Search

Thursday, July 19, 2018

Govt, central bank must probe vault gold tampering

THE mismatch both in quality and quantity detected in the gold deposited into the Bangladesh Bank vault in an investigation of the Customs Intelligence and Investigation Directorate of the National Board of Revenue comes with shock and worry on a couple of counts. Although the Bangladesh Bank has brushed aside the investigation report saying that the mismatch was due to clerical mistakes and differences in measurement, it leaves people confused, about the efficiency of the people concerned dealing with the deposits and their records and about the event itself. It also questions the security measures that the Bangladesh Bank has deployed. 

The earlier incident of $81 million of the Bangladesh Bank being stolen from the bank’s account with the Federal Reserve Bank in New York in February 2016 only comes to corroborate this perception. The CIID team, which conducted the investigation between January and April 2017 to check the stock of gold in the central bank vault, in some cases, found the quality of deposited gold ornaments better that what they measured at the time of deposition by customs officials. In one case, the team found 11.2 carats, with 46.66 per cent purity, in a gold disk and 2.63 carats, with 15.12 per cent purity, in a gold ring, which the bank received as 18 carat gold with 80 per cent purity.

In 44 cases, the team found the amount of gold more than what was initially recorded. In 23 cases, as for quality, the team found 22 carat gold ornaments which the bank received as 18 carats. A probable embezzlement, pending further investigation, of gold from the disk and the ring could cause the government Tk 1,12,000 in financial losses while disparity in the quantity and quality in gold bars and ornaments could cause the government Tk 19.1 million in financial losses. The central bank officials sought to say that they use a six-tier security system where even the governor needs authentication for entry and that they asked customs intelligence to have the gold checked at the Bangladesh Atomic Energy Commission, which the customs people refused, as they think the problems were with the quality measurement tools of customs intelligence. 

In a situation like this, it is imperative for the government to set up an independent investigation to find out whether the gold deposited into the Bangladesh Bank vault has either been replaced or tampered. It is now for both the government and the central bank to dispel the confusion that has been created centring on the matter.

The government and the central bank, under the circumstance, must set up an investigation to establish what happened to the gold deposited into the central bank vault and make the report public as people have the right to know this, especially after the Bangladesh Bank reserve theft from its account with New York’s Federal Reserve Bank. The issue also entails on the government to weigh the security system that the central bank has deployed and whether it is up to the standards that the central bank claims it to be.

Courtesy: New Age /Editorial /Jul 19, 2018

বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ বিদেশী

মেহেদী হাসান

  • বেকারত্বের বিপরীতে দেশে লাখ লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত
  • দেশে বেকার ৪ কোটি ৮২ লাখ মানুষ
  • রেমিটেন্সের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা প্রতি বছর নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা


দেশে চার কোটি ৮২ লাখ মানুষ প্রকৃত বেকার। বেকারত্বের কারণে ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে বিদেশে কর্মরত। কাজের অভাবে ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে হলেও বিদেশে যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ফিরছেন লাখ লাখ তরুণ বেকার। সংসারের অভাব মেটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা উপায়ে বিদেশের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ মারা যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশী।

একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ বেকার। বেকারত্বের এমন চিত্র যে দেশে সে দেশে তিন লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। এক দিকে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা বিদেশে কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অপর দিকে তাদের পাঠানো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ টাকা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এখানে কর্মরত বিদেশীরা। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল এবং বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত দেশে এ বিপরীত চিত্র মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। 

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বেকারের এ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী। আইএলওর সংজ্ঞা অনুসারে মাসে এক ঘণ্টা কাজ করে এমন লোকও বেকার নয়। তবে বিবিএসের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। 

গত বছর ৮ জুলাই আইডিইবি ভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে তিন লাখ বিদেশী কর্মরত।

২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এবং তারা প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লাখ বিদেশী কাজ করে। বেতনভাতা বাবদ তারা প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে যায়।’

২০১৩ সালের ২১ মে সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে ভারতের রেমিট্যান্স অর্জনবিষয়ক একটি খবরে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় কর্মরত রয়েছে। তাতে ভারত থেকে সে দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়, ভারতের যেসব অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকেরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে সেগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা। খবরটিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলা হয়, ভারতীয় নাগরিকেরা বাংলাদেশের গার্মেন্টস, টেক্সটাইলস এবং বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত রয়েছেন। 

গত বছর ৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিকের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে বলা হয় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে শুধু ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে গেছে। 

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের দি ইকোনমিক্স টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের তথ্য অনুযায়ী ভারত যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স (বিদেশে কর্মরতদের পাঠানো অর্থ) আয় করে তার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে। গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। তাদের মাধ্যমেই ভারত বাংলাদেশ থেকে এ বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স অর্জন করছে প্রতি বছর। 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১২ ও ২০১৩ সালে ভারত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় সৌদি আরব, চতুর্থ যুক্তরাজ্য ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে। 

২০১৩ সালে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকেরা ১৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। আর বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা ৪ বিলিয়ন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে গেছেন।

একটি তথ্যমতে বাংলাদেশের গার্মেন্টে ২২ হাজার গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্ট শিল্পের উঁচু পদগুলো বিদেশীদের দখলে রয়েছে মর্মে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা যে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছেন, তা নয়; বরং এ শিল্পের নিয়ন্ত্রণও অনেকটা তাদের হাতে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। 

দক্ষ জনবলের অভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয়সহ বিদেশীরা কর্মরত থাকলেও এ অবস্থা থেকে উত্তরণ তথা দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। উচ্চশিক্ষার সাথে বাস্তবতার সমন্বয়হীনতা ও শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি কয়েক বছর ধরে বহুল আলোচিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

২০১৬-১৭ বিবিএসের জরিপের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার ১৩ দশমিক ৪ ভাগ। অন্য দিকে যারা কখনো স্কুলে যায়নি তাদের বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম যথা ১ দশমিক ৫ ভাগ। 

২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দ্রুত বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১২তম।

২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে উচ্চশিার সুযোগ বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক েেত্রই তা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণে বাড়ছে শিতি বেকারের সংখ্যা। 

ইকোনমিস্টের এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে উচ্চশিায় বিনিয়োগ বাড়লেও শিার গুণগত মান বাড়েনি। এর ফলে শিতি বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আর শ্রমবাজার ও শিাসংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় নেই। স্থানীয় ও বিশ্ববাজারের চাহিদানুযায়ী উচ্চশিায় শিতিদের কারিগরি ও কাজ করার মতো দতা কম। তাই উচ্চশিতি স্নাতকদের অনেকে বেতন পান অনেক কম।

সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিদেশী নাগরিকেরা বিশেষজ্ঞ, কান্ট্রি ম্যানেজার, কনসাল্ট্যান্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মার্চেন্ডাইজার, টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, চিকিৎসক, নার্স, ম্যানেজার, প্রকৌশলী, প্রোডাকশন ম্যানেজার, ডিরেক্টর, কুক, ফ্যাশন ডিজাইনার ও শিক ক্যাটাগরিতে কাজ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় (ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য ১১টি অধিভুক্ত/অঙ্গীভূত কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সর্বমোট সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৬ জন। অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছেন। 

প্রতি বছর এভাবে লাখ লাখ তরুণ উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হলেও দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা খুব কম সুযোগ পান।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ১৯,২০১৮ 


আরএসটিপির স্বল্পমেয়াদি সাত পরিকল্পনার পাঁচটিই আঁতুড়ঘরে

ঢাকার যানজট নিরসনে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সাড়ে তিন বছর পার হলেও এতে অন্তর্ভুক্ত সাত পরিকল্পনার পাঁচটিই এখনো কাগজে-কলমে। যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের গতি ধীর হওয়ায় জনদুর্ভোগও বাড়ছে। ব্যস্ত সড়কগুলোয় মেট্রোরেল, বিআরটির মতো প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মানুষ যেন বিকল্প হিসেবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারে, সেটিই ছিল উদ্দেশ্য। সাত বছরেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করা যায়নি। এ কারণে মেট্রোরেল নির্মাণকে ঘিরে মিরপুর এলাকার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। পরিবহন সংকট ও তীব্র যানজট রাজধানীবাসীর অন্যতম নাগরিক সমস্যা। এ সমস্যা মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি ছাড়াও জন্ম দিচ্ছে আরো অনেক সমস্যার। এতে নাগরিকদের মূল্যবান শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটের ক্ষতি এরই মধ্যে বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি অপচয় বাড়ছে। বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ছাড়া এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথ নেই। প্রকৃতপক্ষে এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় এর মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আরএসটিপির কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নগরবাসী স্বচক্ষেই তা দেখছে। রাজধানীতে কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ ও কয়েকটি প্রধান সড়ক রিকশামুক্ত করা ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই। বৃত্তাকার নৌপথ চালু হলেও তা স্থায়ী রূপ পায়নি। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বটে, তবে এসব কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, কে জানে। ফুটপাত দখলমুক্ত করার মতো সামান্য কাজটিও করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বস্তুত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়গুলো বরাবর উপেক্ষিত হয়েই এসেছে। রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট তীব্র। অথচ এ থেকে উত্তরণে সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত সীমিত। বিদ্যমান গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্যের কারণে নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। এ খাতেও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব। ফলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ২০০৯ সালে এসটিপির আওতায় বিআরএফ অর্থাৎ একটি রুটে একটি কোম্পানির উন্নতমানের বাস ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হলেও যানজট কমেনি। অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপেও এ অবস্থার তেমন পরিবর্তন হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫-৩৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নে নেই সরকারের কার্যকর উদ্যোগ। এসটিপি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ পরিকল্পনা শুধুই কাগজপত্রে। ফলে সরকারের এমন একটি সুন্দর সময়োপযোগী পরিকল্পনা যেন আঁতুড়ঘরেই মারা যাওয়ার পথে। কারণ এসটিপিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব কার্যক্রম বা প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখা হয়, এর মধ্যে দুটি ব্যতীত আর কোনোটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাজই শুরু করা যায়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, কাজ শুরু করতে গেলে প্রাথমিক যেসব কাজ জরুরি, যেমন— প্রাক-সমীক্ষা, চূড়ান্ত সমীক্ষা; সেগুলো শুরু করা যায়নি। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে আরএসটিপি প্রণয়নকারী সংস্থায় দক্ষ, যোগ্য ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই।

ঢাকার যানজট নিরসনে বহু অর্থ ও সময় ব্যয়ে একাধিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নের অভাবে তা কোনো ফলই বয়ে আনেনি ঢাকাবাসীর জন্য। বরং সমন্বয়হীনতা ও এসটিপির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু প্রকল্প গ্রহণ করায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আরএসটিপি বাস্তবায়নে অর্থায়নও কম বড় সমস্যা নয়। বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের অর্থছাড়ও পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বৈকি। ২০২০ সালে শেষ হবে আরএসটিপির স্বল্পমেয়াদি সময়। এ সময়েও যদি অধিকাংশ প্রকল্প আলোর মুখ না দেখে, তাহলে সেটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ জুলাই ১৯,২০১৮ 

শাহাবুদ্দিন আলম ব্যাংক লুটের কারিগর

ওমর ফারুক ও হাছান আদনান


চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন আলম। ভাগ্যগুণে দেশের দুই ডজন ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন। ব্যাংকগুলোও বাছবিচার ছাড়াই প্রায় জামানতবিহীন ঋণ দিয়েছে এ ব্যবসায়ীকে। ঋণের অর্থে তিনি গড়ে তুলেছেন দেড় ডজন কোম্পানি। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের ভারে নিমজ্জিত এসএ গ্রুপের এ কর্ণধার এখন চূড়ান্ত উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডোবানোর। যদিও তিনি নিজেই একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক এবং তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক মামলা রয়েছে পাওনাদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।

শাহাবুদ্দিন আলমের এসএ গ্রুপের অধীন অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান ‘সামান্নাজ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড’। ঋণের দায়ে নিমজ্জিত হয়ে কোম্পানিটি অবসায়ন বা বিলুপ্তির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন তিনি। তবে এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে ঋণদাতা অধিকাংশ ব্যাংক।

এসএ গ্রুপকে ঋণদাতা অধিকাংশ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা হয়েছে বণিক বার্তার। প্রত্যেকেই জানান, গ্রুপটিকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। নামমাত্র জামানত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামানত ছাড়াই শাহাবুদ্দিন আলম ঋণ পেয়েছেন। ঋণের এ অর্থ আদায়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যাংকের নির্বাহীরা।

তারা বলছেন, ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ে শাহাবুদ্দিন আলমের মতো গ্রাহক দুর্লভ। নানা কৌশলে তিনি ব্যাংকারদের মুগ্ধ করেছেন। এতেই শত শত কোটি টাকার ঋণ তার পকেটে ঢুকেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এসএ গ্রুপের ঋণ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির কাছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণের পরিমাণ ৪৮১ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৪২৩ কোটি ও ব্যাংক এশিয়া সিডিএ শাখার ৩৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়ার বড় অংকের এ ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে নামমাত্র।

পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া গ্রুপটিকে কেন ঋণ দেয়া হয়েছে— জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বণিক বার্তাকে বলেন, আপনি ব্যাংকার না হয়েও আমাকে এ প্রশ্ন করছেন। অথচ ব্যাংকার হয়েও আমরা নিজেকে প্রশ্নটি করতে পারিনি। এসএ গ্রুপকে ঋণ দেয়া প্রতিটি ব্যাংকই বিপদে আছে। কোম্পানি অবসায়ন আবেদনের বিরুদ্ধে ব্যাংক এশিয়া আপিল করেছে। আপিল আদেশ আমাদের পক্ষে এসেছে।

এসএ গ্রুপের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণের পরিমাণ ২২১ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রুপটির কাছে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণের পরিমাণ ২০০ কোটি, রূপালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১৫১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘি শাখার ১১৮ কোটি ও কৃষি ব্যাংক ষোলশহর শাখার ১০০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখারও ২৮৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে এসএ গ্রুপের কাছে।

এসএ গ্রুপের কাছে পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে গ্রুপটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী। তিনি বলেন, গ্রুপটির কাছে ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ২০-২৫ কোটি টাকার সম্পদ। এজন্য আদালতে কোম্পানি অবসায়নের আবেদনের বিরুদ্ধে পূবালী ব্যাংকের পক্ষে আপিল করা হয়েছে। আদালতের আদেশ পূবালী ব্যাংকের পক্ষে এসেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা এসএ গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে সাড়ে ৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রুপটিতে উত্তরা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণ রয়েছে ৫২ কোটি, প্রাইম লিজিংয়ের ৩৬ কোটি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১৪ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখারও ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে এসএ গ্রুপের কাছে।

এসএ গ্রুপকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা ছিল বলে জানান ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্য যে, ব্যাংকিং খাতেরই একজন উদ্যোক্তা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে কোম্পানি অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। গ্রুপটির কাছে ঢাকা ব্যাংকের পাওনা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আদায়ে এরই মধ্যে মামলা করা হয়েছে। এসএ গ্রুপ কোম্পানি অবসায়নের যে আবেদন জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও আপিল করা হয়েছে। আপিল আদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসেছে। কোম্পানিটির যে পরিমাণ ঋণ আছে, সে অনুপাতে সম্পদ নেই বললেই চলে। অবসায়ন হলে ব্যাংকগুলো বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবে।

এসএ গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে কয়েক বছর ধরেই আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ঋণদাতা অধিকাংশ ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধাও গ্রহণ করে গ্রুপটি। তবে নির্দিষ্ট সময় পরও প্রতিষ্ঠানটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। এতে আবারো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো আদালতের দ্বারস্থ হয়।

কয়েক বছরে এসএ গ্রুপের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে এ পর্যন্ত ১০০-এর বেশি মামলা দায়ের করেছে পাওনাদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এগুলোর বেশির ভাগই চেক-সংক্রান্ত ও অর্থঋণ মামলা। এসব মামলার বেশ কয়েকটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এমনকি দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও আছে এসএ গ্রুপের কর্ণধারের বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়া ১১ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএ গ্রুপও রয়েছে। ওই সময় এসএ গ্রুপের এসএ অয়েল রিফাইনারি ও সামান্নাজের পক্ষে ৯২৮ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠন করে ছয়টি ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৯ কোটি টাকা পুনর্গঠন করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে কিস্তি পরিশোধের কথা থাকলেও আর কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক আবারো আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। অনেক ব্যাংকের কাছে ঋণের বিপরীতে কোনো বন্ধকি সম্পত্তিও নেই।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ব্যবসার জন্য ঋণ নিলেও দীর্ঘদিনেও ঋণের টাকা ফেরত দেননি এসএ গ্রুপের কর্ণধার। এরই মধ্যে আমরা চেক-সংক্রান্ত ও অর্থঋণ মামলা দায়ের করেছি। একটি মামলায় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার শাহাবুদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন আদালত। এ মামলায় শাহাবুদ্দিন জামিনে থাকলেও তার স্ত্রী পলাতক।

পাওনাদার ব্যাংকগুলোর ক্রমাগত চাপ ও আইনি ঝামেলায় পড়ে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার দায় এড়াতে নতুন কৌশল নিয়েছেন শাহাবুদ্দিন আলম। কোম্পানির অবস্থা ভালো না হওয়ায় সামান্নাজ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড অবসায়নের আবেদন করেছে।

কোম্পানি অবসায়নের আবেদন, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও ব্যবসার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তিনদিন ধরে এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমের সঙ্গে চেষ্টা করা হয়। এসব বিষয়ে তিনি তার বক্তব্য দেবেন বলেও দেননি। অবশেষে রাত ১১টার দিকে টেলিফোনে তার বক্তব্য পাওয়া যায়। কোম্পানি অবসায়নের আবেদনের বিষয়ে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণেই সামান্নাজ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডকে অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করেছি। কোম্পানির বিলুপ্তির জন্য পৃথিবীব্যাপী এটি স্বীকৃত পন্থা। এখন এটি আদালতের বিষয়। আমি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমার কাছে ব্যাংকগুলো যে অর্থ দাবি করছে, তা সুদের টাকা।

কিছু ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের শিল্প ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ করেন শাহাবুদ্দিন আলম। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের শিকার হয়ে বাংলাদেশের শিল্পগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি পরিশ্রম করে ১৮টি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছি। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। এক টাকাও বিদেশে পাচার করিনি। বৈষয়িক ও দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এসএ গ্রুপের ভোজ্যতেলের কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার কনডেন্সড মিল্ক, পেপার ইন্ডাস্ট্রি, ট্যানারিসহ অন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলো ভালোভাবেই চলছে।

এসএ গ্রুপের কর্ণধার শাহাবুদ্দিন আলমকে শৈশব থেকেই চেনেন এমন একজন ব্যাংকার বলেন, ব্যবসায়িক শৃঙ্খলার অভাবে শাহাবুদ্দিন আলম সব শেষ করে দিয়েছেন। ব্যাংকের টাকা সঠিক খাতে ব্যয় না করে জমি কেনা, বাড়ি তৈরি ও ভোগ-বিলাসে উড়িয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার বিপুল পরিমাণ জমি, বহুতল ভবন, বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এ সম্পদের বড় অংশই ব্যাংকের জামানতের বাইরে। শাহাবুদ্দিন আলম নিজে ডুবেছেন, ব্যাংকারদেরও ডুবিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকার খুলশীতে চার একর জমিতে শাহাবুদ্দিনের বর্তমান বাড়ি। তার আত্মীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, খুলশীতে চার একর জমিতে অবস্থিত এ প্রাসাদ কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। ইপিজেড এলাকায় রয়েছে তাদের পুরনো বাড়ি।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা / জুলাই ১৯,২০১৮ 

Extortion on highways out of control

Who will look after public interest?


It is not every day we find a state minister lay bare what has been public knowledge for long—that there is rampant and uncontrolled extortion on the highways. It is not only the police that are to blame. Rather, the finger has been pointed at a federation of transport workers that is headed by a powerful minister.

What is interesting to note is that there has even been talk about legalising extortion in the transport sector in a bid to control how much each transport may pay nationwide. Besides such activity being totally illegal, this is hardly any way to combat the ad-hoc toll collection by various parties including alleged involvement of law enforcers who are supposed to maintain the law on the highways instead of being party to the unlawful activity.

With rampant extortion by various bodies comes the problem of overcharging both commuters on buses and driving up transport costs for parties that need to move goods between districts. At the end of the day, it is the general public who are forced to bear the costs of these “extra” fees that are levied on transports. As these illicit transactions are being enforced through organisations of owners and workers, headed by powerful lawmakers and their cronies on the one hand and a section of law enforcers on the other, what hope is there for reprieve from extortion?

We have been highlighting these issues for years. Now that we have the blunt admission by a policymaker, who also happens to run a transport business, of the magnitude of the problem, only a political decision at the highest level can rectify the problem. The question is: does the political will exist?

  • Courtesy: The Daily Star/Editorial /Jul 19, 2018

হঠাৎ ককটেল

হামলাকারীদের খুঁজে বের করুন

যেদিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সিটি নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠক করলেন, সেখানকার নির্বাচনী পরিবেশ ভালো বলে সন্তোষ প্রকাশ করলেন, সে দিনই বিএনপির দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগকালে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটল। নিকট অতীতে সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও তা বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে সীমিত ছিল। হঠাৎ করে ঘটা এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গলবার সকালে গণসংযোগ করছিলেন। কর্মীদের নিয়ে তিনি যেখানে জড়ো হয়েছিলেন, এর কাছেই পরপর তিনটি ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বিস্ফোরণের পর স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে আহত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ তিনজন। 

এ সন্ত্রাসী ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একজন প্রার্থীর নির্বাচনী জনসংযোগকালে ককটেল নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা তাদের শক্তির কথাই জানিয়ে দিল। সরকারের ভাষ্যমতে, সবকিছুই যদি ঠিক থাকে, তাহলে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা এ অঘটন ঘটানোর সাহস পেল কোথায়? সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, সেখানে তারা একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যেভাবে একে অপরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে অপরাধীদের বিচার তাদের কাছে মুখ্য নয়, মুখ্য হলো রাজনৈতিক ফায়দা লাভ। এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। 

ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের সাগরপাড়া বটতলার মোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য হলো, তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায়। বিকট শব্দের পর চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এতে বিএনপির একজন নেতা ও দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে এসব রাজনৈতিক বিতণ্ডাকে আমলে না নিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। যত দ্রুত সম্ভব তদন্তকাজ শেষ করতে হবে। দেরি হলে ঘটনার আলামত নষ্ট হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য হলো হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা। 

সে সঙ্গে রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো রকম ঘাটতি আছে কি না, সেটিও চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতে্যক নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াই সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়েও এ কথা বলা যায় যে যারা চায় না শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক, তারাই এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ১০ দিন। এ ঘটনার মাধ্যমে হয়তো সন্ত্রাসীরা জনগণ তথা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের সেই উদ্দেশ্য কখনোই সফল হতে দেওয়া যাবে না। রাজশাহীর পাশাপাশি একই দিন আরও দুই সিটিতে (সিলেট ও বরিশাল) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে তিন সিটিতেই বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উৎসাহী হন। 

আমাদের দেশে মানুষ নির্বাচনকে দেখে উৎসব হিসেবে। সেই উৎসবের আনন্দ যারা ম্লান করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ হামলার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা থাকুক আর না-ই থাকুক, অপরাধীদের খুঁজে বের করাটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠিন চ্যালেঞ্জ। আশা করি, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে দ্বিধা করবে না। অবিলম্বে হামলাকারীদের খুঁজে বের করুন।

  •  কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলন কি অবৈধ?


কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। দুদিন আগে যে জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছিল, আজ সকাল সোয়া ১১টায় ঠিক সেই জায়গায় প্রথমে মানববন্ধন ও পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, তার সমাপ্তির মধ্য দিয়েই ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি হওয়া ঠিক হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কারা এই ছাত্রদের ব্যবহার করছে, সেসব খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ এখন একটি ছায়া প্রশাসন চালাচ্ছে, সেটাও খুঁজে বের করা উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন কি কোনো অবৈধ আন্দোলন? যদি অবৈধ না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কেন? গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবি করলেই প্রশাসন বলছে আইন আইনের গতিতে চলবে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মশিউরকে কি আইন মেনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তাকে হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুদিন তার কোনো খোঁজ ছিল না।’

মানববন্ধনে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সামনে শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষক, অভিভাবকের সামনে সন্তানের ওপর হামলা করেছে শাসক দলের অনুগত ছাত্রসংগঠন। এর নজির আগে কখনো ছিল না। প্রশাসনের কাছে তাঁরা জানতে চান, রাজনৈতিক দলের সদস্য না হলেই কেন তাঁরা অনিরাপদ বোধ করবেন? তাঁরা নিজের ভাষায় নিজের ক্যাম্পাসে কথা বলার জন্য কেন নিপীড়নের শিকার হবেন এবং বিচার চাইতে গেলে কেন উল্টো হয়রানির শিকার হবেন?

অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদা সারওয়ার জানান, আবাসিক হলে, নিজের বিভাগে এবং ক্যাম্পাসে কথা বলতে পারছেন না তাঁরা।

আইন বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ক্লাস ফেলে মানববন্ধনে এসেছেন তাঁর বন্ধুর জন্য। তারিকুল ইসলাম আদনানকে ২ জুলাই গ্রেপ্তার করা হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। এত অনিয়মের পরও প্রশাসন চুপ করে থেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, সংবিধান বিষয়ে তাহলে কেন পড়ানো হচ্ছে, তা জানতে চান তিনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আন্তারা ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করি, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হব, আমরা কবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

মানববন্ধন শেষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসীরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘সন্ত্রাসীরা মানুষ নয়, আবার তোরা মানুষ হ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তাঁরা।

গত রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দফায় দফায় বাধা দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই দিন দুপুরের দিকে কর্মসূচির একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ মারমুখী আচরণ করে। তারা ছাত্রীদের মারধর করে। ধাওয়া ও ধাক্কা দিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

  •  কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮

মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল

কাগজে প্রিন্ট করা মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান নিজেদের এ সিদ্ধান্তের কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডিকে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ইসি নতুন করে কার্ড ছেপে দেওয়ার জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় চুক্তি করেছে। এর আগে দরপত্রে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকিয়ে (প্রায় ৯ কোটি টাকা) প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছিল। বিনিময়ে নিম্নমানের কার্ড গুছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ভুল করেছে। তারা মানহীন কার্ড তৈরি করেছে। সে জন্য ইসি প্রতিষ্ঠানটির জামানতের টাকার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জরিমানা হিসেবে কেটে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি তারা যাতে পুষিয়ে নিতে পারে, সে জন্য দ্বিতীয় দফায়ও তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।

ইসির সিদ্ধান্ত ছিল, ২০১২ সালের পরে ভোটার হওয়া ৯৩ লাখ ভোটারকে স্মার্টকার্ডের পরিবর্তে আপাতত কাগজে প্রিন্ট ও ল্যামিনেট করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এ জন্য তারা স্মার্ট টেকনোলজিসকে দায়িত্ব দেয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কার্ড ছাপার কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে কার্ড ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে কাজ শেষ হলেও ইসি তদন্ত করে জানতে পারে, ছাপা হওয়া কার্ড অত্যন্ত নিম্নমানের।

জানা যায়, মূলত স্মার্ট টেকনোলজিসের নাম ব্যবহার করে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা কার্ড ছাপার কাজ করেছেন। এসব কার্ড যথাযথ প্রিন্টারে না ছেপে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন গলিতে স্থাপিত কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ১৯ জুন প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা এনআইডি নিম্নমানের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর ইসি মানহীন কার্ড গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্মার্ট টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ১৫ জুলাই স্মার্ট টেকনোলজিসের সঙ্গে ইসির নতুন করে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ৯৩ লাখ কার্ড নতুন করে ছেপে দেবে। 
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ইসি ভবনের ১১ তলায় মেশিন বসিয়ে এবং ইসির তত্ত্বাবধানে কার্ড ছাপার কাজ করা হবে।

ইসি সচিবালয় সূত্র আরও জানায়, ছাপা হওয়া মানহীন ৯৩ লাখ কার্ড ইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হবে। আরও জানা যায়, এবারের কাজে স্মার্ট টেকনোলজিসের ৬০ জন দক্ষ কর্মী ইসিতে নিয়মিত উপস্থিত থেকে কাজ তদারকি করবেন।

জানতে চাইলে স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেরবার আমরা ভুল করেছি। যে কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনামের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এবার সেই ভুল শুধরে নিয়ে কাজ করা হবে এবং ইসির অনুমোদন না নিয়ে কোনো কার্ড সরবরাহ করা হবে না।’
 কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮ 

Wednesday, July 18, 2018

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নারীর সংগ্রাম

ফরিদা আখতার 


কিছু বিষয় আছে, যা মেয়েদের খুব গভীরে আহত করে, যা মেয়ে না হলে বোঝা কঠিন।

সালেহা বেগম, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের মা। তিনি ঢাকায় ছুটে এসেছেন ছেলের ওপর আক্রমণ এবং তাকে রিমান্ডে নেয়া থেকে মুক্তি দিতে। ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য কতখানি অসহায় হলে হাত জোড় করে একজন মা বলতে পারেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। শুধু মুক্তি দাও। ও আর চাকরি চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও। আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত পেতে তিনি সন্তান ভিক্ষা চাইছেন। যে আন্দোলন সারা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে, আজ সে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীর মায়ের ক্ষমা চাওয়ার ভাষা সব মায়ের মাথা নুইয়ে দিয়েছে। এ লজ্জা কার?

মা বুঝতে পারছেন সন্তানের প্রাণ রক্ষার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি, অধিকার ও ব্যবস্থাগুলো বাংলাদেশে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ভিক্ষা ছাড়া জননীর পক্ষে সন্তানের প্রাণ রক্ষার আর কোনো উপায় নেই। প্রাণ ভিক্ষার এ কাতরতা অন্যদের বুকে যত বেজেছে, তার চেয়ে শতগুণ বেজেছে মেয়েদের বুকে।

রাশেদের মা ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন এবং দিন-রাত ধরনা দিচ্ছেন রাজধানীর ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্টে। রাশেদকে দুই মামলায় দুই দফা রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ছেলেকে রিমান্ডে নিচ্ছে— এ কষ্ট তিনি সইতে পারছেন না। তিনি রাশেদকে মুক্ত করার আর্জি জানাচ্ছেন।


সবাই জানে, রাশেদ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিজেদের জন্য শুধু নয়, সব শিক্ষার্থীর পক্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে নুরুল হক নুরু, ফারুক হাসান, মাসুদ রানা ও অন্যদের সঙ্গে আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাশেদ এসে পড়েছেন। তাদের ডাকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। অথচ আজ তরুণদের আত্মত্যাগের ওপর গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশে রাশেদদের ওপর নিপীড়ন নেমে এসেছে। অসহায় মাকে বলতে হচ্ছে, ‘ও আর চাকরি চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও।’

রাশেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তৈরি ছাত্রদের মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, সরকারি চাকরিতে কোটার কারণে সৃষ্ট বৈষম্য দূর হলে যার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তার মা আজ রিমান্ডের নির্যাতনের ভয়ে বলছেন, ‘আমার মনির আর চাকরির দরকার নাই। আমার মনি দেশে গিয়ে ভ্যান চালায় খাবে। আমার মনিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্ত করে।’

তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন এবং বাবা রাজমিস্ত্রি; ছেলে মেধাবী বলে ছোটবেলা থেকে বৃত্তি পেয়ে এতদূর এসেছে। সঙ্গে মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ। খেয়ে না-খেয়ে ছেলের পড়ার খরচ চালিয়েছেন। রাশেদ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেলে তাদের দুঃখ লাঘব হবে। 

রাশেদ একা নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা কষ্ট করে পড়াশোনা করছেন, কিন্তু চাকরি পেতে গিয়ে কোটার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাই তারা রাস্তায় নেমেছেন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য।  
তাদের দায়িত্ব আছে যেন জনগণের করের টাকায় লেখাপড়া করে দেশের সেবা করতে পারেন। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেলে তারা সেই কাজ করতে পারবেন। কোটার মাধ্যমে চাকরি নিয়ম হয়ে গেলে মেধা ও যোগ্যতার কোনো মূল্য থাকে না। যোগ্য ও মেধাবীদের তখন চাকরি পাওয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এখন রাশেদের মায়ের যদি বলতে হয়, ‘ও আর চাকরি চাবে না গো’, ভ্যান চালাবে, তাহলে এত লেখাপড়ারই আর দরকার ছিল না। এ ছেলেকে লেখাপড়া করানোর জন্য তার অবদান তো কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু ছেলের চাকরির চেয়ে ছেলের জীবন তার কাছে বেশি। মনে হচ্ছে, সারা দেশ জিম্মি হয়ে হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা চাইছে।


কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে যখন ছাত্রলীগ পিটিয়ে মারছিল, তখন একটি মেয়ে এগিয়ে এসেছিলেন, তার নাম মরিয়ম মান্নান ফারাহ। মরিয়ম তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। কোটা আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ফারুক হাসানের ওপর হামলা দেখে থাকতে না পেরে প্রতিবাদ জানান এবং সেটা করতে গিয়ে নিজে লাঞ্ছিত হয়েছেন। 

আক্রমণকারীরা তাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় শারীরিক নির্যাতন করেছে। তার ভাষায়, এটা ছিল প্রথম জাহান্নাম এবং পরে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আরেকবার মরিয়মকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে, যা তার ভাষায় ছিল দ্বিতীয় জাহান্নাম। পুলিশ তাকে ‘বেশ্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে ইয়াবা আসক্তির মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করতে হলে এর চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কী হতে পারে! একটি মেয়েকে বেশ্যা বলে তাকে ছোট করার এটা পুরনো কায়দা। অথচ থানায় পুলিশই তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে, তাকে লাঞ্ছিত করেছে। এখন মরিয়ম বাংলাদেশের সংগ্রামী মেয়েদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, চারটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে—

এক. সংবাদ সম্মেলনে মরিয়ম ‘ভিকটিম’ বা অসহায় নারীর নতমুখ নিয়ে দাঁড়াননি, তিনি দাঁড়িয়েছেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে। বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি লড়াকু মেয়ে। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মরিয়ম নতুন জেনারেশনের প্রতিনিধি। সম্ভবত বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ গুণগত রূপান্তরের নির্দেশনা আমরা দেখছি। 

সবচেয়ে বেশি সবাইকে আকৃষ্ট করেছে সেখানে উপস্থিত সব মেয়ের শক্তিশালী ঐক্য, সংবেদনা এবং একাত্মতা। এ সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশে নারীদের ঐক্য ও সংহতির বিরল উদাহরণ। মরিয়মের সংবাদ সম্মেলন বোনদের মধ্যে সংহতি নির্মাণের উজ্জ্বল ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।


দুই. মরিয়ম বুঝিয়ে দিয়েছেন, বেশ্যা গালি দিয়ে পুরনো পুরুষতান্ত্রিক কৌশলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা বাংলাদেশে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। সেই কাল দ্রুতই এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত হচ্ছে। এর আগে অনেক সংগ্রামী মেয়েকে এভাবে দমনের কিংবা সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে। কাজ হয়নি।

তিন. এ আন্দোলন সব শিক্ষার্থীর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। যদিও নেতৃত্বে আমরা ছাত্রদের দেখতে পাই, কিন্তু যখনই প্রয়োজন হয়েছে, নারী শিক্ষার্থীরা সামনে এসে গেছেন। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেয়েরা ভেতরে ও বাইরে আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। মাঝরাতে তারা মিছিলে এসে যোগ দিয়েছেন, যা দেখে প্রধানমন্ত্রী ‘টেনশন’ করেছেন। কিন্তু সেই মিছিলে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে আমরা শুনিনি। অথচ দিনদুপুরে মরিয়মের ওপর চড়াও হয়েছে, তিনি একজনকে বাঁচাতে চেয়েছেন বলে। কোটা আন্দোলনে মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে খাটো করে বলা হচ্ছে, ‘মেয়েদের ব্যবহার’ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বক্তব্য নারী অধিকার অস্বীকার করার শামিল। 

বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন— কোনো আন্দোলনেই নারীরা পিছিয়ে থাকেননি। এসব কথা সবাই জানেন, জানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও। তাদের হঠাৎ মেয়েদের নিয়ে চিন্তা হয়ে গেল কেন? অথচ মেয়েরা নির্যাতিত হলে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না!

চার. এর মধ্যে ‘বোনদের মধ্যে দৃঢ় সংহতির’ শক্তি দানা বেঁধেছে। সব মেয়ের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির শক্তি আমরা দেখছি। এর মর্ম যদি বুঝে থাকি, তাহলে সামাজিক-রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আন্দোলনে সক্রিয় ভাইদের প্রতি বোনদের সংহতির অর্থও বুঝব। মরিয়ম যে ভাইকে নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে দুঃসাহসী হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন, তাকে তিনি চেনেন না। অথচ তিনি সংগ্রামের মাঠে ‘ভাই’। তার মুখে ‘ভাই’ কথাটা মেয়ে হিসেবে আমার নিজের মধ্যেও গভীরভাবে বাজল।


মরিয়মের সংবাদ সম্মেলন এ দিকগুলো বুঝতে আমাদের খুবই সহায়ক হয়েছে। তিনি অনেক কিছুই খোলাসা করে বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। সবাই যতটা শিউরে উঠেছেন, ততটাই আশাবাদীও হয়ে উঠেছেন। কারণ আসলেই আমরা আমাদের সামনে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একপাল তরুণ নেতৃত্বের আবির্ভাব দেখছি, আগামী দিনে বাংলাদেশকে সব জুলুম ও নিপীড়নের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে যারা নির্ধারক ভূমিকা রাখবেন।

পুলিশের আচরণ মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এক পর্যায়ে; মরিয়ম বলেছেন, ‘এ দেশ আমার নয়।’ কিন্তু এটা সত্য নয়। এ দেশ অবশ্যই আমাদের। তারা এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করার জন্যই তারা তৈরি হচ্ছেন। আজ তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যখন আন্দোলন করছেন, তখন তাদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং চরিত্র হনন করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মরিয়মের কথার মধ্যে ভয়াবহ আর্তনাদ ছিল, সন্দেহ নেই। কিন্তু মরিয়ম নিজেই বরং সাহসী হয়ে সবার সামনে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে হাজির হয়েছেন। অতএব, এ দেশ অবশ্যই মরিয়মদের।

লাকি আখতার, যাকে বিভিন্ন সংগ্রামে আমরা দেখি, তিনিও হামলার শিকার হচ্ছেন। তার অপরাধ, তিনি কোটা সংস্কারের অন্যতম নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র এবিএম সুহেলকে তার বাসায় থাকতে দিয়েছিলেন। সুহেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। সম্প্রতি তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকারও হয়েছিলেন। তাকে ১২ জুলাই ভোরে লাকি আখতারের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এখানেই শেষ নয়, লাকির ওপর নানাভাবে, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি। খুশির কথা, লাকি জানিয়েছেন তিনি ভীত নন। 

একদিকে মা হিসেবে সালেহা বেগম, অন্যদিকে শিক্ষার্থী মরিয়ম— কোটা আন্দোলনে নিপীড়নের বিরুদ্ধে উভয়ে ভিন্নভাবে প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, যারা ছাত্রলীগের পৈশাচিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন, হাতুড়ির আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন, তাদের কথা মিডিয়ায় খুব একটা আসছে না। তবু যতটুকু আসছে, তাতে দেখা যায়, নারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে মুখপাত্রের কাজ করছেন। এ নারীরা স্রেফ ভিকটিম হিসেবে নয়, প্রতিরোধের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও কর্তা হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামে হাজির হয়েছেন। সেভাবেই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা তাদের কথা না বললে আজ সমাজ জানত না। সালেহা বেগম আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমা চাইছেন, কিন্তু তার কথা দিয়ে তিনি পুরো প্রশাসন ও রাষ্ট্রকে প্রশ্নবোধক করে দিয়েছেন। যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অপরাধে একজন মাকে এভাবে কাতর হয়ে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইতে হয়, সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি বড়ই দুর্বল। কোটা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’, জঙ্গি বা বেশ্যা আখ্যায়িত করে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করার সুবিধাও কমে যাচ্ছে।


এখন আমাদের কাজ হচ্ছে, সালেহা বেগম, মরিয়ম মান্নানসহ সব নির্যাতিত ও নিপীড়িত ছাত্রছাত্রীর পাশে দাঁড়ানো। তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের দাবি ন্যায্য। সালেহা বেগম বাংলাদেশের জনগণকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন, আমাদের সন্তানদের আমরা আর রক্ষা করতে পারছি না। কিন্তু পারতে হবে। এ ব্যবস্থা বদলাতে হবে। মরিয়ম এবং তার মতো হাজার হাজার মেয়ের নেতৃত্বের ভূমিকাকে আমাদের স্বাগত ও অভিনন্দন জানাতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যে নেতৃত্বের স্ফুরণ ঘটেছে, তাকে আরো বিকশিত করতে হবে।

মেয়েদের যা গভীরভাবে আহত করে, তা একইভাবে শক্তিও জোগায়। উজ্জ্বল বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন আমাদের আরো বাড়ছে। সব নারীর এখন ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। তাহলে সেই বাংলাদেশ স্বপ্ন হয়ে থাকবে না। বাস্তব হয়ে উঠবে।

  • লেখক: নারী নেত্রী ও নির্বাহী পরিচালক উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ জুলাই ১৮,২০১৮ 

গুদামের খাদ্যশস্য রাস্তা থেকে উধাও!


দেশের এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে খাদ্যপণ্য পৌঁছাতে বড়জোর দুই সপ্তাহ লাগে। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সরকারি গুদামের হাজার হাজার টন ধান, চাল ও গম এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে পাঠানোর পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২৭ বছরেও গন্তব্যে পৌঁছেনি। 

তাহলে রাস্তা থেকে এসব খাদ্যপণ্য যায় কোথায়? জানা গেছে, গত ২৭ বছরে পরিবহনের সময় ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্য উধাও হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনেও এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে পৌঁছেনি ওইসব খাদ্যপণ্যের চালান। বছরের পর বছর সংশ্নিষ্ট গুদামের নথিপত্রে সেগুলো চলাচলরত (পথ খাতে) দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। 

সূত্র জানায়, দেশের খাদ্যগুদামগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য আত্মসাৎ করছেন। আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণও রয়েছে সরকারের হাতে। খাদ্য বিভাগের অবহেলা ও উদাসীনতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকট মোকাবেলায় মজুদ করা খাদ্যসামগ্রী লোপাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে খাদ্যপণ্য আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এরপরও মজুদ, পরিবহন ও সংরক্ষণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, হিসাব রক্ষায় ডিজিটাইজড পদ্ধতি চালু ও নিরাপত্তায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। 

সচিবালয় সংলগ্ন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বিভিন্ন সময়ে গুদাম থেকে ও পরিবহনের সময় খাদ্যপণ্য উধাও হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্যের হিসাব কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই। সেগুলো কোথায়, কার কাছে গেছে তা খুঁজে বের করার কাজ চলছে। যাদের বিরুদ্ধে সরকারি খাদ্যপণ্য আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুদাম থেকে ধান, চাল ও গমের চালান বের হওয়ার নথিপত্র রয়েছে। তবে চালানগুলো অন্য গুদামে গ্রহণ করার প্রমাণ নেই। খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী কিছু চালান ২৭ বছর, কিছু চালান ২০ বছর, কিছু চালান ১৫ কিংবা ১০ বছর ধরে চলাচলের মধ্যে রয়েছে। অধিদপ্তরের এই হিসাব অবিশ্বাস্য, অস্বাভাবিক। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, চলাচলে আটকে থাকার কথা বলা হলেও ওইসব খাদ্যপণ্য বাস্তবে নেই। ১৯৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ২৭ বছরে ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্য রাস্তা থেকে উধাও হয়েছে। ওই খাদ্যসামগ্রী কখন, কোথায়, কার কাছে গেছে তার কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে। 

রাস্তা থেকে ওইসব খাদ্যপণ্য কোথায়, কার কাছে গেল- তা খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক পরিচালক ফরিদুর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ একটি টিম ২০০৭ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ১১ বছরের চলাচলের হিসাব অনুসন্ধান করছে। 

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, দুদক চাইলে তারও আগের ১০ বা ১৬ বছরের হিসাব অনুসন্ধান করতে পারে। দুদকের অনুসন্ধানে অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। এ-সংক্রান্ত যা যা নথিপত্র চাওয়া হবে তা সরবরাহ করা হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে খাদ্যপণ্য না পৌঁছিয়ে সেগুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে। রেকর্ডপত্র অনুযায়ী সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারদের খুঁজে বের করা হবে। উধাও হওয়া ওইসব পণ্যের চালান পাঠানোর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অভিযোগের আওতায় আনা হবে। সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে খাদ্যপণ্য আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্যপণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ঠিকাদার, খাদ্য অধিদপ্তর ও বিভিন্ন গুদামের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী আঁতাত করে এসব খাদ্যপণ্য আত্মসাৎ করেছেন। ঠিকাদাররা গুদাম থেকে খাদ্যের চালান নিয়ে তা খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন। ফলে ওইসব খাদ্যপণ্য যেসব গুদামে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে পৌঁছায়নি। 

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মূলত সড়ক, রেল ও নৌপথে দেশের এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে ধান, চাল ও গম পরিবহন করা হয়। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী পরিবহন করা হয়। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে একটি চালান পৌঁছাতে এক সপ্তাহ বা বড়জোর দুই সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে ২৭, ২০, ১৫ কিংবা ১০ বছরেও তা গন্তব্যে না পৌঁছানো অস্বাভাবিক। 

দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় সংশ্নিষ্ট শাখা বা বিভাগ থেকে কোনো কোনো কর্মকর্তা অবসরেও গেছেন। তবে উধাও হওয়া ওইসব চালানের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 

খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগের পরিচালক চিত্তরঞ্জন বেপারি সমকালকে বলেন, চলাচলে আটকে থাকা খাদ্যপণ্যের হিসাব বের করা, গুদাম ও খাদ্য পরিবহনের সব ধরনের কার্যক্রম ডিজিটাইজড করতে ২০১৪ সালে টেকনো হেভেন কনসোর্টিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ জুনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। কাজটি শেষ করতে না পারায় তারা সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। 

জানা গেছে, টেকনো হেভেন খাদ্য পরিবহনের সব ধরনের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার বিশেষ সফটওয়্যার জমা দেবে। এরপর থেকে পরিবহন, সংরক্ষণের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় চলবে। তখন খুব সহজেই মজুদ, চালান প্রদান, চলাচল, গ্রহণের আপডেট তথ্য পাওয়া যাবে। 

অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গুদামে খাদ্য মজুদ ও চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কিছু ঘাটতির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়, চাল, গম গুদামে ছয় মাস মজুদ রাখার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ, একই সময় পর্যন্ত ধান মজুদের ক্ষেত্রে দশমিক ৭৫ শতাংশ ঘাটতির হিসাব স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে খাদ্যপণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ১২৫ শতাংশ ঘাটতি মেনে নেওয়া হয়। 

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মে মাস পর্যন্ত ১২১ টন ধান ও ৮৭ হাজার ৬৪০ টন গম চলাচল অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ ৩০ মে পর্যন্ত ওই পরিমাণ মালামালের চালান সংশ্নিষ্ট গুদামে পৌঁছায়নি। এ সময় বেশ আগের চালানের ২০ হাজার ১৯ টন অতিরিক্ত চাল পৌঁছেছে বিভিন্ন গুদামে। তবে বছরের পর বছর ধরে 'চলাচলে আটকে থাকা' ৪০-৫০ হাজার টন খাদ্যপণ্য রাস্তা থেকে কখনও গুদামে পৌঁছবে কি-না- সংশ্নিষ্ট কেউ তা স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না।

খাদ্য গুদামে সাম্প্রতিক লুটপাটের চিত্র

বস্তায় কম চাল : ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের খাদ্য গুদামে অভিযান চালিয়ে ট্রাকভর্তি বস্তার চাল মেপে পরিমাণ কম পায়। ৩০ কেজির বস্তায় ছিল ১২, ১৪ ও ১৬ কেজি। ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৩০ টন চাল গুদাম থেকে সরবরাহ করা হচ্ছিল। পুরো চাল মেপে সাড়ে ২০ টন পাওয়া গিয়েছিল।

একই সময়ে গুদামের নথিপত্র যাচাই করে ঢাকা জেলা আনসারকে ২৫৮ টন চাল সরবরাহের তথ্য পাওয়া যায়। ম্যাজিস্ট্রেট ওই সময় আনসার কমান্ডার মো. আমিন উদ্দিনকে ফোন করে তিনি কী পরিমাণ চাল পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ৭৫ টন চাল পাওয়ার কথা জানান। 

চট্টগ্রামের গুদাম থেকে ২ হাজার টন চাল-গম উধাও : ২০১৭ সালের ২০ জুলাই চট্টগ্রামের হালিশহর ও দেওয়ানহাটের গুদাম থেকে ২ হাজার টনেরও বেশি চাল-গম উধাও হয়েছিল। সরকারি ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) ছাড়া ভুয়া কাগজপত্রে ছাড় করিয়ে ওই পরিমাণ চাল খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় সহকারী ম্যানেজার ফখরুল আলম মানিকসহ চারজনকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা হয়। 

চালের বদলে বস্তাভর্তি তুষ, মাটি, বালি, কয়লা : ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর খাদ্য বিভাগের এক তদন্তে দেশের পাঁচ জেলার গুদামে বস্তাভর্তি তুষ, মাটি, বালি ও কয়লা পাওয়া যায়। অথচ গুদামের কাগজপত্রে সেগুলোতে চাল দেখানো হয়। এভাবে আত্মসাৎ করা হয় ৭৬০ টন চাল। ওই সময় এই চালের বাজার মূল্য ছিল প্রায় চার কোটি টাকা। সে সময় তদন্তকালে বেশ কয়েকটি জেলার গুদামে কাগজপত্রের হিসাবে ও প্রকৃত মজুদে গরমিল পাওয়া যায়। 

নারায়ণগঞ্জের গুদাম থেকে চাল আত্মসাৎ : গত জুনে নারায়ণগঞ্জ বন্দর সংলগ্ন গুদাম থেকে প্রায় ১০০ (৯৯.৮৮) টন চাল আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় দুদক উপপরিচালক একরামুর রেজা বাদী হয়ে ৫ জুন গুদামের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন। 

কিশোরগঞ্জে চাল আত্মসাতের : সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল জলিল ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী হাসিবুল হাসানকে গ্রেফতার করে দুদক। ২০১২ সালে গুদামের ৬০ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তখন ওই চালের বাজারমূল্য ছিল ২০ লাখ ২২ হাজার টাকা। 

কুমিল্লায় ৭ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ : গত বছরের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত তিন বছরে কয়েকটি ধাপে কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে ১ হাজার ৮০০ টন চাল আত্মসাৎ করা হয়। তখন ওই চালের বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাত কোটি টাকা। এই অপরাধের তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও 'শাস্তি' হিসেবে তৎকালীন কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুনুর রশীদকে কিশোরগঞ্জে বদলি করা হয়েছিল। লাকসাম থানা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা বেগমকে বদলি করা হয়েছিল চাঁদপুর গুদামে। 
  • কার্টসিঃ সমকাল/জুলাই ১৭,২০১৮