সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের অব্যাহত নিপীড়ন-অত্যাচারের কঠোর সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর যে অত্যাচার চলছে তা দেখে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার মাথা নত হয়ে যায়। আমি ভাবতে পারি না, এজন্যই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? এজন্যই কি জাতি দেশকে শত্রুমুক্ত করতে রক্ত ঝরিয়েছিল?’
মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি দল বাগসদ-এর উদ্যোগে গণপরিবহন খাতে বিরাজমান চরম নৈরাজ্য এবং দেশজুড়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক ভোট লুটের প্রতিবাদে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
কোটা ইস্যুতে সরকারের উদ্দেশ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা নিয়ে চাকরি হবে কেন? যারা যুদ্ধে আহত হয়েছেন তাদের সাহায্য করুন। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোটা চালু করুন। তাহলে তারা ভালো শিক্ষা পেলে নিজেরাই ভালো অবস্থানে যেতে পারবে। চাকরির জন্য তখন আর তাদের কোটার ওপর নির্ভর করতে হবে না।’
কিছু দুর্নীতিপরায়ন পুলিশ এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা’র পরামর্শে সরকার এখনও বেঁচে আছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার যখন গণতন্ত্রবিরোধী হয় তখন জনগণের প্রতি আস্থা রাখে না। তখন তারা আস্থা রাখে পুলিশ ও দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার ওপর। বর্তমানে ‘সেই আস্থাভাজনরাই’ সরকারকে বাঁচিয়ে রেখেছে।’
গাজীপুর ও খুলনায সিটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন পদ্ধতিতে ‘সূক্ষ্ম দুর্নীতি’ ছিল। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তারা পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতা ও নির্বাচনী এজেন্টদের গ্রেফতার করিয়েছে। তাদের এসব দুর্নীতির উত্তর একদিন না একদিন জনগণের সামনে দিতেই হবে।’
বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভীষণ খারাপ। ওষুধ দিলেও রোগী বাঁচবে না। উন্নয়নের কথা শুনলে মানুষ হাসে। টেলিভিশনে যখন উন্নয়নের কথা বলা হয় তখন দেশের জনগণ বলে- এই সরকারের উন্নয়ন মানে মহালুট।’
বিনা ভোটের সরকারের কথা কেউ শোনে না- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিনা ভোটে সরকার এসেছে সেহেতু বাস মালিক সমিতি সরকারের কথা শোনে না। যার কারণে গণপরিবহনে নৈরাজ্য হচ্ছে।’
ব্রিটিশ আমলের বাস এখন ঢাকায় চলে অভিযোগ করে রব আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরের যানজট অর্ধেক কমে যাবে যদি ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক করা হয়। যেখানে দুটি রাস্তা আছে সেখানে রিকশা-ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক চলবে। আর দ্রুতগামীগুলো ডানে চলবে। কিন্তু সবখানে উল্টোপাল্টাভাবে গাড়ি চলাচলের কারণে আজ এত যানজট।’
ক্ষমতাসীনদের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি করে রব বলেন, ‘সরকার বলে দেশের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে! খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পুলিশ ও বিজিবি এবং তাদের গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে দরজা আটকে দিয়ে আসতে আসতে সিল মেরেছে। কোনও খুনখারাপি হয়নি! নির্বাচন তো শান্তিপূর্ণ হয়েছে!’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও একবারে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বারবার পিছিয়ে তাঁর প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। এর পরিণতি ভাল হবে না। বেগম জিয়া আজীবন জেলে থাকবেন না। তিনি বেরিয়ে আসবেন। একদিন ওই জায়গায় (কারাগারে) আপনাদেরকে যেতে হবে। সেইদিন বেশি দূরে নয়। আমরা মাঠে নামলেই জনগণ আপনাদেরকে দেশছাড়া করবে।’
কোটা আন্দোলন নিয়ে রব বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে ১৬শ’ বছর পর্যন্ত কি কোটা থাকবে? তারা একটি ন্যায্য আন্দোলন করছে। আর সরকার তাদের মেরে রক্তাক্ত করছে। এটাই কি স্বাধীন দেশ?’
কোটার সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে অত্যাচার চালানো হচ্ছে তা পাকিস্তান আমলের নিপীড়নকেও ছাড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘তারা সংস্কার চেয়েছে। কিন্তু আপনি বাতিল করে দিলেন। আবার বলছেন কোটা থাকবে। এখন তাদের ওপরে আপনার গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা যেভাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করেছে পাকিস্তান আমলেও এভাবে নির্যাতন করা হয়নি।’
সড়ক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছে। আর সরকার বলছে দেখেশুনে সড়কে চলাচল করা উচিত। এতো বড় নির্লজ্জ সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনও আসেনি। কিছুদিন আগে মাদক নির্মূলের নামে ১৭৬ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ভিন্ন ধরনের খেলা খেলছে। এই খেলা বন্ধ করতে হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দেশে আমাদের গণতন্ত্রের স্পেস নাই তা-ই নয়, আজ আমাদের বেঁচে থাকাটাও সংকুচিত করা হয়েছে। এখন মানুষের বেঁচে থাকাটাই প্রধান আকুতি। সেখানে গণতন্ত্র বা অন্যান্য কিছু চাওয়া-পাওয়ার সুযোগই নাই। কারণ যে দেশে একজন বোনকে ২৫ জন হায়েনা নির্যাতন করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের লগি ভইঠা দিয়ে নাচতে নাচতে মারে, আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সে দেশে স্বাধীনতার কি মূল্য থাকে? প্রবল বৃষ্টিতে যখন সব কিছু ভেসে যায় তখন মানুষের বিবেক-বুদ্ধিও ভেসে যায় এসব দেখে।’
আলাল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র বলেছিল ‘আমি গরিব বাবার সন্তান যার কারণে আমি আন্দোলনে নেমেছি’। তাকে রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলেও তাকে মেরে মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। আইসিটি মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বদির মত লোককে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়। পুলিশের দুর্নীতিবাজ অফিসার ডিআইজি মিজান দুদুকে সারিন্দা বাজিয়ে বাজিয়ে ঢুকে যায়। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আসল রূপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন নিয়ে তো একটা খেলা শুরু হয়েছে। হোক সেটা স্থানীয় নির্বাচন বা জাতীয় নির্বাচন। এই খেলা বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের এক হাত ধরেছে নির্বাচন কমিশন আর একটা ধরেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনই হয়নি।’
আয়োজক কমিটির সভাপতি এস আল মামুনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারার সহ-সভাপতি শাহ আহমেদ বাদল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, জিনাফ সভাপতি লায়ন মিয়া মোঃ আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলাম রকিব প্রমুখ।
- কার্টসিঃ Braking news.com/ jul 3, 2018