অজয় কুন্ডু, মাদারীপুর
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের ছুটি শেষ করে জীবনের
তাগিদে ঢাকায় ফিরতে শুরু
করেছেন
দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ। এ কারণে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু
করেছে
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে। এই নৌপথে আবার দেখা দিয়েছে
নাব্যতা সংকট।থেমে
থেমে চলছে কয়েকটি ফেরি। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ঘাটে
যানবাহনেরদীর্ঘ
সারি। ফেরিতে উঠতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার
(বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের
সহকারী
মহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভালো
নেই।
চ্যানেলে আবার নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে
থেকে
চ্যানেলে এই সমস্যা দেখা দিলেও আজ শনিবার ভোর থেকে তা ক্রমেই ভয়াবহ
আকার
ধারণ করছে।’
শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা
কোনো ফেরিই ঠিকমতো চালাতে পারছি না।
বর্তমানে সাত-আটটি কে-টাইপের, মাঝারি
ও ডাম্প ফেরি থেমে থেমে চলাচল করছে।
তবে
ফেরিগুলোকে চ্যানেল ঘুরতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘নৌপথ স্বাভাবিক
করতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের
কর্মীরা কাজ করছেন। তবে ঘাটে কয়েক শ যানবাহনের
চাপ রয়েছে। ড্রেজিংয়ের কাজ
শেষ
হলে যদি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে, তবে আমরা সাত থেকে আট ঘণ্টার
মধ্যে
সব যানবাহন ফেরিতে তুলতে পারব।’
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়,
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ২০ দিন ধরে
নাব্যতা সংকট নিরসনে কাজ
করে
বিআইডব্লিউটিএ। ঈদের দুই দিন আগে পদ্মার টার্নিং পয়েন্টের চ্যানেলে
নাব্যতা সংকট নিরসন করা হলে ফেরি চলাচল
স্বাভাবিক হয়। পরে গতকাল বিকেল
থেকে
পুনরায় নাব্যতা সংকট দেখা দিলে সংকট নিরসনে নদীতে ড্রেজার মেশিন
দিয়ে
বালু অপসারণের কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগ। এই নৌপথে
২১টি ফেরির
মধ্যে ৪টি বড় আকৃতির রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাকি
কে-টাইপ, ডাম্প, ভিআইপি
১৭টি ফেরি মধ্যে সাত থেকে আটটি ফেরি থেমে থেমে
চলাচল
করছে।
বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী
রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে
বলেন,
‘আমরা চ্যানেলের ৩০০ মিটার জায়গা নিয়ে ড্রিজিংয়ের কাজ শুরু করব।
চ্যানেলের মুখে এর মধ্যে তিনটি শক্তিশালী
খননযন্ত্র বসানো হয়েছে। আশা
করছি,
শনিবার রাতের মধ্যেই আমরা ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করে নৌপথ সচল করতে
পারব।’
আজ দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়,
কাঁঠালবাড়ি ঘাটে চারটি সংযোগ
সড়কেই
রয়েছে ছোট-বড় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। যাত্রীবাহী বাসের চাপও রয়েছে।
চারটি
ঘাটের মধ্যে এক নম্বর ঘাটে একটি কে-টাইপের ফেরিতে স্বল্প পরিসরে
যানবাহন তোলা হচ্ছে। ঘাটে অগণিত মানুষের ভিড়।
ফেরি না পেয়ে অনেকে
স্পিডবোট ও লঞ্চে করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জগামী অনীক পাল নামের এক যাত্রী বলেন,
‘ঘাটে যাত্রীদের ভালো
ভিড়।
এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট করেই ফেরিতে উঠেছি। ফেরিতে শিমুলিয়া
যেতে
দেড় ঘণ্টার মতো লেগেছে। মাঝে চ্যানেলের মুখে সমস্যা পড়লেও ছোট ফেরি
থাকায়
তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।’
ঢাকাগামী যাত্রী মানসুরা তাসলিম বলেন, ‘ঘাটে
ফেরি দেখিনি। তাই অপেক্ষা না
করে
লঞ্চ উঠে পড়েছি। লঞ্চে যাত্রীদের প্রচুর ভিড়। দাঁড়ানোর জায়গা নেই।
ভাবে
চলাচল করলে ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।’
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা
ফাল্গুনী পরিবহনের চালক
ইলিয়াস
আহম্মেদ বলেন, ‘ঘাটে সকাল নয়টায় এসে বসে আছি। কখন ফেরি পাব কে
জানে?
দুই ঘণ্টা ধরে ঘাটে বসে থাকায় যাত্রীরাও বিরক্ত হয়ে ওঠে। ঘাটের
লোকজন
বলছে চ্যানেলে সমস্যা হইছে। তাই আমাদের পরিবহন একটু পরে ফেরিতে
তুলবে।’
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের
ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন বলেন,
‘চ্যানেলে সমস্যার কারণে আমরা ধারণ ক্ষমতার
চেয়েও স্বল্প পরিসরে যানবাহন
ফেরিতে
তুলছি। চ্যানেলে নাব্যতা সংকট থাকায় ঘাটে কয়েক শ যানবাহন আটকা
পড়েছে।
ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় চাপ বাড়তে শুরু করেছে লঞ্চ ও স্পিডবোটে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব,
এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের
পক্ষ
থেকে সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে।’
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক
(এসআই) কুশল কুমার সাহা
বলেন,
ঘাটে যানবাহনের চাপ বেশি। পুলিশের একাধিক সদস্য যানজট নিরসনে কাজ
করছেন।
ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হলে এই চাপ কোনোভাবেই কমবে না।
Courtesy: Prothom Alo Aug 25, 2018