাকা দিতে কখনো দেওয়া হয় চাকরির আশ্বাস, আবার কখনোবা খরচ হয়ে যাওয়া জীবনের দামের দফারফা হয় টাকার লেনদেনে (ইত্তেফাক, ২৪ জুন, ২০১৮)। কিন্তু এই ভয়াবহ ঘটনাগুলো লাগাতার কেন ঘটেই চলেছে, কী কারণে এই মৃত্যুমিছিল থামানোর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, কোন বাধায় রেল ও নৌ যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম দুটি বিকশিত হতে পারছে না—এসব প্রশ্ন উত্তরহীনই থেকে যাচ্ছে।


সড়ক দুর্ঘটনার যেকোনো আলোচনায় প্রধান বিষয় হয় চালকের অদক্ষতা, অসচেতনতা, আইন অমান্য করা এবং পথে বহু প্রাণের জিম্মাদার হয়েও বেপরোয়া মনোভাবের মতো বিষয়গুলো। অথচ তাদের কথা শোনার সময় আমাদের হয় না। 
চার বছর আগে এক গবেষণাকাজে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন রুটের চালকদের সঙ্গে কথা বলি, জানার চেষ্টা করি তাঁদের কথা। অধিকাংশ চালকই জানিয়েছিলেন, তাঁদের একার আয়ে সংসার চলে না। স্ত্রী এবং কোনো কোনো সময় ছেলেমেয়েদেরও অর্থ উপার্জনে নানা কাজে যুক্ত হতে হয়। 

জানিয়েছিলেন সুপারভাইজারদের প্রতিটি ট্রিপের সময় বেঁধে দেওয়ার কথা, সড়কে হয়রানি আর পুলিশি-অপুলিশি চাঁদাবাজির কথা। পুরোনো চাকা ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়া এবং সড়ক বিভাজক আর রোডমার্ক না থাকার মতো কারিগরি বিষয়গুলোও যে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, এ কথা তাঁরা দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করেন। কেউ কেউ আমাকে পালটা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী আসলে কে?’ (সর্বজনকথা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)।

সড়কে রোজার ঈদের আগে-পরে হতাহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ছয়টি নির্দেশনা জারি করেছেন। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, কমিটি গঠন, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি, বিশেষজ্ঞ সুপারিশ প্রস্তুত করার মতো কাজগুলো এ পর্যন্ত কম হয়নি। অথচ সরষের ভেতরেই থেকে যাওয়া ভূতের কারণে অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হয়েছে। সিস্টেমের এই ভূত বাঁচিয়ে সড়কে মানুষের মৃত্যু কেবল কয়েকটি নির্দেশনা জারির মাধ্যমে যে বন্ধ করা যাবে না, তা বলে দেওয়াই যায়। অন্তত নিকট অতীতের ইতিহাস আমাদের সেটাই বলছে। আর এ কারণেই ১৯৯৭ সালে প্রথম সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক অ্যাকশন প্ল্যানের পর ২০১১ সাল পর্যন্ত পরপর ছয়টি প্ল্যান অনুমোদন পেলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

ঘটনা ঘটার সব রকম পরিবেশ আর অব্যবস্থাপনা জারি রেখে ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে দুর্ঘটনা হিসেবে প্রচার করতে পারলেই বাংলাদেশে দায়িত্ববানরা দায়মুক্তি পান। এ কারণেই বছর হাজারে হাজারে মানুষ মরলেও কারও কোনো বিকার হয় না, বিচার তো দূরের কথা! বেঘোরে প্রাণ হারিয়ে সংখ্যার ফ্রেমে বন্দী হয়ে যাওয়া মানুষগুলো বারবার জানিয়ে যাচ্ছে, এ দেশের সড়কে মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। তারপরও ভোঁতা হয়ে যাওয়া অনুভূতির দোষে সড়কে নেমে কোনোমতে বেঁচে বাড়ি ফিরতে পেরেই এখন আমাদের খুশি থাকতে হয়। আর নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব শেষ হয় কিছু লোকদেখানো নির্দেশনা জারি করার মাধ্যমে। অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার চলতে থাকা এই দুষ্টচক্র না ভাঙলে হয়তোবা ভবিষ্যতে সড়কে মৃত্যুই হবে এখন বেঁচে থাকা অনেকের নিয়তি। কাজেই দুষ্টচক্র ভাঙার চেষ্টা এই মুহূর্তে অনেক বেশি জরুরি।

  • মওদুদ রহমান। প্রকৌশলী, গবেষক। 
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১,২০১৮