- এক বছরে পূবালীর খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণ
- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বেড়ে হয়েছে তিন গুণ
- সোস্যাল ইসলামীর খেলাপি ঋণ এখন দ্বিগুণ ছুঁই ছুঁই
- সাউথইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে
সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও যে খারাপ হয়ে পড়ছে, তা দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। তবে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক চিত্র এক বছরে যে এতই খারাপ হয়েছে, তা একরকম আড়ালেই রয়ে গেছে। কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক বছরে দ্বিগুণ, আবার কারও কারও তিন গুণও বেড়েছে; যার প্রভাব পড়ছে মুনাফায়।
২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩ ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমেছে। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে না পারায় ১৩টি ব্যাংক নগদ লভ্যাংশও দিতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো নষ্ট করেছেন সরকারনিযুক্ত পরিচালকেরা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো খারাপ করার পেছনে দায়ী কিছু দুষ্ট প্রভাবশালী পরিচালক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা রয়েছে, তারপরও তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। এসব ব্যাংকের পরিচালকেরা সরকারকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করছেন। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ জমার হার (সিআরআর), ঋণ আমানত অনুপাত সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ শতাংশ আমানত গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে। বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের চাপে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েমের সুযোগ অবারিত হয়েছে। কমানো হয়েছে ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক কর হারও। এর মধ্যে ব্যাংকমালিকেরা ঋণের সুদ হার কমিয়ে এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মার্চ শেষে দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের মার্চে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরে স্টান্ডার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন গুণ বেড়েছে। ২০১৭ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪২৮ কোটি টাকা, গত মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) মামুন ‐উ র‐রশিদ বলেন, ‘যেসব ঋণ আগে পুনঃতফসিল করা হয়েছিল, তা আবারও খেলাপি হয়ে পড়েছে। চেষ্টা করছি যোগাযোগের মাধ্যমে ঋণগুলো ঠিক করতে।’
পূবালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১৭ সালের মার্চে খেলাপি ছিল ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, গত মার্চে তা হয়েছে ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
জানা গেছে, কেয়া গ্রুপের ৫৮০ কোটি টাকা ও চট্টগ্রামভিত্তিক এসএ গ্রুপের ২৮০ কোটি টাকার পুনর্গঠন করা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। তবে কেয়া গ্রুপ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
পূবালী ব্যাংকের এমডি আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা টাকা আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মালিকানায় পরিবর্তনের পর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন দ্বিগুণ ছুঁই ছুঁই। ২০১৭ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৮৩৩ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ২২৯ কোটি টাকা মুনাফা করলেও গত বছরে তা কমে হয় ১৪৬ কোটি টাকা।
বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক বছরে ১ হাজার ৮২৯ কোটি থেকে বেড়ে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা হয়েছে। এ ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেমকে পরিচালক পদ ছাড়তে হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবার।
সাউথইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণও এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের মার্চে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫২ কোটি টাকা, গত মার্চে তা ১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
২০১৭ সালে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদল হওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ৩ হাজার ৩৬০ কোটি থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা হয়েছে। এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১১২ কোটি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা হয়েছে।
এদিকে আইএফআইসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ৯০৩ কোটি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫২৯ কোটিতে পৌঁছেছে। আইএফআইসির এমডি শাহ আলম সারওয়ার বলেন, ‘নির্দিষ্ট মাসে অনেকেই কিস্তির টাকা ও সুদ পরিশোধ করতে পারে না। ফলে ত্রৈমাসিক হিসাবে খেলাপি অনেক মনে হচ্ছে।’
- কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১,২০১৮
No comments:
Post a Comment