অরুন রহমান
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাস্ট্র হিসেবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে রাস্ট্রের অবশিষ্ট খুঁটিটি যেন আজ তীব্র আর্তনাদে ধ্বসে পড়ল, আবারও জাতির সামনে তুলে ধরলো দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ার ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যকর বিভৎসসব দৃশ্যমালা । আদালত প্রাঙ্গণে একজন প্রবীন বিচারপ্রার্থী রক্তাক্ত - মজলুমের ফোঁটা ফোঁটা রক্তবিন্দু আদালতের মাটিতে এঁকে দিল অসহায় এক বাংলাদেশের ক্ষতবিক্ষত মানচিত্র।
অবশেষে প্রকাশ্য দিবালোকে কোটি মানুষের ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে পদদলিত করে কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক-পুলিশ-সাংবাদিক-মানুষ বেস্টিত অবস্থায় ছাত্রলীগের বর্বর সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত হলেন 'দৈনিক আমার দেশ'-এর সম্পাদক ও দেশের বিশিষ্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর মাহমুদুর রহমান।
রোববার, জুলাই ২২, একটি মানহানি মামলায় জামিন নিতে মাহমুদুর রহমান কুষ্টিয়ার আদালতে যান। হাজির হওয়ার পর আদালত জামিনও মঞ্জুর করেন। কিন্তু ততক্ষণে আদালত এলাকায় জড়ো হন অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এবং আদালত এলাকায় দীর্ঘ সময় তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ।
দুপুর ১টার দিকে মাহমুদুর রহমান সঙ্গীদের সাথে আদালত থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে আদালত ভবনের প্রতিটি প্রবেশ দ্বার ছাত্রীলীগের নেতাকর্মীরা আটকে দেয়।
ইন্টারনেটে দেশ ও বিশ্বজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে, উদ্বিগ্ন মানুষ ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য আউটলেটে তাঁদের উৎকন্ঠা প্রকাশ করতে থাকেন। সাধারণ সচেতন নাগরিক, বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনেরা মাহমুদুর রহমানের নিরাপত্তা দিতে সরকারকে আহ্বান করে।
কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। ডিজিটাল সরকারের লালদালান ভেদ করে অজস্র মানুষের মিলিত উৎকন্ঠা পৌঁছেনি স্বঘোষিত সরকারের স্বেচ্ছা-দায়িত্ব নেয়া শীর্ষ ব্যক্তিদের কর্ণকুহুরে! জেগে ঘুমিয়ে থাকলে তো কাউকে জাগানো যায় না!! তাঁদের নিস্ক্রিয়তা প্রমাণ করে, এর ইন্দন তাদের।
কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। ডিজিটাল সরকারের লালদালান ভেদ করে অজস্র মানুষের মিলিত উৎকন্ঠা পৌঁছেনি স্বঘোষিত সরকারের স্বেচ্ছা-দায়িত্ব নেয়া শীর্ষ ব্যক্তিদের কর্ণকুহুরে! জেগে ঘুমিয়ে থাকলে তো কাউকে জাগানো যায় না!! তাঁদের নিস্ক্রিয়তা প্রমাণ করে, এর ইন্দন তাদের।
এসময় মাহমুদুর রহমান পুনরায় আদালতের এজলাসে আশ্রয় নেন। দীর্ঘ সময় একই পরিবেশ বিরাজ করায় তিনি আদালতকে বিষয়টি জানান। পরে লিখিতভাবে পুলিশ প্রোটেকশনের জন্য আবেদন করেন। আদালত তাঁকে নিরাপত্তা দিতে বলে। তাঁর সফর সঙ্গীরা পদস্থ পুলিশ অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করেন।
নাহ পুলিশ নিরাপত্তা দিতে আসেনি। আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। বিচারপতির নির্দেশ মানেনি কুষ্টিয়া পুলিশের পদস্থ ব্যক্তিবর্গ।
অন্যদিকে বিকেলে যশোর থেকে আকাশপথে ঢাকায় তাঁর ফেরার কথা। সময় হাতে নেই, দেরি হলে ফ্লাইট মিস করবেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার আদালতে শ্বাসরুদ্ধকর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ তিনি।
হায়রে হায় বাংলাদেশ! আদালতে বিচারক পরিবেষ্টিত অবস্থায়ও বিন্দুমাত্র নিরাপদ নন বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া একজন নাগরিক! বিশ্বে আর কয়েটি দেশে এমন ঘটনা ঘটে থাকে?
এমন পরিস্থিতিতে অসহায় তিনি আদালত এলাকা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। তার ওপর দলবদ্ধভাবে ইট-পাথর বর্ষণ করা হয়। হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করা হয় মাথায় ও ঘাঁড়ে, মুখমণ্ডলে। এইসব ছবি ইন্টারনেটে এখন ভাইরাল। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। মাথা ফেটে রক্তস্রোত বইতে থাকে। গায়ের শার্ট রক্তেভেজে একাকার।
মাহমুদুর রহমানের রক্তধারায় ভেসে গেল আদালতের জমিন।
মাহমুদুর রহমানের রক্তধারায় ভেসে গেল আদালতের জমিন।
কুষ্টিয়ার আদালতের ওপর তখন দিনের সূর্য হেলে পড়ে অস্তপথ পরিক্রমায় ব্যস্ত, আর তখন ঘটনাস্থল থেকে মাথা উঁচুকরে হেঁটে আবার আদালত ভবনে ফিরে আসা 'সাহসের সূর্য' বলে পরিচিত মাহমুদুর রহমান যেন চরম অভিমানে 'মা-বাংলাদেশ' থেকে তাঁর রক্তমাখা-মুখ এড়াচ্ছেন।
নাহ অমানবিকতার এখানেই শেষ নয়। বিনা বিচারের বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকায় নানা রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মাহমুদুর রহমান যেতে পারেননি কোন হাসপাতালে জীবন বাঁচাতে জরুরি চিকিৎসা নিতে। রক্তস্রোত বয়েই যাচ্ছে। কোন গাড়ি ঢুকতে দেয়া হয়নি। ডাকতে দেয়া হয়নি কোন ডাক্তারকে। এই অবস্থায় তাঁকে সেখানে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ।
আজ দেশের আইন আদালতকে সম্মান জানিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে একজন নাগরিক বিচারপতির উপস্থিতিতে আদালতেও নিরাপদ নন। আদালতের আদেশেও নিরাপত্তা পেলেন না মাহমুদুর রহমান। পুলিশের কর্মকর্তারাও ছিলেন পুতুলের মত দাঁড়িয়ে। জীবন বাঁচাতে রক্তপাত বন্ধে হাসপাতালেও যেতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশ রাস্ট্রের 'মানবিক-আত্নার' আজ শেষ দাফন হয়ে গেল কুষ্টিয়ায়!
বাংলাদেশ রাস্ট্রের 'মানবিক-আত্নার' আজ শেষ দাফন হয়ে গেল কুষ্টিয়ায়!