অলিউর রহমান ফিরোজ
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ছাত্রলীগ যেভাবে বাড়াবাড়ি করছে, তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অবমাননাকর। যুগ যুগ ধরেই এ উপমহাদেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। দাবি আদায় করতে গিয়ে অনেকেই সরকারি বাহিনীর হাতে মারা পড়েছেন, কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট কিসের ইঙ্গিত বহন করছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কার ওপর বর্তায়? ছাত্রলীগ নাকি পুলিশের ওপর? যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, তারা যেন সে দলেরই লেজুড়বৃত্তি শুরু করেন। তারা যেভাবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে তা ভাবতে গেলে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে।
ছাত্রলীগ শুধু যে ছাত্রছাত্রীদের ওপরই অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে, তা নয়। তারা তাদের সম্মানিত শিক্ষকদের পর্যন্ত লাঞ্ছিত করতে দ্বিধা করছেন না। তাদের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অনেক সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে ছাড়ছে ছাত্রলীগ।
এখানেই শেষ নয়; এরা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের রাজপথে নাজেহাল করে ছাড়ছে। সাংবাদিক ভাইদের ছবি ওঠানোর সময় তেড়ে আসছে মারতে। তারা এতটা ক্ষমতা পায় কোথায়? আর এত সব ঘটনা ঘটে দেশের পুলিশ বাহিনীর সামনেই। তারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস কার্যক্রম চেয়ে চেয়ে দেখছে। তারা যেন কলের পতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য নেই। তারাও এখন ছাত্রলীগের মতোই সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে মানুষের সেবক হওয়ার কথা ছিল, এখন তারাই জুলুমকারী হিসেবে মানুষের সামনে মূর্তিমান আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিনা কারণে গাজীপুরে যেভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর পুলিশ চড়াও হলো, তা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। তারা এখন ভুলেই গেছে, তারা এ দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকায় চলে। অপর দিকে মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটি ছিল ন্যক্কারজনক। তিনি যদি কোনো অন্যায় আচরণ করে থাকেন তা আদালতই দেখবে। কিন্তু পুলিশ যেভাবে ছাত্রলীগকে পেটানোর সুযোগ করে দিলো তা ছিল ক্ষমার অযোগ্য।
যেভাবে মাহমুদুর রহমানের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাহায্য চাওয়া হয়েছিল তাকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সেখানে তাহলে পুলিশ কিভাবে একজন ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের ওপর ছেড়ে দিলো তাকে যখম করার জন্য? ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে তাহলে ধরে নিবো তারা কি এখন দলেরও ঊর্ধ্বে ওঠে গেছে।
এর আগে নৌকার লাঠি-বৈঠার মারামারির কারণে দেশের ভেতর সেনাশাসকরা মজা করে রাষ্ট্র দখল করতে পেরেছিল। তাদের কারণে দেশের স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়েছিল। কোটা আন্দোলনের পরিস্থিতি সহজেই সরকার মোকাবেলা করতে পারত। মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে যেগুলো যৌক্তিক ছিল সেগুলো সংস্কার করে তাদের দাবি মেনে নেয়াটাই ছিল যথোপযুক্ত। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাহলে আমরা কি আবার সেরূপ সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।
পুলিশ কেন এতটা বেপরোয়া মনোভাব ধারণ করবে। তার কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সে সেটিতেই নিয়োজিত থাকবে। সে কেন রাজনৈতিক মদদের মতো পেটোয়া বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হবে।
কুষ্টিয়ার ঘটনায় সেখানকার আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা জনগণের কাছে এখন কী জবাব দেবেন? অবশ্য কোনো অন্যায় কাজের জন্য তো তাদের কখনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না বরং যত নিপীড়ন চালাতে পারবে সে পুলিশের তত প্রমোশন হবে। কী অবাক করা দেশ?
কক্সবাজার জেলায় পুলিশের বড় কর্তা যেখানে নিয়েই ইয়াবার কারবারের সাথে জড়িত, সেখানে মাঠপর্যায়ে পুলিশের ইয়াবাবাণিজ্য যে আরো ব্যাপক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা হাজার হাজার পিস ইয়াবা ধরে মাত্র কয়েকটি দিয়ে চালান দেয় আদালতে।
বাকিটা তারাই মেরে দিয়ে অপর ইয়াবা কারবারির কাছে বিক্রি করে দেয়, কক্সবাজারের ঘটনা থেকে অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে। পুলিশ যদি জড়িত না হতো তাহলে ইয়াবা কারবারের এতটা প্রসার লাভ করতে পারত না।
- কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ৩০,২০১৮
No comments:
Post a Comment