Search

Tuesday, July 31, 2018

উধাও হয়েছে আরও লক্ষাধিক টন কয়লা!


দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার খবরে সরগরম চারদিক। তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত দুর্নীতির মাত্রা আরও বেশি। ভিন্ন কৌশলে আরও লক্ষাধিক টন কয়লা অবৈধভাবে বিক্রি করা হয়েছে বলে সংশ্নিষ্টরা বলছেন।

সেটা কীভাবে? সংশ্নিষ্টরা জানান, কয়লা খনির ভূগর্ভ থেকে অনবরত পাম্পের মাধ্যমে পানি নিস্কাশন করা হয়। এই পানি এসে জমা হয় কয়লা খনির ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। সেখানে কয়লার ডাস্ট (ক্ষুদ্রাকৃতির কয়লা) জমা হয়। এই কয়লা পুনরায় শুকিয়ে আবার জমা করা হয় কোল ইয়ার্ডে। তবে যে পরিমাণ ডাস্ট কয়লা কোল ইয়ার্ডে জমা হয় তার কোনো হিসাব রাখা হয় না। হিসাবের বাইরে থাকা এই কয়লা অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। 

কয়লা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যে কয়লা জমা হয় তা ঠিকাদারের মাধ্যমে শুকিয়ে কোল ইয়ার্ডে জমা করা হয়। এখানে বছরে প্রায় ১৬ থেকে ২০ হাজার টন কয়লা উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এই হিসাব কাগজে-কলমে রাখা হয় না। কোল ইয়ার্ড থেকে অবৈধভাবে এসব কয়লা বিক্রি করেন কর্মকর্তারা। 

তিনি বলেন, বর্তমানে অভিযোগ করা হচ্ছে কয়লা চুরি হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার টন। তবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে জমা হওয়া কয়লার হিসাব কষলে দেখা যাবে এটার পরিমাণ অনেক বেশি। 

একই কথা জানান কয়লা খনির ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে জমা হওয়া কয়লা শুকিয়ে সরবরাহে নিয়োজিত সাবেক ঠিকাদার মিজানুর রহমান। তিনি জানান, গত ৭-৮ বছর ধরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে কয়লা জমা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে জমা করা ডাস্ট কয়লার পরিমাণ সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ টন। 

তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার সাবেক সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান জানান, কয়লা খনিতে যে দুর্নীতি হয়েছে তার প্রধান ও অন্যতম কারণ ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের সঙ্গে মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মকর্তারা জড়িত। তারা বিভিন্নজনের নামে কয়লার ডিও দেন। ডিওতে কয়লার যে পরিমাণ উল্লেখ থাকে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও কমিশন বাণিজ্যের ফলে তার চেয়ে অনেক বেশি দেওয়া হয়। কমিশন বাণিজ্যের অর্থ সবার মাঝেই বণ্টন হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। 

কয়লা ব্যবসায়ী মশিউর রহমান বুলবুল জানান, কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে কিছু গ্রাহক কাগজে যা রয়েছে তার চেয়ে বেশি কয়লা গ্রহণ করেন। এতে বাস্তবে কয়লার মজুদ ঠিক থাকে না। এ কারণে বর্তমানে কাগজে কয়লা থাকলেও বাস্তবে নেই। খতিয়ে দেখা হলে এবং অধিকতর তদন্ত হলে আরও অনেক দুর্নীতিই বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে কয়লা খনির ভেতরে প্রবেশ করতে চাওয়া হলেও প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সদ্য বরখাস্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদের মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। 

কয়লা খনিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গেটে আগের মতোই নিরাপত্তা প্রহরীরা দাঁড়িয়ে। প্রবেশের কোনো অনুমতি নেই। তবে সাংবাদিকদের দেখে উৎসুক অনেকেই এগিয়ে আসেন। তাদের একজন রফিকুল ইসলাম। 

তিনি জানান, খনিতে কয়লা চুরি নতুন নয় বা একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই কয়লা চুরি করে আসছেন কর্মকর্তারা। দুর্নীতিবাজদের একজন আবুল কাশেম প্রধানীয়া। তিনিই মূলত নাটের গুরু। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করার সুবাধে তিনি বিভিন্ন লোকের সঙ্গে আঁতাত করে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। জন্মস্থান চাঁদপুরে হলেও ঢাকার কেরানীগঞ্জে বহুতল ভবন করেছেন। পেট্রোল পাম্প আছে স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে। এছাড়াও পরীবাগে রয়েছে বাড়ি। একইভাবে মাদারীপুরে বাড়ি রয়েছে মাসুদুর রহমান হাওলাদার নামে আরেকজনের। তার ৩-৪টি মাইক্রোবাস রয়েছে, যার প্রতিটির দাম অর্ধকোটি টাকারও বেশি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ২০১৭ সালে খনি থেকে ৩০০ টন কয়লা চুরি হয়েছিল। পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে খনির কর্মকর্তারা রাতারাতি সেই কয়লার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে সমন্বয় করেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন অর্থ ও হিসাব শাখার মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র সাহা। সেই সময়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে আবার তিনি বহাল হন। কয়লা খনি থেকে প্রতি বছরই ইটভাটা মালিকদের কাছে ১০০ টন করে কয়লা বিক্রি করা হয়। এই বিক্রিতেও দুর্নীতি হয়। কাউকে হাজার হাজার টন কয়লা দেওয়া হয়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এটি হয়েছে বলে দাবি তার। 

সম্প্রতি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশের পর খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদকে প্রত্যাহার, কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানীয়াকে বদলী ও দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে এই ৪ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

  • কার্টসিঃ সমকাল/ জুলাই ২৭,২০১৮ 

Stop patronising reckless driving

Bus operators must be held accountable


We deeply mourn for the two college students whose lives were lost on Sunday for the lawlessness that plagues our roads. For the recklessness of two buses, which were racing with each other near the Airport Road flyover, Rajib, aged 18, and Mim, aged 17, both students of Shaheed Ramiz Uddin Cantonment College, had to pay the price. A further nine were also critically injured when the bus ploughed through the crowd. We hope they recover.

Our shipping minister's flippant remarks about the incident only enrage us further—how can he, as an elected official and a transport leader, suggest that too much was being made of the incident, drawing the example of the recent road crash in India which killed 33? Neither are his assurances of justice very assuring, judging from past examples. This was in no way an ordinary accident—it was outright manslaughter.

For years now, we have been trying to attract the attention of the authorities about the complete absurdity that is our roads. With almost certain impunity, bus operators have been free to do whatever they please—from flouting traffic rules and racing with each other in an unhealthy competition for picking up the maximum number of passengers, to hiring unskilled drivers and operating street-unsafe vehicles. This has been possible because of the patronage and backing of influential leaders who have a stake in the sector.

Only a few days back, we witnessed how the bus staff of another operator threw the unconscious body of a student into a canal to avoid the responsibility of taking him for medical care. And as the father of one of the victims in the latest incident, who was himself a bus driver, said, hiring unskilled drivers is the trend in the sector. With so many irregularities, and the leaders being blind to them, can we expect justice? We hope that the drivers whose negligence caused these deaths will be punished and that the victims and their families paid due reparation. Most of all, we hope that this serves as a wakeup call to transport leaders and the government that the sector needs urgent reform and that our roads and lives cannot continue to be at the mercy of these people who in effect are driving with a license to kill.

Courtesy: The Daily Star /Editorial /Jul 31, 2018

Conservation farming on 10pc land can save Tk 1,200cr a year


Bangladesh can get 737,000 tonnes of rice and other cereals and save over Tk 1,200 crore a year by adopting a farming system called Conservation Agriculture (CA) on 10 percent of its cultivable land, according to a recent study.

Adoption of CA, which calls for a permanent soil cover, minimum soil disturbance, crop residue retention and diversification of plant species, will also help improve the health of soil, which is deteriorating.

“We have found very convincing reasons in over 12 years of on-farm demonstrations and recently from surveys of farmer-reported benefits from CA,” said Richard W Bell, professor of land management at Murdoch University, Australia.

He was presenting a paper on conservation agriculture and farm mechanisation at an event held at the Bangladesh Agricultural Research Council (BARC) in Dhaka.

Krishi Gobeshona Foundation (KGF), a government sponsored agricultural research entity, and the Australian Centre for International Agricultural Research (ACIAR), an independent statutory authority in Australia's Foreign Affairs, jointly organised the programme.

CA benefits farmers as it reduces the cost of production by saving labour and fuel costs as well as water for wheat. 

“Some of those benefits address the labour shortages and some involve cost savings and water savings. Generally, there was increased yield and almost always increased profits,” Bell said.

For soil health, CA has been a positive influence, according to the paper. Versatile Multi-crop Planter (VMP) has been developed here under the ACIAR project to promote CA in Bangladesh.

The VMP is being used with power tiller for planting of crops. A local firm, Hoque Corporation, manufactures the VMP, according to the paper.

In another paper on cropping system intensification in the salt-affected coastal zone of Bangladesh and India, Mohammed Mainuddin of the Commonwealth Scientific & Industrial Research Organisation Australia, said 65 percent of the area in the coastal zone is affected by various levels of salinity in the dry season.

Most of the land during dry season remains fallow for late rice harvest and prolonged water-logging, exposure of winter crops to high soil salinity and lack of quality water for irrigation during the season, he said.

Under the initiative, three areas -- Amtali of coastal district Barguna, Dacope of southwest district Khulna and Gosaba of South 24 Parganas, West Bengal -- were taken to test suitable cropping options, he added.

“We are experimenting with multiple crops to see which crop is more beneficial,” Mainuddin said citing the introduction of aus rice, cultivation of high-yielding and early-maturing new varieties of aman rice, and the growing of multiple crops on salinity affected land.

Due to climate change, the entire coastal region is affected with higher degree of floods, water-logging, tidal surges, droughts and salinity intrusion, said Agriculture Minister Matia Chowdhury.

“Productivity enhancement in agriculture is a prime concern to feed the growing population. We need to explore all possible scientific opportunities to increase the productivity of major crops.”

The government has formulated the National Agricultural Policy 2018 that pays greater focus on science-led development approach.

Issues like the use of modern technology such as nanotechnology, genetically modified organism, hybrid, growing more crops with less input, conservation, and precision agriculture conserving soil health and natural resources have been given adequate attention, she said.

She stressed on enhanced collaboration between Bangladesh and Australia to widen the scope of agricultural technology development in stress-prone zones. “I would also like to emphasise the exchange of germplasm of stress-tolerant variety of different crops,” Chowdhury added.

Senior Secretary of the Ministry of Agriculture Mohammad Moinuddin Abdullah, Australian High Commissioner to Bangladesh Julia Niblett, former vice-chancellor of the Bangladesh Agricultural University Abdus Sattar Mandal, W Erskine of the Centre for Plant Genetics and Breeding at the University of Western Australia, BARC Executive Chairman Md Kabir Ikramul Haque and KGF Executive Director Wais Kabir also spoke.
  • Courtesy: The Daily Star Business/ Jul 30, 2018

Higher NPLs hit asset quality of banks

Central bank releases Financial Stability Report


Higher classified loans in public banks in the recent years remain a concern for the banking sector from financial stability perspective, the central bank said.
It also said asset quality for the country's private commercial banks (PCBs) has slightly deteriorated mainly due to higher non-performing loan (NPL).

The gross NPL ratio in the banking sector increased to 9.3 per cent in the calendar year (CY) 2017 from 9.2 per cent a year before, according to the Financial Stability Report (FSR) 2017, released on Monday.

"Pertinently, inadequate due diligence in credit management is one of the key reasons for persistent high NPL in few banks," the Bangladesh Bank (BB) said in its latest FSR.

The gross NPL ratios of all groups of banks except foreign commercial banks (FCBs) and specialised development banks (SDBs), generally known as specialised banks (SBs) went up between end-December 2016 and end-December 2017.

The FCBs experienced a moderate decline of 2.6 percentage points in their gross NPL ratio during the period under review, according to the FSR.

Though SBs achieved some improvements but their NPL ratio still remained high, it said.

"Along with this, the increasing NPL ratio in state-owned commercial banks (SoCBs) is another reason behind high overall classified loan ratio in the banking sector," the BB explained.

The gross NPL ratio of SoCBs increased to 26.5 per cent in CY 17 from 25.1 per cent a year ago.

Asset quality deteriorated for private commercial banks (PCBs) as their gross NPL ratio increased to 4.9 per cent in CY 17 from 4.6 per cent in the previous calendar year.

"If rescheduled and restructured advances were considered, then the gross stressed advance would have been even higher for each category of banks," the central bank added.

In CY17, all banks except three SoCBs, five PCBs and one SB maintained loan-loss provisions as per regulatory requirement of the central bank.

"Provision shortfall was not a system in wide phenomenon and most banks were adequately provisioned," it noted.

The gross NPLs increased by Tk 121.3 billion between CY 16 and CY 17.

"These new NPLs as well as older ones compelled banks to maintain cumulative provisions of Tk 442.9 billion as of end-December 2017, against which banks actually maintained provisions amounting to Tk 375.3 billion," the FSR said.

Besides, stressed advances increased during the period under review due to the rise in volume of NPL and rescheduling of loans under different categories.

Gross non-performing advances plus restructured and rescheduled standard advances are treated as the stressed advances of the banking sector. The stressed advances ratio rose to 19.0 per cent at end-December 2017 from 17.2 per cent a year ago.

"Though the gross NPL ratio at end-December 2017 was only 10 basis points higher than that of previous year, rescheduled standard and restructured loans to total loans increased by 1.7 percentage points over the year, which demands cautious monitoring from both bankers as well as regulator to improve overall asset quality of the banking sector products," the FSR noted.

In CY17, profitability indicators of the banking sector were mostly positive, according to the BB report.

Return on equity (ROE) of the banking sector increased moderately while return on assets (ROA) remained same compared to the preceding year. Net interest margin (NIM) also increased slightly. The weighted average interest rate spread reduced further at the end of 2017.

  • Courtesy: The Financial Express/ Jul 31, 2018

No violence required: Open ballot stuffing by AL men


In Barisal, a cameraman of a private TV channel is carried away to the hospital after he was hit by brickbats thrown at a procession he was filming. Photo: Rashed Shumon


Since the voting started at 8am yesterday, seven to eight ruling party men wearing tags of the “boat” symbol occupied each of the five polling booths for men at Kaladema Government Primary School in Barisal city.

Within the next half an hour, 198 votes were cast and all the voters were forced to vote for Awami League's mayor candidate. Two correspondents of The Daily Star present at the centre for half an hour since the voting started witnessed the incident.

The centre has 1,605 votes. No polling agents for other mayoral candidates were seen around the booths.

Asked about the irregularities, presiding officer of the centre Md Ibrahim denied any such incident.

About the absence of polling agents, he said, “The poling agents came in the morning. But I don't know where they are now.”


He rather asked the correspondents to leave the polling centre after taking photos.

Some of the AL activists who were forcing the voters to vote for AL, however, left the polling centre as a mobile team of law enforcers visited the centre around 8:20am. They came back within five minutes after the team left and started forcing the voters again.

Al Amin, a voter of the centre, said he saw AL men obstructing voters, who were known as supporters of other parties, on their way to the centre.

Visiting four booths of Kashipur Government Primary School centre at 9:15am, the correspondents found that AL men, wearing the same “boat” symbol tags, snatched away ballots from voters, stamped and dropped those in the ballot box. Voters, however, were allowed to choose councillor candidates as per their choice.

During half an hour visit at the centre, the correspondent found that at least 10 voters were forced to give away their ballot papers to the AL men.   

At Kashipur High School and College centre, the correspondents witnessed similar incidents – they saw at least 10 voters being forced to hand over the ballot papers of mayoral candidates, which the AL men later stamped.

In Barisal, a voter is seen during a heated exchange of words with an election official, after waiting in line for hours and then finding ballots already stamped on the “boat” symbol. Photo: M Jahirul Islam Jewel

Shahjahan Mridha, a voter of the centre, said AL men forced him to vote for the ruling party mayoral candidate.

Another voter at the centre, Nanna, said there was no point of going to the polling centre as there was no scope for choosing a candidate.

In both centres, no agent of BNP mayoral candidate Mujibur Rahman Sarwar was found. 

Six correspondents of this newspaper visited 36 centres, out of the total 123. BNP's polling agents were seen in only three centres and they even left the centres after 9:30am.

The correspondents noticed a large number of ruling party supporters around the polling centres who barred known BNP supporters from entering the centres.

AL activists also asked the journalists not to take photographs, both inside and outside the polling centres.

Anwarul Haque Tarin, assistant general secretary of Barisal city BNP, said the ruling party men forced their agents out of the polling centres.

Around 8:40am at Imam Gazzali Academy Dakhil Madrasa under ward 30, at least two women alleged that AL men accompanied them up to the booth for casting votes and forced them to stamp on the boat symbol.

One of the correspondents witnessed at least two such incidents at the centre.

Ruling party men were seen entering the centre before the very eyes of law enforcers without any obstacle. They also asked journalists to leave the centre.

Mostafizur Rahman, presiding officer of the polling centre, denied any irregularities.

At Government Barisal College centre under ward 19, a large number of under-aged boys were found standing in queues to cast votes at 8:05am. As several dozen journalists visited the centre, they left the spot.

AL candidate Serniabat Sadiq Abdullah cast his vote at the centre. Within half an hour, 116 votes were cast at the centre.

At Sahara Institute of Technology under ward 26, AL men stuffed ballot boxes in front of journalists and the presiding officer around 11am. Till 11am, 630 votes out of 1,715 were cast there. But presiding officer Manjur Sohel denied any such irregularities.

Mahbubur Rahman, a voter from Jagua High School and College centre, said he returned home without casting his vote as some youths asked him to vote for “boat”. 

The presiding officer of Syada Majidunnesa High School centre suspended voting as ruling party men from outside occupied the centre and stuffed ballot boxes.

Vote taking at Barisal City College centre under ward 17 remained suspended for half an hour from 12:30pm as ruling party men snatched ballot papers from one of the booths. Monirul Islam, presiding officer of the centre, confirmed the matter.

Md Helal Uddin, assistant returning officer of Barisal City Corporation polls, refused to make any comment over the irregularities at the polling centres. 

During the polls no serious violence occurred in the city. Different law enforcement agencies including Rapid Action Battalion (Rab), Border Guard Bangladesh (BGB) and magistrates were seen patrolling.
  • Courtesy: The Daily Star/ Jul 31, 2018

পেটোয়া বাহিনী বনাম পুলিশ-ছাত্রলীগ

অলিউর রহমান ফিরোজ

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ছাত্রলীগ যেভাবে বাড়াবাড়ি করছে, তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অবমাননাকর। যুগ যুগ ধরেই এ উপমহাদেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। দাবি আদায় করতে গিয়ে অনেকেই সরকারি বাহিনীর হাতে মারা পড়েছেন, কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট কিসের ইঙ্গিত বহন করছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কার ওপর বর্তায়? ছাত্রলীগ নাকি পুলিশের ওপর? যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, তারা যেন সে দলেরই লেজুড়বৃত্তি শুরু করেন। তারা যেভাবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে তা ভাবতে গেলে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে।

ছাত্রলীগ শুধু যে ছাত্রছাত্রীদের ওপরই অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে, তা নয়। তারা তাদের সম্মানিত শিক্ষকদের পর্যন্ত লাঞ্ছিত করতে দ্বিধা করছেন না। তাদের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অনেক সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে ছাড়ছে ছাত্রলীগ। 

এখানেই শেষ নয়; এরা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের রাজপথে নাজেহাল করে ছাড়ছে। সাংবাদিক ভাইদের ছবি ওঠানোর সময় তেড়ে আসছে মারতে। তারা এতটা ক্ষমতা পায় কোথায়? আর এত সব ঘটনা ঘটে দেশের পুলিশ বাহিনীর সামনেই। তারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস কার্যক্রম চেয়ে চেয়ে দেখছে। তারা যেন কলের পতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য নেই। তারাও এখন ছাত্রলীগের মতোই সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে মানুষের সেবক হওয়ার কথা ছিল, এখন তারাই জুলুমকারী হিসেবে মানুষের সামনে মূর্তিমান আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিনা কারণে গাজীপুরে যেভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর পুলিশ চড়াও হলো, তা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। তারা এখন ভুলেই গেছে, তারা এ দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকায় চলে। অপর দিকে মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটি ছিল ন্যক্কারজনক। তিনি যদি কোনো অন্যায় আচরণ করে থাকেন তা আদালতই দেখবে। কিন্তু পুলিশ যেভাবে ছাত্রলীগকে পেটানোর সুযোগ করে দিলো তা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। 

যেভাবে মাহমুদুর রহমানের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাহায্য চাওয়া হয়েছিল তাকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সেখানে তাহলে পুলিশ কিভাবে একজন ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের ওপর ছেড়ে দিলো তাকে যখম করার জন্য? ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে তাহলে ধরে নিবো তারা কি এখন দলেরও ঊর্ধ্বে ওঠে গেছে।

এর আগে নৌকার লাঠি-বৈঠার মারামারির কারণে দেশের ভেতর সেনাশাসকরা মজা করে রাষ্ট্র দখল করতে পেরেছিল। তাদের কারণে দেশের স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়েছিল। কোটা আন্দোলনের পরিস্থিতি সহজেই সরকার মোকাবেলা করতে পারত। মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে যেগুলো যৌক্তিক ছিল সেগুলো সংস্কার করে তাদের দাবি মেনে নেয়াটাই ছিল যথোপযুক্ত। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাহলে আমরা কি আবার সেরূপ সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। 

পুলিশ কেন এতটা বেপরোয়া মনোভাব ধারণ করবে। তার কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সে সেটিতেই নিয়োজিত থাকবে। সে কেন রাজনৈতিক মদদের মতো পেটোয়া বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হবে। 

কুষ্টিয়ার ঘটনায় সেখানকার আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা জনগণের কাছে এখন কী জবাব দেবেন? অবশ্য কোনো অন্যায় কাজের জন্য তো তাদের কখনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না বরং যত নিপীড়ন চালাতে পারবে সে পুলিশের তত প্রমোশন হবে। কী অবাক করা দেশ?

কক্সবাজার জেলায় পুলিশের বড় কর্তা যেখানে নিয়েই ইয়াবার কারবারের সাথে জড়িত, সেখানে মাঠপর্যায়ে পুলিশের ইয়াবাবাণিজ্য যে আরো ব্যাপক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা হাজার হাজার পিস ইয়াবা ধরে মাত্র কয়েকটি দিয়ে চালান দেয় আদালতে। 

বাকিটা তারাই মেরে দিয়ে অপর ইয়াবা কারবারির কাছে বিক্রি করে দেয়, কক্সবাজারের ঘটনা থেকে অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে। পুলিশ যদি জড়িত না হতো তাহলে ইয়াবা কারবারের এতটা প্রসার লাভ করতে পারত না।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ৩০,২০১৮ 

Monday, July 30, 2018

আর বাস চালাবেন না মিমের বাবা


মোছাব্বের হোসেন

  
মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের পাশ দিয়ে একটা সরু গলি। গলি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে মহাখালী দক্ষিণ পাড়া এলাকা। এক পশলা বৃষ্টিতে কিছুটা পানি জমেছে সেখানে। দুই এক জায়গায় খোঁজ করা হলো বাসচাপায় নিহত হওয়া শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাড়ি কোথায়। এক দোকানদার বললেন মসজিদের পাশে দিয়ে বড় এক ভবনের পাশের বাম গলিতে। গলির মুখে মানুষের জটলা। দিয়ার বাড়ির কোথায় জানতে চাইলে সেলিম আহমেদ নামের একজন এগিয়ে আসে। কানা গলির শেষের বাসাটায় নিয়ে যেতে যেতে তিনি বলেন, ‘জানেন যে মেয়েটাকে কোলে থাকতে দেখে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। কত বড় হয়ে গেছে। গতকাল শুনি সে আর নেই। কিছুতেই বিশ্বাস হইতেছে না।’

কথা বলতে বলতে দোতলা এক বাড়ির নিচ তলায় নিয়ে গেলেন সেলিম। ঘরের সামনে অনেক স্যান্ডেল, জুতা। এলাকার অনেকেই এসেছেন দিয়ার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। দুই কামরার বাড়িতে একটিতে জাহাঙ্গীর আরেকটি ঘরে তাঁর স্ত্রী মেয়ে আর ছেলে।

বাবা জাহাঙ্গীরের পাশে গোল হয়ে বসেছে সবাই। পরিচয় পেয়ে কথা বলা শুরু করলেন জাহাঙ্গীর। চোখে মুখে দীর্ঘ ক্লান্তির ছাপ। মেয়ে হারা এই বাবার চোখ কাঁদতে কাঁদতে লাল হয়ে গেছে। চোখ ফুলে গেছে। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলা শুরু করলেন মেয়ের কথা। জাহাঙ্গীর বলছিলেন, মেয়ে আমার কলেজে গেলে ওর মায়ের কাছে খবর নেই, সে পৌঁছাইছে কি না। এবার বাড়ি আইলে জিগাই আসছে কি না। ওটা প্রতিদিনের রুটিন আমার। আমি ঢাকা-রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জ রুটে একতা পরিবহনের বাস চালাই আজ ২৭ বছর ধইরা। কাইলকে দুইটার সময় আমি বাস নিয়া যাব চাপাই। যাওয়ার আগে ওর মারে কইলাম মে আইলে আমারে জানাইও। এই কথা কইয়া আমি বাইর হইছি কেবল। হঠাৎ এক ফোন আইল একটার দিকে। একজন কইল আপনার মেয়ে নাই জলদি আসেন। আমি কেমনে যাব কিসে যাব ভাবতে পারতাছিলাম না। পরে বাসে, রিকশায় বনানী পর্যন্ত গেছি। এক মোটরসাইকেল ওয়ালাকে কইলাম ভাই আমার মেয়ে অ্যাকসিডেন্ট করছে আমারে লইয়া যান। এরপর যা দেখলাম তা আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারমু না। গিয়া দেখি আমার মেয়ে আর নাই। জাহাঙ্গীরের চোখে আবার পানি জমে উঠেছে। টিস্যু দিয়ে সেই চোখ মোছেন তিনি।

জাহাঙ্গীরের ক্লান্ত শরীর মেয়ে হারানোর ব্যথায় যেন কুকরে আসছিল। তিনি বলা শুরু করলেন, মা আমার ভালো ছাত্রী ছিল। এসএসসিতে ভালো করছে। এ প্লাস পাইছে টিঅ্যান্ডটি মহিলা ডিগ্রি কলেজ থাইকা। পরে ওই কলেজে ওর ভর্তি হওয়ার খুব ইচ্ছা। এদিকে ভালো কলেজ নাই। অনেক দূর হয় তাও শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি কইরা দিলাম। মেয়েটা খুব খুশি আছিলো। প্রতিদিন কলেজে যায় আসে। আমি খবর নেই ও ঠিকমতো আইছে কি না। একবার গাড়ি নিয়ে আসা যাওয়া করলে ১ হাজার ২৫০ টাকা পাই। অনেক কষ্টের জীবন আমার। ভাড়া দেই. খাবার কিনি। মেয়েকে বুঝতে দেইনাই কষ্টে আছি। শুধু চাইছি মেয়েটা বড় হউক। ওরে নিয়ে কত স্বপ্ন আমার....। জাহাঙ্গীর থেমে যান। অভিমান করে বলেন, এত দিন বাস চালাই কই ফেডারেশনের কেউতো আইল না। মেয়ে মরা বাপ আমি কি কষ্টে আছি কেউ তো খবর নিল না। আমাগো অভিভাবক মন্ত্রী শাহজাহান খান তিনি নাকি আমার মেয়েসহ দুজন মরার কথা বলতে বলতে হাসতে ছিলেন। এই কথা শুইনা আমার দুঃখে বুক ভাইঙ্গা আসছে...। আমি আর বাস চালামু না। যেই বাস আমার মেয়েরে নিয়া গেল। সেই বাস আর ধরুম না আমি। আমি সারা জীবন বাস চালাইছি সেই ছোট থাইকা কেউ আমার গাড়িতে অ্যাকসিডেন্ট হয় নাই। আমি তো কাউরে মারি নাই। তাইলে আমার মতো মানুষের মেয়ের কপাল এমন হইলো কেন?

ঢাকায় যারা বাস চালায় তাদের ঠিকমতো গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, খোঁজ নেন এরা হেলপার। দুই দিন বাস চালাইয়া ড্রাইভার হইয়া গেছে। তো এরা মানুষ মারব না তো কি? এদের কোনো ঠিকানা নাই। আপনারা আসল জায়গায় হাত দেন। এই যে নিরাপদ সড়ক চান কি লাভ, আমার মেয়েরে তো ফেরত পামুনা। আপনারা উদ্যোগ নেন। আমি বাস চালানো শিখামু। প্রশিক্ষণ ছাড়া একজনেরও লাইসেন্স দিবেন না। আমি বিআরটিএকে সহায়তা করমু।

মেয়ের কথা বলতে গিয়ে আবার আবেগাপ্লুত হয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এটাতো দুর্ঘটনা না। পুলিশ আমাকে বলছে মামলা করতে। আমি তো মেয়েরে নিয়া ব্যস্ত। মেয়েরে পোস্টমর্টেম করি নাই। অমনি মাটি দিছি। কি মামলা হইছে জানি না। এখন শুনি দুর্ঘটনা। এটা কেমন দুর্ঘটনা। এটা তো হত্যা, নাকি? আমি কেন সবাই বলব এটা হত্যা।

জাহাঙ্গীরের পাশের ঘরে দিয়ার মা রোকসানা বেগম জায়নামাজে বসে কাঁদছিলেন আর মেয়ের নাম ধরে বিলাপ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, কিছুই চাই না আমি। মেয়ে হত্যার বিচার চাই। প্রতিদিন মেয়েকে গাড়িতে উঠাই দিয়া আমি আইসা পড়ি। এই মহল্লার অনেকে ওই কলেজে পড়ে। ওগো লগে মেয়ে আমার আইসা পড়ে। মেয়ে আমার কাছে কিছুই চাইতো না। ওর কোনো চাহিদা নাই। যা দেই তাই খায়। শুধু চাইছে যে মা আমি ওই কলেজে পড়মু আমার খুব ইচ্ছা। মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করলাম। সেই লক্ষ্মী মেয়ে আমার এভাবে মারা গেল। মা আমার নাচ-গান এগুলো খুব পছন্দ করত। আমিও বাধা দিতাম না। আমার বড় মেয়ে রিয়ার লগে ওর কি ভালো ভাব। দুজনে আমার সংসারের সুখ। এক ছেলে ছোট। কষ্টের সংসারে ওরাই আমার মন ভইরা রাখতো। এখন আমার মা নাই। আমাদের ছেড়ে চলে গেল...।

রোকসানা বেগম বলছিলেন, ঠিক এক মাস আগে ও কলেজে ভর্তি হয়ছিল। এক মাস পড়েই চলে গেল আমাদের ছেড়ে। মা আমার এই অল্প সময়ে সবাইরে আপন করে লইছিলো। সব কথা আমারে কইতো। কলেজে কী কী হইতো সব কইতো। ওর কয়েকটা বই কম ছিল। তাও কালকে কিনা রাখছি। যাতে আমার মায়েরে স্যাররা কলেজে দাঁড় না করায়। এভাবে চলে যাইবো তাই মায়া বাড়ছিল মা আমার। রোকসানা বেগম আর কিছু বলতে পারলেন না। মাথা ঠুকতে থাকলেন। পাশ থেকে দিয়ার বড় বোন রিয়া বলতে শুরু করলো আমি আর দিয়া খুব মিল আমাদের। গল্পের বই পড়তে ভালো বাসতো। কার গল্প সেইটা দেখতো না। কোনো গল্প ভালো হলেই ও পড়ত। গণিতে ভালো ছিল দিয়া। এখন আর কাকে আমি আপু বলে ডাকমু?

রোববার দুপুরের দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।

নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) ও একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম (১৬)।

বাসচাপায় প্রাণহানির ঘটনায় গতকাল রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করছেন নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের (মিম) বাবা জাহাঙ্গীর আলম।

  • কার্টসি — প্রথম আলো/ সোমবার, জুলাই ৩০, ২০১৮।

রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও অর্থনৈতিক ফলাফল — অন্তর্ভুক্তির অনুপস্থিতিতে এককেন্দ্রিকতা (১৯৭১-৭৫)

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর



ভবিষ্যত্মুখীন অতীত বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বহমান অর্থনীতির দশকওয়ারি ভাগ করা যেতে পারে; আবার বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্দিষ্ট করে চলমানতার পর্ব অনুযায়ী বিভক্তি হতে পারে। এ নির্দিষ্টকরণ এ কারণে জরুরি যে, ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অতীতের শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্বের দাবি থেকে এখানে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য খোঁজার চেষ্টা করা হবে।

অতীতের আলোকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য খুঁজতে গেলে কতগুলো বিষয় মনে রাখতে হবে। অর্থশাস্ত্রের মূলধারায় অর্থনৈতিক উপাদানের মধ্যেই অর্থনৈতিক ফলাফল নির্ণয়ের চেষ্টা চলে। অর্থনৈতিক উপাদানের বাইরের বিষয়গুলো তাত্ত্বিক কাঠামোয় বহিঃস্থ প্রদত্ত চলক হিসেবে গণ্য করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পরিবর্তনের আলোকে অর্থশাস্ত্র খাপ খাইয়ে নেয়ার নিয়ত চেষ্টারত। তাত্ত্বিক কাঠামোয় কী কী চলক অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তা নিয়ে একমত না হতে পারলেও নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যেতে পারে, অর্থশাস্ত্র তার চলমান ধারায় এ ঐকমত্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে যে রাষ্ট্র, রাজনীতি, ঐতিহাসিক গতি-প্রকৃতি এবং প্রতিষ্ঠান তথা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ, রেওয়াজ, মূল্যবোধ ইত্যাদি অর্থনৈতিক ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে স্বাভাবিক কারণেই প্রতিষ্ঠানমুখীন সমাজবিজ্ঞানে একাধিপত্য বিস্তারকারী এ শাস্ত্রের আত্মপরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি ধীরলয়ের। তাত্ত্বিক কাঠামোর এ সীমাবদ্ধতা এবং ওই কাঠামোর প্রতি একনিষ্ঠতার কারণে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও অর্থনীতির আন্তঃসম্পর্ক বিচার করে তার আলোক থেকে দেখার চেষ্টা থেকে অনেকেই বিরত থেকেছেন। হয়তোবা অনেকেই ওই বৃত্তেই থেকে যেতে চান! রাষ্ট্র, রাজনীতি ও অর্থনীতির আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ‘কেতাবি’ কোনো তাত্ত্বিক কাঠামোও নেই। অধিকাংশের জন্য ব্যবহারযোগ্য তাত্ত্বিক কাঠামোহীনতা যেমন সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, তার চেয়ে বেশি করে সৃজনশীলতার অনেক রাস্তা খুলে দেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যে কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে পুঁজিবাদী রূপান্তর বা উন্নয়নের টেকসই রূপান্তর ঘটেছে, তাদের সঙ্গে আগের উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের বড় রকমের পার্থক্য লক্ষণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হাতেগোনা গুটিকয়েক রাষ্ট্রের টেকসই অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটেছে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এ টেকসই রূপান্তরিত দেশের তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে কতগুলো রাষ্ট্রের কোনো কোনো সময় মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি বেড়েছে। আবার পরবর্তীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিপর্যয় ঘটেছে। ফলে বিপরীতমুখী পরিবর্তন হয়েছে, যেমন— ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান। এসব দেশ টানা অগ্রগতির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা অর্জন করেনি। অর্থাৎ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেই চলবে না, টেকসই হয়ে স্থিতিশীল হতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর টেকসই অর্থনৈতিক বিবর্তন অর্জনকারী দেশগুলোয় সক্রিয় রাষ্ট্রের উপস্থিতি লক্ষণীয়। টেকসই রূপান্তরে রাষ্ট্র শুধু নিজেকে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির মধ্যে সীমিত করেনি। রাষ্ট্র যেমন একদিকে পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা প্রদান করেছে, তেমনি যদি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনার অপব্যবহার হয়েছে, রাষ্ট্র কঠোর হাতে পুঁজিপতিদের দমন করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। এ দুই হাতের সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে অত্যন্ত প্রভাবশালীও বাদ পড়েনি। দক্ষিণ কোরিয়া বা চীন থেকে অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর টেকসই অর্থনৈতিক বিবর্তন অর্জনকারী দেশগুলো সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, অতীতের উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোকে হুবহু অনুসরণ করেনি, ইতিহাসলগ্নতায় নিবিষ্ট থেকে দেশোপযোগী কৌশল উদ্ভাবন করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে অনেক অতি উৎসাহীর আড়ম্বরপূর্ণ অথবা কদর্যময় বাগাড়ম্বরের অভাব ঘটেনি। জন্ম থেকেই চলছে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দিয়ে শুরু হয়েছিল। একটু চিনির প্রলেপ লাগিয়ে বলা হয়েছিল ‘টেস্ট কেস’। বেশ কয়েক বছর তাদেরই কোনো না কোনো তরফের উত্তরাধিকারীরা ‘বাংলাদেশ’-এর পরে ‘প্যারাডক্স’, ‘সারপ্রাইজ’ বা ‘ধাঁধা’ বা ‘আপাতবৈপরীত্য’ বা ‘আশ্চর্য’ বৈশিষ্ট্য যুক্ত করছেন। সাম্প্রতিককালে ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’ চালুর চেষ্টা লক্ষণীয়। এ বাগাড়ম্বরগুলো গোষ্ঠী স্বার্থ হাসিল বা তাঁদের নিজস্ব অস্তিত্বকে জাস্টিফাই করার ধূম্রজাল সৃষ্টির জন্য করা হয়ে থাকে বলেই এ কথামালা বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে না এবং পরবর্তীতে যখন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তখন অসারতায় পর্যবসিত হয়।

বাংলাদেশের আলোকে বাংলাদেশকে দেখতে হলে বা বাংলাদেশের উন্নয়নের দশকওয়ারি অথবা পর্ব অনুযায়ী বৈশিষ্ট্য খুঁজতে গেলে একদিকে যেমন উৎপাদনের উপকরণ তথা ভূমি, পুঁজি, শ্রমশক্তি, প্রযুক্তির গতিপ্রকৃতি ও পরিবর্তন অনুসন্ধান করতে হবে; পাশাপাশি রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক যথা— জনগণ কী ধরনের রাষ্ট্র চেয়েছে, রাষ্ট্র আসলে কী ধরনের রূপ নিয়েছে এবং কার দ্বারা ও কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের আন্তঃসম্পর্কে কী ও কীভাবে পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, এ রাষ্ট্রটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছে। এই মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি ইতিহাসলগ্নতা আছে, তা যেমন পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত, তেমনি বাংলাদেশ সৃষ্টির সঙ্গেও। পাকিস্তান সৃষ্টির যৌক্তিক ব্যাখ্যা জানা যেমন প্রয়োজনীয়, ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত মোহভঙ্গের কারণ জানা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত তিনটি স্তম্ভ— সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার— বাংলাদেশ বিশ্লেষণের তাত্ত্বিক কাঠামোর মৌল চলক। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবহমানতা বোঝার জন্য রাজনৈতিক বন্দোবস্তও বোঝা জরুরি।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কেন উৎপাদনমুখীন অবস্থা তৈরি হলো না কিংবা স্বাধীনতা-পরবর্তী যে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রের তথা আপামর জনতার স্বপ্নের, সে বাংলাদেশ তৈরি হলো না? এটাই মৌলিক প্রশ্ন। এ প্রশ্নের যদি মীমাংসা করতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিনির্মাণে তা যথেষ্ট শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের কর্মকৌশল প্রণয়ন করা যাবে এবং বর্তমানে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তা সহজসাধ্য হয়ে যাবে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ বিষয়গুলো কেন বাস্তবায়ন হলো না, তার মীমাংসা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঠিক অনুসন্ধানের মধ্যে নিহিত। রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চরিত্র লক্ষ করলে এর ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো রাষ্ট্রই রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। তার মানে এ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিশ্রুতির জায়গাটি ছিল অনেক বড়। কেন, কী কারণে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক যন্ত্র সে ধরনের কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে কিংবা আমলাতন্ত্র সেই কর্মকৌশল কেন বাস্তবায়ন করতে পারল না— এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এবং এটি মীমাংসা করাও জরুরি। যদি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সেই অনুযায়ী কর্মকৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে যে ধরনের বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই দেশের পথে অগ্রসর হওয়া যাবে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পুঁজির আকাল ছিল। সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয়েছিল, পুঁজি মূলত কৃষির উদ্বৃত্ত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে আসবে। কৃষি থেকে উদ্বৃত্ত হলো না। কৃষিতে দিন দিন প্রান্তিক কৃষক যেমন বাড়তে থাকল, তেমনি বাড়তে থাকল ভূমিহীনের সংখ্যা। কৃষিতে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার দরকার ছিল, তেমনি দরকার ছিল উৎপাদনের উপকরণের সহজলভ্যতা ও মহাজন-ফড়িয়া-বর্গাদার তথা বাজার ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের থেকে কৃষকদের পরিত্রাণ। ‘সবুজ বিপ্লবে’র ডাক দেয়া হলো কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদত্ত গভীর নলকূপ ব্যবহারের জন্য গঠিত কৃষক সমবায় সমিতির হর্তাকর্তা যেমন বনে গেলেন শাসকদলের গ্রাম পর্যায়ের নেতা বা তার অনুসারী, অন্যদিকে সারের ডিলার হলেন শাসকদলের গ্রাম পর্যায়ের ওই বা আরেক নেতা বা কর্মী। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের নিজস্ব সম্পদ বাড়তে থাকল কিন্তু উৎপাদনশীল পুঁজি তৈরি হলো না। কৃষিকে আরেক বড় ওজন বয়ে চলতে হলো। অন্য কর্মসংস্থান প্রদানের খাত না থাকায় অধিকাংশ মানুষকে কৃষির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হলো। এ অধিকাংশ ছদ্মবেকারের উপার্জনও কম। ফলে তাদের কোনো সঞ্চয় থাকল না, বরং ঋণ নিয়ে জীবন নির্বাহ করতে হলো— এ বিশাল জনগোষ্ঠীও কোনো পুঁজি জোগান দিতে পারল না।

অন্যদিকে পরিত্যক্ত শিল্প-কলকারখানা পরিচালনার জন্য অগত্যা রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হলো। খুবই কমসংখ্যক বাঙালির শিল্পমালিকানা ছিল। এগুলোও জাতীয়করণ হয়েছিল। পরিত্যক্ত শিল্প-কলকারখানার তুলনায় জাতীয়করণের সংখ্যা নগণ্য ছিল। এখানে যে বিষয়টি পরিষ্কার করা এবং বোঝা দরকার তা হচ্ছে, যে জাতীয়করণ করা হয়েছিল, তা কি আদর্শগত, না তা তত্কালীন পরিপ্রেক্ষিতের বাস্তবতা। এ কলকারখানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন সরকারি দলের নেতা বা সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তি বা আমলা। এ প্রশাসকরা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির মাধ্যমে উদ্বৃত্ত তৈরি ও বিনিয়োগের পরিবর্তে লুটপাট শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আগের লাভজনক প্রতিষ্ঠান লোকসানি রোগাক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় ।

শিল্পের বিকাশ হচ্ছিল না, কিন্তু এক ধরনের বাণিজ্যনির্ভর শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটছিল। তারা যতটা না শিল্প স্থাপনে নিজেদের নিয়োজিত করছিল, তার চেয়ে একজন বেনিয়া বা আমদানিকারক হিসেবে কাজ করার আগ্রহের পরিমাণ তাদের মধ্যে বেশি ছিল। পুঁজির বিকাশ ঘটছিল এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই। পুঁজিকে উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহারের জন্য বা শিল্পের ভিত্তি স্থাপনের তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। রাষ্ট্র উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে জুতসই কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি, যার মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ ঘটানো যায়। তবে পরিকল্পনা কমিশনের আমদানি বিকল্প শিল্প নির্মাণের এক ধরনের প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু শাসকদলের চরিত্রের সঙ্গে এ পরিকল্পনাগুলোর যোজন দূরত্ব ছিল। শাসকদলের অধিকাংশ সদস্য মধ্যবর্তী শ্রেণীগুলোর অংশভুক্ত ছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নিজস্ব সম্পদ বাড়ানোই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। পরিকল্পনাগুলো এতটাই রাজনীতি থেকে বিযুক্ত ছিল।
বাংলাদেশে পুঁজির ঘাটতিমূলক পরিস্থিতি এবং সঞ্চয় ও বিনিয়োগের পার্থক্য মেটাতে বৈদেশিক সাহায্যের আবির্ভাব ঘটল। কম দেশীয় সঞ্চয় মোকাবেলার জন্য বৈদেশিক সাহায্যকে পুঁজি সরবরাহের একটি বড় ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হলো। বৈদেশিক সাহায্যের মাধ্যমে পুঁজি সরবরাহ করলেন তারা, একটি নির্ভরশীলতার অর্থনীতিরও জন্ম দিলেন। এ নির্ভরশীলতা দেশের মধ্যে এক ধরনের নির্ভরশীল শ্রেণী তৈরি করল। এ নির্ভরতা থেকে পশ্চিমা বিশ্বের হেজিমনি তৈরির রাস্তা সুগম হতে থাকল। শাসককুলের মধ্যে আস্তে আস্তে তাদের চিন্তা-চেতনা প্রবেশ করতে থাকল এবং আস্তে আস্তে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকল।

যুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো দেশের মতোই বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব ছিল। বিশাল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর কাজ ছিল না। ব্যাপক পরিমাণে জনগোষ্ঠী কৃষির ওপর নির্ভর ছিল। শিল্প বিকাশের অভাবে নতুন কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছিল না, আবার কৃষির ওপর অধিকাংশ মানুষের নির্ভরশীলতার কারণে প্রকৃত খাত বাড়ছিল না। বাংলাদেশে বিরাজ করছিল বড় রকমের দারিদ্র্য পরিস্থিতি। কৃষির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে গ্রামীণ বাংলায় প্রচণ্ড মাত্রায় দারিদ্র্য পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। একপর্যায়ে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়।

তেমনি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যে ধরনের রাষ্ট্রীয় নীতি-কাঠামো প্রয়োজন, সেসবেরও অভাব ছিল। নীতি-কাঠামো ও দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন তারা উৎপাদনে নিজেদের নিয়োজিত করবে, অন্যদিকে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, সে রকম প্রক্রিয়াও জারি ছিল না। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেবল গড়ে উঠছিল এবং দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এর সরবরাহ সীমিত ছিল। তাছাড়া বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে তৈরি করার জন্য যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা, কারিগরি ব্যবস্থা প্রয়োজন, সে ধরনের প্রচেষ্টা ও পরিস্থিতিও বিদ্যমান ছিল না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ কম থাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় সীমিত ছিল। অর্থনীতির আকার ছোট থাকায় শুধু আমদানি শুল্কই রাষ্ট্রের আয়ের উৎস ছিল।

এ ধরনের পরিস্থিতি কেন তৈরি হচ্ছিল, সেই আলোচনাটা করা জরুরি। এক্ষেত্রে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। প্রথম বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে, বাংলাদেশ উত্তরাধিকারসূত্রে এমন একটা রাষ্ট্রযন্ত্র পেয়েছে, যা ছিল মাত্রাতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক। এ আমলাতন্ত্রকে অভিহিত করা হতো ‘সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস’ বলে। অর্থাৎ এ শ্রেণীটি নিজেদেরকে সাধারণ মানুষ থেকে উপরে ভাবতে এবং নিজেদের শাসক মনে করত। কর্তৃত্ববাদী আমলাতন্ত্র ক্রমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপরে বড় রকমের নিয়ন্ত্রণ জারি করে ফেলেছিল।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একটা শ্রেণীর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরজবরদস্তির মাধ্যমে সম্পদ ও পুঁজি সঞ্চয়ের চেষ্টা চলল। শাসকদলকে ব্যবহার করে এক ধরনের লাইসেন্স রাজত্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। তার সঙ্গে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবলয়ের মাধ্যমে পুঁজি সঞ্চয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। আমলাতন্ত্র বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা কেবল গুটিকয়েকের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করার জন্য কাজ করেছে। পরিকল্পনা কমিশনেও পরিকল্পনা যন্ত্র ও পরিকল্পনার কৌশল প্রণয়নের প্রক্রিয়াগুলো ছিল কণ্টকপূর্ণ, যা অনেক ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফলে প্রথম পরিকল্পনা কমিশন একসময় ভেঙে যেতে বাধ্য হয়েছে।

শাসকদল শাসনক্ষমতা রেখেছিল একান্তই নিজেদের মধ্যে। স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। সব দলকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের চেষ্টাটা ছিল না। ফলে বড় রকমের হুমকি তৈরি হলো এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধও চালু ছিল। এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সক্রিয় ছিল না। এছাড়া রাষ্ট্রের আরেকটি অন্যতম কাঠামো তথা সামরিক বাহিনীতেও এক ধরনের মতপার্থক্য ছিল। ফলে সবসময় একটা দুশ্চিন্তা জারি ছিল।
যেকোনো গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দল থাকবে, মত থাকবে এবং দল-মতের পার্থক্য থাকতে হবে। দল এবং মত তখনই কাজ করতে পারবে যখন দেশে গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরি হবে। সংবিধান হচ্ছে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের চুক্তি। এটি যত অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে তত অধিকার প্রদান করবে। ১৯৭২ সালে আমরা সংবিধান তৈরি করেছি (যা এখনকার চেয়ে অনেক মানসম্পন্ন ছিল)। কিন্তু সেই সংবিধান তৈরির ক্ষেত্রে যে ধরনের সাংবিধানিক সভা দরকার ছিল, জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো দরকার ছিল, তার কিন্তু ঘাটতি রয়েই যায়। ফলে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত মৌলিক অধিকারগুলো কেবল নীতিমালায়ই রয়ে গেছে। নাগরিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টার মৌল ভিত্তি গণতান্ত্রিক সংবিধান। এটি তৈরির চেষ্টার মধ্যেও কিন্তু এক ধরনের ঘাটতি লক্ষণীয়। এ ঘাটতি পূরণ হতে পারত যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হতো। কিন্তু এর বিপরীতে একটি বড় অংশ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। নাগরিক রাষ্ট্র তৈরির ক্ষেত্রে এ ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।

গণতান্ত্রিক নাগরিক রাষ্ট্র তৈরি না করা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের একমুখিতার ফলে সৃজনশীলতা তৈরি হয়নি। রাষ্ট্র তেমন পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হয়নি, যার মাধ্যমে টেকসই অর্থনীতি ও উৎপাদন ক্ষমতার বিকাশ ঘটবে। কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও তখনো কৃষি খাতে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটেনি এবং কৃষির বহুমুখীকরণের তেমন কোনো পরিকল্পনা তখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। ফলে বিরাট অংশের মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতে হয়েছে। এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার কারণে এমন একটা মধ্যবর্তী শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যারা ক্রমাগত তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। লুটপাট করেছে। ফলে তখন থেকেই বাংলাদেশে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ বৈষম্য ব্যবস্থা স্বাধীনতার অন্যতম স্তম্ভ সাম্যের সঙ্গে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। এ বৈষম্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যে ধরনের চিন্তা কাঠামো দরকার ছিল, সে ধরনের চিন্তা কাঠামো গঠিত হয়নি। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র তৈরির জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যে ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা জরুরি ছিল, যে অনুযায়ী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সর্বজনীন অধিকারগুলোর কথা চিন্তা করা হয়নি। এমনকি রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। সংবিধানে বলা আছে প্রয়োজন অনুযায়ী বিকাশের মাধ্যমে সমতা বজায় রাখার কথা। রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে সমতা অর্জনের জন্য কোনো কালেকটিভ বা পাবলিক অ্যাকশনের দিকে যাওয়া সম্ভব হয়নি। যেমন— নদীমাতৃক বাংলাদেশকে ব্যবহার করার জন্য কিংবা জাতীয় সম্পদগুলো ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক কালেকটিভ অ্যাকশন হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। কারণ সামাজিক চুক্তি তৈরি হয়নি। ফলে নাগরিকের অর্থনৈতিক অধিকার এবং উৎপাদনমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি।

রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এমন কোনো ব্যবস্থা চালু করেনি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তত্কালীন চ্যালেঞ্জ, নতুন রকমের কর্মোদ্যোগী কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশ তৈরি করা সম্ভব ছিল। তাছাড়া শ্রমশক্তি তৈরির জন্য যে ধরনের খাতকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করাও সম্ভব হচ্ছিল না। চলমান পরিস্থিতি থেকে পুঁজিবাদী রূপান্তরের জন্য যে রকম প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দরকার ছিল, বিশেষ করে কৃষিতে, শিল্পে, যার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যাবে, সেই ব্যবস্থাও জারি ছিল না। কারণ তেমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হচ্ছিল না। বিপরীত ধারায় এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হচ্ছিল, যা ক্রমে একনায়কত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। এক সময়ে একদলীয় শাসন চালু করা হলো। নির্দিষ্ট কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাইরে সব সংবাদমাধ্যম বন্ধ করা হলো। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে থাকল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারের সংখ্যা বেড়ে চলল। অন্তর্ভুক্তিমূলক বা প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে একটি দেশের মধ্যে যে উন্নয়নশীলতা তৈরি হয়, তা তৈরি করা সম্ভব হলো না।

রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে যারা সম্পদ ও পুঁজি সঞ্চায়ন করেছে, তাদের কাছে রাষ্ট্র আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। এর সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে এবং পরবর্তীতেও নির্ভরশীলতার এ সংস্কৃতি চালু রয়েছে। ফলে সৃজনশীল কায়দায় পুঁজি, শ্রম ও দক্ষতার বিকাশের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। অবহেলিত থেকেছে প্রযুক্তির ব্যবহার। অর্থাৎ দেশোপযোগী প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়, সে প্রক্রিয়ারও অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। রাজনৈতিক বাস্তবতায় যেহেতু রাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের টেনশন কাজ করেছে, তখন বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা বা রাষ্ট্র বিভিন্ন রকমের সুযোগসন্ধানী সুবিধাভোগী ভূমিকা রেখেছে এবং রেখে চলছে। এ ধরনের ভূমিকা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, যার কারণে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও শিকার হয়েছে।

অর্থাৎ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা এমন শ্রেণীর কাছে গেছে, যারা উদ্যোক্তা হতে মনোনিবিষ্ট হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিশাল অংকের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেছে। রাষ্ট্র যেহেতু অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না, তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে সশস্ত্র প্রতিরোধের শিকার হয়েছে। রাষ্ট্র স্থির থাকতে পারেনি। রাষ্ট্র রাজনৈতিক বন্দোবস্তে স্থির থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী যে ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করার প্রয়োজন ছিল, তা করতে পারেনি। অন্যদিকে নাগরিক রাষ্ট্র হিসেবে রূপান্তরিত না হওয়ায় নাগরিকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্ম ও সংবিধানে উল্লিখিত সুযোগগুলো বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এমন অনেক দ্বন্দ্বমূলক অবস্থানের কারণে এ ধরনের একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকে, রাষ্ট্র কাঠামো যদি নাগরিক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর না হয় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের সঞ্চয়ন থাকে, তাহলে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে পরিস্থিতি তত্কালে লক্ষ করা গেছে।

  • লেখক: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারপারসন, উন্নয়ন অন্বেষণ


আজ ভোটডাকাতি!


—  অরুন রহমান



সোমবার, জুলাই ৩০, ২০১৮ — বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটের কেন্দ্রে  কেন্দ্রে ভোটডাকাতি চলছে,  ঠিক সকাল আটটায় ভোট শুরুর পর থেকেই তিন শহরের ভোটকেন্দ্রগুলো নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় একে একে দখল করে নেয় আলীগের নেতাকর্মীরা। 

সকালে দেশের মানুষ ইন্টারনেটে বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটে ঢুকেই দেখল ও শুনল চারিদিকে চরম অরাজকতা ও বিশৃংখলা, যেন ভোটের শহরগুলোর জনপদে জনপথে ডাকাত পড়েছে —  সহিংসতা, ব্যালটছিনতাই, জালভোট, কেন্দ্রদখল, পোলিংএজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, আর প্রার্থী ও ভোটারদের আর্তনাদের স্থির ও ভিডিও চিত্র। সারাদেশ যেন এলোমেলো। কোন আইন নেই। সংবিধান নেই। মানুষের ভোটাধিকার পদদলিত করছে ভোটডাকাতরা। 

‘...দীর্ঘক্ষণ ধরে দলে দলে সিলেটের হাতেম আলী ভোটকেন্দ্রে জালভোট দেয়া হচ্ছে,’ আঙ্গুলে ভোট দেয়ার অমোচনীয় কালি লাগানো একজনকে হাতেনাতে ধরে একাত্তর টিভির এক সাহসী রিপোর্টার তা লাইভ দেখিয়েছেন।

যুগান্তর রিপোর্ট পাবলিশ করেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জালভোটের প্রতিবাদ করায় বাসদের মেয়রপ্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর ওপর বাঁশ দিয়ে হামলা, নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করেছে আলীগের কর্মীরা। এতে তাঁর হাত ভেঙ্গেছে।  

বরিশাল থেকে একাত্তর টিভির আরেক রিপোর্টার দেখালেন, একজন পোলিং অফিসার নিজেই ভোট দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তখন সেই কেন্দ্রের সব ব্যালটপেপার শেষ! বাইরে ভোটারদের লাইন!   

প্রথম আলো একটি ভিডিওক্লিপ পোস্ট করেছে —  বরিশাল মহানগর পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার সৈয়দা মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের, যেখানে দেখা যাচ্ছে ভোটকেন্দ্র দখল করে শুধুই নৌকায় সিলমারা হচ্ছে। ব্যালট বইয়ে পুরোটাতেই নৌকায় সিল।  সিলেট সিটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মীরা বাজার মডেল স্কুল কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতায়ের ছবিও পোস্ট করা হয়েছে । 

বাংলাট্রিবিউনের এক রিপোর্ট’র হেডলাইন — সিলেটে তিন কেন্দ্রে সংঘর্ষ।  

যুগান্তরের আরেক রিপোর্টের হেডলাইন —  সিলেটে ভোট শুরুর ১০ মিনিট পর কেন্দ্র দখল-জালভোট।

মানবজমিন আরেকটি ছবি পোস্ট করেছে যেখানে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ইসলামীয়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। ওই কেন্দ্রেমেয়র প্রার্থীর ব্যালট শেষ হয়ে গেছে অভিযোগ করে বুলবুল প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালটের হিসাব চেয়েছেন। সেইখানে ভোটাররা লাইন ধরে আছে, কিন্তু মেয়রের ব্যালট নেই।

এনটিভিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আমি শুনেছি বরিশালে ভোটকেন্দ্র দখল হয়েছে। সেখানে একজন মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে খারাপ আচরণও করা হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জনও করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কমিশনে আলাপ-আলোচনা করছি।’

আজ ইন্টারনেট মিডিয়া আউটলেটগুলের ফ্রন্টপেইজে শুধু ভোট ডাকাতির নিউজ। কাল সকালে এগুলো সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় স্থান পাবে কিনা তা দেখার বিষয়। বাস্তবে ইন্টারনেট মিডিয়ায় পাবলিশ হয়েছে ভোট ডাকাতির খন্ডছিত্র। এই খন্ডচিত্রকে লাখোগুণ বাড়িয়ে দিলেই পুরোচিত্রটি অনুধাবন সম্ভব।

বাংলাদেশে ১৯৯০এ স্বৈরাচার এরশাদ শাহীর পতনের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছিল। ভোটের দিন ছিল ঈদের দিনের মতো আনন্দের, পরিবার,বন্ধু-বান্ধব মিলে কেন্দ্রে যেত সবাই। ভোট যার যার, ভোট উৎসব ছিল সবার। এমনকি একই পরিবারে অথবা বন্ধুদের একই সার্কেলে ছিল বিভিন্ন দলের সমর্থক। তর্ক-বিতর্ক হত। কেন্দ্রে যে যার মত ভোট দিয়ে চা দোকানে বসে আড্ডা দিত। সন্ধ্যা থেকে ফলাফলের খবর আসা শুরু করত । সুস্থ নির্বাচন হওয়াতে সবাই মেনে নিত সেই রেজাল্ট। দলের পরাজয়ে সেইদলের সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করত, যাতে ভবিষ্যতে তাঁরা জিততে পারে। এগুলো কোন রূপকথা নয় — ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচন এবং এই সময়কালের বিভিন্ন নির্বাচন ছিল এমনই উৎসব মুখর। তখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বলা হত মুসলিম বিশ্বের জন্য রোল মডেল। 

কিন্তু আজ বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারতো অনেক দূরের কথা স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারটুকুও নেই। এই বছরেই বিশ্বের নতুন পাঁচটি ‘স্বৈরতান্ত্রিক দেশের’ তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভূক্ত করেছে জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্যার্টেল্সমান ফাউন্ডেশন৷ জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা গত একদশক ধরে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হারানোর বিষয়ে বারবার বিনাভোটের স্বঘোষিত সরকারকে তাদের গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু গোষ্ঠী বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করছে না।

দেশের মানুষের ভোটাধিকার হারানোর প্রক্রিয়াটা শুরু হয় আসলে ১/১১ এর মঈন-ফখরুদ্দিনের সময় থেকে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নানা অপকৌশলে দমন করা হয়। এরপর জানুয়ারি ৫, ২০১৪ এর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাভোট ও ভোটারবিহীন এক ভোট নাটকের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল নিজেদেরকে ক্ষমতায় আসীন রাখে।এরপর থেকেই আর মানুষ ভোট দিতে পারছে না।

দেশ-বিদেশের মানুষের সামনেই বাংলাদেশে এখন প্রতিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি চলছে। ভোটারবিহীন প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা নিজেদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করছে, শপথ নিচ্ছে, মিষ্টি খাচ্ছে, হাঁসিমুখে ছবি তুলছে। সংবাদ মাধ্যমে সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হচ্ছে।  সেখানে শুধু নেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন। 

ক্ষমতালিপ্সু সেইসব গোষ্ঠীদের স্মরণ করিয়ে  দেয়া যেতে পারে — জীবনবাজি রেখে  যুদ্ধকরে দেশ স্বাধীন করেছে সাধারণ মানুষ, দেশের মালিক তাঁরাই। তাঁরাই ঠিক করবে তাঁদের দেশের সরকার কারা হবে, তাঁদের শহর, নগরে কারা নেতা হবেন। তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গায়ের জোরে তাঁদের শাসন করার চেষ্টা সীমাহীন লজ্জার।   


  •  লেখক ইন্টারনেট এক্টিভিস্ট। 

চবিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ সোমবার বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত এবং এএফ রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির বিজয় গ্রুপ ও সিএফসির গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় বিজয় গ্রুপের ছাত্রলীগের কর্মীরা এএফ রহমান হলে ও সিএফসির কর্মীরা শাহ আমানত হলে অবস্থান নেন। পরে উভয় গ্রুপই একে অপরকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। এসময় দুজন আহত হন। আহতদের চবি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

  • Courtesy: Kalerkantha/ Jul 30,2018