Search

Tuesday, August 14, 2018

Outcome of traffic week


Extension of the on-going traffic week by three more days is claimed to have been made following 'good response from the masses to discipline the chaotic public transport'. Commuters on the capital's roads are unlikely to agree with the Dhaka Metropolitan Police's (DMP's) contention. Nor do the pictures carried in newspapers subscribe to this view. 

Traffic chaos relapsed into old ways with lackadaisical vehicles like one's picture this newspaper carried on its Sunday issue making their rounds all the same. Even a man was killed near Gulistan zero point on August 12 by a speeding bus. What is more, a bus hit the home minister's car in the city. But this is not just a capital-centric traffic week, but a national traffic week. And the country-wide count does not quite go with a disciplined traffic week. Nine people were perished under the wheels of vehicles in six districts on Saturday alone.

After the unprecedented school and college students' demonstration for road safety, this traffic week should have scored a few notable points. But largely it has failed to impress upon the transport operators the urgent need for following traffic rules and discipline themselves. In one case, for example, a bus driver - sleepy as he was - drove his bus off the road with two scores of passengers. 

One passenger was killed when the bus turned on its side. Others survived the accident with injuries. Now the question is, was the driver overworked or simply physically unfit for the job? There should be a regular check-up of physical condition of drivers driving public transports. Then again, has the traffic week made it a point to ensure that a driver does not drive public buses or goods truck for more than six hours at a stretch as the Prime Minister has suggested? Drivers must have adequate rest and sleep.

On the other hand, some basic issues of traffic management remain out of sight as if those are no longer of any use. But without minding those, the DMP or the Bangladesh Road Transport Authority (BRTA) cannot make any progress. The first thing is to designate the bus stops without which no passenger can be picked or dropped. Passenger sheds built earlier are now used as shops. How can this happen, who realises rent from those? Just probe into it and an ugly truth will come out.

It is hardly any secret that the officials who are responsible for issuing licences or other documents for drivers and vehicles have long been involved in malpractices. Meanwhile, drivers and vehicle owners have learnt the tricks of acquiring fake documents. When the authorities themselves are at fault, the whole system breaks down. Let the authorities put their house in order first, then go for streamlining the traffic system on roads. Things will definitely improve.

  • Courtesy: The Financial Express /Editorial/ Aug 14, 2018  

নির্বাচনের আগে বিচারের মুখে চট্টগ্রামের ৪৫৩ নেতা-কর্মী

সংসদ নির্বাচনের আগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন চট্টগ্রামের বিএনপি-জামায়াতের সাড়ে চার শ নেতা-কর্মী। মামলার জালে আটকা পড়া নেতাদের মধ্যে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও রয়েছেন। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় করা এ-সংক্রান্ত মামলাটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মহানগর হাকিম আদালত থেকে বিচারিক আদালতে পাঠানোর দিন ধার্য হয়েছে।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দলের ৪৫৩ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হতে পারে। এটা নির্বাচনের আগে বিএনপিকে কোণঠাসা করার কৌশল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে (২০১৫ সাল) চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িসংলগ্ন নাসিমন ভবনের সামনে সমাবেশ ডেকেছিল ২০-দলীয় জোট। ওই দিন সভা চলাকালে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয় নেতা-কর্মীদের। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আসলাম চৌধুরীসহ ৩০২ জনকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী এখনো কারাগারে। তাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এজাহারভুক্ত ৩০২ জনসহ ৪৫৩ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিস্ফোরক আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ৪ জুলাই কোতোয়ালি থানার পুলিশ এই অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান এই মামলার তিনটি পৃথক নথি করেন। ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, সন্ত্রাসবিরোধী ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিন আদালতে বিচার আলাদাভাবে চলবে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর তিনটি নথি তিন আমলি আদালতে (যেখানে বিচার হবে) পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান।

সংঘর্ষের ওই ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম, দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি মো. এনামুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম এবং জামায়াতের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

একসঙ্গে ৪৫৩ জনকে অভিযুক্ত করা প্রসঙ্গে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নাসিমন ভবনের সামনে কী ঘটেছে, তা সবাই দেখেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিএনপির সম্ভাব্য প্রায় সব প্রার্থীর নাম অভিযোগপত্রে রয়েছে। আওয়ামী লীগ আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের আয়োজন করতে বেছে বেছে বিএনপির শীর্ষ এবং সক্রিয় নেতাদের মামলার জালে আটকে দিয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারির ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩৫৫ জন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। বাকি ১৯৮ জনের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহসভাপতি ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুস সাত্তার বলেন, পুলিশ যে ধারা প্রয়োগ করেছে, তা অভিযোগের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, অভিযোগপত্র যথাযথ পদ্ধতিতে হয়েছে কি না, সেটা আদালত ও প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) দেখবে। অভিযোগপত্রে ত্রুটি আছে কিংবা নেই, তা আগাম বলার সুযোগ নেই।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ১৪,২০১৮ 


Thursday, August 9, 2018

The Guardian view on Shahidul Alam: Bangladesh should let him go

Editorial


The acclaimed photographer and activist is one of many targeted under a draconian law. He should be freed, and the legislation changed 

Renowned Bangladeshi photographer Shahidul Alam pictured in a hospital in Dhaka on Wednesday. After the medical checkup he was later back in police custody. He accused police of assaulting him after his arrest on Sunday. Photograph: AFP/Getty Images 

The work of renowned photographer and social activist Shahidul Alam has appeared in publications worldwide, including the Guardian. Now attention is on the 63-year-old himself. Police in Bangladesh have arrested him over “provocative comments” on Facebook; he was seized just after giving an interview about protests that have convulsed the country. As Mr Alam observed, demonstrations initially about road safety were fuelled by anger over issues including corruption and gagging of the media by the ruling Awami League. The resulting crackdown has seen police use teargas and rubber bullets on the streets – and the notorious section 57 of the information and communication technology act against Mr Alam. It has been employed against scores of citizens, and more than 20 journalists recently, for perfectly normal criticism or discussion of leaders. Even the government concedes it should go; unfortunately, the proposed replacement is in some ways worse.

Britain and others should press for proper reform of the law, as well as urging the authorities to release Mr Alam, drop the charges and thoroughly investigate allegations of mistreatment in custody; friends of the photographer said he was unable to walk by himself into court and told them he had been assaulted. Governments and international bodies have a special duty to press this case. Mr Alam’s contribution to photography has been truly global: he founded Drik, Bangladesh’s first picture library and its Majority World agency, promoting photographers from Asia, Africa, Latin America and the Middle East; has trained hundreds of photographers in South Asia; and indeed is a visiting professor at the University of Sunderland. Charging such a high-profile figure is surely intended to have a chilling effect. To defend Mr Alam is to defend the right of journalists, and citizens in general, to speak out in Bangladesh.


Eminent citizens call for Shahidul Alam’s release

They have also criticized reported arbitrary detention and remand of several hundred protesters




A group of citizens have condemned unlawful and arbitrary suppression of freedom of expression, association and assembly in the country.

In the statement issued on Wednesday, they criticized the attacks on students demonstrating for safer roads and journalists reportedly by activists of Awami League’s affiliate organizations, and condemned the arrest and remand of celebrated photographer and rights activist Shahidul Alam.

The 69 signatories included human rights activists, professionals, including teachers, doctors, and lawyers, civil society members, cultural personalities and activists, writers and academics.

They demanded that the government investigate allegations of “unlawful arrest and torture” of Shahidul in police custody and called for his immediate unconditional release.

They also demanded punishment of those responsible for the 63-year-old photographer’s alleged abduction and torture.

The statement came two days after Drik founder Shahidul was picked up from his Dhanmondi home by the Detective Branch (DB) of police.

On Monday, he was placed on a seven-day remand in a case, filed under the ICT Act at Ramna police station, for spreading fabricated information, rumours, and false information against the government via social media.

On August 4 and 5, Shahidul had live-streamed on Facebook, several times, to report the protests at Dhaka’s Jigatola. Clashes had taken place between school and college students demonstrating for safer roads, police, and allegedly, activists of ruling party affiliated organizations.

Shahidul, who is also the founder of Pathshala South Asian Media Institute, talked about these issues and criticized the government during an interview with Al Jazeera on August 5.

He was then picked up that night, and taken to the DB office, at Minto Road, the next morning. Later, he was produced before a Dhaka court for a remand hearing.

The citizens in their statement said Shahidul, while being carried into the court room, had reportedly told journalists that he was beaten, and said: “They washed my blood-stained clothes and then made me wear them again. I was not given access to any lawyer during the detention.”

The signatories strongly condemned “such repression by the government, including arbitrary police remand under the repressive ICT Act” against Shahidul.

“If anything he has done is considered against the law charges could be brought in the due process, but nothing justifies unlawful abduction, arbitrary remand and especially unconstitutional torture in custody.”

They also urged the government to stop “repression of students, academics, journalists and human rights activists immediately, release all who have been arbitrarily detained and take every step to ensure road safety, freedom of speech, freedom of movement and freedom of association for all, without discrimination.”

The citizens also criticized reported arbitrary detention and remand of several hundred protesters, including a pregnant woman.

The pregnant woman in question is a schoolteacher in Patuakhali who was arrested several days ago for making a Facebook post in support of the student demonstrators and their movement for safer roads.

The safe roads had started on July 29 after two college students died in a road accident that day on Dhaka’s Airport Road.

Those who signed the statement issued Wednesday included Iftekharuzzaman, Hameeda Hossain, Shaheen Anam, Bashirul Haq, Zafrullah Chowdhury, M Hafizuddin Khan, Badiul Alam Majumdar, Mahfuz Ullah, Chowdhury Abrar, Robaet Ferdous, Raja Devashish Roy, Manzoor Hasan, Lubna Marium, Naila Z Khan, Shahnaz Huda, Ali Riaz, Amena Mohsin, Anu Muhammad, Khushi Kabir, Perween Hasan, Firdous Azim, Farida Akhter, Elora Halim Chowdhury, Sheepa Hafiza, Md Nur Khan, Adilur Rahman Khan, Asif Nazrul, Syeda Rizwana Hasan, Sumaiya Khair, Rina Roy, Shapan Adnan, Azfar Hussain, ASM Nasiruddin Elan, Arup Rahee, Hana Shams Ahmed, Leesa Gazi, Ashraf Kaiser, Anusheh Anadil,Delwar Hussain, and Ilira Dewan.

Also, Maheen Sultan, Dina Siddiqi, Tarek Omar Chowdhury, Mirza Taslima Sultana, Zakir Hossain, Ziaur Rahman, Nasrin Siraj Annie, Syed Sultan Uddin Ahmed, Tasnim Azim, M Muzaherul Huq, Seuty Sabur, Wasfia Nazreen, Lamiya Morshed, Dina Hossain, Cynthia Farid, Tasaffy Hossain, MasudKhan, Muktasree Chakma, Tasmiah Afrin Mou, Elora Shehabuddin, Rashad Al, Enamul Haque, Shahadat Hossain, Khandaker Sumon, Sohini Alam, Manjida Ahamed, Ali Ahmed Ziauddin, Rezaur Rahman Lenin, and Shireen P Huq signed the statement.

  • Courtesy —  dhakatribune.com 

কে এই শহীদুল আলম


বাংলাদেশের খ্যাতনামা চিত্রগ্রাহক শহিদুল আলমের গ্রেপ্তার বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় তুলেছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সাংবাদিকদের বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), পেন ইন্টারন্যাশনাল, দক্ষিণ এশিয়া মিডিয়া ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক (সামডেন) সহ গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো সংবাদমাধ্যম নিন্দা জানিয়েছে। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার সাম্প্রতিক এক লেখায় শহিদুল আলমের পরিচিতি তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, শহিদুল আলম বিশ্বের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় চিত্রগ্রাহকদের একজন। বাংলাদেশে এই পেশায় তার মতো বৈশ্বিক মর্যাদা খুব কম লোকই পেয়েছেন। 

বিশ্বের সব বড় বড় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে তার ছবি ছাপা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে নানা অ্যাসাইনমেন্টের কাজে তাকে নিয়মিত নিয়োগ দিয়ে থাকে খ্যাতনামা সব প্রকাশনা। লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান তার গ্রেপ্তারের সংবাদে লিখেছে, নিজের চারদশকব্যপী ক্যারিয়ারে শহিদুলের ছবি নিউ ইয়র্ক টাইমস, টাইম ম্যাগাজিন ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকসহ প্রত্যেক খ্যাতনামা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে।



মাহফুজ আনাম লিখেছেন, দেশের ফটোসাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব আনয়নে আর যে কারও চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছেন শহিদুল আলম। তার হাতে প্রশিক্ষিত হয়েছেন শ’ শ’ ফটোসাংবাদিক। নিজের ব্যক্তিগত উদাহরণ ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে তিনি হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে এই পেশায় আকৃষ্ট করেছেন। আজ যে বহু বাংলাদেশি ফটোসাংবাদিক বৈশ্বিক প্রকাশনায় নিজের ছবি ছাপানো কিংবা আন্তর্জাতিক পদক লাভের বাসনা লালন করেন, তার কারণ সম্ভবত কেবল তিনিই। 

শহিদুল পদকজয়ী ফটোএজেন্সি দৃক প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘পাঠশালা’ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রখ্যাত ফটোগ্রাফি স্কুল। এই স্কুলে পড়তে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থী ও অতিথি শিক্ষকরা আসেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ইন্সটিটিউট ও সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠা করেছেন। দৃক ও পাঠশালা - দুই প্রতিষ্ঠানই তিনি গড়েছেন নিজের পৈতৃক সম্পত্তিতে। 

তার সবচেয়ে সফল সৃষ্টি হলো ছবি মেলা। এই আন্তর্জাতিক চিত্রপ্রদর্শনীতে বিশ্বের সব জায়গা থেকে কাজ জমা পড়ে। অংশ নিতে ঢাকায় আসেন বিশ্বের সেরা সব ফটোগ্রাফাররা। ২০০০ সালে শুরু হওয়া এই চিত্রপ্রদর্শনীর প্রথম থিম ছিল ‘যেই যুদ্ধ আমরা ভুলে গেছি।’ এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে সবচেয়ে সফল চিত্রপ্রদর্শনীর একটি। 

১৯৮৩ সালে তিনি হার্ভে হ্যারিস ট্রফি জেতেন। ১৯৯৩ সালে তথ্যচিত্রের জন্য জিতে নেন মাদার জোন্স পদক। ‘৯৮-এ তিনি আন্দ্রে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশন ও হাওয়ার্ড চ্যাপনিক অ্যাওয়ার্ডস লাভ করেন। ২০১৪ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৭ সালে চীনের ডালি ইন্টারন্যাশনাল চিত্রপ্রদর্শনীতে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। এই বছর তিনি পান লুসি ফাউন্ডেশন হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড।

চিত্রগ্রাহক হওয়ার পাশাপাশি তিনি লেখক, কিউরেটর ও অ্যাক্টিভিস্ট। ২০০৭ সালে তিনি কাশ্মীরের ভূমিকম্প নিয়ে ‘নেচার’স ফিউরি’ ও দক্ষিণ এশিয়ায় এইচআইভি/এইডস নিয়ে ‘পোর্ট্রেইট অব কমিটমেন্ট’ শীর্ষক দুটি বই লিখেন। তার লেখা বই ‘মাই জার্নি অ্যাজ অ্যা উইটনেস’ সম্পর্কে লাইফ ম্যাগাজিনের সাবেক পিকচার এডিটর জন মরিস লিখেছেন, কোনো চিত্রগ্রাহকের লেখা সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই এটি।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্গানিক কেমিস্ট্রি নিয়ে পিএইচডি আছে তার। যুক্তরাজ্যের সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউসিএলএ) তিনি ভিজিটিং প্রফেসর। এছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি লেকচারার ছিলেন।  
  • কার্টসি —   mzamin.com


সড়ক পরিবহন আইন - গণপরিবহনে শৃঙ্খলার বিষয়টি উপেক্ষিত


  • সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
  • সরকার বলছে, চালকের সাজা বেড়েছে
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাজা কমেছে
  • মালিক-শ্রমিক প্রাধান্য
  • ভাড়া নির্ধারণে অস্পষ্টতা



বাস-মিনিবাস চলাচলের অনুমোদন প্রক্রিয়া সংস্কার ও ভাড়া নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে স্পষ্ট করা হয়নি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এ দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ ও সড়কে শৃঙ্খলার দাবিতে সোচ্চার সংগঠনগুলো বলছে, প্রস্তাবিত আইনে যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব উপেক্ষিতই থেকে গেল।

গত সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া এই আইনে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের সাজা বাড়ানোর কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা বলছেন, সাজা বাড়ানো হয়নি, উল্টো কমানো হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, আগে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪ (বি)-তে সাজা ছিল ৭ বছর। ১৯৮৫ সালে ৩ বছর করা হয়। এখন সাজা বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।

আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮৫ সালে সাজা কমিয়ে ৩ বছর করার পর তিনি জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেওয়া রায়ে সাজা কমানোর বিষয়টি বাতিল করে দেন। ফলে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর বহাল আছে। কিন্তু আইনমন্ত্রী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ওনারা যেসব কথা বলছেন তা ঠিক নয়। কারণ, আইন প্রণয়ন করে সংসদ।

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের চাপেই সরকার তড়িঘড়ি সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করল। সংসদে পাস হলে এটি আইনে পরিণত হবে। কিন্তু বাস চলাচলের অনুমোদন প্রক্রিয়ার সংস্কারের দাবি এই আইনে উপেক্ষিত বলে সমালোচনা আছে। দাবি ছিল সব বাস-মিনিবাস অল্প কিছু কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসা এবং তা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘রুট ফ্রান্সাইজ’ পদ্ধতি। 

ঢাকার জন্য সরকারের করা ২০ বছরের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) এবং জাপানি সংস্থা জাইকার এক সমীক্ষাতেও গণপরিবহনে শৃঙ্খলার জন্য এই ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল। এসটিপি করা হয় ২০০৫ সালে। আর জাইকার সমীক্ষা করা হয় ২০১৫ সালে। এসটিপির প্রতিবেদন ও জাইকার সমীক্ষায় ঢাকার সব বাস-মিনিবাস তিন-চারটি কোম্পানির অধীনে এনে পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ঢাকার প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর বিষয়টি আটকে যায়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুর কৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার পরিবহনের বিশৃঙ্খলার জন্ম এর অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকেই। অপেশাদার ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মালিক-শ্রমিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবহনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি গণপরিবহনে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মূল উৎস। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণও এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এই ভেজাল ব্যবস্থা দূর করার কোনো নির্দেশনা নেই প্রস্তাবিত আইনে। এই ব্যবস্থা রেখে কোনোভাবেই নিরাপদ সড়কের দাবি পূরণ হবে না। এটা সাংঘাতিক রকমের ভুল।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্র বলছে, ঢাকায় ২৪৬টি কোম্পানির অধীনে বাস চলে প্রায় ৮ হাজার। আর বাসমালিকের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রভাবশালী কিংবা রাজনীতিকেরা কোম্পানি খুলে পরিবহন কমিটির অনুমোদন নেন। এরপর নিজে দু-একটা বাস কিনে অন্যদের কাছ থেকে বাস নিয়ে চালানো শুরু করেন। এই প্রক্রিয়া অসুস্থ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি চাঁদাবাজিকেও উৎসাহিত করে।

মালিক-শ্রমিক প্রাধান্য

ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে বাস চলাচলের অনুমোদন দিয়ে থাকে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি)। বিদ্যমান মোটরযান আইন, ১৯৮৩ অনুযায়ী কমিটিতে মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের একজন করে প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু সব স্থানেই তিন-চারজন করে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি আছেন। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে এই কমিটিতে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের ন্যূনতম একজন করে প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর অর্থ একাধিক প্রতিনিধিও রাখা যাবে। অথচ সেখানে যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি।

আরটিসি প্রায় ৩০ শর্তে বাস-মিনিবাস চলাচলের অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে সরকার-নির্ধারিত ভাড়া আদায়, যাত্রীর সঙ্গে সদাচরণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ থাকা, আইন মানার বিষয়টি রয়েছে। এর একটি শর্ত লঙ্ঘন করলেই অনুমোদন বাতিল করার ক্ষমতা আছে আরটিসির। কিন্তু এই ক্ষমতা প্রয়োগ করার কথা কখনো শোনা যায় না।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত আইন নিয়ে নানা পরামর্শ আসছে। কোনো দুর্বলতা যদি থাকে এবং তা কাটানোর একটা সুযোগ আছে। সংসদীয় কমিটিতে আরও আলোচনা হবে।

ভাড়া নির্ধারণে অস্পষ্টতা

প্রস্তাবিত আইনে বলা আছে, সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গণপরিবহনের জন্য ভাড়ার হার ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণ করা যাবে। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ও বিশেষ সুবিধার গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।

এই ধারাটি আগের আইনেও ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কারণ, ঢাকায় ‘সিটিং সার্ভিস’-এর মতো বিশেষ ব্যবস্থায় চলা বাসগুলোতে উঠলেই সর্বনিম্ন ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। অথচ সরকার ঢাকায় মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া ৫ টাকা এবং বড় বাসের জন্য ৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব পরিবহনে সরকারি ভাড়ার হার মানা হচ্ছে না।

দূরপাল্লার পথে প্রচুর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস চলছে। ঢাকায়ও বেশ কিছু কোম্পানি এসি বাস নামিয়েছে। এরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া ঠিক করছে। এ ছাড়া বিআরটিএ ৩১ আসনের মিনিবাস ও ৫২ আসনের বড় বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এখন ঢাকায় ৩১-৪০ আসনের বাস চলছে। দূরপাল্লার পথে ২৬, ৪০ ও ৫২ আসনের বাস চলাচল করে। এর মালিকেরা নিজেদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করেন।

বাসের ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএর ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি রয়েছে। এই কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তার বাইরে বেশির ভাগই মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একজন প্রতিনিধি থাকলেও তাঁর খুব একটা ভূমিকা থাকে না। মালিক-শ্রমিকেরাই সেখানে প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি। বর্তমান আইনে ভাড়া নির্ধারণ কমিটি সম্পর্কে কিছু বলা নেই। প্রস্তাবিত আইনেও তা উল্লেখ নেই।

এ ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। কিন্তু যাত্রীদের প্রতিনিধি সম্পর্কে স্পষ্ট করা হয়নি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আধুনিক আইন করার লক্ষ্যই হচ্ছে আগে যা ছিল না, তা অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু গণপরিবহনের কমিটি ও শৃঙ্খলার ব্যাপারে প্রস্তাবিত আইন হতাশ করেছে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৯,২০১৮

নির্বাচনের আগেই অনিয়ম মেনে নিলেন সিইসির?

সম্পাদকীয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা শুরু থেকে নির্বাচন নিয়ে এত স্ববিরোধী, বালখিল্য ও কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য করে এসেছেন যে তা আমাদের মধুসূদন দত্তের প্রহসনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা অনায়াসে তাঁর এসব বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু এই বক্তব্য তো কোনো ব্যক্তির নয়, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের, যিনি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করার কথা বলে দায়িত্ব নিয়েছেন।

সিইসি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে অনিয়ম হলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের প্রধান চুরি ঠেকাতে মোটেই উৎসাহী নন; চুরি হওয়ার পর চোরের পেছনে ধাওয়া করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই আশ্বাসে দেশের মানুষ আদৌ আশ্বস্ত হতে পারে, এ রকম কোনো আলামত দেখি না।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম–কারচুপির পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকেরা সিইসিকে প্রশ্ন করেছিলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অনুরূপ অনিয়ম–কারচুপি হবে কি না। তিনি প্রকারান্তরে অনিয়ম হবে, সে কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যা হয়েছে, তাকে অনিয়ম বললে সত্য আড়াল করা হয়। তিনি বলেছেন, বরিশালে বেশি অনিয়ম হয়েছে বলে সেখানে বেশি ব্যবস্থা নিয়েছেন। কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? ১০–১২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন। এটাই তঁার ব্যবস্থা!

কিন্তু বরিশালের অভিজ্ঞতা কী? দুপুর ১২টার আগেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে ইচ্ছামতো সিল মেরেছেন। বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। এ কারণে সেখানে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী দুপুরেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই নির্বাচনী প্রহসন দেখার জন্য বরিশালের ভোটার তো বটেই, দেশবাসীও প্রস্তুত ছিলেন না। কমিশনের প্রথম ও প্রধান কাজ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। ভোটের দিন কিংবা আগে সেটি করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

সিইসি নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলেছেন। কিন্তু ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্সে পাইকারি সিল মারা, বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া কি নিছক অনিয়ম? তিনি এত দিন বলে আসছিলেন নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। এরপরও পাঁচ সিটিতে ব্যাপক অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও দখলদারির মহড়া দেখা গেল। এখন তিনি বলছেন অনিয়ম পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন? প্রার্থীদের মধ্যে যাঁর যেখানে গায়ের জোর আছে, সেখানকার কেন্দ্র দখল করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেবেন।

নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা ও রংপুরে মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের কাছে যে আস্থা অর্জন করেছিল, পরবর্তী পাঁচ সিটিতে অনিয়ম–কারচুপির 

নির্বাচন করে সেটি হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ তাদের কার্যক্রমে শুধু হতাশ হয়নি, অনেকটা বিরক্তও। যেখানে বাংলাদেশে নির্বাচন একদা উৎসব হিসেবে গণ্য হতো, সেখানে সেটি এখন আতঙ্কে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

নির্বাচন কমিশনের পদাধিকারীরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের কথা বলে দেশবাসীর কাছে শপথ নিয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন বলে তঁারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আবারও কমিশনকে সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে এবং ভোটারদের মনের শঙ্কা দূর করা গেলে নির্বাচন–পরবর্তী অনিয়ম নিয়ে এখনই মাথা না ঘামালেও চলবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৯,২০১৮

শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও সড়কে নৈরাজ্য আগের মতোই

সামছুর রহমান

  • আন্দোলনের সময় নিয়ম মানার চিত্র ছিল রাজধানীজুড়ে
  • শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও শৃঙ্খলা ফেরেনি রাজধানীর সড়কে
  • চলছে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি।
  • যত্রতত্র যাত্রী নামছে-উঠছে।
  • থেমে নেই উল্টো পথে গাড়ি চালানো
  • মুঠোফোন ব্যবহার করছেন চালকেরা


সরকারের আশ্বাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও শৃঙ্খলা ফেরেনি রাজধানীর সড়কে। সড়কে যানবাহনচালক এবং পথচারীদের নিয়ম অমান্য আগের মতোই চলছে। পুলিশ বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বিশেষ অভিযান চালালেও সড়কে নৈরাজ্য একটুও কমেনি।

গতকাল রাজধানীর ছয়টি ব্যস্ত বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাসচালকেরা যত্রতত্র যাত্রী নামাচ্ছেন-ওঠাচ্ছেন। একই পথের ভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি হচ্ছে। বাসের পাদানিতেও অতিরিক্ত যাত্রী। আইন না মেনে উল্টো পথে গাড়ি চালানো থেমে নেই। পদচারী-সেতু ব্যবহার না করে পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। মুঠোফোন ব্যবহার করছেন চালকেরা।

পুলিশের বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ এবং বিআরটিএর বিশেষ অভিযানের কারণে গতকাল সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাও ছিল কম। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের যানবাহনের নিবন্ধন, লাইসেন্স, ফিটনেস, বিমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। ফলে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসে উঠতে পারেননি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে পুলিশ নৈতিক ভিত্তি পেয়েছে। সব জায়গায় পুলিশ হাত দিতে পারছে। বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে জনগণের মধ্যেও আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে উঠতে হবে।

মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় দেখা যায়, বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা সড়কের মাঝামাঝি চলে এসেছেন। একটি বাস এলে যাত্রীরা তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। বাসচালকেরা সড়কের মাঝখানেই বাস থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছেন, ওঠাচ্ছেন। পেছনে অন্য বাস, গাড়ি অনবরত হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। আয়াত পরিবহনের একটি বাসকে দেখা যায় চলন্ত অবস্থাতেই যাত্রীদের নামাচ্ছে, আবার চলন্ত বাসেই যাত্রীরা লাফিয়ে উঠছেন। এর মধ্যে পেছনে এসে দাঁড়ায় ল্যাম্পস পরিবহনের একটি বাস। দুটি বাসের চালকের সহকারীরা ‘ফার্মগেট, ফার্মগেট’ বলে যাত্রী তুলছেন। ল্যাম্পস পরিবহনের চালক বিপজ্জনকভাবে আয়াত পরিবহনের বাসটি ওভারটেক করেন। আয়াত পরিবহনের সামনে এসে কয়েকজন যাত্রী তুলেই দ্রুতগতিতে চলে যায় ল্যাম্পস পরিবহনের বাসটি।

বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘বাস না থামলে লোকজন কী করবে? বাধ্য হয়েই লাফিয়ে ওঠা লাগছে। যাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা বা স্টপেজ নাই। তাই সবাই সড়কের ওপরেই দাঁড়াচ্ছে।’

মিরপুর ১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পদচারী-সেতুর নিচে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন যাত্রীরা। অথচ বাস দাঁড়ানোর নির্ধারিত জায়গা এর থেকে কিছুটা সামনে। বাসচালকেরা এসে পদচারী-সেতুর নিচে গতি কিছুটা কমিয়ে চলন্ত বাসেই যাত্রী তুলছেন। কোনো বাসই নির্ধারিত স্থানে গিয়ে থামছে না।

মহাখালী এলাকায় দেখা যায়, স্কাই লাইন পরিবহনের একটি বাস চলন্ত অবস্থায় সড়কের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাচ্ছে। কয়েকজন যাত্রী দৌড়ে এসে ওই চলন্ত বাসে লাফিয়ে উঠছেন। যাত্রীরা যাতে পড়ে না যায় সে জন্য চালকেরা সহকারী টেনে তুলছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির অন্যতম ছিল বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করা। গতকাল অধিকাংশ বাস ছিল যাত্রীতে বোঝাই। বাসগুলোর পাদানিতে ও গেটের বাইরেও যাত্রীদের ঝুলতে দেখা যায়। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হলেও এসব বাসে আদায় করা হয় সিটিং সার্ভিসের ভাড়া।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফার্মগেট পদচারী-সেতুর নিচে উল্টো পথে আসা গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকাচ্ছিলেন চারজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। এ সময় বিজ্ঞান কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে উল্টো পথে একটি মাইক্রোবাস আসে। মাইক্রোবাসের সামনে লাগানো কাগজে লেখা ছিল ‘সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল, ৩৮ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত’। মাইক্রোবাসের চালকের পাশের আসনে একজন পুলিশ সদস্য বসা।

দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আবদুল জলিল মাইক্রোবাসটি থামিয়ে প্রথমেই সেটির ছবি তোলেন। সার্জেন্ট চালককে গাড়িটি ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য করলেও কোনো জরিমানা বা মামলা করেননি। এ সময় উল্টো পথে আসা একাধিক মোটরসাইকেলচালককেও আটকে দেন ট্রাফিক সদস্যরা।

ফার্মগেট ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে মাইকে পথচারী ও যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। পথচারীদের যত্রতত্র পারাপার না হতে আহ্বান জানানো হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। দেখা যায়, পুলিশ বক্সের ঠিক সামনে দিয়েই লোকজন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। দুই পাশেই লোকজন সড়ক পার হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। চলন্ত গাড়ির মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা পেলেই দৌড় দিচ্ছেন। অথচ এর ২৫-৩০ গজ সামনেই পদচারী-সেতু।

দৌড়ে পার হওয়া পথচারীদের মধ্যে স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত শিক্ষার্থীও রয়েছে। ফার্মগেটে দৌড়ে সড়ক পার হওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুলকারনাইন বলেন, ‘সময় বাঁচাতে নিচ দিয়ে পার হলাম। কাজটি ঠিক না সেটি বুঝতে পারছি। অভ্যাস হয়ে গেছে।’

মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্বর পদচারী-সেতুর নিচ দিয়ে হরদম লোকজন পার হচ্ছেন। গতকাল পদচারী-সেতুর নিচে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। পদচারী-সেতু ব্যবহার না করায় পাঁচজন পথচারীকে জরিমানা করা হয়। দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ২০ ফুট দূর দিয়েই লোকজন পার হচ্ছেন। সড়ক বিভাজকের ওপরে উঠে আবার অনেকক্ষণ দাঁড়াচ্ছেন। গাড়ির গতি কিছুটা কমলে চলন্ত গাড়ির সামনে হাত উঁচিয়ে দৌড়ে বাকি অংশ পার হচ্ছেন।

তবে বিপরীত চিত্র দেখা যায়, মহাখালী এলাকায়। সেখানে স্কাউট দলের প্রায় ১৫ জন সদস্য পথচারীদের পদচারী-সেতু ছাড়া সড়ক পার হতে দিচ্ছেন না। পথচারীরা সারি দিয়ে পদচারী-সেতুতে উঠছেন ও নামছেন। অধিকাংশ পথচারী স্কাউট সদস্যদের সহযোগিতা করলেও কেউ কেউ নিচ দিয়ে পার হতে না পেরে স্কাউট সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

বাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলচালকেরা আগের মতো চলন্ত অবস্থাতেই মুঠোফোন ব্যবহার করছিলেন। কারওয়ান বাজার মোড়ে দেখা যায়, ওয়েলকাম পরিবহনের এক বাসচালক এক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরে রেখেছেন, অন্য হাতে স্টিয়ারিং সামলাচ্ছেন। মহাখালী এলাকায় দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক হেলমেটের ভেতরে মোবাইল ফোন ঢুকিয়ে কথা বলতে বলতে চালাচ্ছেন।

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে পুলিশ গতকাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মামলা করেছে ৪ হাজার ৬০৭ টি। জরিমানা করা হয় ২২ লাখ টাকা। বিআরটিএর তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর আওতায় মামলা করেছে ৩৫ টি। জরিমানা করা হয়েছে ৭১ হাজার টাকা।

জানতে চাইলে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো ব্যবস্থা রেখে আইন প্রণয়ন করলে হবে না। যাঁরা সড়ক খাতে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদেরও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। বাস ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে হলে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি’ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পথচারীরা মোড় দিয়ে সড়ক পার হবেন-এটাই বৈজ্ঞানিক এবং প্রচলিত নিয়ম। বাংলাদেশেও সিগন্যাল-ব্যবস্থা কার্যকর করে মোড় দিয়ে সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা করতে হবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৯,২০১৮ 

গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয় - শহীদুলকে মুক্তি দিন

শহীদুল আলমকে ছেড়ে দেয়া উচিৎ বাংলাদেশের। প্রখ্যাত এই ফটোগ্রাফার ও অ্যাক্টিভিস্ট যেই কালাকানুনের অধীনে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার টার্গেট হয়েছেন এমন আরও অনেকেই। তাই শহীদুলকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি এই আইনও পরিবর্তন করা উচিৎ। বৃটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান এক সম্পাদকীয়তে এসব বলেছে। এতে বলা হয়, শহীদুল আলমের ছবি গার্ডিয়ান সহ বিশ্বব্যাপী বহু প্রকাশনায় ছাপা হয়েছে। ৬৩ বছর বয়সী এই ফটোগ্রাফার নিজেই এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

ফেসবুকে ‘উস্কানিমূলক মন্তব্যে’র কারণে বাংলাদেশের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশকে অচল করে দেয়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ার ঘণ্টাকয়েক পরে তাকে আটক করা হয়। তিনি নিজে যেমনটা পর্যবেক্ষণ করেছেন, প্রাথমিকভাবে এই বিক্ষোভ ছিল সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে। তবে পরবর্তীতে দুর্নীতি এবং গণমাধ্যমের ওপর শাসক দল আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন থেকে উদ্ভূত ক্ষোভ থেকে এই বিক্ষোভ আরও দাঁনা বেধে উঠে। 

বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় যেই দমনপীড়ন চালানো হয়, সেখানে পুলিশকে রাজপথে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে। পরবর্তীতে শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। একেবারেই সাধারণ সমালোচনা কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে আলোচনার দরুন এর আগে বহু নাগরিক ও ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করে মামলা হয়েছে। 

এমনকি সরকারও স্বীকার করেছে এই আইন বাতিল করা উচিৎ। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো এই আইনের স্থলে নতুন যেই আইন প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি আরও ভয়াবহ।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, বৃটেন সহ অন্যান্য দেশের উচিৎ এই আইনের সঠিক সংস্কারের দাবিতে চাপ দেয়া। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের প্রতি শহীদুল আলমের মুক্তি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের আহ্বান জানানো হয় সম্পাদকীয়তে। এই ফটোগ্রাফারের বন্ধুরা বলছেন, আদালতে তিনি নিজ থেকে হাঁটতে পারছিলেন না। তিনি বলেছেন যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।

এই ইস্যুতে চাপ দেয়ার বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে সরকারসমূহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর। ফটোগ্রাফির প্রতি শহীদুল আলমের অবদান সত্যিই বৈশ্বিক মাপের। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ফটো লাইব্রেরি দৃক ও মেজরিটি ওয়ার্ল্ড এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার শ’ শ’ সাংবাদিককে। এছাড়াও, তিনি সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিজিটিং প্রফেসর। নিশ্চিতভাবেই এ ধরণের উচুঁমাপের ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার উদ্দেশ্য ছিল শীতল প্রভাব তৈরি করা। শহীদুল আলমের পক্ষালম্বন করার অর্থ হলো বাংলাদেশে সাংবাদিক ও নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার অধিকারকে সমর্থন করা। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ৯,২০১৮

শহিদুল আটক ও সরকারের কাছে চারটি প্রশ্ন

আনু মুহাম্মদ


শহিদুলের মত সরকারের সঙ্গে না-ও মিলতে পারে, সেটা কি তঁার অপরাধ? ঘটনাটা আরও অনেক ঘটনার মতোই। রাতে কোনো সময় কিংবা ভোরে মাইক্রোবাসসহ দলে–বলে এসে ত্রাস সৃষ্টি, হুমকি-ধমকি ও জোরজবরদস্তি করে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া। এরপর প্রথমে অস্বীকার করা, পুলিশের নির্লিপ্ত ভাব, কয়েক ঘণ্টা বা কিছুদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো। এরপর রিমান্ড। বিশ্ববিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী, শিক্ষক ও লেখক ডক্টর শহিদুল আলমের ক্ষেত্রেও এই মডেলেই কাজ হয়েছে। 

তবে অপহরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। সিসিটিভি ভাঙা হয়েছে, বাড়ির প্রহরীদের বাঁধা হয়েছে। পরের দিন ৬ আগস্ট সকালে শহিদুলের সন্ধান মিলল, মানে সরকার থেকে আটকের খবর স্বীকার করা হলো। বিকেলে তাঁকে দেখা গেল কোর্টে, খালি পায়ে। হাঁটার শক্তি নেই। এক রাতে সুস্থ, সক্ষম, সক্রিয় ও সরব মানুষকে অচল বানানোর চেষ্টায় নির্যাতনের বহু প্রশিক্ষণ যে তাঁর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, এরই প্রমাণ শহিদুলের শরীরে—আশঙ্কা করি, আরও করার ইচ্ছায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশ বাতিলের আবেদন করেছে, যার শুনানি হবে আজ।

এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম প্রশ্ন হলো কেউ যদি প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধ করে, তাহলে তো আইনসম্মতভাবেই সরকারের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের এখতিয়ার আছে। গৃহস্থবাড়িতে ডাকাতের মতো হামলার কারণ কী? কেন ক্রসফায়ার, গুম নিয়ে অবিরাম মিথ্যাচার? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের কেন এত বেআইনি কাজে আগ্রহ? সরকারের কেন এই পথে এত উৎসাহ?

এর আগের দুদিন শহিদুল পথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছবি তুলতে গেছেন, তাড়া খেয়ে আক্রান্ত হয়ে সেই নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর ভয়াবহ আক্রমণের চিত্র সবাইকে জানাতে চেষ্টা করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ উপস্থিত করেছেন। শহিদুলের মত তো তাঁরই হবে, সেটা তো সরকার বা অন্য যে কারও সঙ্গে না-ও মিলতে পারে। এই না মেলাটাই কি শহিদুলের অপরাধ? আর এতে যদি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে কারা দায়ী? যারা রামদা, লাঠি, হেলমেটসহ সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় পাঠাচ্ছে—তারা; না যঁারা এ অবস্থার কথা গণমাধ্যমে জানাচ্ছেন, তঁারা?

সরকারকে বলি, শহিদুলের কোনো সাক্ষাৎকার বা বক্তব্য যদি আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হয়, তাহলে আপনাদের পাল্টা বক্তব্য উপস্থিত করাই তো যুক্তিযুক্ত ছিল। কথার উত্তর কথা, লেখার উত্তর লেখাই তো হওয়ার কথা। আইনি প্রক্রিয়াতেও তা হতে পারত। যারা তথ্য ও মতের মোকাবিলা করতে পারে না, তারাই অসহিষ্ণু হয়, আর কথা বা লেখার জন্য গুম, খুন বা অত্যাচার—এটা তো জঙ্গিবাদী মতাদর্শ।

গত কিছুদিনে তরুণেরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে রাস্তায় এসেছেন। সর্বশেষ নিরাপদ সড়কের দাবি কিংবা বলা যায় বেঁচে থাকার দাবি। বাংলাদেশে বছরে প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ খুন হয় রাস্তায়—এর চার গুণ বেশি মানুষ জখম হয়, অনেকের অবস্থা হয় মৃত্যুর চেয়েও খারাপ এবং এসব দুর্ঘটনা ঘটে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া চালক, খারাপ রাস্তা, চালকদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা, প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভর করে ফেলা ইত্যাদি কারণে। সব কটিরই সমাধান সম্ভব, অথচ এর সমাধানে কোনো নজরই দেখা যায়নি সরকারের। বছরের পর বছর একই অবস্থা চলায়, দুর্নীতি-লুণ্ঠন-সন্ত্রাস সব সমাধানের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় যে ক্ষোভ, তারই প্রকাশ ঘটেছে স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েদের আন্দোলনে।

সাত দিন ধরে সড়কে ছিল কিশোর বাহিনী। কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি, ভাঙচুর করেনি। সরকারের আশ্বাস বাস্তবায়নের পথ দেখতে চেয়ে নিজেরাই দিনভর পরিশ্রমের পথ বেছে নিয়েছে। লাইসেন্স, ফিটনেস দেখেছে, রাস্তায় শৃঙ্খলা এনেছে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য রাস্তায় চলাচলে কারও সমস্যা হয়নি, বরং আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সড়ক চলাচল, বিনা পয়সায় তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছে। মন্ত্রীরা উল্টো পথে গিয়ে, আইন ভেঙে পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরকারি বড় কর্মকর্তা, ভিআইপি, সিআইপি ধরা খেয়েছেন এই কিশোরদের হাতে। বহু গাড়িচালকের লাইসেন্স নেই কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ, ফিটনেস নেই। জনগণের সমস্যা হয়েছে বরং সরকার-সমর্থিত মাফিয়া চক্রের ধর্মঘটের কারণে, সরকারের সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে। তারা লাইসেন্স ও ফিটনেস ছাড়াই বাস ও দেশ চালাতে চায়—সমস্যা সেখানেই! সে জন্য সমাজের সর্বাত্মক সমর্থনে শক্তিপ্রাপ্ত এই আন্দোলনের মধ্যেও ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চালক, পথচারীসহ ১০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

আর সর্বজনের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে শ্রমক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, ঘর্মাক্ত সেই শিশু-কিশোরদের ওপরই পুলিশ সহযোগে সরকারি সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। নিরস্ত্র, দায়িত্বশীল, সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ, প্রতিবাদী ও গঠনমূলক ভূমিকা দিয়ে যে কিশোর ছেলেমেয়েরা সারা দেশ এবং বিশ্বের মানুষের সামনে এক মুগ্ধ বিস্ময় ও আশাবাদিতা তৈরি করেছে, তাদের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। কিশোরদের সমর্থনে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পথে নেমেছে, তখন আক্রমণ আরও উলঙ্গ হয়েছে। ৪, ৫, ৬ আগস্ট ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুলি, যৌন আক্রমণ, লাঠি, চাপাতি—কোনো কিছুই বাদ দেয়নি এরা। সাংবাদিকেরাও রেহাই পাননি। যেন সরকারকে যেকোনো মূল্যে লুটেরা, চাঁদাবাজ, খুনিদের রক্ষা করতেই হবে! তিন শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ছেলেমেয়ের শরীরে এখন সরকারি পুলিশ কিংবা সন্ত্রাসীদের আঘাত। হেলমেট, চাপাতি, বন্দুকসহ আক্রমণকারীদের এত এত ছবি থাকতেও সরকার তাদের শনাক্ত করতে নারাজ, অনুপ্রবেশকারী বলতে থাকবে কিন্তু কাউকে ধরবে না—এটাই সরকারের অবস্থান।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, বর্তমান সময়ে আইনের শাসন হয়ে দাঁড়িয়েছে এ রকম—যারা প্রকাশ্যে বন্দুক, রামদা, হাতুড়ি নিয়ে মানুষ মারবে, তারা সরকারের সব রকম বাহবা পাবে আর যারা তাদের হাতে ক্ষতবিক্ষত হবে বা যারা মানুষ হিসেবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, হুমকি-হামলা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, রিমান্ড হবে, রাতের অন্ধকারে তুলে নেওয়া হবে। সরকার কি এ অবস্থাকেই আইনের শাসন বলছে?

আমার তৃতীয় প্রশ্ন, সরকারের কেন এত ভয়? সরকারকে গত কিছুদিন থেকেই খুব ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ভয়, প্রশ্নকে ভয়, যেকোনো মতামতকেই ভয়, ক্যামেরা আর সাংবাদিকদের ভয়, ফেসবুক-ইন্টারনেটে ভয়। সরকারের এই ভয়ই বাড়িয়েছে অসহিষ্ণুতা, বাড়িয়েছে দমন-পীড়নের মাত্রা। বর্তমান ডিজিটাল কালে কোনো তথ্যই তো দেশের সীমানায় আটকে থাকবে না। যে সরকার নিজেদের সাফল্যগাথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মহাশূন্যে উপগ্রহ স্থাপনকে উচ্চস্থান দেয়, তারাই এখন ইন্টারনেট-ফেসবুক-আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ভয়ে সন্ত্রস্ত। কেন?

আমার চতুর্থ প্রশ্ন, সরকার কি ভুলে গেছে যে দেশে এখনো সংবিধান আছে? বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই প্রত্যেকের আইনসম্মত অধিকার নির্ধারিত আছে। রাতের আঁধারে বাড়িঘরে হামলা করে পরিচয় অস্পষ্ট রেখে কাউকে তুলে নেওয়া যায় না, যখন-তখন তুলে নিয়ে নির্যাতন করা বা খুন করার অধিকার রাষ্ট্রকে এই সংবিধানও দেয়নি। উপরন্তু সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের তাঁর মতপ্রকাশের অধিকার আছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের প্রতিবাদ, সমাবেশের অধিকার আছে। সরকার তাহলে কেন বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করছে?

মাঝেমধ্যে ভাবতে চাই, সরকারের উপদেষ্টা শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিজীবীদের সবাই নিশ্চয়ই বিকল বা অন্ধ হয়ে যাননি। এঁরা নিশ্চয়ই সরকারকে থামাতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু দেখি, এঁরাও কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হাতুড়ি, রামদা, চাপাতি, পিস্তল, লাঠি হাতে সরকারি সন্ত্রাসীদেরও চোখে দেখেন না। তুলে নিয়ে নির্যাতন, হেফাজতে নির্যাতন, পথে পথে নির্যাতন তাই চলছেই। কিন্তু মিথ্যা কথার তোড়ে, নিয়ন্ত্রণের জালেও ভয়ংকর নির্মম দৃশ্যাবলি ঢাকা যাচ্ছে না। ক্যামেরা ভেঙে, সাংবাদিক রক্তাক্ত করে, মিডিয়ার ওপর রক্তচক্ষু দিয়ে কি সত্য ঢাকা যায়? মানুষের স্মৃতি, রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা কি মুছে ফেলা যায়? 

আনু মুহাম্মদ অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৯, ২০১৮