সৈয়দ কবির হুসেন
আজ সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপককে তাঁদের সফল শিক্ষা কর্মজীবন শেষে সম্বর্ধনা জানানো হচ্ছে। শিক্ষক ‘সম্মানিত’ আমাদের দেশে আজকে মাত্র কয়েক দশকের ‘সম্ভবত’ রাজনৈতিক প্রথা। আর বলাবাহুল্য সেটি কেবলই অর্থের দাঁড়িপাল্লায়। সে জন্য আজও এক বঞ্চিত শিক্ষক সমাজের সদস্যরা এমপিওভুক্তির জন্য ‘জননীর’ কাছে আবেদন জানিয়ে চলেছেন। হয়তো তাঁদের সবুর করার পরীক্ষা চলছে। জাতীয় নির্বাচনের সুবিধাজনক শুভক্ষণে তাঁদের কপালে এমপিও জুটবে। তারা ধন্য হবেন।
শিক্ষকদের সিভিল ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য বহুকাল আগে থেকেই বিসিএস ক্যাডারের হায়ার সেকেন্ডারি পর্যায়ে শিক্ষক নিযোগের রীতি প্রচলিত আছে। এখন হয়তো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সিনিয়র শিক্ষক পদে এ ধরনের নিয়োগ দেওয়া হবে।
এমপিওধারী শিক্ষকরা বেশ মোটা বেতন পান বলতেই হবে। সে অর্থে তাঁরা সচ্ছল। তাই তরুণেরা এসব পদ পেতে স্বাভাবকি কারণেই খুবই আগ্রহী। সেই সাথে যদি ফাও কোচিংটাও ধরা যায়! আলাদা করে এনটিআরসিএ ( ন্যাশনাল টিচার্স রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) নামে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। আর সেই সাথে এতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কণ্টকিত বিধিবিধান শত হিসেবে দেওয়া হয়েছে যার একমাত্র উদ্দেশ্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা মেধার ভিত্তিতে।
এখন আমরা দেখবো ঐ সব শর্ত আসলে মেধাকে লালন করছে কি না। আমরা দেখেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাম্প্রতিককালে কী সব ঘটনা ঘটেছে। এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রী নিজেকেই কেমন করে হেনস্থা যোগ্য করে চুপ হয়ে গেছেন। আর দেখা গেছে আবেদনকারীদের হাতে যে অসাধারণ প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে যার বেশিরভাগ উৎপাদিত হয়েছে কোচিং সেন্টারে আর অবশ্যই ভুলে ভরা। যেভাবেই হোক চলে গেছে ইলেট্রনিক যন্ত্রে, সকল নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
আমাদের আজকের আলোচ্য বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৯, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত একটি ছোট সংবাদ। শিরনাম — ছেলেকে নিয়োগ দিতে আইন শিথিল করলেন ভিসি। উনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায়ের (বাউবি) সম্মানিত উপাচার্য - অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান। খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী ছেলে জাহেদকে বাউবি’র স্কুল অব বিজনেস-এর সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বারংবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি শিথিল করেছেন। অবশ্য এই সংশোধনের যথাপ্রক্রিয়া অনুসরণ করার হয়েছে সে বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য সংবাদে নেই। তবে বলা হয়েছে, এ সম্পর্কিত কাগজপত্রে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধকের স্বাক্ষর থাকার কথা সেখানে ড. মান্নান সই করেছেন। এটা কী ধরনের লক্ষণ বাউবি কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। ‘ এখানে শিক্ষক মহোদয়, ‘স্টেট, আই অ্যাম দ্য স্টেট’ মতো কারবার করেছেন না বলে উপায় নেই। তিনিই সর্বাধিকারী। তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এটা। হয়তো বা তিনি একটি বিশেষ ঐতিহ্যের ধারক যে ঐতিহ্যের ধারক হয়তোবা পদার্থবিদ্যার সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ও বাউবির প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা শমশের আলী নন।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ঠিক পরপরই এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিখ্যাত উপাচার্য ড. আবদুল মতিনের নিজ প্রযোজনায়। তিনি তাঁর আপন পুত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একান্ত করে নেবার ব্যবস্থা করতেন। তখন সকল বিধিবিধান তুচ্ছ করে সেই বিধিপরিপন্থি একান্ত ব্যবস্থা নিয়ে ছিলেন। কাজেই ড. মান্নান মনে হয় সেই তরিকার অনুসারী। একাজটির দায়ভার অবশ্য তাঁর যে একার নয় তা বলাবাহুল্য। ঢাবির সদ্যসাবেক ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকীর কথাই ধরি। তিনি শতাধিক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে । তাহলে তো ড. মান্নানের জন্য অধিকন্তু না দোষাবে কেন? বর্তমান ভিসি বলেছিলেন, কোটা নিয়ে তাঁর তো কিছু করার নেই। তবু তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। যার এই দুষ্কর্ম ঘটিয়েছে তাদের কোনো ট্রেস করা যায়নি। তবে ভিসি সাহেব ভালো আছেন। আর তাঁর গুণধর পুত্র বলেছেন তিনি কোটা প্রথার সমর্থক।
ড. আবদুল মান্নানও সম্ভবত এ ধরনের কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাইছেন বাউবিতে। তাঁর ৩৮ বছর শ্যালিকার চাকরি দিয়েছেন। অবশেষে পুত্রের একটা ব্যবস্থা করতে সমর্থ হলেন। আর খবর অনুযায়ী, আরও আত্নীয়ের জন্য এই আকালের বাজারে চাকরির একটা রাহা করতে পারলেন। এজন্য তাঁকেও ধন্যবাদ আমাদেরকে দিতেই হয়।
No comments:
Post a Comment