Search

Monday, September 10, 2018

ইভিএম নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যালটে ফেরার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তি নিরাপদ, সুরক্ষিত ও নির্ভরশীল নয়। এর পরিবর্তে কাগজের ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অধিকমাত্রায় নিরাপদ। তাই সব রকমের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিস অব সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনস। ওই প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ প্যানেল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থায় সততা নিশ্চিত করতে মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। 

বলা হয়েছে, এ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রয়েছে মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তির ব্যবহার। তাছাড়া বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। ওই সংস্থাটি এ রিপোর্ট প্রকাশ করে ৬ই সেপ্টেম্বর। এতে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব কেন্দ্রীয়, রাজ্যের ও স্থানীয় নির্বাচন ব্যালট পেপারে করার সুপারিশ করা হয়েছে তবে তাতে কি পরিমাণ খরচ হবে তা ওই প্যানেল উল্লেখ করে নি। 

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ব্রেনান সেন্টারের হিসাব মতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরনো ভোটিং মেশিন পরিবর্তন করতে গেলে তাতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ হতে পারে। প্যানেলের কো- চেয়ার ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট লি  বোলিঙ্গার বৃহস্পতিবার রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছেন, বিদেশিরা ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলোতে ব্যতিক্রমী হুমকি হতে পারে।
এ বিষয়টি আমাদের পরে যাচাই করে দেখতেই হবে। আবার তা গুরুতরভাবে যাচাই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোকে নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখতে হবে। ‘সিকিউরিং দ্য ভোট: প্রোটেকটিং আমেরিকান ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক ১৫৬ পৃষ্ঠার রিপোর্টে ভোট গ্রহণে অনিরাপদ যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার ব্যবহার নিয়ে আক্ষেপ করা হয়। 

বলা হয়, এসব যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার এক দশকেরও আগে ভালনারেবল বা কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ আছে এমন কর্মকর্তারা তা ব্যবহার করেন। নির্বাচনী নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যেসব মত প্রকাশ করেছেন তার প্রতিফলন ঘটেছে এই রিপোর্টের মূল সুপারিশগুলোতে। এসব বিষয়ে অনেক রাজ্য ও কংগ্রেসে রিপাবলিকান নেতারা আপত্তি জানিয়েছে। এ বিষয়ে জুনে প্রস্তাব তুলেছিলেন অরিগন রাজ্যের রন ওয়েডেন এবং ডেমোক্রেট দলের অন্য চারজন সিনেটর। 

রিপোর্টের প্যানেল বলেছে, তারা একবারের জন্য ব্যালটে ভোট নেয়ার কথা বলছেন না। তারা বছরের পর বছর ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি জানান। এক্ষেত্রে কংগ্রেস থেকে নিয়মিত অর্থায়ন করতে হবে। রিপোর্টে যেসব মূল সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম- ২০২০ সাল নাগাদ সব নির্বাচনে মানুষ পড়তে পারে এমন কাগজের ব্যালটে ভোটগ্রহণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ভোটার নিশ্চিত হতে পারবেন যে, তার ভোটটি যথাযথভাবে রেকর্ড করা হয়েছে।

২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচজন ভোটারের মধ্যে একজন ইলেক্ট্রনিক মেশিনে ভোট দেন। তবে নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কোনো কোনো রাজ্যে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি যারা তৈরি করেছেন তাদের একজন হচ্ছেন কমিপউটার বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু অ্যাপেল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এখন দেশের বেশিরভাগ নাগরিক ব্যালটের মাধ্যমেই ভোট দিচ্ছে। তাই যদি কমিপউটার প্রতারণা করেও থাকে তাহলে আমরা সেটা বুঝতে পারবো। তবে আমাদের করার মতো আরো অনেক কিছু রয়েছে।

এ বছর নির্বাচনে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের অনুমতি দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু সেখানে উল্লেখ করা হয়নি, ঠিক কীভাবে এ অর্থ ব্যয় করতে হবে কিংবা নির্দিষ্ট কোন খাতে উন্নয়ন করতে হবে। মূলত বহিঃশত্রু কর্তৃক নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে, ভোটারদের তথ্য হালনাগাদের যে পদ্ধতি তাতে কোনো অনিয়ম চোখে পড়লে তা দ্রুততার সঙ্গে ফেডারেল সরকারকে অবহিত করতে হবে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৫ লাখ ভোটারের তথ্য রাশিয়ার গোয়েন্দারা হস্তগত করেছিল বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সেপশাল কাউন্সিল। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮ 

সিএসডিতে হরিলুট! দিনে গায়েব ২০০ টন চাল-আটা


রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তে থরে থরে সাজানো চাল-আটার বস্তা। সেগুলোতে লেখা- 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। খাদ্য অধিদপ্তর। নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় মেশিনে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদিত।' প্রশ্ন হলো- সরকারিভাবে উৎপাদিত এসব চাল-আটা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য কৃষি মার্কেটে গেল কীভাবে? র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল রোববার সেই মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ১২টি আড়তে মজুদ করে রাখা ১০০ টন চাল-আটা জব্দ করেছেন। ওই চাল ও আটা তেজগাঁওয়ের সিএসডির সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে হাতবদল হয়ে কৃষি মার্কেটে অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে। এর আগে গত শনিবার মধ্যরাতে তেজগাঁও খাদ্যগুদাম থেকে পাচার হওয়া আরও ১১৫ টন চাল-গম-আটাবাহী আটটি ট্রাক জব্দ করেছে র‌্যাব।

একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে খোলাবাজারে বিক্রির জন্য (ওএমএস) রাখা এ চাল-আটা বাইরে পাচার করে দিচ্ছিল। এর সঙ্গে সিএসডির ম্যানেজার হুমায়ুন কবীরসহ ৪০-৪৫ জনের একটি চক্র জড়িত বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সঙ্গে আছেন কয়েকজন বড় আড়তদার, ঠিকাদার ও শ্রমিক নেতা।

সরকারি চাল-গম গায়েব করার মধ্য দিয়ে তাদের  অনেকে অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অসাধু এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে প্রতিবেদন দেবে র‌্যাব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, প্রতিদিন ঢাকায় ১৪১টি পৃথক স্পটে ১৪১ টন চাল ও ২৮২ টন আটা স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি করার কথা। তবে সিএসডির একটি অসাধু চক্র দিনের ২০০ টনের বেশি চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 

শনিবার রাতে সিএসডি থেকে আট ট্রাক ভর্তি করে চাল ও আটা গায়েব করার জন্য অন্যত্র নেওয়া হয়। এতে ১১৫ টন পণ্য ছিল। এসবের গন্তব্য ছিল চুয়াডাঙ্গা, শ্রীমঙ্গল ও মাওনা। রোববার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে আরও ১০০ টন চাল ও আটা জব্দ করা হয়।

সারওয়ার আলম আরও বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় আটক সিএসডির ম্যানেজর হুমায়ুন কবীর ও খাদ্য পরিদর্শক মনিয়ার হোসেনকে খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে তদন্তের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গতকাল সরেজমিন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, র‌্যাবের অভিযানের কারণে সকাল থেকে পাইকারি আড়তে কেনা-বেচা বন্ধ ছিল। ১১টি আড়তে মজুদ করে রাখা হয়েছিল ওএমএসের চাল-আটা। যেসব আড়তদার এসব সরকারি পণ্য কিনেছেন তারা এতটাই বেপরোয়া যে, সরকারি চাল-আটার প্যাকেট পরিবর্তন করেননি। 

তাদের মধ্যে রাহমানিয়া রাইস এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে ৫০ কেজি ওজনের ৪৭ বস্তা সরকারি চাল, কর্ণফুলী রাইস এজেন্সিতে ৭৫ বস্তা, এশিয়ান ট্রেডার্সে ৮০ বস্তা, বন্ধু রাইস এজেন্সিতে ৫৭৯ বস্তা ও জামি ট্রেডার্সে ৩০০ বস্তা চাল এবং জননী ট্রেডার্সে ৮৫ বস্তা, সুগন্ধা রাইস ট্রেডার্স-২-এ ৭৫ বস্তা, সুগন্ধা রাইস ট্রেডার্স-১-এ ৭০ বস্তা, মহানগর ট্রেডার্সে ১২ বস্তা ও সূর্য এন্টারপ্রাইজে ৫৮ বস্তা সরকারি আটা পাওয়া যায়। তবে এসব দোকানের সব মালিক গা-ঢাকা দিয়েছেন। এসব পণ্য জব্দ করেছে র‌্যাব। 

সুগন্ধা ট্রেডার্স-১-এর দোকান কর্মচারী মো. জাবেদ বলেন, কোথা থেকে কীভাবে এসব আটা তাদের দোকানে এসেছে, তা জানেন দোকান মহাজন মোস্তফা। সাত-আট দিন আগে রাতে সরকারি গুদামের ১৬০ বস্তা আটা তাদের দোকানে ঢুকেছে।

মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, তাদের মার্কেটে ২০০ চালের আড়ত রয়েছে। ১৯৮২ সালে মার্কেট প্রতিষ্ঠার পর কখনও কালোবাজারি করে কেনা পণ্য তারা বিক্রি করেছে, এমন দুর্নাম নিতে হয়নি। তবে কিছুদিন ধরে রাতের আঁধারে ওই মার্কেটে রহস্যজনক ট্রাক চাল-আটা নিয়ে ঢুকছিল। ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করলে তারা স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি। র‌্যাবের অভিযানের পর বিষয়টি তাদের কাছে পরিস্কার হয়েছে।

র‌্যাবের সূত্র জানায়, স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে চাল বিক্রি করতে সরকার ৩৯ টাকা কেজিতে কিনে ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি করে ২৮ টাকা ধরে। আর ৩২ টাকা কেজি দরে আটা কিনে ১৬ টাকায় বিক্রি করছে। ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে চাল-আটা বিক্রির এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সিএসডির একটি চক্র ওএমএসের এসব পণ্যের অধিকাংশ কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। 

এর সঙ্গে যাদের জড়িত থাকার তথ্য এরই মধ্যে গোয়েন্দারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে তেজগাঁওয়ের সিএসডির ম্যানেজার হুমায়ুন কবীর, স্টোক ইনচার্জ সুখরঞ্জন হালদার, ডিও শাখার ইনচার্জ কাজী মাহমুদুল হাসান, গেট শাখার ইনচার্জ ইউনূছ আলী মণ্ডল, প্রধান নিরাপত্তারক্ষী মো. হারেছ, নিরাপত্তারক্ষী মো. বাবুল, ওজন পরিমাপক সুমন, দুলাল, শ্রমিক নেতা আলমগীর সৈকত, দুদু মিয়া ও লোকমান হোসেন। প্রতিদিন রাজধানীর ১৪১ টন চাল ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি করার কথা থাকলেও ১০০ টনের মতো কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি চাল ৪০-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। প্রতি টন চাল ও গম থেকে এক হাজার টাকা হাতিয়ে নেন সিএসডির ম্যানেজার হুমায়ুন। আর ৫০০ টাকা অন্যদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন অবৈধভাবে তারা আয় করছে তিন লাখ টাকা, মাসে ৯০ লাখ। 

এ ছাড়া আরেকটি অভিনব উপায়ে তারা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সেটা হলো- ওএমএসের চাল-গম স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে বিক্রি না করে একটি চক্র সিএসডির ভেতরেই কম দরে কিনে থাকেন। এরপর তারা সে পণ্য বাইরে বেশি দরে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার মালিক হচ্ছেন। সোহাগ নামে নারায়ণগঞ্জের একজন ডিলার দীর্ঘদিন ধরে এভাবে 'কৈয়ের তেলে কৈ ভেজে' সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন। তাকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। এদিকে ওএমএসের অর্থের ভাটোয়ারা নিয়ে সর্বশেষ শনিবার সিএসডির ভেতরেই মারামারির ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে সিএসডির ম্যানেজার হুমায়ুন কবীর জানান, কীভাবে সিএসডির চাল-গম বেহাত হয়েছে সেটা তার জানা নেই। ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রির জন্য ট্রাক ঢোকার বিষয়েও কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

গেট শাখার ইনচার্জ ইউনুছ আলী মণ্ডল বলেন, রাতে কোনোভাবেই সিএসডিতে ওএমএসের ট্রাক ঢোকার কথা নয়। কীভাবে কার নির্দেশে শনিবার রাতে ট্রাক ঢুকেছে, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। অবৈধ অর্থ পাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। 
  • কার্টসিঃ সমকাল/ সেপ্টেম্বর ১০.২০১৮ 

Absence of underpasses, service roads, overpasses blamed highway accidents


Lack of service roads, underpasses, overpasses and alternative transports is an important reason behind fatal highway accidents involving illegal three-wheeler, slow-moving and non-motorised vehicles in the country, road safety campaigners and experts say. 

Reckless driving and lack of awareness on the part of the road users also play an important role behind these accidents, they point out.

On August 25, 15 people were killed and 20 injured when a human hauler was trying to overtake another vehicle amid drizzles and collided with a bus on the Rajshahi-Pabna Highway at Lalpur in Natore.

Besides, 11 people were killed in bus-human hauler collision in Narsingdi and seven were killed in bus-CNG auto-rickshaw collision in Feni.

Auto-rickshaws, easy bikes, battery-run rickshaws, Nasimon and Karimon accounted for 24 per cent road accidents during the last Eid-ul-Azha, says a report of Bangladesh Passenger Welfare Association.

These vehicles, all in use as public transports in rural and sub-urban areas, now easily get on highways defying government ban as people have no alternatives, experts say. 

Currently there is only one service road along with Hatikumrul-Bonpara highway and only three underpasses at Dhaka-Chittagong Highway in the country, Roads and Highways Department chief engineer Ebne Alam Hasan says. 

Road transport and minister Obaidul Quader on September 5 at a meeting admitted that so many people were dying in road accidents and blamed small vehicles such as easy bike, battery-run rickshaws and reckless motorcycles for these fatalities.

According to Bangladesh University of Engineering and Technology’s Accident Research Institute, at least 56 per cent of the road accidents take place on national and regional highways. 

On August 1, 2015 RTB ministry imposed a ban on three-wheeler and non-motorised vehicles on 22 national highways.

The High Court on August 3, 2015 directed the road transport ministry and the police to keep unfit motor vehicles off the roads across the country but the directive was never enforced.

Home affairs ministry in 2010 in a directive put a ban on unregistered battery-run three-wheelers ‘easy bikes’.Thus these vehicles are often getting on national and regional highways. 

University Grants Commission professor M Anwar Hossian, who headed a sub-committee in 2011 to make a set of recommendations on road safety, told New Age about acute crisis of service roads along and overpasses and underpasses at highways. 

‘Moreover, people and drivers go for short cuts instead of using adjacent intersections and other facilities,’ he mentioned. BUET ARI assistant professor Kazi Md Shifun Newaz observed that not only the drivers but also the road users were responsible for crossing highways risking their lives. 

‘People mostly carried goods from one area to another area on these vehicles,’ the teacher said, adding, ‘The government has to provide them with alternative vehicles like minibuses or pickup vans to cross the highways.’ 

RHD chief engineer Ebne Alam Hasan said that works on service roads, underpasses and overpasses were ongoing on South Asia Sub-regional Economic Cooperation Road Connectivity project 1 to improve Joydevpur Chandra-Tangail-Elenga road to a 4-lane highway and project 2 to improve Elenga-Hatikumrul-Rangpur road to a 4-lane highway. 

Later the same infrastructures would be constructed in SASEC Road Connectivity Project 3 to improve Rangpur-Burimari road to a 4-Lane highway, he added.

Deputy inspector general of highway police Md Atiqul Islam said these vehicles crossed highways at such places where there were no law enforcers.

  • Courtesy: New Age/ Sep 10, 2018

Bangladesh behind neighbours: BIBM


Bangladesh is still lagging behind in terms of financial inclusion as only 1.6 percent of its wage earners receive their pay through banking channels, a study found.

When it comes to South Asian neighbours, it is 4 percent for India and 7.1 percent for Sri Lanka, it said, adding that Pakistan was just behind Bangladesh with 1.4 percent.

The research paper titled “Achieving SDGs in Bangladesh: The Role of the Banking Sector” was presented by the Bangladesh Institute of Bank Management (BIBM) at a seminar in its auditorium in the capital yesterday.

Md Mohiuddin Siddique, professor and director of the BIBM, lead the research team and presented the keynote paper.

Bangladesh is yet to catch up in other aspects as well. Some one third of its population have bank accounts whereas it is 53 percent in India and 82.7 percent in Sri Lanka.

Bangladesh is also trailing behind others regarding the use of debit cards, in savings and other financial activities, the research found. Just 5.2 percent of the population use debit cards whereas it is 22 percent in India and 24.9 percent in Sri Lanka. 

The banking sector has a lot of space to improve in terms of financial inclusion to help achieve the Sustainable Development Goals (SDG), the report said.

However, the detoriaration of the financial health of state banks is a matter of concern for financial inclusion, it said.

Bangladesh Bank has opened special types of account like Tk 10 account, school banking and agent banking which furthered financial inclusion, said SK Sur Chowdhury, the central bank's banking reforms adviser.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 10, 2018

AL campaign rolls out

EDITORIAL


Although the election schedule has not been officially announced by the EC as yet, the ruling party campaign for the next general election has rolled out, literally on the rolling stock, with the first of its forays to the north of the country. This is a good sign since it shows that even after nearly 10 years of rule, and so much good that it claims it has delivered, the AL does not take the voters for granted.

We hope that the BNP would follow suit since it has so much to pick up after 10 years in near political wilderness and in somewhat organisational disarray, aggravated by the absence of its two senior leaders.

But for all the political parties to be able to conduct their campaigns, the government must ensure a healthy and safe environment for all with equal facilities. We cannot stress on this matter enough since various media reports show that the BNP party cadres and activists are on the run all over the country trying to escape the police, particularly from the time indication for the next election was made by the CEC in August. A level playing field is an indispensable precondition for a fair election, which the government is obligated to ensure. Election means freedom of choice, a form of freedom of expression, which the voters must be able to exercise without let or hindrance.

The next two months leading up to the election will see lots of political activities, and our wish is that they should not be a cause of public inconvenience like the train campaign of the AL was. While this mode of campaigning is nothing new, the AL plans ignored the matter of public convenience altogether.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 10, 2018

Swarming Motorbikes: Violation of rules rises, risk as well

More than a thousand new motorbikes hit the country's roads every day










A large number of motorcycles wait at Bijoy Sarani intersection. According to the Bangladesh Road Transport Authority, 2.19 lakh motorcycles were registered in the first seven months of this year alone. Photo: Amran Hossain/Prabir Das

Every day 1,035 motorbikes are registered in the country on average and experts say if the authorities do not control the number of the accident-prone vehicle, the situation on the road can take a turn for the worse.

A significant number of these bikers do not have licence to ride.

Since the country's independence, 22.70 lakh motorbikes have been registered and 15.11 lakh of those had been registered between 2011 and July this year. But only 11.32 lakh riding licences have been issued since liberation. 

And these are just the official numbers. A huge number of motorbikes ply roads of districts and upazilas and they have not been registered at all, according to transport sector insiders.

Transport experts and police found that motorbikes are more accident prone than three or four-wheeler vehicles and they tend to violate traffic rules more.


They said the hike in the number of bikes could be attributed to traffic jams and poor public transport system in Dhaka city, and nationwide economic development and expanded road network. Many prefer it as it can weave through and easily beat traffic.

FLOUTING TRAFFIC RULES

The tendency to violate traffic rules is seen the most among motorbike riders, said Mir Rezaul Alam, additional commissioner (traffic) of Dhaka Metropolitan Police.

Every vehicle is supposed to stop before the zebra crossing at intersections but motorcyclists often ignore this rule and cross the intersection, he said.









A motorcyclist falls and topples over his vehicle in the middle of Banglamotor intersection. Experts say motorcyclists are more prone to accidents. The photos were taken yesterday. Photo: Amran Hossain/Prabir Das

“It's difficult to control them. However, we are trying our best and already got some results. Now more than 95 percent motorcyclists and pillions use helmets,” he said.

During the last 10-day-long Traffic Week from August 5, police filed more than 83,000 cases against errant vehicles and drivers. Of them, around 44,000 cases were against motorbikes and 1,742 bikes were impounded.

At least 259 people were killed and 960 injured in 237 road accidents in 13 days from August 16 during the Eid-ul-Azha rush, according to Bangladesh Jatri Kalyan Samity. Motorcycles were involved in 16.72 percent of the accidents, it said.

BRTA spokesperson Mahbub-E-Rabbani said it was not possible to stop plying of motorcycles that have been registered and it was normal to be concerned about the rising number of bikes.

“We are trying to ensure road safety by enforcing the law,” he added.

Rabbani, also the director (road safety) of the BRTA, said they have not been directed to control motorcycle registrations.

RINGING ALARM

Noted transport expert Prof Moazzem Hossain said bikes are open and provide no protection to its riders.

He said due to a lack of quality public transport, the number of bikes are rising in the capital and the government would not be able to stop this unless it improves public transport services.

“Motorcycle is an unsafe vehicle. If the number of bikes increases, the situation will deteriorate. And, if the number increases in the city where the number of people is huge, the situation will take a serious turn,” said Moazzem, also a former director of Accident Research Institute (ARI) at Buet.

Road Transport and Bridges Minister Obaidul Quader on several occasions said motorcycles are “terror incarnated”.

Prof Mizanur Rahman, director of ARI, told The Daily Star on Wednesday most of the riders are young people, between 15 and 35 years of age, and they often speed and cause accidents, he said.

Fatalities in motorbike crashes will increase if the authorities do not stop the sharp rise in their numbers or train the riders. “The authorities should limit the number of motorcycles for road safety,” he said.

THE RISE

According to Bangladesh Road Transport Authority, 2.19 lakh motorbikes were registered in the first seven months of the year, 77.70 percent of the total vehicle registrations during that period. About 3.26 lakh (77.68 percent) motorcycles were registered in 2017, 3.32 lakh (79.74 percent) in 2016 and 2.40 lakh (47.83 percent) in 2015.

The rate of licence issuance has been increasing over the years. In the first seven months of the year, 2.17 lakh licences were given. At least 3.77 lakh were issued in 2017, and 2.17 in 2016, and 1.40 lakh in 2015, according to BRTA data.

The BRTA data shows that since 1971, about 4.95 lakh motorbikes were registered in Dhaka alone.








A policeman uses a rope to prevent bikers from occupying the Bijoy Sarani intersection or running a stop signal. Photo: Amran Hossain/Prabir Das

The number of motorbikes sharply rose in Dhaka recently mainly due to traffic jams as the two-wheelers take people to their destinations faster weaving through standstill traffic, said Sitangshu Shekhar Bishwas, director (operation) of the BRTA. Introduction of ride-sharing apps in 2016 is also a reason, he said.

In other parts of the country, people are enjoying improved economic conditions and the road network has expanded, allowing many to afford and use motorbikes, he said.

There are around 35 lakh registered vehicles of several kinds in the country.

  • Courtesy: The Daily Star/ Sep 10, 2018

It's 'misuse' of judicial powers

KHALEDA'S TRIAL COURT IN JAIL


Pro-BNP lawyers yesterday said shifting Khaleda's trial to jail was “misuse of judicial powers” by the law ministry and they sought the chief justice's intervention into the matter.

Khaleda's lawyers submitted an application to the office of Chief Justice Syed Mahmud Hossain, requesting him to launch “enquiries” and take appropriate actions against the judicial officers “encroaching their legal boundaries at the instruction of the government”.

Law Minister Anisul Huq, however, said the pro-BNP lawyers didn't know the law and refuted the allegations.

The lawyers in the application stated that the law ministry issued the gazette notification to move the Special Judge Court-5 of Dhaka to the administrative building in Old Dhaka Central Jail for the trial of Zia Charitable Trust corruption case against BNP Chairperson Khaleda Zia, ignoring the need to consult with the Supreme Court.

“In doing so, the ministry has defied the authority of our constitution and also challenged the authority of the Supreme Court of Bangladesh, which is mandated under article 116 of the constitution,” the petition said.

Shifting a court without the SC's permission is illegal and it undermines the apex court, they said.

Supreme Court Bar Association President Zainul Abedin and Secretary AM Mahbub Uddin Khokon signed the application.

Besides them, Pro-BNP lawyers Khandker Mahbub Hossain, Jamiruddin Sircar, AJ Mohammad Ali, Mir Mohammad Nasir Uddin and Bodruddoza Badal met the chief justice at his SC office and submitted the application yesterday afternoon.

Zainul told The Daily Star that the chief justice received the application and assured them of looking into the matter within the scope of his legal and administrative jurisdiction.

Shifting the court for Khaleda's trial has offended her right to fair trial guaranteed under article 35(3) of the constitution inasmuch as this will cause prejudice to her right to have a public trial, the application stated.

Khaleda can hardly walk due to her illness and needs medical treatment first. But the court has not taken appropriate steps for her treatment by any doctor of her choice, it added.

The constitution and the statutory scheme do not allow any government to set up any court or to continue any trial in an abandoned jail, it said.

Meanwhile, Law Minister Anisul told reporters on the SC premises, “I think, if they have made such allegations, I will say that they don't know law.”

He went to the SC to meet the chief justice.

Also yesterday, the hearing of 11 cases, including one of sedition, against Khaleda was adjourned by a Dhaka court till October 7.

Judge KM Imrul Kayes of the Metropolitan Sessions Judge's Court passed the order after Khaleda's lawyers submitted 11 separate petitions seeking adjournment of the hearings.

In the petitions, Khaleda's lawyer Ziauddin Zia said their client had filed separate writ petitions with the High Court seeking quashing of the case proceedings, and the HC had stayed trial proceedings of the 11 cases.

Of the 11 cases, 10 were lodged in the first three months of 2015 over arson attacks on vehicles. The other case was filed with a Dhaka court on charge of making seditious comments about the freedom fighters and the martyrs of the Liberation War.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 10, 2018

Sunday, September 9, 2018

Shadow of India, Hasina govt’s corruption, repression of BNP looms over Bangladesh polls

Pinak Ranjan Chakravarty 


BANGLADESH will go into election mode in the next few months. Democratic transfer of power in Bangladesh became the norm ever since the overthrow of military dictator General HM Ershad in 1990. The army-backed caretaker government, during 2007–2008, was an exception in Bangladesh’s democratic governance. Bangladesh has never voted an incumbent government back to power, except in 2014, when the BNP, boycotted the election, giving Sheikh Hasina’s Awami League a walkover. The forthcoming election by the end of this year will be held again without a caretaker government.

The AL’s move to expunge the caretaker government provision, has been seen as designed to give it control over the election process and, therefore, malafide in intent. Ironically, it was the AL which had agitated in the 1990s for a caretaker government for conducting elections and this provision was incorporated in the constitution by the BNP government. The caretaker government provision in the constitution was removed by the 15th amendment in 2011, by the AL government which had got over three-fourths majority in the Parliament in 2008 election, conducted by army-backed caretaker government.

During the tenure of military dictators, Bangladesh had turned its back on secular principles of the liberation war that were embedded in the 1972 constitution. Islamisation of Bangladeshi society was encouraged under the military dictators who were trained in Pakistan. Their model of governance drew from the Pakistani experience and they formed alliances with Islamist parties whose leaders were later accused of war crimes.

Domestic issues in Bangladesh, like the quota in government jobs and the snowballing effect of the student agitation on controlling unruly and chaotic traffic in Dhaka, have the potential to undermine domestic stability. Hasina’s government has faltered and mishandled several issues, the most recent being the student agitation against unruly transporters and reckless drivers of commercial vehicles in Dhaka who enjoy political patronage of corrupt ministers and ruling party leaders. The death of two students precipitated the ire of the students nationwide and the arrest of an internationally acclaimed photographer for defaming Bangladesh on this issue, was a callous decision that has invited international opprobrium. Hasina has shown no sign of flexibility.

Allegations against Hasina’s government include authoritarian governance, hounding of the opposition and rampant corruption. These issues and the India factor will dominate the electoral campaign. The sustained harassment of political opponents has only added to the growing sullenness among sections of the people and a pervasive feeling that the ruling AL government has assiduously subverted democratic norms and institutions. There is growing consensus that if elections are free and fair, the AL will be reduced to an embarrassing minority in the next parliament. Many critics believe that the Hasina government will ‘manage’ the election. This is popularly called ‘rigging’ in South Asia.

Critics allege that every national institution has been compromised and packed with party sympathisers. The national campaign against drugs has allegedly led to a ‘shoot to kill’ policy that has led to deaths of innocents, according to human rights activists. One former chief justice of the Supreme Court, belonging to the Hindu minority community, fell out with the government and was forced to resign and seek refuge in exile. The Hindu minority, normally very supportive of the AL, is agitated and angry because AL leaders have grabbed Hindu properties with impunity. 

AL leaders think that India has no option but to support the AL and will not complain about harassment and discrimination against the Hindu minority. On the positive side, the government’s action against militant religious extremists and terrorists has been effective. The economy has also done very well under the stewardship of the Hasina government, though rampant corruption and crony capitalism have marred the economic landscape.

The main opposition Bangladesh Nationalist Party is in disarray with its chairperson Khaleda Zia, twice prime minister of Bangladesh, is in jail for embezzlement. The acting-chairman, Khaleda Zia’s son, Tarique Zia, is in exile in London, unable to return because of convictions in several cases which will land him in jail for many years if he returns to Bangladesh. The BNP, with its back to the wall may opt for a national agitation which could lead to a situation which could invite the intervention of the army. 

This seems unlikely though it might fulfill the demand of the BNP for any government but the incumbent one to conduct elections. The lack of trust between political opponents is huge and unbridgeable. Hasina has reiterated her unwillingness to have any conversation with the opposition.

The BNP will not take the risk of boycotting the forthcoming election because it could lose its registration if it does so. BNP’s ally, the Jamaat-e-Islami, the main Islamist party that has a consistent history as a fifth column for Pakistan, is also in disarray. Its top leaders have been convicted for war crimes and hanged. It has lost its registration as a political party after the Supreme Court found its charter in violation of the constitution. The JeI believes in the usual Islamist objectives of imposing Sharia law and close relations with the Muslim ummah.

Moderate BNP leaders, with the blessings of Tarique Rahman, have reached out to India. Tarique has encouraged agitation against the incumbent government. In the coming days and weeks verdicts of courts in the 21 August grenade attack case is expected. Both Khaleda Zia and Tarique may be handed down death sentences. If that happens Bangladesh will certainly be wracked by widespread agitation. There is always the lurking danger of military intervention though Hasina has been very careful in nurturing the military and choosing its leadership with care.

The BNP old guard detest Tarique and would prefer Khaleda as the leader. There is growing tension within the BNP and rumours of a section breaking away to form another party have surfaced. The AL is rumoured to be involved in this potential breakup. 

The BNP’s electoral platform includes the demand for elections under a neutral government. It alleges that the Election Commission and the judiciary have been subverted by the AL government. Hasina had offered in 2013 to have an election time government, including BNP leaders, to allay concerns of vote rigging and manipulation. The BNP refused to take up the offer, insisting that Hasina must first resign as prime minister and hand over the reins of government to mutually agreed neutral persons.

Meanwhile, amidst political realignments, a new entity called the Jukto [Joint] Front has been formed under the leadership of Dr Kamal Hossain of the Gonoforum and former president AQM Badruddoza. The latter had broken away from the BNP after he clashed with Tarique Rahman and was forced to resign as president. He later formed the Bikalpa Dhara, a political grouping. Dr Hossain was in the AL and was Bangladesh’s first foreign minister. He too fell out with Hasina and left the AL. 

Other smaller parties may also gravitate towards the Jukto Front. The BNP has welcomed this development, no doubt hoping to form an alliance to fight the forthcoming election. True to form, Hasina has made caustic remarks on this formation.

Bangladesh, with a population of around 170 million is the eighth largest country in the world and is India’s third largest neighbour. With a GDP of $250 billion, measured in PPP terms, Bangladesh is ranked 34th in global GDP rankings. In the last decade, Bangladesh has emerged as India’s closest geo-strategic and geo-economic partner in the South Asia. 

The positive transformation in bilateral ties has occurred with political developments and discourses in India and Bangladesh changing under different governments. Pragmatic policy decisions have aided successful conclusion of long-pending issues have aided this process. The two most important agreements which have given fillip to the creation of a positive ambience are the Maritime Boundary Agreement and the Land Boundary Agreement.

As Bangladesh and India head for general election in 2018 and 2019 respectively, the India factor will also loom large, as the BNP is likely to pillory Hasina of kowtowing to India. The main criticism will be that Hasina has given India too many concessions in return for precious little. This is an old tune but is revived by the BNP and allied opposition parties during election time. 

The overhang of the issue of the illegal migration that has already acquired a high profile in India with the publication of the draft National Register of Citizens in Assam, will continue to make Bangladesh nervous. Bangladesh-India bilateral relations will have to be insulated from the collateral effect of the NRC. Sharing of river waters will remain a challenge in bilateral ties but not an insurmountable one.

Bangladesh-India relations have reached a stage of maturity and with further integration of infrastructure, upgrading of border trading stations, the Motor Vehicles Agreement, bilateral ties can be expected to grow stronger in the future. While India will deal with any government in Dhaka regardless of its hue, it would strain the imagination to conceive of an Indian option to oppose Hasina. 

There is, however, a growing feeling in policy circles in India that Hasina’s authoritarian impulses and taking India’s support for granted would not be in India’s interest.

South Asian Monitor, September 5. Pinak Ranjan Chakravarty is a distinguished fellow at the Delhi-based Observer Research Foundation; he is a former secretary in India’s ministry of external affairs and was India’s high commissioner to Bangladesh in 2007–2009 and deputy high commissioner in 1999–2002.
  • Courtesy: New Age/ Sep 7,2018 

ভারতের সমর্থন প্রত্যাহারের ইঙ্গিত!

গৌতম দাস

পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, ভারতের এক সাবেক কূটনীতিক, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব; আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হল, ২০০৭ সালে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে তিনি বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। বর্তমানে তিনি ভারতের একটা বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো হিসেবে সক্রিয়। তাঁর বিশেষ গুরুত্বের দিকটা হল, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের নীতিনির্ধারক যারা – ভাবেন, অবস্থান নেন এমন সবার সাথে, অন্য সব কূটনীতিকের চেয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও আস্থার সাথে সংযুক্ত এমন এক ব্যক্তিত্ব তিনি। তাঁর সার্ভিস পিরিয়ড, ২০০৭-০৯ সময়পরিধিতে তাঁর বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্বে থাকাকালীন কিছু কাজ এর পিছনের সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করা হয়। না, এটা যথেষ্টভাবে বলা হলো না। তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এই রচনা কী নিয়ে সেদিক আলোকপাত করে কিছু কথা বলা দরকার।

আসলে, বাংলাদেশ যে পিনাক রঞ্জনকে চিনত সে নয়; তা থেকে একেবারে ভিন্ন, ‘আনলাইক’ এক পিনাক রঞ্জনের এক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘সাউথ এশিয়ান মনিটর’ পত্রিকায়। সে প্রবন্ধের ভাষ্য এমন যে এটা শেখ হাসিনা সরকারের উপর থেকে ভারতের সমর্থন প্রত্যাহারের ইঙ্গিত হিসেবে তা পাঠ করার সুযোগ রেখে লেখা হয়েছে। [এটা বাংলা ও ইংরাজী দুই ভাষাতেই একই লেখা প্রকাশিত হয় এমন এক ওয়েব পত্রিকা, ফলে বাংলায় অনুদিত ও প্রকাশিত ভাষ্য পাঠকেরা পড়তে পারেন। ]

এক-এগারোর সরকারের ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে এবং পরিণতিতে, আমেরিকা যদি বাংলাদেশকে ভারতের কাছে হাওলা বা হস্তান্তর করে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করে থাকে; তবে ভারতের দিক থেকে এতে এক নম্বর পরামর্শদাতা এবং বাস্তবে তা রূপদানকারী ব্যক্তি হলেন কাকাবাবু প্রণব মুখার্জি। আর সে কাজেরই মাঠের বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী।

প্রকাশিত উইকিলিকস ফাইল থেকে জানা যায়, এক-এগারোর টেকওভার বা ক্ষমতা দখল এবং এর লক্ষ্য অনুযায়ী সাধিত কাজ শেষে এরপর এর এক্সিট রুট কী হবে, মানে কাকে ক্ষমতা দিয়ে তাঁরা তখন কেটে পড়বে, এটা নিয়ে শত প্রশ্ন ও অনুরোধ সত্ত্বেও ক্ষমতা দখলকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বিউটেনিসের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর জানতে পারেনি। উপায়ন্তরহীন সেই পরিস্থিতিতে অবস্থা দেখে মনে হয়, এ ব্যাপারে ক্ষমতা দখলকারীরা একটা নিজস্ব আবছা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল। তা হল, লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ হওয়া শেষে তারা নিজেরাই এরশাদের মতো কোনো দল গঠন করে রাজনীতিতে নেমে পড়বে। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে, অর্থাৎ ২০০৭ সালের জুনের পর থেকে অক্টোবরের মধ্যে এটা ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে যে, আমেরিকা এ অঞ্চলের তার -ওয়ার অন টেররে – “টেররিজমের বিরুদ্ধে পাহারাদারের” ঠিকা ভারতকে দিচ্ছে। আমেরিকান এক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেমিনারে সাব্যস্ত হয় যে,  “ভারতের চোখ দিয়ে আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায় তার নিরাপত্তা স্বার্থ” দেখবে ও বুঝে নেবে। এথেকে তাই মনে করা হয়, এরই নিট ফলাফলে বাংলাদেশ ভারতের ইচ্ছাধীনে চলে যায়। এর অন্য আরেকটি লুকানো দিক ছিল, আসলে এটা ছিল আমেরিকার ওয়ার অন টেররের নামে পদক্ষেপের আড়ালে ভারতকে নিজের নৌকায় অন বোর্ড করে নেওয়া। যার মানে হল, এটাই আমেরিকান স্বার্থে ‘চীন ঠেকাও’ বা ‘China containment’ এর কাজটা ভারতকে দিয়ে করিয়ে নিতে আমেরিকা তাকে রাজি করিয়ে নেয়, আর দেনা-পাওনাও ঠিক করে নেয়। বিনিময়ে এরই রাজভেট হল, “বাংলাদেশকে বলি দেওয়া” – আমেরিকার বাংলাদেশকে ভারতের কাছে হস্তান্তর, ভারতের করিডোর লাভ থেকে শুরু করে লাভ আর লাভ ইত্যাদি।

কিন্তু বিউটেনিস নিজেদের এই নতুন সিদ্ধান্তের পক্ষে মইন-ফখরুদ্দীন ও তার সঙ্গীদেরকে রাজি করাতে পারছিল না। একারণে শেখ হাসিনার জামিন, দেশত্যাগ, স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে আলোচনা করতে দেয়া ও তাকে ক্ষমতায় আনা ইত্যাদিতে সহযোগিতা করতে তারা রাজি হচ্ছিল না। এ সময় পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী কিছু নির্ধারক কাজ করে, আর তাতে মইন ও তার সঙ্গীদেরকে বাধ্য হয়ে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আগমনের পরে ২০০৯ সালে পিনাক রঞ্জন তার ‘সফল’ অ্যাসাইনমেন্ট শেষে দেশে ফিরেছিলেন।

পিনাক রঞ্জনের বিশেষ প্রবন্ধ

পিনাক রঞ্জনের এই বিশেষ প্রবন্ধের শিরোনাম অবশ্যই সেটা পিনাক রঞ্জন-সুলভ ছিল না। যেমন লেখাটার বাংলা শিরোনাম হল- “বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের ছায়া, হাসিনা সরকারের দুর্নীতি, বিএনপিকে দমন”। আর ইংরাজিতে, “Shadow of India, Hasina government’s corruption, repression of BNP looms over Bangladesh polls.” অনুমান করা যায় লেখাটা ইংরাজীতে আর পরে তার অনুবাদ বাংলায় করা হয়েছে।

এখানে দেখা যাচ্ছে, এটা সত্যিই বেশ তামাশার যে “বিএনপির ওপর নিপীড়ন হচ্ছে” – এই কথা তুলে ভারতের সাবেক এক রাষ্ট্রদূত তাঁর লেখায় এটাকে শিরোনাম করেছে। তবে এর চেয়েও আরো বিস্ময়কর হল, শিরোনামের কিছু বিশেষ ‘শব্দ’ পছন্দ করে নেওয়া। যেমন, বাংলাদেশে দুর্নীতি হচ্ছে কি না, শেখ হাসিনা সরকার সেই দুর্নীতি করছে কি না – এটা গত দশ বছরে ভারত বা পিনাক রঞ্জনের ভাষায় তা কখনও উঠে আসেনি। ভারতের মিডিয়া বা ইন্টেলেক্টরাও কখনও এসবকে তাদের লেখার বিষয়বস্তু করেনি। বরং হাসিনার শাসনে ভারত কত কিছু – না চাইতেই সব উপুড় করে পাচ্ছে, তাদের পছন্দে ও ভাষ্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দিচ্ছে – হাসিনা সরকারের এসব অবদান নিয়েই সবসময় তাঁরা বিগলিত থেকেছে। আসলে “দুর্নীতি” – এটি মূলত আমেরিকান ভাষা। ফলে অচানক এটা পিনাকের ভাষা হয়ে উঠা সত্যিই ‘তাতপর্যপুর্ণ’, তা বলতেই হয়।

এভাবে পিনাক রঞ্জনের পুরা লেখাতে যেসব বিস্ময়কর প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তার একটি তালিকা এখানে আমরা দেখে নেই।

এক. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনঃ

অচিন্তনীয় ঘটনা হল, পিনাক রঞ্জন আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার দায়ে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন,

“আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পদক্ষেপকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং এর মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের নীলনকশা হিসেবে দেখা হয়েছে। অথচ নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, এই আওয়ামী লীগই নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিক্ষোভ করেছিল। এর জের ধরে বিএনপি সরকার সংবিধানে বিধিটি অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার আয়োজিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পর ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাটি বাতিল করে”।

দুই. কোটা আন্দোলন ও যানবাহন ইস্যুতে ছাত্রদের আন্দোলন সামলাতে ব্যর্থতা ও হার্ডলাইনে যাওয়াঃ

এটাও সত্যিই বিস্ময়কর যে, পিনাক রঞ্জনের মত ভারতের কোন কূটনীতিক হাসিনাকে “হার্ডলাইনে দমন করা” [যে হার্ড লাইন ছাড়া আর কোন লাইনে তিনি কখনও দাঁড়াতেই পারেন নাই।] আর ‘কাজ’ সামলাতে ‘ব্যর্থতার’ জন্য আঙুল তুলে অভিযোগ আনছে।  কিছুটা আমেরিকান বা পশ্চিমা কূটনীতিকের আদলে মানবাধিকারের কথা ব্যাকগ্রাউন্ডে মনে রেখে তারা যেভাবে কথা বলেন, যা বলাই বাহুল্য “পিনাক-সুলভ নয়” আর তা না হয়েও তিনি লিখেছেন –

“সরকারি চাকরির কোটার মতো ঘরোয়া ইস্যু এবং ঢাকার অবাধ্য ও বিশৃঙ্খল যানবাহন নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা আন্দোলন অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষমতা রাখে। বিভিন্ন ইস্যুতে হাসিনা সরকারের ছন্দপতন ঘটেছে, যথাযথভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, ঢাকার অবাধ্য যানবাহন চালকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এসব চালক দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ফলে দেশব্যাপী ছাত্রদের ক্রোধ উসকে দেয়া এবং এ ইস্যুতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নস্যাতের অভিযোগে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক ফটোগ্রাফারকে গ্রেফতার ছিল বেপরোয়া সিদ্ধান্ত। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করে, কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো ধরনের নমনীয়তা প্রদর্শন করেননি”।

অর্থাৎ এমনকি “আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক ফটোগ্রাফারকে গ্রেফতার” বলে শহিদুল আলমের কথাও তিনি উল্লেখ করে সে ড্রাম পিটানো ছদ্ম এক্টিভিস্ট সাজতে  তিনি এখানে দ্বিধা করছেন না, আর লিখেছেন – “এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করে”।

মজার ব্যাপার হল, গত দশ বছরে ভারতের কোনো কূটনীতিক, কলামিস্ট, মিডিয়া রিপোর্ট কেউ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো গুম-খুন, পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া ইত্যাদি থেকে শুরু করে, ‘হার্ডলাইনে দমন করা’ আর কাজ সামলাতে ‘ব্যর্থতার’ জন্য আঙুল তুলছে আমরা এমন কখনও দেখিনি।

তিন. স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, বিরোধী দলকে দলন ও ব্যাপক দুর্নীতিঃ

নিজ চোখে দেখলেও এটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন “স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, বিরোধী দলকে দলন ও ব্যাপক দুর্নীতির” অভিযোগ আনছেন। বিশেষত যখন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় আনার কালে মাঠের এক কুশীলব ছিলেন তিনি নিজেই। তিনি লিখেছেন –

“হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, বিরোধী দলকে দলন ও ব্যাপক দুর্নীতি। নির্বাচনী প্রচারণায় এসব ইস্যু ও ভারত ফ্যাক্টর প্রাধান্য পাবে। রাজনৈতিক বিরোধীদের অব্যাহতভাবে হয়রানি করার ফলে জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে নীরব ক্ষোভ বেড়েই চলেছে এবং ব্যাপকভাবে এ ধারণার সৃষ্টি করেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে। ক্রমেই এমন অভিমত জোরালো হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে লজ্জাজনক সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। অনেক সমালোচক বিশ্বাস করেন, হাসিনা সরকার নির্বাচন ‘ম্যানেজ’ করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় একে বলা হয় ‘নির্বাচনী জালিয়াতি’ “।

চার. মাদকবিরোধী অভিযান আসলে “গুলি করে হত্যার” নীতিঃ

কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন কি পরিচয় বদলে ‘মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্ট’ হয়ে যাচ্ছেন? সে এক বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন! যেমন তিনি লিখেছেন –

“মাদকের বিরুদ্ধে কথিত জাতীয় অভিযানটি ‘গুলি করে হত্যার’ নীতিতে পর্যবসিত হয় বলে মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন। এতে অনেক নিরপরাধ মারা যায়”।  আসলে বরং ফ্যাক্টস হল, গত দশ বছরে ভারতের ‘বাংলাদেশ নীতি’ কখনও হাসিনা সরকারের হিউম্যান রাইট মেনে চলার রিপোর্ট কার্ড রেকর্ড কেমন কখনও সেটাকে ইস্যু করে নাই, সবসময় এড়িয়ে চলেছে, মাতে নাই ফলে কোন অভিযোগও কখনও তুলে নাই। তাহলে পিনাক এখন এতবড় ব্যতিক্রম কেন?

পাঁচ. সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও আওয়ামী লীগের হিন্দু দলন ইস্যুঃ

ভারতের কোনো সাবেক হাইকমিশনার শেখ হাসিনা ও তার দলকে “হিন্দু সংখ্যালঘুদের দলন, হয়রানি ও বৈষম্য করছে” বলে অভিযোগ করছে – এটা এর আগে কখনও চিন্তাও করা যায়নি। তাহলে, এটাই কি হাত ছেড়ে দেয়ার চূড়ান্ত ইঙ্গিত? সবাইকে অবাক করে পিনাক রঞ্জন এই অভিযোগ তুলে বলেছেন,

“হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক প্রধান বিচারপতি সরকারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পদত্যাগ করতে ও বিদেশে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। সাধারণভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনসূচক থাকা হিন্দু সংখ্যালঘুরাও ক্ষুব্ধ। কারণ, আওয়ামী লীগ নেতারা দায়মুক্তির সাথে হিন্দু সম্পত্তি জবরদখল করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা ছাড়া ভারতের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের হয়রানি ও বৈষম্য করা হলেও কিছু বলবে না”।

ছয়. বিএনপির প্রতি সহানুভূতিঃ

পিনাক রঞ্জনের দু-দুটি প্যারাগ্রাফ ধরে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিমূলক ভাষায়, “তারা হাসিনা সরকারের হাতে নির্যাতিত” এই পটভূমি তৈরি করে লিখেছেন,

“তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে বিএনপি”। অর্থাৎ বিএনপির সম্ভাব্য আন্দোলনের প্রতিও তার সহানুভূতির ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। তিনি পরের প্যারাগ্রাফে আরো লিখেছেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান উভয়কেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে। তা ঘটলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়বে”।

পিনাক রঞ্জন এখানে গণক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হয়ে উঠতে চাওয়া তাতপর্যপুর্ণ।

এখানে পাঠককে একটু সাবধান করার আছে যে, এখনই কোনো “সরল” সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ঝাপিয়ে পড়ার কিছু নেই। ওয়েট অ্যান্ড সি। বরং অবজারভ করেন মন দিয়ে। পিনাক রঞ্জনের ভাষা ও বক্তব্যের মধ্যে সত্যিই কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে কি না এই বিচার্য বিষয়ে, এতটুকুতেই আপাতত থাকাই ভাল।

সাত. আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির ভেতরে কথিত ভাঙনের গুজব ছড়ানোর দায় আনাঃ

পিনাক রঞ্জন “আগে দেখা যায় নাই” এমন বেশ খোলাখুলিই লিখেছেন,

“বিএনপির প্রবীণ নেতারা তারেককে অপছন্দ করেন। তারা নেতা হিসেবে খালেদাকেই অগ্রাধিকার দেবেন। বিএনপির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা রয়েছে, এমন গুঞ্জনও রয়েছে যে ভাঙনের মাধ্যমে নতুন দলের আবির্ভাব ঘটতে পারে। সম্ভাব্য ভাঙনে আওয়ামী লীগের হাত আছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে”।

এই ভাষ্যে লক্ষণীয় বিষয়টা হল,  বিএনপি নিয়ে এত কথা পিনাক রঞ্জন লিখেছেন অথচ ২০০১-০৬ সালের বিএনপি সরকারের কোনো কাজ বা পদক্ষেপের কোনই সমালোচনা নেই। এমনকি, দশ ট্রাক অস্ত্র অথবা কথিত জঙ্গি বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেয়ারও কোনো অভিযোগও তিনি তোলেননি। এটি কোন ভারতের কূটনীতিক ও সাবেক হাইকমিশনারের জন্য চরম সীমাহীন ব্যতিক্রম। বিশেষ করে ঠোঁট কাটা অ-কূটনীতিক-সুলভ মন্তব্যের জন্য যেই পিনাক রঞ্জন খারাপভাবে খ্যাত।

আট. নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগকে অধস্তন করে রাখার অভিযোগঃ

এই অভিযোগটা তুলেছিল মূলত বিএনপি। কিন্তু পিনাক রঞ্জন সেই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে তুলে এনেছেন। তবে অবশ্যই “নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগকে অধস্তন করে রাখার” এই অভিযোগ যে কোন নির্বাহী সরকারের বিরুদ্ধে খুবই মারাত্মক। তিনি লিখেছেন,

“‘বিএনপির নির্বাচনী প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি। দলটি অভিযোগ করছে, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগকে অধস্তন করে রেখেছে”।

পিনাক রঞ্জনের লেখায় মূল অভিযোগ মূলত এগুলোই। তবে কামাল হোসেনের যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে হাসিনার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ মন্তব্যেরও পিনাক সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া ‘ভারত ফ্যাক্টর’ বলে একটি শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন। ব্যাপারটা হল, অনেকটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় সব কিছুতেই ভারতের নিরন্তর দাদাগিরি ও হস্তক্ষেপ আর নিজের একক স্বার্থে মাখনটুকু নিয়ে যাওয়া ইত্যাদির গত দশ বছর ধরে এমন আচরণ – এসব কিছুকে ইঙ্গিত করে এটাকেই তিনি ‘ভারত ফ্যাক্টর’ বলে বুঝাতে চেয়েছেন, আর তা করেছেন অনেকটা ক্ষমা চেয়ে নেয়ার ভঙ্গিতে। যেমন নিজে থেকেই প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন,

“বাংলাদেশ ও ভারতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিএনপির হাসিনাকে ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নতজানু দেখানোর সম্ভাবনা থাকায় ভারত ফ্যাক্টর হবে বিপুল। প্রধান সমালোচনা হবে, হাসিনা ভারতকে খুব বেশি ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছেন অতি সামান্য”।

অর্থাৎ পিনাক রঞ্জন এখানে নিজে থেকেই হাসিনার ভারতের সাথে ঘষাঘষি (মুল ইংরাজীটা ছিল kowtowing); যেমন বলেছিলেন “pillory Hasina of kowtowing to India” –  মানে ভারতের সাথে ঢলাঢলিতে গায়ে পড়া হয়ে সব দিয়ে দেওয়া্র দায়ে হাসিনাকে কাঠগড়ায় তোলা – এর সুযোগ আছে বলে পিনাক রঞ্জন নিজেই দেখতে পাচ্ছেন। তাই এই ভাষা বা অর্থ দিয়ে তা পিনাক রঞ্জন নিজে থেকে আঁকছেন।  খুব সম্ভবত এর কারণ সাধারণ মানুষের ক্ষভ প্রশমন ও তাদের সহানুভুতি সংগ্রহ। তাই পিনাকে এই অংশের “উপস্থাপন” সবচেয়ে তাতপর্যপুর্ণ।

আবার ভারতের পানি না দেয়া ইস্যু নিজেই তুলে বলছেন, “নদীর পানিবণ্টন এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেলেও তা কাটিয়ে ওঠা যাবে না এমন নয়“।

এ ছাড়া, আসাম নাগরিকত্ব ইস্যুতে মিস্টি প্রস্তাবের সুরে বলেছেন, “…দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা অবৈধ অভিবাসী ইস্যুটি বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে উদ্বিগ্ন করবে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এনআরসি থেকে সৃষ্ট অনিবার্য প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে”।

সোজা কথায় রাখঢাক না করে বললে ব্যাপারটা হল, গত ১০ বছরে ভারতের যত রুস্তমি, প্রভাব বিস্তার বা বর্ডার কিলিং থেকে শুরু করে তার যা দরকার তা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, ভারতের স্বার্থ সবার উপরে এই নীতিতে এভাবে ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ যে চরমভাবে ক্ষুব্ধ, সে সম্পর্কে পিনাক রঞ্জন সচেতন – তাই জানা গেল। তবে এখানে তিনি ইঙ্গিতে যা বলতে চাইছেন, তা যদি আমরা বুঝে থাকি তা সম্ভবত এমন যে, তিনি বলতে চাইছেন, সম্ভাব্য নতুন সরকার এলে পুরানা সব ভুলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন যাত্রা করা যেতে পারে।

বলা বাহুল্য, মি. পিনাক রঞ্জন আসলে এখানে অনেক ফাস্ট। ফলে অনেক দূর আগেই কল্পনা করে ফেলেছেন। তাই দ্রুত অনেক আগে চলে গেছেন আর খুবই “সরল” আর প্রায় ‘খ্রীষ্টীয় ইনোসেন্ট’ ধরণের সব নানান ভাষ্য হাজির করেছেন। বাংলাদেশে গুম হওয়া কোনো মানুষ ভারতের মাটিতে পাওয়া যাওয়া কি আসলেই এতই সরল আর ইনোসেন্ট? পিনাক রঞ্জন নিজেকেই এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন! ফলে পিনাক রঞ্জন খুব গভীর সচেতন তা বলতে পারছি না। তবে তাকে অনেক গভীরে চিন্তা করতে হবে আর স্বভাবতই তাতে অনেক কাঠ এবং খড়ও পুড়বে।

সবশেষে পিনাকের রচনার শেষ প্যারাগ্রাফের চারটি বাক্য সম্পর্কেঃ

প্রথম বাক্যঃ

বাংলাদেশে চীন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করুক এর বিরুদ্ধে ভারতের আপত্তি ঈর্ষামূলক ও ক্ষতিকর তা কি ভারত এখন বুঝেছে? মনে হয় না কারণ, আমরা কোথাও এমন কিছু দেখিনি। ফলে তার শেষ প্যারাগ্রাফের প্রথম বাক্য –

“বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পূর্ণ বিকশিত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং পরিকাঠামোর আরো একীভূতকরণ, সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র আরো আধুনিকায়ন, মোটরযান চুক্তি ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভবিষ্যতে আরো জোরালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে”   – এই আশার কোনো ভিত্তি নেই। খামাখা ইউজলেস। নন স্টার্টার!

দ্বিতীয় বাক্যঃ

“ঢাকায় যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ভারত তার সাথে কাজ করবে”।

এই বাক্য থেকে আমরা হাসিনা সরকার যে দুর্বল দুস্ত অবস্থায় আছে, তাই সম্ভবত তিনি বুঝতে চাইছেন মনে করতে পারি। কিন্তু ২০১৩ সালে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশ সফর, তাঁর মাতব্বরি ও নোংরা হাত ঢুকানোর সাথে এই বক্তব্যের কোন মিল খুঁজে পাই না। সুজাতা ফরমান জারির মত করে বলেছিলেন, “যারা নির্বাচনে আসবে তাদের নিয়েই নির্বাচন হবেই” আর এরশাদ যেন বিরোধী দলের জায়গা পূরণ করে। সেটা তাহলে কেন বলেছিলেন? কেন তখন বলতে পারেন নাই যে, ঢাকায় যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ভারত তার সাথে কাজ করবে? বাস্তবতা হল, তিনি তা পারেন নাই। তাহলে এখানে প্রশ্ন উঠবেই যে এখন কেন পিনাক রঞ্জন একথা বলছেন? এটার অর্থ কী এই যে ভারতের “বাংলাদেশ নীতি” বদল হয়ে গেছে? কিংবা পুরান প্রেম ও পছন্দের সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে চাইছে – আর ভাল লাগছে না বলে, তাই কী? পিনাকের কথার অর্থ কোনটা করব? পিনাক নিজেকেই সবার আগে এসব বিভ্রান্তি খোলসা করতে হবে।

তৃতীয় বাক্যঃ

“তাই বলে কোনো হাসিনাবিরোধীকে ভারত বিকল্প মনে করছে, এমন কিছু ভাবা হবে কষ্টকর কল্পনা”। বোঝা গেল এটা পিনাকের ‘সংবিধি সতর্ককরণ’ বা একটা “ডিসক্লেমার” দিয়ে রাখা যে ভারত বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছে ব্যাপারটা এমন সরল না। নো প্রবলেম। আমাদেরও এমন তাড়া নাই!

চতুর্থ ও শেষ বাক্যঃ

“অবশ্য, হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা ও তার প্রতি ভারতের সমর্থন অনিবার্য মনে করা ভারতের স্বার্থের অনুকূল নয়, ভারতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ক্রমেই এমন অনুভূতিও জোরালো হচ্ছে”।


লেখক : গৌতম দাস/ রাজনৈতিক বিশ্লেষক

[এই লেখাটা এর আগে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার অনলাইনে (প্রিন্টে পরের দিন) “ভারতের সমর্থন প্রত্যাহারের ইঙ্গিত!“  – এই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। পরবর্তিতে সে লেখাটাই এখানে  আরও নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে।  ফলে  সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে এখানে ছাপা হল। ]

Courtesy: https://goo.gl/ur367w

সঞ্চয়পত্রে অতিনির্ভরতা মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা

বিআইবিএমের মুদ্রানীতিবিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা


বাজেটে ঘোষণা দিয়েও সরকার ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ নিচ্ছে না। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমেই বেশি ঋণ নিচ্ছে। এতে একদিকে সরকারের ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের ওপর সরকারের অতিমাত্রায় নির্ভরতা মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতির (জুলাই-ডিসেম্বর) ওপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা  গতকাল এসব কথা বলেন।

বিআইবিএম মিলনায়তনে আয়োজিত এ কর্মশালায় মুদ্রানীতি বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূচনা বক্তব্য রাখেন ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি ঘোষিত মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

বক্তারা বলেন, প্রবৃদ্ধি শুধু অর্থ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে না। কারণ বিনিয়োগকারীরা ঠিকমতো গ্যাস-বিদ্যুৎ পেলে বিনিয়োগ এমনিতেই বাড়ে। সরকার এখন সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি অর্থ নিচ্ছে। এত অর্থ নেয়ার ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো পর্যালোচনা করতে হবে।

মূল আলোচক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ বলেন, উচ্চপ্রবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি খাত বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাবে। তবে উচ্চপ্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য মুদ্রানীতির বাইরে আরো কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো এবারের মুদ্রানীতিতে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সঞ্চয়পত্র থেকে অনেক বেশি অর্থ নেয়ার কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে অনেকে এর ওপর নির্ভরশীল, এ বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। এজন্য সঞ্চয়পত্রে সংস্কার আনা প্রয়োজন। গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য সেভিংস সার্টিফিকেট চালু করতে হবে। এতে সুদহার তুলনামূলক একটু বেশি রাখা যেতে পারে। অন্যদিকে সেভিংস বন্ড হবে ধনীদের জন্য। এর সুদহার হবে ব্যাংকের রেটের মতো।

তিনি আরো বলেন, প্রবৃদ্ধি শুধু অর্থ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে না। বিনিয়োগকারীরা গ্যাস-বিদ্যুৎ পেলে আরো বেশি বিনিয়োগ হবে। এক্ষেত্রে মুদ্রানীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ স্বাভাবিক নয়। এসব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে বলে মত দেন তিনি।

কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য মো. আব্দুল কাইউম।

সঞ্চয়পত্র নিয়ে সরকারের একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের হার ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অথচ একই সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার হার ৬৬ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ গ্রহণের কারণে এ খাতে সুদ পরিশোধের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। যদিও বছরটিতে এ খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

সরকার বাজেটে ঘোষণা দিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিও বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটছে।
 বণিক বার্তা /সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৮